Pages

Thursday, 25 June 2020

আদা বা Ginger সম্পর্কিত কিছু আকর্ষণীয় তথ্য --

আদা বা Ginger পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় মসলা বা গুল্মজাতীয়র মধ্যে অন্যতম পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন রকম ভাবে একে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।



আদার গল্পটি প্রায় 5,000 বছরেরও বেশি পুরনো। প্রাচীন চিনা দার্শনিক কনফুসিয়াস চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা বর্ণনা করেছিলেন এবং রোমানদের কাছে এটি ধন সম্পদ এবং উর্বরতার প্রতীক ছিল।

আদার প্রথম উৎপত্তি খুঁজে পাওয়া যায় প্রাচীন চীনের দক্ষিণ অংশে; সেখান থেকে এটি ছড়িয়ে পড়ে ভারত, মালুকু আইসল্যান্ড, এশিয়ার অন্যান্য অংশ এবং পশ্চিম আফ্রিকায়। ইউরোপ প্রথম এইগুলোকে দেখতে পায় প্রথম শতাব্দীর সময় যখন প্রাচীন রোমানরা ভারতের সাথে বাণিজ্য করতো। যখন এর পতন ঘটে ইউরোপ এই মসলার কথা ভুলেই গিয়েছিল, যতক্ষণ না মার্কোপোলো তার প্রাচ্য দেশগুলিতে যাত্রাকালীন এইগুলি কিনে নিয়ে এসেছিল। পনেরশো শতাব্দীতে নিউ ওয়ার্ল্ডে এটি আবার পুনরাবিষ্কৃত হয়। আদা ক্যারিবিয়ানে কিনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে এটি খুব সহজে বেড়ে উঠতে শুরু করে। বর্তমানে ভারতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আদা উৎপাদিত হয় যার পরিমাণ প্রায় 11,09,000 টনের কাছাকাছি।



আদা কেনার সময় কিছু সতর্কতাঃ

আদা সব সময় তাজা অবস্থায় কেনা উচিত যেগুলি মসৃণ ত্বক ও সুগঠিত হয়, এছাড়া একটু তুলনামূলকভাবে ভারী হয়। যেহেতু টাটকা আদা কেনাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য, সেহেতু অল্প পরিমাণে সবসময় কেনা উচিত যাতে বাড়িতে অনেক সময় ধরে পড়ে থেকে এর কার্যকারিতা কমে না যায়।
দাগ যুক্ত নরম বা আঁশযুক্ত আদা কেনা থেকে বিরত থাকা উচিত, এছাড়া ভেজা বা হালকা ভেজা রকমের আদা কিনবেন না কারণ এতে ছাতা ধরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কিভাবে বাড়িতে আদা রাখবেন--

আদা সাধারণ ঘরের তাপমাত্রায় দুদিন পর্যন্ত বেশ ভালোই থাকতে পারে কিন্তু আপনি যদি এটিকে কেটে ফেলেন তাহলে চেষ্টা করবেন এটিকে রেফ্রিজারেটরে রেখে দেওয়ার যাতে এর স্বাদ ও গন্ধ নষ্ট না হয়। একটি কাপড়ে ভালো করে মুড়ে সেটিকে প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে যতটা সম্ভব বাতাস মুক্ত অর্থাৎ আঁটোসাঁটো করে বেঁধে ফ্রিজারে বা রেফ্রিজারেটরে রাখার চেষ্টা করবেন। এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় আদাকে কেটে ভদকা বা অ্যালকোহলের ডুবিয়ে সংরক্ষণ করা, গতানুগতিক পদ্ধতিতে মাটিতে পুঁতে রাখা ইত্যাদি প্রক্রিয়াতেও সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।



আদার উপকারিতা--

--আদা বমি বমি ভাব এর ক্ষেত্রে খুবই উপকার দেয় যেমন --  সার্জারি অথবা কেমোথেরাপির পর বমি বমি ভাব এছাড়া মাতৃত্বকালীন বমি বমি ভাব ইত্যাদি ক্ষেত্রে খুব ভালো উপকার দেখা গেছে তবে বেশি পরিমাণ আদা খাওয়া উচিত না এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

--মাসেল পেন বা পেশীর ব্যথা এর ক্ষেত্রে আদা উপযোগী।

--গাঁটে ব্যথা বা স্টিফনেস এর ক্ষেত্রে আদা কিছুটা নিরাময় দিতে পারে।

--হার্টের সমস্যা এবং সুগারের সমস্যা আদা কিছুটা নিরাময় দিতে পারে।

--বেশকিছু প্রকার ক্যান্সার, যেমন- প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং ওভারিয়ান ক্যান্সারের ক্ষেত্রে আদার উপকারী তা দেখা গেছে। তবে এ নিয়ে আরো গবেষণা দরকার। 

--কিছু পরীক্ষায় দেখা গেছে আদার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বায়ো একটিভ পদার্থগুলি আমাদের মস্তিষ্কের ইনফ্লেমেটরি প্রতিক্রিয়াগুলি আটকাতে সাহায্য করে ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
--আদার অ্যাক্টিভ উপাদান 'জিঞ্জেরল' ইনফেকশনের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এছাড়া আদার রস বিভিন্ন প্রকারের ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি আটকায়।

--গবেষণায় দেখা গেছেখাবার খাওয়ার এক ঘন্টা আগে 1.2 গ্রাম আদার পাউডার খাওয়ার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং খুব দ্রুত আমাদের পাকস্থলী খালি করতে সাহায্য করে।

--একটি পুরনো গবেষণায় দেখা গেছিল আদা, লেবু এবং ব্রাউন সুগার এর মিশ্রণ মদ্যপান করার আগে খেলে মদ্যপান পরবর্তী হ্যাংওভার বা মাথা ধরা, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি সম্ভাবনা কমে যায়।

--যে যেসকল ডায়াবেটিস রোগীদের হাই ব্লাড প্রেসার আছে, লিকার চায়ের সাথে সামান্য আদা খাওয়ার ফলে ব্লাড প্রেসারে সামান্য উপকারিতা দেখা যায় গেছে।



সাধারণ ক্ষেত্রে আদা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী এবং নিরাপদ কিন্তু বেশি পরিমাণে খেলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে, যেমন--

--গর্ভাবস্থা--
গর্ভাবস্থাকালীন আদা খাওয়া নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক দেখা যায়। সাধারণত 1 থেকে 3 শতাংশ পরিমাণ আদা এই সময় খাওয়া নিরাপদ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে দিনে 1500 মিলিগ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়। বমি বমি ভাব এর জন্য বেশি পরিমাণ আদা খেলে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। তবে বেশির ভাগ গবেষণায় সকালে বমি বমি ভাব এর জন্য অল্প পরিমাণ আদা খাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

--সাধারণত ডেলিভারির কিছু আগে থেকে আদা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয় কারণ এর ফলে রক্তপাতের বৃদ্ধি হতে পারে।

--বেশি পরিমাণ আদা সেবনের ফলে ডায়রিয়া হতে পারে কারণ এটি ইন্টেসটাইন এর মধ্যে দিয়ে খাদ্য এবং মল এর চলাচল এর গতি বৃদ্ধি করে ফলে ইন্টেসটাইন বিশ্রাম পায় না।

--রক্তপাত--
আদায় এন্টি প্লেটলেট প্রপার্টি থাকার জন্য বেশি পরিমাণ খাবার ফলে রক্তপাতের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

--বেশি পরিমাণে আদা খেলে বুক জ্বালা বা অম্বল হতে পারে 

--যারা ব্লাড প্রেসার এর জন্য ঔষধ সেবন করছে তাদের আদা খাওয়া বেশি পরিমাণে খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলা হয় কারণ, এর ফলে হার্টের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে।
--যেহেতু এটি ব্লাড সুগার লেভেল কম করতে সাহায্য করে তাই ডায়াবেটিস এর ওষুধের সাথে এটি খেলে ব্লাড সুগার লেভেল অতিরিক্ত কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

--এছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওরাল এলার্জি সিনড্রোম এর কারণে আদা খেলে মুখে চুলকানি বা জ্বালা হতে এবং খাদ্যের স্বাদ হারানো ইত্যাদি দেখা গেছে।

*** আমার এই পোস্টটি বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে গঠিত। আপনার যদি কোন শারীরিক সমস্যা থাকে তবে নিয়মিত আদা খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই নিজের চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে এটি সেবন করবেন। এই পোষ্টের বিভিন্ন সূত্র লিঙ্কগুলি দিলাম ---

১. https://www.webmd.com/vitamins/ai/ingredientmono-961/ginger
২. https://www.medicalnewstoday.com/articles/265990
৩. https://timesofindia.indiatimes.com/life-style/food-news/7-side-effects-of-ginger-you-must-be-aware-of/photostory/71594784.cms?picid=71594894
৪.https://www.stylecraze.com/articles/dangerous-side-effects-of-ginger/

Sunday, 21 June 2020

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রহস্যময় ভুতুড়ে বাহিনী (Ghost Army )--

মিত্রপক্ষের দেশগুলি অর্থাৎ 'এলাইড'রা এবার একটু আলাদা রকমের চিন্তাভাবনা শুরু করলো
এই সময়টা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ সময় ছিল যেখানে তারা একটি অপ্রতিরোধ্য শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছিল তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা বাধ্য হয়ে একটু উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনার সাহায্য নিচ্ছিল, তারা বিভিন্ন রকম অদ্ভুত প্রকারের পরিকল্পনার সাহায্য নিয়ে ছিল; যেমন - বাদুর বোমা, পায়রা দ্বারা পরিচালিত মিসাইল, বোমা বহনকারী কুকুর, মৃতদেহকে গুপ্তচরবৃত্তির কাজে লাগানো, এমনকি প্যারাসুটিং কুকুরের বাহিনী। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল ইউএসএ'র তৈরি এক বাহিনী যারা অভিনয়, স্পেশাল ইফেক্ট খুব বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহার করত

1944 সালে ইউএস আর্মির একটি ইউনিট গঠিত হয় যাদের 23 তম হেডকোয়ার্টারের স্পেশাল বাহিনী বলা হত এবং তাদের কার্য খুব অসাধারন ছিল তাদের মাল্টিমিডিয়াম কৌশলগত ছলচাতুরি বা প্রতারণার ব্যবহার করতে হতো এবং শত্রুপক্ষের কাছে নিজেদের আসল বাহিনী হিসাবে ছলনা করে তাদের দিকে শত্রুদের নজর নিয়ে আসা অথবা ভয়ের সৃষ্টি করা এবং আসল সেনাবাহিনীর গতিবিধি থেকে তাদের দূরে রাখা।

এটা এমন একটি ইউনিট ছিল যেখানে সৃজনশীলতার জন্য পুরস্কার দেওয়া হতো এবং এখানে যোদ্ধা সৈনিক এর জায়গায় তারা আর্টিস্ট, আর্কিটেক্ট, অভিনেতা, সেট ডিজাইনার, ইঞ্জিনিয়ারদের উপর কেন্দ্রীভূত করে নিয়োগ করা হতোএই সকল শিল্পীদের বিভিন্ন আর্ট স্কুল, এডভার্টাইজিং এজেন্সিদের মাধ্যমে খুঁজে বের করা হতো। যদিও এদের মধ্যে কিছু সত্তিকারের আর্মিতে কর্মরতদেরও নেওয়া হতো যেমন- 406 তম কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ার ডিভিশন থেকে-- যারা নিরাপত্তা দায়িত্বে ছিল, 603 তম ক্যামোফ্লাজ ইঞ্জিনিয়ার বাহিনী থেকে এবং 332 তম সিগন্যাল সার্ভিস কোম্পানি স্পেশাল বাহিনী থেকে তাদের সাহায্য করার জন্য। এই বাহিনীকে 'ঘোস্ট আর্মি' বলা হত যারা বিভিন্ন কলাকৌশল বা ছল চাতুরীতে পরিপূর্ণ ছিল।

তারা নকল উর্দি বা ইউনিফর্ম পড়তো, নকল পরিচয় পত্র বা পরিচয় চিহ্ন সমৃদ্ধ এবং তাদের যন্ত্রপাতি গুলি এবং অস্ত্রশস্ত্র গুলি নকল ছিল, ফাঁপা নকল যুদ্ধের ট্যাংক, নকল আর্টিলারি, নকল যুদ্ধ বিমান।
এই ধারণাটি আমেরিকানরা 1942 সালে ব্রিটিশদের থেকে পেয়েছিল যখন তারা 'অপারেশন বার্তাম কোড' নামে আল আলামিনের যুদ্ধে একই রকম কলাকৌশল ব্যবহার করেছিল।তাদের সংগ্রহে ফাঁপা বা নকল খেলনা ছিল। যেমন- ট্যাংক, কামান, জিপ, ট্রাক, এয়ারপ্লেন যেগুলি সব এক বিশেষ কম্প্রেসার দিয়ে হাওয়া ভরা ছিল এবং যা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাজিয়ে ফেলা যেত। এই নকল গাড়ি এবং অস্ত্রশস্ত্র গুলি এত নিখুঁতভাবে তৈরি করা হত এবং খুবই আসল দেখাতো, এমনকি ফাঁপা ট্যাংক গুলির জন্য চলাচলের নকল ছাপও তৈরি করা হতো যা দূর থেকে বা উপর থেকে দেখে আসল মনে হতো। এর সাথেবিশালাকৃতির স্পিকারে নকল আওয়াজও তৈরি করা হতো, যা শুনে মনে হতো এক বিশাল ইনফ্যান্ট্রি ইউনিট বা এয়ারফিল্ড উপস্থিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পরিস্থিতি অনুযায়ী এগুলির পরিবর্তন করা হতো । এই সকল কিছুর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল, শত্রুর কাছে আসলের মত দেখতে এক নকল সেনাবাহিনী বানানো, মাত্র 1100 সংখ্যক মানুষের হলেও তাকে দেখতে বহুগুণ বিশাল মনে হতো । এমনকি নকল গাড়ির মধ্যে মাত্র দুজন সৈনিক বসে থাকত এবং কৌশলের মাধ্যমে দেখানো যেটি সেনা ভর্তি গাড়ি ছিল। এছাড়া নকল অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে কিছু আসল আর্টিলারি এবং গাড়ি রাখা হতো কিছুটা বাস্তবতা দেওয়ার জন্য।

এমনকি শোনা যায়  এই ইউনিট আসল ইউনিটের আসল অপারেটরদের মিমিক্ করে বা গলা নকল করে নকল রেডিও ট্রান্সমিশন প্রেরণ করত যা মিথ্যা ও ভুল ভাল তথ্যে ভর্তি থাকতো। এর সাথেই তারা বিভিন্ন রকম ধোঁয়া এবং আলোর ঝলকের ব্যবহার করে বিভ্রমের সৃষ্টি করত। রিক বেয়ার এই ইউনিটের ওপর একটি বই লিখেছিলেন, যার নাম ছিল 'দ্য গোস্ট আর্মি অফ ওয়ার্ল্ড ওয়ার 2' ।

এই বাহিনীর কাজ করার প্রক্রিয়া খুবই জটিল ছিল এবং 'ক্যাম্প পাইনে' একত্রিত হওয়ার পর এই ইউনিটটি ইউরোপের উদ্দেশ্যে রওনা দিল, তাদের এই কার্যকলাপ ফলপ্রসূ হয় কিনা দেখার জন্য। ঠিক 'ডি ডে' এর আগে 1944 সালের মে মাসের প্রথম দিকে 'ঘোস্ট আর্মি' ইউনাইটেড কিংডম এর স্ট্র্যান্ড ফোর্ডের কাছে অবতরণ করলো এবং নরম্যান্ডির জন্য তাদের গোপন কার্যকলাপ শুরু করে দিল। পরবর্তীকালে তারা ফ্রান্স এবং রাইন ভ্যালিতে কাজ করেছিল। কখনো কখনো ফ্রন্টলাইন এর বিপদজনক সীমানায় তারা কাজ করেছিল।

তাদের সবচেয়ে বিখ্যাত কাজ সম্ভবত 1945 সালের মার্চে ঘটেছিল। এই সময় তারা 40,000 সৈনিকের দুইটি ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের অনুকরণ করে তাদের সাজসরঞ্জাম বানিয়েছিল। যার ফলে জার্মানরা ভাবতে বাধ্য হয় যে, সেইখান থেকেই আক্রমণটি আসবে। যদিও আমেরিকা আসলে এর আরো দক্ষিণ দিকে, রাইন নদীর ধার দিয়ে 30 এবং 79 তম ইনফ্যান্ট্রি ইউনিটকে আক্রমণ করতে পাঠিয়েছিল এবং তারা বলতে গেলে কোনো বাধা ছাড়াই ভিতরে চলে যেতে সক্ষম হয়েছিল। যুদ্ধ শেষ এর রিপোর্ট অনুযায়ী এই ঘোস্ট আর্মি 22 টি আলাদা আলাদা মিশনে সাফল্য অর্জন করেছিল। এই কার্যকলাপের তারা হয়ত তাদের কিছু সংখ্যক সদস্যকে হারিয়েছিল কিন্তু এই সকল অসাধারণ কৌশল ও চাতুরী মাধ্যমে তারা হাজার হাজার সৈনিক ও মানুষের প্রাণ বাচিয়েছিল।

যুদ্ধের পরে 23 তম হেডকোয়ার্টারের এই স্পেশাল ট্রুপদের বেঁচে থাকা সদস্যদের এই কার্যকলাপের বিষয়ে গোপন থাকতে শপথ নেওয়ানো হয়, তাদের এই কলাকৌশলের সামগ্রী লুকিয়ে রাখা হয় এবং পুরো অপারেশন 'ক্লাসিফায়েড' তকমা দেওয়া হয়। এই ইউনিটের সাথে যুক্ত বহু মানুষ পরবর্তীকালে আর্ট বা কলা জগতে প্রচুর সাফল্য পায়। যেমন- বিখ্যাত ফ্যাশন আইকন বিল ব্লাস, ফটোগ্রাফার আর্ট কেন এবং আর্টিস্ট এলসওয়র্থ কেলি। কয়েক দশক ধরে এই বাহাদুর ও সৃজনশীল কলাকুশলীদের কথা কেউ জানত না কিন্তু 1996 সালে যখন সরকার থেকে এই প্রজেক্টটি ডি ক্লাসিফাইড করা হয় তখন সারাবিশ্ব এদের সম্পর্কে জানতে পারে। যদিও প্রজেক্ট এর অনেক কিছু এখনো টপ সিক্রেট রাখা হয়েছে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে একটু আলাদা ধরনের ঐতিহাসিক ঘটনা গুলির মধ্যে বিখ্যাত হয়ে থাকবে।

Saturday, 13 June 2020

নিকোলা টেসলা এবং তার কিছু অবর্ণনীয় রহস্য--

নিকোলা টেসলার মৃত্যুর পর তার বেশ কিছু গবেষণা অসমাপ্ত থেকে যায় যেগুলি দুনিয়া কাঁপানো আবিষ্কার হতে পারত।
এই আবিষ্কার গুলিকে ঘিরে এখনো বহু রহস্য জড়িয়ে রয়েছে, এত দশক পরেও মানুষেরা এগুলো নিয়ে ধন্দে রয়েছে।



ওয়ারলেস এনার্জি--

1901 সালে টেসলা বিখ্যাত বিনিয়োগকারী জে পি মরগানের থেকে লং আইসল্যান্ডের উত্তর তীরে একটি 185 ফুট লম্বা মাশরুমের মত আকৃতির টাওয়ার প্রজেক্ট করার জন্য 1,50,000 ডলার বিনিয়োগ পেতে সক্ষম হন। এই টাওয়ারটি সমুদ্রের জাহাজ এবং আটলান্টিক মহাসাগরের অপর প্রান্তে মেসেজ, টেলিফোন এবং ছবি ট্রান্সমিট বা আদান-প্রদান করার জন্য গড়ে তোলা হতো। এই টাওয়ারটির নাম দেওয়া হয়েছিল 'ওয়ার্ডডেনক্লিফ টাওয়ার'। এর কাজ শুরু হয়ে যায় এবং টেসলা চেয়ে ছিলেন ওয়ারলেস অর্থাৎ তারবিহীন ভাবে পাওয়ার ডেলিভারি বা বৈদ্যুতিক শক্তির আদানপ্রদান। তিনি বিশ্বাস করতেন, রেডিও এবং মাইক্রোওয়েভ এর উপর তার এই গবেষণার সক্ষম হলে তিনি মিলিয়ন ভোল্ট বৈদ্যুতিক শক্তি হাওয়া এর মাধ্যমে ট্রান্সমিট করে পুরো নিউইয়র্ক শহরকে বৈদ্যুতিক শক্তির যোগান দিতে পারতেন। যদিও টেসলার এই মহান কর্মযজ্ঞের জন্য মর্গান অতিরিক্ত অর্থের যোগান দিতে অসম্মতি জানায়। কিছু সূত্র মতে, মর্গান আসলে টেসলার এই প্ল্যান এর জন্য তার ফান্ড বন্ধ করে দিয়েছিলেন যখন তিনি জানতে পারেন, টেসলার এই প্ল্যান এর ফলে তার অন্যান্য এনার্জি সেক্টর গুলির বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। টেসলা 1906 সালে এই প্রজেক্টটি বন্ধ করে দেন এবং ওয়ার্ডেনক্লিফ টাওয়ারটি 1917 সালে ভেঙে ফেলা হয়।



ইলেকট্রিক পাওয়ারড সুপারসনিক এয়ার্শিপ--

বাল্যকাল থেকে টেসলা আকাশযান সম্পর্কে খুবই উৎসাহী ছিল। ওয়ার্ডইনক্লিফের ব্যর্থতার পর থেকে তিনি তার ইলেকট্রিক্যাল এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর জ্ঞানের সাহায্যে এভিয়েশনের ব্যাপারে গবেষণা শুরু করেন। রিকনস্ট্রাকশন ম্যাগাজিনের 1919 সালের জুলাই একটি আর্টিকেলে টেসলা তার একটি সুপারসনিক এয়ারক্রাফট তৈরি করার গবেষণা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। এই বিমানটি পৃথিবীর থেকে আটমাইল উঁচু দিয়ে উড়তে সক্ষম হতো এবং যাত্রীদের নিউইয়র্ক থেকে লন্ডনে মাত্র 3 ঘণ্টায় পৌঁছে দেওয়া যেত।
এয়ারক্রাফট গুলিতে গ্রাউন্ডে থাকা পাওয়ার প্লান্ট বা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলি থেকে ওয়ারলেস বা তার বিহীন ভাবে বিমান গুলিতে বৈদ্যুতিন যোগান দেওয়া যেত যার ফলে এগুলিতে জ্বালানি বহন করার দরকার ছিলনা।





ডেথ বিম--

শেষ জীবনেও টেসলার সৃষ্টিশীল মস্তিষ্কে বিভিন্ন দূরদর্শী ঝলক দেখা দিয়েছিল। তার 78 তম জন্মদিনে তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসে বলেছিলেন, তিনি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কারের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন এই আবিষ্কার টি ব্যবহার করতে পারলে প্রায় লাখ লাখ সৈন্য কে মুহূর্তে নিঃশেষ করে দেওয়া যাবে। এই মিলিটারি অস্ত্রটি শব্দের প্রায় 48 গুণ বেশি দ্রুত মারকিউরি বা পারদকণাকে একটি ভ্যাকিউম চেম্বারের ভিতরে এক্সিলারেট করে একটি হাই ভেলোসিটি বিম নিক্ষেপ করতে সক্ষম। পরিষ্কার আকাশে ভয়ঙ্কর শক্তিটি প্রায় 250 মাইল দূরত্ব থেকে 10,000 সংখ্যক এর কাছাকাছি শত্রু বিমান কে ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। যদিও সংবাদমাধ্যম এটিকে 'ডেথ বিম' আখ্যা দেয় কিন্তু নিকোলা টেসলা এটিকে 'পিস বিম' বলে মনে করতেন। কারণ এটি অতর্কিতে আক্রমণ কারী শত্রুদের বিমান ধ্বংস করে মানুষের জীবন বাঁচাতে পারত। অনেকটা অদৃশ্য চীনের প্রাচীরের মত যদিও এটি কয়েক লক্ষ গুণ দুর্ভেদ্য হত। টেসলা তারে পার্টিকেল বিম অস্ত্রটিকে অনেক দেশের সরকারকে অফার করেছিলেন যার মধ্যে ইউনাইটেড স্টেটস ও ছিল; কিন্তু কেবলমাত্র সোভিয়েত ইউনিয়ন এর মধ্যে উৎসাহ প্রকাশ করেছিল এবং 1939 সালে তারা পার্টিকেল টেস্ট করেছিল।

Tuesday, 9 June 2020

পৃথিবীর অন্যান্য প্রজাতির মানুষের বিলুপ্তি রহস্য --

এইবারের পোস্টটা একটু অন্যরকম লাগতে পারে, এই পোস্টটা আপনাকে হয়তো ভাবাবে যে আজ আমরা যে ভিনগ্রহী বা অন্যান্য বুদ্ধিমান প্রজাতি নিয়ে উৎসাহ দেখাই, তা সত্যি হতে পারতো আমাদের সাথেই আমাদের মতো বুধ্ধিমান প্রজাতির বসবাস করতো কিন্তু হয়তো আমাদের দোষেই তারা নেই অথবা আমরা সেই দোষ না করলে হয়তো আমাদের অস্তিত্ব আজ থাকতো না। 


তিন লাখ বছর আগে পৃথিবীর বুকে 9 প্রকার মনুষ্য প্রজাতি হেঁটে বেড়াত। এখন কেবলমাত্র এক প্রকারের বর্তমান। 'নিয়ান্ডার্থল' বা 'Homo Neanderthalensis' -- এরা মূলত শিকারি ছিল এবং ইউরোপের ঠান্ডা প্রান্তর গুলিতে নিজেদের অভিযোজিত করে ফেলেছিল। কাছাকাছি 'ডেনিসোভান' এশিয়াতে বসবাস করছিল এবং আরো আদিম প্রকৃতির 'হোমো ইরেকটাস' ইন্দোনেশিয়ায় বসবাস করত এবং 'হোমো রোডেসিএনসিস'রা মধ্য আফ্রিকায় বসবাস করত। কিছু ক্ষুদ্রাকার মস্তিষ্কের প্রজাতিরাও  তাদের সাথে টিকে ছিল; যেমন- সাউথ আফ্রিকার 'হোমো নালেদি', ফিলিপিন্সের 'হোমো লুজনেন্সিস' এবং ইন্দোনেশিয়ার 'ফ্লোরেশিয়েন্সিস' - যাদের 'হবিট' ও বলা হত। এছাড়া ছিল চীনের রহস্যময় 'রেড ডিয়ার' গুহামানবেরা।আমরা খুব দ্রুত এই সকল অন্যান্য প্রজাতির গুলোকে খুঁজে পেয়েছি এবং আশা করি আরও কিছু খুঁজে পাওয়া বাকি আছে। বর্তমানে এরা সকলেই বিলুপ্ত। 
হোমো ইরেক্টাস 

এই সকল অন্যান্য প্রজাতিদের হারিয়ে যাওয়া বিজ্ঞানের ভাষায় একটি 'মাস এক্সটিংশন' এর লক্ষণ। কিন্তু সেরকম কোনো বড় রকমের পরিবেশগত বিপর্যয়, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, আবহাওয়ার পরিবর্তন, উল্কাপাত এ জাতীয় কিছু এই সময় পাওয়া যায়নি। কিন্তু এই সময়টির মধ্যে একটি ঘটনা ঘটেছিল যা এদের বিলুপ্তির কারণ বলে মনে করা হয় সেটি হলো এক নতুন প্রজাতির ছড়িয়ে পড়া; যা 26,0000 থেকে 35,0000 বছর আগে ঘটেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং এই প্রজাতি ছিল 'হোমোসেপিয়েন্স'। বর্তমান মনুষ্য প্রজাতির আফ্রিকার বাইরে ছড়িয়ে পড়া 'ষষ্ঠ মাস এক্সটিংশন' এর কারণ। 40,000 বছরের একটু বেশি সময় ধরে এই পর্যায়ক্রমে 'আইস এজ' বা শৈত্য যুগের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিলুপ্তির সাথে রেইন ফরেস্ট গুলির ধ্বংস এই সভ্যতার কারণে হয়েছিল। আমরা সত্যি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রজাতি। আমরা রোমশ ম্যামথদের, গ্রাউন্ড শ্লথ, Moas দের বিলুপ্ত হওয়া পর্যন্ত শিকার করে গিয়েছিলাম, আমরা খেত খামার করার জন্য অরণ্য এবং সমতল ভূমি ধ্বংস করেছিলাম।পৃথিবীর অর্ধেক স্থলভূমির আমরা পরিবর্তন ঘটিয়েছি, আমরা পৃথিবীর আবহাওয়া পরিবর্তন ঘটিয়েছি।

কিন্তু আমরা সবচেয়ে ভয়ংকর ছিলাম অন্যান্য প্রজাতির মানুষদের পক্ষে। কারণ, আমরা ভূমি এবং সম্পদ সংগ্রহের জন্য তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করেছিলাম। ইতিহাসে ভর্তি ভর্তি এরকম উদাহরণ আছে যেখানে মানুষরা যুদ্ধ করেছে এবং অন্যান্য দলকে উৎপাটন করে, স্থানচ্যুত করে, এলাকা দখল করেছে। রোমের কার্থেজ ধ্বংস করা থেকে শুরু করে পাশ্চাত্য দেশের আমেরিকা দখল, অস্ট্রেলিয়ায় ব্রিটিশ কলোনাইজেশন এর উদাহরণ, এছাড়া ইরাক, বস্নিয়া, রওয়ান্ডা, দারফুর এবং মায়ানমারের সম্প্রতিকালে জেনোসাইড অর্থাৎ জাতিগত বিলুপ্ত করা আমরা দেখতে পেয়েছি। 
নিয়ান্ডারথাল ও হোমো সেপিয়েন্স

মনুষ্য স্বভাবে ভাষা এবং অস্ত্র ব্যবহারের মতই যুদ্ধে বা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়া এবং জেনোসাইড ঘটানো একটি বিতর্কিতভাবে সহজাত ঘটনা। এমন কোন ভারী যুক্তি পাওয়া যায়নি যার থেকে আমরা ভাবতে পারি প্রথমদিকের হোমোসেপিয়েন্সরা কম অধিগ্রহণকারী, কম হিংস্র, সহনীয় বা নম্র ছিল।
বিভিন্ন দার্শনিক প্রাচীনকালের 'হান্টার গ্যাদারা'র বা শিকারি প্রকৃতির মনুষ্য প্রজাতি কে শান্তিপ্রিয়, উদার স্বভাবের, দেখিয়ে চিত্রায়িত করেছেন এবং তর্ক করেছেন যে, আমাদের স্বভাব নয় -- আমাদের পরিবেশ, শিক্ষা-সংস্কৃতি হিংস্রতা সৃষ্টি করে। কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্য, ফিল্ড স্টাডি এবং প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য বর্ণনা করে যে, পুরাতন প্রজাতিদের  যুদ্ধ খুবই তীব্র, প্রাণঘাতী ছিল যা ছড়িয়ে পড়েছিল। তারা গরিলা প্রক্রিয়ায় যুদ্ধ যেমন- 'রেড' বা 'অ্যাম্বুষ' বা আচমকা হামলা করা, তার সাথে নিওলিথিক অস্ত্রশস্ত্র যেমন-- মুগুর, বর্ষা, কুঠার, ধনুক ইত্যাদির সাথে যথেষ্ট কার্যকরীভাবে ধ্বংস সাধন করতে সক্ষম হয়েছিল। এই গোষ্ঠী গুলি বা সমাজ গুলির মধ্যে হিংস্রতা, যুদ্ধ, মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল এবং এই যুদ্ধ গুলিতে প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় মানুষ প্রতি অনেক বেশি আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটেছিল।
হোমো নালেদি 

প্রত্নতাত্ত্বিক দের পাওয়া কঙ্কাল এবং বিভিন্ন আর্টিফ্যাক্ট দেখলে বোঝা যায় যে প্রাচীনকাল কতটা হিংসাত্মক ছিল। উত্তর আমেরিকার 9000 বছরের পুরনো 'কেনেউইক ম্যান' যার পেলভিসে বর্শা বিদ্ধ করা হয়েছিল। কেনিয়ার 10 হাজার বছরের পুরনো 'নাটারুক' সাইটে 27 জন পুরুষ মহিলা ও শিশুদের নির্মম নরসংহার এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। 

অন্যান্য মানব প্রজাতিগুলি তুলনামূলক ভাবে বেশি শান্তিপ্রিয় ছিল এমনটা নয়। যেমন- পুরুষ শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে হিংসাত্মক ঘটনা দেখে অনুমান করা যায় মানুষের বিবর্তনের সাথে বহু আগে থেকেই যুদ্ধ শব্দটি জড়িয়ে রয়েছে। 'নিয়ান্ডার্থল' এর অস্থিগুলি থেকে যুদ্ধর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ 'ট্রমা প্যাটার্ন' লক্ষ্য করা গেছে। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে বাস্তবিক অস্ত্র এবং তার ব্যবহার 'হোমো সেপিয়েন্স' দের একটি মিলিটারি অ্যাডভান্টেজ দিয়েছিল। প্রাচীন হোমোসেপিয়েন্সদের অস্ত্রাগারে সম্ভবত 'জাভেলিন' এবং 'স্পিয়ার থ্রোয়ারস' এর মত নিক্ষেপ করার অস্ত্র বা 'প্রজেক্টাইল ওয়েপন' ছিল। এছাড়া 'থ্রোয়িং স্টিক' এবং 'ক্লাবস' ছিল।
এছাড়া জটিল সরঞ্জাম এবং সংস্কৃতি আমাদের আরও সাহায্য করেছিল একটি ব্যাপক পরিসরে পশুপাখি এবং শস্য চাষাবাদ করতে, বড় গোষ্ঠীকে খাদ্য যোগান দিতে এবং আমাদের প্রজাতিকে সংখ্যার দিক থেকে একটি কৌশলগত প্রাধান্য দিতে।
ডেনিসোভান 

কিন্তু গুহাচিত্রে, খোদাই করা নিদর্শন এবং মিউজিক্যাল যন্তপাতিগুলিতে আরো ভয়ঙ্কর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে; 'জটিল চিন্তাভাবনা এবং যোগাযোগ করার ক্ষমতা'। আমাদের সহযোগ করা, পরিকল্পনা , কৌশল, পরিচালনা করা এবং ছলনা করার ক্ষমতাই আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্র।

ফসিল রেকর্ড গুলির অস্পষ্টতার জন্য এই ধারণাগুলিকে পরীক্ষা করা কঠিন। কিন্তু ইওরোপে যেটি একমাত্র স্থান যেখানে তুলনামূলক ভাবে সম্পূর্ণ আর্কিওলজিকাল রেকর্ড পাওয়া যায়, সেখানকার ফসিল বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, আমাদের আসার কয়েক হাজার বছরের মধ্যে 'নেয়ান্ডার্থালরা' নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।  কিছু ইউরেশিয়ান মানুষের মধ্যে 'নিয়ান্ডারথাল' ডিএনএর ট্রেস পাওয়া গেছে যা প্রমান করে, তারা বিলুপ্ত হওয়ার আগে আমরা কেবলমাত্র তাদের স্থান দখল করিনি, আমরা তাদের সংস্পর্শেও এসেছিলাম এবং প্রজননও করেছিলাম। 

এছাড়াও প্রাচীন মানুষদের সাথে অন্যানদের সংস্পর্শে আসার অন্যান্য নিদর্শন পাওয়া গেছে। পূর্বের এশিয়ান, পলিনেশিয়ান এবং অস্ট্রেলিয়ান গোষ্ঠীদের মধ্যে ডেনিসোভানদের ডিএনএ পাওয়া গেছে। 
অনেক এশিয়ান বাসিন্দাদের মধ্যে অন্যান্য প্রজাতির ডিএনএ পাওয়া গেছে। যেমন -"হোমো ইরেকটাসের"। আফ্রিকান জিনোমে অন্য 'আর্কাইক' প্রজাতির ডিএনএ পাওয়া গেছে। 
এই বিভিন্ন প্রজাতির সাথে আমাদের প্রজননের তথ্য বা চিহ্ন থেকে বোঝা যায় এই প্রজাতি গুলি আমাদের সংস্পর্শে আসার পরই বিলুপ্ত হয়। কিন্তু কেন আমাদের পূর্বপুরুষরা তাদের নিকটাত্মীয়দের ধ্বংস বা নির্মূল করেছিল ?

এর উত্তর জড়িয়ে আছে আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে। অন্যান্য প্রজাতিগুলির মতো মানুষও বংশবৃদধি করে চলেছিল।কিন্তু ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, আমরা প্রতি ২৫ বছরে আমাদের সংখ্যা দ্বিগুন করেছিলাম এবং একসময় আমরা সঙ্গবদ্ধ  শিকারীরূপে নিজেদের পরিণত করেছিলাম। আমাদের শিকার করার কেউ ছিল না। 

শিকারি বা প্রিডেটর আমাদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে না রাখার ফলে এবং যথাযথ পরিবার পরিকল্পনার অভাবে জন বিস্ফোরণের সৃষ্টি হয় এবং  রসদের অভাব দেখা দেয়। এরপরে আরো বৃধ্ধি, খরা, প্রতিকূল আবহাওয়া, অন্যান্য বিভিন্ন কারণে যখন খাদ্যের অভাব দেখা দেয়, খাদ্যের জন্য গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সংঘর্ষ লেগে যায় এবং এলাকা দখল শুরু হয়। এর ফলে যুদ্ধই একমাত্র ও সবচেয়ে কার্যকরী উপায় থেকে যায় যা জনসংখ্যাকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে।

আমারা সম্ভবত কোনো পরিকল্পনা করে অন্যান্য প্রজাতিদের নির্মূল করিনি। এগুলি সভ্যতার একটি সংবদ্ধতার নমুনা ছিল যা যুদ্ধের রূপ পায়। এর অন্তিম পরিণামে অর্থাৎ আক্রমণের পর আক্রমণ , 
পরপর হানা দেয়া, এভাবে এলাকার পর এলাকায় আধুনিক মানুষ তার শত্রুর বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে গেছে এবং তাদের স্থান দখল করেছে। তবুও নেয়ান্ডার্থালদের বিলুপ্ত হতে অন্তত কয়েক হাজার বছর লেগে যায়।  এর কারণ, প্রাচীন হোমসেপিয়েন্সদের সব সুযোগ সুবিধা ছিল না। যদিও তারা সংখ্যায় বেশি ছিল এবং চাষ আবাদ তাদের যোগান দিতো এবং বিভিন্ন মহামারী রোগ যেমন - স্মল পক্স , Flu এবং হাম - তাদের প্রতিপক্ষকে  বিধ্বস্ত করে দিয়েছিলো। কিন্তু এতো সময় পর নিয়েন্ডারথালরা আমাদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল, এত সময় ধরে আমাদের আটকে রাখার অর্থ দাঁড়ায়, তারা অবশ্যই আমাদের বিরুদ্ধে অনেক যুদ্ধে জয় লাভ  করেছিল। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, তাদের বুধ্ধিমত্তার 
সাথে আমাদের তেমন দূরত্ব ছিল না।

আজকে আমরা আকাশের দিকে তাকাই আর ভাবি এই বিশ্বে আমরা একা কিনা, কল্পবিজ্ঞান দেখে আমরা অবাক হয়ে ভাবি যে, অন্য বুধ্ধিমান প্রাণীর সাথে দেখা হলে তা কেমন হবে, যারা আমাদের মতোই, কিন্তু আমরা নই।  এটা খুবই দুঃখজনক যে একসময় আমরা এটা করেছিলাম বা এটা ঘটেছিলো এবং তার ফলে তারা আজ নেই। 

Thursday, 4 June 2020

ফরেস্ট ফ্যান এবং তার লুকানো গুপ্তধন রহস্য ---

ফরেস্ট ফ্যান গুপ্তধন এমন একটি গুপ্তধন, অনুমান করা হয় এর মূল্য প্রায় 1 মিলিয়ন ডলারেরও অনেক বেশি এবং এটি রকি মাউন্টেনে আর্ট ডিলার এবং লেখক ফরেস্ট ফ্যান কোথাও একটা লুকিয়ে রেখেছিলেন।

2016 সালের 20 আগস্ট ফ্যান দাবি করেছিলেন যে, তার জ্ঞানতঃ এখনো কেউ সেটি খুঁজে পায়নি। 2017 সালের মে মাসে ফরেস্ট ফ্যানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে তার দেওয়া নয়টি সূত্রকে কেউ সঠিকভাবে বুঝতে পেরেছে কিনা; তিনি উত্তরে বলেছিলেন, "আমি এখনো এমন কাউকে পাইনি যে আমায় সূত্রগুলো সঠিক পর্যায়ক্রমে বলতে পেরেছে।" ফরেস্ট জানিয়েছিলেন যে গুপ্তধন টির 200 ফুট এবং 500 ফুটের মধ্যে অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল।


ফরেস্ট ফ্যান ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্সের থেকে অবসর নেওয়ার পর তার স্ত্রী পেগের সাথে একটি আর্ট গ্যালারি চালাতেন। এই গ্যালারিটি নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফে তে অবস্থিত এবং এখানে আর্টিফ্যাক্ট থেকে শুরু করে ফাইন আর্ট সবকিছু বিক্রি হতো এবং যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছিল। 1988 সালে ফেনের ক্যান্সার ধরা পড়েছিল এবং অসুস্থ থাকাকালীন তার মাথায় এই বুদ্ধি আসে যে, একটি গুপ্তধন ভর্তি সিন্দুক কোথাও লুকিয়ে রাখা এবং সেটি মানুষ খুঁজতে যাবে। তিনি গোল্ড নাগেট, দুর্লভ কয়েন, জুয়েলারি এবং জেম স্টোনের সাথে ভর্তি করেছিলেন এবং এর সাথে তার অটোবায়োগ্রাফি একটি অলিভ জারে ভরা ছিল। তিনি চেয়েছিলেন, এটিকে লুকিয়ে রাখতে যাতে এই গুপ্তধন পরবর্তীকালে তার জ্ঞান অথবা অজ্ঞানতা কেউ লাভ করতে পারে। যদিও তিনি 79 অথবা 80 বছর বয়স অবধি অপেক্ষা করেছিলেন এই গুপ্তধন লুকানোর জন্য।

সিন্দুকটি অর্থাৎ 'রমানাস্ক' এর বাক্সটিকে রকি মাউন্টেন, সান্তা ফে এবং ক্যানাডিয়ান বর্ডারের মাঝামাঝি কোন স্থানে 5000 ফিট এর উচ্চতায় উচ্চতার উপর লুকিয়ে রেখেছিলেন এবং এটি কোন মাইন্ বা কবরস্থান অথবা কোন স্থাপত্যের কাছাকাছি না। বাকি সূত্রের জন্য আপনাকে কবিতাটি পড়তে হবে।


দুইজন মানুষ এই গুপ্তধনের খোঁজে মারা গিয়েছিলেন--

রান্ডি বিলু যিনি 2016 সালের জানুয়ারিতে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন এবং তাকে সেই বছরের ই জুলাই মাসে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল বিলুর প্রাক্তন স্ত্রী অন্যান্যদের বলেছিলেন যে, তিনি ফ্যান এর গুপ্তধন টিকে গুজব ভেবেছিলেন।


গ্র্যান্ড জংশন এর পাস্তর প্যারিস ওয়ালেস তার পরিবার কে বলেছিল, তিনি একটি লুকিয়ে রাখা গুপ্তধন খুঁজছেন এবং পরবর্তীকালে 2017 সালের 14 জুন বুধবার যখন তিনি পূর্বপরিকল্পিত তার পারিবারিক সাক্ষাতে অনুপস্থিত থাকেন, তখন সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। তার গাড়িটি টাওস জংশন ব্রীজের কাছে পার্ক করা অবস্থায় পাওয়া যায় এবং তার দেহটি 57 মাইল দূরে নিচের দিকে খুঁজে পাওয়া যায়। দুই বছর বাদে ফ্যান সিবিএস সানডে মর্নিং অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে, তিনি গুপ্তধন টিকে পুরনো মাইন গুলি থেকে দূরে রেখেছেন কারণ, এগুলি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।

যখন এই গুপ্তধন খোঁজার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দুর্ঘটনা নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় তিনি বলেছিলেন, "আমি নিজে কোন সিদ্ধান্ত নেইনি এক লাখের উপর মানুষ এই জিনিসটিকে খুঁজছে এবং ভবিষ্যতেও খুঁজে যে যেতে চাইছে তাদের আপনি কি বলবেন?" 


ফেনের মতে, ব্রোঞ্জের তৈরি সিন্দুকটি 1100 খ্রিস্টাব্দের। এটি সত্যি একটি সৌভাগ্য নিয়ে আসতে পারে। এতে ছিল --
--265 টি সোনার ইউ এস এবং মিডল ইস্টার্ন কয়েন
--একটি 17 শতকের স্প্যানিশ সোনার রিং যা নিউ মেক্সিকোর গলেষ্ট বেসিনে স্প্যানিশ অথবা ইন্ডিয়ান সাইট থেকে পাওয়া
--একটি প্রাক কলম্বিয়ান সোনার ব্যাঙ এর মূর্তি 
--আলাস্কা থেকে সংগৃহীত একটি গোল্ড ব্যাগার 
--দুটি প্রাচীন চাইনিজ জেড হিউম্যান ফেস
--1898 সালে মেসা ভার্দে তে  রিচার্ড ওয়েদারীলের পাওয়া তুরকুইস ডিস্ক বিড
--254 টি রুবিস, দুটি সিলন সাফিরেস, 8 টি এমেরাল্ড এবং অনেকগুলি ছোট হিরে
--দুটি প্রি কলম্বিয়ান সোনার ব্রেসলেট
--একটি 2000 বছরের পুরনো তাই রুনা এবং শিনু নেকলেস 
--একটি সোনার জাগুয়ারের থাবা 
--একটি সোনার ব্যাং
--একটি 20000 শব্দের আত্মজীবনী যেটা এত ছোট করে লেখা যে একে পড়তে ম্যাগনিফাইং গ্লাসের দরকার হবে এবং এটি একটি ছোট গ্লাস জারে এমনভাবে সংরক্ষণ করা আছে যেটি বাইরের থেকে এটিকে রক্ষা করবে। 
--এছাড়া দুটি সোনার নাগেট যেগুলি একেকটির ওজন এক কেজির মতো এবং কয়েক শত অন্যান্য ছোট ছোট নাগেট।

Monday, 1 June 2020

অবিনাশী বাহিনী ( The Immortals) প্রাচীন পারস্যের শ্রেষ্ঠ সেনাদল --


প্রথম পারস্য সাম্রাজ্য যাকে 'আখিমেনিদ' সাম্রাজ্য বলা হত তাদের এক শ্রেষ্ঠ যোদ্ধার দল ছিল। হেরোডোটাস এদের 'ইম্মর্টাল' বা 'অবিনাশী সেনা' নামকরণ করেছিলেন। এই বাহিনীটি 10,000 সংখ্যক যোদ্ধা বিশিষ্ট ভয়ঙ্কর একটি পদাতিক সেনাবাহিনী ছিল। এদের শক্তি বা সংখ্যা কখনো কমত না। এরা একসাথে রাজকীয় রক্ষি এবং পদাতিক বাহিনী হিসাবে কাজ করেছিল; পারস্যের ইতিহাসে, বিশেষ করে পার্সিয়ান সাম্রাজ্য বিস্তৃতির সময় এবং গ্রিক পার্সিয়ান যুদ্ধে এদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

এদেরকে অবিনাশী বলা হতো কারণ, এদের গঠন এমনভাবে ভাবে হতো, যাতে 10,000 শক্তিশালী এই বাহিনীর কোন সদস্য আহত বা নিহত হলে সঙ্গে সঙ্গে তার স্থানে অন্য কেউ চলে আসতো। তাই বহিরাগতদের কাছে এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য অবিনশ্বর এর মত ছিল। তাদের মধ্যে কারোর প্রতিস্থাপন হলে সেটিকে তার পুনরুজ্জীবন এর মত দেখা হতো।

হেরোডোটাস বলেছিলেন, এরা খুবই বাস্তব বুদ্ধি সম্পন্ন, যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্র সমৃদ্ধ ছিল এবং তাদের অস্ত্র-গুলি সোনায় মোড়ানো ছিল যা ঝকমক করত। এদের অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে ছিল এক ধরনের বিশেষ ঢাল, ছোট বর্ষা, তলোয়ার অথবা বড় আকৃতির ছোড়া, তীর এবং ধনুক। তারা এক ধরনের বিশেষ পাগড়ী মাথায় পড়তেন যাকে একপ্রকার পার্শিয়ান 'টিয়ারা' বলে মনে করা হতো । বিভিন্ন স্থানে এর বর্ণনা পাওয়া গেছে যাতে বলা হয়েছে এক ধরনের কাপড় তারা মুখকে ধুলো এবং ময়লা থেকে রক্ষা করার জন্য জড়িয়ে পড়তো। বলা হতো, গ্রিকদের তুলনায় এই অবিনাশী সেনারা কম অস্ত্র বহন করত। হতে পারে তাদের কাছে কম সংখ্যক অস্ত্র ছিল কিন্তু তারা অত্যন্ত দক্ষ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং সুগঠিত ছিল --যা তাদের শত্রুদের উপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলত এবং যথেষ্ট ভয়ের সৃষ্টি করত।

তারা যখন যাতায়াত করত তাদের সাথে সওয়ারি যানবাহন, তাদের মহিলা, ভৃত্য এবং খাবার দাবার ও অন্যান্য যোগান থাকতো। এই ইউনিটের অংশ হওয়া সহজ ছিল না। সৈনিক বা যোদ্ধাদের এর অংশ হওয়ার জন্য আবেদন বা দরখাস্ত করে অপেক্ষা করতে হত এবং এই বাহিনীর জন্য মনোনীত হওয়া খুবই সম্মানের বিষয় ছিল ও অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যেত।

এই অবিনাশিরা বহু বিজয় অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
যখন সাইরাস দি গ্রেট 539 খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলন দখল করতে এসেছিলেন, তখন প্রথম এরা প্রায় দৈবশক্তি এর মত মর্যাদা পেয়েছিল। এরপর 525 খ্রিস্টপূর্বাব্দে কম্বিসেস 2 এর মিশর দখলের সময় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এবং এছাড়াও দারায়ুস 1 যখন 520 এবং 513 খ্রিস্টপূর্বাব্দে যথাক্রমে পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধ এবং সৈথিয়া দখল করে তখন তাদের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। অবিনাশী সেনারা 480 খ্রিস্টপূর্বাব্দে 'ব্যাটেল অফ থার্মোফিলি' বা থার্মোফিলির যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল; এই সময় গ্রীকরা একটি সরু রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে পার্সিয়ানদের অগ্রগমন থামিয়ে  দিয়েছিল।তখন ইম্মর্টাল রা অন্য একটি রাস্তা দিয়ে গ্রিকদের পেছন থেকে আক্রমণ করেছিল।

তারা খুবই শক্তিশালী ছিল এবং তাদের পরাক্রম, না কমে যাওয়ার সংখ্যা, কৌশল এবং প্রযুক্তির জন্য তাদের বহু সেনাবাহিনী বা শত্রুরা ভয় করত। দুর্ভাগ্যবশত, এই অবিনাশী সেনার সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য কিছুটা সীমিত। মূলত হেরোডোটাসের লেখা থেকে এদের বেশিরভাগ তথ্য পাওয়া গিয়েছিল; এছাড়া এদের অন্যান্য তথ্য গুলো পাওয়া খুবই কষ্টকর। আলেকজান্ডার দি গ্রেট এর ঐতিহাসিকরা 'অ্যাপেল বিয়ারার' বা 'আপেল বাহক' নামে খ্যাত এক প্রকার সেরা সৈন্যবাহিনীর কথা উল্লেখ করেছিলেন। তাদের আপেল বাহক বলা হতো কারণ তাদের বর্ষার ধারালো অংশটি আপেলের মতো আকৃতির ছিল। অনেক পণ্ডিতের মতে তারাই এই ইম্মর্টাল ছিল। 

যদিওএই অবিনাশী সেনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য কম পাওয়া যায়, তবুও প্রাচীনকাল থেকে তারা সামরিক শক্তির একটি প্রতীক হয়ে এসেছে। বিভিন্ন জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তাদের কথা প্রায়শই বর্ণনা করা হয়েছে।

বিখ্যাত কিছু চলচ্চিত্র যেমন 1963 সালে 'দা 300 স্পার্টান', 1998 সালের কমিক বই '300' এবং পরবর্তীকালে এটি অবলম্বনে তৈরি আধুনিক চলচ্চিত্র '300'; এছাড়া হিস্টরি চ্যানেলের একটি ডকুমেন্টারি যার নাম ছিল -  'লাস্ট স্ট্যান্ড অফ 300' এগুলিতে এদের উল্লেখ পাওয়া গেছে যা এদেরকে হয়তো আরো অনেক বছর বাঁচিয়ে রাখবে। এই 300 স্পার্টানদের বিরুদ্ধেই বলা হয় প্রথম এই অবিনাশী সেনারা পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছিল। স্পার্টান যোদ্ধাদের বিষয়ে পরে এক পর্বে আলোচনা করব।