Pages

Tuesday, 14 August 2018

বাঙালীর অনুপ্রেরণা - বীর মাস্টারদা সূর্য সেন

ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের  উদ্দেশে সূর্য সেন লিখে গেলেন, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার এটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো। সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
ব্রিটিশরা তাঁর লাশ বস্তাবন্দী করে দূরসমুদ্রে ফেলে দিয়ে এল। বাংলার মাটিতে কোথাও যেন তাঁর চিহ্ন না থাকে। কিন্তু বিপ্লবী আত্মার যে মৃত্যু নেই। সূর্য সেন এ দেশের নির্যাতিত মানুষের হূদয়ে তাই আজও অমর।

মাস্টারদার পুরো নাম সূর্য কুমার সেন, ডাকনাম কালু। তবে মাস্টারদা নামে সহযোদ্ধাদের কাছে পরিচিত ছিলেন। মাস্টারদা ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম রাজমনি সেন ও মাতার নাম শশী বালা সেন। মাস্টারদারা ছিলেন দুই ভাই ও চার বোন।সূর্য সেন তাঁদের পরিবারের চতুর্থ সন্তান ছিলেন।শৈশবে পিতা মাতাকে হারানোর পর সূর্য সেন কাকা গৌরমনি সেনের কাছে মানুষ হয়েছেন।


ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি মনোযোগি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি স্বভাবের ছিলেন।বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল বড়লাটকে মারার জন্য ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্লচাকী বোমা নিক্ষেপ করেন। বোমা নিক্ষেপের পর প্রফুল্লচাকী ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের মাথায় রিভলবারের গুলি ছুড়ে আত্মহত্যা করেন। এর প্রায় তিন মাস দশ দিন পর ১১ আগস্ট ১৯০৮ ব্রিটিশ সরকার ক্ষুদিরামকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে।  এ ঘটনাও তাকে সেই শৈশবে প্রচন্ড ভাবে মর্মাহত করেছিল।

চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এফ. এ. পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে পাশ করে তিনি সেই কলেজেই বিএ-তে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তৃতীয় বর্ষের কোন এক সাময়িক পরীক্ষায় ভুলক্রমে টেবিলে পাঠ্যবই রাখার কারণে তিনি চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বিতাড়িত হন।

১৯১৬ সালে বহররমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় কলেজের অধ্যাপক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর সান্নিধ্য লাভ করে সরাসরি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হন মাস্টারদা।

এরপর ১৯১৮ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বিএ পাশ করে চট্টগ্রামে ফিরে আচার্য্য হরিশ দত্তের জাতীয় স্কুলে শিক্ষাকতা শুরু করার মাধ্যমেই মাস্টারদার কর্মজীবন শুরু। অসহযোগ আন্দোলনের সময় বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে গেলে তিনি দেওয়ানবাজারের বিশিষ্ট উকিল অন্নদা চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত ‘উমাতারা উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে’ অংকের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এই সময় বিল্পবী দলের সাথে যুক্ত হয়ে ওঠেন এবং শিক্ষকতা করার কারণে তিনি মাস্টারদা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন বিল্পবী সহযোদ্ধাদের কাছে।

 অধ্যাপক সতীশচন্দ্র তৎকালীন যুগান্তর দলের সাথে যুক্ত ছিলেন বলে মাস্টারদাকে বিপ্লবী আদর্শে ও বিপ্লবের মন্ত্রে দীক্ষা দেন। বিপ্লবী ভাব ধারায় দীক্ষিত সূর্য সেন দেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগকে একমাত্র তপস্যা হিসেবে নিয়ে ছিলেন। তাই তিনি বিবাহ-বিরোধী ছিলেন। কারণ মাস্টারদা মনে করতেন, বিবাহিত জীবন তাঁকে কর্তব্য ভ্রষ্ট করবে, আদর্শচ্যুত করবে। কিন্তু পারিবারিক ও আত্মীয় স্বজনের চাপে ১৯১৯ সালে বিয়ে করতে বাধ্য হন। যদিও বিবাহর তিন দিন পর মাস্টারদা বাড়ি থেকে পালিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন।
এরপর চট্টগ্রামে আগে থেকে গঠন করা দুই বিল্পবী দল যুগান্তর ও অনুশীলনে যোগ না দিয়ে মাস্টারদা ১৯১৮ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে বিপ্লবী অনুরূপ সেন, চারুবিকাশ দত্ত, অম্বিকা চক্রবর্তী, নগেন্দ্রনাথ সেনদের সঙ্গে নিয়ে সতন্ত্রভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে গোপন বিপ্লবী দল গঠন করেন। এর মধ্যে বিপ্লবী চারুবিকাশ দত্ত তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে অনুশীলন দলের সাথে যুক্ত হয়ে যান। যদিও ১৯২০ সালে গান্ধীজী কর্তৃক অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে অনেক বিপ্লবী এই আন্দোলনে যোগ দিলে কিছুদিন পর মাস্টারদাও যোগ দেন। গান্ধীজীর অনুরোধে এক বছর বিপ্লবী কাজ বন্ধ রাখার পর ১৯২২ সালে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করলে বিপ্লবী দলগুলো আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে।

১৯২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর বর্তমান টাইগার পাস এলাকা থেকে মাস্টারদার গুপ্ত সমিতির সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কারখানার শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতনের ১৭,০০০ টাকার বস্তা ছিনতাই করে নিয়ে যান। ছিনতাইয়ের দুই সপ্তাহ পর গোপন বৈঠক বসলে পুলিশ টের পেয়ে বিপ্লবীদের আস্তানায় হানা দেয়। এসময় পুলিশের সাথে বিপ্লবীদের খন্ড যুদ্ধ হয়,  যা “নগরখানা পাহাড় যুদ্ধ” নামে পরিচিত। মাস্টারদা ও অম্বিকা চক্রবর্তীকে রেলওয়ে ডাকাতি মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। যদিও কিছুদিন পর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারে তাঁরা দুজন ছাড়া পেয়ে যায়। তৎকালীন সময় বিপ্লবী দলগুলোতে প্রথম দিকে মেয়েদের যোগ দেয়া নিষিদ্ধ ছিল বিভিন্ন কারণে। পরবর্তীতে প্রীতিলতা ও কল্পনাদত্তদের মধ্যে বিপ্লবীর আগুন দেখে মাস্টারদা মেয়েদের দলে যুক্ত না করার নির্দেশ শিথিল করেন। এরপর প্রীতিলতা ও কল্পনাদত্ত যোগ দেন।


এরপর ১৯২৬-এ টেগার্ট হত্যা প্রচেষ্টায় আবারও গ্রেফতার হয়ে মাস্টারদা  ১৯২৮ সালে ছাড়া পান। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯২৮ সালে কলকাতায় নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে চট্টগ্রাম থেকে মাস্টারদাসহ অন্যান্যরা যোগ দেন। তখন নেতাজী সুভাস চন্দ্র বোসের সাথে মাস্টারদার বৈঠক হয়। এর পরের বছর ১৯২৯ সালে মহিমচন্দ্র ও মাস্টারদা চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৩০ সালে মাস্টারদা ও অম্বিকা চট্টগ্রাম আসকার খাঁর দিঘীর পশ্চিম পাড়ে কংগ্রেস অফিসে সশস্ত্র বিপ্লবের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করাকালীন আইরিশ রিপাবলিকান আর্মির বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেদের দলের নাম পরিবর্তন করে “ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চিটাগাং ব্রাঞ্চ”  করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ি কৌশলে একটি দলকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। মাস্টারদার দলের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩৫ জন, অম্বিকার ১৫ জন, অনন্ত সিং ও গণেশ ঘোষের ২২ জন এবং নির্মল সেনের ৬ জন। চারটি দল অস্ত্র সংগ্রহ ও বোমা তৈরির কাজ এগিয়ে নিচ্ছিলো।

 ১৯৩০ সালের সেই ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রাম ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু গুড ফ্রাইডে থাকায় সেদিন ওই ক্লাবে কেউ ছিল না বলে মাস্টারদা ঠিকে করেন পরের মাসের ২৩ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতা ওয়েদ্দারের নেতৃত্বে হামলা করা হবে। ২৩ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতার নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করা হয়। এই আক্রমণে ৫৩জন ইংরেজ হতাহত হয়। গুলিতে আহত প্রীতিলতা দৈহিকভাবে অত্যাচারিত হওয়ার চাইতে স্বেচ্চায়মৃত্যুকে বেচে নিয়ে পোটাশিয়াম সায়ানাইড নামক একটি কঠিন বিশ খেয়ে আত্মহত্যা করেন।

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল শুক্রবার রাতে বিদ্রোহের দিন ঠিক করে চারটি দল চার বাড়ি থেকে বের হয়ে একদল ধুম রেল লাইনের ফিসপ্লেট খুলে দেয়। এতে একটি মালবহনকারী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে যায়। যার কারণে চট্টগ্রামের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই সুযোগে একদল  টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিস দখল করে ভাংচুর করে, কেউ রেলওয়ে অস্ত্রগার দখল করে পেট্রোল ছড়িয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। ২২ এপ্রিল বিপ্লবীরা জালাবাদ পাহাড়ে অবস্থান করলে ইংরেজ সৈন্যরা তাঁদের আক্রমণ করেন। টানা দুই ঘন্টা যুদ্ধে ব্রিটিশ সৈন্যদের ৭০ জন নিহত হয় এবং বিপ্লবীদের মধ্যে ১২ জন শহিদ হন। এঁরা হচ্ছেন, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, হরিগোপাল বল, মতিলাল কানুনগো, প্রভাসচন্দ্র বল, শশাঙ্কশেখর দত্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, এবং অর্ধেন্দু দস্তিদার। জালাবাদ যুদ্ধেরপর মাস্টারদাকে গ্রেফতারের অনেক চেষ্টার পরও ব্যর্থ হয় ব্রিটিশ বাহিনী। কিন্তু বিপ্লবীদের মধ্যে কেউ কেউ ধরা পড়ে আবার কেউ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়। সর্বশেষ পরিকল্পনা অনুযায়ী দামপাড়া পুলিশ ব্যারাক দখল করে আক্রমণে অংশ নেওয়া বিল্পবীরা জাতীয় পতাকা উত্তলন করে। বিপ্লবীরা মিলিটারি কায়দায় কুচকাওয়াজ করে মাস্টারদা সূর্য সেনকে তাঁর আদর্শের সাথে সাহসি নেতৃত্বদানের জন্য সংবর্ধনা প্রদান করেন। ওই সময়ই মাস্টারদা অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেন এবং পুরো চট্টগ্রামকে ব্রিটিশ শাসকদের হাত থেকে চারদিন মুক্ত রাখেন।

 কিন্তু এরমধ্যে বিপ্লবীদের খাদ্যসংকট দেখা দিল এবং সূর্য সেন সহ অন্যদের কচি আম, তেঁতুল পাতা, কাঁচা তরমুজ এবং তরমুজের খোসা খেয়ে কাটাতে হয়। সূর্য সেন সহ ছয়জন শীর্ষস্থানীয় বিপ্লবীকে ধরার জন্য ইংরেজ সরকার ৫০০০ টাকা পুরস্কার ঘোষনা করে।  জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে অংশ নিয়ে পলায়ন করতে সক্ষম হলেও পরবর্তীকালে পুলিসের আক্রমণে দুজন শহীদ হন, এঁরা হচ্ছেন অপূর্ব সেন এবং জীবন ঘোষাল।
জালালাবাদ যুদ্ধের পর বিপ্লবী নেতাদের ধরার জন্য রেলস্টেশন, স্টীমারঘাট হতে শুরু করে সব স্থানে অভিযান চলছিলো। বিপ্লবীরা তখন বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে আত্মগোপন করে ছিলো। সূর্য সেন ১৬ জন বিপ্লবীকে নিয়ে ২৪ এপ্রিল রাতে নিজের বাড়িতে আসেন। এর মধ্যে অনন্ত সিং পুলিশের কাছে স্বেচ্ছায় ধরা দেন এবং কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে এবং এদের বিরুদ্ধে অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলা শুরু হয়। এ মামলা শুরু হওয়ার পর অসুস্থ অম্বিকা চক্রবর্তী পটিয়া থানার চক্রশালা গ্রামে গ্রেপ্তার হন। অম্বিকা চক্রবর্তী এবং সেসময় গ্রেপ্তার হওয়া অন্য বিপ্লবীদের নিয়ে দ্বিতীয় অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলা শুরু হয়। প্রায় ১৯ মাস বিচারের পর ১৯৩২ সালের ১লা মার্চ অস্ত্রাগার লুন্ঠন মামলার রায়ে অনন্ত সিং, লোকনাথ বল এবং গনেশ ঘোষসহ ১২ জনকে দ্বীপান্তর বাসের আদেশ দেয়া হয়।পরবর্তীতে অপর মামলায় অম্বিকা চক্রবর্তীর প্রাণদন্ডের আদেশ হয় পরে হাইকোর্টে আপিলের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়।  ১৯৩২ সালের ১৩ জুন রাত ৯টায় পটিয়ার ধলঘাট গ্রামে সাবিত্রী চক্রবর্তীর বাড়িতে তাঁকে ধরার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন ক্যামেরনকে গুলি করে সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন কিন্তু নির্মল সেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

 ১৯৩৩ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারী রাতে সেখানে এক বৈঠকে ছিলেন কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, মণি দত্ত, ব্রজেন সেন আর সুশীল দাসগুপ্ত। ব্রজেন সেনের সহোদর নেত্র সেন সূর্য সেনের উপস্থিতির খবর পুলিশকে জানিয়ে দেয়।রাত প্রায় ১০টার দিকে পুলিশ আর সেনাবাহিনী ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাসের বাড়িটি ঘিরে ফেলে। রাতের অন্ধকারে গুলি বিনিময় করে কল্পনা দত্ত, শান্তি চক্রবর্তী, মণি দত্ত আর সুশীল দাসগুপ্ত পালিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু রাত ২টার দিকে অস্ত্রসহ সূর্য সেন এবং ব্রজেন সেন ধরা পড়েন। তারপর ঐ বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ সূর্য সেনের নিজের হাতে লেখা অর্ধসমাপ্ত আত্মজীবনীর খাতা উদ্ধার করে। সেই খাতার উপর লেখা ছিল “বিজয়া”। বিচারের সময় “বিজয়াতে” লেখা তাঁর কথাগুলো বিপ্লব এবং প্রশাশনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রমান হিসাবে অনেকবার ব্যবহার করা হয়। ১৭ই ফেব্রুয়ারী রাতে সূর্য সেন এবং ব্রজেন সেনকে প্রথমে জেলা গোয়েন্দা সদর দপ্তরে, পরে কোর্ট হয়ে চট্টগ্রাম জেলে নেয়া হয়। সূর্য সেন গ্রেপ্তার হবার খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। আনন্দবাজার পত্রিকায় লেখা হয়েছিল “চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন সম্পর্কে ফেরারী সূর্য সেনকে গত রাতে পটিয়া হইতে ৫ মাইল দূরে গৈরলা নামক স্থানে গ্রেপ্তার করা হইয়াছে। সূর্য সেনকে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের মামলায় প্রধান আসামি বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে। গত ১৯৩০ সাল হইতে সূর্য সেন পলাতক ছিলেন এবং তাঁহাকে ধরাইয়া দিবার জন্য সরকার দশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষনা করিয়াছিলেন”।

সূর্যসেন, তারকেস্বরে ও কল্পনা দত্তকে বিচার করার জন্য ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ১২১/১২১এ ধারা অনুযায়ী স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ১৯৩৩ সালের ১৪ই আগষ্ট এই রায় ঘোষণা করা হয়। ট্রাইব্যুনাল সূর্য সেনকে ১২১ ধারায় মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন। ওই একই ধারায় তারকেস্বরেও মৃত্যুদন্ড পায়। অন্যদিকে কুমারী কল্পনা দত্তকে ১২১ ধারায় দোষী করে জাবজ্জীবন দন্ডাদেশ করে। মামলার রায় পদানের পর তিন জনের পক্ষে কলকাতা হাই কোর্ট আপিল করলেও ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট পদত্ত রায়ে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল দেয়া দন্ড বহাল রাখে।

এরপর সূর্যসেনকে চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেমড সেলের নির্জন কুঠুরীতে রাখা হতো। একজন কয়েদি মেথর সূর্য সেনের লেখা চিঠি ময়লার ঝুড়িতে নিয়ে জেলের বিভিন্ন ওয়াডের্র বন্দী বিপ্লবীদের দিয়ে আসতো। মৃত্যুর আগে জেলে আটক বিপ্লবী কালীকিঙ্কর কাছে পেন্সিলে লেখা বার্তা পাঠান। সেই বার্তায় তিনি লেখেন, “আমার শেষ বাণী- অদর্শ ও একতা”। তাঁর ভাষায়, “ভারতের স্বাধীনতার বেদীমূলে যে সব দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের নাম রক্তাক্ষরে অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে লিখে রেখো।”
শেষ দিনগুলোতে জেলে থাকার সময় তাঁর একদিন গান শোনার খুব ইচ্ছা হল। সেই সময় জেলের অন্য এক সেলে ছিলেন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী। রাত ১১টা/১২টার দিকে কল্পনা দত্ত তাঁকে চিৎকার করে বলেন “এই বিনোদ, এই বিনোদ, দরজার কাছে আয়। মাষ্টারদা গান শুনতে চেয়েছেন”। বিনোদ বিহারী গান জানতেন না। তবুও সূর্য সেনের জন্য রবিঠাকুরের “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে” গানটা গেয়ে শোনালেন।তার বিচারের সময় তার বিরুদ্ধে কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলেও বিচারক তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন। ১৯৩৪ সালের ১২-ই জানুয়ারী চট্টগ্রাম জেলে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

সূর্য সেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদারকে ব্রিটিশ সেনারা নির্মম ভাবে হাতুড়ী পেটা করল প্রথমে । হাতুড়ীঘাতে মুখমণ্ডল থেঁতলে গেল তাদের , ভেঙ্গে গেল সবকটা দাঁত।  হাতের নখ উপড়ে তুলে ফেলা হল একের পর এক। হাঁটু থেকে শুরু করে সমগ্র শরীরের প্রতিটি জয়েন্টে চলল নির্বিচারে আঘাতের পর আঘাত । শরীরের সকল হাড় ভেঙ্গে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল। এক পর্যায়ে তারা নিস্তেজ হয়ে জ্ঞান হারালেন। তারপর মৃতপ্রায় শরীর দুটিকে টানতে টানতে , তাদের গলায় বেঁধে দেয়া হয় হল ফাঁসীর দড়ি । মৃত্যু নিশ্চিত করতে ফাঁসীর মঞ্চে ঝুলে পড়লেন সূর্য সেন এবং তারকেশ্বর দস্তিদার।
লাশ দুটো জেলখানা থেকে ট্রাকে করে ৪ নম্বর স্টিমার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হল। তারপর তাদেরকে ব্রিটিশ জাহাজ  “The Renown” এ তুলে, তাদের বুকে বেঁধে দেয়া হল লোহার বড় বড় টুকরো। জাহাজ চলে আসল বঙ্গোপসাগর আর ভারত মহাসাগর সংলগ্ন কোন এক গভীর অভ্যন্তরে। অতল গভীর জলে নেমে গেলেন, সূর্যসেন ও তারেকশ্বর দস্তিদার।

 বাঙালীকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি। কারণ বাঙালী সূর্যসেন, প্রীতিলতা ও তিতুমীরের উত্তরসূরী। আজো আমাদের লড়াই করতে হচ্ছে বাক স্বাধীনতার জন্য, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য, গণতান্ত্রিক ও শোষণ বৈষম্যহীন সমাজের জন্য। মানবিক পৃথিবী বিনির্মানের লড়াইয়ে মাস্টারদা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।

Sunday, 12 August 2018

আপনার শরীরের জন্য ভিটামিন-ই কেন দরকার --

শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ভিটামিন হলো ভিটামিন-ই। এটি শারীরিক বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ থাকতে ভূমিকা রাখে।

ভিটামিন - ই'র উপকারিতা--

-- কোষ নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে শরীরে চাই অ্যান্টঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা ভিটামিন-ই থেকে পাওয়া যায়। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষের জন্য ক্ষতিকারক মৌলগুলির সঙ্গে লড়াই করে। দূষণ এবং ধূপমান থেকে শরীরে মুক্তমৌল তৈরি হয়। ভিটামিন ই- তে এমন এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষ নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। সাধারণত দূষণ এবং ধূমপান থেকে শরীরে যে ক্ষতিকারক মুক্তমৌল তৈরি হয় তার বিরুদ্ধে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুদ্ধ করে। এতে আমরা সুস্থ থাকতে পারি। 

-- বাজারে ভিটামিন-ই যুক্ত তেল পাওয়া যায়। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর নানা উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল কাটাছেড়ার ক্ষত ও ব্রণ সারানো।

-- কোষ পুণর্গঠন প্রক্রিয়ার জন্য ভিটামিন-ই উপকারী হওয়ায় এটি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সক্ষম।

-- চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন-ই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চুপ পড়া, অল্প বয়সে চুল সাদা বা ধুসর হওয়া থেকে বাঁচতে চাই ভিটামিন-ই।

-- স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন-ই’তে ভরপুর খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ‘ইমিউন সেল’ বা রোগ প্রতিরোধকারী কোষ তৈরি সহায়ক, যা শরীরে তৈরি করে ব্যাকটেরিয়া-নাষক অ্যান্টিবডি।

--- গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন-ই গ্রহণ করলে হূদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, চোখের ছানি, মাংসপেশির ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা ও আন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।

---  হার্ট অ্যাটাক কমাতে ভিটামিন-ই মধ্যবয়সী পুরুষ এবং মহিলা যারা ভিটামিন-ই গ্রহণ করে থাকেন, যেসব লোক গ্রহণ করেন না, তাদের চেয়ে হার্ট এ্যাটাক কম হয়। তথ্যটি জানা গেছে হার্ভার্ড স্কুলের পাবলিক হেলথ বিভাগের দ’টি পৃথক গবেষণা থেকে। দি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে প্রায় ৪০ হাজার পুরুষ যারা কমপক্ষে দুই বছর দৈনিক ন্যূনতম ১০০ I.U ভিটামিন-ই গ্রহণ করেছেন তাদের হার্ট অ্যাটাক কম হয়েছে শতকরা ৩৭ ভাগ। দ্বিতীয় গবেষণাটি করা হয় মহিলাদের নিয়ে। ৮৭ হাজার মহিলাকে নিয়ে আট বছরের এক উদ্যোগ নেয়া হয়। সেখানে দেখা গেছে, দুই বছরের বেশি সময় দৈনিক ১০০ আইইউ ভিটামিন-ই গ্রহণে মহিলাদের হার্ট এ্যাটাক শতকরা ৪১ ভাগ কমেছে।

--- মুখে কোনও ক্ষতচিহ্ন থাকলে তার উপশমে ভিটামিন ই অব্যর্থ! অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর ভিটামিন ই ত্বকের নিজে থেকে সেরে ওঠার ক্ষমতাকে আরও জোরদার করে। মুখে ব্রণর ক্ষতচিহ্ন থাকলে একটা ভিটামিন ই ক্যাপসুল আধখানা করে কেটে ভিতরের তেল সরাসরি দাগের উপর লাগান। ভিটামিন ই ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দ্রুত ক্ষতচিহ্ন সারিয়ে তোলে।

----বলিরেখা সারাতে ভিটামিন ই অত্যন্ত কার্যকরী। ভিটামিন ই-র নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের বয়স বাড়তে দেয় না। ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু সারিয়ে ত্বক কোমল, সুন্দর করে তোলে ভিটামিন ই।

---মুখে দাগছোপ বা ত্বকের রং সব জায়গায় সমান না হলেও একমাত্র ওষুধ ভিটামিন ই। ত্বকের কোনও অংশে মেলানিন বেশি জমে গেলে সেই অংশের রং অন্যান্য অংশের চেয়ে কালো দেখায়। ত্বকের কালো অংশে ভিটামিন ই লাগালে তা ধীরে ধীরে হাইপারপিগমেন্টেশন কমিয়ে ত্বকের রং স্বাভাবিক করে তোলে।

---হাতের ত্বক শুকনো হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। সাধারণ ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজ়ার দিয়ে তা কমানো যায় না। হাতের চামড়া কুঁচকেও যায় অনেকের। এমন ক্ষেত্রে ভিটামিন ই ক্যাপসুল কেটে সেই তেল হাতের ত্বকে সরাসরি ক্রিমের মতো মেখে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে চোখে পড়ার মতো তরুণ দেখাবে হাতের ত্বক।

---- ফাটা ঠোঁটের সমস্যায় বছরভর কষ্ট পান? প্রতিদিনের লিপবামের বদলে ব্যবহার করুন ভিটামিন ই তেল। ঠোঁটের রং কালো হয়ে গেলেও ভিটামিন ই তেলে ফল পাবেন।

----সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতেও আপনার ভরসা ভিটামিন ই। মুখে সানস্ক্রিন লাগানোর আগে ভিটামিন ই তেল মেখে নিন। বিকল্প হিসেবে ভিটামিন ই যুক্ত সানস্ক্রিনও ব্যবহার করতে পারেন।

-- শরীরের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন-ই গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। এসব হচ্ছে-
-অন্ত্রের অসুখ, লিভার বা যকৃতের অসুখ, অগ্ন্যাশয়ের অসুখ, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাকস্থলী অপসারণ।

যে শিশু টিনের দুধ খায় তাদের ভিটামিন-ই এর ঘাটতি হতে পারে। মূলত পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে ভিটামিন-ই এর প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়।

-- গবেষণায় জানা গেছে যে, ব্যায়াম পরবর্তী পেশী বেদনা লাঘবে ভিটামিন ‘ই’ বেশ কার্যকর। এক্ষেত্রে ভিটামিন ‘ই’ এর ফ্রী র‌্যাডিক্যাল রোধী বা এ্যান্টি অক্সিডেন্ট
ভূমিকাই কাজ করে। এমনিতে ফ্রী র‌্যাডিক্যাল  পেশীর  ছোট-খাটো কাটাছেঁড়া  মেরামত করে।  কিন্তু ফ্রী র‌্যাডিক্যালের
সংখ্যা বেড়ে গেলে তা পেশীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াঁয়। ভিটামিন ‘ই’ সেবনে ফ্রী র‌্যাডিক্যালের সংখ্যা কমে যায়
এবং পেশীর ব্যাথা নিরাময় হয়।


এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের র্হাভার্ড মেডিক্যাল স্কুল কর্তৃক প্রকাশিত এক হেলথ রিপোর্টে বলা হয় যে, ভিটামিন  ‘ই’
এর ক্ষমতার মধ্যে আরও দুটো বৈশিষ্ট্য অর্ন্তভুক্ত করা যায় যেগুলো হৃদরোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকারী ভূমিকা পালন
করে। এ দুটো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রদাহ নিবারণ ও মসৃণ মাংস পেশীর কোষ প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করা। মাংস পেশীর কোষ উৎপাদন  ক্ষমতার  সংগে  প্রদাহ  নিবারণ  ক্ষমতা  এ  দুটো  গুণ  রক্তনালীর  সংকীর্ণ  হওয়াকে  প্রতিরোধ  করে।  এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়া ছাড়াও এই দুই গুণাবলীর কারণে ভিটামিন ‘ই’ হৃদরোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আরও
উল্লেখ্য যে, ভিটামিন ‘ই’ এর সাহায্য ছাড়া দেহে ভিটামিন ‘এ’র শোষণ ও মজুদ হওয়া কঠিন।
ভিটামিন ‘ই’ এর ক্যান্সাররোধী গুণাবলীর কথাও জানা গেছে।

-ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার খান:

বাদাম, খাদ্যশস্য, ভুট্টার ভ্রুণ এবং গাঢ় সবুজ শাকসবজি ভিটামিন-ই এর চমৎকার উৎস। আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এসব খাবার রাখুন।

১) সূর্যমুখীর বীজ : সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভিটামিন ই। প্রতি ১০০ গ্রাম সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ৩৬.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। এই বীজ থেকে যে তেল তৈরি করা হয় তা সাধারণত সালাদ, স্যুপ বা গার্নিশে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া অন্যান্য রান্নাতেও সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করা যায়। এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই, রক্তচাপ ও হৃদরোগীরা অনায়াসে তা খেতে পারেন।

 ২) লাল মরিচের গুঁড়া : ঝালের কারণে আমরা অনেকেই মরিচ কম খেয়ে থাকি। অবাক হলেও কথা সত্য। জেনে অবাক হতে পারেন, সর্বোচ্চ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় আছে লাল মরিচের গুঁড়া! প্রতি ১০০ গ্রাম লাল মরিচের গুঁড়ায় রয়েছে ২৯.৮৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। আমাদের রোজকার খাবারে আমরা মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করে থাকি। তাই আমাদের শরীরে ভিটামিন ই-এর অভাব সচরাচর ঘটে না।

৩) কাঠ বাদাম : আমন্ড বা কাঠবাদাম ভিটামিন ই-এর জন্য বেশি জনপ্রিয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠবাদামে রয়েছে ২৬.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। দাম বেশি বলে কাঠবাদাম খাবার হিসেবে খুব বেশি প্রচলিত নয়। সাধারণত ক্ষীর, পায়েস, মিষ্টি, সন্দেশ, হালুয়াসহ অন্যান্য খাবার তৈরিতে অনুষঙ্গিক উপকরণ হিসেবে কাঠবাদাম ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কাঠবাদামের দুধ ও মাখনও ভিটামিন ই-এর ভালো উত্‍স।

৪) পেস্তা বাদাম : কাঠবাদামের পরেই রয়েছে পাইন নাট বা পেস্তা বাদাম। প্রতি ১০০ গ্রাম পেস্তা বাদামে রয়েছে ৯.৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। কাঠবাদামের মতোই পেস্তা বাদামও আমাদের দেশে বিভিন্ন খাবার তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

৫) চীনা বাদাম : চীনা বাদাম খেতে পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুব কমই আছেন! বাদাম ভাজা বেশ মুখরোচক একটি খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম চীনা বাদামে রয়েছে ৬.৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। চীনাবাদাম নানা খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চীনাবাদামের মাখনও বেশ উপকারী।

৬) ভেষজ: ভেষজের মধ্য বেসিল ও অরিগানোতে রয়েছে সর্বোচ্চ ভিটামিন ই। প্রতি ১০০ গ্রাম বেসিল ও অরিগানোতে রয়েছে ৭.৪৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। পাস্তা, পিজা, সালাদ ও স্যান্ডউইচ তৈরির উপকরণ হিসেবে বেসিল এবং অরিগানো ব্যবহার করা হয়।

৭) শুকনো এপ্রিকট : এপ্রিকটকে বলা হয় খাদ্যআঁশ ও নানা ভিটামিনের উত্‍কৃষ্ট উত্‍স। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো এপ্রিকটে রয়েছে ৪.৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।

৮) জলপাইয়ের আচার : ভিটামিন ই-এর একটি উত্‍কৃষ্ট উত্‍স হিসেবে গণ্য করা হয় কাঁচা জলপাইকে। তবে কাঁচা জলপাইয়ের আচার হলো ভিটামিন ই-এর একটি ভালো উত্‍স। প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ের আচারে রয়েছে ৩.৮১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।

৯) পালং শাক : রান্না করা পালং শাক আয়রন, ক্যালসিয়াম ও খনিজ পদার্থের আধার হিসেবে পরিগণিত হয়। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই-ও। প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না করা পালং শাকে রয়েছে ৩.৫৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।

 ১০) কচুর মূল : আয়রন ও ক্যালসিয়ামের সর্বোত্‍কৃষ্ট উত্‍স হলো কচুর মূল। এটি আমাদের দেশে অতি সহজলভ্য একটি খাবার। আলুর বিকল্প হিসেবেও কচুর মূল খাওয়া যায়। সর্বোচ্চ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাদ্য তালিকার দশ নম্বরে রয়েছে কচুর মূল। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুর মূলে রয়েছে ২.৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।


জলপাইয়ের আচার: ভিটামিন ‘ই’ এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে গণ্য করা হয় কাঁচা জলপাইকে। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা জলপাইয়ের আচারে রয়েছে ৩.৮১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।

খাবার রান্না করলে এবং সংরক্ষণ করে রাখলে ভিটামিন-ই কিছুটা নষ্ট হয়। শুধু ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে সেটি সুন্দর খাবারের বিকল্প হতে পারে না এবং সেটি শরীরে শক্তিও উৎপন্ন করতে পারবে না। অন্যান্য খাদ্যের উপস্থিতি ছাড়া ভিটামিনগুলো নিজেরা কাজ করতে পারে না। শরীরে ভিটামিন-ই এর শোষণের জন্য কিছুটা চর্বির প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন-ই পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনে, যেমন- ডি-কিংবা ডিএল আলফা টকোফেরিল অ্যাসিটেট, ডি-কিংবা ডিএল-আলফা টকোফেরল এবং ডি-কিংবা এল-আলফা টকোফেরিল এসিড সাক্সিনেট।

আপনি যদি প্রেসক্রিপশন ছাড়া ভিটামিন-ই গ্রহণ করেন, তাহলে লেবেলের লেখাগুলো ভালো করে পড়ে নেবেন এবং কোনো ধরনের সতর্কতার উল্লেখ থাকলে সেটি মেনে চলবেন। কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন-ই গ্রহণে সতর্ক হতে হবে-

অ্যালার্জি : ভিটামিন-ই গ্রহণের পর কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় কিংবা অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসককে জানাতে হবে।

গর্ভাবস্থা : এটি গুরুত্বপূর্ণ, যখন আপনি গর্ভবতী হচ্ছেন তখন পর্যাপ্ত ভিটামিন গ্রহণ করছেন। তবে আপনাকে দেখতে হবে গর্ভাবস্থার পুরো সময়টা আপনি সঠিক মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করছেন কি না, কেননা ভ্রুণের বিকাশ এবং বৃদ্ধি নির্ভর করে মায়ের সঠিক পুষ্টি গ্রহণের ওপর। গর্ভাবস্থায় বেশি মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করলে ক্ষতি হতে পারে, তাই বেশি মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করবেন না।

বুকের দুধ : শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য স্তনদানরত মহিলার সঠিকমাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে থাকেন তা হলে মাঝে মধ্যে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। এ ক্ষেত্রে শিশুকে অন্য উপায়ে ভিটামিন দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে আপনি যদি বুকের দুধ খাওয়ানোকালে অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করেন তাহলে আপনার নিজের জন্য এবং শিশুর জন্য সেটি ক্ষতিকর হবে।

শিশু : দৈনন্দিন সুপারিশকৃত মাত্রা গ্রহণের ফলে শিশুর অসুবিধার কথা জানা যায়নি। শিশু বুকের দুধ খেলে তাকে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন দেয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গবেষণায় দেখা গেছে নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণকারী শিশুর শরীরে ভিটামিন-ই এর মাত্রা কম থাকে। আপনার চিকিৎসক এ ব্যাপারে ভিটামিন-ই এর মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন।

প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ : দৈনন্দিন সুপারিশকৃত মাত্রা গ্রহণের ফলে প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধার কথা জানা যায়নি।

অন্য ওষুধ গ্রহণ : আপনি যদি ভিটামিন-ই গ্রহণের সময় অন্য কোনো ওষুধ খেতে থাকেন তা হলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানাবেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দুটি ওষুধের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারেন কিংবা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে বলতে পারেন।
অন্যান্য চিকিৎসাগত সমস্যা : অন্য কোনো চিকিৎসাগত সমস্যা উপস্থিত থাকলে ভিটামিন-ই গ্রহণের ফলে অবস্থা খারাপ হতে পারে। আপনার অন্য কোনো চিকিৎসাগত সমস্যা আছে কি না সেটি চিকিৎসককে অবশ্যই জানাবেন, বিশেষ করে আপনার যদি রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা থাকে।

দৈনিক ৪০০ ইউনিটের বেশি এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য ভিটামিন-ই গ্রহণ করলে নিুলিখিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটে-

চোখে ঝাপসা দেখা,  ডায়রিয়া, মাথাঘোরা, মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব, পেট কামড়ানো, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা।
এক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন-ই গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

রহস্যময় উত্তর কোরিয়া --

উত্তর কোরিয়া এমন একটি দেশ যা নিয়ে কৌতূহল নেই এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। দুই কোরিয়া আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকে উত্তর কোরিয়া পুরো পৃথিবীর থেকে যেন বিচ্ছিন্ন একটি দেশ হয়ে গেছে। এই দেশের নিয়ম নীতির বেড়াজাল পেরিয়ে যে সকল তথ্য বেরোয় তার কোনোটির ই  বলতে গেলে দৃঢ় প্রমান পাওয়া যায় নি, কেবল বিশ্বস্ত সূত্র মারফত পাওয়া বলে তাদের তথ্য বলে ধরে নেয়া হয়। পৃথিবীর কাছে পুরোপুরি উন্মুক্ত না হলে রহস্য গুলি থেকে যাবে। এমন কিছু পাওয়া তথ্য আজ তুলে ধরলাম-

-- আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাঝে মধ্যেই অত্যাধুনিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রে আসে উত্তর কোরিয়া। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের ওপরও। বৈশ্বিক ব্যাংক ব্যবস্থার অনেক সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। নানা দিক থেকে নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে আবদ্ধ থেকেও দেশটির নেতা কিম জং-উন কীভাবে সামরিক খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করেন, অনেকের কাছেই সেটা বড় রহস্য।

--- তাদের মহাকাশ গবেষণা প্রোগ্রামের সাফল্য ২০%

--সম্প্রতি দেশটি তার নিজের টাইম জোন তৈরি করেছে। পিয়ংইয়ং স্ট্যান্ডার্ড টাইম। জাপানের শাসনামলের আগে এই টাইম জোনই চালু ছিল কোরিয়ান পেনিনসুলায়।

--বিদেশী পর্যটকদের চলাফেলাও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এখানে । ফলে দেশটি সম্পর্কে সামান্য যা তথ্য পাওয়া যায় তা বিশ্লেষণ করে মোটা দাগে আয়ের তিনটি খাতকে চিহ্নিত করা যায়-- মূলত কয়লা রফতানি, সাইবার আক্রমণ ও বাধ্যতামূলক শ্রমের ওপর টিকে আছে রহস্যময় এ দেশের অর্থনীতি।

--উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যিক হিসাব কাউকেই জানায় না দেশটি। তবে ১৯৯১ সাল থেকে তাদের আর্থিক চিত্র বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ করে আসছে দক্ষিণ কোরিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব কোরিয়া’। তাদের ২০১৬ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে উত্তর কোরিয়ার অর্থনৈতিক বৃদ্ধি  ছিল ১ শতাংশ। ব্যাংক অব কোরিয়া জানায়, ২০১৪ সালে উত্তর কোরিয়ায় মোট আমদানি ও রফতানির পরিমাণ ছিল ৯৯০ কোটি ডলার। এর মধ্যে ২৪০ কোটি ডলার বাণিজ্য হয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে।

--উত্তর কোরিয়া থেকে চীনে যেতে ৮ হাজার ডলার খরচ লাগে। এ দেশ থেকে বের হয়ে যেতেই এ খরচ প্রয়োজন। বেশির ভাগ উত্তর কোরিয়ানের সামর্থ্য রয়েছে।

--উত্তর কোরিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচে বড় উৎস কয়লা রফতানি। মনে করা হয়, প্রতি বছর ১০ লাখ টন কয়লা রফতানি করে দেশটি। এটির সবচে বড় বাজার চীন। বেইজিং আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে কিছুটা কম দামে দেশটি থেকে কয়লা কিনে থাকে।অবশ্য সম্প্রতি এ খাত থেকে অর্থ প্রাপ্তিতে কিছুটা সমস্যায় পড়েছে কিম জং-উন প্রশাসন।
বিশ্লেষকদের মতে, বিগত দিনগুলোতে কয়লা রফতানি করে দেশটি বড় অংকের রিজার্ভ জমা করেছে। এ তহবিল দেশটির আর্থ-সামাজিক, সামরিক খাতের অন্যতম ভরসা। কয়লার পাশাপাশি চীনের বাজারে আকরিক লোহা, সামুদ্রিক খাবার, তৈরি পোশাক ছাড়াও বেশকিছু নিত্য ব্যবহার্য পণ্য রফতানি করে থাকে উত্তর কোরিয়া। এভাবে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে দেশটি। 

--এখানে প্রতি পাঁচ বছর পর পর ভোটাভুটি হয় তবে একজনই প্রার্থী! বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় তিনি নির্বাচিত হন!

--কিম জং উনের প্রয়াত পিতা কিম জং ইলের বিশেষ মদের পেছনে খরচ হতো একজন উত্তর কোরিয়ার নাগরিকের বার্ষিক আয়ের ৮০০ গুণ বেশি। এক হিসেব জানায়, বছরে কনিয়াকের পেছনে ব্যয় হতো ১.২ মিলিয়ন ডলার। বছরে একজন উত্তর কোরিয়ানের আয় ১ হাজার থেকে ২ হাজার ডলার।

--দুই কোরিয়ার মধ্যে সম্পর্কে স্থিতিশীলতা ফিরে আসার পর ২০০৪ সালে সীমান্ত সংলগ্ন কেসং শিল্পপার্ক প্রতিষ্ঠা করে উত্তর কোরিয়া। সেখান থেকে দেশটির আয় হয়েছে ৫৬০ কোটি ডলার। এছাড়া এই সময়ের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার ১২০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছে উত্তর কোরিয়ার ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ। অবশ্য ২০১৬ সালে উত্তর কোরিয়ার বিতর্কিত এক রকেট উৎক্ষেপণের পর ওই শিল্পপার্ক থেকে অর্জিত অর্থ দেশটি পরমাণু অস্ত্র বানাতে ব্যয় করছে- এমন অভিযোগে দক্ষিণ কোরিয়া সাময়িকভাবে কেসং বন্ধ করে তাদের কর্মীদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়।

--২০১০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে উত্তর কোরিয়া ব্রাজিলের বিপক্ষে একটি গোল করে। তবে তারা হেরেছিল ২-১ গোলে।

-- সূত্রানুযায়ী স্কুলের ছাত্রছাত্রীদেরকে চেয়ার, টেবিল ও ঘর গরম করার তেলের জন্য টাকা দিতে হয়! তাই বাবা মায়েরা সেজন্য বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ইচ্ছুক নন!

---উত্তর কোরিয়ার তথ্যমতে, সে দেশের শতভাগ মানুষ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। সিআইএ-এর সংজ্ঞামতে, ১৫ বছর এবং তার বেশি বয়সী যে সকল মানুষ পড়তে ও লিখতে পারে তারাই অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। এদের একজন নাগরিক ভাল করে কিম ইল সাং লিখতে পারলেই তাকে শিক্ষিত বলা হয়!

--এখন সালটা ২০১৮ নয় সেখানে ১০৭ সাল! এরা তাদের নেতা কিম ইল সাং এর জন্মদিন থেকে বছর শুরু গোনে!

--এখানে ৬০৫ জন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে! (০.০০%)

--কিম জং-উন প্রশাসনের আয়ের অন্যতম বড় খাত হিসেবে দাবি করা হয়- সাইবার আক্রমণ। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার হামলা চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ডলার হাতিয়ে নেয় দেশটির হ্যাকাররা। আর এ কাজে প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি রুশ সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ক্যাসপারাস্কির এক তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযোগের পক্ষে জোরালো সমর্থন পাওয়া যায়। ক্যাসপারস্কির তথ্য মতে, ১৮টি দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ডলার হাতিয়েছে উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাপী আলোচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনাও রয়েছে। তালিকায় রয়েছে কোস্টারিকা, পোল্যান্ড ও নাইজেরিয়ার ব্যাংক হ্যাকিংয়ের ঘটনাও।

---উত্তর কোরিয়ার মাত্র ২.৮৩ শতাংশ রাস্তা পাকা করা হয়েছে।

-- এখানে শহরে কোন ট্রাফিক লাইটপোষ্ট নাই, পুলিশ হাত দিয়েই কাজ সারে। তবে অসুবিধা হয়না কারন একমাত্র মিলিটারীদেরই গাড়ী আছে!

--- উত্তর কোরিয়া  দাবী করে তারা দুনিয়াতে দ্বিতীয় সবচাইতে সুখী নাগরিক। প্রথম চীন।

-- এখানে সবাইকে সপ্তাহে ছয়দিন কাজ করতে হয় আর তার উপর আছে বাধ্যতামূলক স্বেচ্ছাশ্রম দেয়ার প্রথা। ফলে এখানে কারো কোন ব্যাক্তিগত সময়ই নেই!

-- এখানে রেডিও বাজবে তবে আপনি অফ করতে পারবেননা! বাজবেই। শুনতেই হবে আপনাকে! সরকারি বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা সারাদিন চলে এই রেডিও চ্যানেল গুলিতে। 

-- সারা দেশে মাত্র তিনখানা টেলিভিশন চ্যানেল আছে, যেগুলি সরকারি চ্যানেল এবং সেগুলি এ দেখতে হবে। 

---উত্তর কোরিয়ার ঝাঁ চকচকে শহর পিয়ংইয়ংএ  থাকেন অভিজাতরা। গ্রামের মানুষের জীবনমান বেশ নিম্ন। কৃষিজীবী এসব মানুষের শ্রমে টিকে আছে দেশটির অর্থনীতি। প্রয়োজনে এসব অসহায় মানুষের শ্রমকে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করে পিয়ংইয়ং।

--উ. কোরিয়াতে গাঁজা মারিযুয়ানা সেবন করা গুদামজাত করা বা নিয়ে চলাচল করা বিধিসম্মত। কোন অসুবিধা নাই। প্রকাশ্যেই ওসব চাষাবাদ হয় আর কি!

---এ দেশের ২৮টি স্টেটে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত চুলের ফ্যাশন প্রচলিত। নারীরা ১৪ ধরনের হেয়ার কাট থেকে নিজের পছন্দেরটি বেছে নেন। বিবাহিত নারীদের ছোট চুল রাখতে হয়। আর অবিবাহিতরা লম্বা ও কার্লি চুল রাখতে পারেন। পুরুষরা চুল ৫ সেন্টিমিটারের বেশি লম্বা করতে পারেন না।

--প্রতি বছরই বাধ্যতামূলকভাবে হাজারো মানুষকে বিদেশে কর্মী হিসেবে পাঠানো হয়। চীন, রাশিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের কৃষি, খনি, টেক্সটাইল, নির্মাণসহ বিভিন্ন খাতে তাদের কাজ করতে হয়। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স ব্যয় করা হয় সামরিক খাতে।

--উত্তর কোরিয়ার জিডিপি অপেক্ষা বিল গেটসের মোট সম্পদের পরিমাণ ৫ গুণ বেশি। দেশটির জিডিপি ১৫.৪৫ বিলিয়ন। তবে বিশ্ব ব্যাংকে এ বিষয়ে কোনো নিশ্চিত তথ্য নেই।
১৯৭০ সালে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি দঃ কোরিয়া থেকে বড় ছিল। এখন উঃ কোরিয়ার জিডিপি দঃ কোরিয়ার জিডিপির ২.৫ % মাত্র! 

--নর্থ কোরিয়া বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে হিসেবে সোমালিয়ার পাশাপাশি অবস্থান করছে। ২০১৪ সালে দ্য করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স এ তথ্য প্রকাশ করে।

--উত্তর কোরিয়ার আর্থিক আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস হয়ে উঠেছে দেশটির পর্যটন খাত। দেশটিতে বেশিরভাগ পর্যটকই আসে চীন থেকে। সরকারি তথ্য মতে, ২০১৪ সালে লক্ষাধিক পর্যটক তাদের দেশ ভ্রমণ করেছেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যেসব পর্যটক উত্তরে যায়, তাদের অনেককেই গুপ্তচর সন্দেহে আটক করা হয়। অবশ্য এতেও দেশটির পর্যটন শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও চোরাচালান, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ নানান উপায়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় কোষাগারে অর্থ জমা হয় বলে জানা যায়।

--দেশটির আয়ের অন্যতম একটি বড় খাত চীনা অনুদান। উত্তর কোরিয়ার প্রধান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মিত্র চীন। বেইজিং প্রতি বছরই প্রতিবেশী এ মিত্রকে মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে থাকে।
বলা হয়, আঞ্চলিক শক্তি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে চীনা সহায়তায় টিকে আছে উত্তর কোরিয়া। পশ্চিমা দেশগুলো যখন এ দেশের ব্যাংকগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞার খড়গ বসিয়েছে, তখন চীনা ব্যাংকগুলো উদারভাবে এগিয়ে এসে দেশটির আর্থিক খাতের পাশে দাঁড়িয়েছে।

--- পৃথিবীর সবচাইতে বড় স্টেডিয়াম উঃ কোরিয়ার রাজধানী পিয়ং ইয়ং এ অবস্হিত। এটার ধারণ ক্ষমতা ১৫০০০০ জন!

--শোনা যায় উত্তর কোরিয়ায়  শাস্তি হলে তাকে তিন পুরুষ ধরে শাস্তি পেতে হবে! ধরুন কারো শাস্তি হল ক্যাম্পে সাজা খাটবার। তখন ঐ লোক তার পুরো পরিবার, তার ছেলে আর তার নাতি বা হবু নাতি সবাইকে বাকি জীবন কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পেই কাটাতে হবে!

-- একাধিক সূত্রানুযায়ী উত্তর কোরিয়াতে এই মুহুর্তে প্রায় ২ লাখ আসামী বিভিন্ন কাজের ক্যাম্পে সাজা খাটছে!


-- উত্তর কোরিয়ার কারাগারের ভয়াবহতা ঠিক কতখানি? তা জানার আগ্রহ আমাদের বৈকি, সারা দুনিয়ার মানুষেরই আছে। তবে ২০১৪ সালে দ্য ইউনাইটেড নেশন্স ইনকোয়ারি ইনটু হিউম্যান রাইটস অ্যাবিউজেস কর্তৃক প্রকাশিত কিম কোয়াং-ইল নামে প্রাক্তন এক রাজনৈতিক বন্দীর করা ৮টি পেন্সিল স্কেচ প্রকাশ করে সারা দুনিয়াতে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। শিউরে উঠেছিল সমগ্র বিশ্বের মানুষ। যেখানে উত্তর কোরিয়ার কারাগারের ভিতরের অবস্থা ফুটিয়ে তুলেছিলেন কিম কোয়াং-ইল।

---উত্তর কোরিয়ার কারাবন্দীদের পান থেকে চুন খসলেই তাদের ৬০সেমি উঁচু আংটায় এভাবে উল্টো করে হাত বেঁধে রাখা হয়, যতক্ষণ না সে রক্তবমি করে।

-- সেখানে জেলে খুব কমন একটি শাস্তি হচ্ছে ‘কাল্পনিক মোটরসাইকেল’। তাদের দুই হাত উঁচু করে ঘণ্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কখনো কখনো শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে, যেমন- হাতে, অন্ডকোষে ইত্যাদিতে ওজন বেঁধে দেওয়া হয়।

-- ক্ষুধা-তৃষ্ণায় জর্জরিত অসুস্থ কারাবন্দীরা যারা মারা যায়, তাদের লাশের ঘরে দিনের পর দিন এভাবে ফেলে রাখা হয়। যতদিন গাড়ি ভরার মত লাশ না জমা হয় ততদিন এভাবেই পড়ে থাকে। অনেকের মৃতদেহ এখান থেকেই ইদুরে খেয়ে ফেলে।পরিমানমত লাশ জমা হলে তা পাহাড়ের চুড়ায় নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

--খাদ্য হিসেবে তাদের বিভিন্ন জিনিস দেওয়া হয়, যার ভিতরে সিদ্ধ পচা শসা অন্যতম। যদি কেউ খেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে তবে তাকে ১২০সেমি লম্বা ও ১০০সেমি চওড়া ছোট লোহার সেলে রাখা হয়, যেখানে না পারা যায় বসা, না পারা যায় শোয়া। মাঝে মাঝে এত অখাদ্য দেওয়া হয় যে তা ইদুরেও খায় না।ক্ষুধার্ত কারাবন্দীরা কখনো কখনো খাবারের জন্য এতটাই বেপরোয়া হয়ে যায়, যে হাতের কাছে সাপ-ব্যাঙ-ইদুর যা পায় তাই খায়। এভাবে অনেকেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। কিম কোয়াং-ইল নিজেও এসব খেয়ে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন।

--জেলে নিজ কক্ষে ঢুকতে গেলে তাদের ১০সেমি উঁচু ছোট দরজা দিয়ে ঢুকতে হয়। এতে করে তাদের হাটু ও কনুইয়ে ভর দিয়ে ঢুকতে হয়। সাথে বুট জুতোর লাথি তো আছেই। কারণ বলা হয়, জেলে ঢোকা মাত্র তুমি আর মানুষ নেই, তুমি পশু হয়ে গেছো।


--- রুম ৩৯(মাঝে মাঝে বলা হয় ব্যুরো ৩৯) তাদের বিভিন্ন গোপন সংগঠন এর ভিতর সবচেয়ে গোপনীয়তাপুর্ন। উত্তর কোরিয়ার নেতার জন্য ফরেন কারেন্সি কিভাবে সংগ্রহ করা যায় তার বিভিন্ন মেথড খোঁজার জন্য এটা তৈরি করা হয়। ১৯৭০ সালে এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় । বিভিন্ন রকমের নিষিদ্ধ অস্ত্র কেনাবেচা এবং সুইস ব্যাংকের কিছু অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পুরো পৃথিবীতে ইন্স্যুরেন্স ফ্রডের জন্য এই সংস্থাটিকে দায়ী করা হয়। এমনকি আমেরিকান ডলারের নকল প্রতিলিপি তৈরির অভিযোগও আছে এই সংস্থার উপর।
আপনারা কি সুপার ডলারের নাম শুনেছেন??
যাদের জন্য ব্যাপারটি নতুন তাদের জন্য বলছি এগুলো হচ্ছে আমেরিকান ডলারের নকল ভার্সন অথবা জাল ডলার যেটি পৃথিবীর সব গোয়েন্দা সংস্থা অথবা আমেরিকার মত দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো, এগুলো ছিল মূল ডলারের মতই উন্নতমানের কটন- লিনেন বেন্ড দিয়ে তৈরি এবং আমেরিকার মুদ্রার অনেক সিকিউরিটি ফিচার এখানে রিক্রিয়েট করা হয়েছিল। এই পুরো ব্যাপারটার জন্য রুম ৩৯ এর দিকেই আঙ্গুল তোলা হয়েছিল সরাসরি। বিভিন্ন রকমের নিষিদ্ধ অস্ত্র কেনাবেচা এবং সুইস ব্যাংকের কিছু একাউন্টের মাধ্যমে পুরো পৃথিবীতে ইন্সিওরেন্স ফ্রডের জন্য এই অরগেনাইজেসনটি দায়ী। যেখানে পৃথিবীর সব বড় বড় গোয়েন্দা সংস্থা গুলো সবসময়ই এদের কাছে নাকানি চুবানি খায় হর হামেশাই আমাদের মত সাধারণ মানুষের তাদের আস্তানায় ঢোকার কল্পনা নেহাতই হাস্যকর। 

--বিশ্বাস করা হয় যে সুইজারল্যান্ড এবং চীনে ১০ থেকে ২০ টা ব্যাংক একাউন্ট আছে যা বিভিন্ন বেআইনি কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট যেমন জালিয়াতি, মানি লন্ডারিং, মাদকদ্রব্য পাচার এবং অবৈধ অস্ত্র বিক্রি, যা এখান থেকে পরিচালনা করা হয়। জনশ্রুতি অনুযায়ী এই সংগঠনের ১২০ টা বিদেশী বানিজ্য কোম্পানি আছে যেগুলো এটা অপারেট করে। ক্ষমতাশীল পরিবারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রনে এগুলো পরিচালিত হয়, যারা সুস্পষ্টভাবে কোন ধরনের বেআইনি কাজের সাথে নিজেদের সংশ্লিষ্ট থাকার দায় অস্বীকার করে। বিশ্বাস করা হয় রুম ৩৯ উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের ক্ষমতাশীল ওয়ার্কার্স পার্টি বিল্ডিং এর ভিতরে অবস্থিত, কিন্তু নিশ্চিতভাবে কেউ জানেনা।
এ কথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, অনেকের পক্ষে কখনো এই ‘রুম ৩৯’ এ প্রবেশ করা সম্ভব নয়। কারণ এটি যে দেশে অবস্থিত; সেই উত্তর কোরিয়ায় স্বাধীনভাবে ওয়েবসাইট ব্যবহার করাও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এর চেয়েও আশ্চর্যজনক সত্য হলো- খোদ উত্তর কোরিয়ারও খুব কম লোকই এখানে প্রবেশ করতে পেরেছেন। কেননা রুম ৩৯-কে সেই দেশের সব অবৈধ কাজকর্মের কেন্দ্র বলা হয়।তবে অফিসিয়ালি এটি কোরিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টির ‘সেন্ট্রাল কমিটি ব্যুরো ৩৯’ নামে পরিচিত। এছাড়া এই কক্ষটি সব অবৈধ কাজকর্মের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
এছাড়াও রুম ৩৯-কে ‘কোর্ট অব ইকনমি’ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। এই স্থাপনাটি তৈরি হয় ১৯৭০ সালে। বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের জন্য সব বিদেশি মুদ্রা কেনাকাটা এখানেই করা হয়ে থাকে।