Pages

Saturday, 22 September 2018

ব্ল্যাক হোল রহস্য

আমাদের পৃথিবীটা যেই সৌরজগত এর মধ্যে অবস্থিত সেই সৌরজগত এর বাইরে যে মহাবিশ্ব আছে সেখানে খুবই রহস্যময় বিষয়বস্তু চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। আমরা কিন্তু সবাই সেই বিষয়গুলি নিয়ে খুব একটা জানতে চাই না। তবে যারা বিজ্ঞানের উপরে বিশ্বাস রাখে তাদের  এক অংশ কে দেখা যায় এসব অজানা নিয়ে আরো জানতে আগ্রহী কিন্তু, বাকীরা জীবনে কয়েকবার মাত্র আকাশের দিকে যখন সময় পায় তখন একটু তাকিয়ে মনে কল্পনা করে কি আছে এই আকাশে। কিছু তারা ও চাঁদ দেখতে পারলেই মহাকাশ সম্পর্কে জানার ইচ্ছা শেষ হয়ে যায় তাদের। আজকে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর নিয়ে অল্প কিছু আলোচনা করবো।



রহস্যময় মহাবিশ্বের অনেক রহস্যময় জিনিসের মধ্যে মানুষ আজ পর্যন্ত খুব অল্প কিছুই জানতে পেরেছে, ৯৯,৯৯% এখনও মানুষের অজানা। তাহলে একবার ভেবে দেখুন এই মহাবিশ্বের কি জানতে পেরেছে আজকের পৃথিবীর মানুষ। পৃথিবী থেকে ভাগ হয় সৃষ্ট সেই চাদে মানুষ আজ থেকে প্রায় অর্ধশত বছর আগেই ঘুরে এসেছেন। চাদের থেকেও এই মহাবিশ্বের আরো একটি রহস্য হচ্ছে এই ব্ল্যাক হোল। পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই কৃষ্ণ গহ্বর সম্পর্কে এ পর্যন্ত জানতে পেরেছেন সামান্যই। তবে যতটা তথ্য উদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন তা যথার্থই অভাবনীয়, সাধারণ চিন্তার বাইরে।


পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার এর নাম দেন ব্ল্যাক হোল, কারন ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষ বল এতই বেশি যে এর আকর্ষন থেকে এমনকি আলোও(ফোটন) বের হয়ে আসতে পারে না। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন তার জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত দিয়ে ধারনা করেন ব্ল্যাক হোল থাকা সম্ভব। আর মাত্র ১৯৯৪ সালে এসে নভোচারিরা প্রমাণ করেন আসলেই ব্ল্যাক হোল আছে। এটি কোন সাইন্স ফিকশন নয়। জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল শোয়ার্জস্কাইল্ড ১৯১৬ সালেই দেখান যেকোন তারকা ব্ল্যাক হোলে পরিণত হতে পারে। সূর্যের ব্যাসার্ধ (৮৬৪,৯৫০মাইল) যদি কমতে কমতে সঙ্কুচিত হয়ে ১.৯ মাইলে পরিণত হয় তাহলে সূর্যও ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে।

সূর্যের চেয়ে কমপক্ষে দশগুণ বড় নক্ষত্রদের জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে এরা সঙ্কুচিত হতে হতে অতি খুদ্র অন্ধকার বিন্দুতে পরিণত হয়। এধরণের ব্ল্যাক হোলকে বলা হয় স্টেলার মাস (Stellar Mass) ব্ল্যাক হোল। বেশীরভাগ ব্ল্যাক হোলই এধরণের। কিন্তু নক্ষত্রের সঙ্কুচিত হয়ে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হওয়ার পরও ব্ল্যাক হোলে নক্ষত্রের সমান ভর ও অভিকর্ষ টান থাকে। আমাদের গ্যালাক্সিতে সম্ভবত ১০০ মিলিয়ন ব্ল্যাক হোল রয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি সেকেন্ডে একটি ব্ল্যাক হোল সৃষ্টি হয়। আরেক ধরণের ব্ল্যাক হোল হল সুপার মেসিভ (Super massive) ব্ল্যাক হোল। তাদের এক মিলিয়ন তারার ভর এমনকি এক বিলিয়ন তারার ভরও থাকতে পারে। সুপার মেসিভ ব্ল্যাক হোলরা কোন গ্যালাক্সির মিলিয়ন বা বিলিয়ন তারাকে একত্রে ধরে রাখে। আমাদের গ্যালাক্সিতেও কিন্তু একটি সুপার মেসিভ ব্ল্যাক হোল আছে। সেটির নাম Sagittarius A, যা আবিষ্কৃত হয়েছিল ৪০ বছর আগে।

ব্ল্যাক হোলের আকর্ষণ এতই বেশী যে এর থেকে দৃশ্যমান আলো, এক্স রে, অবলোহিত রশ্মি কিছুই রক্ষা পায় না। এজন্যই ব্ল্যাক হোল আমাদের কাছে অদৃশ্য। বিজ্ঞানীরা তাই ব্ল্যাক হোল নিয়ে গবেষণা করার সময় খেয়াল করেন ব্ল্যাক হোল তার আশপাশকে কিভাবে প্রভাবিত করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্ল্যাক হোল থেকে প্রায়ই উজ্জ্বল গ্যাস ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফোয়ারা নিক্ষিপ্ত হয়।

আলট্রা ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলরা বিলিয়ন বছর আগে তৈরি হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে ভর অর্জন করে এত বৃহৎ ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়েছে। বড় ব্ল্যাক হোলরা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে এটিই একমাত্র রহস্য নয়! এই ব্ল্যাক হোলরা কিভাবে সহস্র বিলিয়ন তারা ধরে রাখে তাও বিশাল রহস্য। সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলরা আগে সৃষ্টি হয়েছে নাকি গ্যালাক্সির গুচ্ছ বা ক্লাস্টার আগে সৃষ্টি হয়েছে তা আজও অজানা।

একটি আবিস্কার ব্ল্যাক হোল নিয়ে রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে। বৈজ্ঞানিক Jonelle Walsh ও তাঁর সহকর্মীরা হাবল টেলিস্কোপের সাহায্যে NGC 1277 নামের একটি গ্যালাক্সি আবিস্কার করেছেন। গ্যালাক্সিটি ২০০ আলোক বছরের চেয়েও অধিক দূরে অবস্থিত। NGC 1277 এর আকার আমাদের মিল্কিওয়ের চার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু Jonelle Walsh ও তাঁর সহকর্মীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গ্যালাক্সিটির কেন্দ্রে একটি ব্ল্যাক হোল আছে যার আকার এই পর্যন্ত যত বড় ব্ল্যাক হোল আবিস্কার হয়েছে তার একটি। ধারণা মতে এটি Sagittarius A এর তুলনায় ৪০০০ গুণ বড়! Jonelle Walsh এর ভাষায় ‘ব্ল্যাক হোলটি তার গ্যালাক্সির তুলনায় অনেক বড়”

আগে ধারণা করা হত ব্ল্যাক হোল ও গ্যালাক্সি এক সাথে বড় হয় এবং এক সাথেই বড় হওয়া থেমে যায়। কিন্তু এই নতুন আবিস্কার অনুযায়ী হয় ব্ল্যাক হোল তার আশেপাশের তারা ও ব্ল্যাক হোল খেয়ে বড়  হতে থাকে অথবা শুরু থেকেই এটি কোন উপায়ে বেশী বড় হয়ে গিয়েছে।

এরকম আরো কি আশ্চর্য হবার মতো ঘটনা আছে এই ব্ল্যাক হোল এর ভেতরে যা আমাদের এই পৃথিবীতে কখনই ঘটে না। আলোর ব্যাপারটি দেখুন। যেহেতু এই ব্লাক হোল থেকে আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না তাহলে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ত কিভাবে দেখা যায় বা বুঝা যায় এরকম প্রশ্ন উঠতে পারে। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, অনেক সময়েই মহাকাশে প্রচুর তারকারাশি দেখা যায় যারা একটি বিশেষ বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে অথবা সর্পিলাকার গ্যাসীয় বস্তু দেখা যায় যা কোন বিন্দুকে কেন্দ্র করে অবস্থান করছে। এই বিশেষ বিন্দুগুলোই হল ব্ল্যাক হোল যেগুলোকে দেখা যাচ্ছে না ঠিকই কিন্তু তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে তারকারাশি বা গ্যাসীয় বস্তুগুলোর অবস্থান আর তাদের গতি-প্রকৃতির মাধ্যমে। বর্তমানে কিছু উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার করে কিছু টেলিস্কোপ দিয়ে নেগেটিভের মতো কিছু ছবিও তুলে দেখাতে সক্ষম হয়েছে সৌরবিজ্ঞানীরা।

একসময় আশংকা করা হত, সূর্য কি তবে একদিন নিজেই ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে –পৃথিবীকে গ্রাস করবে? নাসার বিজ্ঞানিরা এ আশংকা উড়িয়ে দিয়েছেন।

 আমাদের গ্যালাক্সির নাম মিল্কি ওয়ে বা আকাশ গঙ্গা। আকাশ গঙ্গার ঠিক মাঝখানে রয়েছে সূর্য থেকে ৪ মিলিয়ন বেশি ভরের একটি ব্ল্যাক হোল। ১৬ বছর ধরে আশে-পাশের তারামন্ডলীর গতি-বিধি পর্যবেক্ষণ করে গত ২০০৮ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা Sagittarius A-star নামের ব্ল্যাক হোলটি শনাক্ত করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ব্ল্যাক হোলটি কোন কিছু গলাধঃকরণ করছে না। ব্ল্যাক হোল এর ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত ধারণাটি হচ্ছে ব্লাক হোল সব কিছু গ্রাস করে নেয়।

আলো শুষে নেয় বলে ব্ল্যাক হোল দেখা সম্ভব নয়। আলো শুষে নিতে পারে বলে হয়তো ব্ল্যাক হোল সব কিছু গলাধঃকরণ করতে পারে এই ধারণা সবারই হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ব্ল্যাক হোলেরও নিজস্ব ভর রয়েছে। অধিকাংশ গ্যালাক্সিই ব্ল্যাক হোলকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান থাকতে পারে। তাই বলে, ব্ল্যাক হোল গ্যালাক্সিতে থাকা নক্ষত্র, গ্রহসমূহ গিলে ফেলে না। তাই এটা বলা যায়, আকাশ গঙ্গার মাঝখানে বৃহৎ ব্ল্যাক হোল যদি থেকেও থাকে, তা আমাদের পৃথিবীকে কখনোই গিলে ফেলবে না। বরং সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহগুলোর সাথে সমান দূরত্ব রেখে ঘূর্ণায়মান থাকবে। আবার ব্ল্যাক হোল সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় বৃহদায়তনের ভর সূর্যের নেই বলে সূর্যও কখনো ব্ল্যাক হোল এ পরিণত হবেনা।

এবার একটু ছোট্ট একটি চিন্তা করুন আমরা জানি যে আমাদের এই বিশাল পৃথিবী থেকে যেই ছোট্ট সূর্যটি আমরা দেখতে পায় তা আমাদের এই পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুন বড় একটি বস্তু। তার মানে এই সূর্যের কাছে আমাদের পৃথিবী কিছুই না। আবার যেই নক্ষত্র বা তারার কথা বলা হচ্ছে যাদের এই ব্ল্যাক হোল গিলে ফেলতে পারে সেই নক্ষত্রর একেকটার আকৃতি কিন্তু এই সুর্য থেকে কয়েক হাজার এমনকি কয়েক লক্ষ গুন বড় হতে পারে। তাহলে একটি ব্ল্যাক হোল বা (Super massive) ব্ল্যাক হোল এর ভেতরে আমাদের এই পৃথিবীর সমান কতটা পৃথিবী ধরতে পারে একটু চিন্তা করে দেখুন একবার। দরকার নেই থাক। আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এতোই বিশাল যে এর গ্রহ-উপগ্রহ, তারা, নক্ষত্র বিজ্ঞানীদের প্রায়ই ধাঁধায় ফেলে দেয়। আর এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ‘ইউওয়াই স্কুটি’ (UY Scuti) নামের সবচাইতে বড় তারা যেটা একাই বিজ্ঞানীদের মাথা গুলিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।

Saturday, 15 September 2018

মহাকাশে যুদ্ধের হাওয়া - গোপন মিশনে রহস্যময় মহাকাশযান এক্স-৩৭বি!

কল অফ ডিউটি ঘোস্ট বা ইনফাইনাইট ওয়ার - বিশ্ব জুড়ে খ্যাতি পাওয়া এই গেম গুলির গুরুত্ব পূর্ণ মিশনের মধ্যে দেখানো হয়েছিল মহাকাশে যুদ্ধ, মহাকাশকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সেনাবাহিনী যা পৃথিবীর উপর এক বিপর্যয় নিয়ে আসে। সত্যি কি সেই দিন আস্তে চলেছে ? এই ভিডিও গেম গুলি কি কেবল কল্পনা থেকে যাবে না কি হয়ে উঠবে বাস্তব দূরদৃষ্টি সম্পন্ন লেখকদের আরো একটি রচনা? বর্তমানের অনেক ভিডিও গেম (যেমন - এসাসিনস ক্রিড, ব্যাটেলফিল্ড ) বাস্তব পৃথিবী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরী হচ্ছে যা পরে জনপ্রিয় হচ্ছে। যাক সে কথা পরে হবে,
আজ যে বিষয় নিয়ে বলছি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হচ্ছে মার্কিন বিমান বাহিনীর মানববিহীন এক্স-৩৭বি স্পেসপ্লেন।


আকারে ছোট হলেও, অনেকটা যেন নাসার পুরনো দিনের মহাকাশযান!

লম্বায় ৩০ ফুট বা ৯.১ মিটার (মানে, একটা আড়াই তলা বাড়িকে মাটির সঙ্গে সমান্তরাল রাখলে তা যতটা জায়গা জুড়ে থাকে)। আর তার একটা ডানা থেকে অন্য ডানাটার দূরত্ব ১৫ ফুট।ওজন ৪ হাজার ৯শ' ৮৯ কেজি।

পাঠানো হয়, কিছু দিন মহাকাশে কাটিয়ে সে ফিরে আসে। তার পর আবার তাকে পাঠানো হয় মহাকাশে। কিন্তু কেন পাঠানো হয়? কেনই-বা তাকে বার বার চুপিচুপি পাঠানো হয় মহাকাশে?
মহাকাশ যাত্রায় কি ধরণের পে লোড বা মালামাল বহন করে বা পৃথিবীর কক্ষে দীর্ঘ অবস্থানকালে এটি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় তা বরাবরই গোপন রাখে আমেরিকা।
প্রথমবারের মতো অবতরণ করে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে। অবতরণের সময় এর সৃষ্ট 'সনিক বুম' নামে পরিচিত প্রচণ্ড শব্দে অনেকেই চমকে ওঠেন।
প্রতিবারই ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যাণ্ডেনবার্গ বিমান ঘাঁটিতে এটি অবতরণ করেছে।
মার্কিন বিমান বাহিনী যেসব গোপন মিশন পরিচালনা করে এ মহাকাশ যানটি তারই অংশ ছিল। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগণ জানিয়েছে- এ মহাকাশযানটি ঝুঁকি কমানোর কাজ করছিল।

এ প্রকল্পের জন্য কত ডলার খরচ করা হয়েছে, সে বিষয়টিও গোপন রাখা হয়েছে। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো এ বিশেষ মহাকাশযানটি উড্ডয়ন করা হয়েছিল।

মার্কিন বিমান বাহিনীর মানববিহীন এক্স-৩৭বি স্পেসপ্লেনটি দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্পেস-এক্স উৎক্ষেপণ করবে। এর আগেও স্পেস-এক্স মহাকাশে পণ্যবাহী রকেট উৎক্ষেপণ করেছিল। পাশাপাশি ফ্যালকন রকেট পুনরুদ্ধারের চেষ্টায়ও প্রতিষ্ঠানটি সফলতার পরিচয় দেয়।

বিমান বাহিনীর সেক্রেটারি হেথার উইলসন সিনেট আর্মড সার্ভিস কমিটির শুনানিতে এ ঘোষণা দেন।

বিমান বাহিনীর দুইটি এক্স-৩৭বি স্পেসপ্লেন আছে। তবে কোনটি উৎক্ষেপণ করা হবে তা  জানানো হয় না।

এক্স-৩৭বি মহাকাশ যানটি অরবিটাল টেস্ট ভিকেল (ওটিভি) হিসেবেও পরিচিত। মার্কিন বিমানবাহিনী এক্স-৩৭বি উৎক্ষেপণের জন্য কেন স্পেস-এক্সকে বেছে নিয়েছে তা জানা যায়নি। স্পেস-এক্স এ পর্যন্ত চারটি রকেট উৎক্ষেপণ করেছে।

এটি পৃথিবী নামক গ্রহটির চারপাশে অন্তত হাজারবার ঘুরপাক খেয়েছে। বিশেষ করে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের উপর দিয়ে উড়েছে বেশ ক’বার।

ক্রুবিহীন এই বিমানে কোন ককপিট-জানালা নেই। সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি হলো, যেখানে কোন মহাকাশযান সর্বোচ্চ ১৭ দিন অবস্থান করতে পারে কক্ষপথে, সেখানে  প্রথম মিশনের আওতায় (ওটিভি-১) ২২৫ দিন মহাশূন্যে অবস্থান করেছিল এক্স-৩৭বি। তখন এটি কলোরাডোয় অবস্থিত বিমান বাহিনীর একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল।
এক্স-৩৭বি মূলত ছোট মনুষ্যবিহীন সেপসপ্লেন তৈরির জন্য নাসা’র একটি প্রজেক্টের ফলাফল। নাসা এই প্রজেক্ট ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্স প্রজেক্টস অ্যাজেন্সি’র (ডারপা) হাতে হস্তান্তর করে। কিন্তু বাজেট সমস্যার কারণে প্রজেক্টটি আমেরিকান বিমান বাহিনীর র‌্যাপিড ক্যাপাবিলিটিজ অফিসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকে প্রজেক্টের তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীই নিয়োজিত আছে। বিশ্বখ্যাত বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং-এর ফ্যান্টম ওয়ার্কস বিভাগ এক্স-৩৭বি মডেলের দুইটি বিমান তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনী বলছে না, এক্স-৩৭বি মহাকাশে মূলত কী ধরনের অভিযানে নিয়োজিত। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনী প্রযুক্তিগত অর্জন হিসেবে মহাকাশ সমপর্কিত বিভিন্ন যান সমপর্কে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করে না। কিন্তু এই মিশনের বেলায় তারা একেবারেই চুপ! ফলে গুজবের ডালপালা গজাচ্ছে।

সামরিক বাহাদুরিতে শুধু স্থল, জল আর আকাশপথেই থেমে নেই যুক্তরাষ্ট্র। 

সম্প্রতি পাওয়া তথ্যে তারা গড়তে যাচ্ছে 'মহাকাশ বাহিনী'। সেনাবাহিনীর ষষ্ঠ শাখা হিসেবে মহাকাশেও মোতায়েন থাকবে দেশটির সেনা। আগামী দুই বছরের মধ্যে এই বাহিনী মোতায়েন করা হবে। বাহিনী গঠনের জন্য এরই মধ্যে ভোট দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস আর্মড সার্ভিস কমিটির সদস্যরা। খবর ইনডিপেন্ডেন্টের। যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর ষষ্ঠ শাখা হিসেবে মহাকাশ সেনা পৃথিবীর আবহমণ্ডলের বাইরে অর্থাৎ মহাশূন্যে সামরিক তৎপরতায় নিয়োজিত থাকবে। প্রয়োজনে যুদ্ধও করবে এ বাহিনী। পেন্টাগন ও মার্কিন প্রতিরক্ষাদপ্তরকে ইতিমধ্যেই এই ‘স্পেস ফোর্স’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। এই সেনাবাহিনী হবে মার্কিন নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, মেরিন, সেনাবাহিনী এবং উপকূলরক্ষীর সমকক্ষ, কিন্তু আলাদা। এটি হবে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর ষষ্ঠ শাখা। ১৯৪৭, মার্কিন বিমানবাহিনীর একাত্তর বছর পর মার্কিন সেনাবাহিনীতে যুক্ত হচ্ছে কোনও নতুন শাখা।বিমানবাহিনীর বৈপ্লবিক সংস্কারের অংশ হিসেবে এ বাহিনী তৈরি হচ্ছে। আগামী দু'বছরের কম সময়ের মধ্যে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য মহাকাশ বাহিনী গঠনের বিষয়টি এখনও পুরোপুরি অনুমোদন পায়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বাহিনী অনুমোদন লাভ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ কমান্ডের ছাতার তলে চলে আসবে বিমানবাহিনীর আওতাধীন সব মহাকাশ মিশন। মহাকাশ কমান্ডের একজন নতুন প্রধানও থাকবেন। আর এর মাধ্যমে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফে যোগ হবে ১৮তম সদস্য।

ট্রাম্পের টুইট: ‘মহাকাশবাহিনী গঠনের কাজ এগিয়ে চলেছে সব দিক থেকে!’

‘আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লেখার সময় চলে এসেছে, প্রস্তুত হতে হবে পরবর্তী রণাঙ্গনের জন্য, যেখানে আমাদের জনগণ, আমাদের দেশের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের হুমকিকে বাধা দেওয়া এবং পরাস্ত করার জন্য ডাকা হবে আমেরিকার সেরা ও সাহসীদের।’ বলেছেন পেন্স। ‘মহাকাশে মার্কিন গর্বের উত্তরাধিকারকে পুনর্প্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। মহাকাশ, তাঁর কথায়, একটি রণাঙ্গন, ঠিক যেমন আকাশ, মাটি, জল।’

আশঙ্কা বাস্তব হলে কোলেটারাল ড্যামেজ বা অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষয়ক্ষতি হবে অবর্ণনীয়। মহাকাশে অস্থিরতা মানে বিপন্ন হবে এই বসুন্ধরার অস্তিত্ব।

নিজস্ব উগ্র জাতীয়তাবাদী মেজাজে তবু ট্রাম্প বলেছেন: ‘মহাকাশে আমেরিকার নিছক উপস্থিতিই যথেষ্ট নয়, মহাকাশে থাকা উচিত মার্কিন আধিপত্য।’

‘গত প্রজন্মে মহাকাশের পরিবেশের মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে: একসময় যা ছিল শান্তিপূর্ণ, যেখানে ছিল না কোনও প্রতিযোগিতা, এখন তা ভিড়েঠাসা, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।’ পেন্সের দাবি, চীন ও রাশিয়া মহাকাশকে তাদের লড়াইয়ের খাসতালুকে পরিণত করেছে, চোখ রাঙাচ্ছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চ্যালেঞ্জের মুখে কুঁকড়ে যাবে না।’

জুনে ট্রাম্প প্রকাশ্যে  স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন রাশিয়া ও চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতির সঙ্গে মহাকাশে সেনা গঠনের রয়েছে সরাসরি যোগ।

আটের দশকের গোড়ায় রেগান বলেছিলেন ‘স্টার ওয়ার্স’, বা মহাকাশ যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা। যদিও সেই প্রস্তাব ছিল শুধুই একটি পরিকল্পনা, যা কখনও তেমনভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু বর্তমানে  মহাকাশবাহিনী গঠনের জন্য রয়েছে অর্থ সংস্থানের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা। তবে রেগান থেকে ট্রাম্প— এই সময়ে আমেরিকা মহাকাশে স্থাপন করেছে সামরিক উপগ্রহ। একই পথে হেঁটেছে রাশিয়া, চীন। এই মুহূর্তে মহাকাশে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৮৫৯টি উপগ্রহ। এর মধ্যে ১৫৯টি ‘সামরিক’ উপগ্রহ, যেগুলি সরাসরি অপারেট করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। যেখানে চীন, রাশিয়ার রয়েছে যথাক্রমে ৭৫ ও ৩৬টি সামরিক উপগ্রহ।

মার্চে প্রথম, সান দিয়েগোতে মার্কিন সেনাবাহিনীর উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘মহাকাশ নিয়ে আমাদের কৌশল হলো: আকাশ, মাটি, জলের মতো মহাকাশও হবে আমাদের কাছে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র। তাই সেখানে যুদ্ধ করার জন্য মহাকাশবাহিনী নামে আমাদেরও থাকবে একটি আলাদা বাহিনী।’ পরে মে মাসে হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে দাঁড়িয়ে একই সওয়াল করেন।

যদিও, ট্রাম্পের প্রস্তাব তাঁর মন্ত্রীসভা এবং পেন্টাগনের কাছ থেকেই বিরোধিতার মুখে পড়ে। শুরুতে বিরোধিতা করলেও ম্যাটিসই এখন বলছেন, এটি একটি ভালো পরিকল্পনা। মহাকাশ ‘একটা যুদ্ধের ময়দানে পরিণত হচ্ছে, আর আমাদের ওই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।’

তাছাড়া, এই ধারণার সমর্থক রয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের ভিতরে-বাইরে, যাঁরা বলছেন, মহাকাশ এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে নেই সামরিকবাহিনীর কোনও পৃথক শাখা।

‘মহাকাশ হলো এমন একটি জায়গা’ যেখানে পরিকাঠামোয় রয়েছে ‘শয়ে শয়ে কোটি ডলার।’ বলেছেন মার্ক অ্যালব্রেকট, যিনি ১৯৮৯-৯২ পর্যন্ত ছিলেন ন্যাশনাল স্পেস কাউন্সিলের সচিব। ‘আর্থিক লেনদেন থেকে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জি পি এস), যা আমাদের গাড়ির পথ নির্দেশ করে— হয় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মহাকাশ থেকে, নতুবা মহাকাশ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।’ মহাকাশে সামরিক কার্যকলাপ, তাঁর মতে, সেকারণেই ‘মার্কিন নৌবাহিনী— যারা সমস্যা তৈরি বা যুদ্ধ এড়ানোর জন্য প্রশান্ত মহাসাগর, অতলান্তিক এবং ভূমধ্যসাগরে ঘুরে বেড়ায়— তাদের থেকে শুধু বস্তুগতভাবেই পৃথক নয়— যে সমস্ত জিনিস আজ আমরা উপভোগ করছি, তার সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও এটা আমাদের প্রয়োজন।’

মার্কিন সামরিকবাহিনী মারাত্মকভাবে নির্ভরশীল মহাকাশের উপর। যোগাযোগ, পর্যবেক্ষণ এবং ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রকে চিহ্নিত করার জন্য এখন পেন্টাগনের কাছে মহাকাশই ভরসা। চীন ইতিমধ্যেই উপগ্রহকে ব্যবহার করে ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে আঘাত হানতে সক্ষম এমন একটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র আবিষ্কার করে ফেলেছে। যা নিয়ে ওয়াশিংটন খুবই উদ্বিগ্ন। ২০০৭, চীন এমনকি স্রেফ পরীক্ষা করার জন্য নিজেরই একটি আবহাওয়া-উপগ্রহকে গুলি করে নামিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যার প্রতিবাদ করেছে। অবশ্য পরের বছরই এস এম-৩ ক্ষেপণাস্ত্রকে ব্যবহার করে একটি উপগ্রহকে উড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

এটা কি আদৌ নতুন কোনও প্রস্তাব? মোটেই না। মহাকাশে সামরিকীকরণের এই ধারণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন না।

সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পর থেকেই, যখন মার্কিন সরকার জার্মানি থেকে নিয়ে এসেছিল প্রাক্তন নাৎসি রকেট বিজ্ঞানীদের। ‘মার্কিন মহাকাশ ও সমরাস্ত্র কর্মসূচিকে সাহায্য করতে তাঁদের কারিগরি কৃৎকৌশল’ ব্যবহারের জন্যই নিয়ে আসা হয়েছিল তাঁদের। লিখেছেন নিউইয়র্কের স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জ্যাক মান্নো, তাঁর ‘আর্মিং দ্য হিভেনস: দ্য হিডেন মিলিটারি অ্যাজেন্ডা ফর স্পেস, ১৯৪৫-১৯৯৫’ গ্রন্থে। প্রায় ১,০০০ বিজ্ঞানীকে সেদিন নিয়ে আসা হয়েছিল, ‘যাঁদের অনেকেই পরে মার্কিন সামরিকবাহিনী, নাসা এবং অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেছেন।’ যাঁর মধ্যে ছিলেন ‘ওয়ের্নহার ভ্যন ব্রাউন ও তাঁর সহকর্মীরা’, যাঁরা ‘শুরু করেছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য রকেট তৈরির কাজ।’

রহস্যজনক এক্স-৩৭বি মহাকাশ-বিমানের মতো মহাকাশে সামরিক প্রযুক্তি দেখভালের জন্য রয়েছেন ৩৬,০০০ কর্মী।  তাছাড়া, এখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে এক ধরনের মহাকাশবাহিনী: এয়ার ফোর্স স্পেস কমান্ড। এবং মার্কিন বিমানবাহিনী তার মহাকাশ অভিযানের জন্য প্রতি বছর খরচ করে ৮৫০ কোটি ডলার। এটাই যথেষ্ট নয়। আলাদা মহাকাশবাহিনী না থাকার কারণে পেন্টাগন প্রতি বছর খরচ করতে পারছে না ১২,৫০০ কোটি ডলার।

১৯৫৭, স্পুটনিক-১। বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ওড়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। একবছর বাদেই, বহির্জগতের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য গঠিত হয় রাষ্ট্রসঙ্ঘের কমিটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, গণসাধারণতন্ত্রী চীন ছিল তার অংশ। ১৯৬৬, রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হওয়ার পরের বছর ১৯৬৭-তে কার্যকর হয় আউটার স্পেস ট্রিটি। তিনটি দেশই সই করে সেই চুক্তিতে। অনুমোদন করে ১২৩টি দেশ।

চুক্তির মূল কথা ছিল: অনুসন্ধান, আবিষ্কারের জন্য সমস্ত দেশের কাছে মুক্ত থাকবে মহাকাশ। এই মহাকাশের কোনও কিছুকেই কোনও একটি দেশের ভূখণ্ড বলে দাবি করা যাবে না। মহাকাশের কার্যকলাপ হওয়া উচিত মানবতার কল্যাণের স্বার্থে। পারমাণবিক অস্ত্রসহ অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্র নিষিদ্ধ থাকবে মহাকাশে। কোনও দেশই তা মজুত করতে পারবে না। নিজেদের মহাকাশ যানের ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী থাকবে সংশ্লিষ্ট সেই দেশ।

সাম্প্রতিক সময়ে, গত পঁচিশ বছর ধরে এই ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’র সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে। শুধু পারমাণবিক অস্ত্র, গণবিধ্বংসী অস্ত্রই নয়, মহাকাশে থাকবে না কোনোরকম সমরাস্ত্র। মহাকাশ হবে সমরাস্ত্র-মুক্ত। বহির্জগতে সমস্ত সমরাস্ত্র নিষিদ্ধ করার জন্য এই সময়ে চীন, রাশিয়া রাষ্ট্রসঙ্ঘের মঞ্চে বারংবার খসড়া প্রস্তাব পেশ করে এসেছে। আর প্রতিবারই তা খারিজ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শেষে, গতবছর অক্টোবরে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের সংশ্লিষ্ট কমিটি ‘বহির্জগতে অস্ত্র প্রতিযোগিতা প্রতিরোধে বাস্তব পদক্ষেপ’ চেয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। বিরোধিতা করে মাত্র পাঁচটি দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ব্রিটেন, ইজরায়েল, ফ্রান্স এবং ইউক্রেন। ভোট দেয় প্রস্তাবের বিরুদ্ধে। সমর্থন করে ১২১টি দেশ।

১৯৯৯ সালে এক্স-৩৭বি কর্মসূচি শুরু হয়,  মার্কিন এ গোপন মিশন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা অনেক কথা বলছেন তবে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চীনের মহাকাশ গবেষণাগারের ওপর গোয়েন্দাগরি করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্স-৩৭কে নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষা এবং গোয়েন্দা উপগ্রহ স্থাপনের কাজে লাগানো সম্ভব। এ সব কৃত্রিম উপগ্রহ অস্ত্র সজ্জিতও হতে পারে। অবশ্য পেন্টাগন দাবি করছে, অস্ত্রসহ কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপনের কোনো পরিকল্পনায় এক্স-৩৭ ওটিভি জড়িত নয়।

এদিকে মহাকাশ বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ মহাকাশ বিমানটি আমেরিকার সামরিক কর্মসূচীরই অংশ এবং মহাকাশ যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ। যুদ্ধকালীন সময়ে এ বিমানটি হয়ে উঠতে পারে মার্কিন সামরিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এ বিমান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে সব ক্ষেপণাস্ত্র ও অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র। বিমানটি লেসার অস্ত্র সজ্জিত করে প্রয়োজনের সময় শত্রুর উপগ্রহগুলো অকেজো করে দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। এটি শত্রুর আন্তমহাদেশীয় ব্যালিষ্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস বা অকেজো করে দেয়ার কাজেও ব্যবহার করা হতে পারে।

কারও ধারণা, কাকপক্ষী টের পাওয়ার আগেই এটা মহাকাশ থেকে আচমকা বোমা ফেলে দিতে পারে আমেরিকার কোনও শত্রু দেশ বা কোনও উপদ্রুত অঞ্চলের ওপর।
কারও অনুমান, ‘এক্স-৩৭বি’ আমেরিকার শত্রু দেশের উপগ্রহকে বধ করার হাতিয়ার। যা ‘শত্রু’ উপগ্রহকে পুরোপুরি ধ্বংস বা তার যথেষ্ট ক্ষতি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার গোত্র ‘কিলার স্যাটেলাইট’ বা ঘাতক উপগ্রহ। 
আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই কৃত্রিম উপগ্রহকে ব্যবহার করেছে, করে চলেছে প্রতিরক্ষায়, প্রতি আক্রমণের কাজে। সন্দেহ নেই, শত্রু দেশের উপগ্রহগুলিকে মহাকাশে বধ করার ফন্দিও আঁটা হয়েছে কখনও সখনও।

২০১৫ সালে সেই আশঙ্কাটা জোরালো হয়েছিল একটি রুশ উপগ্রহের সন্দেহজনক গতিবিধিতে। অনেকেরই ধারণা হয়েছিল, মহাকাশে শত্রু দেশের পাঠানো উপগ্রহগুলিকে বিকল করে বা ধ্বংস করে দিতেই ওই উপগ্রহটি পাঠিয়েছে রাশিয়া।

‘এক্স-৩৭বি’ চলে সৌরশক্তিতে। তার সৌর প্যানেল সূর্যের আলো, বিকিরণ শুষে নিয়ে যে জ্বালানি বানায়, সেটাই ‘এক্স-৩৭বি’-কে দৌড় করায় কক্ষপথে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি এক্স-৩৭বি শুধুই একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হয়ে থাকে, তাহলে পেন্টাগন কেন এ সমপর্কে তথ্য প্রকাশ করছে না। এ সমপর্কে উইডেন বললেন, আমি মনে করি না যে, আমেরিকান সরকার অসৎ কিছু গোপন করার লক্ষ্যে এক্স-৩৭বি নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করছে। বরং এর কারণ হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক জড়তা।

বোয়িং বর্তমানে কেনেডি সেপস সেন্টারে অরবিটার প্রসেসিং সেন্টার রূপান্তরের কাজ করছে। বোয়িং এক্স-৩৭বি’র তুলনায় বড় এক্স-৩৭সি বানানোর প্রস্তাব করেছে। এক্স-৩৭সি ৬ জন মহাকাশযাত্রীকে নিয়ে কক্ষপথে যেতে ও ফিরতে পারবে। তবে এই প্রজেক্ট নির্ভর করবে রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সমপর্কের উপর। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়াই মহাকাশে যাত্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সক্ষম দেশ।

Saturday, 8 September 2018

বেনিংটন ট্রায়াঙ্গল - এক ভৌতিক অরণ্য

বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের নিয়ে পৃথিবীতে কম বিতর্ক তো হয় নি। সত্যিকার অর্থে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মাঝে আসলে কি আছে বলা মুশকিল। কিন্তু এমন স্থান পৃথিবীতে কেবলমাত্র একটি নয়।বেনিংটন ট্রায়াঙ্গল, ভারমন্ট, ইংল্যান্ড।বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের কথা আমরা শুনে আসলেও এই বেনিংটন ট্রায়াঙ্গলের ঘটনা আরো বেশি ভয়াবহ যেখানে ভিন্ন গ্রহের যান, অদ্ভুত আলো, শব্দ, গন্ধ ও অদ্ভুত প্রাণী দেখা যাওয়ার ঘটনা তো আছেই। সেই সাথে আছে মানুষের অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ঘটনাও।


এমন একটি বন যেখানে কেউ প্রবেশ করলেই রহস্যময়ভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। অনেকে উন্মাদে পরিণত হয়, অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে বা শব্দ শুনতে শুরু করে। তাদের কোন চিহ্নই পাওয়া যায় নি,ঠিক যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছেন তারা। এই ঘটনা নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমা, লেখা হয়েছে বই।
১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া এদুয়ার্দো স্যানচেজ ও ড্যানিয়েল মিরিক পরিচালিত আমেরিকান ভৌতিক মুভি The Blair Witch Projectর মূল কাহিনী এই ভয়াবহ স্থান ও সেটাকে ঘিরে ঘটে যাওয়া রহস্যময় ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে । কাহিনীটি একটি বনকে ঘিরে, যেখানে কেউ প্রবেশ করলেই রহস্যময়ভাবে অদৃশ্য হয়ে যায়। অনেকে আবার উন্মাদে পরিণত হয়, অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে বা শব্দ শুনতে শুরু করে।

ভারমন্টের গ্রিন মাউন্টেনে টানা ৬ বছর (১৯৪৫-১৯৫১) যাবত এই রহস্যময় স্থানে কমপক্ষে ১০ জন ব্যক্তি রহস্যময়ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছেন।  তাদের কোন চিহ্নই পাওয়া যায় নি, যেন বাতাসে মিলিয়ে গেছেন তারা। এগুলোর জন্য কখনো রহস্যময় কোন প্রাণী, কখনো আলোর ঝলকানি ও কখনো আবার ভূতুড়ে ঘটনাকে দায়ী করা হয়। ভারমন্টে বহু বছর ধরে অনেক রহস্যময় ঘটনা ঘটে এসেছে, কিন্তু এই ১০ ব্যক্তির রহস্যময়ভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সবাইকে হতভম্ব করে দেয়। আর এসব নিয়ে প্রথম বই লিখেন জো সিত্রো প্যারানরমাল গল্প লেখক, নাম Green Mountain Ghosts, Ghouls, and Unsolved Mysteries ।

 জোসেফ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই স্থানের নাম দেন ‘বেনিংটন ট্রায়াঙ্গল’।

১৮৯২ সালে এলাকাটির রহস্যময়তার প্রথম সূত্রপাত ঘটে বলে অনেকেই মনে করে থাকেন। এ সময় হেনরি ম্যাকডওয়েল নামের এক স্থানীয় মাতাল জিম ক্রাউলি নামের এক কারখানার শ্রমিককে হত্যা করে। বিচারে ম্যাকডওয়েলকে উন্মাদ ঘোষণা করা হয় এবং ওয়াটারবেরি অ্যাসাইলামে পাঠানো হয়, কিন্তু তার আগেই সে জেলখানা থেকে পালিয়ে যায়। তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এর প্রায় ৩০ বছর পর একের পর এক রহস্যময় ঘটনা ঘটতে শুরু করে। ১৯২০ থেকে ১৯৫০ সালের মধ্যে বেনিংটন ট্রায়াঙ্গলে ঘটেছিল এমন কয়েকটি নিখোঁজের ঘটনা, যার রহস্যভেদ করা এখনো কোনো সার্চ টিম বা তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।


-- প্রথম যে ঘটনায় বেনিংটন ট্রায়াঙ্গল তোলপাড় হয়, তা আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা, ১৯৪৫ সালের ২ নভেম্বরের ঘটনা। ৭৫ বছর বয়সী মিডি রিভার্স নামের একজন গাইড ৪ জন শিকারীকে নিয়ে পাহাড়ে শিকারের উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন। দলটিকে নিয়ে ফিরে আসার সময় লং ট্রেইল রোড ও ৯ নম্বর রুটের কাছাকাছি এসে রিভার্স তার সহযাত্রীদের থেকে সামান্য এগিয়ে যান। এরপর থেকে তার সহযাত্রীরা তার আর কোনো হদিসই পাননি। হঠাৎই ওই জায়গা থেকে তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। পরে স্থানীয় পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবকের দল চিরুনি অভিযান চালিয়েও রিভার্সের দেখা তো দূরে থাক, তার দেহ পর্যন্ত খুঁজে পায়নি।তার সহযাত্রীদের কাছে একটাই নিদর্শন ছিল, একটি বুলেট যেটা রিভার্সের কোমর থেকে পড়ে গিয়েছিল যখন তিনি জল খাচ্ছিলেন।

--পরের ঘটনাটি ঘটে প্রায় এক বছর পর। ১৯৪৬ সালের ১ ডিসেম্বর। বেনিংটন কলেজে অধ্যয়নরত পলা ওয়েল্ডেন নামের ১৮ বছরের যুবতী ভ্রমণের নেশায় লং ট্রেইলের উদ্দেশ্যে বেনিংটন ট্রায়াঙ্গলের বনের মধ্যে ঢুকে পড়েন। তার পরিচিত অনেকেই তাকে বনের মধ্য দিয়ে যেতে দেখেছে। কিন্তু সে আর জঙ্গল থেকে কখনো ফিরে আসেনি। ৫০০০ ডলারের পুরষ্কার ঘোষণা ও এফবিআই’র তদন্ত সত্ত্বেও পলাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি।তাকে নিয়ে এমন গুজব ছড়ায় যে, পলা হয়তোবা তার প্রেমিকের সাথে কানাডায় চলে গেছে। আরেকটি ধারণাও তখন বেশ প্রচলিত ছিল, আর তা হচ্ছে প্রকৃতির মাঝে একাকী নিরিবিলি জীবনযাপনের জন্য নির্জন জঙ্গলকে বেছে নিয়েছে পলা। কিন্তু এর সপক্ষে কোনো বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

--- তিন বছর পর।তৃতীয় ঘটনাটি ঘটে, ১৯৪৯ সালের ১ ডিসেম্বর তারিখে। জেমস ই টেটফোর্ড নামের একজন প্রবীণ সামরিক ব্যক্তি তার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা করার জন্য সেইন্ট এলবান থেকে বাসে করে বেনিংটনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। বাসে যাত্রী  ১৪ জন ছিলেন। কিন্তু বাস গন্তব্যস্থলে পৌঁছাবার পর দেখা গেল, জেমস বাসে নেই! বাসযাত্রীদের তথ্যমতে, বাসটি কোথাও যাত্রাবিরতি করেনি। কিন্তু সেইন্ট এলবান থেকে বাস যখন যাত্রা শুরু করে, তখন বাস ড্রাইভারসহ যাত্রীরা জেমসকে তার নির্ধারিত সিটে বসতে দেখেছে। বাস চলা শুরু করলে তিনি তার সিট থেকে একবারও ওঠেননি। আবার কয়েকজন যাত্রী শেষ স্টপেজের আগের স্টেশন পর্যন্ত জেমসকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখেছেন বলে জানান। বাসের চালক ও অন্য যাত্রীরা কেউই বলতে পারলেন না জেমস কোথায় হারিয়ে গিয়েছেন। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, জেমসের লাগেজ ব্যাগসহ তার টাকা ভর্তি ওয়ালেটটি তার আসনে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

--পরের ঘটনাটি ঘটে পল জেপসন নামের এক আট বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে। ১৯৫০ সালের ১২ অক্টোবর এক সকালের ঘটনা। ৮ বছর বয়সের পল জেপসন প্রায়ই পর্বতের কাছে ঘুরতে যেত।জেপসন ছিল তার মায়ের সাথে, তিনি এ সময় শুকরছানাদের খাবার খাওয়াচ্ছিলেন, আর জেপসন বাড়ির চারপাশে ছোটাছুটি করছিল। ঘণ্টাখানেক পর মা ঘরে এসে দেখেন, জেপসন ঘরের আশেপাশে কোথাও নেই। জেপসনের গায়ে ছিল লাল রঙের জ্যাকেট, দূর থেকেও যা সকলের চোখে পড়ার কথা।সে হারিয়ে যাবার পর পুলিশের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কুকুর তার গন্ধ শুঁকে কিছুদূর যাওয়ার পর তাকে আর খুঁজে পায় না। কিছুদূর গিয়ে যেন অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে।

--পঞ্চম ঘটনা জেপসনের ঘটনার মাত্র দুই সপ্তাহ পরে অক্টোবরের ২৮ তারিখ।৫৩ বছরের ফ্রিডা ল্যাঙ্গার ও তার ভাই হার্বার্ট এলসনার সমারসেট রিজার্ভেরারের কাছে ক্যাম্পিংয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে। হঠাৎই একটি ছোট নদী পার হতে গিয়ে ফ্রিডা পানির মধ্যে পড়ে যান। তার পরনের কাপড়-চোপড় ভিজে যায় , এরপর তিনি হার্বার্টকে একটু অপেক্ষা করতে বলেন। পোশাক পরিবর্তনের জন্য ফ্রিডা ফিরে যান ক্যাম্পে। অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরও তিনি আসছেন না দেখে, হার্বার্ট ক্যাম্পে ফিরে আসেন কিন্তু  ফ্রিডাকে খুঁজে পাননি। এলাকাটি ফ্রিডার কাছে বেশ পরিচিত, ফলে দিনের আলোয় হারিয়ে যাওয়া তার পক্ষে বেশ অসম্ভবই বটে। আবার শুরু হলো ব্যাপক তল্লাশি। দুই সপ্তাহ ধরে নভেম্বরের ৫-১২ তারিখ পর্যন্ত ৩০০ জন অনুসন্ধানকারীর সমন্বয়ে গঠিত ৫টি অনুসন্ধান টিম হেলিকপ্টার, এয়ারক্রাফট থেকে শুরু করে বিভিন্নভাবে তন্নতন্ন করে অনুসন্ধান চালিয়েও ফ্রিডার অস্তিত্ব কোথাও খুঁজে পায়নি।
তবে অদ্ভুত এক ব্যাপার হলো, এই ঘটনার এক বছর পর, ১৯৫১ সালের ১২ মে সমারসেট রিজার্ভের কাছাকাছি এক জায়গায় ফ্রিডার দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু তার দেহ ময়নাতদন্ত করেও মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে ফ্রিডাই একমাত্র মহিলা যার মৃতদেহটি খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।

 কি আছে এই বেনিংটন ট্রায়াঙ্গলে?

ইউরোপীয়দের আমেরিকা আবিষ্কারের অনেক আগে থেকে এই জায়গাটি আদিবাসী আমেরিকানরা সমাধিস্থল হিসেবে ব্যবহার করতো। তাদের ধারণা ছিল এ জায়গাটি অভিশপ্ত হওয়ার কারণে এখানে খারাপ বাতাস প্রবাহিত হয়। এছাড়া এ-ও বলা হতো যে এই জায়গাতে খুব অদ্ভুত একটি পাথর আছে। সেই পাথরের উপর যার পা পড়তো, সেটা তাকেই খেয়ে ফেলতো। প্রাচীন কাল থেকেই থেকে অসংখ্য মানুষ হয় পাগল হয়ে গিয়েছে নয়তো মারা গিয়েছে কিংবা চরম দুর্ভোগে পতিত হয়েছে এই স্থানে প্রবেশ করে।এলাকাটিতে বসবাস স্থাপনকারী প্রথম ইউরোপীয় অধিবাসীদের এক অংশের অভিমত, পাহাড়ের পেছনের আকাশে প্রায় সময়ই এক অদ্ভুত আলোর ঝলকানি দেখা যায়। বাতাসে ভেসে বেড়ায় এক মাদকতাময় গন্ধ আর মাঝে মাঝে শোনা যায় নানা অদ্ভুত ধ্বনি। স্থানীয় কারো কারো মতে, এক বিশাল দৈত্যাকার প্রাণীর বাস রয়েছে জঙ্গলটিতে। এই প্রাণীটির অকস্মাৎ আক্রমণের শিকার হয় অভিযাত্রীরা।

অনেক প্যারানরমাল বিশেষজ্ঞের মতে, স্থানটিতে বাস্তব চেনা ত্রিমাত্রিক জগতের প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে কেউ এই জগতে প্রবেশ করতে গেলে সে দিকভ্রান্ত হয়ে হারিয়ে যায়। আবার অনেকের মতে, ভিন্ন গ্রহের প্রাণীদের অবস্থান রয়েছে এই বেনিংটন টায়াঙ্গল জঙ্গলে, তাদের কারণেই ঘটছে এসব অস্বাভাবিকতা। আরেকটি মত হচ্ছে, কোনো সিরিয়াল খুনি বনের মধ্যে বসতি গড়ে আছে, সে-ই এই সব খুনের পেছনে দায়ী। বিষয়টি যদি সত্যি হয়, তাহলে একটি প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়, এতগুলো হত্যাকাণ্ডের কোনো হদিস কেন পাওয়া গেল না। একটি ছাড়া কেন পাওয়া গেলো না আর কোনো মৃতদেহ।

এরপরও এমন কিছু তথ্য এসব অদৃশ্য ঘটনার পেছনে পাওয়া যায়, যেগুলো বেশ রোমাঞ্চকর।

- সবগুলো ঘটনা একটি বিশেষ সময়ে ঘটেছে। শীতের সময় ছাড়া বছরের অন্য সময়ে এমন কিছু ঘটে নি।

- ওয়েল্ডন ও ট্রেডফোর্ড তিন বছরের ব্যবধানে একই তারিখে অদৃশ্য হয়ে যান, যা বেশ কাকতালীয়।

-ফ্রিডা ছাড়া আর কারো কোনো হদিস শেষপর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কিন্তু কীভাবে ফ্রিডা তার তাঁবু থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল, সেটিই একটি রহস্য।

- হারিয়ে যাওয়ার পর অনুসন্ধান দল তন্নতন্ন করে খুঁজেও ফ্রিডার কোনো হদিস পায়নি। অথচ এক বছর পর যে জায়গা থেকে তিনি হারিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানেই তার লাশ পাওয়া যায়, যা এক বড় রহস্য।

১৯৩৭ সালের পূর্বে এলাকাটি বেশ জনবহুল ছিল। কিন্তু ১৯৩৭ সালের দিকে গ্লসটেনবারি শহরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারি দেখা দেয়, ফলে অনেক লোকের মৃত্যু ঘটে। সে সময় নগরটি পরিত্যক্ত হয়। ২০১০ সালের একটি আদশুমারীর তথ্য অনুযায়ী, এই এলাকাটিতে সব মিলিয়ে মাত্র আটজন বাসিন্দা বাস করে। বর্তমানে এটি ভূতুড়ে শহর হিসেবে পরিচিত।