Pages

Sunday, 26 January 2020

হারিয়ে যাওয়া শহর অ্যাটলান্টিস ও রহস্যময় বিমিনি রোড --

লস্ট সিটি অফ আটলান্টিস বা হারিয়ে যাওয়া আটলান্টিস শহর যা যুগ যুগ ধরে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিকদের মনে কৌতুহলের সৃষ্টি করে চলেছে। এই শহরটির কথা প্রথম উঠে আসে গ্রীক দার্শনিক ও গণিতজ্ঞবিদ প্লেটোর একটি বইতে যাতে তিনি বর্ণনা করেন একটি গল্প যেখানে প্রাচীন আটলান্টিয়ানরা প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স শহরকে আক্রমণ ও অবরুদ্ধ করেন। এই আটলান্টিয়ানরা খুবই উন্নত ছিল এবং শান্ত ছিল কিন্তু একসময় তাদের মনে বিশ্বজয়ের লোভ জেগে ওঠে। প্রাচীন এথেন্স বাসীরা এরপর মানব সভ্যতার ইতিহাসের এক মহান যুদ্ধ লড়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত আটলান্টিয়ানরা দেবতাদের রোষের মুখে পড়েন এবং তাদের অনুগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। পুরো আটলান্টিস দ্বীপ রাতারাতি একদিনের মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যায় এবং তার কোন চিহ্ন থাকে না। আটলান্টিসের এই অবস্থা শতাব্দী জুড়ে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগিয়েছে যে যুগ যুগ ধরে সময়ের জোয়ারে এরকম কতইনা সভ্যতা পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেছে।

প্রায়ই আমরা এমন সব প্রমাণ পাই যা এই সভ্যতা সম্পর্কে আবার মনে সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে এরকমই একটি সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল। একদল ডুবুরি জাপানের রিঙ্কু দ্বীপপুঞ্জের উপকূল থেকে কিছু দূরে প্রায় 10,000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পুরনো বিশালাকৃতি কিছু শিরাবিন্যাস খুঁজে পায় যে শিলিগুড়ি 90 ডিগ্রি কোণে খাড়াও মসৃণভাবে খোদাই করে সাজানো ছিল।
আরেকদল ডুবুরি গ্রিসের লাখো নিও সমুদ্রতটের কাছে সমুদ্রের ভিতর প্রায় 3 লক্ষ বর্গ ফুট জুড়ে বিস্তৃত জমি আবিষ্কার করেছিল যেখানে সুসজ্জিত রাস্তা সহ বিভিন্ন ভবন ও কবরস্থান অবস্থিত ছিল।কিন্তু আপনি যদি আমেরিকান উপকূল রেখার কাছাকাছি এই জাতীয় কিছু খুঁজে থাকেন তাহলে অবশ্যই বাহামা দ্বীপপুঞ্জের কাছে অবস্থিত নর্থ বিমিনি উপকূলের কাছে পাওয়া এই গঠন গুলির বিষয়ে পড়ুন।

বিমিনি হল বাহামা দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে অবস্থিত এবং যা ফ্লোরিডার মায়ামি সমুদ্রতল থেকে 50 মাইল দূরে অবস্থিত। 1968 সালের 2 সেপ্টেম্বর যে ম্যানশন ভ্যালেন্টাইন, জ্যাক মাইঅল এবং রবার্ট আঙ্গভ নামে 3 ডুবুরি বিমিনি রোড নামে বাবি মিনি ওয়াল নামে গঠন গুলো এখানে খুঁজে পান। এই বিমিনি রোড সমুদ্রতলের প্রায় 18 ফুট নিচে অবস্থিত এবং লাইমস্টোন এর দুটো করে রক ফর্মেশন খোদাই করে নির্ভুলভাবে এবং প্রায় 10 বর্গফুট আকৃতির বিশালাকৃতির পাথরকে নির্ভুলভাবে খোদাই করে বানানো হয় যা প্রায় আধামাইল যাওয়ার পর একটি বাক নিয়ে নেয়।দেখে মনে হয় এই পাথরের ব্লকগুলো পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছিল এবং রাস্তা বা বিল্ডিং এর অংশ ছিল।যারা এগুলো নিয়ে অধ্যয়ন করেছিলেন তাঁরা বলেন বহু সময় ধরে প্রাকৃতিক কারণে এদের ধারগুলায়- গোলাকৃতি হয়ে গেছে বা একে অপরের থেকে সংযোগ হারিয়ে ফেলেছে এবং অতীতে এগুলি অবিচ্ছিন্ন ও যুক্ত ছিল। বলা হয় এই রাস্তাটি প্রাচীন শহর আটলান্টিস প্রবেশপথের সাথে যুক্ত ছিল।
'Unsolved mysteries in the world' এর মতে বিমিনি শব্দটির উৎপত্তি সঠিকভাবে জানা যায়নি তবে যারা বিশ্বাস করেন এই বিমিনি শব্দটি ইজিপশিয়ান শব্দ থেকে এসেছে যার অর্থ হলো মিনের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। মিন হচ্ছেন প্রাচীন ইজিপশিয়ান দেবতা যিনি ভ্রমণকারী ও পথিকদের রক্ষা করেন। তাদের মতে এই রাস্তাটি 3100 খ্রিস্টপূর্বাব্দ সময়কালীন ইজিপশিয়ান শহরের অংশ ছিল কারণ বর্তমান ইজিপ্টের নাইল নদী এবং আলেকজান্দ্রিয়ার কাছাকাছি এই ধরনের গঠন পাওয়া যায় আবার কেউ কেউ বলেন আটলান্টিস ও ইজিপ্টের বাসিন্দারা এই অঞ্চলে যাতায়াত করত এবং সেখানে মিনু দেবতার পূজা করা হতো।
এই রাস্তাটি জুড়ে আরও একটি রহস্যময় ঘটনা হলো বিমিনি রোড আবিষ্কারের প্রায় তিরিশ বছর আগে 1938 সালে আমেরিকান মিষ্টিক সিজার কেস 68 অথবা 69 সালে আটলান্টিসের রাস্তা আবিষ্কারের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

বিতর্ক এবং অন্যান্য থিওরি--
অনেক আর্কিওলজিস্টরা বলেছিলেন যে চুনাপাথরে প্রাকৃতিকভাবে ফাটল ধরতে পারে এবং সেগুলো বর্গাকৃতি টাইল এর মত আকৃতি গঠন করতে পারে। কিন্তু ডক্টর গ্রেগের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধিদল এই রাস্তার তলায় আর একটি বর্গাকৃতি একই ধরনের আকৃতির পাথরের খুঁজে পান যদি প্রাকৃতিক ভাবে এই রাস্তা তৈরি হতো তাহলে পাথরগুলোর তলায় প্রশস্ত সমুদ্র তল পাওয়া যেত যার ফলে প্রাকৃতিক যুক্তি খারিজ হয়ে যায়।
এরপরে এই গঠন গুলি থেকে একটি পাথর ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডোতে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে বিশেষজ্ঞরা এটি নিয়ে গবেষণা করে দেখেন যে এই পাথর গুলিতে যন্ত্রের আঘাত এবং সুদক্ষ ভাবে করার চিহ্ন স্পষ্ট আবার প্রাকৃতিক ভাবে গঠন হওয়ার তথ্য খারিজ করে।
এছাড়া বিমিনি রোডের কাছাকাছি থাকা সমুদ্রতটের অন্যান্য পাথর গুলির সাথে পরীক্ষা করে দেখা যায় যে বিমিনি ওয়াল বা রোডের পাথরের সাথে এগুলির তেমন কোনো সাদৃশ্য নেই যা প্রমাণ করে এই পাথরগুলি অন্য কোন স্থানে গঠিত হয়েছিল এবং সেখান থেকে এই অঞ্চলে বয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
গিভ ইন মেনিনজেসের থিওরি অনুযায়ী তিনি বলেন বিমিনি রোড হচ্ছে আসলে চাইনিজ নৌবাহিনীর তৈরি করা একটি আপাতকালীন বন্দর যা প্রমাণ করে ক্যারিবিয়ান সাগরে সেই সময় তাদের যাতায়াত ছিল এবং যেহেতু তখন সমুদ্রপৃষ্ঠ 6 ফুট নিচে ছিল তাই তখন দৃশ্যমান ছিল।
জলের তলায় বিদ্যমান হওয়া সত্ত্বেও বিমিনি রোড স্যাটেলাইটের ছবিতে দৃশ্যমান হয়।
আটলান্টিস শহর এর মত বিমিনি ওয়াল বাম রোড নিয়েও বহু বছর ধরে বৈজ্ঞানিকদের কাছে ইতিহাসের একটি বড় রহস্য হয়ে থেকে গেছে।

No comments:

Post a Comment