Sunday, 31 January 2021

ভাইরাল ইউ এফ ও ভিডিও কি পাকিস্তানের আকাশে ভিনগ্রহীদের আনাগোনা প্রমাণ?

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ইউএফওর ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়েছে এবং এটি পাকিস্তানের একটি বিমান থেকে তোলা হয়েছিল, এ নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরছি --

গত 23 জনুয়ারি পাকিস্তান ইন্টার্নেশনাল এয়ারলাইনস এর করাচি থেকে লাহোরগামি একটি বিমান 'পি কে 304'; পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এবং পাকিস্তান ইন্টার্নেশনাল এয়ারলাইনস মুখপাত্র আব্দুল্লাহ খানের মতে, পাঞ্জাব প্রদেশের রহিম ইয়ার খান অঞ্চলের কাছাকাছি 35,0000 অল্টিটিউডে  দুপুর চারটে থেকে চারটে তিরিশের কাছাকাছি সময়ে বিমানের পাইলটরা প্রথম একটি চকচকে বস্তু উড়ে যেতে দেখে যা তাদের মধ্যে একজন ভিডিও রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন এবং 41 সেকেন্ডের এই ভিডিওটি সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়।



পাইলট এবং কেবিন কর্মীদের মতে সূর্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও এই ইউ এফ ওটি অত্যন্ত উজ্জ্বল ছিল।

যদিও পি আই এ এর মুখপাত্রের মতে এই বস্তুটি কি ছিল তা এত তাড়াতাড়ি বলা ঠিক হবে না।

ক্যাপ্টেন ফায়সল কুরেশির বর্ণনা অনুযায়ী বস্তুটি যেন একটি মেটালের রিং এর মত কিছুতে ঘেরা ছিল এবং যার মাঝখান থেকে প্রচন্ড আলো নির্গত হচ্ছিল।

অনেকেই দাবি করেছেন, সম্ভবত এটি কোন ওয়েদার বেলুন বা আবহাওয়ার সংক্রান্ত গবেষণায় ব্যবহৃত বেলুন হতে পারে



কিন্তু পাকিস্তান আবহাওয়া দপ্তরের মুখপাত্র খালিদ মালিকের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের কাছে 2 ধরনের বেলুন আছে প্রথমটি 6 থেকে 7000 ফিট উচ্চতা পর্যন্ত উঠতে পারে এবং অন্যান্য গুলি 70000 ফিট উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারে এই বেলুনগুলো এক ধরনের 'radiosonde' বহন করে যা হলো ব্যাটারি পরিচালিত দূরত্ব মাপন যন্ত্র এবং আবহাওয়া দপ্তর এর সূত্র অনুযায়ী, এই দপ্তর অনেক আগেই এটি ব্যবহার বন্ধ করেছে বলে জানা গেছে ;এমনকি 'ডপলার করাচির' জাবেদ মেনন যিনি প্রাইভেট ওয়েদার স্টেশন পরিচালনা করেন তিনিও একই দাবি করেন, এর সাথে এটিও বলেন যে এই radiosonde গুলি রাবারের তৈরি হয় এবং ভিডিওতে যেরকম উজ্জ্বল বস্তু দেখা গেছে সেটা দেখে মনে হয় সেটি অ্যালুমিনিয়াম বা অন্যান্য কোন প্রকার ধাতু অথবা কাচের তৈরি।



এছাড়া কোনো কমার্সিয়ালি ড্রোন এখনো এই উচ্চতায় উড্ডয়নে সক্ষম নয় .

এদিকে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির স্পেস সাইন্টিস্ট জাভেদ স্বামী দাবি করেছেন, এই রহস্যময় চকচকে বস্তুটি আসলে ইউ এফ ও না, একটি লেন্টিকুলার মেঘ হতে পারে তিনি বর্ণনা করেছেন যে কমার্শিয়াল পাইলটরা এই ধরনের মেঘ দেখে থাকে এগুলোকে অনেক সময় এ রকম দেখতে হয়।

Monday, 25 January 2021

আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত ও অমীমাংসিত রহস্য --


আজ এমন একটি ঘটনা তুলে ধরছি যা এতটাই রোমাঞ্চকর যে ঘটনাটি বর্তমানের বিভিন্ন চলচ্চিত্র বা সাইন্স ফিকশন এর সাথে তুলনা করা যায়। কিন্তু এই ঘটনাটি বাস্তবে ঘটে ছিল।


ডি বি কুপার বা ড্যান কুপার নামে এই ব্যক্তি 1971 সালে পোর্টল্যান্ড থেকে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে যাওয়া একটি বিমান হাইজ্যাক করেন এবং মুক্তিপণের টাকা নিয়ে প্যারাসুটে করে পালিয়ে যান। তার পিছনে প্রচুর পরিমাণে মানুষ নিযুক্ত করা হয় কিন্তু তাকে আর কোনদিনও খুঁজে পাওয়া যায়নি, যার ফলে আমেরিকার ইতিহাসে এটিই অন্যতম অমীমাংসিত রহস্য হিসাবে থেকে যায়।



এই ব্যক্তিটি নিজের নাম 'ড্যান কুপার' হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন কিন্তু সংবাদ করার সময় ভুলবশত এক সাংবাদিক তার নাম 'ডি বি কুপার' শুনেছিলেন যা পরবর্তীকালে সকলের মুখে প্রচলিত হয়ে পড়ে।

1971 সালের 24 নভেম্বর আমেরিকায় ঠিক 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' এর পরের দিন 40 এর কাছাকাছি বয়স্ক ও 6 ফুট লম্বা এক ব্যক্তি 'north-west অরিয়েন্ট এয়ারলাইনস ফ্লাইট 305' এর একটি 20 ডলারের টিকিট কাটেন। তিনি তার নাম জানান ড্যান কুপার যা পরবর্তীকালে বানানো নাম বোঝা যায়। সেই সময়ে এয়ারপোর্টের সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনকার মত এতটা কঠোর ছিল না। যাই হোক, পোর্টল্যান্ড থেকে টেক অফ করার পর তিনি ফ্লাইট এটেনডেন্ট কে একটি নোট দেন যাতে লেখা ছিল, তার ব্রিফকেসে একটি বোমা আছে; এরপর তিনি ব্রিফকেসটি খুলে দেখান। তার মধ্যে বিভিন্ন রকম তার, লাল রংয়ের লাঠির মত আকৃতির বস্তু এবং ব্যাটারি ইত্যাদি ছিল। কুপার চারটি প্যারাসুট এবং 2,00,000 ডলার 20 ডলারের বিলে (যার মূল্য 1.2 মিলিয়ন তখনকার হিসেবে ছিল) মুক্তিপণ দাবি করেন। 

ফ্লাইট সিয়াটেল অবতরণ করার পর যখন কর্তৃপক্ষ তাকে টাকা এবং প্যারাসুট দেয়, কুপার 36 জন যাত্রীকে মুক্ত করে দেন। যদিও দুজন পাইলট, একজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন ফ্লাইট এটেনডেন্টকে প্লেনে আটকে রাখেন; এরপর তেল ভরার পরে তিনি পাইলটকে মেক্সিকো সিটির উদ্দেশ্যে প্লেন নিয়ে যেতে বলেন; তাঁর আদেশ অনুসারে প্লেন 10,000 ফিট উঁচুতে 200 নটের কম গতিবেগে চালানো হয়। 

রাত 8 টার কাছাকাছি সিয়াটেল এবং নাভেদার রেনোর মাঝামাঝি স্থানে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনে করা হয় এটি ওয়াশিংটনের এরিয়েলের কাছাকাছি) কুপার প্লেনের রিয়ার স্টেপ নামান এবং ঝাঁপ দেন এরপর তিনি গায়েব হয়ে যান;এরপর এফবিআই ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘতম এবং পরিশ্রান্তিকর একটি তদন্ত চালায় যাকে 'NORJAK' (North-west Highjacking) নাম দেওয়া হয়। 




প্রথমদিকে এজেন্সি মনে করেছিল, কুপার প্লেন এবং এলাকার দুটিকেই ভালোভাবে জানতেন এবং তিনি মিলিটারিতে কাজ করেছিলেন - সম্ভবত প্যারাট্রুপার হিসেবে। পরবর্তীকালে যদিও মনে করা হয়, যে তিনি কোন অভিজ্ঞ স্কাইডাইভার ছিলেন না কারণ, এই ঝাঁপ দেওয়াটি খুবই বিপদজনক ছিল এবং সে হয়তো লক্ষ্য করেনি তার রিজার্ভ প্যারাসুট ট্রেনিংয়ে ব্যবহার করার জন্য সেলাই করে বন্ধ করা ছিল। এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম পাঁচ বছরে প্রায় 800 জন এর কাছাকাছি সন্দেহভাজনকে তদন্ত করা হয় এবং সবাইকেই সন্দেহ তালিকা থেকে এক এক করে বাদ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে অনেককে ডি এন এ পরীক্ষার মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়, এই ডিএনএ সেই 'টাই' থেকে পাওয়া গিয়েছিল যেটি কুপার ঝাঁপ দেওয়ার আগে খুলে ফেলেছিল। 

একজন অন্যতম সন্দেহভাজন এর নাম ছিল 'রিচার্ড ফ্লয়েড ম্যাকয়' যাকে এই ঘটনার কয়েক মাস পরে কিছুটা এরকমই অপরাধ করতে গিয়ে গ্রেফতার করা হয়; যদিও তাকে সন্দেহ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় কারণ, দুজন ফ্লাইট এটেনডেন্ট এর বর্ণনার সাথে তার কোন মিল খাচ্ছিল না। 


অনেকে মনে করেছিলেন, কুপার, যিনি একটি বিজনেস সুট ট্রেঞ্চ কোট এবং লোফার পড়েছিলেন, হয়তো বাঁচতে পারেননি। এই অল্টিটিউডে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় 200 মাইলের বেশি ছিল এবং যে প্যারাসুটটি তিনি নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, তা হয়ত সঠিকভাবে কাজ করেনি। এছাড়া সম্ভবত তিনি কোনো অসমতল এবং খুব গভীর জঙ্গলে মাঝামাঝি অবতরণ করেছেন এইভাবে বেশ কিছু বছর ধরে যখন এক এক করে সকল তদন্তের পথ অবরুদ্ধ হয়ে আসতে থাকলো ঠিক তখনই 1980 সালে একটি বালক 5,800 ডলার ভর্তি একটি প্যাকেজ পেল যা তদন্তকে একটি নতুন মোড় দিয়ে দিল। এটিকে এরিয়ালের থেকে 20 মাইলের কাছাকাছি এবং নর্থ পোর্টল্যান্ডের কলম্বিয়া নদীর তীরে একটি স্থানে পুঁতে রাখা হয়েছিল। এই টাকাগুলির সিরিয়াল নাম্বার এর সাথে মুক্তিপণের 20 ডলারের বিল গুলির সিরিয়াল নাম্বার মিলে গিয়েছিল; যদিও এরপরে আরো একটি ব্যাপক তদন্ত চালানোর পরও এর বেশি কিছু খুঁজে পাওয়া গেল না। যদিও এফ বি আই কিছু কিছু টিপস পেতে থাকলো কিন্তু 2016 সালে অবশেষে এজেন্সি সরকারিভাবে তদন্তটি বন্ধ করে দিল এই বলে যে, এই তদন্তের পেছনে যে পরিমাণ পরিশ্রম ও পুঁজি দিতে হচ্ছে তা অন্য অনেক তদন্তে কাজে লাগবে। এই অমীমাংসিত রহস্যটি পুরো দেশকে রোমাঞ্চিত করে দিয়েছিল এবং ডি বি কুপার কিছুটা কিংবদন্তির মত হয়ে গিয়েছে যা প্রচুর গান কবিতা এবং চলচ্চিত্রের অনুপ্রেরণা হয়েছে। বর্তমানে মার্ভেলের লোকী নামক চলচিত্রে এই ঘটনাটি আবার প্রচারিত হয়।