Saturday, 20 April 2019

প্রাচীন ন্যানোটেকনোলজির নিদর্শন লাইকারগাস কাপ--

বর্তমান সময় ন্যানোটেকনোলোজি হলো সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তির মধ্যে একটি। কিন্তু যদি বলা হয়-যে প্রযুক্তিকে বিশ্ব বর্তমানে অত্যাধুনিক বলছে; তা আসলে ১ হাজার ৬শ’ বছর আগেই ব্যবহার করা হয়েছে তাহলে?

1950-এর দশকে, ব্রিটিশ মিউজিয়ামটি লাইকারগাস কাপ নামে পরিচিত একটি প্রাচীন পাত্রের সন্ধান পায় , রাজা লাইকার্গাসের  চিত্র থাকার কারণে  এটির এরূপ নামকরণ করা হয়। কারুশিল্প চমৎকার ও  চিত্তাকর্ষকভাবে কাটা এবং নকশাকৃত। রোমান জাহাজের এই শ্রেণীটি খাঁচা কাপ হিসাবে পরিচিত, এবং তারা বেশিরভাগই চতুর্থ শতাব্দীতে  তৈরি হয়েছিল। এই অবিশাস্য রোমান প্রযুক্তি  ও কারুকার্যের নিদর্শন,  মাত্র পঞ্চাশ টি কাপ পৃথিবীতে অবশিষ্ট আছে  ।

স্পষ্টতই  কাপগুলি তৈরী করা খুব কঠিন এবং এতে কোন সন্দেহ নেই, তবে এই বিশেষ নমুনাটি পৃথক ছিল কারণ এটি একটি অদ্ভুত অপটিক্যাল ঘটনা প্রদর্শন করেছিল যা কয়েক দশক ধরে বিশেষজ্ঞদের হতবাক করেছে। স্বাভাবিক আলোতে, গ্লাসটি সবুজ রঙের দেখায়, কিন্তু পেছনের দিক থেকে আলোকিত করা হলে এটি লাল হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে, বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত ছিলেন না যে কাপটি কাঁচের  তৈরি ছিল, নাকি রত্ন পাথর দিয়ে তৈরী ছিল। 1990 সাল নাগাদ গবেষকরা বুঝতে পেরেছিলেন যে রঙ পরিবর্তন কীভাবে আনা হয়েছিল।

মনে করা হয়  যে গ্লাসটিতে সোনা ও রৌপ্য কণাগুলির  খুব সুক্ষভাবে প্রায়  50 মনোমিটার ডায়ামিটার অথবা একটি লবনদানার  এক হাজার মিটারেরও কম পরিমাণে  ব্যাসের আকৃতি করে বসানো হয়েছে ।পরিমাণগুলি এত সুক্ষ ছিল  যে গবেষকরা প্রথমে ধারণা করেন যে  গ্লাস নির্মাতারা ভুল করে সোনা ও রুপার গুঁড়ো মিশিয়ে ফেলেছিলো , এমনকি এটিও জানাতে পারেনি যে এই কণাগুলির জন্যই এরকম ক্রিয়া সংঘটিত হয় ।কিন্তু এরপর একইরকম  অন্যান্য গ্লাসগুলি  আবিষ্কারের ফলে বোঝা যায়  এই মিশ্রণগুলি পরিকল্পিতভাবে বানানো হয়।  প্রাচীন রোমান শিল্পীরা কোনোভাবে  বুঝতে পেরেছিলো  যে যখন আলোক কণা কাঁচে ঘেরা ক্ষুদ্রতম সোনা ও রুপার কণার উপর আঘাত করে, তখন এটি গ্লাসের রঙ পরিবর্তন করে। আধুনিক বিজ্ঞানে এই এফেক্ট এর  জন্য একটি নাম আছে-ডাইক্রোইজম এবং  যে গ্লাসটি এটি  প্রদর্শন করে তা ডাইক্রোইক গ্লাস নামে পরিচিত।

কিন্তু গল্প যে এখানে শেষ নয়! শুধু  সোনা ও  রূপা যোগ এই আশ্চর্য অপটিক্যাল বৈশিষ্ট্য উত্পাদন করা যাবে না। এর  জন্য স্বর্ণ এবং রূপালী কণাগুলিকে  'minute submicroscopic crystals' বা  'colloids' গঠন করতে হবে।  এই কোলয়েডগুলি তৈরী  করে  'light scattering phenomena' যার ফলস্বরূপ  'dichroic effects' - এর সৃষ্টি হয়।

প্রাচীন ইতিহাসে ন্যানো প্রযুক্তির আরো উদাহরণ রয়েছে। 800 খ্রিস্টাব্দে মায়া সভ্যতার লোকেরা 'Maya Blue'  নামের একটি ক্ষয় প্রতিরোধক  আকাশি নীল  রজক পদার্থ উৎপাদিত করে।
 চিত্তাকর্ষক শক্তি, ফাটল প্রতিরোধী এবং ব্যতিক্রমী তীক্ষ্ণ ও ধারালো  প্রান্তের জন্য পরিচিত দামাস্কাস ইস্পাতের তলোয়ার, যাতে ন্যানোস্কাল তারের এবং নলের মতো কাঠামো রয়েছে। এই তরোয়ালগুলি তৃতীয় ও 17 শতকের মাঝামাঝি মধ্য প্রাচ্যে উত্পাদিত হয়েছিল।

এটা কি হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন জ্ঞান গুলির একটি  উদাহরণ যে দাবি গুলি অনেক গবেষকরা করে আসছেন এবং তাদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে? লাইকার্গাস কাপ ও অন্যান্য নিদর্শনগুলো সেইদিকেই কৌতূহল সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এই কারিগররা ঠিকমত জানত যে তারা কী করছে ... প্রশ্ন হলো, তারা কীভাবে তা জানত?


Sunday, 7 April 2019

রহস্যময় বাগদাদ ব্যাটারি--

পাত্রটি ১৯৩৬ সালে বাগদাদের নিকটবর্তী খুজুত রাবু নামক গ্রাম থেকে মাটি খুড়ার সময় আবিষ্কার করা হয়।
এরপর  ১৯৩৮ সালের কথা। ঘটনাস্থল ইরাকের রাজধানী বাগদাদ।ইরাক জাতীয় জাদুঘরের পরিচালক জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদ ডব্লিউ কনিং জাদুঘর পরিদর্শনে বের হলেন। বাগদাদে মাটি খুঁড়ে বের করা বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সাথে ঐতিহাসিক যোগসূত্রিতা বের করা তার দায়িত্ব।হঠাৎ তার চোখ পড়ল পার্সিয়ান যুগের একটি হলুদ রঙের পাত্রের উপর।ভাল করে ৬ ইঞ্চি উচু পাত্রটি লক্ষ্য করতেই ভদ্রলোক বেশ অবাক হল। মানুষের মুষ্টির সমান সেই কাদামাটির পাত্র নিয়ে তখন তেমন আগ্রহ দেখাননি কনিগ।

তখন ১৯০০ সাল থেকে শুরু করে আরেকদল অনুসন্ধানকারী বাইবেলে উল্লেখিত বিভিন্ন পবিত্র নিদর্শন খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে। কনিগের আবিষ্কৃত পাত্র তাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তারা অনেক গবেষণার পরেও কোনো নিদর্শনের সাথে মিল খুঁজে পাননি। তাদের মধ্যে অনেকেই পাত্রটি নিয়ে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। সেটি ফিরিয়ে দেয়া হয় কনিগের কাছে।
 প্রায় ১৩৮ বছর আগে ইতালীয় বিজ্ঞানী কাউন্ট ভোল্টা বিদ্যুৎ নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে ব্যাটারি আবিষ্কার করেছিলেন। সেখানে তিনি অ্যাসিড দ্রবণের মধ্যে তামার পাত ডুবিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। জগত জুড়ে আলোড়ন ফেলা এই আবিষ্কার কনিগের অজানা ছিল না। তিনি দুইয়ে আর দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেললেন।
 কনিগ পাত্রটি নিয়ে কিছু অনুসন্ধান করে জানতে পারলেন,পাত্রটির ভিতর ৫ ইঞ্চি উচু ও দেড় ইঞ্চি বেড়ের কপার সিলিন্ডার এবং এর মাঝে একটি লোহার দন্ড বিদ্যমান।সিলিন্ডারটির নীচের অংশ কপার ডিস্ক দিয়ে ঢাকা অবস্থায় বিটুমিন দিয়ে সিল করা। সিলিন্ডারটির কিনারা ৬০-৪০ লেড-টিন সংকর ধাতু দিয়ে  ঝালাই করা ছিল যা একটি আধুনিক ঝালাই এর সাথে তুলনীয়।উপরের অংশটিও বিটুমিন দিয়ে ঢাকা ছিল এবং ভিতরের রডটিতে এসিডিক এজেন্টে  ক্ষয়ের ষ্পষ্ট চিহ্ন দেখা যায়। পাত্রের ভেতরের দিকে বেশ কিছু অংশ ক্ষয় হয়ে গিয়েছে এবং এই ক্ষয়ের কারণ হতে পারে কোনো অ্যাসিডের মাধ্যমে।

কপার এবং আয়রনের যুগল অবস্থা এবং এসিডিটির চিহ্ন দেখে কনিং মোটামুটি নিশ্চিত হলেন এই পাত্রটি বিদুৎ উৎপাদনে ব্যবহার হতে পারে ।
 এরপরে কনিগের মনে কোনো দ্বিধা ছিল না । তিনি নিশ্চিত ছিলেন তার আবিষ্কৃত পাত্রটিই পৃথিবীর প্রথম ব্যাটারি। তিনি দ্রুত এই সংবাদ প্রচার করে দিলেন। এই নিয়ে আরো গবেষনা শেষে ১৯৪০ সালে তিনি লেখালেখি শুরু করেন এবং তিনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা দেন যে এই পাত্রটি প্রাচীন যুগের ব্যাটারি।যা বর্তমানে বাগদাদের ব্যাটারি নামে পরিচিত।

সেই বাগদাদ ব্যাটারি খ্যাত কাদামাটির পাত্রটি শুধু কনিগকেই না, বিস্মিত করেছিল পুরো পৃথিবীকে। সবাই ভীষণ কৌতূহলে এগিয়ে আসলেন এই ব্যাটারির গবেষণায়।

এভাবেই আবিষ্কৃত হয়েছিলে বিজ্ঞানের অন্যতম ধাঁধা, বাগদাদ ব্যাটারি। এর পক্ষে-বিপক্ষে হাজারো যুক্তি-তর্ক, ব্যাখ্যা, আলোচনার পরেও যার রহস্যের সঠিক সমাধান করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।

প্রাচীন যুগের মানুষরা এই পাত্রটিকে ব্যাটারি রুপে ব্যবহার করেছিল তার প্রমাণ কি? আর করলেই বা সমস্যা কি? অনেকের মনে হয়ত এ প্রশ্ন উঠতে পারে।
১৯৪০ সালে কনিগ তার এই অনুসন্ধান নিয়ে বিস্তারিত লিখে একটি জার্নালে প্রকাশ করলেন। সেই বিস্ময়কর পাত্রটি আকারে প্রায় ৫ ইঞ্চি লম্বা। পাত্রের সাথে একটি লোহার দণ্ড এবং পিচের তৈরি ছিপি পাওয়া যায়। পাত্রের ভেতরে লোহার দণ্ডটি তামার নল দিয়ে আবৃত। ধারণা করা হয়, তামার নলের ভেতর অম্লীয় দ্রবণ ব্যবহার করে ব্যাটারিটি সচল করা হতো।

১৯৪০ সালেই জেনারেল ইলেকট্রিক এর ইন্জিনিয়ার "উইলার্ড এফ, এম, গ্রে" "কোনিগ " এর লেখা পড়েন।তিনি জার্মান রকেট বিজ্ঞানী উইলি লে এর সহযোগীতায় বাগদাদ ব্যাটারির হুবুহু একটি মডেল তৈরী করেন।কপার সালফেট দ্রবণ ব্যবহার করে তিনি হাফ ভোল্ট বিদুৎ উৎপাদনে সক্ষম হন। উইলার্ড গ্রে বাগদাদ ব্যাটারির একটি রেপ্লিকা নির্মাণ করেন। এরপর তিনি তাতে আঙুরের রসের দ্রবণ ব্যবহার করেন। এই পরীক্ষায় গ্রে সফলতা পেলেন। ব্যাটারি সচল হয়ে গেল। বিদ্যুতের বিভব ছিল প্রায় ২ ভোল্ট। এর ফলে অনেকেই বাগদাদ ব্যাটারির সত্যতা মেনে নেন।একই মডেলে ১৯৭০ সালেও ০.৮৭v বিদুৎ উৎপাদন করা হয়। প্রাচীন এ ব্যাটারী আবিষ্কারের ফলে প্রমাণিত হয় ১৮০০ সালের আগেই পৃথিবীতে ব্যাটারি আবিষ্কৃত হয়েছিল। যা ব্যাটারি আবিষ্কারের ইতিহাসকে কমপক্ষে আরও ১৮০০ বছর পিছনে ফেলে দিবে।তাহলে প্রাচীন যুগে কি আমাদের জানার বাইরে এমন কোনো সভ্যতা ছিল যা জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক অগ্রসর ছিল? আমাদের ইতিহাসবিদরা যা জানেন এবং যা আমাদের শিখিয়েছেন তবে কি তা ভুল?


এই ব্যাটারি আবিষ্কারের সময় পুরো পৃথিবী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মেতে উঠেছিল। ফলে বাগদাদ ব্যাটারির কথা বেশ কয়েক বছরের জন্য বিজ্ঞানীরা ভুলে যান।

আবিষ্কারের প্রায় ৬০ বছর পর বিজ্ঞানীরা বাগদাদ ব্যাটারি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। অন্যদিকে ইতিহাসবিদরাও এগিয়ে আসেন। কারণ এর সত্যতার প্রমাণ পেলে পার্থিয়ানদের সম্পর্কে অনেক অজানা ইতিহাস বের হয়ে আসবে।

কিন্তু গবেষণার শুরুতেই শুরু হয় বিতর্ক। উইলহেম কনিগ কি পাত্রটি খনন করে পেয়েছেন নাকি জাদুঘরের অন্যান্য সংগ্রহের মাঝে খুঁজে পেয়েছেন তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়। কনিগের ধারণা অনুযায়ী পাত্রটি প্রায় ২৫০ খ্রিস্টপূর্বের দিকে তৈরি করা হয়েছিল। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞানী এই ধারণা নাকচ করে দেন। কারণ পাত্রের গড়ন সাসানিদ শাসনামলের পাত্রগুলোর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সেই অনুযায়ী পাত্রটি ৬০০ খ্রিস্টাব্দের দিকে তৈরি করা হয়।

খুজুত রাবুর স্থানীয়দের ইরাকিরা ‘পার্থিয়ান’ নামে ডাকেন। কিন্তু পার্থিয়ানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিক থেকে উন্নত ছিল না। তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিল যুদ্ধবিগ্রহ। তাই এই ঘটনা ইতিহাসবিদদের বিস্মিত করেছিল।

ওদিকে বিজ্ঞানীরা কিন্তু ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বকে পেছনে ফেলে ঠিকই কাজ করে যাচ্ছিলেন। কারণ মাটির পাত্রটি আসলেই ছিল বিস্ময়কর।

কিন্তু ব্যাটারির সাথে কোনো তার খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে কোন ধাতুর তার দ্বারা ব্যাটারিতে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতো সেটা জানা সম্ভব হয়নি। প্রাচীন ইরাকে তামার নল, লোহার দণ্ড, কাদামাটির পাত্র নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাই অনেক বিজ্ঞানী তখনও একে ব্যাটারি হিসেবে মানতে নারাজ ছিলেন।
 
 অনেকে  ধারণা করেন এই ব্যাটারির কিছু অংশ সময়ের আবর্তনে হারিয়ে গেছে। কারণ কেউ স্রেফ মনের ভুলে ঠিক ব্যাটারির মতো করে উপাদানগুলো একসাথে রেখে দিয়েছেন, সেটা মেনে নেয়া হাস্যকর।

বাগদাদ ব্যাটারির মাধ্যমে বিদ্যুৎ চলাচল করানো সম্ভব, এটা প্রমাণিত হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা এর সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। সে সময়ে গ্রিকরা ব্যথানাশের জন্য বৈদ্যুতিক মাছ ব্যবহার করতো। সেই থেকে ধারণা করা হয়, সম্ভবত বাগদাদ ব্যাটারি ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। কিন্তু সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কারণ বাগদাদ ব্যাটারি থেকে উৎপন্ন ২ ভোল্টের বিদ্যুত দেহে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তাই এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়।

তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব ছিল ইলেক্ট্রোপ্লেটিং। এর মাধ্যমে যেকোনো ধাতুর উপর সোনা, রূপাসহ বিভিন্ন ধাতুর প্রলেপ দেওয়া যায়। এর পেছনে সবচেয়ে বড় যুক্তি ছিল এটা বাণিজ্যিক। ধারণা অনুযায়ী, এর মাধ্যমে ধাতুর উপর প্রলেপ দিয়ে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে ছুটে যেতেন ইরাকের বণিকরা।

জার্মান বিজ্ঞানী আর্নে ইগাব্রেশট বাগদাদ ব্যাটারির রেপ্লিকার দ্বারা প্রথম ইলেক্ট্রোপ্লেটিং করতে সক্ষম হন। তিনি অনেকগুলো ব্যাটারি  যুক্ত করে একটি ধাতুর উপর ০.০০১ মি.মি. প্রলেপ তৈরি করতে সক্ষম হন। তিনি ধারণা করেন, বাগদাদের প্রাচীন ধাতবসামগ্রী এই ব্যাটারির সাহায্যে প্রলেপ দেওয়া হতো।

মজার ব্যাপার হলো, অন্যান্য বিজ্ঞানীরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যর্থ হন। তাই তারা এই পরীক্ষার ফলাফল মেনে নেননি। রোমার-পেলিজিউস জাদুঘরের গবেষক ড. বেরিতা শেমিজ এই পরীক্ষাটি ভুয়া বলে দাবি করেন। কারণ এই পরীক্ষার কোনো লিখিত দলিল পাওয়া যায়নি।

বাগদাদ ব্যাটারির বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিজ্ঞানী শক্ত যুক্তি প্রদান করেছেন। তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, বাগদাদ ব্যাটারি স্রেফ একটি আসবাব ব্যতীত আর কিছুই নয়।

বিখ্যাত টিভি অনুষ্ঠান Arthur C. Clarke’s Mysterious World র একটি পর্বে বাগদাদ ব্যাটারির অযোগ্যতা নিয়ে বলা হয়, ব্যাটারি সচল হবার পর এর ভেতরে ঘন গ্যাস উৎপন্ন হয় যা ব্যাটারির কার্যক্ষমতা হ্রাস করে দেয়। এছাড়াও অনেকগুলো ব্যাটারি একসাথে জুড়ে দিয়ে বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হলেও এর বিভব মান কখনই ২ ভোল্ট এর চেয়ে বেশি পাওয়া সম্ভব হয়নি। এ ধরনের  ব্যাটারি ব্যবহার করা লাভজনক নয়।

আর ইলেক্ট্রোপ্লেটিংয়ের তত্ত্ব সুনির্দিষ্ট প্রমাণের অভাবে অনেক আগেই বিজ্ঞানীদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে।


বৈজ্ঞানিকদের মোতে  শহর সেলুসিয়ার বিভিন্ন স্ক্রল সংরক্ষণের জন্য এসব পাত্র ব্যবহার করা হতো। কিন্তু এই ধারণা বাতিল করে দেন অপরপক্ষের বিজ্ঞানীরা। কারণ সেলুসিয়ার পাত্রগুলো কাদামাটির তৈরি ছিল না।

তবে বাগদাদ ব্যাটারি যে ব্যাটারি হতে পারে না, সে ধারণা কেউই উড়িয়ে দিচ্ছেন না। এখনো বাগদাদ ব্যাটারি বিজ্ঞানীদের নিকট এক অমীমাংসিত রহস্য। ড্যানিয়েল স্মিথের এর বিখ্যাত সংকলন ‘100 Things They Don’t Want You to Know’তে বাগদাদ ব্যাটারি নিয়ে স্বতন্ত্র ফিচার প্রকাশিত হয়। এছাড়াও ডিসকভারি চ্যানেল এর 'মিথ বাস্টার ' অনুষ্ঠানে বাগদাদ ব্যাটারিকে নিয়ে বিশেষ ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

বাগদাদ ব্যাটারি নিয়ে বিতর্কে বিভক্ত বিজ্ঞানীরা। হয়তো এটি বিজ্ঞানী ভোল্টার ব্যাটারি আবিষ্কারের হাজার বছর আগে ব্যবহৃত ব্যাটারি। তাহলে কি কারণে প্রাচীন ব্যাটারির কথা হারিয়ে গেল সভ্যতার অন্তরালে? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে মাথা ঘামাবেন গবেষকরা।


আর বিস্ময়কর পাত্রটি যদি ব্যাটারি না হয়, সেক্ষেত্রে ব্যাপারটি আরো রহস্য সৃষ্টি করবে। তখন অনুসন্ধানপর্ব নতুন মোড় নিতে পারে।

এভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে হাজারো বিস্ময়কর ধাঁধা সমাধান হবার অপেক্ষায় আছে। সব রহস্যের সমাধান করা হলে হয়তো পৃথিবীর ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে। যেমন বাগদাদ ব্যাটারির কথাই ধরুন । এটি সত্য প্রমাণিত হলে প্রাচীনকালের জীবনযাপন সম্পর্কে আমাদের ধারণা সম্পূর্ণ বদলে ফেলতে হবে।