Pages

Saturday, 19 September 2020

মক্কার দুর্ঘটনা ও শক্তিশালী অস্ত্র আর্ক্ অফ গেব্রিয়েল ---

2015 সালের সেপ্টেম্বর মাস, এমন একটি ভয়ানক ঘটনা ঘটেছিল যা পুরো সৌদি আরবিয়াকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই ঘটনাটি প্রায় 2,000 এর উপর মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। মক্কায় বাৎসরিক ধর্মীয় তীর্থযাত্রা কালীন পদপিষ্ট হয়ে তাদের মৃত্যু ঘটে; এর ঠিক তিন মাস বাদে 24 শে ডিসেম্বর থেকে ইন্টারনেটে রাশিয়ান নেভিকে নিয়ে এক অদ্ভুত রকমের গুজব ছড়াতে থাকে।বলা হয় রিসার্চ শীপ বা গবেষণাকারী জাহাজ 'অ্যাডমিরাল ভ্লাদিমির স্কি' সৌদির জেদা শহরের বন্দর থেকে ঠিক এই পদপিষ্টের ঘটনায় দিন আন্টার্কটিকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল এবং অ্যান্টার্কটিকায় একটি টপ সিক্রেট বস্তু ইনস্টলেশন করার জন্য নিয়ে গেছে। 

এই আর্টিফ্যাক্টটিকে 'আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েল' বলে উল্লেখ করা হয়। একটি লিকড রাশিয়ান রিপোর্ট অনুযায়ী এই বস্তুটি দুটি দুর্যোগের কারণ ছিল। পদপিষ্টের দুর্ঘটনার আগে যখন কন্সট্রাকশন ওয়ার্কার এটিকে ছুঁয়েছিল তখন এর ভিতর থেকে এক ধরনের শক্তি নির্গত হয় যা সঙ্গে সঙ্গে কাছে থাকা 15 জন কর্মচারীর প্রাণ নিয়ে নেয় এবং এটি পদপিষ্টের ঘটনার আগে কনস্ট্রাকশন ক্রেনটি পরে যাওয়ার জন্য দায়ী।



'সর্চা ফাল' নামক এক ব্লগার প্রথমেই গল্পটা লিখেছিলেন। তাঁর মতে, যখন প্রথমবার এটিকে তোলার চেষ্টা করা হয়, তখন শক্তিশালী বিস্ফোরণ  ঘটেছিল  যার ফলে একটি বড় ক্রেন পড়ে যায় এবং মোট 111 জনের মৃত্যু এবং ঠিক তার পরের মাসেই দ্বিতীয় বার যখন পুনরায় এই চেষ্টা করা হয়েছিল তখন পদপিষ্টের জন্য 2,000 জন এর মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। এরপরে মক্কার দুই পবিত্র মসজিদের কাস্টোডিয়ানরা মস্কোর রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের প্রধান প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল এর সাথে এই আর্টিফ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করার জন্য যোগাযোগ করেন।

এতক্ষণ ধরে যে ঘটনাগুলো বর্ণনা করা হয়েছিল সেগুলো প্রকৃত জীবনে ঘটার সম্ভাবনা 1 থেকে 10 মধ্যে কতটা হতে পারে? সাধারণ ক্ষেত্রে আমরা -1 এ আছি।
যদিও ঘটনাটি ঘটলে অবশ্যই কোন না কোন প্রমাণ থাকবে। ক্রেমলিন মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স এর দ্বারা তৈরি একটি রিপোর্ট লিক হয়েছিল এবং এখানে লেখা হয়েছিল যে, ঠিক এই সময় দুটি স্যাটেলাইট নেভাল রিসার্চ ভেসেল 'অ্যাডমিরাল ভ্লাদিমির স্কি'কে নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে লঞ্চ করা হয়েছিল এবং এই জাহাজে থাকা বস্তুটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে প্রেসিডেন্ট পুতিন স্বয়ং রিপোর্ট এর ফাইলটিকে 'ক্রিটিকাল মিলিটারি রিলিজিয়াস সিগনিফিকেন্স' বলে লেবেল করেছিলেন।



এটি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায় যে, আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েল আসলে কি?
ইসলামে আমরা মনে করি যে, আর্কএঞ্জেল গ্যাব্রিয়েল হল ধর্মের অন্যতম মুখ্য চরিত্র এবং তিনি ইসলামের প্রাথমিক কালে ক্রমাগত মোহাম্মদ এর সাথে যোগাযোগ রেখে গিয়েছিলেন। যদিও আপনি যদি কোন মুসলিমকে প্রশ্ন করেন তারা 'আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েল' সম্পর্কে কী জানে তারা খুব সম্ভবত বলবে তারা কখনও এসম্পর্কে শোনেনি।

এছাড়া পণ্ডিতদের মতে এই আর্টিফ্যাক্টটি বাইবেল সম্বন্ধীয় আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েলের মত একই প্রকার এবং এটিও কোন অস্বাভাবিক জ্ঞানের থেকে উদ্ভূত যা মেনস্ট্রিম ইসলামের থেকে অনেক বাইরে পর্যন্ত বিস্তারিত এবং অবশ্যই মিডিল ইস্ট এর বাইরে।

ফাল তার ব্লগে দাবি করেছিল যে, এক্ষেত্রে রাশিয়ান পাদ্রীর সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল কারণ এই রাশিয়ান চার্চের কাছে ক্রুসেডকালীন অক্ষত থাকা একটি প্রাচীন ইসলামিক ম্যানুস্ক্রিপ্ট আছে। এই মানুস্ক্রিপ্টে  আর্ক্টি কিভাবে পরিচালনা করতে হয় তা সম্বন্ধীয় নির্দেশাবলী ছিল। এছাড়া দাবি করা হয়  আর্ক্এঞ্জেল মোহাম্মদকে এই বস্তুটি হস্তান্তর করেছিল এবং তাকে এই জিনিসটি একটি স্থানে পুঁতে রাখতে বলেছিল। এই স্থানটিতে ফেরেশতারা মানুষ্য সৃষ্টির আগে উপাসনা করার স্থান হিসেবে ব্যবহার করত এবং এই স্থানটি আরবিয়ার মাঝামাঝি অবস্থিত। ডকুমেন্টে ব্যাখ্যা করা হয় যে এটিকে জাজমেন্ট ডে পর্যন্ত লুক্কায়িত রাখার পরিকল্পনা ছিল।




ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি গোপন তত্ত্বে বলা হয়েছে, যে এই অদ্ভুত বস্তুটি আসলে একটি অস্ত্র যাতে দুটো এনার্জি ডিসচার্জ আছে এবং যার ফলাফলস্বরূপ 2015 সালে এত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং এটি একটি প্রমাণ যে, এই আর্কের কার্যপ্রণালী বুঝতে পারলে একে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ার করা যেতে পারে। যদিও এই রিপোর্টটির বাস্তবতা নিয়ে অনেক সংশয় রয়েছে। 

যখন আমরা এই আর্ক টিকে ঘিরে বিভিন্ন তথ্য এবং এর স্থানান্তর সম্পর্কিত কাহিনীর উৎস নিয়ে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করি এবং আমরা দেখতে পাই এই একই ঘটনাটি অগণিতবার ইউটিউব এর বিভিন্ন ভিডিও এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি ইউ. কে এর  একটি বিখ্যাত নিউজ পেপার 'ডেইলি স্টার' এ আমরা এর উল্লেখ দেখতে পাই এবং এর উৎস সবক্ষেত্রেই 'হোয়াট ডাস ইট মিন ডটকম' এ নিয়ে আসে। এই ওয়েবসাইটটির ব্লগার ছিলেন 'সরচা ফাল' ; 2015 সালের আগে এই আর্কটির বিষয়ে ইন্টারনেটের কোথাও, যেমন - গুগোল বা অনলাইনে একাডেমিক রিসার্চ পেপার এমনকি কোন ডিজিটাল বুকেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়নি। যেন এটি কখনো ছিল না এবং আরো একটি প্রশ্ন থেকে যায় যেটি হল কিভাবে এই বস্তুটি মক্কা থেকে জেডা এবং জেডা থেকে আন্টার্কটিকা সবার অলক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? এমনকি আর কোন জীবনহানি ছাড়া এবং কেনই বা সৌদি আরবিয়া এত শক্তিশালী একটি বস্তু অন্য একটি দেশের হাতে ছেড়ে দেবে? এটিকে বুঝতে বছরের-পর-বছর সময় লাগলেও তারা নিজেদের কাছে কেন রেখে দেয় নি? ফাল এই তথ্যটি প্রথম সবার সামনে তুলে ধরেন এবং এই কাহিনীর উৎস তার থেকেই শুরু হয়। 




 এই আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েল সম্পর্কিত ধাঁধার সমাধান তখনই হবে যখন এই সোর্চা ফাল কে তা জানা যাবে। আমরা হোয়াট ডাজ ইট মীন ডটকমের থেকে জানতে পারি এই ফাল আসলে একজন রাশিয়ান সাইন্টিস্ট এবং একাডেমিক। এর থেকে বোঝা যায় কিভাবে তিনি রাশিয়ান গোপন রিপোর্ট সম্পর্কিত তথ্য জানতে পেরেছিলেন। যদিও 2009 সাল থেকে অনলাইন অল্টারনেটিভ থিওরি কমিউনিটি প্রশ্ন করতে শুরু করলো যে এই চরিত্রটি আসলে কতটি আসল?

 এরপরে অনেক ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ করার পর দেখা গেল যে এই নামে কোন রাশিয়ান একাডেমিক এর রেকর্ড পাওয়া যায়নি। বহু সমালোচনার পর অবশেষে সাইটটি  দাবি করলো যে সর্চা ফাল এই নামটি আসলে একটি নাম নয় এটি একটি খেতাব এবং খেতাবটি এসেছে 'অর্ডার অফ সার্চ ফাল' থেকে যা আসলে একটি গোপন ও অন্ধকার জগত থেকে এসেছে। 

অনেকেই বলেন যে এই সংঘ আসলে পূর্ব ইউরোপের ডাইনিদের একটি সংঘ যা বংশ পরম্পরায় চলে আসছে এবং প্রথম যার সূচনা হয় 1290 সাল থেকে এবং তাই যদি হয় তার মানে তারা তাদের এই সংঘের কার্যকলাপ পৃথিবীর বহু যুগ ধরে এবং উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে চালিয়ে গেছে। এই সংঘটির উপরিভাগ থেকে 14 জন মহিলা নেতৃত্ব  দিত। যদিও এটা  কেবল মাত্র একটি থিওরি। 
 
এনথ্রপলজি এবং পলিটিকাল সাইন্টিস্ট জেসন কলাভিলের মতে, সৌদি আরবের আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েল এর ঘটনাটি একটি ভাওতা। এটি আসলে নেশনালিস্টিক জেনোফোবিয়া তৈরি করার প্রচেষ্টা যা সাধারণ ক্রিশ্চান আমেরিকানদের মনে ভীতি সঞ্চার করবে বিশেষ করে তাদের মধ্যে যারা এই ধরনের ঘটনায় বিশ্বাস করে। কারন এই ধরনের অধিকাংশ আমেরিকানবাসীদের সবচেয়ে ভয়, রাশিয়া এবং সৌদি আরবিয়া এখন একসাথে কাজ করছে, একটি প্রাচীন ইসলামিক বস্তুকে অস্ত্রে পরিণত করার জন্য যাতে তাদের বিরুদ্ধে বিনাশকারী শক্তির ব্যবহার করতে পারে এটা তাদের মনে বিশেষ ভীতির সঞ্চার করবে।

অর্থোডক্স চার্চের একটি প্রাচীন ম্যানুস্ক্রিপ্ট সংগ্রহ করে রাখা আছে যা দিয়ে এই আর্কটিকে পরিচালনা করা যায় -- এর সেরকম কোন ভালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও যেখান থেকে আর্ক্ অফ গেব্রিয়েল পাওয়া গিয়েছিল, সেই স্থানটি ঘিরে বহুকাল ধরেই একটি অতিপ্রাকৃতিক শক্তির ঘটনা ঘিরে রয়েছে। মধ্যযুগে রচিত 'আকবর আল জামান' নামক একটি আরবিক গ্রন্থ যা 1000 c e তে লেখা হয়েছিল, তাতে লেখা হয়েছিল 'অ্যাডামের পতনের পর গ্যাব্রিয়েল পৃথিবীর বুকে এসেছিল এবং
 তার কাছে 21 পৃষ্ঠার স্বর্গীয় বাণী প্রকাশিত হল। অ্যাডামের দেহকে মক্কার কাছে 'কেভ অফ ট্রেজার' নামক স্থানে দাফন করা হয়েছিল।' হিব্রু লোককাহিনী অনুযায়ী, এই স্থানটি সোনা এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রীতে ভর্তি করা হয়েছিল। এই বইতে বলা হয়েছিল, অ্যাডামের পুত্র শেঠ এরপর আরো 27 টি পৃষ্ঠার দৈব বাণী পেয়েছিল এবং তাকে আদেশ দেয়া হয়েছিল মক্কায় প্রথম মসজিদটি বানানোর যা বিখ্যাত বন্যার পর আব্রাহাম পুনঃ নির্মাণ করেছিল। 




যদিও এই প্রাচীন লেখাগুলিতে আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েলের কথা সরাসরিভাবে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি; কেউ কেউ দাবি করে বিখ্যাত বই 'বুক অফ ইনখ' এ আর্কের কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। থিওরিটিক্যালি  এটা সম্ভব হতে পারে কারণ মনে করা হয়, 'আকবর আল জামান' গ্রন্থটি তার বেশিরভাগ তথ্যগুলো এই 'বুক অফ ইনক' থেকেই সংগ্রহ করেছিল। যদিও বাস্তবিক ভাবে আমরা যা ভেবে নিতে পারি -- হয়তো সৌদি আরবিয়া এবং রাশিয়ার একসাথে মিলিত হয়ে পৃথিবীর ধ্বংস সম্পর্কিত কার্যকলাপে কোন যোগাযোগ নেই, কিন্তু এই কাহিনীর এমন কিছু পর্যায় আছে যা সহজে ব্যাখ্যা করা যায় না। এছাড়া এরমধ্যে আন্টার্কটিকার উল্লেখ একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। 

যখন ভ্লাদিমির স্কি জাহাজটি জেডা থেকে আন্টার্কটিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিল, ঠিক তখনই রাশিয়ান অর্থোডক্স নেতা পেত্রিয়ার্ক কিরিল নিজে আন্টার্কটিকার উদ্দেশ্যে একটি অভিযান করেছিলেন এবং প্রচুর মিডিয়া বা গণমাধ্যমকেও এখানে নিয়ে আসা হয়। অনেকে বলেন, অ্যান্টার্কটিকায় অপার্থিব আচার অনুষ্ঠান গুলি থেকে এবং জাহাজটি থেকে গণমাধ্যমকে দূরে রাখার ও ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এটি করা হয়েছিল। অনেকেই মনে করেন, আন্টার্কটিকা আসলে আটলান্টিস -- হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার বেঁচে থাকা অংশ যা হাজার হাজার বছর আগে প্রাচীন সভ্যতার বাসস্থান ছিল এবং এই সভ্যতাটি অপার্থিব এলিয়েন টেকনোলজির আঁতুড়ঘর ছিল এবং এখানেই অনুনাকির দেহ সংরক্ষিত করে রাখা আছে। পরিবেশগতভাবে ভয়ঙ্কর এবং দুর্গম অঞ্চল হওয়ার কারণে এই স্থানটি আমাদের গ্রহের গুপ্ত কার্যকলাপ গুলি করার পক্ষে আদর্শ স্থান।

আপনার কি মনে হয়?

Friday, 11 September 2020

মধ্যপ্রাচ্যের রহস্যময় শহর ও শয়তান --

*** প্রথমেই বলে রাখি আমার এই লেখাটি বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে সংগ্রহ করা,  সবকিছু সম্পূর্ণ সঠিক হবার দাবী রাখি না এবং দয়া করে পুরোটা না পড়ে ও বুঝে মূর্খের মতো মাথা গরম করবেন না। কোন সংশয় থাকলে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন এবং কোন ভুল থাকলে সেটি জানালে উপকৃত হব।

পেত্রা, দক্ষিণ জর্ডানে অবস্থিত একটি সুন্দর এবং ঐতিহাসিক ও আর্কিওলজিকাল শহর। বহু বছর ধরে গবেষণার পরেও শহরটি সম্পর্কে তেমন বেশি তথ্য পাওয়া যায় না।

এখানে একটি বিখ্যাত ঘটনা ঘটেছিল যখন ক্রুসেডের সময় নাইট টেম্পলাররা এই শহর দখল করে।  তারা বিশ্বাস করতো হারিয়ে যাওয়া 'আর্ক অফ দি কভেনান্ট' এখানে কোথাও লুকানো আছে; যদিও বর্তমানে পেত্রা রহস্যময় নাবাতিয়ানস নামক যাযাবর গোষ্ঠীর কাহিনীর সাথে যুক্ত।

আরবিয়ান পেনিনসুলার অপরপ্রান্তে এই রহস্যময় নাবাতিয়ান গোষ্ঠীটির উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। এরাই এই শহরটি এবং এর অসাধারণ স্থাপত্যগুলি তৈরি করেছিল - এক ধরনের বিশেষ আকৃতির প্লাটফর্ম এবং স্থাপত্য যা আশেপাশের কোন অঞ্চলে দেখা যায়নি। 


আর্কিওলজিস্ট সারা-পার্ক-আক প্রথম এই প্লাটফর্ম জাতীয় অস্বাভাবিক রকমের স্থাপত্যটি খুঁজে পান এবং এর জন্য তাকে হাই রেসোলিউশন স্যাটেলাইট ইমেজ এবং এরিয়ার ড্রোন ফটোগ্রাফির সাথে বিশেষ সার্ভে করতে হয়েছিল। কারণ, এটি নিচের থেকে অর্থাৎ ভূমির থেকে বোঝা যায় না।

তিনি বলেছিলেন, "এটি বিশাল আকৃতির একটি স্থাপত্য। এটি খুবই অসাধারণ একটি স্থান; আপনি সেখানে যেতে পারেন এবং সেখান থেকে শহরের কেন্দ্রস্থল টি দেখতে পারেন। আপনি সেখানে গেলে  বিভিন্ন আকৃতির বিভিন্ন ধরনের বিল্ডিংয়ের উপস্থিতি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন, যা খনন করে আবিষ্কার করা দরকার এবং এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, এটি কেবল মাত্র মূল শহরের এক কিলোমিটার দক্ষিণের অংশ। এটা এখন অব্দি পাওয়া সবচেয়ে বিশাল আকৃতির মনুমেন্টাল প্লাটফর্ম গুলোর মধ্যে একটি। এটি নাবাতিয়ান থেকে রোমান সময়কালীন পুরাতন হতে পারে এবং  আপনি যদি এই স্থাপত্যর উপরে যান তাহলে আপনি মূল শহরটি দেখতে পারবেন। কিন্তু মূল শহর থেকে এই স্থাপত্যটি দেখতে পাবেন না।"


এই স্থাপত্যটি সব রকম দিক থেকেই অসাধারণ রকমের এবং কেবলমাত্র এর আকৃতি বা গঠনের জন্য নয়, এটি তৈরি করা হয়েছিল অতিপ্রাকৃত বা দৈবিক কারণের জন্য। যদিও পার্ক  এর মতো আর্কিওলজিস্টরা এই স্থানে কোন অস্বাভাবিক উপাদান পাননি; তাদের মতে হয়তো আচার-অনুষ্ঠানের কারণে এই স্থানটি তৈরি করা হয়েছিল। 

থিওরিস্ট ক্রিস্টোফার এভারিট এবং 'এনিগমা চ্যানেল' নামক তার সংস্থা, তার আর্কিওলজিস্ট টিমের সাথে গবেষণা করে জানান, এই প্লাটফরমটি আসলে একটি আবরণ বা ঢাকনা হিসাবে বানানো হয়েছিল; যাতে এর ভিতরে থাকা দানবীয় শক্তিকে আটকে রাখতে পারে। তিনি এ বিষয়ে 'বুক অফ এনক্' এর কথা উল্লেখ করেন, যা প্রফেট ইদ্রিস এর দ্বারা রচিত। যাকে মুসলিমরা আদমের পর দ্বিতীয় প্রফেট হিসাবে বিশ্বাস করেন। 

এভারিট দাবি করেন, শয়তান এবং তার দানবীয় সেনাবাহিনীকে তলবিহিন কুয়া বা গর্তে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। তার এই দাবির স্বপক্ষে তিনি বলেন, এনখ এর অনেক স্থানেই নরক বা 'Hell' কে 'টার্টাস' হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে যার সমার্থক শব্দ - 'তলবিহীন কুয়া বা গর্ত' এবং বিশাল আকৃতির পাথরের প্লাটফর্মের বর্ণনা আছে যা গর্ত ঢাকা দিতে ব্যবহার করা হয়। এই বর্ণনাগুলি পেত্রার এই আবিস্কারের সাথে মিল খায়। 

"এমন একটি স্থান যেখানে শয়তানকে হাজার হাজার বছরের জন্য বন্দি করা হবে।" 

এভারিট উল্লেখ করেন, বুক অফ এনোক এ লেখা আছে - " angels ful off sin, were sons of God, who  went after strange flesh, were punished and imprisoned in chains, in darkness, until the time of the judgement of the Great day". - they were cast into a pit, and a giant stone was used to close the the abyss..."


প্রথমের দিকে 'এনিগমা' লেবাননের 'বালবেককে' এই গর্তের অবস্থান হিসেবে উল্লেখ করে কিন্তু জর্ডানের এই স্থানটি আবিষ্কারের পর তারা তাদের সকল মনঃসংযোগ পেত্রায় কেন্দ্রীভূত করেন। এই স্থানের অতিপ্রাকৃতিক গুরুত্বর প্রমাণ হিসাবে তারা দাবি করেন যে, নাবেতিন সভ্যতা প্রাচীন ইজিপশিয়ান এবং 'pre-islamic' সিরিয়ানদের মত ম্যাজিক এর ব্যবহার করত আত্মাকে ডেকে আনতে,  তাদের আচার-অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে  যাকে তারা অশুভ বা দুষ্ট বলে উল্লেখ করতো। যেমন - অনেক প্রি ইসলামিক সভ্যতায় নিয়মানুযায়ী পশু ও মানুষের হাইব্রিডকে আধ্যাত্বিক দেবতার প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা হত। এরকম একটি পশু যা নাবাতিয়ানদের বিশ্বাসে ছিল তা হল - ছাগল। এই প্রাণীটি ক্রিশ্চান এবং পেগান উভয় আইকনোগ্রফিতেই আছে এবং প্রায়শই একে সরাসরি শয়তানের সাথে যুক্ত করা হয়। ইসলামের এই সময়কে উল্লেখ করা হয় 'এজ অফ ইগনোরেন্স' হিসাবে। আরবিয়ান পেনিনসুলাতে মনোথিসম পুনরায় প্রবর্তন করার আগের একটি লম্বা অন্ধকার যুগ। 

এনিগমা অনুযায়ী এই প্রাচীন সভ্যতায় ঘোড়াকে সৌরমণ্ডলের দেবতাদের নিদর্শন হিসাবে দেখা হয় এবং উটকে দানবীয় হিসাবে। নাবাতিয়ানরা শিং যুক্ত প্রাণীদের চকের তৈরি মূর্তি বানিয়ে ছিল। যেমন - ছাগল, ভেড়া - যা শক্তি এবং সামর্থের নিদর্শন এবং এর থেকে একটি ধারণা উঠে আসে যে শয়তান এক ছাগলের মাথা যুক্ত প্রাণী হিসেবে। তাহলে শয়তানকে পেত্রার তলায় বন্দী রাখা হবে - এই থিওরীর সমর্থনে কি প্রমান থাকতে পারে? 
এভারিটের কাছে এর সঠিক উত্তর নেই তবে, হয়তো আমরা এই ব্যাপারে অনুমানমুলক কিছু বলতে পারি। ...


আরবিয়ার দক্ষিণ প্রান্তে ইউনাইটেড আরব এমিরেটস, ইয়েমেন এবং সৌদি আরবিয়ার মাঝামাঝি 'ইদেম' নামে একটি শহর আছে। শোনা যায়  হারিয়ে যাওয়া দানবদের এক উপজাতি এখানে একসময় বসবাস করত। নাবাতিয়ানদের মতই হয়তোএই অত্যন্ত উন্নত প্রজাতির প্রাণী একসময় এখানে রাজত্ব করত। অনেক ঐতিহাসিক' লেখায় তাদের উল্লেখ পাওয়া গেছে। যেমন- সিরিয়ায় 1970 সালের কাছাকাছি পাওয়া 'কিউনিফর্ম' বা 'পিপল অফ এডি'  থেকে শুরু করে হোলি কোরআনের বিভিন্ন ভার্স এ নাবাতিয়ান এবং ইদেম এর অস্তিত্ব আলাদা আলাদা সময়কালিন থাকলেও এটা হতে পারে যে আরবিয়ার একই স্থান থেকে তাদের উৎপত্তি। 

অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন যে, নাবাতিয়ানরা পেত্রাকে তৈরি করেছে সেই সকল দেবতার মতো সত্তাদের জন্য যাদের তারা উপাসনা করত অথবা সেই সকল দানবদের জন্য যাদের সাথে তারা বসবাস করত, কারণ এখানকার স্থাপত্য দরজা ও পথগুলি অত্যন্ত উঁচু এবং প্রশস্ত।

মনে করা হয়, তাদের এই জ্ঞান দিয়ে তারা সেই সকল অতি প্রাকৃতিক শক্তির সাথে যোগাযোগ করত যা আমাদের ধারণারও বাইরে এবং যে দানবদের পেত্রায় বন্দী করার চেষ্টা করা হচ্ছিল, হতে পারে তারা পৃথিবীতে থাকা দানবদের পূর্বপুরুষ - খ্রিষ্টান থিওলজিতে তাই মনে করা হয়। 

'ডেড সি স্ক্রল' অনুযায়ী, এর 'বুক অফ জায়েন্ট' এ উল্লেখ করা হয়েছে, শয়তানকে 'আজাজিল' নামে।  এটি 'এনখ' এর একটি অংশ। 'বুক অফ এনখ ' অনুযায়ী, সে বিদ্রোহী ফেরেশতাদের পৃথিবীর নারীদের সাথে মিলিত হতে দিয়েছিল এবং এরপর সেই মানবীরা এই সকল দানবদের জন্ম দেয়। 

ইসলামের কিছু পন্ডিত ব্যক্তি মনে করেন যে, আজাজিল এবং ইবলিশ উভয়ের অর্থই এক ; উভয়ই শয়তানের আরবিক নাম এবং সে এক ধরনের আল্ট্রা পাওয়ারফুল বা অত্যন্ত শক্তিশালী জিন যার Rank ও মর্যাদা ফেরেশতার মত। কোরআন অনুযায়ী, ইবলিশ মানুষকে সম্ভবত 'ডে অফ জাজমেন্ট' পর্যন্ত প্রলুব্ধ এবং দুর্নীতি পরায়ন করে যাবে। যদিও কোরআনের 'ইরেম এর জায়েন্ট' এবং বাইবেলের 'ফলেন এঞ্জেলস' বা 'বিদ্রোহী ফেরেশতাদের' মধ্যে থিওলজিকালী কোন লিংক করা হয়নি। তাহলে ইসলামিক, জিউস, ক্রিশ্চান অথবা আপোক্রিফা ধর্মগ্রন্থের কোন স্থানে এরকম কি কোন ধারনা আছে যে শয়তান এবং তার বিদ্রোহী ফেরেশতাদের সেনাবাহিনী কে পেত্রার নিচে কোথাও আটকে রাখা আছে? ইসলামিক পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে না বলা যায়। এদিকে মেইনস্ট্রিম ক্রিস্টিয়ান এবং ইহুদির দিক থেকে বিশেষ করে জর্ডনের কাছে এরকম কোন ঘটনা ঘটেছিল বলে উল্লেখ নেই। যদি আমরা ভুল হই তাহলে দয়াকরে কমেন্টে বলবেন।



এভারিট এর থিওরি যতটা রোমাঞ্চকর শোনায় সেরকম, অর্থাৎ একটি কারাগার যা পেত্রার তলায় দানবীয় সত্তাকে আটকে রাখে বা কখনো রেখেছিল, এর অস্তিত্ব সম্পর্কে সে রকম কিছু প্রমাণ পাওয়া যায় না। শয়তান সত্তিকারের কিন্তু সম্ভবত পেত্রার নিচে তার কারাগারটি সম্ভবত নয়। কারণ, ধর্মগ্রন্থ এবং বিজ্ঞান কোন অংশে এই থিওরির স্বপক্ষে কিছু পাওয়া যায়নি এবং এই এলাকার কোন অতিপ্রাকৃতিক বা আধোদৈবিক তাৎপর্য সম্পর্কে কোনো প্রমাণ নেই কিন্তু তবুও নাবাতিয়ানদের নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকে গেছে। 

পার্কারের মতে, এটা মনে রাখা খুবই জরুরি যে পেত্রার মত আর্কিওলজিক্যাল সাইট যা খুব গুরুত্বসহকারে পরীক্ষা করা হয়েছে, তবুও এত বছরের গবেষণার পর এর অনেক কিছু বাকি থেকে গেছে। পেত্রাকে বুঝতে এখনো অনেক বাকি এই শহরের 15 শতাংশ কেবলমাত্র পৌঁছানো গেছে এবং বেশিরভাগ অংশ অর্থাৎ বাকি 85 শতাংশ এখনো ভূগর্ভস্থ এবং পৌঁছানো যায়নি। 

আপনার কি মতামত ?

Sunday, 6 September 2020

মধ্যপ্রাচ্যের রহস্যময় প্রাচীন সমুদ্র দানব --

প্রাচীন এবং আধুনিক সাহিত্যের ইতিহাসের বিভিন্ন স্থানে সমুদ্রের দানবদের বর্ণনা পাওয়া গেছে ।  বর্তমানের কমিক বুকে 'একোয়া ম্যান' এবং 'এইচ পি লাভ ক্রাফট' এর মাছ এবং মানুষের মাঝামাঝি দেখতে এক প্রাণী যাকে 'ডিপ ওয়ান্' বলা হয়; এছাড়া আরবিয়ান নাইটের গল্পে দেখা যায়। 
এই গল্প গুলি কতটা সত্যিকারের হতে পারে?

বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীতে মিডিল ইস্ট এর সীমান্তে - ইরান, আজারবাইজান এবং রাশিয়ার মাঝামাঝি স্থানে ক্যাস্পিয়ান সি কে ঘিরে এই ধরনের প্রায় তিন প্রকার সমুদ্রের সাথে যুক্ত প্যারানরমাল কাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছে।  ঐতিহাসিক এই ঘটনাগুলির বৈজ্ঞানিক ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়নি। প্রথম অস্বাভাবিক বিষয়টি হলো ক্যাস্পিয়ান সি-এর ধারের বিভিন্ন শহরের অদৃশ্য হওয়া বা হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা; এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে 'খাজার খাগেনাতের' ঘটনা। এটি একটি শহর ছিল, যা এগারোশো শতকের দিকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিল; কিন্তু হঠাৎ করে কোনো চিহ্ন ছাড়াই অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ঘটনাটি এসেছিল এক প্রকার অবিনাশী হাঙ্গর বা সার্কের রূপে - যার মানুষের রক্তের প্রতি ভীষণ লোভ ছিল এবং তৃতীয়টি এসেছিল 90 দশকের প্রথম দিকে, এই সময় ইউ এফ ও এর দেখতে পাওয়ার একাধিক ঘটনার বিবরণ পাওয়া গিয়েছিল। 



শেষ রহস্যটি এসেছিল এক প্রকার রহস্যময় প্রজাতির থেকে যাকে 'রুনান শাহ' বলে জানা যায়। 
এক ধরনের মনুষ্য রুপি সামুদ্রিক প্রাণী যা প্রচুর নাবিক এবং সমুদ্রের তৈলখনিতে কাজ করা শ্রমিকদের দেখা দিয়েছে বলে জানা যায়।  প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এরা নিজেদের আশেপাশের জল গুলি স্বচ্ছ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এবং এদের সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর মাছ দলবেঁধে ঘোরে। এই রহস্যজনক বস্তুটিকে জলে এবং স্থলে উভয় জায়গাতেই দেখতে পাওয়ার ঘটনা শোনা যায়।

2005 সালের মার্চ মাসে  'জিন্দেগি' নামক ইরানিয়ান সংবাদপত্রে এদের প্রত্যক্ষদর্শীর একটি বিবরণ প্রকাশিত হয় প্রত্যক্ষদর্শী বাকু নামক একটি জাহাজের কর্মী ছিল, যেটি ক্যাস্পিয়ান সিতে যাতায়াত করতো। একটি সাক্ষাৎকারের জাহাজের ক্যাপ্টেন জো ফার্গুসন দাবি করেন, এই প্রাণীটি বেশ কিছু সময় ধরে তাদের জাহাজের সাথে সাথে সাঁতরে যাচ্ছিল। প্রথমদিকে তারা ভেবেছিল এটা হয়তো কোন বিশালাকৃতির মাছ হবে; কিন্তু পরে তারা লক্ষ্য করেন, এর পাখনাগুলো অন্য ধরনের, দেহের উপরিভাগে দুটি হাতও দেখা যাচ্ছিল। এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হওয়ার পরেই বিভিন্ন স্থান থেকে এই প্রাণী সম্পর্কে আরো বিভিন্ন বিস্তারিত বর্ণনা উঠে আসতে থাকলো। এগুলি সেই সকল প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে যারা অনেককাল ধরে কাস্পিয়ান সাগরের কর্মরত ছিলেন এবং বেশিরভাগ বর্ণনাগুলো একে অপরের সাথে মিলে যাচ্ছিল। যার ফলে এটি কোন কল্পিত বস্তু বলে মনে করা সম্ভব হচ্ছে না। সকল প্রত্যক্ষদর্শীরা এই মানুষরূপী প্রাণীটির বর্ণনা দিয়েছিল - এটি 5 থেকে সাড়ে পাঁচ ফুটের কাছাকাছি লম্বা এবং পেশীবহুল গঠন এর আংগুল এবং পা আছে এবং এর মাথায় কালো এবং সবুজ রঙের কেশ দেখা যায়। এদের নাকের আকৃতি অনেকটা ডলফিন এর চঞ্চুর মত। এর মুখ খুব বড় আকৃতির  এবং চোয়ালযুক্ত নয়। দুর্ভাগ্যবশত,  অনলাইনে এর কোন ফটো বা ভিডিও পাওয়া যায়নি এবং যে ফটো এবং ভিডিও গুলো দাবি করে এগুলি কাস্পিয়ান সি এর 'মারমেড' বা 'মৎস্য মানবের' ছবি সেগুলি কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা প্রশ্ন রেখে যায়।



এই প্রাণীগুলিকে প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বহুবার দেখা গেছে এবং তাই জন্য ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে বেশি তথ্য বা বিবরণসমৃদ্ধ রহস্যময় প্রাণীদের মধ্যে এরা উল্লেখ্য। 2004 সালে আসতারা এবং লের্নকুরান শহরের মাঝামাঝি গ্রামে বসবাসকারী এক মৎস্যজীবী এই রুনান শাহকে দেখার কথা জানায়। রাশিয়ান প্যারানরমাল এক্সপার্ট পল স্টোনহিল যিনি হিস্ট্রি চ্যানেলের 'এনসিয়েন্ট এলিয়েন্স' সিরিজের উল্লেখযোগ্য কন্ট্রিবিউটর ছিলেন, তিনি 2002 সালে দাবি করেন, এই বছরের জুলাই মাসে একজন আজারবাইজানের ব্যবসায়ী এবং তার গ্রিক অতিথিরা সমুদ্র ভ্রমণকালে দেখতে পান একটি ছোট নৌকায় এই দুই মনুষ্যরূপি সামুদ্রিক প্রাণী অন্য একটি সমুদ্রের প্রাণীকে কিছু খাওয়াচ্ছিল; কিন্তু তাদের একটু কাছে যাওয়ার পরেই তারা লাফিয়ে সমুদ্রে ডুবে যায়। ব্যবসায়ীটি এই সামুদ্রিক প্রাণী গুলোকে 'সোয়াদেল' নামে উল্লেখ করেন যার অর্থ - 'পিপল অফ দ্যা সী' বা 'সমুদ্রের বাসিন্দা' .
এছাড়াও স্টোনহিলের মতে, রাশিয়ার কাছের উত্তর কাস্পিয়ান সিএ কর্মরত তৈলখনির কর্মীদের কাছেও এই প্রাণীগুলি সুপরিচিত। 1980 সাল থেকে এই অঞ্চলে ড্রেজিংয়ের কাজ হয়ে চলেছে। এখানকার বহু কর্মীরা মনুষ্য রুপি সামুদ্রিক প্রাণীদের প্রত্যক্ষ বিবরণ দিয়েছেন। বেশিরভাগ মতেই এই প্রাণীগুলি ভীতু প্রকৃতির হয়ে থাকে; যদিও বেশ কয়েকবার এখানে কাজ করতে আসা মহিলাদের গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে। এখানকার কর্মীরা এর জন্য এই সামুদ্রিক প্রাণীকে দায়ী করেছিল এবং একটি প্রত্যক্ষ বিবরণে জানা গিয়েছে, এক দম্পতি স্থলভাগের এই প্রাণীগুলির দ্বারা শারীরিকভাবে আক্রমণের শিকার হয়েছিল।



কয়েক দশক আগে গেলেও কাছাকাছি কাবিলিয়া এবং রাশিয়াতে এই রুনান শাহএর বিবরণ পাওয়া যায়। 1928 সালে 'লেক অফ ভেদলোজেরও' এর স্থানীয় বাসিন্দারা পরপর বেশ কিছু সময় ধরে এই প্রাণীদের দেখতে পাওয়ার ঘটনা দাবী করতে থাকেন এবং পেত্রজাভোডসক ইউনিভার্সিটির এক গবেষক দল এখানে ঘটনাটির তদন্ত করতে আসেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তাদের গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল গোপন করে রাখা হয় এবং এই গবেষক দলের সদস্যদের বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়।  1930 সালের সময়কালীন সোভিয়েত লেবার ক্যাম্পে তাদের মৃত্যু ঘটে।

লিখিতভাবে সবচেয়ে প্রথম দিকের বর্ণনা গুলির মধ্যে একটি পাওয়া যায় কাফর্নিয়া নামক এক আরবের ঐতিহাসিকের লেখায়; আনুমানিক প্রায় 894 খ্রিস্টাব্দে সমকালীন তিনি 'আজা এল মালকোকত' নামক তার গ্রন্থে এক প্রকার মৎস্য মানবের বিস্তারিত বিবরণ দেন, যা পরবর্তীকালে 1871 সালে 'চিকাগো ফিল্ড নিউজলেটারে' প্রকাশিত হয়। তার বর্ণনা অনুযায়ী, কাস্পিয়ান সমুদ্রে একটি বড় মাছ ধরা পরে এবং প্রিন্স সেলিমের উপস্থিতিতে একে উন্মুক্ত করা হয় এবং এর ভেতরে একটি মৎস্য মানব পাওয়া যায়। "এই প্রাণীটি এক ধরনের পাজামা জাতীয় পোশাক পড়েছিল, যা চামড়ার তৈরি ছিল এবং তার হাঁটু পর্যন্ত লম্বা ছিল. সে তার হাতটি কখনো মুখের উপর রাখছিল আবার কখনো তার চুলের ওপর এবং খুব ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলছিল; কিন্তু বেশিক্ষণ জীবিত থাকতে পারেনি।"



'মিস্টেরিয়াস ইউনিভার্স' ওয়েবসাইট অনুযায়ী, 1998 সালে স্যামদ জাফারভ নামে এক ফিশ পোচার এক হাঙ্গর এর মত রহস্যময় প্রাণীর বর্ণনা দেয়, যা তাঁর এবং তাঁর সঙ্গীদের আতঙ্কিত করে তুলেছিল। কাস্পিয়ান সাগরের পূর্ব দিকে ফোর্ট চিভস্যাঙ্কর কাছে তার বন্ধুকে নিয়ে স্পিয়ার ফিশিং এ বেরিয়েছিযেন। এই সময় তারা টর্পেডোর মত বিশালাকৃতির মাছ দেখতে পেয়েছিল। প্রথমে তারা ভেবেছিল এটি কোন হাঙ্গর হতে পারে এবং তার বন্ধুটি সেই প্রাণীটির মাথায় স্পিয়ার বা ভালা ছুড়ে মেরেছিল কিন্তু সে ব্যর্থ হয়েছিল এবং এই প্রাণীটি তার সেই ভয়ঙ্কর চোয়াল দিয়ে তার বন্ধুটিকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছিল। এই সময় সে কোনোক্রমে নৌকাটি সমুদ্রের ধারে নিয়ে আসতে সক্ষম হয় এবং অন্যান্য কর্মীরা তাকে টেনে বাইরে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।  সঙ্গে সঙ্গে তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে ব্লাড ট্রান্সফিউশন দেওয়া হয় এবং তার একটি পা হাটু থেকে কেটে বাদ দিতে হয়। যখন তাকে প্রশ্ন করা হয়, তাকে কে আক্রমণ করেছিল; তার মতে এটি কোনোভাবেই হাঙ্গর হতে পারেনা। এটা ঠিক যে, কাস্পিয়ান সিএ কোথাও হাঙ্গর থাকার তথ্য পাওয়া যায়নি।



এছাড়াও 90 দশকের প্রথম দিকে ইউ এফ ও দর্শনের বিভিন্ন ঘটনা এই অঞ্চলটিকে একটি রহস্যময় স্থান করে তুলেছে।  2017 সালে তুর্কির ভ্যান ইউনিভার্সিটি ভ্যান লেকের তলায় 3000 বছরের পুরনো আর্মেনিয়াম ক্যাসেলের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায়। এর ফলে এই অঞ্চলে একটি সরকারি তদন্ত শুরু হয়। তাদের মতে, আজারবাইজান এবং বাকুর কাছাকাছি ক্যাস্পিয়ান সি এর গভীরে এরকম বহু রহস্যময় শিলালিপি সমৃদ্ধ পাথর খুঁজে পাওয়া গেছে। এইগুলি একটি আইসল্যান্ড এবং দুর্গের আশেপাশে পাওয়া গেছে।  1306 সালে এক ভূমিকম্পের কারণে গঠিত সুনামিতে এগুলির সমুদ্রে তলিয়ে যায়। গবেষক এবং ভাষাতত্ত্ববিদদের মতে এই লিপিগুলি পার্শিয়ান এবং আরবিক এ লেখা, কিন্তু দুর্বোধ্য। যতটা উদ্ধার করা হয়েছে, শতানীক শক্তি এবং প্রাকৃতিক ধ্বংসাত্মক শক্তিগুলি থেকে রক্ষা করার জন্য এই স্থানটি কোন প্রাচীন প্রযুক্তিতে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল।
কিছু কিছু শিলায় মানুষের, পশু পাখি,র দানবের এবং এলভদের চিত্র পাওয়া যায়। এগুলি এই অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক উভয় প্রকার সত্তার বিবরণ দেয়। মনে হয়, প্রাচীনকালের এই অঞ্চলে বসবাসকারী বাসিন্দারা নিয়মিত এই রহস্যময় সামুদ্রিক প্রাণী গুলির সম্মুখীন হতো এবং তাদের থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার জন্য যাদুবিদ্যার সাহায্য নিত। এই আবিষ্কারগুলি এবং এই অঞ্চলের রহস্যময় প্রাণীদের ধর্ষণের ঘটনা একটি থিওরি এনে দেয় যা বর্ণনা করে, হয়তো এখানে অর্থাৎ কাস্পিয়ান সাগরের তলায় এম্ফিবিয়ানদের একটি সম্পূর্ণ সভ্যতার অবস্থান ছিল বা আছে।



অনেকেই মনে করে এই অস্বাভাবিক ঘটনাগুলি সুপারন্যাচারাল এবং ইকোলজিক্যাল হুমকি বা সতর্কতা। সাম্প্রতিক কিছু বছর ধরে ক্যাস্পিয়ান সাগরে তৈল উৎপাদন এবং সমুদ্রের তলার আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তার কারণে ফ্লোরা এবং ফনার রিপ্রোডাকশন ভয়ানক ভাবে কমে গিয়েছে। কিছু স্থানীয় আজহারী মাঝির মতে এই অঞ্চলে তৈল উৎপাদনে নিরন্তর ড্রিলিং এর ফলে একটি শক্তিকে জাগিয়ে তুলেছে যা মানুষের ধারণারও বাইরে এবং এই শক্তিগুলি সমুদ্রকে তার ইকোলজিক্যাল ভারসাম্য রক্ষা করতে ব্যবস্থা নেবে.....

আপনার কি মনে হয়?