Pages

Friday, 29 May 2020

কিংবদন্তি ঠগ যিনি আইফেল টাওয়ার বিক্রি করেছিলেন --



ভিক্টর লাস্টিগ তার পেশাটি এক সাধারণ মানুষ হিসেবে শুরু করেছিলেন; যিনি কয়েকজন মানুষকে একটি মেশিন দেখিয়ে বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছিলেন যে, এই মেশিনটি 100 ডলার বিল তৈরি করে।কেবলমাত্র একটি বাধা ছিল সেটি হলো, মেশিনটি ছয় ঘণ্টায় কেবলমাত্র একটি বিল তৈরি করতে পারে। তিনি এক একটি মেশিন কে 30,000 ডলারে বিক্রি করেছিলেন এবং তার সাথে আসল বিল ও দিচ্ছিলেন। এরপর যতক্ষণে তার খরিদ্দাররা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছিল, ততক্ষণে তিনি টাকাগুলি নিয়ে অনেক দূর চলে গিয়েছিলেন। তিনি মোট কতগুলি মেশিন বিক্রি করেছিলেন এবং কতজন কে করেছিলেন তা আজ অব্দি রহস্য থেকে গেছে।

 1925 সাল নাগাদ যখন যুদ্ধ পরবর্তী কালীন ফ্রেঞ্চ অর্থনীতি যখন ভঙ্গুর হয়ে পড়ে তিনি তার সবচেয়ে দুঃসাহসিক পরিকল্পনাটি কাজে লাগিয়ে বিশাল পরিমাণ অর্থ আয়ত্তে আনতে সক্ষম হন। তিনি ফ্রেন্চ স্ক্রাপ মেটাল কোম্পানিগুলোকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছিলেন যে, সরকার আর বিখ্যাত বিভিন্ন গঠন গুলির রক্ষণাবেক্ষণ বা দায়িত্ব নিতে পারছে না -- এই বলে তিনি আইফেল টাওয়ারের বিভিন্ন অংশের হিসাব করে তাদের বিক্রি করে দিয়েছিলেন। এই ধারণাটা সেই সময়ে সত্যিই অবিশ্বাস্য ছিল যখন সবেমাত্র টাওয়ার টিকে জনসাধারণের জন্য সাময়িকভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছিল। লস্টিগ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের সাথে চুক্তি করেছিলেন যে 18 বছর বাদে কোম্পানি টাওয়ারটি খুলে বা ভেঙে ফেলতে পারবে। পরবর্তীকালে লাস্টিগের সাথে তার প্রেমিকা বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং আলকাত্রাজ জেলে তার 20 বছরের কারাদণ্ড হয়। সাজা চলাকালীন 12 বছরের মাথায় নিউমোনিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছিল।
আলকাট্রেজ 

Wednesday, 27 May 2020

চেঙ্গিস খানের আক্রোশ -- একটি কিংবদন্তি ঐতিহাসিক প্রতিশোধের কাহিনী --


খারেজমীন সাম্রাজ্যর কথা হয়তো আপনি শোনেননি এটা অসম্ভব নয় কারণ চেঙ্গিস খান এর প্রতিশোধ এতটাই ভয়ানক ছিল।

1205 সালে নাঈমানের যুবরাজ কুচলাগ মঙ্গোলিয়া থেকে পালিয়ে যায় যখন চেঙ্গিস খান এবং তার মঙ্গল সাম্রাজ্য তাদের এলাকা দখল করে। 1208 সালে চেঙ্গিস খান কুশলগকে পরাজিত করেন এবং কুচলাগ আরো পশ্চিমে চলে যায় এবং সেখানে ঝিলুগু সাম্রাজ্যে রাজ কন্যাকে বিবাহ করেন। 

পরবর্তীকালে নিজের শ্বশুরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ সৃষ্টি করে তিনি পশ্চিম লিয়াও সাম্রাজ্যের দখল নেন।  1216 সালে কুচলাগ বাসবালিক শহরে আক্রমণ করে, যেটা তখন মঙ্গল সাম্রাজ্যের আশ্রয় ছিল। তাই চেঙ্গিস খান তার অন্যতম পারদর্শী সেনাপতি জেবেকে সেখানে পাঠান এবং দুই বছরের মাথায় পুরো পশ্চিম অংশটি তার দখলে চলে আসে এবং মোঙ্গল সাম্রাজ্য খারেজমী সাম্রাজ্যের পর্যন্ত বিস্তার করে যায়। এই সাম্রাজ্যঃ খারেজমনের শাহ মোহাম্মদ ২ এর শাসনে ছিল। চেঙ্গিস খান তার ব্যবসায়ীদের সেখানে পাঠান খারেজমানদের সাথে ব্যবসা শুরু করার জন্য কিন্তু  অট্রার গভর্নর ইনালচুক এই ব্যবসায়ীদের গুপ্তচর বদনাম করে কারাগারে বন্দি করে রাখেন। বেশিরভাগ মানুষ তখনকার দিনে, পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত এই সাম্রাজ্য বিস্তারকারী ব্যক্তির সাথে সীমানা ভাগ করা ভালো বিষয় করতেন না,  তাই যখন চেঙ্গিস খান  500 মানুষের একটি দলকে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে তার এই নতুন প্রতিবেশীর কাছে পাঠালেন তখন খারেজমী শাহের মনে সন্দেহ হয়েছিল। যদিও বেশিরভাগ ইতিহাসবিদদের মতে, চেঙ্গিস খানের এই সাম্রাজ্য দখলের বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না।

এরপরেও আক্রমণ না করে বা হুমকি না দিয়ে চেঙ্গিস খান সেখানে তার 3 জন প্রতিনিধি পাঠান; যার মধ্যে দুজন মঙ্গল ও একজন মুসলিম ছিল তারা এই 500 জন মানুষকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কথাবার্তা শুরু করেন। কিন্তু তবুও শাহ বদলাননি; তিনি দুইজন মঙ্গলের মাথা মুড়িয়ে দেন এবং মুসলিম দূতের মাথা কেটে ফেলেন। এছাড়া তিনি বন্দী থাকা 500 জন ব্যবসায়ীকে মৃত্যুদন্ডে দণ্ডিত করেন।

চেঙ্গিস খান অতিথি পরায়ণ নিয়ে এক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি তাদের এই অনৈতিক কাজে ক্রোধিত হয়ে পড়েন, তাই তারপর তিনি সিল্ক রোড থেকে তার শত্রুদের সম্পর্কে সকল তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। তিনি চীন থেকে এলাকা দখল করা বিষয়ে পারদর্শী  ও অভিজ্ঞ একটি দল গঠন করে নিয়ে আসেন এবং খারেজমী সাম্রাজ্যঃ দখলের জন্য তার সেনাবাহিনীকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেন। মঙ্গোলিয়ানদের কাছে এক লাখের উপর সৈন্য ছিল।
.
1219 সালের শীতের সময় তিনি যোশি এবং যেবেকে ফার্ঘানা প্রদেশ লুটপাটের জন্য জন্য 20,000 সেনাসমেত পাঠান।

খারেজমিয়ান সৈন্যরা ভেবেছিল যে এই আক্রমণকারী দলটি মূল শক্তি ছিল কিন্তু অন্য দিক থেকে চাগাতাই খান এবং ওগেদাই খান যুগারিয়ান গেট দিয়ে ঢুকে অত্রারের 20,000 জন এর শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে আটক করে ফেলে। এর পাঁচ মাস বাদে এক পলাতক শহরের দরজা খুলে দিয়ে মোঙ্গলদের শহরের ভেতরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে; তারপর এখানে মানুষদের বন্দী করা থেকে শুরু করে গণহত্যা শুরু হয়ে যায় এবং শহরটি মাটিতে মিশে যায়। ইনালচুকের চোখে এবং কান দিয়ে গলিত রুপো ঢেলে হত্যা করা হয়।

এরপর চেঙ্গিস খান এবং তার সৈন্যরা দুর্গম কিজিলকুম মরুভূমি অতিক্রম করে এবং বুখারা দখল করে নেয়। এখানকার রক্ষীরা যুদ্ধ ও গণহত্যা শুরু হওয়ার আগেই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। চেঙ্গিস খান খারেজমী সাম্রাজ্যের রাজধানী সামারকান্দ এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। 1220 সালে এই শহরের 40,000 জনের শক্তিশালী সৈন্যবাহিনীকে ঘিরে ফেলেন। এরপর তৃতীয় দিনে যখন সেই বাহিনী আক্রমণ শুরু করে, তখন চেঙ্গিস খান একটি ছলনা পূর্বক পলায়ন করেন এবং এই বাহিনীকে প্রলুব্ধ করে বাইরে বের করে আনেন ও  প্রায় অর্ধেক সংখ্যক বাহিনীকে হত্যা করা হয়। তাদের দুটি সাহায্যের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং পঞ্চম দিনে বেঁচে থাকা কিছু হাতেগোনা সৈনিক আত্মসমর্পণ করে; এরপর এক লাখ জনসংখ্যা বিশিষ্ট শহরে বিপুল নরসংহার  শুরু হয়ে যায়। শাহ এবং তার পুত্র উত্তর-পশ্চিম দিকে পালিয়ে যায় এবং চেঙ্গিস খান সেনাপতি সবেতেই এবং জেবেকে  20,000 সৈন সহকারে তার উদ্দেশ্যে রওনা করিয়ে দেন।  এদিকে সামারকান্দ ধ্বংস করার পর উর্গেস কে ধ্বংস করে দেওয়া হয় এবং খোরাসান, রেজিন, বালক, মারভ নিশাপুরে - তারা পরপর সাফল্য পেতে থাকে; এদিকে হেরাত এবং অন্যান্য শহর যারা শান্তিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নিজেদের কার্যসিদ্ধির জন্য এবং এইসব শাসকদের শাসনের বিরুদ্ধে মঙ্গোলরা একটি দক্ষ নিষ্ঠুরতার পরিকল্পনা ব্যবহার করেছিল।

এদিকে মহম্মদ এর পুত্র জালালউদ্দিন মিংবুমু প্রায় 60,000 জন তুর্কি এবং আফগানি যোদ্ধাদের দলকে নিযুক্ত করেন। ফলে চেঙ্গিস খান সেনাপতি শিকিখতুক কে 30,000 জন সৈনিকের নেতৃত্বে জালালুদ্দিন এর উদ্দেশ্যে কাবুলের উত্তরে পাঠান।
এটি নিশ্চিত যুদ্ধপরিস্থিতিতে একটি সরু খাতের মাঝে দুই সেনাবাহিনী মুখোমুখি হয়। যে স্থানটি মঙ্গলিয়ান সেনাবাহিনীর পক্ষে অনুপযুক্ত ছিল।  ফলে মঙ্গল সেনাবাহিনী একটি লজ্জাজনক হারের সম্মুখীন হয় এবং যখন তারা পিছু হটতে থাকে। তখন জালালউদ্দিন তার সৈন্যদের পুনরায় আক্রমণে পাঠায়, ফলে এই বাকি সেনাবাহিনীর অর্ধেক জন হারিয়ে যায় এবং বাকি অর্ধেক পালাতে সক্ষম হয়। এই পরাজয় মঙ্গল বাহিনীর অপরাজেয় তকমাটি ভেঙে দেয়।

এরপর খারেজমী সাম্রাজ্যের জন্য মধ্য এশিয়ায় বিদ্রোহের সূচনা হয় যদিও জালালউদ্দিনের সেনাবাহিনীর মধ্যে পরবর্তী কয়েক মাসে একটি অন্তর্দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় এবং জালাল উদ্দিন ভারতবর্ষে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে পালিয়ে আসে; কিন্তু জালালউদ্দিনেই বাহিনী ইন্ডাস নদী পেরোনোর  আগে চেঙ্গিস খান তাদের ধরে ফেলে ফেলতে সক্ষম হয় এবং মঙ্গল বাহিনী তাদের সেনাবাহিনীকে ধুলিস্যাৎ করে দেয়। 
এরপর 20,000 জনের মোঙ্গলবাহিনী যুবরাজকে ধরে আনার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় কিন্তু তাকে আর  খুঁজে পাওয়া যায়নি। খারেজমিনের বেশিরভাগ অংশ দখলে চলে যায় এবং শাহ তার বাকি জীবন ক্যাস্পিয়ান সমুদ্রের একটি দ্বীপে নির্বাসনে কাটাতে কাটাতে দেহত্যাগ করেন। এদিকে মোঙ্গলরা মধ্য এশিয়ার জনসংখ্যা দুই মিলিয়ন থেকে 2 লাখে কমিয়ে আনে এবং তারা অন্যান্য সম্রাজ্য দখল করার জন্য মনোনিবেশ করে।

এদিকে ইন্ডাস নদীর তীরে যুদ্ধের পরে জালালউদ্দিন তিন মাস পাঞ্জাবে কাটান, তার শক্তি সঞ্চয় এবং হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন এলাকা দখল করার উদ্দেশ্যে তিনি মামেলুক এর সুলতান ইলতুৎমিশের সাথে সন্ধি করার চেষ্টা করেন কিন্তু  ইলতুৎমিস চেঙ্গিস খানের বিরুদ্ধে তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বরঞ্চ 1224 সালে সুলতান জালালউদ্দিনকে আক্রমণ করে এবং তাকে লাহোর ত্যাগ করতে বাধ্য করে।  যেহেতু জালাল উদ্দিনের পিতা অনেকদিন আগেই মারা গিয়েছিল তাই জালালুদ্দিন খারেজমিন সাম্রাজ্যের মুকুট সহজেই পুনরাধিকার করে নেন।  তিনি আজারবাইজান দখল করেন এবং তার রাজধানী তব্রিজ এ নিয়ে যান।  এরপর তিনি জর্জিয়া দখল করেন এবং বিলিসি নামে একটি বড় শহরের দখল করে সেখানকার খ্রিস্টান এবং মুসলিম উভয় বাসিন্দার গণহত্যা করেন।

এরপর মঙ্গল 1227 সালে একটি ছোট বাহিনী ইরানে পাঠায় কিন্তু জালালউদ্দিন এদেরকে পরাজিত করে। কায়াওয়াবাদ, আয়ুবিদের সুলতান এবং আর্মেনিয়ার রাজা জালাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে একত্রিত হয় এবং 1228 সালে তাকে ইরাভানে পরাজিত করে।  এরপর তার সাম্রাজ্যঃ জুড়ে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও গৃহযুদ্ধ সূত্রপাত হয়।

অবশেষে চেঙ্গিস খানের পুত্র অগেদেই খান তার চর্মাকান নামক সেনাপতিকে ইরান পুনর্দখলের জন্য পাঠান এবং সেখানে সেন্ট্রাল ইরানে 1231 সালে জালালউদ্দিন পরাজিত হয়ে তুর্কিতে পালিয়ে যায়। যেখানে তাকে হত্যা করা হয় এবং খারেজমী সাম্রাজ্যের অবশেষে সমাপ্তি ঘটে এরপর জর্জিয়া ও অন্যান্য দেশগুলি মঙ্গলের ছত্রছায়ায় চলে আসে। 

Sunday, 17 May 2020

কালাহারি মরুভূমির হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা --

বর্তমানে কালাহারি মরুভূমি কে পৃথিবীর শুষ্কতম স্থানের মধ্যে অন্যতম হিসাবে দেখা হয়। কালাহারি শব্দটি উৎপত্তি 'tswana' শব্দ থেকে যার অর্থ - ভীষণ পিপাসা; তাই জন্য এই স্থানটি কোন প্রাচীন শহরের অবস্থান হিসেবে কল্পনা করা কষ্টকর। কিন্তু এখানকার প্রাচীন কিংবদন্তি বা আদিবাসীদের লোককথায় পাওয়া যায় মরুভূমির সমুদ্রের মাঝে কোথাও প্রাচীন শহর অবস্থিত আছে যা এখানকার কেউ তৈরি করেনি। 

ঘটনার সূত্রপাত 1885 সালে যখন আমেরিকান উইলিয়াম লিওনার্ড যিনি একজন বিনোদনকারী ছিলেন এবং পরবর্তীকালে একজন অভিযাত্রী হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন, 'গিলার্মো ফেরিনি' - ছদ্মনামে কালাহারিতে এসেছিলেন এবং তার দলে তার সন্তান লুলু ও যোগদান করেছিল। একটি শুষ্ক অঞ্চলে যাতায়াতকালে তাদের সামনে  প্রাচীন ভগ্নাবশেষ এসে পড়ে।  বিশাল বিশাল পাথরের তৈরি এবং সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাথরের দেওয়াল এবং সেমিসার্কুলার স্থাপত্য দেখতে পান। তিনি এখানে কোন চিহ্ন বা লেখার খোঁজ করেছিলেন কিন্তু এ জাতীয় কিছু খুঁজে পাননি। তিনি দাবি করেছিলেন যে এটা কোন প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ হতে পারে যা কালাহারি মরুভূমিতে অবস্থিত ছিল।
ফেরিনী তার আবিষ্কার গুলি বা তথ্যগুলি বার্লিনের জিওগ্রাফিকাল সোসাইটির কাছে পেশ করেন এবং 1886 সালে আবার গ্রেট বৃটেনের রয়েল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটির কাছেও নিয়ে যান. তিনি তার এই আবিষ্কার নিয়ে একটি বইও প্রকাশ করেছিলেন। 

বুশম্যান 

ফেনীর এই দাবিগুলো অভিযাত্রীদের মনে এক অসাধারণ আকর্ষণের সৃষ্টি করেছিল। কালাহারি মরুভূমিতে পরবর্তী 130 বছর ধরে অন্তত 30 টি এক্সপিডিশন এই প্রাচীন শহরের উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। একটি বড় জটিল সমস্যা ছিল যে ফেরেনি কিভাবে সেই স্থানে পৌঁছেছিল  অর্থাৎ তার যাত্রাপথ বা দিক নির্দেশ এর বর্ণনা বিস্তারিত ভাবে পাওয়া যায়নি। এছাড়া তিনি বলেছিলেন যে, এই স্থানের অর্ধেক অংশ মরুভূমির নিচে ডুবে আছে তাই এই স্থানটি খুঁজে বের করা খুবই কষ্টকর। বিশাল কালাহারি মরুভূমিতে এই ধ্বংসাবশেষ খুঁজে বের করা অনেকটা খড়ের গাদায় সুঁচ খোঁজার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

1964 সালে এ.জে.ক্লিমেন্ট নামক একজন অধ্যাপক ও অভিযাত্রী দাবি করেছিলেন যে তিনি হয়তো ফেরিনীর আসল যাত্রা পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি মানুষের বসতির কোন হদিস পাননি, তবে তিনি ডলেরাইট পাথর দিয়ে তৈরি কিছু অদ্ভুত রকমের গঠন দেখতে পেয়েছিলেন। 
এছাড়া ব্যাসল্ট এবং 'gabbro' এর মাঝে দানাদার আকৃতি বস্তুর উপস্থিতি লক্ষ্য করেছিলেন।
ডলোরাইট এর পরিখায় প্রায়ই দেখা যায় যেখানে উত্তপ্ত বা গলে যাওয়া পাথর পুরনো পাথরকে ভেদ করে দেওয়ালের মত আকৃতির জিওলজিক্যাল ফর্মেশন সৃষ্টি করে। একে 'ডাইক' বলে এই 'ডাইক' যে পাথর গুলি দিয়ে তৈরি হয় তা সাধারনত আশেপাশের পাথরগুলি থেকে বেশ শক্তপোক্ত হয় তাই অন্যান্য পাথরগুলি ক্ষয় হয়ে যাওয়ার পর কেবলমাত্র 'ডাইক'  অবস্থান করে এবং কয়েকটি ডলোরাইট পাথরের ডাইস দেওয়ালের মত অংশের সৃষ্টি করে - যা দূর থেকে দেখে কোন প্রাচীন শহরের দেওয়াল বলে মনে হতে পারে।

তাই ক্লিমেন্ট বলেছিলেন, হতে পারে পারিনি এই জাতীয় কিছু 'রক ফর্মেশন' এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভুল করে মানুষের তৈরি স্থাপত্য ভেবেছিলেন এবং তিনি মনে করতেন বেশিরভাগ কালাহারি অঞ্চল গত অন্তত 15000 বছর ধরে কোন সভ্যতার উপস্থিতির পক্ষে খুবই শুষ্কতম স্থান। 

কাছাকাছি 2013 এবং 2016 সালে দুইটি এক্সপিডিশন লঞ্চ করা হয়েছিল 'marcahuasi project' নামক একটি রিসার্চ প্রজেক্ট এর জন্য একটি অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল যাতে কোন কৃত্রিম স্থাপত্য বা কোন ব্যতিক্রমী গঠন খোঁজার চেষ্টা হয়েছিল। এতে গুগল ম্যাপ এর সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। এই অনুসন্ধানটিতে খুবই উচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছিল; কিন্তু হারিয়ে যাওয়া শহরের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। 
এরপর 2016 সালে একটি ট্রাভেল চ্যানেলের সহায়তায় একটি এক্সপিডিশন চালানো হয়। এই এক্সপিডিশনে এরিয়াল সার্ভে এবং রাডার এর সাহায্য নেওয়া হয়। সেখানে পাথরের প্রাচীন এবং অস্বভাবিক গঠন খুঁজে পাওয়া গেছে; অনেকটা ফেরিনির বর্ণনার মত। কিন্তু সেগুলি মনুষ্যনির্মিত না প্রাকৃতিক তা এখনো অস্পষ্ট রয়ে গিয়েছে।
চাকো ক্যানিয়ন ডেসার্ট সিভিলাইজেশন 

কালাহারিমরুভূমির ভেতরে কোন শহরের অবস্থান করার পক্ষে সবচেয়ে বড় বিরোধিতা হলো এখানকার অসম্ভব শুষ্ক আবহাওয়া। সূর্যের এই অসম্ভব পুড়িয়ে দেওয়া তেজে কোন প্রাচীন সভ্যতার অবস্থান খুবই কঠিন। কালাহারি মরুভূমি আধা শুষ্ক এবং আধা আদ্র কালাহারি বেসিনের একটি অংশ যা বতসোয়ানার বেশিরভাগ অংশ, নামিবিয়ার কিছু অংশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা কভার করে; টেকনিক্যালি একে 'সাভানা' বলা যেতে পারে।

এর উত্তর অংশ তুলনামূলকভাবে বৃষ্টি হয় যার জন্য এখানে কিছু প্রকার গাছপালা এবং ঘাস এবং কিছু  প্রকার পশু দেখতে পাওয়া যায়। সাভানার দক্ষিণ প্রান্ত আরো শুষ্ক এবং এখানে বেশিরভাগ বালিয়াড়ি অঞ্চল দেখতে পাওয়া যায়। যেহেতু এটি খুবই শুষ্ক তাই কালাহারি মরুভূমিতে কোন মনুষ্যবসতি দেখতে পাওয়া যায় না। কেবলমাত্র 'san people' বা 'বুশম্যান' নামক এক জাতির মানুষ এর কাছাকাছি বসবাস করে। এরা বহু প্রাচীন কাল ধরে এই স্থানে বসবাস করে। বলা হয় এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম আদিবাসীদের মধ্যে অন্যতম। আর্কিওলজিক্যাল রেকর্ড অনুযায়ী অনুমান করা যায় যে, কালাহারি মরুভূমিতে বসবাসরত অধিবাসীরা বেশিরভাগই ভ্রাম্যমান শিকারি বা 'hunter- gatherers' হিসাবে জীবনযাপন করেছে। এদের বড়জোর ছোট ছোট কিছু গ্রাম দেখা গেছে কিন্তু কোন বড় বসতি বা শহর করে থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এত শুষ্ক থাকা সত্বেও এখানে জলের দুটি বড় উৎস আছে এই অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ বিশাল জলাধার আছে এবং এছাড়াও 'অকাভাঙ্গ' নদী এর পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে - যা মূলত এখানকার জলের চাহিদা যোগান দেয়। তাই এদের থেকে দূরে  অবস্থিত কালাহারি মরুভূমির ভিতরে কোন শহর তৈরি করলে তাদের পক্ষে জলের ব্যবস্থা করা খুবই দুস্কর বিষয়। 

তবে মানব সভ্যতার ইতিহাসে ব্যতিক্রমী কিছু ঘটনাও দেখা গেছে। যেখানে কালাহারি মরুভূমি থেকেও অনেক শুষ্ক জায়গায় মানুষ বসতি স্থাপন করেছিল। এরকম একটি উদাহরণ হচ্ছে - আমেরিকান 'চাকো ক্যানিয়নের' 'ডেজার্ট সিভিলাইজেশন' বা 'প্রোটো সিভিলাইজেশন' এই চাকো ক্যানিয়নটি হচ্ছে মেক্সিকোর উত্তর-পশ্চিমের সান যুয়ান বেসিনে অবস্থিত একটি ক্যানিয়ন। এটি খুবই শুষ্ক অঞ্চল যেখানে জলের প্রধান উৎস 'চাকো' নদী যার সৃষ্টি হয় বর্ষার সময় জমে থাকা জল নেমে আসলে। প্রচুর শুষ্ক অবস্থা হওয়া সত্বেও বহু শতাব্দী ধরে এখানে মানুষেরা বসবাস করে গিয়েছে। প্রায় 800 খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন 'পুব্লন' মানুষেরা এই ক্যানিয়নে এসে বসবাস করতে শুরু করে এবং তার কয়েক শতাব্দী মধ্যেই তারা বাঁধের মাধ্যমে একটি জটিল সেচ প্রণালী গড়ে তোলে এবং এইভাবে জলের ব্যবহার করতে থাকে। পরবর্তীকালে তারা ধীরে ধীরে ছোট থেকে বিভিন্ন বড় বড় গ্রাম গড়ে তোলে।  বড় গ্রামগুলিতে বা এগুলির কেন্দ্রে অনেক বড় বড় বাড়িও খুঁজে পাওয়া যায় যেগুলি তে অনেকগুলি কক্ষ, ধর্মীয় স্থান এবং স্তর ছিল।

এই বড় বড় বাড়ি গুলির মধ্যে অন্যতম ছিল 'পুয়েব্লো বনিতো' - যেখানে দূরবর্তী অঞ্চল থেকে ব্যবসা করে আনা জিনিসপত্র মজুদ রাখা হতো। এই চাকোয়ানরা সত্যিকারের বড় কোন শহর গড়ে তোলেনি ঠিকই; কিন্তু তাদের একটি জটিল সমাজ ব্যবস্থা ছিল এবং এদের কেন্দ্রবর্তী অঞ্চলগুলির আকার বড় বড় গ্রামের সাথে তুলনা করা যায়। তাদের কাছে বড় বড় স্থাপত্য অথবা বিল্ডিং তৈরি করার জন্য যথেষ্ট শ্রমিক এবং পুঁজিও ছিল। এখানে চাষবাস করার পক্ষে অনুপোযোগী স্থান হওয়া সত্বেও তারা টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছিল; যদিও সেটা চিরস্থায়ী হয়নি --1130 সালের শুরুর দিকে ক্যানিয়ন এক খরা দেখা দেয় এবং 1200 সাল নাগাদ বেশিরভাগ মানুষ স্থানটি ত্যাগ করে চলে যাওয়া শুরু করে। 

যদি চাকো ক্যানিয়নের মত স্থানে প্রাচীনকালে এরকম একটি উন্নত মানের বসতির অবস্থান সম্ভব হয় তবে কি কালাহারি মরুভূমিতেও এরকমই কিছু ছিল?
কিন্তু এরকম ঘটনা খুবই বিরল, পৃথিবীর অন্যান্য শুষ্কতম স্থান গুলি; যেমন- চিলির আটাকামা মরুভূমি বা মধ্য অস্ট্রেলিয়ায় যে সকল আদিবাসীরা বাস করে, তাদেরকে সাধারণত কোন বড় বসতি স্থাপন করতে দেখা যায়নি।
প্রাচীন সুমের এবং ইজিপ্টের সভ্যতাও মরুভূমি স্থানে গড়ে উঠেছিল কিন্তু তাদের কাছে জলের অভাব ছিল না কারণ তারা মরুভূমির কেন্দ্রে নয়, বরঞ্চ নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল।
যদিও কালাহারি মরুভূমি আজকের দিনে শুষ্কতম অঞ্চল কিন্তু এটা সব সময় এতটা শুষ্ক ছিল না প্রায় 10000 বছর আগে কালাহারি বেসিন এ অনেক বড় বড় জলাশয় অবস্থান করতো এবং এখানে গাছপালা থাকার দরুন আরো অনেক সবুজ ছিল।

তাই এটা বলা যেতে পারে যে 10,000 বছর আগে যখন এই মরুভুমি শুষ্ক ছিলনা, হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন শহরটি হয়তো তখন এখানে অবস্থান করতো; কিন্তু এই সময়কালীন দক্ষিণ আফ্রিকায় কোন বড় সভ্যতার বসতি গড়ার করার কোন প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তাই এটি যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে এটি সাব সাহারান আফ্রিকার প্রথম বড় মনুষ্য বসতি হতে পারে।

ইতিহাসবিদ গুস্তাভ প্রেলুদে এখানকার লোককাহিনীর বর্ণনা অনুযায়ী পেরিনির বর্ণিত স্থান থেকেও উত্তরে আরো কিছু মূল্যবান পাথর খুঁজে পান এবং তিনি দাবি করেন এখানে কিছু ধ্বংসাবশেষ ছিল। কিছু কিছু মানুষ দাবি করেছেন যে, মরুভূমির মাঝে কৃত্রিম খাত, এমনকি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে পেয়েছেন।

এই নিদর্শন গুলিকে নিছক ব্যতিক্রমী একপ্রকার রক ফর্মেশন ভেবে নিয়ে কি মানুষ আপাতত তাদের খোঁজ বা অভিযান বন্ধ করে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে ? যদি এখানে সত্যিই কোনো প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন ভবিষ্যতে প্রমান হয়ে যায় তবে নিঃসন্দেহে সেটা স্মরণীয় একটি বিষয় হবে।  
আপনার কি মনে হয় ?

Wednesday, 13 May 2020

আল জাজিরা আল হামরা পরিত্যক্ত ও রহস্যময় ভুতুড়ে শহর ---


'জাজিরাত আল হামরা' যার অর্থ হচ্ছে -- লাল রঙের দ্বীপ। এই দ্বীপটি একটি ভৌতিক স্থান হিসেবে কুখ্যাত। চৌদ্দশ শতকের দিকে এই গ্রামটি প্রতিষ্ঠিত হয়। একসময় এখানে 300 টি বাড়ি এবং 13 টি মসজিদ ছিল। এখানকার মানুষেরা মৎস্যচাষ এবং মুক্ত সংগ্রহ করে জীবিকা পালন করত। কিন্তু হঠাৎ করে 1968 সালে এটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তখন থেকে ইউনাইটেড আরব এমিরেটস থেকে রাস-আল-খাইমার এই ছোট স্থানটি আলাদা হয়ে গিয়েছে এবং একে ঘিরে রেখেছে রহস্যময় বিভিন্ন কিংবদন্তি।

এই জেলেদের শহরটি ইউনাইটেড আরব এমিরেটসের উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থিত। 1960 সালে তৈল খনি নিয়ে আরবে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের সৃষ্টি হওয়ার আগেও এখানে প্রাচীনকাল থেকে অনেক অবস্থাসম্পন্ন এবং বিভিন্ন রকমের বসতি সমৃদ্ধ ছিল। অনেক বছর ধরেই এই সমুদ্রতীরবর্তী গ্রামটি পার্শিয়ান অভিবাসী, পর্তুগিজ ব্যবসায়ী এবং ব্রিটিশ আধিকারিকদের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। এমনকি যখন 1831 সালে গ্রামটি নবনির্মিত করা হয় তখন ব্রিটিশ রেকর্ড অনুযায়ী জানতে পারা যায়, এখানে 4100 জন বাসিন্দা ছিল যাদের মধ্যে বেশিরভাগই লাভজনক মুক্ত ব্যবসায়ী ছিলেন। 


এরপর 1968 সালে এখানকার বাসিন্দারা দলে দলে স্থানটি ছেড়ে দিতে শুরু করলেন এবং গ্রামটি পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে ছেড়ে দিয়ে চলে গিয়েছিলেন। অনেক প্রাক্তন বাসিন্দাদের কাছে এই গ্রামের জমির মালিকানা এখনো আছে; কিন্তু খুব কম লোকই এখানে থাকে। 1960 সালের পর থেকে এই গ্রামটি ভৌতিক গ্রাম হিসেবে কুখ্যাত হতে থাকে। অনেক u.a.e. বাসিন্দারা মনে করেন, এই গ্রামটি জিনদের দ্বারা পরিচালিত হয় এই গ্রাম সম্পর্কে অনেক হিংস্র এবং অসৎ ভৌতিক ছড়িয়ে আছে।

স্থানীয় ভৌতিক চলচ্চিত্র নির্মাতা ফয়সাল হাশমি জানিয়েছেন, তিনি একবার ঠিক করেছিলেন তার কিছু বন্ধুদের সাথে গ্রামটিতে একটি রাত কাটানোর। গ্রামটি ধীরে ধীরে তাদের মনে এক ধরনের ভয়ের সঞ্চার করেছিল এবং একটা সময় তারা আশেপাশে এখানকার বসবাসরত অশরীরীদের টাটকা হাতের ছাপ গুলি দেখতে  শুরু করে ঠিক যেন অশরীরিরা তাদের এলাকায় না প্রবেশ করার জন্য তাদেরকে সতর্কবার্তা বা সাবধান করে দিচ্ছিল।

হাসমির এই ঘটনাটি আলাদা রকমের ছিল না এর আগেও বহু অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়, ভ্রমণকারী ও নৈশ ভ্রমণকারীরা যারা এখানে আগে এসেছিল  তাদের সাথে এরকম বহু রহস্যময় ঘটনা ঘটেছিলো। যদিও কিছু কিছু মানুষ এই গ্রামে কোন জিন নেই বলে  ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু বেশিরভাগ স্থানীয়রা কখনো কখনো অর্থাৎ অন্তত একবার জিনকে দেখেছেন অথবা তাদের সাথে কোন ঘটনা ঘটেছে।

Sunday, 10 May 2020

হিটলার কি আসলে সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে ছিলেন?

গত 15 বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে এই গল্পটা ছড়িয়ে পড়েছে যে হিটলার আসলে বার্লিন থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং তার বাকি জীবন দক্ষিণ আমেরিকায় ফাদার ক্রেসপি নামে অতিবাহিত করেছেন। কিন্তু ফাদার ক্রেস্পি যে হিটলার ছিলেন, তার স্বপক্ষে কি কি প্রমাণ পাওয়া যায়?

ফাদার ক্রেসপি 1982 সালে 90 বছর বয়সে মারা যান। প্রায় 2,000 এর বেশি মানুষ তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত ছিলেন; ঠিক যেন একজন রাজার মতো।
তার কবরটি সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল যেটা এখনো প্রতি সপ্তাহে পরিষ্কার করা হয় এবং রোজ তাতে ফুল দিয়ে সাজানো হয়, যার খরচ দেয় অজ্ঞাতনামা বা নাম গোপন রাখা বিভিন্ন ভক্তরা।
তার মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে বেশ কিছু কৌতূহলপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।

তিনি তার বাসস্থানে বহু মিলিয়ন ডলার এর দামি বেশ কিছু আর্ট ওয়ার্ক ফেলে গিয়েছিলেন।
স্থানীয় জার্মান এবং অন্যান্যরা পরবর্তীকালে এর মধ্যে বেশির ভাগ আর্টওয়ার্ককে এডলফ হিটলারের ব্যক্তিগত কালেকশনের অংশ  হিসাবে সনাক্ত করেন।
হিটলার আর্টওয়ার্ক সংগ্রাহক হিসাবেও বিখ্যাত ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ শেষে তার মৃত্যুর পর তার বেশিরভাগ ব্যক্তিগত সংগ্রহ আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, 16 মে 1982 সালে ফাদারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঠিক পরেই দুটি কার্গো জেট এসে ফাদার ক্রিসপির আর্ট কালেকশন গুলি ভরে নিয়ে উড়ে যায় এবং আর কখনো এগুলি দেখতে পাওয়া যায় না। কুইন্স শহরের পুলিশ কর্তা রিপোর্ট করেছিলেন যে, একটি ইউরোপিয়ান দল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঠিক একদিন আগে এই ছোট শহরে প্রবেশ করেছিল। এইসব যাত্রার বেশিরভাগ উপস্থিত মানুষ জার্মান ছিলেন এবং সশস্ত্র রক্ষী যুক্ত ছিল।

এটাকি সম্ভব যে, একজন ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকরতম মানুষ বিচারব্যবস্থা থেকে পালিয়ে গিয়ে 40 বছর ধরে একজন ঈশ্বরের দুত সেজেছিলেন?

তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের শেষ বছরে হিটলারের সমস্ত মেডিকেল রেকর্ড ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল এবং তাকে যে সকল ডাক্তাররা দেখেছিলেন তারা সকলেই রহস্যময়ভাবে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। ব্যতিক্রমী ছিল কেবলমাত্র একজন কম বয়সী ডেন্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট যাকে দুবার হিটলারের দাঁত পরিষ্কারের সময় তার ডেন্টিস্টকে এসিস্ট বা সাহায্য করার জন্য ডাকা হয়েছিল।

এই মহিলাটিকে রাশিয়ান আর্মি পরবর্তীকালে ধরে নিয়ে গিয়েছিল এবং তারা তাকে দিয়ে হিটলারের দাঁতের চিত্র অংকন করার চেষ্টা করেছিল। যাতে তারা বার্লিনের বাংকারে যে অবশিষ্ট দেহাংশগুলি পেয়েছিল তার সাথে মিলিয়ে দেখতে পারে। কারণ তখনো পর্যন্ত হিটলারের কোন বিশ্বস্ত ডেন্টাল রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
দিনের পর দিন টর্চারের পরও তার স্মৃতিতে হিটলারের  দাঁতের আসল আকৃতি স্পষ্টরূপে ছিলনা কিন্তু রাশিয়ানরা স্থির করেছিলেন যে সেটুকুই যথেষ্ট ছিল।
স্ট্যালিন কখনোই হিটলারের মৃত্যু বিশ্বাস করেননি; কিন্তু হিটলার রাশিয়ান আর্মির হাত থেকে পালিয়ে গিয়েছে এইটি তিনি পৃথিবী কে ভাবতে দিতে চাননি।

1981 সালে ওয়েন্ডেল স্টিফেন নামক একজন অবসরপ্রাপ্ত ইউএস আর্মি কর্নেল ইকুয়েডরে একটি ট্রিপে গিয়েছিলেন তার ট্রিপ চলাকালীন তিনি 'কুয়েনকা' নামক একটি ছোট শহরে একজন সন্ন্যাসীর সাথে দেখা করেন। এই সন্ন্যাসীর নাম ছিল ফাদার ক্রেসপি এবং কর্নেল স্টিফেন্স বিশ্বাস করতেন তিনি আসলে এডলফ হিটলার ছিলেন। তার সন্ন্যাসী সম্পর্কে দাবি গুলি কেউ শোনেনি। তিনি হিটলারের হাজার হাজার ফটো পরীক্ষা করেছিলেন এবং আরো জোরালোভাবে তার বিশ্বাস হয়েছিল, যে তিনি হিটলারকে খুঁজে পেয়েছেন। তিনি ইকুয়েডরের পাহাড়ের উপরে ফাদার ক্রেসপির নির্জন বাড়িতে থাকা অমূল্য আর্টওয়ার্ক গুলি সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছিলেন কিন্তু কেউ তার দাবি গুলো তখন শোনেনি।

ফাদার ক্রেসপির অতীত জীবন রহস্যময় ছিল ক্রেসপি দাবি করেছিলেন, তিনি আসলে উত্তর ইতালির ইটালিয়ান ও অস্ট্রিয়ান পরিবার থেকে এসেছেন। 1943 সালের শেষে তিনি ভ্যাটিকানে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সেরিমনিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং একজন ব্রতচারী হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন। পরবর্তীকালে তাকে গুরু হিসাবে সম্মান দেওয়া হয়েছিল এবং এই সকল কিছু ভ্যাটিকানের বন্ধ দেওয়ালের ভিতর ঘটেছিল। যা এই সময়ে শোনা যায়নি এবং পরবর্তীকালেও কখনো এরকম কিছু হয়নি। তিনি এই সময়কালীন কখনো ভাটিকান শহরের বাইরে পা রাখেননি। এই শহরটি বিভিন্ন দেশ থেকে ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি পেয়েছিল। ক্রেসপিকে ভাটিকানের সংগ্রহশালার তত্ত্বাবধায়কের পদে রাখা হয়েছিল। এই পথটি একজন নতুন ব্রতচারী পদমর্যাদার কারোর পক্ষে অনেক উঁচু ছিল।
তার এই পদের জন্য তাকে বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিভিন্ন কালেকশন কে তালিকাভুক্তকরণ এর কাজ করতে হতো।

এছাড়া বহু অমূল্য কালেকশন যার মধ্যে অনেকগুলি নাৎসিদের দ্বারা লুট করা ছিল এবং যুদ্ধের পর সেগুলি কোনভাবে ভ্যাটিকানের হাতে এসে পড়ে।
1956 সালে ক্রেসপিকে ইকুয়েডরের কুইন্স শহরে একজন ধর্মযাজক হিসেবে পাঠানো হয়। নাজি হান্টারদের কাছে এই শহরটি জার্মানি থেকে পলাতক মার্টিন বোরম্যান এবং অন্যান্য উচ্চ পদাধিকারী নাৎসিদের গুপ্তআশ্রয়স্থল হিসেবে বিখ্যাত ছিল।
সেখানে তিনি একান্ত জীবন যাপন শুরু করেন এবং রিপোর্ট অনুযায়ী, ধর্ম সভায় সাহায্য করার জন্য তিনি সকল সদস্যদের অর্থ প্রদান করতেন; এমনকি তিনি গ্রামবাসীদের তার লক্ষ্য পূরণ করার উদ্দেশ্যে অর্থ দিতেন। গ্রামবাসীদের মধ্যে জার্মান মানুষরা প্রায়ই তার সাথে দেখা করতে আসত।

ক্রিসপি বলেছিলেন, তার এই আর্টিফ্যাক্ট গুলি ব্যাবিলনিয়া থেকে প্রাপ্ত।
প্রসঙ্গত: হিটলার তার যে শহরটি তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যার নাম দিয়েছিলেন 'জার্মানিয়া' তার সাথে তিনি প্রায়শই 'ব্যাবিলনিয়ার' তুলনা করতেন। 
হিটলারের মতো ক্রেসপিও বিভিন্ন আর্টিফ্যাক্ট সংগ্রহ করতেন।
ক্রেসপির কথা বলার ভঙ্গিমায় হিটলারের সাথে মিল পাওয়া গিয়েছিল এবং তার 'R' এর উচ্চারণটি অন্যরকম ছিল ঠিক হিটলার এর মতো !!

Friday, 8 May 2020

হিটলার কি স্পেনে পালিয়ে গিয়েছিলেন?

এফবিআই ফাইলে আগেই বলা হয়েছিল যে, হিটলার হয়তো তার বাংকারে মারা যাননি, বরঞ্চ তিনি হয়তো সোভিয়েতের নাকের ডগা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।
এটা প্রমাণিত হয়েছিল যে, 1945 সালের 21 এপ্রিল হিটলারের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র 8 টি বিমানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
ঐদিন বিশাল সংখ্যক নাৎসী সদস্যরা 'টেম্পলহপ বিমানবন্দর' থেকে বিমানে উঠেছিল।
 বর্তমানে বার্লিন সাবওয়ে স্টেশনে একটি নকল দেওয়াল খুঁজে পাওয়া গেছে। সম্ভবত এখান দিয়েই 70 বছর আগে হিটলার পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন। 

একটি গোপন মেমোতে এফবিআই ডাইরেক্টর জে এডগার হুভার বলেছিলেন, আমেরিকান আর্মি আধিকারিকরা জার্মানিতে হিটলারের দেহ পায়নি; এমনকি এরকম কোন বিশ্বাসযোগ্য সূত্র পাওয়া যায়নি যাতে দৃঢ় ভাবে বলা যায় যে হিটলার মারা গিয়েছিল।

এমনকি ইউএস আর্মি স্পেনে হিটলারের সন্ধানে একটি অপারেশনও করেছিল।

ইউ এস মিলিটারি বার্লিনের গুপ্ত টানেলগুলি খোঁজার জন্য 'স্টেট অফ আর্ট সোনার ডিভাইস' ব্যবহার করছেন।

বেশ কিছু সূত্র অনুযায়ী হিটলার প্লেনে করে স্পেনে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। যেখানে জেনারেল ফ্রাঙ্কো তাকে স্বাগত জানিয়েছিল। সেনোর স্তেফান এসিতুনা, যিনি 1945 সালে  জেনারেল ফ্রাঙ্কোর ড্রাইভার ছিলেন, তাকে 1945 সালে 30 এপ্রিল মাদ্রিদ বিমানবন্দরে একটি বিমানের যাত্রীকে নিয়ে আসতে পাঠানো হয়। তিনি বর্ণনা দিয়েছিলেন, এটি একটি জার্মান বিমান ছিল এবং তার মনে আছে এটা খুব দেরি করে এসেছিল। মাঝরাত্তিরের দিকে ফ্রাঙ্কোর নির্দেশ অনুযায়ী, এই প্যাসেঞ্জারটি যার কাছে কোন লাগেজ ছিল না, তাকে সোজা রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হয়।

1945 সালের মে মাসে মাদ্রিদে জেনারেল ফ্রাঙ্কো প্রাসাদের পূর্বভাগকে সিল করে দেওয়া হয়েছিল এবং 14 ফুট উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল এই নির্মাণটি সম্পর্কে আগে কাউকে জানানো হয়নি এবং এই অঞ্চলে যে সকল কর্মীদের নিযুক্ত রাখা হয়েছিল তারা সকলেই দক্ষ জার্মানভাষী ছিল।
সেই মাসেই ফ্রাঙ্কোর মেডিক্যাল কর্মীরা স্পেনের সবচেয়ে বড় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি থেকে 144 বোতলের 'ডক্টর কোস্টার্স এন্টি গ্যাস পিল' এর একটি কার্টুন এর অর্ডার দিয়েছিল এবং অক্টোবর মাস পর্যন্ত প্রতি মাসেই এই অর্ডারটি দেওয়া হতো।
বলা হয় হিটলারের ব্যক্তিগত ফিজিশিয়ান থিও মরেল একসময় হিটলারকে একটি 'anti-flatulence' মেডিকেশন দেন এবং হিটলার পরবর্তীকালে এর উপর নেশায় পড়ে যান। এমনকি বলা হয় তিনি মুঠোভর্তি করে এই ওষুধগুলো খেয়ে নিতেন। কাকতালীয়ভাবে জেনারেল ফ্রাঙ্কো মে মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত একই ধরনের ওষুধের দরকার পড়েছিল।

মাদ্রিদ এর রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে 13 মাইল দূরে একটি চিকিৎসালয় ছিল যাকে বলা হত 'দা ক্লিনিক সান কার্লোস'
1947 সালের শেষের দিকে এই ক্লিনিকের ডাইরেক্টর হিসাবে ডক্টর ভিক্টর ভেগা দিয়াজ যোগদান করেন। তিনি 'ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ কার্ডিয়লজিস্ট' এর প্রেসিডেন্ট ছিলেন অর্থাৎ এক কথায় বলতে হলে বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় হার্ট স্পেশালিস্ট ছিলেন।
ভেগা দিয়াজের ব্যক্তিগত ডায়েরি অনুযায়ী, 1947 সালের 1 নভেম্বর বুধবার দুপুরের দিকে রাষ্ট্রপতি ভবনের থেকে তার কাছে একটি টেলিফোন কল আসে এবং তাকে ফ্রাঙ্কোর বাগিচা দলের একজন সদস্যকে পরীক্ষা করার জন্য ডাকা হয়েছিল।এখানে ডাক্তার বাবু 'generalisimmo franko' লেখাটির তলায় বেশ ভালো করে আন্ডারলাইন করেছিলেন; যার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, তাকে রাষ্ট্রপতি ভবনের কোন কর্মী ফোন করেনি বরং স্প্যানিশ রাষ্ট্রপতি নিজেই ফোন করেছিলেন।

যেখানে 12 মাইল কাছে অত্যাধুনিক, বিশালাকৃতি এবং উন্নতমানের, রাষ্ট্রপতির নামে সম্মানিত হসপিটাল 'ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কো' অবস্থিত সেখানে স্প্যানিশ ডিক্টেটর কেন এই হাসপাতালটির সাথে যোগাযোগ করেছিলেন? এমনকি এর আগেও প্রেসিডেন্ট এবং তার নিকটস্থ সকলে ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কো স্থান থেকেই তাদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণে যাতায়াত বা যোগাযোগ রাখতেন। তবে কি তিনি চাইছিলেন না যে এখানে এই বিষয়ে কোন রেকর্ড রাখা হোক?

ডক্টর ডিয়াজ তার ডায়রিতে বর্ণনা করেছিলেন, পেশেন্টটি ছিলেন 50 থেকে 60 এর মাঝামাঝি বয়সে এবং তিনি খুবই রুগ্ন হয়েছিলেন (প্রসঙ্গত এইসময় হিটলারের বয়স হতো 58 বছর এবং ছয় মাস)।
তিনি নথিভুক্ত করেছিলেন যে দুপুর 3.32 এর সময় পেশেন্টের কার্ডিও মায়োপ্যাথি জনিত কারণে মৃত্যু ঘটেছিলো, যেটি খুবই সাধারণ হার্ট অ্যাটাক যার জন্য অটোপ্সির দরকার পড়ে না এবং পেজের শুরুতে পেশেন্ট আইডেন্টিফিকেশন এর স্থানে লেখেন, 'সেনোর আদি লুপাস'।

দুর্ভাগ্যবশত ডাক্তারের ব্যক্তিগত নোটে এর থেকে আর বেশি কিছু জানা যায় না এবং 'ক্লিনিকো সান কারলোস' 1947 সালের পর স্থানান্তরিত হয় এবং এটি নিয়ে হাসপাতালে যদি কোন রেকর্ড থেকে থাকে তাহলে সেটি এতক্ষণে চিরকালের মতো হারিয়ে গিয়েছে।

এটা সত্যি একটি অযৌক্তিক মনে হয় যে প্রেসিডেন্ট তার বাগানের এক মালিকে চিকিৎসা করানোর জন্য পৃথিবী শ্রেষ্ঠ কার্ডিওলজিষ্টের মধ্যে একজনকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। এছাড়াও 'সেনর আদি লুপাস' নামক কোন ব্যক্তির সমাধি ও শেষকৃত্য নিয়ে মাদ্রিদে কোন রেকর্ড বা কবরস্থান খুঁজ

এছাড়া এই সেনর আদি লুপাস' সম্পর্কে কোন ডকুমেন্ট পাওয়া যায়নি।  না কোনো বার্থ সার্টিফিকেট, না কোন বিবাহ সম্পর্কিত রেকর্ড, না কোন ট্যাক্স ফাইল অথবা এম্প্লয়মেন্টের ইতিহাস, না কোনো রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বা ইলেক্টোরাল রোল কিছুই পাওয়া যায়নি। 1947 সালের 11 নভেম্বরের আগে কিছুই ছিল না কেবলমাত্র ভেগা দিয়াজের ডায়েরিতে তার নামটি উল্লেখিত ছিল এবং একটি কাকতালীয় ব্যাপার হচ্ছে 'লুপাস' কথাটি উলফ বা শিয়ালের ল্যাটিন অনুবাদ। হিটলারের  জাহাজের নাম ছিল 'দা সি উলফ', প্লেনের নাম ছিল 'দা ফ্লাইং উলফ' এবং তার দুটি হেডকোয়ার্টার কে ডাকা হতো যথাক্রমে 'দ্য উলফস লেয়ার' এবং 'দা উলফস ডেন' বলে।

এছাড়া ওনার সাথে যখন তার প্রথম আলাপ হয়েছিল, তিনি মিস্টার উলফ ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিলেন।
এছাড়া একইরকমভাবে ক্রিশ্চান নাম 'আদি' ও
 তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। এভা ব্রাউন এই শব্দটিকে ব্যক্তিগত ভাবে তাকে ডাকতে ব্যবহার করতেন। 

Wednesday, 6 May 2020

হিটলারের আর্জেন্টিনা যাত্রা ও এফ বি আই ফাইল--

1945 সালের 30 এপ্রিলের সকালবেলায় অ্যাডাল্ট হিটলার নিজের বাংকারে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন এবং তার নববিবাহিত পত্নী এভা ব্রাউন সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। সেইদিন দুপুরবেলা তাদের মৃতদেহগুলো বাগানে নিয়ে এসে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। 
বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ এই ঘটনাটি সমর্থন করলেও আরো একটি থিওরি আছে যা অনেকের সমর্থন করে যেটা হলো হিটলার আসলে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তারা অন্য কোথাও তাদের পরবর্তীকালীন জীবন কাটিয়েছিলেন। 

প্রথমেই থিওরিটির সূচনা করেন মার্শাল জর্জি যুকো যিনি বার্লিনের ইন্সট্রুমেন্ট অফ সারেন্ডার সাইন করার সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "হয়তো শেষ মুহূর্তে হিটলার পালিয়ে গিয়েছিলেন।" তখন থেকে অনেকগুলি তদন্তকারী দল এই থিওরির অনুসন্ধানে নেমেছিলেন যার মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক জেরার্ড উইলিয়ামস এবং সাইমন ডানস্টন।

তাদের 2011 সালের প্রকাশিত বই 'গ্রে উলফ: দা এস্কেপ অফ অ্যাডলফ' - এ তারা তর্ক রেখেছিলেন যে, এডলফ এবং এভা আসলে তাদের আত্মহত্যাকে সাজানোর জন্য বডি ডাবল বা জমজ দেখতে মানুষদের ব্যবহার করেছিলেন এবং তারা বিমানে করে ডেনমার্ক চলে গিয়েছিলেন।
এরপর তারা স্পেনে গিয়েছিলেন, যেখানে ফ্যাসিস্ট ডিক্টেটর ফ্রাঙ্কো তাদের একটি বিমানে করে ক্যানারি আইসল্যান্ডে পাঠিয়েছিলেন।

এরপর একটি জার্মান ইউ বোট তাদেরকে আর্জেন্টিনা নিয়ে গিয়েছিল। যেখানে ইতিহাসবিদদের মতে, তারা বাকি জীবন কাটিয়ে ছিল তাদের দুই সন্তান ছিল এবং 1962 সালে হিটলারের মৃত্যু ঘটেছিল।

আরেকজন আরজিনটিনিয়ান লেখক আবেল বাস্তিরও মতামত একইরকম ছিল। তার মতে, এই দম্পতি স্পেনের থেকে ক্যানারি আইসল্যান্ড হয়ে ডুবোজাহাজে করে আরজেনটিনিয়া পৌঁছায়। যদিও বাস্তি মনে করে, হিটলার সাউথ আমেরিকায় 1971 সালে মারা যান এবং তাকে আসানসিয়নের এক গুপ্ত বাংকারে কবর দেওয়া হয় যার উপর এখন একটি হোটেল অবস্থিত।

এফবিআইয়ের প্রকাশিত কিছু ফাইলে (fbi এর  অফিসিয়াল সাইট এ পেয়ে যাবেন) সূত্র পাওয়া যায় যে, এডলফ হিটলার সাবমেরিনে করে আর্জেন্টিনা পালিয়ে গিয়েছিল গিয়েছিলেন এবং সেখানে ভারী মাত্রার পাহারা যুক্ত একটি গোপন স্থানে থাকতে শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে তিনি হাঁপানি ও আলসারে ভুগছিলেন।
এই ফাইলগুলোতে দেখা যায় যে হিটলারের অস্তিত্ব সংক্রান্ত তথ্যগুলো জে.এডগার.হুভারের এফবিআই যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেছিল এবং তদন্তের জন্য তারা একটি বিশেষ দল পাঠিয়েছিল।


এই ডকুমেন্ট গুলিতে দেখা গেছে যে, একজন আরজেনটিনিয়ান পলাতক আসামি দাবি করেছিলেন, 1945 সালের এপ্রিলে বার্লিনের পতনের পর তিনি হিটলার, দুজন মহিলা এবং অন্যান্য জার্মানদের একটি সাবমেরিন থেকে নেমে এই দক্ষিণ আমেরিকান দেশে গোপন স্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিলেন।

হিটলার এবং তার দলবল ঘোড়ার চড়ে দক্ষিণ আন্দেস পর্বতমালার পাদদেশে পৌঁছে ছিল এবং তাদের পরিকল্পনা ছিল পরিবার সহ সেখানকার একটি গ্রামে পৌঁছানো।
এই আরজেনটিনিয়ান সংবাদদাতা এই তথ্যগুলির বদলে ইউ এস আধিকারিকদের কাছে আশ্রয়ের দাবি চেয়ে ছিলেন, তাই তার নামও গোপন রাখা হয়েছিল।
কিন্তু সে 1945 সালের জুলাইতে লস এঞ্জেলেসের এক সাংবাদিককে হিটলারের বর্ণনা দিয়েছিল যে, 'এই  নাত্সিটি হাঁপানি ও আলসারে ভুগছিল এবং সে তার গোঁফ কেটে ফেলেছিল।'
এই সংবাদদাতাটি হিটলারের আস্তানার নির্দেশনা দিয়েছিল এবং বলেছিল, "যদি আপনি আর্জেন্টিনার সান অ্যান্টোনিও হোটেল এর কাছে আসেন আমি সেখানে আপনার একজনকে জোগাড় করে দেবো যে আপনাকে হিটলারের আস্তানায় নিয়ে যেতে পারবে।"
অবশ্যই এটা ভারী প্রহরা যুক্ত স্থান এবং আপনাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে যেতে হবে।
এই তথ্যটি কিংবদন্তি এফ বি আই কর্তা জে.এডগার.হুভারের কাছে পৌঁছলে তিনি সেটি যুদ্ধ সংক্রান্ত বিভাগে পাঠিয়ে দেন।

প্রাক্তন সিআইএ অপারেটিভ বব বিয়ার এবং আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও আবু আল যারকিকে  গ্রেপ্তার করা ইউ এস স্পেশাল ফোর্স দলের সার্জেন্ট - টিম কেনেডি এ বিষয়ে হিস্ট্রি চ্যানেলে বলেছিলেন যে, "ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স একসময় দাবি করেছিল যে, হিটলার তার মৃত্যু দিনের আগে জার্মান রাজধানী থেকে পাইলট পিটার বাঙার্ট এর সাথে বিমানে করে পালিয়ে গিয়েছিলেন।"
তারা হিটলারের বাংকারের তলায় একটি গোপন স্থানের সন্ধান পান যেখান থেকে খুব সহজেই অন্য স্থানে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব (পরের পর্বে আলোচনা করবো)। আরো একটি ডকুমেন্টে পাওয়া যায়, একজন এস এস অফিসার দাবি করেছিলেন, তিনি হিটলার কে ডেনমার্কে দেখেছিলেন।
এদিকে আর্জেন্টিনায় একটি মিলিটারি স্টাইলের কম্পাউন্ড এলাকা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে এবং দাবি করা হয় হিটলার আর্জেন্টিনা পৌঁছে এখানে ছিলেন।

Saturday, 2 May 2020

রহস্যময় টেলিপোর্টেশন --

'টেলিপোর্টেশন' - যার মাধ্যমে পলক ফেলার মধ্যে বিস্তৃত দূরত্ব অতিক্রম করা যায়। এটি বহুকাল ধরেই সায়েন্সফিকশন গল্পগুলোতে দেখানো হচ্ছে এবং কয়েক বছর ধরে বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয়বস্তু হয়েছে কিন্তু হয়তো আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যে এই প্রক্রিয়াটি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। 

আপনারা অনেকেই টেলিপোর্টেশনকে যেরকম ভাবেন এটা ঠিক তা নয়। সাধারণত টেলিপোর্টেশনকে দেখা হয় এক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে যা তৎক্ষণাৎ একজন মানুষকে বহু দূরত্বে মুহূর্তে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। টেলিপোর্টেশন হয়তো বহু যুগ ধরে হয়ে আসছে কোন প্রযুক্তি র ব্যবহার ছাড়াই।
টেলিপোর্টেশন কথাটা কোন খামখেয়ালী গল্প বা কল্পবিজ্ঞানের জন্য আবিষ্কার করা হয়নি। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সাইন্সল্যাবগুলিতে 'কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশন' এখন একটি বাস্তব গবেষণার বিষয়। কিন্তু এটা বাস্তবে হচ্ছে; বিভিন্ন রহস্যময় জিনিসপত্র বা মানুষের কোন যুক্তি ছাড়া হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়া হয়তো কোনো মহাজাগতিক শক্তি দ্বারা হতে পারে যা এই বস্তু গুলিকে টেলিপোর্ট করেছিল। 

বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞানের লেখক চার্লস ফোর্ট 1931 সালে লিখেছিলেন, 'টেলিপোর্টেশন হচ্ছে একপ্রকার স্থানান্তর কারী শক্তি যেটা মহাবিশ্বে ইতিমধ্যেই আছে এবং তার মতে এটা প্রাকৃতিক। মাঝে মাঝে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন যে প্যারানরমাল এক্টিভিটির খবর পাওয়া যায় তার জন্য হয়তো এই শক্তি দায়ী।'
প্রথম এই শব্দটি তার 1878 সালের একটি আর্টিকেল এর ব্যবহার করা হয়।

এই টেলিপোর্টেশন এর ব্যবহার বিখ্যাত সাইন্স ফিকশন ছবি 'স্টার ট্রেক' এ দেখা গেছে।
8 মার্চ 2014 সালে, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স লাইট MH৩৭০ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। এত বিশাল আকৃতির বস্তু এত মানুষের সাথে কোন চিহ্ন ছাড়া কিভাবে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে! এমনকি বিভিন্ন দেশের অবস্থিত অনুসন্ধানকারী দল তাদের খুঁজে পায়নি এবং বিভিন্ন চিহ্ন থেকে মনে করা হয়েছিল যে বিমানটি অক্ষত অবস্থায় ছিল। যেমন - যখন বিমানের যাত্রীদের কল করা হয়েছিল তখন সেই ফোনগুলি থেকে সিগনাল পাওয়া গিয়েছিল; কিন্তু সেখান থেকে কোন উত্তর আসেনি এবং এই সিগন্যাল কোত্থেকে আসছে তা অনুসন্ধানকারী অধিকর্তারা বের করতে সক্ষম হয়নি।

1880 সালে ডেভিড লাঙ নামক এক কৃষকের বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী মতে রীতিমত হাওয়ায় গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা শোনা যায়। তাকে আর কখনো দেখা যায়নি। গায়েব হয়ে যাওয়ার আগে তিনি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার আশেপাশে একটি বৃত্তাকার আকৃতির সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানা যায়। কয়েক মাস বাদে তার স্ত্রী রিপোর্ট করেন যে, তার এখনো মনে আছে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগে তার স্বামী কাঁদতে কাঁদতে সাহায্য চাইছিলেন।

এছাড়াও বেশিরভাগ মানুষই তাদের জীবনে কখনো না কখনো কোন বস্তু হারিয়েছেন, যেমন - হয়তো কোন ওয়েডিং রিং হাত থেকে পড়ে গেছে; কিন্তু অবাক করা ভাবে তাকে পাওয়া যায়নি। এটা যদি বাইরে হতো তাহলে অনেক স্থান ছিল যেখানে এটি হারিয়ে যেতে পারে, কিন্তু একটি ঘরের মধ্যে যেখানে অন্য কোন মানুষের চুরি করার সম্ভাবনা নেই। হয়তো জানালাও বন্ধ।  তার মধ্যে এটি কত দূরে হারিয়ে যেতে পারে? আবার অনেক সময় কিছুক্ষণ বাদে আমরা এটিকে অবাক হয়ে চোখের সামনেই দেখতে পেয়ে যাই। হতে পারে এইটা টেলিপোর্ট একটি উদাহরণ।

কার্টিস এলিস লিখেছিলেন, আকাশ থেকে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অর্গানিক এবং ইনোরগানিক বিষয়কে পরার ঘটনা বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যায়। যেমন - ব্যাঙ, মাছ, স্যাপ, কৃমি, অ্যালিগেটর, রক্ত, মাংস, পাথর, বাদাম, আর্টিফ্যাক্ট এবং আরো অনেক বস্তু, যেগুলো কখনো ব্যাঙের বা মাছের বৃষ্টি বলে বিখ্যাত হয়েছে। কিন্তু কিভাবে এগুলো হয়েছিল তা বিজ্ঞানে সঠিকভাবে যুক্তি পাওয়া যায়নি। সবসময় হারিকেনকে এর জন্য দায়ী করা যায়নি।

আইনস্টাইন ও রসেন-ব্রীজের ওয়ার্মহোল থিওরিতে এর কিছুটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যেতে পারে।
এই বিষয়বস্তুর দাঁড়া মুহুর্তের মধ্যে বিভিন্ন স্থানকে মহাজাগতিক সময়ের মধ্যে যুক্ত করা যায় এবং বস্তুকে পরিবহন করা যায়। 'একটা বস্তু অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে তখনই যখন সেটি অন্য সময় বা অন্য স্থানে পুনরায় দৃশ্যমান হতে পারে'। 

যদি আমরা বিশ্বাস করি যে, এই রকম ঘূর্ণন গতির অস্তিত্ব আছে তাহলে সেটি যে কোন স্থানে হতে পারে হয়তো সেগুলি ছোট ছোট পর্যায় আছে যার ফলে সহজে চোখে পরে না। সাধারণভাবে হয়তো ছোট ছোট পার্টিকেলকে সঞ্চয় করে এবং ছোট ছোট দূরত্বে পাঠিয়ে দেয় এবং কিছু কিছু বিরল সময় যদি এগুলো বড় হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত কিছু বস্তু যেমন আপনার চাবি বা অন্যান্য ছোটখাটো জিনিস স্থানান্তর করে এবং খুব দুর্লভ কিছু ক্ষেত্রে এটি এত বড় হয়ে যায় যে কোন গাড়ি মানুষ বা হয়তো একটি পুরো বিল্ডিংকে গায়েব করে দেয় -- যাকে অনেক মানুষ প্যারানরমাল এক্সপেরিয়েন্স হিসাবে রিপোর্ট করেছেন। 

যদি এই অদৃশ্য হওয়ার পিছনে ওয়ার্মহোল দায়ী হয়ে থাকে তবে সেগুলো নিশ্চয়ই অন্য কোন স্থানে পৌঁছে গিয়েছে। হয়তো অন্য কোন গ্রহের বা মহাজগতের বা গভীর মহাকাশে। কারণ, ওয়ার্মহোলের বিস্তৃতির কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। 

প্রথম শতাব্দি কালীন অর্থাৎ এক থেকে একশ শতকের মধ্যে সময়কালীন দার্শনিক এবং ফিজিশিয়ান 'অ্যাপোলোনিয়াস অফ ট্যানা' অতি দূর দূর স্থানে প্লেগ রোগীদের চিকিৎসা করতে পৌঁছে যেতেন। এটিকে একটি টেলিপোর্টেশন এর উদাহরণ বলা হয়।

17 শতাব্দীতে এরকম বেশ কিছু ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে একটি ঘটনা 1692 সালের স্কটিশ গল্পের বইতে লেখা আছে যার নাম 'দা সিক্রেট কম্মুনিয়ন ওয়েলথ' লেখক ছিলেন রবার্ট কীরক তিনি একটি মানুষের কথা উল্লেখ করেছিলেন, যার টেলিপোর্ট এর মাধ্যমে ছোট ছোট দূরত্ব অতিক্রম করার ক্ষমতা ছিল। তার প্রতিবেশীরা মাঝে মাঝেই তাকে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখতেন এবং আবার একঘন্টা বাদে দেখতে পেতেন।

এক নানের বর্ণনা পাওয়া যায় যাকে 'অগ্রেডা এর শ্রদ্ধেয় মেরি জেসাস' বলা হত। দাবি করা হয় 1620 এবং 1631 সালের মধ্যে তিনি তার মঠ থেকে 500 এর উপর টেলিপোর্টেশন করেছিলেন এবং নিউ মেক্সিকোর মত বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে গিয়েছিলেন যা মহাসাগরের ওপারে ছিল। উদ্দেশ্য ছিল এই সকল অঞ্চলের 'জুমানো ইন্ডিয়ান'দের তার ধর্মে দীক্ষিত করা। প্রথম প্রথম ক্যাথলিক চার্চ থেকে এই দাবিগুলোকে সন্দেহজনক হিসাবে দেখা হয়েছিল। যার ফলে তার মানসিক ভারসাম্য নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। কিন্তু 'নিউ ওয়ার্ল্ডের' মিশনারি এবং ইন্ডিয়ানরা নিজে এমন কিছু প্রমাণ ও সাক্ষ্য দেন যা এই ঘটনাকে বাস্তবায়িত করে তোলে।

যেমন 1622 সালে ফাদার আলঞ্জো দে বেনাভিডস স্পেনের পোপ আরবান-VIII এবং ফিলিপ-IV কে একটি চিঠিতে দাবি করেছিলেন, তিনি সেখানে পৌঁছানোর অনেক আগে কেউ সক্রিয়ভাবে জুমানো ইন্ডিয়ানদের কনভার্ট করেছিলেন। যখন ইন্ডিয়ানদের তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে কোথায় তারা ক্রিশ্চিয়ানিটি বিষয়ে জানতে পারে, তারা বলেছিল যে, এটা তাদের এক ইউরোপিয়ান 'lady in blue' দেখিয়েছিল এবং এই রহস্যময় মহিলা তাদের 'crusifixes' এবং একটি 'Mary's convent' এর পাত্র দিয়েছিল। বেনেভিদ তখনো মেরীর ব্যাপারে কিছু জানতো না এবং তার টেলিপোর্টএর ব্যাপারেও কিছু শোনেনি এবং সে পরে যখন স্পেনে ফিরে গিয়েছিল তখনই সেগুলো জানতে পেরেছিল যার ফলে সে খুবই অবাক হয়ে গেছিল এবং ব্যক্তিগতভাবে মেরীর ইন্টারভিউ নিয়েছিল এবং সে খুব অবাক হয়ে গেছিল, যেভাবে তিনি জুয়ানো ইন্ডিয়ানদের এলাকা, তাদের সংস্কৃতি এবং জীবন সম্পর্কে বর্ণনা দেন। এগুলি বই দেখে বানিয়ে বলা অসম্ভব ছিল এবং মেরি তারি টেলিপোর্ট বৃত্তান্তগুলি একটি ডায়েরিতে লিখে রাখতেন; কিন্তু চার্চের চাপে এবং ভয়ের ফলে তাকে সেটি পুড়িয়ে ফেলতে হয়; নয়তো তাকে ডাইনি অপবাদ দেওয়া হতে পারত।

এছাড়া হাজার মাইল দূরে বিভিন্ন উপজাতি ও অভিযাত্রীদের বর্ণনা অনুযায়ী মেরীর সাথে সেই ইউরোপিয়ান মহিলার গঠন ও পোশাক-আশাকের মিল পাওয়া যায় এবং সেই মঠের অন্যান্য নানরা দাবি করেছিল যে মাঝে মাঝে তিনি তার কোয়ার্টার থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতেন এবং সেই সময় ইন্ডিয়ানদের সাথে থাকতেন। বেনিভিদের এই দাবী যে ,তিনি মেরির এই রহস্যময় যাত্রার প্রমাণ পেয়েছেন তা 'মেরি জেসাস দে আগ্রেড' কে পৃথিবী জুড়ে বিখ্যাত করে দিয়েছিল। এটা কি কোন টেলিপোর্টেশন এর কারণে অথবা কেবলমাত্র ধার্মিক কোন পুরাকথা ছিল? উত্তর যাই হোক না কেন এটি একটি রহস্যময় ঘটনা হয়ে থাকবে।

পুরাতন কালের টেলিপোর্টেশন এর রিপোর্ট গুলিকে ডাকিনীবিদ্যা অথবা যাদুবিদ্যা বা ভৌতিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হতো।
1661 সালে আয়ারল্যান্ডের কর্ক এর ফ্লোরেন্স নিউটন নামক এক মহিলা এরকম চেষ্টা করেছিলেন এবং তাকে ডাইনি বলে অভিযুক্ত করা হয়। বলা হয়, বলা হয় নিউটন পৈশাচিক ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়েছিল; যার ফলে সে বিভিন্ন রকমের অদ্ভুত বস্তু যেমন - উল অথবা পিন জাতীয় বস্তু মুখ থেকে বমি করে বের করত এবং তার অস্বাভাবিক শক্তি ছিল যার ফলে সে বিশালকায় মানুষকেও পুতুলের মত ছুড়ে ফেলত পারতো। এছাড়াও বলা হয় তাকে পাথর মারার সময় কোথাও একটা থেকে তার সামনে আত্মরক্ষার জন্য বড় পাথর চলে আসে এবং তা আবার গায়েব হয়ে যায়। হয়তো তার এই রহস্যময় শক্তির পেছনে টেলিপোর্টেশন দায়ী ছিল কারণ এটাও শোনা যায় যে নিউটন মাঝেমাঝেই ঘর থেকে গায়েব হয়ে যায় এবং কিছুক্ষণ বাদে আবার ফিরে আসতো।

'পল্টারজেইস্ট' নামক এক প্রকার ভূতের বর্ণনা পাওয়া যায়। 1722 সালে পূর্ব জার্মানি ছোট ছোট  গ্রামের পরিবারগুলি এদের দ্বারা আতঙ্কিত হয়ে গিয়েছিল। এরা নিয়মিতভাবে বাচ্চাদের তুলে নিত এবং ঘোরানোর পর তাদের মাঝ আকাশে ঝুলিয়ে দিত এবং বাচ্চারা মাঝে মাঝে আকাশে অদৃশ্য হয়ে যেত এবং কিছু সময় বা কয়েক ঘন্টা বাদে সম্পূর্ণ আলাদা স্থানে পুনরায় উদ্ভব হতো। এই ঘটনা গুলি খুব ভালোভাবে লিখে রাখা হয়েছিল। 

ইউনাইটেড কিংডম এর বৃষ্টল শহরের একটি ঘটনা শোনা যায় যেখানে, রিচার্ড গিলস নামক এক ব্যক্তির সন্তানরা একটি অশরীরী আত্মা জাতীয় কিছুর দ্বারা খুবই ভীতসন্ত্রস্ত হয়েছিল এই জিনিসটি তাদেরকে ঠেলা দিত, ধাক্কা মারতো, কামড়াতো, আঁচড় দিতো এবং মাঝে মাঝে পাথর ছুড়ে মারতো। এছাড়া তাদেরকে মাঝে মাঝেই একটি স্থান থেকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে অন্য স্থানে ছেড়ে দিত। রহস্যময় ব্যাপার হলো এই যে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় শিশুরা হঠাৎ করে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যেত এবং আবার ফিরে আসতো। কিন্তু শিশুদের মতে, তাদেরকে এক জরাজীর্ণ পোশাক পরা ডাইনীর মত দেখতে মহিলা ধরে নিয়ে যেত।

পুরনো সময়ের এই ঘটনাগুলো হতে পারে কোন কল্পকাহিনী, ধর্মীয় অথবা ভয়ের কারণে অতিরঞ্জিত করা কিন্তু এগুলোর মধ্যে যে মিল গুলি পাওয়া যায় তা ধারণা দেয় যে, টেলিপোর্টেশন বহু আগে থেকেই ছিল।

1871 সালের 3 জুনে একটি উদ্ভট ঘটনা ঘটেছিল লন্ডনের একজন মনস্তত্ত্ববিদের সাথে যার নাম ছিল মিসেস গাপ্পি। তিনি তার বাড়ি থেকে তিন মাইল দূরে টেলিপোর্ট করে চলে আসেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এটি সত্যিই অদ্ভুত এবং কমিক বইয়ের মত ছিল। মিসেস গাপ্পি হঠাৎ করে হাওয়া থেকে উদয় হয়ে পড়েন এবং তার পরনে কেবলমাত্র অন্তর্বাস ছিল। 

1901 সালে পানসিনি পরিবার ইটালির রুভোতে চলে আসেন এবং তারপর থেকেই সেখানে এক অদ্ভুত রকমের ঘটনার সম্মুখীন হতে থাকেন।
এই অদ্ভুত ঘটনা গুলির মধ্যে একটি বিরক্তিকর বিষয় ঘটাতো তাদের সাত বছরের ছেলে আলফ্রেদো পানসিনি; সে মাঝে মাঝেই আচ্ছন্ন হয়ে পড়তো এবং ফিরে এসে ভবিষ্যৎবাণী করত।  এর কিছু সময় বাদে সে তার টেলিপোর্ট এর ক্ষমতা দেখাতে শুরু করলো। অনেক সময় অন্যান্য লোকের উপস্থিতিতেই আলফ্রেড হঠাৎ করে বাড়ি থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতো এবং শহরের অন্য কোন স্থানে পৌঁছে যেতো। এরপর আলফ্রেডের ভাই পাওলোও এই টেলিপোর্ট করতে শুরু করেছিল এবং কখনো কখনো দুই ভাই একসাথে ঘর থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতো এবং কয়েক মাইল দূরে 'পোর্ট অফ ভ্যালেটা'তে মাছ ধরার নৌকায় উদিত হত।

এই অদ্ভুত ঘটনাগুলি পোপ লিও XII এবং পিউস X এর মেডিক্যাল অ্যাডভাইজার তদন্ত করেছিলেন তিনি এই দাবিগুলোকে পরীক্ষা করার জন্য গবেষণা করেছিলেন। তিনি পরিকল্পনামাফিক ছেলেদুটিকে তাদের ঘরে আটকে দিয়ে ছিলেন এবং জানলা ও দরজা সিল করে দিয়েছিলেন এবং বাড়ির অন্যান্য দরজা গুলো বন্ধ করে দিয়েছিলেন,যাতে তারা পালাতে না পারে। কিন্তু তবুও সকলের নাকের ডগায় তারা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল এবং আবার কয়েক মাইল দূরে উদয় হয়েছিল।জানা গিয়েছে,এই টেলিপোর্টেশন প্রক্রিয়াগুলি বেশ কয়েক বছর ধরে চলতে থেকেছিল এবং যখন তারা যৌবনে প্রবেশ করেছিল তারা তাদের এই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল।

এই টেলিপোর্টেশনএর ঘটনাগুলি বিংশ শতাব্দীতেও চলতে থাকে।
1920 সালের শেষের দিকে ভারতের পুনেতে ডক্টর কেটার কিছু অদ্ভুত ঘটনার সম্মুখীন হন। 
তার দত্তক নেওয়া দুই সন্তান দাবি করতে থাকে যে, তারা বন্ধ করা গাড়ি অথবা ঘর থেকে হঠাৎ করে অন্যান্য স্থানে চলে যেতে পারে এরমধ্যে একটি ঘটনার সম্মুখীন মিসেস কেটার নিজে হন। তার সামনে থেকে হঠাৎ করে একদিন তার কনিষ্ঠ সন্তান গায়েব হয়ে যায় এবং কিছুদূরের 'কারজাত' শহর  থেকে ফিরে আসে। মিসেস কেটার তার বিবরণ দেন যে, যেন কোন অদৃশ্য শক্তির হাত তাদেরকে যত্ন করে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এবং ফিরিয়ে মেঝেতে রেখেছিল।

1952 সালের ডিসেম্বরে একজন বিখ্যাত দার্শনিক ও অতীন্দ্রিয়বাদী ওয়েলেসলি টুদর পোল দাবি করেন, সাসেক্সে তার বাড়িতে ফিরে আসার সময় তার ট্রেন লেট হয়ে যায় এবং তিনি এক বৃষ্টি, ঝড় ও খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে স্টেশনে ফেঁসে যান এবং বাড়ি যাওয়ার জন্য কোন ট্যাক্সি বা অন্যান্য পরিবহন পাচ্ছিলেন না। এরমধ্যে আরো চিন্তা বাড়িয়ে দেয় যখন তিনি দেখেন, সেখানকার টেলিফোন বুথ আউট অফ অর্ডার হয়ে আছে। এটা সত্যি খুব বিরক্তিকর এবং অসহায় অবস্থা ছিল। তার মনে হচ্ছিল সেই বৃষ্টি রাতে হয়তো তাকে স্টেশনে কাটাতে হবে। কিন্তু বাড়িতে ফিরে তার একটা দরকারি কল বাকি ছিল। পল বলেছিলেন যে, তিনি বসে পড়েন এবং তার ঘড়িকে স্টেশনের ঘড়ির সাথে মিলিয়ে দেখেন দুটোতেই বিকাল 5টা বেজে 57 মিনিট। এরপর যা ঘটেছিল, তা অস্পষ্ট ছিল কিন্তু পোল দাবি করেন যে, হঠাৎ করে তিনি অবাক হয়ে যান, বিভ্রান্ত হয়ে যান এবং তাকে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করেন তার জামা কাপড় ভিজে ছিল না, এমনকি তার জুতোগুলোও কাদা মাখা ছিল না। তারমানে, তিনি বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে আসেননি এবং যখন তিনি এসেছিলেন তখন ঘড়ির কাটায় ছয়টা বাজে - যেটা অসম্ভব ছিল। স্টেশন থেকে বাড়ির এতটা দূরত্ব দু মিনিটে না ভিজে পৌঁছনো অসম্ভব ব্যাপার ছিল।  তিনি বলেছিলেন যে হয়তো কোন ভাবে অজান্তে নিজেকে টেলিপোর্ট করে ফেলেছিলেন। তবে তার কোনো ধারণা ছিল না কিভাবে এবং কেন।

1956 সালে টমাস.আর.কেসেল নামক এক ব্যক্তি নিউইয়র্কের ব্যস্ত রাস্তায় হঠাৎ করে যেন হাওয়া থেকে উদয় হলেন। তিনি পরে বলেছিলেন যে, তার শেষ মনে আছে তিনি জোহান্সবার্গ সাউথ আফ্রিকায় একটি বারে বসে ছিলেন। তার কাছে কোন পাসপোর্ট ছিলনা। তাই এত দূর থেকে কীভাবে তিনি রাতারাতি এইভাবে চলে এলেন - সেটা রহস্য থেকে গেছে। তিনি বলেছিলেন তার কিছুই মনে পড়ছে না যে, কীভাবে তিনি এতদূর চলে এসেছিলেন।

একটি খুব বিতর্কিত এবং বিখ্যাত টেলিপোর্টেশন হয়েছিল 1968 সালে, যখন ডক্টর গেরাল্ড ভিদাল তার স্ত্রীর সাথে এবং পুরো একটি গাড়ি নিয়ে অনেক দূর অব্দি টেলিপোর্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তথ্য অনুযায়ী 1968 সালের মে মাসে এই দম্পতি তাদের গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আর্জেন্টিনার বুনোস এয়ারস এর গ্রাম্য অঞ্চল কস্কোমাস দিয়ে তাদের গাড়ি চালাচ্ছিলেন।তারা বলেছিলেন, ঠিক এই সময় একটি ঘন কুয়াশা তাদের ঘিরে ধরে ছিল এবং তারা সময়মতো তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি এবং চিন্তিত পরিবারের সদস্যরা যখন এলাকার অধিকারিকদের কাছে পৌছলেন, তারা রাস্তায় খোঁজাখুঁজি শুরু করেছিলেন। তাঁরা কোনো চিহ্ন খুঁজে পাননি। 48 ঘন্টা বাদে গেরাল্ড ভিদাল তার পরিবারকে ফোন করে বলেছিলেন যে, তারা নিরাপদ আছেন। কিন্তু অদ্ভুতভাবে তারা প্রায় 6,400 কিলোমিটার দূরে মেক্সিকো সিটিতে পৌঁছে গেছেন।ভিদাল পরের দিকে বলেছিলেন যে, সেই 48 ঘন্টা জুড়ে কি ঘটেছিল তার কিছুই মনে নেই। তার কেবলমাত্র মনে আছে যে, তারা একটি রহস্যময় ঘন কুয়াশার সম্মুখীন হয়েছিলেন যার পর সবকিছু কালো হয়ে গিয়েছিল বা অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। যখন তাদের জ্ঞান ফিরেছিল, তারা তাদেরকে একটি অজানা রাস্তার ধারে পার্ক করা গাড়ির ভেতরে পেয়েছিলেন। তারা দুজনেই অভিযোগ করেছিলেন যে এই সময়ে তাদের ঘাড়ে যন্ত্রণা অনুভূত হয়েছিল এবং মনে হয়েছিল যেন অনেকক্ষণ ধরে তারা ঘুমিয়ে ছিলেন। তাদের গাড়িটা দেখে মনে হচ্ছিল যেন পুড়ে গেছে, ঠিক যেন আলোয় ঝলসে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এত ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পরও গাড়িটি কাজ করছিল এবং বিভ্রান্ত এই দম্পতি রাস্তায় নিয়ে গিয়ে বেশ কয়েকজন পথিককে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, তারা কোথায় আছেন এবং জানতে পেরেছিলেন তারা মেক্সিকোয় এসে গেছেন।

অবাক করা বিষয় যে মেক্সিকো সিটির আর্জেন্টিনা দূতাবাস এ বিষয়ে খুব শান্ত ছিল এবং যা ঘটেছিল সে বিষয়ে তাদেরকেও চুপ থাকতে বলেছিল। ঠিক যেন এই ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। এছাড়া সেই দম্পতিকে খুব দ্রুত তাদের ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির পরিবর্তে অন্য একটি নতুন গাড়ি দেওয়া হয়েছিল এবং তাদের গাড়িটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ও গবেষণার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যদিও তাদের চুপ করে থাকতে বলা হয়েছিল কিন্তু যা ঘটেছিল এটা ছড়িয়ে যেতে খুব বেশি সময় লাগেনি। বহু সংবাদমাধ্যম এই ঘটনাটি নিয়ে রিপোর্ট করতে শুরু করেছিল। যার মধ্যে অনেক খবরের কাগজ টিভি নিউজ এবং রেডিও শো হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমএর এই তৎপরতা সপ্তাহ খানেক বাদে হঠাৎ করে শান্ত হয়ে গেল। হঠাৎ করে সকল খবরের মাধ্যমগুলোকে এই ঘটনাটি প্রচার করা থেকে বল প্রয়োগ করে ব্যান করে দেওয়া হলো এবং এই ঘটনার সাথে জড়িত আর কোন তথ্য সংগ্রহ করতে দেওয়া হলো না। এই ঘটনা ঘটার একবছর পরে ভিদালের নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়েছিল। সূত্র অনুযায়ী বলা হয় যে, দুজনেই রহস্যময়ভাবে লিউকেমিয়ার কারণে মারা গেছিল। এই ঘটনাটি সবচেয়ে অবাক করা এবং রহস্যময় ঘটনার মধ্যে একটি ছিল এবং সবচেয়ে বেশি চর্চা করা হয়েছিল যেটি পরবর্তীকালে ইউ এফ ও লজির মধ্যেও আনা হয়েছিল এবং অসংখ্য আর্টিকেল ও পাবলিকেশনএর সাথে জড়িয়ে গিয়েছিল।

ভিদালের এই ঘটনায় অনেক বিতর্ক ঘটেছিল। যেখানে অনেক বিতর্কিত তথ্য এবং রিপোর্ট ছিল যেগুলি একে অপরের সাথে বিরোধিতা করছিলো এবং অনেকগুলো থিওরির তৈরি হয়েছিল যেমন কোথাও কোথাও বিতর্ক দেখা গিয়েছিল এটি টেলিপোর্টেশন এর কারণে হয়েছিল না এটি একটি ইউ এফ ও অপহরণের ঘটনা ছিল।
1971 সালে অল কেসিগ নামক ইউ এস স্টেটস অফ মিসৌরি এন্ড আরকানসাস এর এক ব্যক্তি বলেছিলেন যে, তিনি বেশকিছু দরজা এবং ঘূর্ণির মত একপ্রকার কিছু খুঁজে পেয়েছেন, যার মধ্যে দিয়ে তিনি টেলিপোর্টেশন পদ্ধতিতে অন্য ডাইমেনশনএর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছতে পারেন। এই দরজাগুলো আলাদা আলাদা রকমের হয়; কিন্তু কেউ যদি এগুলিকে চিনতে পারে তাহলে সে বহু দূরে কোথাও চলে যেতে পারে আবার ফিরেও আসতে পারে। এই দরজা কখনো কখনো এমন জায়গায় নিয়ে যেতে পারে যেখানে কোন প্রাণের অস্তিত্ব নেই; আবার কোন কোন দরজা দিয়ে অতীতকালে বা ভবিষ্যৎকাল যাওয়া যেতে পারে। আবার কোনো কোনো দরজা মানুষের দেহকে দূরবর্তী কোন নক্ষত্রে পৌঁছে দিতে পারে।

1993 সালের আগস্টে ফোর্টিয়ান রিসার্চার আয়ন এ্যালেক্সিস উইল একটি আইভরিকোস্টের গৃহহীন ছেলেকে খুঁজে পেয়েছিল। তিনি যখন আফ্রিকায় গ্রাম অঞ্চল ইয়োমাসুক্রো দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং সেন্ট অগাস্টিন নামেরএকটি ক্যাথলিক চার্চের কাছে এসেছিলেন, সেখানের পাদ্রী তাকে জানিয়েছিল যে একটি নয় বছর বয়সের ছেলে অদ্ভুত রকম আচরণ করছে। সে তার লক করা কোয়াটার থেকে অদৃশ্য হয়ে আবার কোন অদ্ভুত রকম জায়গা যেমন লক করা গাড়ির ভেতর বা অন্য কোন স্থানে পুনরায় উদয় হচ্ছে যেখানে তার থাকা অস্বাভাবিক। একদিন যখন সে প্রাতরাশ করছিল তখন হঠাৎ করে অনেকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সামনে সে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল এবং তাকে চার্চের বাইরে একটু দূরে ভীত এবং বিভ্রান্ত অবস্থায় দেখা গিয়েছিল; আরো একটু খোঁজ নিয়ে জানা গেল যে বালকটিকে প্রায় 155 মাইল দূরের একটি শহর থেকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।
এই বালকের আসল নাম ছিল 'N'Doua Kouname Serge' তার এই রহস্যময় অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা পাঁচ বছর বয়স থেকেই হয়ে এসেছিল। যেমন- হঠাৎ করে আইভরিকোস্টের একটি হসপিটাল থেকে অদৃশ্য হয়ে প্রায় 200 মাইল দূরে সান পেরোতে উদিত হয়েছিল। শোনা যায় দেশজুড়ে বিভিন্ন শহরে সে এরকমভাবে চলে যেতএবং এই সময় অনেকে বলত কোনো অশুভ শক্তি এই ঘটনাটা ঘটাচ্ছে। যখন এক সাংবাদিক তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, সে কিভাবে হঠাৎ করে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছাতে পারে তখন বালকটি বলেছিলে, "আমি জানিনা আমি এখানে আছি এবং হঠাৎ করে আমি নিজেকে অন্য শহরে খুঁজে পেয়ে যাই।"
2009 সালে 'Pravda report' এ একটি আর্টিকেল পাওয়া যায় যার নাম ছিল "বজ্রপাত প্যারালাল দুনিয়ার দরজা খুলে দিতে পারে"।এই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, তাতিয়ানা ফেমিন নামক এক ইউএফও রিসার্চার দুইবার এই ভাবে টেলিপোর্ট করতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি দাবি করেছিলেন, এই সময়ে তিনি কিছু অনুভব করতে পারেনি কিন্তু যখন জেগে উঠেছিলেন তখন তিনি অন্য স্থানে ছিলেন।

লিডিয়া নিকলাভি নামক একজন মহিলা যিনি রাশিয়ার নাভির গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন তিনি বলেছিলেন, তিনি যখন মাশরুম তুলতে গিয়েছিলেন, হঠাৎ করে তার মনে হলো যেন তার বুকে কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। যখন তার জ্ঞান ফিরল তিনি নিজেকে প্রায় 3.3 মাইল দূরে একটি পরিতেক্ত চার্চে খুঁজে পেয়েছিলেন।

এই ঘটনাগুলি শুনে আপনার কি মনে হয় এগুলি কি কেবলমাত্র মনের বিভ্রম অথবা অতিরঞ্জিত গল্প হতে পারে নাকি এর থেকে অনেক বড় এবং বেশি কিছু যা আমাদের ধারণার বাইরে। যদি এই মানুষগুলো কোনভাবে একস্থান থেকে অন্যস্থানে পৌঁছনোর সেই সীমা অতিক্রম করতে পারেন তবে কিভাবে সেটা করেছিলেন? হয়তো ভবিষ্যতে বিজ্ঞান এটি আবিষ্কার ও এর ব্যাখ্যা দিতে পারবে। পরবর্তী পর্বে টেলিপোর্টেশন নিয়ে আরো কিছু উদাহরণ নিয়ে আসব।