Pages

Saturday, 7 April 2018

দুনিয়া কাঁপানো কিছু দুধর্ষ নারী মাফিয়া--


জগতে ভালো এবং খারাপ দুটিই মানুষের মধ্যে আছে। খারাপ মানুষকে সব সময়ই অসৎ উপায়ে উপরে উঠার চেষ্টা করে। মাদক, চোরাচালান, খুন, রাহাজানি, মানি লন্ডারিং কোথায় জড়িত নেই তারা! এসব কাজের সঙ্গে শুধু পুরুষেরা জড়িত আছে বলে মনে করে। কিন্তু  দুনিয়া কাঁপানো এমনি দুর্ধর্ষ নারী মাফিয়ার কথা নিয়ে আজকের ফিচার। কিভাবে আলোড়ন তুলেছেন সারা দুনিয়ায়।

***  শুরু করার আগে বলি, অপরাধকে সমর্থন বা গুনগান করা কোন ভাবেই আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি অপরাধের ঘোরতর বিরোধী, এই পোস্টটির পুরটাই বিভিন্ন সুত্র, মতামত থেকে সংগ্রহ করা, তাই আমি এর ভিত্তিতে এখানে কাউকে দোষারোপ বা অপরাধী বলতে পারব না এবং বলতে চাইনি *****


অ্যানা গ্রিস্টিনা :


২০১২ সালে মার্কিন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে দুনিয়াজুড়ে খবরের শিরোনামে আসেন। অভিজাত সমাজে দেহব্যবসার সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল তার। প্লেবয় এবং পেন্টহাউস ম্যাগাজিনে কাজ করা মডেলরা অ্যানার হয়ে কাজ করত। ধরা পড়ার আগে প্রতি ক্লায়েন্টের কাছে ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কামিয়েছিল অ্যানা। বিশ্ব জুড়ে চল সেক্স ব়্যাকেট। গ্রেফতার হওয়ার সময় তিনি জানান, তিনি একটি অনলাইন ডেটিং সাইট চালান। কিন্তু পরে আসল সত্য স্বীকার করে নেন অ্যানা। তাকে ছয় মাসের জেল ও পাঁচ বছর গৃহবন্দী হয়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। তবে শোনা যায় এই সময়ও নাকি তিনি কয়েক শো কোটি টাকা উপার্জন করেছেন।

রাফায়েল ডি’আলটেরিও :


গডমাদার হবার সব গুণে গুণান্বিত নারী র‌্যাফেলা। ঘটনাক্রমে স্বামী নিকালো পায়ানস-এর কালো ব্যবসা চালিয়ে নিতেই তার এ জগতে আগমন। স্বামীকেও অতিক্রম করে ফেলেন ইতালিয়ান এ নারী। অবৈধ ব্যবসায় জড়িত ক্যামোরা পরিবারের হওয়ায় খুব সহজেই অন্ধকার জগতের রানীতে পরিণত হন র‌্যাফেলা। ২০০৬ সালে স্বামী নিহত হলে অন্ধকার জগতের একচ্ছত্র মক্ষিরানী হয়ে ওঠেন র‌্যাফেলা। খুন, মাদক পাচার, অবৈধ টাকাসহ আরও নানা অবৈধ কাজ অল্টারিওর নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে বারবার বন্দুক যুদ্ধে বেঁচে ফেরেন তিনি। আর এ কারণেই মাফিয়া জগতে তার উপাধি হয়ে দাঁড়ায় "The Big Kitten ", মিকোনিয়া বা বড় বিড়ালছানা। পুলিশের খাতায় র‌্যাফেলা একজন মোস্ট ওয়ান্টেড লেডি গ্যাংস্টারে পরিণত হন। অত্যন্ত দুর্ধর্ষ এ গডমাদার তার সমস্ত অপকর্মসহ ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে গড়ে প্রতি বছর ২১৮ বিলিয়ন ডলার আয় করতে থাকেন। ২০১২ সালে পুলিশ ঝটিকা অভিযান চালালে অল্টারিও ধরা পড়েন। সঙ্গে তার ৬৫ জন সহযোগীও ধরা পড়ে।২০ বিলিয়ন ডলার জব্দ করা হয়। টেলিগ্রাফ, ডেইলি মেইল থেকে শুরু করে সব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় তার ধরা পড়ার খবর। অবসান হয় র‌্যাফেলা গডমাদারের দৌরাত্ম্য।

জেমেকার থমসন :




খুব খারাপ পরিবেশের থেকে এসেছিলেন যা বেঁচে থাকার জন্য তাকে অপরাধী হতে বাধ্য করেছিল।স্বামীর সঙ্গে কোকেনের ব্যবসা করতো থমসন। ১৯৮০ সালে লস এঞ্জেলেসে এক নম্বর ড্রাগ ডিলার ছিল। একদিন গাড়ি ধোয়ার সময় থমসনের স্বামীকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। এখনও মাদক বেঁচে কোটি কোটি টাকা আয় করছে জেমেকার। এরপর নতুন সহযোগীর সাথে ব্যাবসা চালিয়ে যান কিন্তু সেই সহযোগি ধরা পরে ও জেরায় থমসনের নাম নেয়।



রোসেটা কুটোলো :


ইটালির কুখ্যাত মাফিয়া রাফায়েল কুটোলোর বোন। রোসেটা একটি দূর্গ কিনেছিল।সেখানেই আড়ালে চলতো চোরাচালান ব্যবসা। ১৬ শতকে তৈরি এই দূর্গে ৩৬৫টা ঘর ছিল। ছিল টেনিস কোর্ট, সুইমিং পুল। ইতালির কুখ্যাত মাফিয়া রাফায়েল কুটোলোর বোন।

তার ভাই মাদক সম্রাট রাফায়েল জীবনের অধিকাংশ সময় জেলেই বন্দি ছিলেন। জেলবন্দি থাকা অবস্থায় মাদক চোরাচালান ব্যবসার দায়িত্ব নেয় রোসেটা। জেল থেকে রাফায়েল যে নির্দেশ এবং পরামর্শ দিতেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন রোসেটা। পনের বছরের অধিক সময় ধরে গোলাপ চাষের আড়ালে ভাইয়ের মাদক সম্রাজ্যে ভাইয়েরই নির্দেশে নিভৃতে কাজ করে গেছেন এই নারী।
ভাইয়ের এই সংগঠনের দায়-দায়িত্ব নিষ্ঠাভরে পালন করার কারণে জেলে থেকেও রাফায়েল তার মাদক সাম্রাজ্যকে অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। পুলিশের সন্দেহ, রোসেটা সেসময় থেকেই এই সংগঠনকে শক্ত হাতে ধরতে না পারলে এই সংগঠন ভেঙ্গে পড়তো। রোসেটা একটি দূর্গ কিনেছিলেন। সর্বশেষ, ১৯৯৩ সালে পুলিশের কাছে ধরা দেন রোসেটা কুটোলো।দুনিয়া জুড়ে সাড়া জাগানো কুখ্যাত ৫ দুর্ধর্ষ নারী মাফিয়া ইতালির কুখ্যাত রাফায়েল কুটোলোর বোন রোসেটা। ১৯৩৭ সালে জন্ম নেয়া রোসেটা কুটোলোকে মাফিয়া সাম্রাজ্যের ‘সিস্টার অফ রাফায়েল’ নামেও ডাকা হত। জীবনের শুরুতে এই ধূসর চুলের নারী খুবই ধার্মিক ছিলেন। মায়ের সাথে একাকী ইতালির নেপলসের একটি গ্রামে বসবাস করতেন। গোলাপের চাষ করতেন।

মারিয়া লিচ্চিয়ারদি :


বাবা এবং দাদাকে অনুসরণ করেই অপরাধ জগতে আসা মারিয়ার। কামোরা নামে একটি গ্যাং তৈরি করেছিল সে। যা ৮ বছর ধরে পুলিশকে নাজেহাল করেছিল। আলবানিয়া মাফিয়াদের কাছ থেকে মেয়ে কিনত মারিয়া। পরে এই মেয়েদের দিয়ে কল গার্লের ব্যবসা করাত


মারিয়া লিওনঃ


ইনি স্প্যানিশ অভিনেত্রি মারিয়া লিওন নন। অপরাধ জগতের কুখ্যাত ডন মারিও লিওন। ১৩ সন্তানের জননী এই মারিও লিওন লস এঞ্জেলসের মাফিয়া জগতের মাথা। মাদক চোরাচালান থেকে সুপার কিলিং, হিউম্যান ট্রাফিকিং- সব জায়গায় তার নাম নানাভাবে জড়িয়ে আছে।২০০৮ সালে লস এঞ্জেলসে পুলিশের গুলিতে মারিয়ার ছেলে ড্যানি মারা যায়। ফলে লস এঞ্জেলসে থাকা মারিয়ার কাছে আর নিরাপদ মনে হয়নি। গা-ঢাকা দেওয়ার জন্য চলে আসে মেক্সিকোতে। বেআইনিভাবে সীমান্ত পেরিয়ে মৃত ছেলের শেষকৃত্যে সামিল হতে গিয়ে ধরা পড়ে। পরবর্তী সময়ে মারিয়াসহ এই গ্রুপের অনেক সদস্যই ধরা পড়ে। আদালতে মারিয়ার ৮ বছরের সাজা হয়।


থেলমা রাইট


ফিলাডেলফিয়ার কুখ্যাত ড্রাগ মাফিয়া মৃত জ্যাকি রাইটের বিধবা স্ত্রী। স্বামীর মৃত্যুর পর মাদক ব্যবসার দেখভাল শুরু করে থেলমা। কিছুদিনের মধ্যে ফিলাডেলফিয়ায় এক নম্বর ড্রাগ ডিলারে পরিণত হয় সে। মাদক বেচে প্রতি মাসে ৪ লাখ ডলার আয় ছিল থেলমার।


জুডি মোরান


হিউম্যান ট্রাফিকিং’ থেকে শুরু করে মাদক চোরাচালানের পারিবারিক ব্যবসা। সেই সূত্র ধরে অপরাধ জগতের মক্ষীরানি হয়েছিল জুডি। সে ‘ভিসকোআস’গ্যাং নামে একটি অপরাধী সংগঠনের নেত্রী হয়েছিল। বোনের বরকে খুন করে জেলে গিয়েছিল জুডি।


ক্লদিয়া ওছাওয়া ফেলিক্স : 



অপরাধ জগতের ‘কিম কারদাশিয়ান’ নামে ডাকা হয় তাকে। ক্লদিয়ার বিলাসবহুল জীবনযাত্রা এবং ফ্যাশনের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার অন্যতম আকর্ষণীয় নারী। আমেরিকার কুখ্যাত মাদক চোরাচালানকারী সংগঠন ‘লস অ্যানট্রাক্স’-এর সদস্য সে। ক্লদিয়াকে ‘লস অ্যানট্রাক্স’-এর ‘বস লেডি’ বলেও ডাকা হয়।

সান্দ্রা আভিলা বেলট্রান :



কয়েক বিলিয়ন ডলারের মালিক সান্দ্রা। মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। ‘দ্য কুইন অফ দ্য প্যাসিফিক’বলেও ডাকা হয়। দু’বার দুই পুলিশ কর্মীকে বিয়ে করে বেলট্রান। পরে তার স্বামীরাও মাফিয়া ডন বনে যায়। সান্দ্রার বিরুদ্ধে মাদক চোরাচালানের সঙ্গে বেআইনি অস্ত্র চোরাচালানের অভিযোগ আছে। পুলিশকে বেলট্রান জানিয়েছিল, কাপড় বেঁচে সংসার চালাতে হয় তাকে। ১১ অক্টোবর ১৯৬০ সালে জন্ম সান্ড্রা আভিলা বেলট্রানের। চোখে মুখে সবসময়ে লেগে থাকতো দুষ্টুমির ইঙ্গিত। তার মুচকি হাসি সকলকে মোহিত করে রাখতো। যখনই ফটোশুট করাতেন তখনই আরও মোহনীয় রূপ বেরিয়ে আসতো তার। কিন্তু তার এই হাসির পিছনে লুকিয়ে থাকতো এক হিংস্র ইমেজ। তাকে কেন্দ্র করে মেক্সিকোতে গড়ে উঠে এক বিশাল মাদক জগত। দেশের সবচেয়ে বড় ড্রাগ ডিলার ও গ্যাংস্টার হয়ে উঠেন সান্ড্রা আভিলা বেলট্রান। ৫৬ বছরের সান্ড্রা একসময় হয়ে উঠে মেক্সিকো সহ পুরো আমেরিকা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় ড্রাগ মাফিয়া। বেশ ধনী মহিলা সান্ড্রা বলতে গেলে কয়েক বিলিয়ন ডলারের মালিক। মাদক সাম্রাজ্যে তাকে ‘দ্যা কুইন অফ দ্যা প্যাসিফিক’ অনেকে ডেকে থাকেন।
তার দু’চোখের সম্মোহনী সুধা যেকোনো পুরুষকেই কাছে টেনে নেয়ার মতই। এমন যাদু মাখানো তার দু’চোখ যে খোদ পুলিশ কর্তারা পর্যন্ত তার প্রেমে হাবুডুবু খেতেন। গুলির লড়াই নয়, চোখের ইশারায় মেক্সিকোর দুই পুলিশ কর্তাকেই পকেটে পুরেছিলেন সান্ড্রা। দু’বার দুই পুলিশকে বিয়ে করেন বেলট্রান। পরবর্তীকালে দুই স্বামীকে ড্রাগ ব্যবসার কাজে নামিয়ে ছিলেন তিনি। পরে সুযোগ বুঝে দু’জনকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে  সান্ড্রাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মাদক, চোরাচালানের সঙ্গে বেআইনি অস্ত্র চোরাচালান এবং মানি লন্ডারিং ইত্যাদি অনেকগুলো অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। তবে পুলিশকে বেলট্রান জানিয়েছিলেন, কাপড় বেচে সংসার চালাতে হয় তাকে।

গারট্রুড লিথোগঃ


বলা হয় অন্ধকার এ জগতের প্রথম নারীর নাম গারট্রুড লিথোগ। অ্যালকোহল চোরাচালানে গারট্রুড এতটাই পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন যে তাকে বাহামার মাদক সম্রাজ্ঞী উপাধিতে ভূষিত করা হয়। উনবিংশ সালের প্রথম দশকে আমেরিকায় মাদকদ্রব্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। চোরাই পথে আসতে থাকে মাদক। আর ঠিক এ সুযোগে গারট্রুড বড় রকমের চোরাচালানে সফল হতে থাকেন। লন্ডনের এক মাদক রপ্তানিকারকের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে নাসাউ-এ নিজের মদের ব্যবসা খুলে বসেন গারট্রুড। পরিসংখ্যানে দেখা যায় গারট্রুডের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে বাহামা থেকে চোরাপথে আসা মদের পরিমাণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পায়। যেখানে আমেরিকায় ১৯১৭ সালে মদ আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৭,৩০০ লিটার, ১৯২৩-এ তা বেড়ে দাঁড়ায় নয় লাখ ৫০ হাজার লিটারে। যার অনেকটাই গারট্রুডের কাজ। নারী হওয়ার কারণে ব্যাপক সুবিধা করে এ পথে এগিয়ে যান গারট্রুড। কিছুদিনের মধ্যেই গারট্রুডের ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে। তাকে বাহামা কুইন বলা হতে থাকে। হয়ে ওঠেন অপ্রতিদ্বন্দী মাদক সম্রাজ্ঞী। ধরাও পড়েন গারট্রুড। অ্যামাজন-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী নিউ অরলিন্স-এ এক হাজার কেস মদসহ গ্রেপ্তার হন এ মাদক পাচারকারী। কিছুদিনের ভেতরেই জেল হতে বেরিয়ে পড়েন। হঠাৎ আলোর পথে ফিরে আসতে চান তিনি। সফলও হন। নিজের মাদক চোরাচালানির রাজ্য ছেড়ে লস এঞ্জেলসে পাড়ি জমান। ৮৬ বছর বয়সে সেখানেই দেহত্যাগ করেন।


মার্লোরি ডেডিয়ানা চ্যাকোন রোসেলঃ


১৯৭২-এ জন্ম নেয়া গুয়েতেমালার এ নারীকে ল্যাটিন আমেরিকার সবচেয়ে বড় আর শক্তিশালী মাদক ব্যবসায়ী। তিনি শুধু মাদক স্মাগলারই নন, গুয়েতেমালার সবচেয়ে বড় কালো টাকাকে সাদা টাকায় রূপান্তরকারীও। তিনি বিংগোটোন মিলানোরিও নামে একটি লটারির ব্যবস্থা করেন। এ লটারির আড়ালে চলতে থাকে কালো টাকা সাদায় রুপান্তর করার কাজ।

মার্লোরির কর্মকাণ্ড এফবিআই ও ওএফএসি বিভাগের ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারিতে পড়ে। ম্যাক্সিকান মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকার অপরাধে তাকে ধরার চেষ্টা হয়। কিন্তু অত্যন্ত ধূর্ত এ গডমাদার প্রতিবারই জাল ফসকে বেরিয়ে পড়েন। আজ পর্যন্ত মার্লোরির বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রমাণ আনা সম্ভব হয়নি। ফলে এখনও এ গডমাদার খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।



শারমেইন রোমানঃ


ছদ্মনামের এ মাদক সম্রাজ্ঞীর পুরো পরিচয় ও কর্মকাণ্ড এখনও পুলিশের অজানা। জ্যামাইকান মাদকসম্রাজ্ঞী হিসেবে পরিচিত শারমেইনের আওতায় ফ্লোরিডায় বছরে টন টন মারিজুয়ানা পাচার হয়। তার বিলাসি জীবনে অর্থের উৎস খুঁজতেই অনেক কুকর্মের নথি বেরিয়ে পড়ে। ২০১৩ সালে অরল্যান্ডো পার্কিং লটে ১৮০ কেজি মারিজুয়ানা সরবরাহের সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। একসময় পুলিশের হাতে আসে ১,৪৫০ কেজি মারিজুয়ানা, ২০০,০০০ ক্যাশ ডলার ও ৫০ জন সঙ্গী।


বনি পার্কারঃ


যুক্তরাষ্ট্রের নারী গ্যাংস্টারের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত বনি পার্কার।পরিবারের তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। মাত্র চার বছর বয়সেই বাবা মারা যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে তাদের বিভিন্ন স্থানে জীবিকার সন্ধানে ঘুরতে হয়। পরবর্তী সময়ে রয় থর্টন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় ও বিবাহ হয়। এই বিবাহ পরবর্তী সময়েই অপরাধ জগতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক হয়ে বনি পার্কারের এবং তৎকালীন টেক্সাসে আইনের ফাঁক গলে অনেক কুকর্ম ঘটিয়েছেন তিনি। বিখ্যাত বলা হচ্ছে কারণ বনি পার্কার আর দশজন তারকার মতই মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন। অপরাধ করার ক্ষেত্রে তার সঙ্গী ছিলেন আরেক পুরুষ গ্যাংস্টার ক্লাইড বরো। দুজনকে মানুষ চিনত বনি ও ক্লাইড নামে। মূলত ব্যাংক ডাকাতির জন্যই এরা কুখ্যাতি লাভ করে। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৪ এই তিন বছর গ্যাংস্টারগিরি করেন তারা। কারণ ১৯৩৪ সালেই পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে বনির মৃত্যু হয়।


স্টেফিন সেইন্ট ক্লেয়ারঃ



স্টেফানি নিউইয়র্কের কুখ্যাত হারলেম গ্যাংয়ের নেতা ছিলেন। দাবি করা হয় তার জন্ম হয়েছিল ফ্রেঞ্চ মা এবং আফ্রিকান বাবার ঘরে। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়ে আসার পর মোট চল্লিশ জনের একটি চোর দলের সর্দার হন তিনি। স্টেফানি প্রকাশ্যেই পুলিশদের ঘুষ দিতেন এবং পরবর্তীতে পত্রিকায় ওই পুলিশদেরই ঘুষ গ্রহনের চিত্র ছাপিয়ে দিতেন। বহু অপরাধের জন্য স্টেফানির মাথার মূল্যও নির্ধারণ করা হয়েছিল তৎকালীন সময়ে। ক্লেয়ার ছিলেন ফ্রেঞ্চ ও আফ্রিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন নারী গ্যাংস্টার। যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরনগরী নিউইয়র্কের হারলেমে বেশ কিছু অপরাধী চক্রের পালের গোদা ছিলেন তিনি। উনবিংশ শতকের গোড়ার দিকে নিউইয়র্কে মাফিয়ার প্রচণ্ড প্রভাব থাকলেও ক্লেয়ার মাফিয়াদের অধীনস্থ হননি। নিজের অবস্থান অপরাধ জগতে ঠিকই টিকিয়ে রেখেছিলেন।

ওপেল ‌‌লঙ্গঃ



ওপেল লং ছিলেন তেমনই একজন নারী যার সামনে দাড়িয়ে কথা বলতে দরকার হতো প্রচণ্ড সাহস। ওপেলের নৃশংসতার জন্য একটা সময় তার নাম দেয়া হয়েছিল ‘ম্যাক ট্রাক’। স্বামী রাসেল ক্লার্ক দিলিঙ্গার গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ায় তিনিও ওই গ্যাংয়েই জড়িয়ে যান। তবে দৃশ্যত, ম্যাক ছিলেন গ্যাংয়ের রন্ধন শিল্পী। গ্যাংয়ের হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া কেউই জানতেন না যে, যে কাজ গ্যাংয়ের অন্য সদস্যরা করতে হিমশিম খেতেন তা অবলীলায় করতেন ম্যাক ট্রাক। দীর্ঘদেহী এই নারী গ্যাংস্টারকে শরীরের আকৃতির কারণে ম্যাক ট্রাক (যার অর্থ মালবাহী ট্রাক) নামে ডাকা হতো। জন ডিলিঙ্গারের কুখ্যাত টেরর গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন ওপাল। তার স্বামীও টেরর গ্যাংয়ের হয়ে কাজ করতেন। টেরর গ্যাংয়ের সদস্যদের নিজের পরিবারের মতো করে খাওয়ানো ছাড়াও পুলিশের লোকচক্ষুর আড়ালেও রাখার কাজ করতে তিনি। কিন্তু ১৯৩৪ সালে পুলিশ তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করলে সমস্যার সৃষ্টি হয়। প্রথমে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেও কোনো লাভ না হওয়াই শেষ পর্যন্ত ডিলিঙ্গারের কাছে অর্থসহায়তা চান ওপাল। কিন্তু অর্থসহায়তার বদলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে স্বামীর মতো তাকেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত জেল খেটে বের হয়ে শিকাগোয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করেন ওপাল।


হেলেন গিলিসঃ



'বেবি ফেস নেলসন’ গ্যাংয়ের সদস্য লেস্টারের স্ত্রী ছিলেন হেলেন জিলিস। তার সময়ে তিনি ছিলেন সবচেয়ে দুর্ধর্ষ এবং তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী। স্বামী-স্ত্রী মিলে জন দিলিঙ্গারের হয়ে অনেক অপকর্ম করলেও বিভিন্ন গ্যাংদের মধ্যে এই দম্পতি ছিলেন আদর্শ। তাই মৃত্যুর পরেও হেলেন জিলিসকে তার স্বামীর পাশেই সমাধিস্থ করা হয়। মোট পঞ্চাশ বছর ধরে তারা একসঙ্গে জীবনযাপন করেছিলেন। হেলেন গিলিস ছিলেন ডিলিঙ্গারের টেরর গ্যাংয়ের অন্যতম সদস্য এবং কুখ্যাত গ্যাং লিডার বেবি ফেস লিনসনের স্ত্রী। স্বামী বেবি ফেসের সব অপরাধের সঙ্গীনী হিসেবে কাজ করার কারণেই পুলিশের খাতায় গ্যাং লিডার হিসেবে তার নাম ওঠে। ১৯৩৪ সালে একবার গ্রেপ্তার হন। এরপর জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো স্বামীর সঙ্গে অপরাধ জগতে যুক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু কিছু দিন পরই ডিলিঙ্গারের মৃত্যু হলে তাদের গ্যাং ভেড়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত কয়েক মাস জেল খেটে তার গ্যাংস্টার জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

মা বার্কারঃ



মা বার্কার ছিলেন ইতিহাস খ্যাত কয়েকজন অপরাধীর মা এবং বার্কার গ্যাংয়ের প্রতিষ্ঠাতা। মা হিসেবে তিনি তার সন্তানদের প্রতিটি অপকর্মের সঙ্গে থাকতেন এবং তাদের নির্দেশনা দিতেন। যদিও একটা সময় এফবিআই’র এক সদস্যের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন মা বার্কার। তার চার সন্তানের মধ্যে হ্যারম্যান, লয়েড, ফ্রেড এবং আর্থার। সন্তানদের নিয়ে অপরাধ করার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত মা বার্কারের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড জারি করেছিলেন। বার্কার ছিলেন নির্মম এক নারী গ্যাংস্টার। অল্প বয়সেই অ্যারিজোনা ক্লার্কের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিছু দিন পরই দুজনের সংসারের সদস্য হয়ে দাঁড়ায় ছয় জনে। আর এই ছয় জনের পরিবার হয়ে ওঠে একটি অপরাধী পরিবার। ১৯১০ সালের দিকে ম্যা বার্কারের নেতৃত্বে তার স্বামী ও ছেলেমেয়েরা মহাসড়কে ডাকাতি শুরু করে। এরপর শুরু হয় তাদের অপহরণ ব্যবসা। তবে ১৯২৭ এর দিকে এসেই বার্কারের ব্যাবসায় মন্দা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৩৫ সালে ফেরারি হয়ে ঘোরার সময় এফবিআইয়ের গুলিতে স্বামীসহ প্রাণ হারান বার্কার।


পার্ল এলিয়টঃ


১৯৩৩ সালে শিকাগো পুলিশ ডিপার্টমেন্টের রেকর্ড অনুযায়ী, তৎকালীন সময়কার গ্যাংগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সংঘবদ্ধ গ্যাং ছিল পার্ল এলিয়টের গ্যাং। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হত্যাকাণ্ড এবং অপরাধের জন্য পুলিশ তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছিল। তবে পার্ল এলিয়ট তার জীবনের এক সময়ে দিলিঙ্গার গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, দিলিঙ্গার গ্যাংয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরেই পার্ল এলিয়টের দিন শেষ হয়ে আসতে শুরু করে। পার্ল এলিয়ট সরাসরি অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। বরং অপরাধীদের আশ্রয় দেয়া ও তাদের সম্পদের দেখভাল করার কাজ করতেন। আর এর থেকেই তার মোটা অংকের অর্থ উপার্জন হতো। যুকক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত দুই গ্যাংস্টার ডিলিঙ্গার ও হ্যারি পিয়েরপয়েন্টর সঙ্গে তার এ ধরনের লেনদেন ছিল। শেষ দিকে এসে ডিলিঙ্গারের অর্থ জমা রাখার কাজও করতেন তিনি। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে এলিয়টের মৃত্যু হয়। তবে আর দশজন গ্যাংস্টারের মতো জেলে ধুঁকে কিংবা গুলিতে নয়, ক্যানসারে।


ম্যারি বেকারঃ


ম্যারি বেকার নিজের আকর্ষণীয় চোখ আর চেহারার কারণে সুন্দরী গ্যাংস্টার হিসেবে পরিচিতি পান। সব সময় দু’হাতে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঘুরতেন। প্যান্ট গ্যাং নামে একটি ডাকু দলের নেত্রী ছিলেন। মূলত বিভিন্ন দোকানপাটে ডাকাতি করতেন এই নারী গ্যাংস্টার। আর তার গ্যাংয়ের নাম প্যান্ট হওয়ারও একটি ইতিহাস আছে। প্রথম ডাকাতি করতে গিয়ে দোকানে উপস্থিত সবাইকে প্যান্ট খোলার নির্দেশ দেয়ার কারণেই তার গ্যাংয়ের নাম হয় প্যান্ট! শেষ পর্যন্ত তিন বছর জেল খেটে তার গ্যাংস্টার জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

ভার্জিনিয়া হিলঃ



ভার্জিনিয়া হিল পরিচিত ছিলেন ফ্লেমিঙ্গো এবং নারী গ্যাংস্টারদের রাণী হিসেবে। হিল গ্যাংস্টার বাগসি সিগেলের স্ত্রী হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করেন। প্রথম জীবনে অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যে দিয়ে বড় হওয়া হিল সৌভাগ্যের খোঁজে লস অ্যাঞ্জেলেসে যান। সেখানেই তার সঙ্গে দেখা হয় সিগেলের। তারপর পরিচয় থেকে পরিণয়। ১৯৪৭ সালে নিহত হয় সিগেল। সে সময় বাড়ির বাইরে থাকায় বেঁচে যান হিল। তবে ১৯৬১ সালে ঘুমের বড়ি খেয়ে তার মৃত্যু হয়। তবে কারো কারো মতে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।


অ্যরলিন ব্রিকম্যানঃ



১৯৩৩ সালে পূর্ব হার্লেমে এক ইহুদি পরিবারে জন্ম ব্রিকম্যানের। ছোট বেলা থেকেই তার আদর্শ ছিল গ্যাং লিডার ভার্জিনিয়া হিল। অল্প বয়সেই গ্যাং লিডারদের সঙ্গে তার কার্যক্রম শুরু হয়।ব্রিকম্যান কৈশোরেই যুক্ত হন একটি ইতালিয়ান গ্যাংয়ের দলে। এই গ্যাংয়ে যোগ দেয়ার পর বেশিরভাগ সময়ই তিনি কাটাতেন মাফিয়াদের বিভিন্ন নাইটক্লাবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি নিজেই সবচেয়ে বড় মাদক চোরাচালান দলের সর্দার হয়ে যান। কিন্তু যখনই তিনি তার আট বছর বয়সী মেয়েকে হত্যার হুমকি পান, তখন থেকেই ভয়ংকর রূপ ধারণ করেন। তৎকালীন সময়ে গোটা নিউইয়র্কে তার বিরুদ্ধে কথা বা দাড়াতে পারে এমন কোনো মাফিয়া বা গ্যাংস্টার দাড়াতেই পারেনি। তাদের প্রত্যেককেই ভয়বহ কায়দায় হত্যা করেছিলেন তিনি। মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে গ্যাং লিডারদেরকে ঋণ দেয়ার কাজও করতেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ঋণ দেয়াকে কেন্দ্র করে ঝামেলা শুরু হলে গ্যাং লিডারদের ওপর গোয়েন্দাগিরি শুরু করেন ব্রিকম্যান।
এলভিন বিলি ফ্রেচেট কুখ্যাত ১০ নারী গ্যাংস্টার কুখ্যাত ১০ নারী গ্যাংস্টার 511

এলভিন বিলি ফ্রেচেটঃ



নারী গ্যাংস্টার ফ্রেচেট কুখ্যাত হন গ্যাংস্টার ডিলিঙ্গারের বান্ধবী হিসেবে। অবশ্য আর বাকি নারী গ্যাং লিডারদের মতো তার ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসেননি ফ্রেচেট। আফ্রিকান ও রেড ইন্ডিয়ান বাবা মায়ের সন্তান ফ্রেচেট ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত। কিন্তু তারপরেও চাকরি না জোটায় শেষ পর্যন্ত শিকাগোতে এক ডাকাতের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেই ডাকাত স্বামী জেলে গেলে ডিলিঙ্গারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কয়েক বছর পর ডিলিঙ্গারের সঙ্গীনী হওয়ার কারণে তাকে দু’বছর জেল খাটতে হয়। জেল খাটা শেষে অপরাধমুক্ত নতুন জীবন শুরু করেন ফ্রেচেট। অপরাধের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেন তিনি।

গ্রিসেল্ডা ব্ল্যাঙ্কো-

গ্রিসেল্ডা ছিলেন মেডেলিন কার্টেলের অন্যতম মাদক চোরাচালানি। ১১ বছর বয়সেই তিনি শিশু অপহরণের মতো অপরাধে জড়িয়ে গিয়েছিলেন এবং মাত্র ১৪ বছর বয়সেই ডাকসাইটে পকেটমার হিসেবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে যায়। গ্রিসেল্ডা তার মায়ের সঙ্গে না থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় স্বামীর সহায়তায় নিউইয়র্কে তিনি কোকেন ব্যবসা শুরু করেন।


এবার বোনাস পোস্টঃ


বিখ্যাত সব ভারতীয় গ্যাংস্টার--


সান্তকাবেন জাদেজা--


ইনি ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা গ্যাংস্টারদের মধ্যে অন্যতম, সম্ভবত তিনি প্রথম মহিলা ছিলেন যিনি আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষে ছিলেন। এক সময় পোরবন্দর এরিয়ার সব বেআইনি কাজ তার অধীনে হত।স্বামীও গ্যাংস্টার ছিলেন।  অন্য এক গ্যাংস্টারের হাতে খুন হন তাঁর স্বামী।  পুলিশের কাছে না গিয়ে নিজের হাতে আইন তুলে নেন।  স্বামীর খুনের সঙ্গে জড়িত ১৪ জনকে নিজে হাতে খুন করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর পুরোপুরি তার অপরাধ জগতে প্রবেশ ঘটে। তারপর থেকে কিডন্যাপ, খুন, রাহাজানিতে তার নাম জড়াতে থাকে, রাজনিতিতে যোগদান করলেও সেরকম সাফল্য আসেনি। তাকে নিয়ে “গডমাদার” নামে একটি চলচিত্র আছে।


অর্চনা শর্মা-


কুখ্যাত বাবলু শ্রীভাস্তাভ গ্যাং এর অন্যতম সদস্যা ছিলেন, অনেকগুলি কিডন্যাপ, খুনের সাথে জরিয়ে তার নাম কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি।


গাঙ্গুবাই কোঠেআলি-- 

"সেই টীপ যাকে সবাই ভয় পায়"  
বাড়ি থেকে যার সাথে পালিয়ে আসেন, সেই এনাকে বিক্রি করে দেয়। পরে মুম্বাই এর অপরাধ জগত ও ব্যাবসার রানির স্থান নেন। অনেক বড় বড় মাফিয়া, গ্যাংস্টার তার কাছে কাজের জন্য আসত।


সশিকলা রমেশ পাটানকর ওরফে “বেবি”--



সাধারন দুধ বিক্রেতা থেকে মুম্বাইএ মেফেড্রন ড্রাগের সবচে বড় বিক্রেতা হয়েছিলেন, সেখান থেকেই গ্যাংস্টার দুনিয়ায় প্রবেশ।
গাঁজা, ব্রাউন সুগার দিয়ে শুরু এবং ৩০ বছরে ভারতের “মোস্ট ওয়ানটেড” ড্রাগ ডিলার, ২০১৫ সালে অবশেষে পুলিশ তাকে ধরতে পারে। প্রায় ১০০ কোটি টাকার গাঁজা, চরস বিক্রি করেছেন।  তাঁর মূল কাজই ছিল মধ্যপ্রদেশ আর রাজস্থান থেকে ড্রাগ জোগাড় করে নিজের জন্য সবথেকে ভাল মানের ড্রাগটা রেখে, বাকিটার সঙ্গে ভেজাল ও খারাপ ড্রাগ মিশিয়ে বিক্রি করা।  ২০১৫ সালে এক পুলিশ কনস্টেবলকে ড্রাগ পাঠাতে গিয়ে ধরা পড়েন ও আটক হন।


ফুলন দেবী— 


‘নাম হি কাফি’ হ্যায়।  বন্ধুদের দলে কোনও দাপুটে মেয়ে থাকলেই তার নাম সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায় ‘ফুলন দেবী’।  উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মান ফুলন দেবী।  তার পর মাত্র ১১ বছর বয়সে বিয়ে।  শ্বশুরবাড়িতে দিনের পর দিন অত্যাচার।  এরই মধ্যে ডাকাতদলের দ্বারা অপহৃত ও ধর্ষিত।  সইতে না পেরে পালিয়ে গিয়ে হাতে অস্ত্র তুলে নেন ফুলন।  গোলা-বারুদের মধ্যেই প্রেম আসে ফুলনের জীবনে। কিন্তু সেই প্রেমিককেও বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে প্রাণ দিতে হয়।  তার পরেই বেহমাই গ্রামে নিষ্ঠুর ভাবে একদল রাজপুত গণধর্ষণ করে ফুলন দেবীকে।  প্রতিশোধস্পৃহাই তখন ফুলন দেবীকে ‘ব্যান্ডিট কুইন’ করে তোলে।  ২২ জন রাজপুতকে গুলি করে হত্যা করেন তিনি।  তথাকথিত নিম্নবর্ণদের হয়ে এর পরে একাধিকবার বন্দুক চালিয়েছেন তিনি।  তাই ‘লেডি রবিনহুড’ নামেও পরিচিত তিনি।  এর পরে টানা ১১ বছর জেলে কাটান।  জেল থেকে বেরিয়ে রাজনীতিতেও যোগ দেন তিনি।  নির্বাচনে লড়ে সাংসদও হন।  এমন সময়েই তাঁর করা হত্যাকাণ্ডের জেরে তাঁকে হত্যা করে শের সিংহ রানা নামের জনৈক যুবক ও তার সঙ্গীরা।


সীমা পরিহার—


মাত্র ১৩ বছর বয়সে ডাকাতরা অপহরণ করে।  এর পরে ডাকাতদের ডেরায় থেকে সীমা পরিহারও চম্বল উপত্যকার নামজাদা ডাকাত হয়ে ওঠেন।  ফুলন দেবীর পথে হেঁটেই মোট ৭০ জনকে খুন করেন, ২০০ জনকে অপহরণ আর ৩০টি বাড়ি লুঠ করেন।  ২০০১ অক্টোবরে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।  এর পরে জেল থেকে বেরিয়ে ২০০২ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন।  ‘বিগ বস ৪’-এও সীমা পরিহার প্রতিযোগী হিসেবে এসেছিলেন।  তাঁর জীবন নিয়ে তৈরি ছবি ‘উনডেড: দ্য ব্যান্ডিট কুইন’ (২০০৭)-এও নিজে অভিনয় করেছেন।

বেলা আন্টি— 


১৯৭০-এর দশকে মুম্বই আন্ডারওয়ার্ল্ডে নিজের রাজত্ব তৈরি করেছিলেন এই লেডি গ্যাংস্টার।  মুম্বইয়ের ধারাভিতে তাঁর মদের ব্যবসা এখনও চর্চিত।  এতটাই শক্তিশালী ছিলেন, তাঁর ডেরায় মানুষ ঢুকতে ভয় পেতেন।

হসিনা পারকর—


সবথেকে বড় পরিচয়, তিনি দাউদ ইব্রাহিমের বোন।  ১৯৯১ সালে গ্যাংস্টার অরুণ গাওলির হাতে খুন হন তাঁর স্বামী ইসমাইল পারকর।  তখন থেকেই গ্যাংস্টার দুনিয়ায় প্রবেশ তাঁর।  ১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের পরে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন।  সম্প্রতি তাঁকে নিয়ে বলিউডে ছবিও হয়েছে।

জেনাবাঈ দারুওয়ালা—


অন্য গ্যাংস্টারদের মতো হিংসা কখনই ছড়াননি ইনি।  খাদ্যদ্রব্য পাচার করা থেকে গ্যাংস্টার দুনিয়ায় প্রবেশ তাঁর।  তবে এক সময়ে পুলিশের হাত থেকে দাউদকে বাঁচিয়েছিলেন।  পুলিশের চর হিসেবেও কাজ করেন তিনি।


রুবিনা সিরাজ সইদ—


পেশায় হেনা ব্যবসায়ী।  কিন্তু তার মাঝেই খাবার ও অস্ত্র পাচার করতেন একদা দাউদ-ঘনিষ্ঠ ছোটা শাকিলের ডেরায়।  এই মুহূর্তে শ্রীঘরে রয়েছেন।

নীতা নায়েকঃ


বলিউডি সিনেমায় নারী গ্যাংস্টারদের সাজপোষাক দেখে খানিকটা ভিরমি খাওয়া লাগে। গায়ে টাইটফিট ড্রেস, কোমরে পিস্তল আর ঠোঁটে কড়া লিপস্টিকে সঙ সাজানো হয় চরিত্রকে। নীতা নায়েক এমন কেউ ছিলেন না। দক্ষিণ মুম্বাইয়ের বিখ্যাত সোফিয়া কলেজের গ্র্যাজুয়েট ছিলেন তিনি। একটা দ্বৈত জীবনধারণ করতেন এই মহিলা। শিবসেনার সদস্য হিসেবে কর্পোরেটরের কাজ করতেন, সুন্দরী এবং আকর্ষণীয়া হওয়ায় ক্লায়েন্টদের পটাতে জুড়ি ছিল না তার। পার্টি মাতাতেও ওস্তাদ ছিলেন তিনি, মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনে তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল হিসেবেই ধরা হচ্ছিল।
আর অন্যজীবনে নীতা সামলাতেন স্বামী গ্যাংস্টার অশ্বিন নায়েকের দুই নম্বরী ব্যবসা আর অবৈধ কার্যকলাপ। স্বামী জেলে থাকাকালীন সময়ে চোরাকারবারী থেকে মাদক পাচার সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। স্বামীর পলিটিক্যাল ইমেজেও ভাটা পড়তে দেননি, স্থানীয় ব্যবসায়ী আর হকারদের থেকে সাপ্তাহিক চাঁদা উঠতো নিয়মিত, এসবের পাই-পয়সা হিসেব থাকতো নীতার কাছে। আবার এরা যাতে অসন্তষ্ট না হয় এজন্যে চাঁদার হারও বাড়াননি অনেকদিন।
২০০০ সালে নীতা নায়েকের গল্পটা সমাপ্ত হয়ে যায়। বাড়ীর বাইরে গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। এবং সেটা করা হয় তার স্বামী অশ্বিন নায়েকের আদেশে! নিজের দেহরক্ষীর সঙ্গে প্রেম ছিল এমন সন্দেহে এই খুন করান অশ্বিন। আবার অনেকে বলে পুলিশের গুপ্তচরেরাই নাকী তাকে স্ত্রীর প্রেমের খবর দিয়েছিল। খুনীদের অশ্বিন বলেছিলেন নীতাকে গুলি করার আগে তাকে ফোন করতে। কারণ ‘বিশ্বাসঘাতক’ স্ত্রীর আর্তনাদ শুনতে চেয়েছিলেন তিনি!

স্বপ্না দিদিঃ



তিনি নীতা নায়েকের মতো উচ্চশিক্ষিতা ছিলেন না। কর্পোরেট জগতের সঙ্গেও তার ছিল না কোন দূর দূরান্তের সম্পর্ক। একেবারেই নির্ঝঞ্ঝাট সাংসারিক মহিলা ছিলেন তিনি। স্বামী সংসার নিয়ে সুখে ঘরকন্না করার কথা ছিল তার। কিন্ত সেটা করা হয়নি, তাকে ছুটতে হয়েছে দাউদ ইব্রাহিমের পেছনে, ভারতের ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মাফিয়াকে খুন করতে ছুটেছিলেন তিনি!
তার নাম নিয়ে ভিন্নমত আছে অনেকের। কেউ বলেন তার আসল নাম ছিল আশরাফ, আবার কারো মতে তার ভালো নাম রহিমা খান। তো আশরাফ বা রহিমা খান যাই হোক, তার বিয়ে হয় মুম্বাইয়ের এক ছোটখাটো গ্যাংস্টার মাহমুদ কালিয়ার সঙ্গে। নিজের সাগরেদ আর সহকর্মীদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে স্ত্রীকে রক্ষা করার জন্যে মাহমুদ সবাইকে বলেন তার স্ত্রীকে দিদি ডাকার জন্যে, তখন থেকেই সবাই তাকে দিদি ডাকতে শুরু করে। মাহমুদ কালিয়া ছিলেন দাউদ ইব্রাহিমের ডি-কোম্পানী গ্যাঙের বিরোধীপক্ষ। দুই দলের সংঘর্ষ হতো মাঝেমধ্যেই, মৃত্যুর ভয় ছিল সবসময়।
তবে মাহমুদ কালিয়ার মৃত্যুটা হলো একটু অন্যরকমভাবে। ডি-কোম্পানী পুলিশকে দিয়ে খুন করায় মাহমুদকে, যেটাকে এনকাউন্টার বলে জানি আমরা। একা হয়ে গেলেন আশরাফ, ভালোবাসার মানুষটাকে হারালেন চিরদিনের মতো। সেখান থেকেই শুরু হলো তার প্রতিশোধ নেয়ার যুদ্ধ!
মুম্বাই পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার ইসাক ভগবান। মুম্বাইয়ের ক্রাইম ব্রাঞ্চে টানা দশবছর কাজ করেছেন, তীক্ষ নজর রেখেছিলেন স্বপ্না দিদির কার্যকলাপের ওপর। তিনিই বলছিলেন- “অপরাধ জগতের সঙ্গে বিন্দুমাত্র জানাশোনা ছিল না তার, ছিলেন একেবারেই ঘরোয়া মহিলা। ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়েছিল শুধু ওর স্বামী হত্যার বদলা নেয়ার জন্যে। পুলিশেও ওর ইনফর্মার ছিল, যারা ওকে দাউদের ব্যবসার খবরাখবর দিতো, দাউদের অবস্থান জানাতো।”
প্রতিশোধ নিতে আরো কিছু গ্যাংস্টারের সঙ্গে দল গঠন করলেন, নাম বদলে রাখলেন স্বপ্না দিদি। খুনী হিসেবে প্রস্তত করতে লাগলেন নিজেকে, বাইক আর জীপ চালানো শিখলেন, সত্তর-আশির দশকে যেটা বিরল ঘটনা ছিল। পুরোপুরি পুরুষে ঘেরা একটা জগতে প্রবেশ করলেন তিনি, এক পুলিশ অফিসারকে বিয়েও করেছিলেন, তার কার্যসিদ্ধিতে সাহায্য পাবার জন্যে। একটা হত্যার ঘটনা সাধারণ এক গৃহবধুকে কতখানি পাল্টে দিল, সেটা শুধু মুম্বাইয়ের ইতিহাস জানে।
দাউদের লোকজনকে অনুসরণ করে স্বপ্না দিদি গিয়েছিলেন নেপালে। সেখানে দাউদের অস্ত্রের চালান একাই ধ্বংস করে দেন তিনি! পুলিশের তথ্যমতে, শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দাউদ ইব্রাহিমকে নিজের হাতে মারার ছক কষেছিলেন তিনি। কিন্ত যাদের তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, তার সেই সঙ্গীরাই বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তার সঙ্গে। দাউদ জেনে গিয়েছিলেন তার কথা, তাকে যতটা নৃশংসভাবে খুন করা যায়, সেভাবে খুনের আদেশ দিয়েছিলেন দাউদ। ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারীতে দাউদের লোকেরা নিজের বাড়ীতে একের পর এক গুলি করে খুন করে স্বপ্না দিদিকে। থেমে গিয়েছিল তার প্রতিশোধের গল্প, যে গল্পে মিশে ছিল অনেকখানি ভালোবাসা!


অপরাধের এই জগতে ঢোকার রাস্তাটা বড় মসৃণ, কিন্ত ফেরার বোধহয় কোন রাস্তা নেই। কিংবা আছে, একটাই পথ, সে পথের নাম মৃত্যু…

No comments:

Post a Comment