Pages

Friday, 11 September 2020

মধ্যপ্রাচ্যের রহস্যময় শহর ও শয়তান --

*** প্রথমেই বলে রাখি আমার এই লেখাটি বিভিন্ন তথ্য সূত্র থেকে সংগ্রহ করা,  সবকিছু সম্পূর্ণ সঠিক হবার দাবী রাখি না এবং দয়া করে পুরোটা না পড়ে ও বুঝে মূর্খের মতো মাথা গরম করবেন না। কোন সংশয় থাকলে ইন্টারনেটে সার্চ করতে পারেন এবং কোন ভুল থাকলে সেটি জানালে উপকৃত হব।

পেত্রা, দক্ষিণ জর্ডানে অবস্থিত একটি সুন্দর এবং ঐতিহাসিক ও আর্কিওলজিকাল শহর। বহু বছর ধরে গবেষণার পরেও শহরটি সম্পর্কে তেমন বেশি তথ্য পাওয়া যায় না।

এখানে একটি বিখ্যাত ঘটনা ঘটেছিল যখন ক্রুসেডের সময় নাইট টেম্পলাররা এই শহর দখল করে।  তারা বিশ্বাস করতো হারিয়ে যাওয়া 'আর্ক অফ দি কভেনান্ট' এখানে কোথাও লুকানো আছে; যদিও বর্তমানে পেত্রা রহস্যময় নাবাতিয়ানস নামক যাযাবর গোষ্ঠীর কাহিনীর সাথে যুক্ত।

আরবিয়ান পেনিনসুলার অপরপ্রান্তে এই রহস্যময় নাবাতিয়ান গোষ্ঠীটির উৎপত্তি বলে মনে করা হয়। এরাই এই শহরটি এবং এর অসাধারণ স্থাপত্যগুলি তৈরি করেছিল - এক ধরনের বিশেষ আকৃতির প্লাটফর্ম এবং স্থাপত্য যা আশেপাশের কোন অঞ্চলে দেখা যায়নি। 


আর্কিওলজিস্ট সারা-পার্ক-আক প্রথম এই প্লাটফর্ম জাতীয় অস্বাভাবিক রকমের স্থাপত্যটি খুঁজে পান এবং এর জন্য তাকে হাই রেসোলিউশন স্যাটেলাইট ইমেজ এবং এরিয়ার ড্রোন ফটোগ্রাফির সাথে বিশেষ সার্ভে করতে হয়েছিল। কারণ, এটি নিচের থেকে অর্থাৎ ভূমির থেকে বোঝা যায় না।

তিনি বলেছিলেন, "এটি বিশাল আকৃতির একটি স্থাপত্য। এটি খুবই অসাধারণ একটি স্থান; আপনি সেখানে যেতে পারেন এবং সেখান থেকে শহরের কেন্দ্রস্থল টি দেখতে পারেন। আপনি সেখানে গেলে  বিভিন্ন আকৃতির বিভিন্ন ধরনের বিল্ডিংয়ের উপস্থিতি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন, যা খনন করে আবিষ্কার করা দরকার এবং এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, এটি কেবল মাত্র মূল শহরের এক কিলোমিটার দক্ষিণের অংশ। এটা এখন অব্দি পাওয়া সবচেয়ে বিশাল আকৃতির মনুমেন্টাল প্লাটফর্ম গুলোর মধ্যে একটি। এটি নাবাতিয়ান থেকে রোমান সময়কালীন পুরাতন হতে পারে এবং  আপনি যদি এই স্থাপত্যর উপরে যান তাহলে আপনি মূল শহরটি দেখতে পারবেন। কিন্তু মূল শহর থেকে এই স্থাপত্যটি দেখতে পাবেন না।"


এই স্থাপত্যটি সব রকম দিক থেকেই অসাধারণ রকমের এবং কেবলমাত্র এর আকৃতি বা গঠনের জন্য নয়, এটি তৈরি করা হয়েছিল অতিপ্রাকৃত বা দৈবিক কারণের জন্য। যদিও পার্ক  এর মতো আর্কিওলজিস্টরা এই স্থানে কোন অস্বাভাবিক উপাদান পাননি; তাদের মতে হয়তো আচার-অনুষ্ঠানের কারণে এই স্থানটি তৈরি করা হয়েছিল। 

থিওরিস্ট ক্রিস্টোফার এভারিট এবং 'এনিগমা চ্যানেল' নামক তার সংস্থা, তার আর্কিওলজিস্ট টিমের সাথে গবেষণা করে জানান, এই প্লাটফরমটি আসলে একটি আবরণ বা ঢাকনা হিসাবে বানানো হয়েছিল; যাতে এর ভিতরে থাকা দানবীয় শক্তিকে আটকে রাখতে পারে। তিনি এ বিষয়ে 'বুক অফ এনক্' এর কথা উল্লেখ করেন, যা প্রফেট ইদ্রিস এর দ্বারা রচিত। যাকে মুসলিমরা আদমের পর দ্বিতীয় প্রফেট হিসাবে বিশ্বাস করেন। 

এভারিট দাবি করেন, শয়তান এবং তার দানবীয় সেনাবাহিনীকে তলবিহিন কুয়া বা গর্তে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। তার এই দাবির স্বপক্ষে তিনি বলেন, এনখ এর অনেক স্থানেই নরক বা 'Hell' কে 'টার্টাস' হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে যার সমার্থক শব্দ - 'তলবিহীন কুয়া বা গর্ত' এবং বিশাল আকৃতির পাথরের প্লাটফর্মের বর্ণনা আছে যা গর্ত ঢাকা দিতে ব্যবহার করা হয়। এই বর্ণনাগুলি পেত্রার এই আবিস্কারের সাথে মিল খায়। 

"এমন একটি স্থান যেখানে শয়তানকে হাজার হাজার বছরের জন্য বন্দি করা হবে।" 

এভারিট উল্লেখ করেন, বুক অফ এনোক এ লেখা আছে - " angels ful off sin, were sons of God, who  went after strange flesh, were punished and imprisoned in chains, in darkness, until the time of the judgement of the Great day". - they were cast into a pit, and a giant stone was used to close the the abyss..."


প্রথমের দিকে 'এনিগমা' লেবাননের 'বালবেককে' এই গর্তের অবস্থান হিসেবে উল্লেখ করে কিন্তু জর্ডানের এই স্থানটি আবিষ্কারের পর তারা তাদের সকল মনঃসংযোগ পেত্রায় কেন্দ্রীভূত করেন। এই স্থানের অতিপ্রাকৃতিক গুরুত্বর প্রমাণ হিসাবে তারা দাবি করেন যে, নাবেতিন সভ্যতা প্রাচীন ইজিপশিয়ান এবং 'pre-islamic' সিরিয়ানদের মত ম্যাজিক এর ব্যবহার করত আত্মাকে ডেকে আনতে,  তাদের আচার-অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে  যাকে তারা অশুভ বা দুষ্ট বলে উল্লেখ করতো। যেমন - অনেক প্রি ইসলামিক সভ্যতায় নিয়মানুযায়ী পশু ও মানুষের হাইব্রিডকে আধ্যাত্বিক দেবতার প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করা হত। এরকম একটি পশু যা নাবাতিয়ানদের বিশ্বাসে ছিল তা হল - ছাগল। এই প্রাণীটি ক্রিশ্চান এবং পেগান উভয় আইকনোগ্রফিতেই আছে এবং প্রায়শই একে সরাসরি শয়তানের সাথে যুক্ত করা হয়। ইসলামের এই সময়কে উল্লেখ করা হয় 'এজ অফ ইগনোরেন্স' হিসাবে। আরবিয়ান পেনিনসুলাতে মনোথিসম পুনরায় প্রবর্তন করার আগের একটি লম্বা অন্ধকার যুগ। 

এনিগমা অনুযায়ী এই প্রাচীন সভ্যতায় ঘোড়াকে সৌরমণ্ডলের দেবতাদের নিদর্শন হিসাবে দেখা হয় এবং উটকে দানবীয় হিসাবে। নাবাতিয়ানরা শিং যুক্ত প্রাণীদের চকের তৈরি মূর্তি বানিয়ে ছিল। যেমন - ছাগল, ভেড়া - যা শক্তি এবং সামর্থের নিদর্শন এবং এর থেকে একটি ধারণা উঠে আসে যে শয়তান এক ছাগলের মাথা যুক্ত প্রাণী হিসেবে। তাহলে শয়তানকে পেত্রার তলায় বন্দী রাখা হবে - এই থিওরীর সমর্থনে কি প্রমান থাকতে পারে? 
এভারিটের কাছে এর সঠিক উত্তর নেই তবে, হয়তো আমরা এই ব্যাপারে অনুমানমুলক কিছু বলতে পারি। ...


আরবিয়ার দক্ষিণ প্রান্তে ইউনাইটেড আরব এমিরেটস, ইয়েমেন এবং সৌদি আরবিয়ার মাঝামাঝি 'ইদেম' নামে একটি শহর আছে। শোনা যায়  হারিয়ে যাওয়া দানবদের এক উপজাতি এখানে একসময় বসবাস করত। নাবাতিয়ানদের মতই হয়তোএই অত্যন্ত উন্নত প্রজাতির প্রাণী একসময় এখানে রাজত্ব করত। অনেক ঐতিহাসিক' লেখায় তাদের উল্লেখ পাওয়া গেছে। যেমন- সিরিয়ায় 1970 সালের কাছাকাছি পাওয়া 'কিউনিফর্ম' বা 'পিপল অফ এডি'  থেকে শুরু করে হোলি কোরআনের বিভিন্ন ভার্স এ নাবাতিয়ান এবং ইদেম এর অস্তিত্ব আলাদা আলাদা সময়কালিন থাকলেও এটা হতে পারে যে আরবিয়ার একই স্থান থেকে তাদের উৎপত্তি। 

অনেক মানুষ বিশ্বাস করেন যে, নাবাতিয়ানরা পেত্রাকে তৈরি করেছে সেই সকল দেবতার মতো সত্তাদের জন্য যাদের তারা উপাসনা করত অথবা সেই সকল দানবদের জন্য যাদের সাথে তারা বসবাস করত, কারণ এখানকার স্থাপত্য দরজা ও পথগুলি অত্যন্ত উঁচু এবং প্রশস্ত।

মনে করা হয়, তাদের এই জ্ঞান দিয়ে তারা সেই সকল অতি প্রাকৃতিক শক্তির সাথে যোগাযোগ করত যা আমাদের ধারণারও বাইরে এবং যে দানবদের পেত্রায় বন্দী করার চেষ্টা করা হচ্ছিল, হতে পারে তারা পৃথিবীতে থাকা দানবদের পূর্বপুরুষ - খ্রিষ্টান থিওলজিতে তাই মনে করা হয়। 

'ডেড সি স্ক্রল' অনুযায়ী, এর 'বুক অফ জায়েন্ট' এ উল্লেখ করা হয়েছে, শয়তানকে 'আজাজিল' নামে।  এটি 'এনখ' এর একটি অংশ। 'বুক অফ এনখ ' অনুযায়ী, সে বিদ্রোহী ফেরেশতাদের পৃথিবীর নারীদের সাথে মিলিত হতে দিয়েছিল এবং এরপর সেই মানবীরা এই সকল দানবদের জন্ম দেয়। 

ইসলামের কিছু পন্ডিত ব্যক্তি মনে করেন যে, আজাজিল এবং ইবলিশ উভয়ের অর্থই এক ; উভয়ই শয়তানের আরবিক নাম এবং সে এক ধরনের আল্ট্রা পাওয়ারফুল বা অত্যন্ত শক্তিশালী জিন যার Rank ও মর্যাদা ফেরেশতার মত। কোরআন অনুযায়ী, ইবলিশ মানুষকে সম্ভবত 'ডে অফ জাজমেন্ট' পর্যন্ত প্রলুব্ধ এবং দুর্নীতি পরায়ন করে যাবে। যদিও কোরআনের 'ইরেম এর জায়েন্ট' এবং বাইবেলের 'ফলেন এঞ্জেলস' বা 'বিদ্রোহী ফেরেশতাদের' মধ্যে থিওলজিকালী কোন লিংক করা হয়নি। তাহলে ইসলামিক, জিউস, ক্রিশ্চান অথবা আপোক্রিফা ধর্মগ্রন্থের কোন স্থানে এরকম কি কোন ধারনা আছে যে শয়তান এবং তার বিদ্রোহী ফেরেশতাদের সেনাবাহিনী কে পেত্রার নিচে কোথাও আটকে রাখা আছে? ইসলামিক পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে না বলা যায়। এদিকে মেইনস্ট্রিম ক্রিস্টিয়ান এবং ইহুদির দিক থেকে বিশেষ করে জর্ডনের কাছে এরকম কোন ঘটনা ঘটেছিল বলে উল্লেখ নেই। যদি আমরা ভুল হই তাহলে দয়াকরে কমেন্টে বলবেন।



এভারিট এর থিওরি যতটা রোমাঞ্চকর শোনায় সেরকম, অর্থাৎ একটি কারাগার যা পেত্রার তলায় দানবীয় সত্তাকে আটকে রাখে বা কখনো রেখেছিল, এর অস্তিত্ব সম্পর্কে সে রকম কিছু প্রমাণ পাওয়া যায় না। শয়তান সত্তিকারের কিন্তু সম্ভবত পেত্রার নিচে তার কারাগারটি সম্ভবত নয়। কারণ, ধর্মগ্রন্থ এবং বিজ্ঞান কোন অংশে এই থিওরির স্বপক্ষে কিছু পাওয়া যায়নি এবং এই এলাকার কোন অতিপ্রাকৃতিক বা আধোদৈবিক তাৎপর্য সম্পর্কে কোনো প্রমাণ নেই কিন্তু তবুও নাবাতিয়ানদের নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকে গেছে। 

পার্কারের মতে, এটা মনে রাখা খুবই জরুরি যে পেত্রার মত আর্কিওলজিক্যাল সাইট যা খুব গুরুত্বসহকারে পরীক্ষা করা হয়েছে, তবুও এত বছরের গবেষণার পর এর অনেক কিছু বাকি থেকে গেছে। পেত্রাকে বুঝতে এখনো অনেক বাকি এই শহরের 15 শতাংশ কেবলমাত্র পৌঁছানো গেছে এবং বেশিরভাগ অংশ অর্থাৎ বাকি 85 শতাংশ এখনো ভূগর্ভস্থ এবং পৌঁছানো যায়নি। 

আপনার কি মতামত ?

No comments:

Post a Comment