Pages

Tuesday, 10 April 2018

মরুরহস্য যা আজও সমাধান হয়নি!

মরুভূমির নাম শুনলেই সবার চোখে ভেসে ওঠে বালুময় এক প্রান্তরের কথা। যার ভেতরে নেই কোন বড় গাছ। কেবল আছে কিছু ছোটছোট ঝোপ আর প্রচন্ড গরম। খেজুর গাছ হয়তো কিছু খুঁজে পাওয়াও যেতে পারে, তবে পানি অনেকটা মরিচীকার মতন। যা কেবল মরিচীকাতেই উপস্থিত হয় চোখের সামনে। কিন্তু বিস্তীর্ণ এই বালুর ছড়াছড়ি ছাড়াও মরুভূমি এমন এক স্থান যেখানে রয়েছে হাজারটা রহস্যের খনি। এর বালুর পরতে পরতে লুকিয়ে আছে নিকষ অনেক রহস্য যার ভেদ করা যায়নি কখনোই। আসুন জেনে নিই এমন কিছু মরু রহস্যর কথা।

সিরিয়ার স্টোনহেঞ্জ



২০০৯ সালের কথা সেটা।সিরিয়ার মরুভুমিতে একটি হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার হয়। রবার্ট ম্যাসন সিরিয়ায় মরুভূমিতে কাজ করছিলেন। হঠাৎ কিছু দালান কোঠার নজির আর নানারকম ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন তিনি। গিজার পিরামিডের বয়স ৪৫০০ বছর। আর এই ধ্বংসাবশেষের বয়েস হিসেব করা হয় ৬ থেকে ১০,০০০ বছর। সবচাইতে পুরোন শহর দামেস্কও এর কাছে নেহাত শিশু। বেশ কিছুদিন খোড়াখুড়ি চলে সেখানে।সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারনে, কোন বিজ্ঞানিই ভালভাবে পরীক্ষা করতে পারেননি এই স্থানটি, আজ অব্দি জানা যায়নি মরুভূমির ভেতরে ওখানে কে এমন দালান-কোঠা বানিয়েছিল আর কেনইবা সেটা নষ্ট হয়ে গেল, নিওলিথিক যুগে মানুষ যখন কেবল শস্য ফলাতে শুরু করেছে, ঐ স্থাপনাগুলোও তার সমসাময়িক বলে বিশ্বাস বিজ্ঞানিদের।

বম জেসাস রহস্য


২০০৮ সালে আফ্রিকার দেশ নামিবিয়ার মরুভুমিতে পরতুগিজ জাহাজ বম জেসাসের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়। ১৫৩৩ সালে প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা এবং মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে এই জাহাজটি কি করে নামিবিয়ায় গেল টা আজো রহস্য হয়ে রয়েছে। জাহাজটি থেকে ২ হাজার স্বর্ণমুদ্রা উদ্ধার করা হয় কিন্তু জাহাজটির আরোহীদের কার দেহাবশেষ পাওয়া যায়নি।

আটাকামা নাইট্রেট


দক্ষিণ আমেরিকার মরুভূমি পৃথিবীর সবচাইতে শুষ্ক স্থান হিসেএ পরিচিত। যেখানে কেউ ছিল না এবং কেউ থাকেওনা। বলা হয় এ মিলিলিটার বৃষ্টি এখানে হলেও সেটা এর জন্যে অনেক। কিন্তু সাধারনত সেটাও হয়না। কিন্তু পানি ও সেই ব্যাকটেরিয়া যেটা দিয়ে নাইট্রেট তৈরি হয়- এগুলোর কোনরকম সাহায্য ছাড়াই এই মরুভূমির ভেতরে স্তুপ হয়েছে এবং হচ্ছে ৭০০ কি.মি লম্বা ও ২০ কি.মি চওড়া নাইট্রেট। আটাকামা মরুভূমি নামে পরিচিত এই মরুভূমির এই আটাকামা নাইট্রেটের জন্ম প্রশান্ত মহাসাগরের কোন এক স্থান থেকে মনে করা হলেও এই রহস্য এখনো ভেদ করা সম্ভব হয়নি।

ডেড সি কপার স্ক্রল 


১৯৪৬ সালে জর্দান ও ইসরাইলের মাঝামাঝি জায়গায় ডেড সি বা মৃত সাগরের উত্তর তীর ঘেষে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের খোঁজ পাওয়া যায়। যেখানে ১১টি গুহা পাওয়া যায়। সে গুহাগুলোর ৩ নম্বরটিতে দুটি কপারের তৈরি স্ক্রল পাওয়া যায়। পরে বুঝা যায়, এই কপারের স্ক্রলগুলোতে আসলে পৃথিবীর ৬৪টি স্থানের কথা বলা রয়েছে, যে স্থানগুলোয় লুকিয়ে রাখা হয়েছে মোট প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলারেরও (প্রায় ৯৩৯৭ কোটি টাকা) বেশি সম্পদ। তবে যা এখনো কেউই খুঁজে পায়নি।

ফেয়ারি সার্কেল






নামিবিয়ার মরুভূমিতে খানিকটা হাঁটলেই আপনি থমকে দাঁড়াবেন। কিছু জায়গাজুড়ে গোল গোল চাকা দেখে অবাক হবেন। ২ থেকে ২০ মিটার অব্দি বাড়তে পারে এই গোলাকৃতির চাকাগুলো। এই গোলাকৃতির জিনিসগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ফেয়ারি সার্কেল। মাইলের পর বিস্তৃত এই সার্কেলগুলো। দেখে মনে হবে যেন কেউ একটু পর পর মাটি খুঁড়ে এই ফেয়ারি সার্কেল তৈরি করেছে। কিন্তু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছে এই ফেয়ারি সার্কেল। এই সার্কেল বা চক্রের প্রান্তে এক ধরনের ঘাস জন্মাতে দেখা গেলেও এর মধ্যিখানে কোনো ধরনের গাছ, ঘাস বা কোনো কিছুই জন্মায় না। এমনকি অনেক যত্ন ও সার পাওয়ার পরেও না। বিজ্ঞানীদের আজ অব্দি প্রাকৃতিক এই গোল চক্রগুলোর কোনো রহস্য ভেদ করতে পারেননি। এদের বয়স সর্বোচ্চ ৭৫ বছর হয়ে থাকে। ৭৫ বছর পর এমনিতেই অদৃশ্য হয়ে যায় গোলচক্রগুলো। কী অদ্ভুত তাই না। এখনো রহস্যই রয়ে গিয়েছে সবার কাছে এই ফেয়ারি সার্কেল।

রত্নভাণ্ডার 



১৯৩৭ সালে মঙ্গোলিয়ায় কমিউনিস্ট সরকার ক্ষমতায় এসেই একের পর এক ধ্বংস করে দিতে লাগল বৌদ্ধ মন্দিরগুলো। সেই সঙ্গে শেষ হয়ে যায় বহু মূল্যবান দলিল ও রত্ন। এরই মধ্যে মূল্যবান রত্নবোঝাই ৬৪টি বাক্স নিয়ে গোবি মরুভূমি পালিয়ে যায় এক সন্ন্যাসী। ২০০৯ সালে একদল প্রত্নতত্ত্ববিদ হারিয়ে যাওয়া সেই সন্ন্যাসীর রত্নভাণ্ডারের সন্ধান করেন। সন্যাসী মৃত্যুর আগে নাতির হাতে ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন সেই গুপ্তধনের নকশা। নকশা অনুসরণ করে  পৌঁছেও গেলেন গুপ্তধনের কাছে। বিশেষজ্ঞ দল। সত্তর বছর ধরে গোপন থাকা মরুভূমির গুপ্তধন উদ্ধারে খনন চলল প্রায় এক ঘণ্টা ধরে। এরপর ইন্টারনেটে বিশ্ববাসী সরাসরি দেখল, অমূল্য রত্ন বেরিয়ে আসছে মাটির তলা থেকে। বাক্সগুলো ভেঙে পাওয়া গেল অসামান্য কিছু ব্রোঞ্জের মূর্তি। বৌদ্ধধর্মের কয়েকটি পবিত্র গ্রন্থও পাওয়া যায়। আমরা যাকে বলি সূত্র। অদ্ভুত কিছু বাদ্যযন্ত্রও পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো মঠে প্রার্থনার সময় বাজানো হতো। আরও পাওয়া যায় পুরনো আমলের বস্ত্র ও অমূল্য পাণ্ডুলিপি।

সাহারার নীল মানব



মরুভূমির যাযাবরদের বড় একটি অংশই মরুভূমির বুকে অবস্থান করে। এ যাযাবরদের নিয়ে অনেক গবেষণা করা হলেও এখনো অনেকটাই অজানা রয়ে গেছে। খুব বেশি দিন হয়নি এমনি এক যাযাবর দলের সন্ধান পাওয়া গেছে উত্তর আফ্রিকার সাহারায়। এদের নীল রঙের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা লক্ষ করা গেছে। তা চোখ এড়ায়নি গবেষকদেরও। পুরুষ, নারী সবাই নীল রঙের পোশাক পরতে পছন্দ করেন। এ কারণে এ যাযাবর মানুষদের নীল মানুষ নামেই ডাকা হয়ে থাকে। গবেষণা করে দেখা গেছে, এই নীল মানুষেরা আসলে তুয়ারেগ সম্প্রদায়ের। নীল মানুষদের সমাজ বিশ্লেষণেও বেশ চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে আসে। এই সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুযায়ী পরিবারের দেখাশোনা ও সম্পদের কর্তৃত্ব মেয়েদের হাতে। গবেষকরা দাবি করেন, চতুর্দশ শতাব্দীর রানী তিন হিনানের মাধ্যমে এ উপজাতি গোষ্ঠীর সূচনা হয়েছে। এখানকার পুরুষরা ‘সাহারার নীল মানব’ নামে পরিচিত। যাযাবর পুরুষরা নীল রঙের ভারী পোশাক পরে সারা শরীর ঢেকে রাখে। এমনকি মুখও ঢেকে রাখে। ফটো সাংবাদিক  হেনরিয়েতা বাটলার ২০০১ সালে মরু অঞ্চলে প্রথম নীল মানবদের দেখা পান। অনেকেই ভুল তথ্য উপস্থাপন করে থাকেন যে, এদের গায়ের রং নীল। বাস্তবে অনেক কালো চামড়ার মানুষও এ যাযাবর দলে রয়েছে। নাইজার, মালি, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া, মরক্কো, লিবিয়া অঞ্চলেরও অনেকে এ যাযাবর দলে রয়েছে।

No comments:

Post a Comment