Pages

Saturday, 8 May 2021

প্রাচীন মহাকাশযান রহস্য, সক্রেটিস কি মহাকাশে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন?

প্রাচীন গ্রীস বহু আগে বিজ্ঞান এবং গণিতের বিশেষ অগ্রগতির জন্য খ্যাতি লাভ করেছিল যা পরবর্তীকালে পাশ্চাত্যের সভ্যতাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। স্যামোসের আরিস্টারকাস কোপার্নিকাসের অনেক আগেই হেলিওসেন্ট্রিক কসমোলজি বা সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের প্রস্তাবনা দিয়েছিল এবং এছাড়াও রাইট ব্রাদার্সদের 1903 সালে উড়োজাহাজ আবিষ্কারের বহু আগেই বাষ্প চালিত উরন্ত যন্ত্র আবিষ্কারক হিসাবে তার সম্মান আছে।

এটা খুব অবাক করা বিষয় নয় যে বহু লোক দাবি করে, প্রাচীন গ্রিক এবং অন্যান্য সমকালীন অত্যাধুনিক সভ্যতা গুলি যেমন প্রাচীন চীন এবং ভারত - যারা হয়তো এখনকার মানুষের ধারণার বাইরেও উন্নত ছিল এমনকি প্রাচীন মহাকাশযান তারা বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন।



সক্রেটিস পৃথিবীকে উপর থেকে দেখতে যে রঙিন বলের মতো মনে হয়, তার যা বর্ণনা দিয়েছেন সেটা অনেকটা কক্ষপথ থেকে বর্তমানের পৃথিবীতে দেখতে যে রকম লাগে তার সাথে মিল পাওয়া যায়।

অরবিটের এই কক্ষপথ মহাকাশচারী এবং মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের কাছে একটি বিখ্যাত প্যাসেজ যেখান থেকে ভূমির উপরে থেকে একটি পজেটিভ ভিউ পাওয়া যায়।



অন্যান্যরা যদিও মনে করেন আরো একটি লেয়ার আছে, কিন্তু কিছু গবেষকরা মনে করেন যে, এটি আসলে একটি প্রমাণ যে আসলে সক্রেটিস পৃথিবীপৃষ্ঠকে অরবিট থেকে দেখেছিলেন অথবা তার কাছে হয়তো অন্য কোন উন্নত সভ্যতার রেকর্ড ছিল যাদের কাছে প্রাচীন মহাকাশযান ছিল এবং ফলস্বরূপ তারা মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দৃশ্যের নিখুঁত বর্ণনা দিতে সক্ষম হয়েছিল।

এমনকি এটাও হতে পারে হয়তো প্রাচীন গ্রিকদের কাছে আরও উন্নত প্রযুক্তি ছিল যা বর্তমান আর্কিওলজিস্ট ও ঐতিহাসিকদের ধারণার বাইরে।



প্রাচীন গ্রীকের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি --

যদিও গ্রিসের থেকে বিজ্ঞানের সূত্রপাত হয়নি তবে আধুনিক বিজ্ঞান যেভাবে পরিচালিত হয়ে চলেছে তার শিকড় প্রাচীন গ্রিসের চিন্তাধারা থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রাচীন মিশরীয় এবং মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, তাদের উন্নত জ্যোতির্বিদ্যা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য পরিচিত।

প্রাচীন মিশরীয় এবং মেসোপটেমিয়ান পুরোহিতরা কেবলমাত্র জ্যোতির্বিদ্যায় আগ্রহী ছিলেন যেটি তাদের ক্যালেন্ডার পঞ্জিকা তৈরি করতে এবং জ্যোতির্বিদ্যার মাধ্যমে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে জানতে সাহায্য করত। তেমনি  চিকিৎসকরা কেবলমাত্র এ্যানাটমী এবং ফিজিওলজিতে আগ্রহী ছিলেন যা তাদের চিকিৎসায় সাহায্য করত।

প্রাচীন সভ্যতা গুলির মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে আরেকটি পার্থক্য বলা যায়, প্রাকৃতিক ঘটনাগুলিকে ব্যাখ্যা করতে ঈশ্বরের কথা তুলে ধরা হতো; যদিও এতে কিছু ব্যতিক্রম ছিল কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সভ্যতা গুলি বিজ্ঞানকে দৈনন্দিন কার্যকলাপে ব্যবহার করত, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বোঝার জন্য নয়। বিশ্বের গঠনগত ও অন্যান্য কার্যকলাপ বিষয়টি তখন পুরান শাস্ত্রের  অন্তর্গত রাখা হতো এই ভাবেই প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকরা চিন্তা ভাবনা করতেন। পরবর্তীকালে যেগুলি দর্শনবিদ্যায় প্রবেশ করে। 



প্রথম থেলস (৬২৪-৫৪৬ খ্রি পু:) এর সময় থেকে সক্রেটিস পূর্ব গ্রিক দার্শনিকরা বিজ্ঞানকে অন্যান্য কারনে ব্যবহার করা শুরু করলো। তাদের বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ গুলো কেবলমাত্র ব্যবহারিক কারণ যেমন ক্যালেন্ডার তৈরি জন্য নয় বরং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বোঝানোর কাজে লাগাতে শুরু করলেন। এছাড়াও বজ্রপাত, ভূমিকম্প ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হিসেবে ঈশ্বরকে জড়িত না করে এই দার্শনিকরা তাদের প্রকৃতির উপর অভিজ্ঞতা থেকে জড়বাদী ব্যাখ্যা খোজার চেষ্টা করলেন। যেমন - থেলস ব্যাখ্যা দিলেন, ভূমিকম্পের কারণ হলো - যার উপর স্থলভাগ ভেসে আছে সেই সমুদ্রের ঢেউ পৃথিবীর ডিস্ক গুলিতে ধাক্কা মারে ফলে ভূমিকম্প ঘটে থাকতে পারে।

 সক্রেটিস পূর্ব দার্শনিকদের বেশিরভাগ ধারণা এবং ব্যাখ্যা গুলি আধুনিক বিজ্ঞানের কাছে সম্পূর্ণ ভুল ছিল কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার কারণ হলো তারাই প্রথম এই ভৌত জগৎকে অতিপ্রাকৃত বা দৈবিক ছেড়ে প্রাকৃতিক বা পদার্থবিদ্যাগত দিক দিয়ে ব্যাখ্যা করার বা বোঝার চেষ্টা করেছিলেন।



এই প্রচেষ্টা গুলি পরবর্তীকালে বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং-এ কিছু ফলপ্রসূ উন্নয়ন এনেছিল।

 পরবর্তী কালের গ্রিক এবং হেলেনিস্টিক বৈজ্ঞানিকরা প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে এই ধরনের চিন্তাভাবনা করেই বাষ্প চালিত যন্ত্র, এনালগ রোবট আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং যুক্তি দিয়েছিলেন যে মানুষের বুদ্ধি মস্তিষ্ক থেকে আসে হৃদয় থেকে নয় - যেরকম প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা বিশ্বাস করত এবং এটাও বলেছিলেন যে পৃথিবী গোলাকার, চ্যাপ্টা নয় যেমনটা প্রাচীন জ্যোতির্বিদ এবং কিছু সক্রেটিস পূর্ব দার্শনিক যেমন থেলস এবং অনাক্সাগোরাস বলেছিল।

প্রথম যে গ্রিক দার্শনিক গোল আকৃতি পৃথিবীর স্বপক্ষে যুক্তি রেখেছিলেন তিনি হলেন পর্মানিডস (খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দি)।

 পিথাগরিয়ান স্কুল অফ ফিলোসফির প্রতিষ্ঠাতা পিথাগোরাসও  (570 থেকে 490 খ্রিস্টপূর্বাব্দ) গোলাকার পৃথিবীর সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। সবচেয়ে বিখ্যাত পিথাগোরিয়ানদের মধ্যে একজন হলেন ফিলোলাস যিনি গোলাকার পৃথিবীতে বিশ্বাস করতেন। এছাড়া তিনি বলেছিলেন, পৃথিবী চলমান এবং এটি বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে মোটেই অবস্থিত নয়। ফিলোলাস সক্রেটিসের সমকালীন তাই সম্ভবত সক্রেটিসও তার চিন্তাধারার সাথে পরিচিত ছিল সক্রেটিসের বর্ণনা অনুযায়ী, পৃথিবী একটি রঙিন বলের মতো এবং ফিলোলাসের বর্ণনা অনুযায়ী এটি চলমান। 

 এছাড়া প্লাটো যিনি সক্রেটিসের সবচেয়ে বিখ্যাত ছাত্র ছিলেন তিনি বিশ্বাস করতেন, পৃথিবী গোলাকার ও ফিলোলাসের মহাকাশ সম্পর্কিত চিন্তাধারাগুলো কে বিশ্বাস করতেন। সক্রেটিস নিজে মহাকাশবিদ্যা সম্পর্কে প্রথমে তেমন কোনো চিন্তা ভাবনা করেননি এমনকি হয়তো সময়ও দিতেন না যদি প্লাটো এই বিষয়ে তার সাথে অসম্মতি না জানাতো।


সক্রেটিস এর সময়কালীন গোলাকৃতি পৃথিবী সম্পর্কিত ধারণা অনেকেই মেনে নিয়েছিলেন, শুধু তাই না বেশিরভাগ বিদ্বান মেধাবী গ্রীকরা দর্শন শাস্ত্রের চর্চায় আগ্রহ প্রকাশ ও যোগদান করতে শুরু করেছিল। তার মানে এই দাঁড়ায় যে তিনি এমন কিছু উল্টোপাল্টা বলেননি, যেটা প্রাচীন গ্রীকদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। এটা হয়তো প্রমাণ হতে পারে যে পৃথিবী পৃষ্ঠকে অরবিট থেকে দেখতে কেমন হয় তা সম্পর্কে গ্রিকদের প্রাথমিক ধারণা ছিল। কিন্তু তার মানে এই হয় না যে এই ধারণাটি কক্ষপথে পৌঁছাতে পারলেই হবে, এছাড়া আরেকটি সমস্যা হল প্রাচীন মানুষদের অরবিট থেকে পৃথিবীকে দেখার স্বপক্ষে কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই এবং অবশ্যই মহাকাশযান তৈরি করা সংক্রান্ত তো বটেই।

এছাড়া যদি কেউ উঁচু পর্বতের শীর্ষে যেতে পারে তবে পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে তার ধারণা হওয়া খুব একটি অসম্ভব কিছু নয়। আবার এটাও সম্ভব হতে পারে এই বিষয়গুলি কোন প্রাচীন মহাকাশযানের অস্তিত্ব থাকার প্রমাণ। অথবা কোনো উন্নত সভ্যতা যারা তাদের এই জ্ঞান দিয়েছিলো। আপনার কি মনে হয় ?