Pages

Wednesday, 5 October 2022

ইন্ডিয়ান আর্মি এবং ইয়েতি রহস্য

১৯ এপ্রিল ২০১৯ ,সম্প্রতি কালে ইয়েতির পায়ের ছাপ পাবার ঘটনা গুলির মধ্যে যেটি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় করে দিয়েছিল, প্রায় ছয় মিলিয়ন ফলোয়ার সমৃদ্ধ ভারতীয় সেনাবাহিনীর টুইটার একাউন্টে প্রকাশিত করা হয়েছিল। এই খানে তারা দাবি করেছিলেন যে ফটোগ্রাফ গুলি ইন্ডিয়ান আর্মি মাউন্টেনিয়ারিং এক্সপিডিশনের সময় তোলা হয়েছিল এবং এই পদচিহ্নগুলি বিশালাকৃতি প্রায় ৩২*১৫ ইঞ্চির ছিল।




পৃথিবীর পঞ্চম উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট মাকালুর বেসে অবস্থিত মাকালু বেসক্যাম্প, যা পূর্ব নেপালের দিকে প্রায় ৪৮৭০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। হিমালয়ের এই অঞ্চলটি ১৯৫০ সাল পর্যন্ত বাইরের দুনিয়ার কাছে অজানা ছিল যতদিন না ব্রিটিশ অভিযাত্রী এরিক সিম্পটন প্রথম এখানে আরোহন করেন। তারপরেও কিছু হাতে গোনা ট্রেকারের দল ছাড়া এই অঞ্চলে তেমন কেউ যেত না সুতরাং স্থানটি ইয়েতিদের পক্ষে একটি আদর্শ স্থান হতে পারে।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি ১৯৫১ সালে এরিক সিম্পটন যখন একটি এভারেস্টের এক্সপিডিশন করছিলেন এবং সামিট অব্দি যাওয়ার রুটগুলি নিয়ে সার্ভে করছিলেন তখন তিনি প্রথম এখানে ইয়েতির পদচিহ্নের ফটো তোলেন।



মেনলাং বেসিনে প্রায় ১৯ হাজার ফিটে তারা এক দ্বিপদ প্রাণীর পদচিহ্ন দেখতে পান, যেগুলি ১৩*৮ ইঞ্চি আয়তনের ছিল এবং যেটি প্রায় এক মাইল দূরে গ্লেসিয়ারের দিকে চলে গিয়েছিল। সিম্পটনের সঙ্গী টম বারদিলন ফটো গুলির মধ্যে একটিতে নোট করেছিলেন, "আমি অত্যন্ত নিশ্চিত যে হিমালয় বসবাসরত পরিচিত কোন প্রাণী এত বিশালাকৃতির হতে পারে না"।



ঠিক সেরকমই হিমালয়ের পাওয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিগুলোতে ডান দিকে বা বাদীকে অন্য কোন চিহ্ন না থাকায় এগুলিকে দ্বিপদ প্রাণীর মতোই মনে হচ্ছে; ঠিক যেন ইয়েতি বরফে আচ্ছাদিত প্রান্তরটি অতিক্রম করে যাচ্ছিল শীতকালীন খাদ্য সংগ্রহের জন্য। পদচিহ্নগুলো খুব বিশালাকৃতি হলেও বরফে এগুলি খুব গভীরে গিয়েছিল যা চিহ্নিত করে এটি খুব বিশাল আকৃতির কোন দ্বিপদ প্রাণীর যা পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তরে পরিচিত না। যখনই ইয়েতি প্রসঙ্গ আসে অনেকেরই আঙ্গুল হিমালয়ান বাদামি ভাল্লুকের দিকে অবশ্যই গিয়ে থাকে এবং এই সময়েও সেটির পুনরাবৃত্তি হয়েছিল কিন্তু আমাদেরকে এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে ভালুকরা দ্বিপদ না। তারা সাধারণত এই তুষারাবৃত পর্বত প্রান্তরে চার পায়ের সাহায্যেই চলাচল করতে পারে। কেবলমাত্র আক্রমণ অথবা আত্মরক্ষা করার সময়ে নিজের দু পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অপরদিকে রেকর্ড করা সবকটি পদচিহ্নই দ্বিপদ প্রাণীর ছিল। এমন কোন তুষার ভাল্লুক হবে যার পদচিহ্ন ৩২ ইঞ্চি লম্বা হবে?


সবচেয়ে বিশালাকৃতি বাদামি ভাল্লুক অথবা কৃষ্ণাঙ্গ ভাল্লুক হল কোডিয়াক ভাল্লুক যাদেরকে দক্ষিণ পশ্চিম আলাস্কায় দেখতে পাওয়া যায়। এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বিশালাকৃতি নথিভূক্ত কোডিয়াক ভাল্লুকের ওজন ৭৫১ কেজি ছিল এবং এর পায়ের দৈর্ঘ্য ৪৬ সেন্টিমিটার অর্থাৎ ১৮ ইঞ্চি ছিল; যেটি মাকালুতে পাওয়া ৩২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের অর্ধেক। আমাদের কাছে এটা মানা ছাড়া আর কোন উপায় নেই যে মনুষাকৃতির মাকালুতে পাওয়া এই পদচিহ্নগুলি মানুষের জানা কোন প্রাণীর না; যে ক্ষেত্রে একমাত্র একটি শব্দ মাথায় আসে কিংবদন্তি নিঃশব্দসঞ্চারী অদ্বিতীয় দ্বিপদ দানব 'ইয়েতি' যা হিমালয়ের অনাবৃষ্টিত দুর্গম গভীর স্থানে ঘুরে বেড়ায় এবং যার গল্প স্থানীয় লোককাহিনীতে এবং শেরপা সম্প্রদায়গুলির মধ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শেরপাদের কাছে এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক মতামত বা যুক্তি গুলি কোনরকম চিন্তার বিষয় না; এটি তাদের লোককাহিনীর একটি স্থায়ী অংশ এবং এই উঁচু পার্বত্য প্রান্তরে যেখানে ইয়াক পালন করে, আলু চাষ করে এবং এই তুষারবৃত পর্বতগুলি আরোহন করতে সাহায্য করে তাদের জীবিকা চলে- তার একটি রোজকার জীবনের অংশ। তারা হাতের তালুর মত এই অঞ্চলগুলিকে চেনে; এমনকি বলা যায় একমাত্র তারাই এই অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ।


শেরপদের মধ্যে অসংখ্য ইয়েতি দেখার এবং তার পদচিহ্নের কাহিনী শোনা যায়- অনেকে আবার একপ্রকার শিস দেওয়ার বা তীক্ষ্ণ শব্দ শুনেছে তাদের যাত্রা দরুন - যা মনে করা হয় ইয়েতির শব্দ; এছাড়া অনেকে তাদের দেহের তীব্র গন্ধ পেয়েছে। সাধারণত তারা ইয়েতির বর্ণনা দেয়- একটি বড় মাথা যুক্ত বানর প্রজাতির প্রাণী হিসাবে, যার লম্বা হাত এবং মানুষের মতো মুখ, বোঁচা নাক এবং লাল ও কালো লোম দিয়ে দেহ আচ্ছাদিত। সাধারণত এটি দুই পায়ে হেঁটে হেঁটে চলে কিন্তু কখনো কখনো পার্বত্য ঢাল দিয়ে দ্রুত গতিতে চলার জন্য একে হাত ও পা দুটি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।


শেরপাদের বিশ্বাস ইয়তিকে সহজে দেখতে পাওয়া যায় না তার প্রাথমিক একটি কারণ হচ্ছে এটি নিশাচর প্রাণী। এর একপ্রকার অতীপ্ৰাকৃত বা দৈবিক ক্ষমতা আছে এবং নিজের ইচ্ছায় এটি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে এবং একে দেখতে পাওয়া অশনি সংকেত হিসেবে মনে করা হয়। কেউ কেউ দাবি করেন যদি ইয়েতি আপনাকে প্রথমে দেখে ফেলে তাহলে এটি একপ্রকার জাদু বা ম্যাজিক জাতীয় কিছু প্রয়োগ করে আপনায় নড়াচড়া করা থেকে বিরত করে দেয়, তারপর সে শিকারকে আক্রমণ বা খেয়ে ফেলতে পারে। যেকোনো শেরপার মুখ থেকেই শোনা যায় যে যদি আপনি ইয়েতিকে দেখতে পারেন তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিচের দিকে দৌড়ে পালিয়ে যান। যদি ইয়েতি আপনাকে একটি খাড়া স্থানে নিচের দিকে ধাওয়া করে তাহলে হাওয়া তার লম্বা চুলগুলি চোখে ঢেকে কিছু সময়ের জন্য তার দৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যা আপনাকে পালাতে সাহায্য করবে। তবে সাধারণ ক্ষেত্রে এটি মানুষের পক্ষে ক্ষতিকারক হয় না। যদিও একে একা থাকতে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। যদি আপনি একে না ঘাটান সেও আপনার বিরক্ত করবে না, সাধারণত ইয়েতি ছোট ছোট প্রাণী যেমন ব্যাঙ থেকে শুরু করে ইদুরের মতো প্রাণী যাকে 'পিকা' বলে পরিচিত যেগুলি হিমালয়ে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, এগুলি খেয়েই বেঁচে থাকে যদিও 'ইয়াক' এর উপর আক্রমণ ও তাদের মেরে ফেলার ঘটনাও শোনা যায়। শেরপারা মনে করেন ইয়তিকে খুঁজতে কোন সংঘটিত অভিযান কখনো সাফল্য লাভ করবে না এই প্রাণীটি নিজের ইচ্ছা অনুসারে অদৃশ্য হতে পারে এবং কখনো কখনো আকস্মিকভাবে এর দেখা পাওয়া যায়।


ইন্ডিয়ান আর্মির দেওয়া ইয়েতি ফুটপ্রিন্টের আরেকটি চমকপ্রদ বিষয় হলো, ঠিক একই প্রকার পদচিহ্ন মেজর বিল টিলমান ১৯৩৭ সালে দেখতে পেয়েছিলেন যার উল্লেখ লেখক গ্রাহাম হল্যান্ডের 'Yeti: an abominable history' বইটিতে দেখা গেছে। গ্রাহাম হল্যান্ড ছিলেন ১৫ তম ব্রিটিশ অভিযাত্রী যিনি এভারেস্ট আরোহন করেছিলেন। হিমালয় আনুমানিক ৩০ টির কাছাকাছি অভিযান করেছিলেন তিনি। এই সময়কালীন তিনি শেরপাদের কাছ থেকে ইয়েতি সম্পর্কিত অনেক কাহিনী শুনেছিলেন; তিনি তার বইয়ের প্রচারের জন্য একটি আর্টিকেল লিখেছিলেন যার নাম ছিল 'top 10 yeti and abominable snowman sightings'. এখানে বেশকিছু কৌতূহল পূর্ণ তথ্য ছিল যার মধ্যে বিল টিলম্যানের বিবরণ গুলি--
টিলম্যান তার ডাইরিতে লিখেছিলেন, দুটি গ্লেসিয়ারের মাঝ বরাবর যাওয়ার সময় তিনি বরফের ওপর তুষারমানবের পদচিহ্ন দেখতে পান এগুলি ৮ ইঞ্চি ডায়ামিটার এবং ১৮ ইঞ্চি লম্বা ছিল এবং কনুই অথবা বুড়ো আঙ্গুলের চিহ্ন ছিল না। এগুলি ৩ অথবা ৪ দিনের পুরনো ছিল তাই পুরো বাইরের দিকটা হয়তো বরফের গলে যাওয়ার জন্য নিখুত ছিল না। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এগুলি সোজা লাইনে ছিল একটার পর একটা - যার ডান অথবা বাঁদিকে টাল খাওয়ার কোন চিহ্ন ছিল না। একটি চার পেয়ে প্রাণী সব সময় চলাচলের সময় একটির উপর আরেকটি পায়ের চিহ্ন রেখে যায় এবং তাদের চলাচলের পদচিহ্নগুলি এরকম হয় না। যাইহোক এই প্রাণীটি অথবা দানব টি খুব ভারী ছিল কারণ এই পদচিহ্নগুলো এক ফুটের কাছাকাছি গভীর ছিল। "আমরা এগুলিকে এক মাইলজুড়ে অনুসরণ করেছি যতক্ষণ না এটি কিছু পাথরের আড়ালে হারিয়ে গেছিল। এই পদচিহ্নগুলি একটি গ্লেসিয়ারের জলাশয় থেকে নেমে এসেছিল যেখান থেকে হয়তো প্রাণীটি জল খেয়েছিল এবং পরের দিন আমরা ঠিক একই রকম পায়ের চিহ্ন বরফের লেকের উত্তর দিকে পেয়েছিলাম।"


এটা খুব চাঞ্চল্যকর বিষয় যে প্রায় ৮৫ বছরের আগে মেজর টিলম্যানের পাওয়া ইয়েতির পদচিহ্নগুলি যেরকম সোজা ছিল একটার পর একটা যার ডান বা বাদিকে কোন ডেভিয়েশন ছিল না ঠিক একই প্রকারের পদচিহ্ন ইন্ডিয়ান আর্মি, মাকালুতে পেয়েছিল। পার্থক্য হল এই যে, মাকালুর পদচিহ্ন গুলি বিশালাকৃতি ছিল - ৩২*১৫ ইঞ্চির যেখানে মেজর টিলমানের গুলি ছিল - ১৮*৮ ইঞ্চির হয়তো মেজর টিলমানের দেখা পদচিহ্নগুলি ইয়েতির ছোট প্রজাতির এবং মাকালুর ইয়েতি গুলো সম্ভবত ইয়েতির অপর প্রজাতি যারা বিশালাকৃতি এবং ইয়াক খেয়ে থাকে।
গ্রাহাম হল্যান্ড তার আর্টিকেলে এর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, যেগুলি তিনি অরুণাচল প্রদেশ থেকে লাদাখে হিমালয়ের রেঞ্জ ভ্রমণ কালে গ্রামবাসীদের থেকে শুনেছিলেন; সে অনুসারে তিন প্রকারের ইয়েতি হয়ে থাকে - প্রথমটি হল সবচেয়ে বিশালাকৃতির এবং ভয়ানক 'dzu-teh' যারা দু পায়ে দাঁড়ালে 8 ফুট লম্বা হয় এবং এটি এক থাবায় একটি ইয়াককে মেরে ফেলতে পারে।
এর থেকে ছোটটি হল 'chu-the' অথবা 'থেলমা' - একপ্রকার হালকা লাল রংয়ের বাচ্চাদের মত ছোট আকৃতির প্রাণী যে দু পায়ের ভর করে হাটে এবং হাতগুলি লম্বা হয়; এই প্রাণীকে সিকিম এবং নেপালের জঙ্গলে দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়া আর এক প্রকার হলো 'meh-teh' যারা অনেকটা মানুষের মতো দেখতে এবং এদের দেহে কমলা লাল রঙে লোম দেখতে পাওয়া যায়। এরা মানুষকে আক্রমণ করে এবং এদেরকে মনস্ট্রি গুলির দেয়ালে আঁকা চিত্রে দেখতে পাওয়া যায় বলা হয় এদের নামটি বিবর্তিত হয়ে 'yeh-teh' অথবা 'ইয়েতি' হয়েছে।



হল্যান্ডের শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী মাকালুতে পাওয়া পদচিহ্ন গুলি হয়তো এই ৮ ফুট লম্বা 'dzu-teh' এর হতে পারে যার বর্ণনা হল্যান্ডের কাহিনীতে শোনা যায়। হিমালয়ের বনমানুষ সম্পর্কে পশ্চিমে মানুষদের সবচেয়ে প্রথম বর্ণনাটি পাওয়া যায় হকটন হজশনের লেখা থেকে যেটি ১৮৩২ সালে সময়কালীন ছিল। হজসন নেপালের প্রথম ব্রিটিশ বাসিন্দা ছিল এবং প্রথম ইংরেজ - যাকে 'নিষিদ্ধ ভূমি'তে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি তার ডাইরিতে লিখেছিলেন, তার শিকারিরা একবার এক বনমানুষের আগমনে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে গিয়েছিল। হয়তো এটি ওরাং হতে পারে,
"কিন্তু তাদের বর্ণনায় আমার সন্দেহ আছে; সম্ভবত তারাই প্রাণীটিকে 'রাক্ষস' বা দৈত্য ভেবে গুলি করার পরিবর্তে পালিয়ে গিয়েছিল। তারা বলেছিল এটি লম্বা ও কালো চুলে ঢাকা ছিল এবং কোন লেজ ছিল না। নেপালি শিকারিরা ইয়েতিকে 'রাক্ষস' বলায় আমি এটা লক্ষ্য করেছিলাম যে, রাক্ষস কথাটির বর্ণনা দুটি ভারতীয় মহাকাব্য 'রামায়ণ' এবং 'মহাভারতে' পাওয়া যায়। তাদের সাধারণত এক প্রকার শয়তানিক, দুষ্ট, ভয়ঙ্কর দেখতে নিশাচর জাতীয় এবং নরখাদক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। যখন পুরো পৃথিবী ঘুমাতে যায় তখন তারা তাদের ডেরা থেকে বেরিয়ে আসে এবং জঙ্গলে শিকার শুরু করে; তাদের বিশালাকৃতি দেহ লাল লোমে ঢাকা এবং তারা অসম্ভব শক্তিশালী। মানুষের শক্তি তাদের কাছে কিছুই না, তারা গভীর দুর্গম জঙ্গলে বসবাস করত এবং হিমালয়ের ঢালগুলিতে তাদের শক্তি এবং ক্ষমতা অসম্ভব রকম ভাবে বেড়ে যেত; সন্ধ্যা এবং ভোরের সময় এই সময় গুলিতে তাদের যেকোন ভাবে হোক এড়িয়ে চলা উচিত তারা তাদের মায়াবী ক্ষমতার দ্বারা উধাও হয়ে যেত অথবা আকাশে উড়ে যেত এবং মানুষের মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করার জন্য অনেক রকম আকৃতি ধারণ করতে পারত।"

মহাভারতে মানুষ খেকো দানবদের নিয়ে অনেকগুলি গল্প ছিল কিন্তু এর মধ্যে একটি উল্লেখ্য একটি হল রাক্ষস ও রাজপুত্র ভীমের যুদ্ধের কাহিনী। ভীম ছিলেন তার সময়কালে পৃথিবীর সবচেয়ে বলশালী মানুষ। একদা ভীম এবং তার ভাইয়েরা অর্থাৎ পঞ্চপান্ডবেরা রাত্রিকালীন এক ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করছিলেন, যেখানে তার সাথে 'হিড়িম্বা' নামক এক রাক্ষসের লড়াই হয়; অন্যান্য ভাইয়েরা যখন ঘুমিয়ে পড়েছিল তখন তিনি তাদেরকে পাহারা দিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় রাক্ষসটি মানুষের গন্ধ পায় এবং রক্ত পিপাসু হয়ে জঙ্গল ধেয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। হিরিম্বার অসাধারণ শক্তি এবং হিংস্রতা ছিল, সাথে তার লম্বা এবং তীক্ষ্ণ দাঁত ছিল। সে ক্ষুধার্ত এবং মানুষের মাংসের লোভে এগিয়ে আসছিল। তার লম্বা চেহারা এবং বিশালাকৃতি পেট ছিল এবং তার দেহের রোমগুলি লাল রঙের ছিল। তার কাঁধ গাছের উপরিভাগের মত চওড়া ছিল এবং তার কান তীরের মত তীক্ষ্ণ ছিল যাতে তাকে আরও ভয়ানক দেখাচ্ছিল। কাহিনীর এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে একসময় ভীম এই রাক্ষসের সাথে ভয়ানক এক হাতাহাতি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন। তারা দুজনেই ভূমিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন এবং নিজেদের মধ্যে কুস্তি লড়ছিলেন সাথে গর্জন চলছিল। এই সময় ভীমের ছোট ভাই অর্জুন ঘুম থেকে জেগে উঠেছিল এবং ভীমকে এই রাক্ষসকে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি নিধন করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন; যেহেতু ভোরের সময় এর মায়াবী শক্তি বেড়ে যাবে। অবশেষে ভীম রাক্ষসের ওপর নিজের প্রাধান্য নিয়ে তার ভবলীলা সঙ্গ করে তার নিধন করেন। ভীম 'বকাসুর' নামে এক দানবের সাথে লড়েছিল যার বর্ণনা দেওয়া হয় - বিশাল দেহ এবং বিশাল শক্তি যার লাল চোখ ছিল, লাল রঙের দাড়ি এবং লাল রঙের চুল ছিল এবং তাকে ভয়ানক দেখতে ছিল এবং তার পায়ের হাড়ে যেন মাটি নিচের দিকে গর্ত হয়ে ঢুকে যাচ্ছিল। পরিষ্কারভাবে এই মানুষখেকো হিংস্র নিশাচর মহাভারতের প্রাণীরদের দেহ লাল রোমে ঢাকা ছিল। ঠিক ইয়েতির এক প্রজাতির মত যারা মানুষদের আক্রমণ করে, মহাভারতে এটাও বলা হয় যে রাক্ষসরা ঘন জঙ্গলে বসবাস করে, বিশেষ করে হিমালয়ের দুর্গম প্রান্তর গুলিতে। প্রাচীন এই কাহিনী গুলোর মাধ্যমে ইয়েতির সাথে ভারতীয় মহাকাব্যের রাক্ষসদের কিছুটা মিল পাওয়া যায়। যেখানে কিছু কিছু রাক্ষস ছোট আকৃতির, মানুষখেকো, লাল লোমে ঘেরা যারা হয়তো 'meh -teh' এর মত ছিল সেখানে অন্যান্যরা মানুষখেকো ছিল না এবং হয়তো তারা বিশালাকৃতি ইয়েতিদের মত ছিল অর্থাৎ 'dzu-teh' এর মত যাদের কালো রোমে দেহ ঢাকা ছিল এবং 'ইয়াক' এর মত প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকত।


দুর্ভাগ্যবশত যেহেতু এখনকার দিনের বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞরা প্রাচীন কিংবদন্তিগুলিকে কল্পকাহিনী হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন, তাই আমরা এক্ষেত্রে ইয়েতির মত প্রাণীদের দেখতে পাওয়ার কাহিনী ও প্রাচীন কাহিনী গুলোতে একই রকম দেখতে প্রাণীর মধ্যে মিল পেয়েও এর ব্যাখ্যা দিতে পারি না।
ইয়েতি সংক্রান্ত ঘটনাগুলি সম্ভবত হিমালয়ের অঞ্চলে হাজার হাজার বছর ধরে বিদ্যমান যার ফলে এগুলি শেরপাদের লোকোকাহিনীর অংশ হয়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র বিংশ শতকের শুরুর দিকে যখন মাউন্টেনিয়ার এক্সপিডিশনগুলি শুরু হয়েছিল তখন, এটি আরো বিশালাক্কারের পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে থাকলো। অবশ্যই বর্তমানকালে ইয়েতিরা হয়তো আরো নির্জনে ও গোপনে থাকার নির্ণয় নিয়েছে - যেখানে একসময় তাদের খুব সহজেই দেখা যেত কিন্তু কেন এমনটা হয়েছে তা অনুমান করা একটু কঠিন। তারা কি মানুষদের ভয় পায়? ঠিক যেমনটা আমরা তাদের পাই? তারা কি আমাদের কে অসৎ, নির্দয় শিকারি হিসেবে মনে করে - যারা তাদেরকে ধ্বংস করে ও তাদের শান্তির জীবনকে শেষ করে দেবে? আমরা এসব কিছুই বলতে পারি না যতক্ষণ না তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন ইয়েতিদের নিজস্ব ভাষা আছে এবং শিস এবং গর্জনের মতো সুরে তারা নিজেদের মধ্যে ভাব আদান-প্রদান করে। অনেকে মনে করে তারা পার্বত্য উপত্যকা অঞ্চল গুলির রক্ষা কর্তা। এক্ষেত্রে মিল পাওয়া যায় 'মহাভারতের' যেখানে তাদেরকে বলা হয়েছে 'হিমালয়ের রক্ষক' হিসাবে। কিন্তু পাহাড়কে তারা কাদের থেকে রক্ষা করছে এবং তারা কোন সম্পদকে রক্ষা করছে? এর আগে আমরা হিমালয়ের যে রহস্য গুলি আলোচনা করেছি, তারা কি এই ধরনের কোন আধ্যাত্মিক জগতের বা রহস্যময় কোন গোপন অঞ্চলে যাওয়ার স্থানকে রক্ষা করছে? প্রাচীনকালে কাহিনীতে এই ধরনের স্থানকে আমাদের গ্রহের ভারসাম্য রক্ষাকারী অঞ্চল হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে হয়তো তারা এই স্থানে ভুল করে মানুষের চলে আসাকে রক্ষা করার জন্য অথবা কোনো অন্য শক্তির আগমন ঠেকাতে আছে ? কোনো কিছুই অসম্ভব নয় .....






No comments:

Post a Comment