সময় এমন একটি বিষয় যা পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কে ঘিরে রেখেছে এটিকে শুনতে যতটা সহজ মনে হয় একে বোঝা তার থেকে বহু কঠিন বিষয়। মনে করা হয়, সময় এমন একটি বিষয় যা ক্রমশ এগিয়ে চলেছে - একে বদলানো বা পুনর্গঠন করা সম্ভব নয় কিন্তু মাঝে মাঝেই এমন কিছু ঘটনায় এমন কিছু ব্যক্তির আগমন ঘটে যা টাইম ট্রাভেল বা সময়ের মধ্যেকার যাত্রা সম্পর্কে রহস্যের সৃষ্টি করে। সাধারণত বিভিন্ন মানুষ যারা টাইম ট্রাভেল করেছেন বলে দাবি করেন তাদের কাছে তার স্বপক্ষে সেরকম কোনো প্রমাণ না থাকার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ এগুলিকে বিশ্বাস করেনি। আজ আপনাদের সামনে এমন একটি ঘটনার উল্লেখ করব যাতে এই টাইম ট্রাভেল সম্পর্কিত যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।
1951 সালের জুন মাসের রাত প্রায় 11.3০ নাগাদ নিউইয়র্ক টাইমস স্কোয়ারে রাস্তার মাঝে হঠাৎ করে এক ব্যক্তির আগমন ঘটে। ব্যক্তিটি হঠাৎ করে রাস্তার মাঝখানে কি করে এলো তা কেউ বলতে পারে না, কেউই তাকে রাস্তা পার করতে দেখেনি।
এই ব্যক্তিটি অনেক আগেকার পুরনো দিনের পোশাক পরিহিত ছিল। ব্যক্তিটির হাবভাব দেখে পরিষ্কার মনে হচ্ছিল যে সেও সেই স্থানে নিজেকে পেয়ে খুবই হতবাক হয়ে গিয়েছে। সে টাইমস স্কোয়ারে চারদিকে ঝাঁ-চকচকে উচু উচু বিল্ডিং গুলি এবং মোটরগাড়ি গুলিকে খুব বিস্ময়ের সাথে দেখছিল এবং আশেপাশের মানুষেরাও এই ব্যক্তিটিকে ঠিক ততটাই বিস্ময় সহকারে দেখছিল। যখনই এই ব্যক্তিটি রাস্তার ধারে যাওয়ার চেষ্টা করল সামনে আসা একটি গাড়িতে ধাক্কা খেয়ে গুরুতরভাবে জখম হয়ে গিয়েছিল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।
তল্লাশি করার সময় তার কাছ থেকে বেশকিছু অদ্ভুত রকমের এবং অবাক করা জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছিল। যেমন একটি ফাইভ সেন্ট বিয়ারের টোকেন, একটি ঘোড়ার গাড়ি পরিষ্কার করার বিল যাতে ঠিকানা দেওয়া ছিল লাইভেরী আস্তাবল, লেক্সিংটন এ্যাভেনিউ। 1951 সালের কোন এড্রেস বুকে এই ঠিকানাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি এছাড়া প্রায় 70 ডলারের কাছাকাছি পুরনো নোট এবং কয়েন তার কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল এছাড়া একটি বিজনেস কার্ড তার থেকে পাওয়া গিয়েছিল, যাতে নাম লেখা ছিল 'রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ' এবং তাতে অ্যাড্রেস ছিল - "ফিফথ এভিনিউ, নিউইয়র্ক" . তার সাথে একটি চিঠি পাওয়া গেল যেটি ফিফথ এভিনিউ নিউইয়র্ক থেকে ফিলাডেলফিয়া পাঠানোর কথা ছিল এবং সেই লেটারে 1876 সালের স্ট্যাম্প মারা ছিল।
এই ব্যক্তির থেকে পাওয়া সব জিনিস গুলির থেকে একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে সেগুলি পুরনো সময়ের হলেও একদম নতুনের মত অক্ষত ছিল। এই ঘটনাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় ক্যাপ্টেন হুবার্ডকে ক্যাপ্টেন হুবার্ড যখন ফিফথ এভিনিউতে তদন্তের জন্য পৌঁছান তিনি এই ঠিকানায় একটি অফিস পান। যেখানকার লোক এই রুডল্ফ নামের কোন ব্যক্তিকে চিনতেন না। ক্যাপ্টেন হুবার্ড সেই সময়কার সমস্ত টেলিফোন ডাইরেক্টরি এবং অ্যাড্রেস বুক খুঁজে ফেলেন কিন্তু তিনি এই নামের কোন ব্যক্তির সন্ধান পাননি। এই ঘটনার বেশ কয়েকদিন চলে যাওয়ার পর কোন পুলিশ স্টেশনে রুডল্ফ নামের কোন ব্যক্তির হারিয়ে যাওয়ার রিপোর্ট দাখিল করা হয়নি তাই কোন রকম সূত্র না পাওয়া গেলেও ক্যাপ্টেন হুবার্ড তার তদন্ত জারি রাখেন এবং একদিন 1939 সালের একটি এড্রেস বুকে "রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ জুনিয়ার" নামে এক ব্যক্তির ঠিকানা খুঁজে পান ওই ঠিকানায় পৌঁছে জানতে পারেন, এখন ঐ ঠিকানায় অন্য একজন থাকে যারা রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ জুনিয়ারের থেকে এই জমিটি কিনেছিল।
এরপর বিভিন্ন রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ জুনিয়ারের ব্যাংক একাউন্টের তথ্য তিনি খুঁজে পেতে সক্ষম হন। ব্যাংক থেকে জানা যায় রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ জুনিয়ারের ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করা হয়ে গিয়েছে কারণ পাঁচ বছর আগেই তার মৃত্যু হয়েছিল কিন্তু ওনার স্ত্রী তখনও বেঁচে ছিল এবং ফ্লোরিডায় কোথাও বসবাস করছিল।
ক্যাপ্টেন হুবার্ড ফ্লোরিডার ওই ঠিকানায় গিয়ে রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ জুনিয়ারএর সম্পর্কে খোঁজ করেন। সেখানে তার স্ত্রী যা জানিয়েছিলেন তা শুনে ক্যাপ্টেন হুবার্ড হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি জানতে পারেন রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ আসলে রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ জুনিয়ারের পিতা ছিলেন যিনি 29 বছর বয়সে 1876 সালে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তিনি তাঁর বাড়ি থেকে এক সন্ধ্যেবেলা ঘুরতে বেরিয়ে ছিলেন এবং তারপরে আর কোনদিনও ফিরে আসেননি এগুলি শুনে ক্যাপ্টেন হোবার্ট ও তার কর্মীরা হয়রান হয়ে যান কেউ কিছু বুঝতে পারছিল না যে এটা কি করে সম্ভব।
কৌতুহলী হুবার্ড 1876 সালের সমস্ত মিসিং ডায়েরি গুলি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন এবং একদিন তার হাতে আসে রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ নামে এক ব্যক্তির 1876 সালের একটি মিসিং রিপোর্ট। নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত তথ্যতে নিরুদ্দেশ ব্যক্তির যে বিবরণ দেয়া হয়েছিল 1951 সালে পাওয়া রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ এর সাথে হুবহু মিল খায়। ক্যাপ্টেন হুবার্ড এর সংগ্রহ করা এই প্রমাণগুলি থেকে এটা প্রমাণ হয়ে যায় যে মিসিং রিপোর্টের রুডল্ফ এবং 1951 সালে পথদুর্ঘটনায় মৃত রুডল্ফ একি ব্যক্তি কিন্তু প্রশ্ন হল 1876 সালে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি 1951 সালে কি করে পৌঁছে ছিল এই প্রশ্নের জবাব আজ অব্দি কেউ দিতে পারেনি। কেবলমাত্র কিছু থিওরি পাওয়া যায় যা বলে - এটা একটি টাইম ট্রাভেল সম্পর্কিত ঘটনা যাতে রুডল্ফ হঠাৎ করে টাইম ট্রাভেল করে ফেলেছিলেন।.....