Pages

Tuesday, 1 December 2020

ভিনগ্রহী মহাকাশরক্ষী সোলার ওয়ার্ডেন, একজন হ্যাকার ও আমেরিকান সরকার --

গ্যারি ম্যাককিনন 1966 সালে স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ ছিল। 14 বছর বয়সে প্রথম কম্পিউটার পাওয়ার পর তিনি তা শিখতে শুরু করেন। পরবর্তীকালে 'ওয়ার গেমস' এর মত চলচ্চিত্র এবং হুগো কর্নওয়ালের 'দা হ্যাকারস' হ্যান্ডবুক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি হ্যাকিংএর জগতে আরো গভীরে যেতে থাকেন; একটা সময় তিনি এর নেশায় পড়ে যান। একটি ছোট কোম্পানিতে তিনি সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসাবে চাকরি করতেন কিন্তু তার এই হ্যাকিং এর প্রতি আকর্ষণ তার কাজের প্রতি সময় কমিয়ে আনা এবং হ্যাকিং এর প্রতি সময় বাড়িয়ে যাচ্ছিল ফলস্বরূপ, তিনি কাজ হারান।

যদিও এই সময়ে তিনি কিছুটা স্বনির্ভর হওয়ায়  ততটা বিব্রত হননি বরং তার শখের প্রতি আরো বেশি সময় ও সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি লন্ডনে তার প্রেমিকার আত্মীয়র বাড়িতে অর্থাৎ যেখানে তার প্রেমিকা থাকতো সেখানে তার সাহায্যে নিজের ক্ষমতাকে আরো বৃদ্ধি করতে থাকেন। নিজের হ্যাকার নেম রাখেন 'সোলো'। 



কিছু সময় ধরে এটি তার কাছে কিছুটা শখ বা আকর্ষণীয় গেমের মত ছিল কিন্তু পরবর্তীকালে এটি তাকে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মিলিটারি কম্পিউটার হ্যাক করার জন্য বিখ্যাত করে তোলে যা ম্যাককিননকে এক অন্ধকার, অত্যন্ত গোপন মিলিটারি প্রজেক্ট, এলিয়েন এবং ইউ এফ ও র জগতের সাথে জড়িয়ে ফেলে। 

আমরা জানি অনেক ঘটনা আছে যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের সরকার বাইরে বের হতে দেয় না বা ছড়িয়ে পড়তে দেয় না এবং তা গোপন করে রাখে বা চাপা দিয়ে দেয়। 1990 সালের শেষের দিকে ম্যাককিনন এরকমই কিছু প্রমাণ খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন এবং তিনি স্থির করেছিলেন যে তার হ্যাকিং এর দক্ষতা এই বিষয়ে কাজে লাগাবেন। একসময় তিনি বলেছিলেন, "আমি এইসকল 'কন্সপিরেসি থিওরি' বা 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' বিশ্বাস করিনা; তাই আমি ঠিক করেছিলাম যে আমি নিজে বিষয়গুলি দেখব।"



 তিনি তার এই মিশনে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত রেখেছিলেন এবং নিজের সমস্ত সময় সরকারি এবং মিলিটারি ফাইল এবং সিস্টেমের তল্লাশিতে ব্যয় করতে থাকলেন। একটা সময় এগুলি যেন তাকে বলতে গেলে গিলে ফেলে ছিল। প্রসঙ্গত বলে রাখি, তার এই কাজগুলি সম্পূর্ণ বেআইনি ছিল।

তিনি পরবর্তীকালে বলেছিলেন, "আমি নিজের অপরাধ সম্পর্কে সচেতন ছিলাম কিন্তু আমি একটি অন্তর্দ্বন্দ্বের মধ্যে ছিলাম। আমি একদম নিশ্চিত ছিলাম এবং সেখানে অত্যন্ত ভালো ভালো সব প্রমান ছিল যা প্রমাণ করে যে আমেরিকান সরকারের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির কিছু গোপন অংশর ভিনগ্রহী প্রযুক্তির সাথে সম্পর্ক আছে, যা বর্তমান পৃথিবীতে ব্যবহার করলে আমরা বিনামূল্য দূষণমুক্ত, সম্পূর্ণরূপে পরিবেশবান্ধব শক্তির ব্যবহার করতে পারব। আমার মনে হয় কেউ যদি এই তথ্যগুলি গোপন করে রাখে তা আমেরিকান আইনের সম্পূর্ণরূপে বিরোধী।আমি সেই মুহুর্তে জেলে যাওয়ার কথা ভাবিনি, আমি নিজের কথা ভাবিনি, এমনকি এই সময় আমি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতাম না, দিনের পর দিন একই পোশাক-আশাক পরে, এমন কি রাত জেগে এই তদন্ত গুলি করছিলাম।"




তার মতে, তিনি তার তদন্তে বিভিন্ন অদ্ভুত অদ্ভুত রকমের তথ্য খুঁজে পাচ্ছিলেন যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্য একটি বিষয় হলো - এক প্রকারের গোপন মহাকাশের বাহিনী। একটি কন্সপিরেসি থিওরিতে দাবি করা হয়েছিল যে, নাসা এবং সরকারের গোপন সংস্থা জনসন স্পেস সেন্টারে একটি ইউ এফ ওকে নিয়ে পরীক্ষা করছে। এই ঘটনা শুনে ম্যাককিনন নাসা এবং ইউ এস স্পেস কমান্ড ফাইলে নিজের তদন্ত শুরু করেন বিষয়টি নিজে যাচাই করার জন্য তিনি নাসাকে হ্যাক করেন এবং পরবর্তীকালে তিনি প্রচণ্ড বিস্মিত করা তথ্য খুঁজে পান।




তিনি বলেন, "একজন নাসার ফটোগ্রাফিক এক্সপার্ট বলেছিল জনসন স্পেস সেন্টারে এর কাছে বিল্ডিং 8 এ তারা নিয়মিত হাই রেজুলেশন স্যাটেলাইট ইমেজিংয়ে তোলা ফটো থেকে - ইউ এফ ওর ফটোগুলি মুছে দিত। আমি নাসার সিস্টেমে লগ-ইন করেছিলাম এবং এই ডিপার্টমেন্টে অ্যাক্সেস করতে পেরেছিলাম। তাদের পিকচার ফাইল গুলিতে অত্যন্ত বিশাল বিশাল হাই রেজুল্যুশনের ইমেজ স্টোর করা ছিলো, যার মধ্যে ফিল্টার এবং ননফিল্টার অথবা প্রসেস এবং আনপ্রসেসড করা ফাইলগুলি ছিল। ছবিগুলির একেকটি ডাউনলোড করার জন্য আমার dial-up 56K কানেকশন খুবই স্লো ছিলো এবং যখন তারা এই ছবিগুলি প্রসেস করছিল, তখন তাদের ডেস্কটপের উপর আমার কন্ট্রোল ছিল। ফলে 4-bit কালারে এবং  লোস্ক্রীন রেসোলিউশনে অ্যাডজাস্ট করে আমি এই ছবিগুলি দেখতে পাচ্ছিলাম। এই বস্তুগুলি রুপোলী, কিছুটা চুরুটের মতো আকৃতির বস্তু ছিল এবং দুই দিকেই জিওডেসিক স্পেয়ার যুক্ত ছিল, অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল এবং স্যাটেলাইট থেকে তোলা এই বস্তুগুলির ছবি সম্পর্কে কোন রেফারেন্স পাওয়া যায়নি। এই বস্তুগুলি দেখে মনে হয় না এগুলি মানুষের তৈরি অথবা আমাদের তৈরি কোন কিছুর মধ্যে এই বস্তুগুলি পড়ে না। যেহেতু আমি জাভা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছিলাম আমি কেবল মাত্র এই ছবিগুলির স্ক্রিনে ভেসে ওঠা অংশ দেখতে পাচ্ছিলাম; ফলে এগুলি আমার টেম্পোরারি ইন্টারনেট ফাইলে যাচ্ছিল না। এরকমই একটি সময়ে নাসার কেউ একজন বুঝতে পেরেছিলো আমি কি করছি এবং আমাকে ডিসকানেকটেড করে দিয়েছিল। আমি এক্সেল স্প্রেডশিটের এক্সেস ও পেয়েছিলাম। এর মধ্যে একটির শিরোনাম ছিল 'নন টেরেস্ট্রিয়াল অফিসার্স' এটার মানে হয়তো এই না যে, সেখানে ছোট সবুজ রংয়ের মানুষ আকৃতির প্রাণীর কথা বলা হয়েছে। আমার মনে হয় এটার মানে এই যে, এটি পৃথিবী সম্পর্কিত নয়। আমি একটি লিস্ট পেয়েছিলাম, যা ছিল 'ফ্লাইট টু ফ্লাইট ট্রান্সফার্স' যাতে অনেকগুলি জাহাজের নাম পেয়েছিলাম। আমি এগুলি তদন্ত করে দেখেছিলাম, এগুলি কোনোটি 'ইউ এস নেভি' এর জাহাজ ছিলনা। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এদের কাছে একপ্রকার স্পেসশিপ আছে যা ভিনগ্রহী। এতে এমন সব ইউ এস এয়ার ফোর্স অফিসার ও কর্মীদের নাম আছে যাদের নাম পৃথিবীর অন্য কোন রেজিস্টরের পাওয়া যায়নি। এর সাথে এতে 'শিপ টু শিপ' ট্রান্সফারের তথ্য আছে কিন্তু আমি এই সকল জাহাজের নাম অন্য কোথাও খুঁজে পাইনি।"




ম্যাককিননের মতে, 1980 সাল থেকে 'সোলার ওয়ার্ডেন' নামে একটি স্পেস প্রোগ্রাম অপারেশন চলে আসছে এবং এর দানায় দানায় এতো রহস্য যা সাধারন মানুষ ভাবতে পারবে না। এই প্রোগ্রামটি আসলে গ্রহ গুলির মধ্যে এক প্রকার  বর্ডার বা সীমানা হিসাবে কাজ করে; যা আমাদের ক্ষতিকারক ভিনগ্রহীদের থেকে রক্ষা করে এবং এটি 'ইউএস নেভাল নেটওয়ার্ক' এবং স্পেস অপারেশন কমান্ড' এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এর আরো গভীরে গিয়ে তিনি এই প্রোগ্রাম সম্পর্কিত আরো চমকপ্রদ বিভিন্ন তথ্য খুঁজে পান। তার তথ্য অনুযায়ী, এই 'সোলার ওয়ার্ডেন' এর অন্তর্গত আটটি বিশালাকৃতি চুরুট আকৃতির মাদারশীপ আছে যার একেকটির আকৃতি কয়েকটি ফুটবল মাঠের সম্মিলিত আকৃতির সমান।  এছাড়া 43 টি ছোট স্কাউট শিপ এবং অন্যান্য বিভিন্ন উড়োজাহাজ, তার সাথে অ্যাডভান্সড বিম জাতীয় অস্ত্রের সম্ভার এবং এই সকল কিছু তৈরি করা হয়েছে এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রযুক্তি ব্যবহার করে যার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে বিভিন্ন গোপন বেসে যার মধ্যে এরিয়া ৫১ একটি। 



এগুলি সত্যিই অবাক করা লাগলেও ম্যাককিনন কখনো তার কথাগুলি থেকে পিছু হটেনি। এই সোলার ওয়ার্ডেন প্রজেক্ট ছাড়াও তিনি ইউ এফ ও এবং ভিনগ্রহী সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য এমনকি 'দা ডিসক্লোজার প্রজেক্ট' নামক একটি ডকুমেন্ট থেকেও পর্দা সরান। 'ডিসক্লোজার প্রজেক্ট' সম্পর্কে তিনি বলেন, "এই বইটি 400 টি টেস্টিমোনিয়াল যুক্ত; যাতে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের থেকে নিউক্লিয়ার মিসাইল লঞ্চের দায়িত্বে থাকা সকলের নাম আছে এবং যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য প্রত্যক্ষদর্শীদের নাম আছে যারা এলিয়েন প্রযুক্তির পুনর্ব্যবহার অথবা ভিনগ্রহী জাহাজ ধ্বংস বা দখল করা সম্পর্কিত বিষযয়ে বক্তব্য রেখেছিল এবং এদের সকলেই ইউএফও টেকনোলজির কথা বলেছিল যা মধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণ মুক্ত অর্থাৎ অ্যান্টি গ্রাভিটি প্রযুক্তি সম্পন্ন।  এছাড়া 'ফ্রি-এনার্জি' যেগুলির উৎস ভিনগ্রহ এবং তারা এই যানগুলি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিল। 

দুর্ভাগ্যবশতভাবে, তিনি এগুলি নিয়ে খুব বেশি গভীরে যেতে পারেননি। যেহেতু এগুলি সম্পূর্ণ বেআইনি ছিল, ফলস্বরূপ 2002 সালে ম্যাককিননকে নর্থ লন্ডনের উড গ্রিনের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 
তাকে ফেব্রুয়ারি 2001 থেকে মার্চ 2002 পর্যন্ত 13 মাস সময়কালিন ধরে 97 টি ইউনাইটেড স্টেটস মিলিটারি এবং নাসার কম্পিউটার হ্যাক করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তারা দাবি করেন, এই কারণে তাদের প্রসেসে প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল, তাকে অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন সংবেদনশীল ফাইলের পরিবর্তন এবং ডিলিট করা, তার সাথে কিছু সিস্টেমের পরিবর্তন, ডেটা, একাউন্ট ফাইল এবং পাসওয়ার্ড কপি করা মিলিটারি অপারেশনে নাক গলানো, সেনসিটিভ এবং গোপনীয় বিভিন্ন তথ্যকে ঝুঁকিতে ফেলা এবং হুমকি ভরা মেসেজ পাঠানোর জন্য আরোপিত করা হয়।




অফিশিয়ালদের মতে, এগুলি সবই পূর্বনির্ধারিত এবং পরিকল্পিত ছিল, যা ইউ এস সরকারকে বিপদে এবং ব্ল্যাকমেইল করার উদ্দেশ্যে। যেহেতু এই ঘটনাটি ঠিক 9/11 এর ঘটনাটির পর ঘটেছিলো, তাই ইউএস সরকার এটিকে যথেষ্ট গম্ভীরভাবে নিয়েছিল এবং তার সম্মুখ ট্রায়ালের ব্যবস্থা করেছিল, যার ফলে ম্যাককিনন এর শাস্তি প্রায় 70 বছর পর্যন্ত কারাগার হতে পারত। এরপর থেকে এর বিপক্ষে অসংখ্য আপিল এবং জুডিশিয়াল রিভিউ রাখা হয়েছে। যার অর্থ এই যে, তাকে এখনো আমেরিকার বুকে এই সকল শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে, আবার নাও হতে পারে। যদিও তাকে নিজের দেশে সমর্পণ করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে।

আমরা কেবল এই ভেবে অবাক হচ্ছি যে, এই সব ধরনের আইন ভেঙে সে আসলে কি খুঁজে পেয়েছিল? সত্যি কি সে টপ সিক্রেট ইউএফও এবং এলিয়েন বা ভিনগ্রহের সংক্রান্ত সরকারি ফাইল গুলি দেখতে পেয়েছিল? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সে কি সত্যিই এলিয়েন টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি এক প্রকার স্পেস ফোর্স এর প্রমাণ উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে? পৃথিবীতে প্রচুর এরকম মানুষ পাওয়া যায় যাদের দাবি এর সাথে মিল খায়; তাহলে আমরা এ বিষয়ে কি ভেবে নিতে পারি? যদিও সে এখনও অবধি তার যুক্তির স্বপক্ষে কোন শক্তিশালি প্রমাণ দিতে পারেনি এবং তার বিরোধীপক্ষের মতে হ্যাকিং করার সময় সে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গাজার সেবন করে থাকতো তাহলে কি এই সব একটি গল্প মাত্র? আমরা এর উত্তরের প্রত্যাশায় রইলাম.....

No comments:

Post a Comment