Tuesday, 25 October 2022

ডার্টিবম্ব কি এবং রাশিয়া এটি নিয়ে কি অভিযোগ করছে ?

সম্প্রতি রাশিয়া একটি অভিযোগ জানিয়েছে যে ইউক্রেন খেরসন অঞ্চলের ওপর ডার্টি বম্ব ব্যবহার করতে পারে। আপনারা সকলেই আশা করি জানেন, ইউক্রেনের পূর্ব দিকের রুরূহানস্ক থেকে শুরু করে ক্রিমিয়া অব্দি অঞ্চল বর্তমানে রাশিয়ার অধীনে হয়ে গেছে। এই অঞ্চলের মধ্যে ডোনেস্ক, মারিওপোল এই অঞ্চলগুলিও পড়েছে। রাশিয়া দাবি করেছে, এই অঞ্চল গুলো তাদের অধীনে।

মঙ্গলবার ইউক্রেনের এই ডার্টি বম্ব এর বিষয়টি নিয়ে ইউনাইটেড নেশন সিকিউরিটি কাউন্সিলকে সতর্ক করে রাশিয়ান ইউএন অ্যাম্বাসেডর ভেসেলি নেবেনজিয়া ইউ এন সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্টনিও গুত্রেসকে একটি চিঠিতে জানান, 'আমরা কিয়েভ এর দ্বারা ডার্টি বোম্ব ব্যবহার করাকে 'এক্ট অফ নিউক্লিয়ার টেরোরিজম' হিসাবে মনে করবো।'



রাশিয়ান অফিসিয়ালরা পশ্চিমা দেশগুলির ডিফেন্স মিনিস্টারদের ফোন করেছিল, এছাড়া ইউ এস, ফ্রান্স এবং তুর্কির ডিফেন্স মিনিস্টারের সাথেও কথা বলেছিল।
এর সাথে খেরশন অঞ্চলের বাসিন্দাদের রাশিয়ার পক্ষ থেকে সরে যেতে বলা হয় এবং ডার্টি বম্ব সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়। এদিকে ফ্রান্স ইউকে এবং ইউ এস একটি একত্রিত উত্তরে জানায়, তারা এই তথ্যটিকে খারিজ করে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেস্কি এই বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং বলেন 'যত ধরনের ডার্টি খবর রাশিয়া ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।' রাশিয়া এ সম্পর্কে কোন প্রমাণ তুলে ধরেন নি।

এখন প্রশ্নটি হল ডার্টি বোম্ব আসলে কি জিনিস? এটা নিয়ে এত চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে কেন?
এটি একপ্রকার গতানুগতিক বিস্ফোরক তবে অন্যান্য বোবিস্ফোরকের থেকে পার্থক্য হল এর মধ্যে তেজস্ক্রিয় মেটেরিয়াল যেমন ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয় যা পারমাণবিক বোমায় ব্যবহৃত হয় এর ফলে এই বিস্ফোরকটি অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে যায়, এই জন্য একে ডার্টি বোম্ব বলা হয়। কিন্তু এখানে বিষয় হলো নিউক্লিয়ার বোমে যে সকল প্রকার মেটেরিয়াল, রিফাইন করা মেটেরিয়াল ব্যবহার করা হয়, এটি খুব লম্বা ও জটিল, সময় সাপেক্ষ বিষয় হয়। কিন্তু ডার্টি বম্বের ক্ষেত্রে এত রকমের রিফাইন রেডিওএকটিভ মেটিরিয়াল ব্যবহার করা হয় না বরঞ্চ, এর রেডিওএকটিভ উপাদানগুলি খুব সহজে যেমন - হসপিটালের রেডিওএকটিভ ওয়েস্ট থেকে এছাড়া নিউক্লিয়ার পাওয়ার স্টেশন ও রিসার্চ ল্যাবরেটরি থেকে জোগাড় করা রেডিও একটিভ পদার্থ গুলি এক্সস্ট্র্যাক্ট করা হয় ও তার থেকে সাধারণ বিস্ফোরকের মতই তৈরি করা হয়। তবে এই বোমার বিস্ফোরণের ফলে পরিবেশে চারিদিকে তেজস্ক্রিয় উপাদানগুলি ছড়িয়ে পড়ে যা বেঁচে থাকা যে কোন প্রাণীর পক্ষে খুবই ক্ষতিকারক হয়। খুব বড় এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে যাতে সেই এলাকা খালি করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।
এই অস্ত্রটিকে 'ওয়পেন অফ মাস ডিস্ট্রাকশন' বলা হয় কারণ 'ফেডারেশন অফ আমেরিকান সাইন্টিস্ট' একটি ক্যালকুলেশন করে জানিয়েছিল যদি এই প্রকার একটি বিস্ফোরকে যাতে সাধারণত ৫ কেজি টি এন টি থাকে তার সাথে নয় গ্রাম কোবাল্ট মিশ্রিত থাকে এবং এটি ম্যানহাটনের মত শহরে বিস্ফোরণ ঘটানো হয় তবে কয়েক দশক ধরে সেই অঞ্চলে কোন প্রাণী বসবাস করতে পারবে না। কিন্তু এই ধরনের অস্ত্রগুলি একদমই সঠিকভাবে নির্ভরযোগ্য নয় তার কারণ হচ্ছে, এই বোমাটি যে অঞ্চলে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে সেখানে বাতাস জোরে বইলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এই পাউডার আকৃতির রেডিও এক্টিভ মেটেরিয়াল গুলি ছড়িয়ে পরে যার ফলে এটি কেবলমাত্র লক্ষ্য বস্তু অর্থাৎ খেরসনের মত অঞ্চলের বিস্ফোরণ ঘটালে শুধুমাত্র এই অঞ্চলে নয় এর আশেপাশে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এটি ছড়িয়ে পড়বে এবং সমস্যা সৃষ্টি করবে।




প্রশ্ন হচ্ছে রাশিয়া এই দাবিটি কেন করছে? যেখানে ইউক্রেন ও অন্যান্য পাশ্চাত্য দেশগুলি এটি খারিজ করে দিয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে রাশিয়া আসলে নাটোর অ্যালায়েন্সকে ভাঙতে চাইছে, ইচ্ছা করে এই খবর ছড়িয়ে পাশ্চাত্য দেশগুলি ইউক্রেনকে যে সাহায্য করছিল তা বন্ধ করার চেষ্টা করছে; সে দেখাতে পারে ইউক্রেন এই সাহায্যের অপব্যবহার করছে; এছাড়া কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, রাশিয়া হয়তো নিজেই এই বিস্ফোরকটি ব্যবহার করবে এবং অপরাধটি ইউক্রেনের উপর চাপিয়ে দিতে পারে।
যদিও বহু মিলিটারি অ্যানালিস্ট এর মতে এই ধরনের ভাবনাচিন্তা ভুল কারণ, রাশিয়ার এতটাও বোকা না যে নিজের জনগণ ও সেনার উপর এই ধরনের বোমার ব্যবহার করবে।




এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এখনো অব্দি কি ডার্টি বোম্বের কোনো ব্যবহার পৃথিবীতে হয়েছে?
এখনো পর্যন্ত সাফল্যের সাথে এর ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি যদিও অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে।
যেমন - ১৯৯৬ সালে চেচেনয়া যুদ্ধ চলাকালীন চেচেন বিদ্রোহীরা মস্কোর ইজমাইলোভো পার্কে ডায়নামাইট এবং সিজিয়াম ১৩৭ এর সংমিশ্রনে তৈরি এই বিস্ফোরকটি পুঁতে রেখেছিল। এখানে সিজিয়ামটি ক্যান্সার চিকিৎসা করার যন্ত্রপাতি থেকে এক্সট্রাক্ট করা হয়েছিল; এরপর সিকিউরিটি সার্ভিস এই স্থানটি খুঁজে বের করে এবং ডিফিউজ করে দিয়েছিল।
এর ঠিক দুই বছর পর চেচেনয়া ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস জানতে পারে সেখানকার রেলওয়ে লাইনে একটি ডার্টি বোম্ব পুতে রাখা হয়েছে এবং তারা এটিকে নিষ্ক্রিয় করে।
চার বছর বাদে ২০০২ সালে এক ইউ এস নাগরিক যে আলকায়েদার সাথে যোগাযোগে ছিল, তাকে চিকাগো থেকে ডার্টি বোম্বের আক্রমণ করার পরিকল্পনা করার সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরবর্তীকালে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।




এর দু বছর বাদে এক ব্রিটিশ নাগরিক এবং আল-কায়েদার সদস্যকে একই রকম কারণের জন্য গ্রেপ্তার করা হয় এবং 30 বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এখনো অবধি নিউক্লিয়ার বোমা ব্যবহার করা দেখা গেলেও এই বিস্ফোরকটির ব্যবহার কোথাও সাফল্যের সাথে করা যায়নি। প্রশ্ন হল এখন যা পরিস্থিতি আমরা ভবিষ্যতে এর ব্যবহার দেখতে পারব? আপনাদের কি মনে হয়? যদি এটি ঘটে তাহলে তা পৃথিবীতে একটি বিশাল বড় আলোড়নের সৃষ্টি হবে।

Sunday, 16 October 2022

ফেরেস্তাদের ডেকে পাঠানো এক শক্তিশালী ম্যাজিক


মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং এশিয়া জুড়ে বিভিন্ন স্থানে উজ্জ্বল, কখনো কখনো ডানা যুক্ত প্রাণীর দেখা পাওয়া গিয়েছে। অদ্ভুত এক সত্তাকে সিরিয়ার বিপর্যস্ত রাস্তায় আহতদের নিরাপদ স্থানে যেতে সাহায্য করা থেকে শুরু করে উজ্জলাকার মানুষ্যজাতীয় প্রাণীকে মসজিদে প্রার্থনা করতে দেখা গেছে এবং কেবলমাত্র ক্যামেরাতেই এদেরকে দেখা যায়। এছাড়া বিশালাকৃতি ডানাযুক্ত প্রাণীকে সৌদি আরবিয়া এবং ইসরাইলের আকাশে উড়ে যেতে দেখা গেছে। এই সাক্ষ্যগুলি ঈশ্বরের ফেরেশতাকে পাঠানোর বিষয়টিকে মনে করতে বাধ্য করে। কিন্তু কিছু মধ্যযুগীয় জাদুকরদের মত অনুযায়ী এই প্রাণীগুলি মনুষ্যদ্বারাও তলব করা যেতে পারে।

এখানে প্রশ্ন হল এই প্রাণীগুলি কি শান্তিপ্রিয় সত্তা নাকি কোন অশুভ শক্তি?

আরব এবং ইসলামিক বিভিন্ন প্রথায় এবং বিভিন্ন প্রাচীন ম্যাজিক বা যাদুবিদ্যায় একটি মিল পাওয়া যায়, যেখানে অনেক সময় ফেরেশতা, জীন, দানব এবং অন্যান্য সত্তাকে ডেকে পাঠানো হয়।
বিশেষ করে যখন মুসলিম বা ইসলামিক প্রথার মধ্যে যখন এই অতি মানবিক শক্তির বা সত্তার কথা ওঠে, তখন তিন প্রকার জীবনের উল্লেখ পাওয়া যায় যাদের অদেখা জগতের অংশ হিসেবে মনে করা হয়।
এরা হলো 'শয়তান্স' যাদেরকে টেকনিক্যালি দুষ্ট জ্বীন অথবা পশ্চিমে যাদের 'ডেমন' বলে এবং এঞ্জেল বা ফেরেশতা বা পরি।




প্রথমত আমরা 'ফেরেশতা' বা এনজেল নিয়ে আলোচনা করি।
মুসলিম মত অনুযায়ী ফেরেশতা অথবা 'মালায়খা' যাদেরকে মনুষ্য জাতির পূর্বের সৃষ্টি করা হয়েছে, ঈশ্বরের আদেশ মানার জন্য এবং আমাদের সাথে যোগাযোগের জন্য।
যদিও কিছু মধ্যযুগীয় আরবিক জাদুকর বা সাধকদের মতে এই সত্তা গুলিকে যাদুকরি বিদ্যার সাহায্যে ডাকা যেতে পারে। যাদুবিদ্যার সংজ্ঞা হিসাবে আমাদের মনে বিভিন্ন বিতর্ক দেখা দিতে পারে কিন্তু এই পোস্টে আমরা যাদুবিদ্যাকে একটি লুকায়িত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অংশ হিসাবে ধরে নিতে পারি যা মানুষের বোঝাপড়ার বাইরে।
যেহেতু বৈজ্ঞানিক গবেষণা ক্রমাগত উন্নত হয়ে চলেছে এবং সাথে সাথে জাদুবিদ্যা সময়ের সাথে সাথে পাল্টেছে তাই এক্ষেত্রে বলা যেতে পারে জাদুকররা ভবিষ্যতের বা সময়ের তুলনায় এগিয়ে যাওয়া প্রযুক্তির কাছে পৌঁছে গিয়েছেন বা ব্যবহার করেন যার ফলে এগুলি বর্তমানের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝা যায় না।




লেখক C. Clark এর মতে যে কোন যথাযথ উন্নত প্রকারের প্রযুক্তিকে ম্যাজিক বলা যেতে পারে।
ইসলামে ম্যাজিক বা জাদুর ব্যবহার করা যেখানে জ্বীনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হয় সেটি অনুমোদিত নয়; যেহেতু জিন এবং মানুষের একে অপরের সাথে যোগাযোগ করা অনুমোদিত নয়।
জাদুগরিবিদ্যা, যাকে বলা হয় 'ulum al-ghayb' যার মধ্যে ভবিষ্যৎবাণী, নক্ষত্র বিদ্যা এবং ভাগ্য নির্ণয় করা যায়।
প্রাচীনতম যাদুবিদ্যার মন্ত্রগুলি প্রাচীন ইরাকে কাদামাটির ফলকের উপর খোদাই করা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতা এবং স্থানের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় জাদুকরী বিদ্যার মন্ত্র গুলি মাদুলি বা কবজে খোদাইকৃত অবস্থায় এবং অন্যান্য বস্তুর উপর পাওয়া গেছে; এদিকে রোমানরা বিশ্বাস করতেন জাদুকরি বিদ্যার বইগুলি পার্শিয়ানরা আবিষ্কার করেন এবং কোন কোন জাদুকরদের মতে ফেরেশতাকে ডেকে পাঠানোর ম্যাজিক গুলি প্রফেট সলোমনও চর্চা করতেন।




প্রাচীন জগতের ফেরেশতা সম্পর্কিত সবচেয়ে বিখ্যাত লেখাগুলি পাওয়া গিয়েছিল 'ডেড সী স্ক্রোল' এর 'বুক অফ ইনক' থেকে।
এছাড়া কিছু কম পরিচিত লেখাও পাওয়া গিয়েছে যেমন ১২০৩ খ্রিস্টাব্দে Zakariya al-Qazwini এর লেখা বই ʿAjāʾib al-makhlūqāt wa-gharāʾib al-mawjūdāt'। যদিও বইটি যাদু বিদ্যার থেকে বেশি ক্রিপ্টো জুলজি এবং কসমোলজি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন ধর্মীয় ও লোককাহিনীর ভিত্তিতে এটি একটি এনসাইক্লোপিডিয়া হিসেবে তৈরি করা হয়েছে; এখানে আল কাজুনি ফেরেশতাদের শরীরের আকৃতি নিয়ে বিবরণ দিয়েছিলেন এবং তারা কি প্রকার প্রাণী এবং কোথায় থাকে সে সম্পর্কিত আলোচনা করেছিলেন। যদিও আরও একটি বিপদজনক লেখা যা পাওয়া যায় 'Shams al-Ma'arif' নামক বইটিতে যা থেকে মানুষকে একদম দূরে থাকা উচিত। ১৩ শতাব্দীতে লেখা এই বইটির লেখক ছিলেন আলজেরিয়ান পন্ডিত Ahmad al-Buni। এটি ছিল সমকালীন এই অঞ্চলের সবচেয়ে শক্তিশালী জাদুকরী মন্ত্রের বই।




আমি যা বুঝতে পেরেছি এই লেখাগুলি কেবলমাত্র কাগজে লেখা অবস্থাতেই পাওয়া যায় মাগরিব এবং লেবানন অঞ্চলে এবং তাও প্রচুর পরিমাণে সংক্ষেপে ও এডিট করার পর। এই সংস্করণগুলি আসলটির থেকে অনেকটা পিছিয়ে - যেটি তিনটি বিশাল খণ্ডে লেখা হয়েছিল। এই অঞ্চলগুলির অনেক স্থানেই এটি নিষিদ্ধ ছিল; তার কারণ আছে যদিও এটি দাবি করে এটি তার পাঠকদের ফেরেশতা জাতীয় সত্তার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করবে, যা মানুষের উপকারের কাজে আসবে। ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের মতে এই বইটি বা এই ধরনের বইগুলি ব্যবহার করা অত্যন্ত বিপদজনক। বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে যারা জাদুকরি বিদ্যার সাহায্যে অতিপ্রাকৃত শক্তিকে কাজে লাগাতে চাইবে তার ফলে কিছুই হবে না কোন কাজ হবে না। যদিও তাদের মধ্যে কয়েকজনের সে যতই কম হোক এই বই ব্যবহারের ফলে গোলমেলে অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটবে যেমন রহস্যময় মৃত্যু, অসুস্থতা - যার ব্যাখ্যা করা যায় না এবং মনুষ্য প্রকৃতির অস্বাভাবিক রকমের সত্তার উদ্ভব ঘটবে। বলা হয়, এই লেখাগুলি অভিশপ্ত এবং এই অভিশাপ বংশধররাও বহন করতে পারে। সাধারণভাবে যদি বলি এটা মনে করা হয় যে এই ধরনের বইগুলি দ্বারা কেবলমাত্র দুষ্ট বা অশুভ জিনকেই ডেকে পাঠানো যায় যেহেতু ভালো ও নিরপেক্ষ জিনদের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করার কোন উৎসাহ থাকে না।
এদিকে ফেরেশতা যারা এমন একপ্রকার পবিত্র এবং অত্যন্ত শক্তিশালী প্রাণী যাদের উপর এই ধরনের লেখার কোন প্রভাবই পড়া সম্ভব নয় এবং কেবলমাত্র ঈশ্বর নিজেই তাদের ডেকে পাঠাতে পারেন। অবশেষে এগুলি ইজিপশিয়ান স্বঘোষিত জাদুকর 'আব্দুল ফাতে আল সাঈদ আল তখী'র কিছু লেখায় নিয়ে যায়। মনে করা হয়, তার জাদুর বইগুলি সবচেয়ে শক্তিশালী লেখাগুলির মধ্যে একটি। তিনি এক রহস্যময় ব্যক্তি ছিলেন যিনি জ্যোতির্বিদ্যা, জাদু এবং আত্মা বহিষ্করণের উপর ত্রিশটির উপর বই লিখেছিলেন।




তখী বিংশ শতাব্দীর সমসাময়িক লেখক ছিলেন। যদিও তার পরিচয় এবং জীবনী রহস্যে ঘেরা এমনকি আরব গবেষকদের কাছেও।
তার অন্যতম একটি লেখা ছিল হারুত এবং মারুত কে নিয়ে এবং হাজার বছর আগের মানুষদের জন্য লেখা কালো জাদুর পুথি।
সাধারণভাবে যদি বলি হারুত এবং মারুতের কাহিনী ইসলামিক শিক্ষায় সবচেয়ে প্রচলিত বা বিখ্যাত কাহিনীগুলির মধ্যে একটি যাতে ম্যাজিকের কথা বলা হয়েছে এবং কেন এগুলি ক্ষতিকারক তা বোঝানো হয়েছে। ঈশ্বর মানুষ এবং মনুষ্যত্বের উপর পরীক্ষা করার জন্য এই দুই ফেরেশতাকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। প্রচলিত এক ট্র্যাডিশন মতে এই দুই ফেরেশতা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে ঠিক যেমন মানুষ দুর্নীতির প্রতি আসক্ত হয়।
এই মতে, পৃথিবীতে আসার আগে একদল ফেরেস্তা মানুষের অপরাধ বা খারাপ কাজকে দেখে আমাদের এই দুর্বলতার প্রতি উপহাস করতো। ঈশ্বর তখন ঘোষণা করেন যে, একই পরিস্থিতিতে থাকলে ফেরেশতারাও একই রকম আচরণ করবেন যেমন মানুষরা করছেন এবং তিনি প্রস্তাব করেছিলেন, কিছু ফেরেশতাকে পৃথিবীতে পাঠানো হবে এটা দেখার জন্য যে কতটা ভালোভাবে তারা ধর্ম, ব্যভিচার এবং মদ্যপান থেকে নিজেকে আগলে রাখবে। এরপর পৃথিবীতে হারুত এবং মারুত কে এক মহিলা দ্বারা উত্তেজিত করা হয়, যার ফলশ্বরূপ তারা সেই সময়ের সাক্ষী থাকা এক মানুষকে হত্যা করে ফেলে। তারা মানুষের মতনই সমসাময়িক আচরণ করেছে এটা বুঝতে পারার পর এই জুড়ি পৃথিবীতে নিজের সাজা মেনে নেয় যেটি হল, ব্যাবিলনে বিচারের দিন অর্থাৎ কায়ামত পর্যন্ত তাদের উল্টো করে পা বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হবে। যদিও এই কাহিনীটি ইসলামিক এস্কেটোলজির একটি অংশ, কিন্তু ফেরেশতা মানুষদের সাথে কিভাবে ব্যবহার করে সেই সম্পর্কিত মৌলিক যে ধারণা আছে তার সম্পূর্ণ বিরোধী। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞের থিওরি অনুযায়ী হারুত এবং মারুত আসলে মানুষ ছিল যারা শয়তানের থেকে ম্যাজিক শিখেছিল যেহেতু তাদের আচার-আচরণ একদমই ফেরেশতাদের মত ছিল না। এই কারণে অনেক ইসলামিক বিশেষজ্ঞরা কাহিনীর এই অংশটিকে মানতে চান না এবং তাদের মতে এটি বানানো ঘটনা এবং কাহিনীটি zoroastrianism এবং জুডাইজম থেকে নেওয়া হয়েছে।




ক্রিশ্চান প্রথাতেও ফেরেশতা এবং ম্যাজিকের সম্পর্ক এবং তাদের দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে ক্ষতি করার কাহিনী পাওয়া যায়। 'বুক অফ ইনক' অনুযায়ী মানুষদের ওপর নজর রাখার জন্য নজরদারি ফেরেস্তাদের পৃথিবীতে পাঠানো হয় এবং খুব দ্রুত তারা নারীদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে যার ফলে স্বর্গে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত হয়। এর ফলে অনেক ফেরেশতাদের বহিষ্কৃত করা হয় যার ফলে তারা ডেমন বা জিনে পরিণত হয় এবং ধীরে ধীরে এর ফলে মানুষদের ম্যাজিকের মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ করার সূত্রপাত হয়। এই প্রথা থেকে এনোখিয়ান ম্যাজিকের ধারণার জন্ম হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে এনোখিয়ান ম্যাজিক হচ্ছে এখনো পর্যন্ত পাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী যাদুবিদ্যা। এটির ভিত্তি হল ১৬ শতাব্দীতে জন ডি এবং এডওয়ার্ড কেলির লেখনি থেকে, তাদের মতে এই যাদুবিদ্যাটি তারা সরাসরি ফেরেশতাদের থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন।
যদিও বলা হয়ে থাকে যারাই এই ধরনের জাদুবিদ্যার চর্চা করে থাকেন কখনো না কখনো তারা এরই শিকারে পরিণত হয়, সে তারা দানব, জীন অথবা ফেরেশতা যাকেই ডেকে পাঠাক না কেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, পল ফস্টারের বিষয়টি; তিনি বিংশ শতাব্দীর একজন সাধক এবং জাদু বিদ্যার অনুশীলনকারী ছিলেন যিনি দাবি করেন এনখিয়ান ম্যাজিক খুব ভয়ংকর এবং তিনি ২৫ টির উপর ঘটনা জানেন যেখানে এই বিদ্যার অনুশীলনকারীরা গম্ভীরভাবে মস্তিষ্ক এবং শরীরের মধ্যে বিচ্ছিন্ন অবস্থা অনুভব করেছিলেন, এদের মধ্যে একজন ছিলেন বিখ্যাত অকালটিস্ট অ্যালেস্টার ক্রাউলি।
ঠিক একই রকম ভাবে আলবার্টাস ম্যাগনাসের কথা বলা যায় যিনি ১৩ শতকের একজন ক্যাথলিক খ্রিস্টান ভিক্ষু ছিলেন; এই সময় অনেকগুলি বিখ্যাত ফেরেশতাকে ডাকার ঘটনা শোনা যায় যেগুলি নক্ষত্রিক যাদুবিদ্যার একটি রূপ ছিল এখানে যতই পজিটিভ পবিত্র আচার-আচরণ পালন করা হোক না কেন এর মাধ্যমে ডেমন বা জিনদের ডাকা যেত।

এটি ইসলামিক ধারণার সাথে অনুরুপ অর্থাৎ ফেরেশতাদের মানুষের যাদু বিদ্যার দ্বারা চালিত বা নিয়ন্ত্রিত করা যায় না এবং যে প্রকারের জগদবহির্ভূত সত্তার সাথেই এই ধরনের বিদ্যার চর্চাকারীরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করুক না কেন এগুলি শেষ পর্যন্ত দুষ্ট প্রকৃতির হবে এবং অবশেষে তাদেরই ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।
অনেক মানুষের প্রশ্ন থাকে যে বিভিন্ন জ্বীনরা বিভিন্ন ধরনের ধর্ম কেন পালন করবে? অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী এই সত্তাদের ঈশ্বরের আসল রূপের জ্ঞান থাকা উচিত এবং তাই জন্য তারা সকলে একই রকম ধর্ম পালন করা উচিত । এর জবাবে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর 'এম থিওরি' কে ব্যবহার করা যেতে পারে, এইভাবে আমাদের বাস্তবতার সংজ্ঞাও দেওয়া যেতে পারে। যদি আমরা ধরে নিই মানুষ, জীন এবং ফেরেশতারা তিনটি আলাদা আলাদা ডাইমেনশনে থাকে যেগুলি একে অপরের থেকে ভিন্ন। অনেক থিওরিটিক্যাল ফিজিসিস্ট এর মত অনুযায়ী মানুষরা কেবলমাত্র ৩ ডায়মনেশন যুক্ত প্রাণী, যারা চতুর্থ ডাইমেনশন অর্থাৎ সময়ের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রতিটা উপরের দিকের ডাইমেনশন নিচের দিকের ডাইমেনশন গুলি থেকে গোপন বা লুক্কায়িত থাকে তাহলে আমরা যদি মনে করি জিনরা তৃতীয় ও চতুর্থ ডাইমেনশনের মধ্যে অবস্থানকারী তাহলে তারা আমাদের মত সময়ের দ্বারা এইরকম ভাবে নিয়ন্ত্রিত নয়। যদিও তারা ফেরেশতাদের তুলনায় নিচের ডাইমেনশনে অবস্থানকারী ফলে এরা তাদের দেখতে পায় না। তাই তাদের দিক থেকে দেখতে গেলে তারা মানুষের থেকে অজানা বা অদেখা জগত সম্পর্কে সামান্য বেশি জানে। তবুও যেহেতু তারা আমাদের থেকে বেশি জানে তাই তাদের এই ক্ষমতা আছে যাতে তারা বিভিন্ন ভঙ্গিমা করে এবং আমাদের চিন্তা ভাবনায় হেরফেরের মাধ্যমে আমাদেরকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে তারা ফেরেশতাদের মতই, যেটা তারা নয়।

Wednesday, 5 October 2022

ইন্ডিয়ান আর্মি এবং ইয়েতি রহস্য

১৯ এপ্রিল ২০১৯ ,সম্প্রতি কালে ইয়েতির পায়ের ছাপ পাবার ঘটনা গুলির মধ্যে যেটি সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় করে দিয়েছিল, প্রায় ছয় মিলিয়ন ফলোয়ার সমৃদ্ধ ভারতীয় সেনাবাহিনীর টুইটার একাউন্টে প্রকাশিত করা হয়েছিল। এই খানে তারা দাবি করেছিলেন যে ফটোগ্রাফ গুলি ইন্ডিয়ান আর্মি মাউন্টেনিয়ারিং এক্সপিডিশনের সময় তোলা হয়েছিল এবং এই পদচিহ্নগুলি বিশালাকৃতি প্রায় ৩২*১৫ ইঞ্চির ছিল।




পৃথিবীর পঞ্চম উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট মাকালুর বেসে অবস্থিত মাকালু বেসক্যাম্প, যা পূর্ব নেপালের দিকে প্রায় ৪৮৭০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। হিমালয়ের এই অঞ্চলটি ১৯৫০ সাল পর্যন্ত বাইরের দুনিয়ার কাছে অজানা ছিল যতদিন না ব্রিটিশ অভিযাত্রী এরিক সিম্পটন প্রথম এখানে আরোহন করেন। তারপরেও কিছু হাতে গোনা ট্রেকারের দল ছাড়া এই অঞ্চলে তেমন কেউ যেত না সুতরাং স্থানটি ইয়েতিদের পক্ষে একটি আদর্শ স্থান হতে পারে।
প্রসঙ্গক্রমে বলে রাখি ১৯৫১ সালে এরিক সিম্পটন যখন একটি এভারেস্টের এক্সপিডিশন করছিলেন এবং সামিট অব্দি যাওয়ার রুটগুলি নিয়ে সার্ভে করছিলেন তখন তিনি প্রথম এখানে ইয়েতির পদচিহ্নের ফটো তোলেন।



মেনলাং বেসিনে প্রায় ১৯ হাজার ফিটে তারা এক দ্বিপদ প্রাণীর পদচিহ্ন দেখতে পান, যেগুলি ১৩*৮ ইঞ্চি আয়তনের ছিল এবং যেটি প্রায় এক মাইল দূরে গ্লেসিয়ারের দিকে চলে গিয়েছিল। সিম্পটনের সঙ্গী টম বারদিলন ফটো গুলির মধ্যে একটিতে নোট করেছিলেন, "আমি অত্যন্ত নিশ্চিত যে হিমালয় বসবাসরত পরিচিত কোন প্রাণী এত বিশালাকৃতির হতে পারে না"।



ঠিক সেরকমই হিমালয়ের পাওয়া ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিগুলোতে ডান দিকে বা বাদীকে অন্য কোন চিহ্ন না থাকায় এগুলিকে দ্বিপদ প্রাণীর মতোই মনে হচ্ছে; ঠিক যেন ইয়েতি বরফে আচ্ছাদিত প্রান্তরটি অতিক্রম করে যাচ্ছিল শীতকালীন খাদ্য সংগ্রহের জন্য। পদচিহ্নগুলো খুব বিশালাকৃতি হলেও বরফে এগুলি খুব গভীরে গিয়েছিল যা চিহ্নিত করে এটি খুব বিশাল আকৃতির কোন দ্বিপদ প্রাণীর যা পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তরে পরিচিত না। যখনই ইয়েতি প্রসঙ্গ আসে অনেকেরই আঙ্গুল হিমালয়ান বাদামি ভাল্লুকের দিকে অবশ্যই গিয়ে থাকে এবং এই সময়েও সেটির পুনরাবৃত্তি হয়েছিল কিন্তু আমাদেরকে এটা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে ভালুকরা দ্বিপদ না। তারা সাধারণত এই তুষারাবৃত পর্বত প্রান্তরে চার পায়ের সাহায্যেই চলাচল করতে পারে। কেবলমাত্র আক্রমণ অথবা আত্মরক্ষা করার সময়ে নিজের দু পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অপরদিকে রেকর্ড করা সবকটি পদচিহ্নই দ্বিপদ প্রাণীর ছিল। এমন কোন তুষার ভাল্লুক হবে যার পদচিহ্ন ৩২ ইঞ্চি লম্বা হবে?


সবচেয়ে বিশালাকৃতি বাদামি ভাল্লুক অথবা কৃষ্ণাঙ্গ ভাল্লুক হল কোডিয়াক ভাল্লুক যাদেরকে দক্ষিণ পশ্চিম আলাস্কায় দেখতে পাওয়া যায়। এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বিশালাকৃতি নথিভূক্ত কোডিয়াক ভাল্লুকের ওজন ৭৫১ কেজি ছিল এবং এর পায়ের দৈর্ঘ্য ৪৬ সেন্টিমিটার অর্থাৎ ১৮ ইঞ্চি ছিল; যেটি মাকালুতে পাওয়া ৩২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের অর্ধেক। আমাদের কাছে এটা মানা ছাড়া আর কোন উপায় নেই যে মনুষাকৃতির মাকালুতে পাওয়া এই পদচিহ্নগুলি মানুষের জানা কোন প্রাণীর না; যে ক্ষেত্রে একমাত্র একটি শব্দ মাথায় আসে কিংবদন্তি নিঃশব্দসঞ্চারী অদ্বিতীয় দ্বিপদ দানব 'ইয়েতি' যা হিমালয়ের অনাবৃষ্টিত দুর্গম গভীর স্থানে ঘুরে বেড়ায় এবং যার গল্প স্থানীয় লোককাহিনীতে এবং শেরপা সম্প্রদায়গুলির মধ্যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শেরপাদের কাছে এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক মতামত বা যুক্তি গুলি কোনরকম চিন্তার বিষয় না; এটি তাদের লোককাহিনীর একটি স্থায়ী অংশ এবং এই উঁচু পার্বত্য প্রান্তরে যেখানে ইয়াক পালন করে, আলু চাষ করে এবং এই তুষারবৃত পর্বতগুলি আরোহন করতে সাহায্য করে তাদের জীবিকা চলে- তার একটি রোজকার জীবনের অংশ। তারা হাতের তালুর মত এই অঞ্চলগুলিকে চেনে; এমনকি বলা যায় একমাত্র তারাই এই অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ।


শেরপদের মধ্যে অসংখ্য ইয়েতি দেখার এবং তার পদচিহ্নের কাহিনী শোনা যায়- অনেকে আবার একপ্রকার শিস দেওয়ার বা তীক্ষ্ণ শব্দ শুনেছে তাদের যাত্রা দরুন - যা মনে করা হয় ইয়েতির শব্দ; এছাড়া অনেকে তাদের দেহের তীব্র গন্ধ পেয়েছে। সাধারণত তারা ইয়েতির বর্ণনা দেয়- একটি বড় মাথা যুক্ত বানর প্রজাতির প্রাণী হিসাবে, যার লম্বা হাত এবং মানুষের মতো মুখ, বোঁচা নাক এবং লাল ও কালো লোম দিয়ে দেহ আচ্ছাদিত। সাধারণত এটি দুই পায়ে হেঁটে হেঁটে চলে কিন্তু কখনো কখনো পার্বত্য ঢাল দিয়ে দ্রুত গতিতে চলার জন্য একে হাত ও পা দুটি ব্যবহার করতে দেখা গেছে।


শেরপাদের বিশ্বাস ইয়তিকে সহজে দেখতে পাওয়া যায় না তার প্রাথমিক একটি কারণ হচ্ছে এটি নিশাচর প্রাণী। এর একপ্রকার অতীপ্ৰাকৃত বা দৈবিক ক্ষমতা আছে এবং নিজের ইচ্ছায় এটি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে এবং একে দেখতে পাওয়া অশনি সংকেত হিসেবে মনে করা হয়। কেউ কেউ দাবি করেন যদি ইয়েতি আপনাকে প্রথমে দেখে ফেলে তাহলে এটি একপ্রকার জাদু বা ম্যাজিক জাতীয় কিছু প্রয়োগ করে আপনায় নড়াচড়া করা থেকে বিরত করে দেয়, তারপর সে শিকারকে আক্রমণ বা খেয়ে ফেলতে পারে। যেকোনো শেরপার মুখ থেকেই শোনা যায় যে যদি আপনি ইয়েতিকে দেখতে পারেন তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিচের দিকে দৌড়ে পালিয়ে যান। যদি ইয়েতি আপনাকে একটি খাড়া স্থানে নিচের দিকে ধাওয়া করে তাহলে হাওয়া তার লম্বা চুলগুলি চোখে ঢেকে কিছু সময়ের জন্য তার দৃষ্টির ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যা আপনাকে পালাতে সাহায্য করবে। তবে সাধারণ ক্ষেত্রে এটি মানুষের পক্ষে ক্ষতিকারক হয় না। যদিও একে একা থাকতে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। যদি আপনি একে না ঘাটান সেও আপনার বিরক্ত করবে না, সাধারণত ইয়েতি ছোট ছোট প্রাণী যেমন ব্যাঙ থেকে শুরু করে ইদুরের মতো প্রাণী যাকে 'পিকা' বলে পরিচিত যেগুলি হিমালয়ে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, এগুলি খেয়েই বেঁচে থাকে যদিও 'ইয়াক' এর উপর আক্রমণ ও তাদের মেরে ফেলার ঘটনাও শোনা যায়। শেরপারা মনে করেন ইয়তিকে খুঁজতে কোন সংঘটিত অভিযান কখনো সাফল্য লাভ করবে না এই প্রাণীটি নিজের ইচ্ছা অনুসারে অদৃশ্য হতে পারে এবং কখনো কখনো আকস্মিকভাবে এর দেখা পাওয়া যায়।


ইন্ডিয়ান আর্মির দেওয়া ইয়েতি ফুটপ্রিন্টের আরেকটি চমকপ্রদ বিষয় হলো, ঠিক একই প্রকার পদচিহ্ন মেজর বিল টিলমান ১৯৩৭ সালে দেখতে পেয়েছিলেন যার উল্লেখ লেখক গ্রাহাম হল্যান্ডের 'Yeti: an abominable history' বইটিতে দেখা গেছে। গ্রাহাম হল্যান্ড ছিলেন ১৫ তম ব্রিটিশ অভিযাত্রী যিনি এভারেস্ট আরোহন করেছিলেন। হিমালয় আনুমানিক ৩০ টির কাছাকাছি অভিযান করেছিলেন তিনি। এই সময়কালীন তিনি শেরপাদের কাছ থেকে ইয়েতি সম্পর্কিত অনেক কাহিনী শুনেছিলেন; তিনি তার বইয়ের প্রচারের জন্য একটি আর্টিকেল লিখেছিলেন যার নাম ছিল 'top 10 yeti and abominable snowman sightings'. এখানে বেশকিছু কৌতূহল পূর্ণ তথ্য ছিল যার মধ্যে বিল টিলম্যানের বিবরণ গুলি--
টিলম্যান তার ডাইরিতে লিখেছিলেন, দুটি গ্লেসিয়ারের মাঝ বরাবর যাওয়ার সময় তিনি বরফের ওপর তুষারমানবের পদচিহ্ন দেখতে পান এগুলি ৮ ইঞ্চি ডায়ামিটার এবং ১৮ ইঞ্চি লম্বা ছিল এবং কনুই অথবা বুড়ো আঙ্গুলের চিহ্ন ছিল না। এগুলি ৩ অথবা ৪ দিনের পুরনো ছিল তাই পুরো বাইরের দিকটা হয়তো বরফের গলে যাওয়ার জন্য নিখুত ছিল না। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এগুলি সোজা লাইনে ছিল একটার পর একটা - যার ডান অথবা বাঁদিকে টাল খাওয়ার কোন চিহ্ন ছিল না। একটি চার পেয়ে প্রাণী সব সময় চলাচলের সময় একটির উপর আরেকটি পায়ের চিহ্ন রেখে যায় এবং তাদের চলাচলের পদচিহ্নগুলি এরকম হয় না। যাইহোক এই প্রাণীটি অথবা দানব টি খুব ভারী ছিল কারণ এই পদচিহ্নগুলো এক ফুটের কাছাকাছি গভীর ছিল। "আমরা এগুলিকে এক মাইলজুড়ে অনুসরণ করেছি যতক্ষণ না এটি কিছু পাথরের আড়ালে হারিয়ে গেছিল। এই পদচিহ্নগুলি একটি গ্লেসিয়ারের জলাশয় থেকে নেমে এসেছিল যেখান থেকে হয়তো প্রাণীটি জল খেয়েছিল এবং পরের দিন আমরা ঠিক একই রকম পায়ের চিহ্ন বরফের লেকের উত্তর দিকে পেয়েছিলাম।"


এটা খুব চাঞ্চল্যকর বিষয় যে প্রায় ৮৫ বছরের আগে মেজর টিলম্যানের পাওয়া ইয়েতির পদচিহ্নগুলি যেরকম সোজা ছিল একটার পর একটা যার ডান বা বাদিকে কোন ডেভিয়েশন ছিল না ঠিক একই প্রকারের পদচিহ্ন ইন্ডিয়ান আর্মি, মাকালুতে পেয়েছিল। পার্থক্য হল এই যে, মাকালুর পদচিহ্ন গুলি বিশালাকৃতি ছিল - ৩২*১৫ ইঞ্চির যেখানে মেজর টিলমানের গুলি ছিল - ১৮*৮ ইঞ্চির হয়তো মেজর টিলমানের দেখা পদচিহ্নগুলি ইয়েতির ছোট প্রজাতির এবং মাকালুর ইয়েতি গুলো সম্ভবত ইয়েতির অপর প্রজাতি যারা বিশালাকৃতি এবং ইয়াক খেয়ে থাকে।
গ্রাহাম হল্যান্ড তার আর্টিকেলে এর ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, যেগুলি তিনি অরুণাচল প্রদেশ থেকে লাদাখে হিমালয়ের রেঞ্জ ভ্রমণ কালে গ্রামবাসীদের থেকে শুনেছিলেন; সে অনুসারে তিন প্রকারের ইয়েতি হয়ে থাকে - প্রথমটি হল সবচেয়ে বিশালাকৃতির এবং ভয়ানক 'dzu-teh' যারা দু পায়ে দাঁড়ালে 8 ফুট লম্বা হয় এবং এটি এক থাবায় একটি ইয়াককে মেরে ফেলতে পারে।
এর থেকে ছোটটি হল 'chu-the' অথবা 'থেলমা' - একপ্রকার হালকা লাল রংয়ের বাচ্চাদের মত ছোট আকৃতির প্রাণী যে দু পায়ের ভর করে হাটে এবং হাতগুলি লম্বা হয়; এই প্রাণীকে সিকিম এবং নেপালের জঙ্গলে দেখতে পাওয়া যায়।
এছাড়া আর এক প্রকার হলো 'meh-teh' যারা অনেকটা মানুষের মতো দেখতে এবং এদের দেহে কমলা লাল রঙে লোম দেখতে পাওয়া যায়। এরা মানুষকে আক্রমণ করে এবং এদেরকে মনস্ট্রি গুলির দেয়ালে আঁকা চিত্রে দেখতে পাওয়া যায় বলা হয় এদের নামটি বিবর্তিত হয়ে 'yeh-teh' অথবা 'ইয়েতি' হয়েছে।



হল্যান্ডের শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী মাকালুতে পাওয়া পদচিহ্ন গুলি হয়তো এই ৮ ফুট লম্বা 'dzu-teh' এর হতে পারে যার বর্ণনা হল্যান্ডের কাহিনীতে শোনা যায়। হিমালয়ের বনমানুষ সম্পর্কে পশ্চিমে মানুষদের সবচেয়ে প্রথম বর্ণনাটি পাওয়া যায় হকটন হজশনের লেখা থেকে যেটি ১৮৩২ সালে সময়কালীন ছিল। হজসন নেপালের প্রথম ব্রিটিশ বাসিন্দা ছিল এবং প্রথম ইংরেজ - যাকে 'নিষিদ্ধ ভূমি'তে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি তার ডাইরিতে লিখেছিলেন, তার শিকারিরা একবার এক বনমানুষের আগমনে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে গিয়েছিল। হয়তো এটি ওরাং হতে পারে,
"কিন্তু তাদের বর্ণনায় আমার সন্দেহ আছে; সম্ভবত তারাই প্রাণীটিকে 'রাক্ষস' বা দৈত্য ভেবে গুলি করার পরিবর্তে পালিয়ে গিয়েছিল। তারা বলেছিল এটি লম্বা ও কালো চুলে ঢাকা ছিল এবং কোন লেজ ছিল না। নেপালি শিকারিরা ইয়েতিকে 'রাক্ষস' বলায় আমি এটা লক্ষ্য করেছিলাম যে, রাক্ষস কথাটির বর্ণনা দুটি ভারতীয় মহাকাব্য 'রামায়ণ' এবং 'মহাভারতে' পাওয়া যায়। তাদের সাধারণত এক প্রকার শয়তানিক, দুষ্ট, ভয়ঙ্কর দেখতে নিশাচর জাতীয় এবং নরখাদক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। যখন পুরো পৃথিবী ঘুমাতে যায় তখন তারা তাদের ডেরা থেকে বেরিয়ে আসে এবং জঙ্গলে শিকার শুরু করে; তাদের বিশালাকৃতি দেহ লাল লোমে ঢাকা এবং তারা অসম্ভব শক্তিশালী। মানুষের শক্তি তাদের কাছে কিছুই না, তারা গভীর দুর্গম জঙ্গলে বসবাস করত এবং হিমালয়ের ঢালগুলিতে তাদের শক্তি এবং ক্ষমতা অসম্ভব রকম ভাবে বেড়ে যেত; সন্ধ্যা এবং ভোরের সময় এই সময় গুলিতে তাদের যেকোন ভাবে হোক এড়িয়ে চলা উচিত তারা তাদের মায়াবী ক্ষমতার দ্বারা উধাও হয়ে যেত অথবা আকাশে উড়ে যেত এবং মানুষের মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করার জন্য অনেক রকম আকৃতি ধারণ করতে পারত।"

মহাভারতে মানুষ খেকো দানবদের নিয়ে অনেকগুলি গল্প ছিল কিন্তু এর মধ্যে একটি উল্লেখ্য একটি হল রাক্ষস ও রাজপুত্র ভীমের যুদ্ধের কাহিনী। ভীম ছিলেন তার সময়কালে পৃথিবীর সবচেয়ে বলশালী মানুষ। একদা ভীম এবং তার ভাইয়েরা অর্থাৎ পঞ্চপান্ডবেরা রাত্রিকালীন এক ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাতায়াত করছিলেন, যেখানে তার সাথে 'হিড়িম্বা' নামক এক রাক্ষসের লড়াই হয়; অন্যান্য ভাইয়েরা যখন ঘুমিয়ে পড়েছিল তখন তিনি তাদেরকে পাহারা দিচ্ছিলেন। ঠিক সেই সময় রাক্ষসটি মানুষের গন্ধ পায় এবং রক্ত পিপাসু হয়ে জঙ্গল ধেয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। হিরিম্বার অসাধারণ শক্তি এবং হিংস্রতা ছিল, সাথে তার লম্বা এবং তীক্ষ্ণ দাঁত ছিল। সে ক্ষুধার্ত এবং মানুষের মাংসের লোভে এগিয়ে আসছিল। তার লম্বা চেহারা এবং বিশালাকৃতি পেট ছিল এবং তার দেহের রোমগুলি লাল রঙের ছিল। তার কাঁধ গাছের উপরিভাগের মত চওড়া ছিল এবং তার কান তীরের মত তীক্ষ্ণ ছিল যাতে তাকে আরও ভয়ানক দেখাচ্ছিল। কাহিনীর এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে একসময় ভীম এই রাক্ষসের সাথে ভয়ানক এক হাতাহাতি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লেন। তারা দুজনেই ভূমিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন এবং নিজেদের মধ্যে কুস্তি লড়ছিলেন সাথে গর্জন চলছিল। এই সময় ভীমের ছোট ভাই অর্জুন ঘুম থেকে জেগে উঠেছিল এবং ভীমকে এই রাক্ষসকে সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি নিধন করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন; যেহেতু ভোরের সময় এর মায়াবী শক্তি বেড়ে যাবে। অবশেষে ভীম রাক্ষসের ওপর নিজের প্রাধান্য নিয়ে তার ভবলীলা সঙ্গ করে তার নিধন করেন। ভীম 'বকাসুর' নামে এক দানবের সাথে লড়েছিল যার বর্ণনা দেওয়া হয় - বিশাল দেহ এবং বিশাল শক্তি যার লাল চোখ ছিল, লাল রঙের দাড়ি এবং লাল রঙের চুল ছিল এবং তাকে ভয়ানক দেখতে ছিল এবং তার পায়ের হাড়ে যেন মাটি নিচের দিকে গর্ত হয়ে ঢুকে যাচ্ছিল। পরিষ্কারভাবে এই মানুষখেকো হিংস্র নিশাচর মহাভারতের প্রাণীরদের দেহ লাল রোমে ঢাকা ছিল। ঠিক ইয়েতির এক প্রজাতির মত যারা মানুষদের আক্রমণ করে, মহাভারতে এটাও বলা হয় যে রাক্ষসরা ঘন জঙ্গলে বসবাস করে, বিশেষ করে হিমালয়ের দুর্গম প্রান্তর গুলিতে। প্রাচীন এই কাহিনী গুলোর মাধ্যমে ইয়েতির সাথে ভারতীয় মহাকাব্যের রাক্ষসদের কিছুটা মিল পাওয়া যায়। যেখানে কিছু কিছু রাক্ষস ছোট আকৃতির, মানুষখেকো, লাল লোমে ঘেরা যারা হয়তো 'meh -teh' এর মত ছিল সেখানে অন্যান্যরা মানুষখেকো ছিল না এবং হয়তো তারা বিশালাকৃতি ইয়েতিদের মত ছিল অর্থাৎ 'dzu-teh' এর মত যাদের কালো রোমে দেহ ঢাকা ছিল এবং 'ইয়াক' এর মত প্রাণী খেয়ে বেঁচে থাকত।


দুর্ভাগ্যবশত যেহেতু এখনকার দিনের বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞরা প্রাচীন কিংবদন্তিগুলিকে কল্পকাহিনী হিসাবে উল্লেখ করে থাকেন, তাই আমরা এক্ষেত্রে ইয়েতির মত প্রাণীদের দেখতে পাওয়ার কাহিনী ও প্রাচীন কাহিনী গুলোতে একই রকম দেখতে প্রাণীর মধ্যে মিল পেয়েও এর ব্যাখ্যা দিতে পারি না।
ইয়েতি সংক্রান্ত ঘটনাগুলি সম্ভবত হিমালয়ের অঞ্চলে হাজার হাজার বছর ধরে বিদ্যমান যার ফলে এগুলি শেরপাদের লোকোকাহিনীর অংশ হয়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র বিংশ শতকের শুরুর দিকে যখন মাউন্টেনিয়ার এক্সপিডিশনগুলি শুরু হয়েছিল তখন, এটি আরো বিশালাক্কারের পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে থাকলো। অবশ্যই বর্তমানকালে ইয়েতিরা হয়তো আরো নির্জনে ও গোপনে থাকার নির্ণয় নিয়েছে - যেখানে একসময় তাদের খুব সহজেই দেখা যেত কিন্তু কেন এমনটা হয়েছে তা অনুমান করা একটু কঠিন। তারা কি মানুষদের ভয় পায়? ঠিক যেমনটা আমরা তাদের পাই? তারা কি আমাদের কে অসৎ, নির্দয় শিকারি হিসেবে মনে করে - যারা তাদেরকে ধ্বংস করে ও তাদের শান্তির জীবনকে শেষ করে দেবে? আমরা এসব কিছুই বলতে পারি না যতক্ষণ না তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ বলেন ইয়েতিদের নিজস্ব ভাষা আছে এবং শিস এবং গর্জনের মতো সুরে তারা নিজেদের মধ্যে ভাব আদান-প্রদান করে। অনেকে মনে করে তারা পার্বত্য উপত্যকা অঞ্চল গুলির রক্ষা কর্তা। এক্ষেত্রে মিল পাওয়া যায় 'মহাভারতের' যেখানে তাদেরকে বলা হয়েছে 'হিমালয়ের রক্ষক' হিসাবে। কিন্তু পাহাড়কে তারা কাদের থেকে রক্ষা করছে এবং তারা কোন সম্পদকে রক্ষা করছে? এর আগে আমরা হিমালয়ের যে রহস্য গুলি আলোচনা করেছি, তারা কি এই ধরনের কোন আধ্যাত্মিক জগতের বা রহস্যময় কোন গোপন অঞ্চলে যাওয়ার স্থানকে রক্ষা করছে? প্রাচীনকালে কাহিনীতে এই ধরনের স্থানকে আমাদের গ্রহের ভারসাম্য রক্ষাকারী অঞ্চল হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে হয়তো তারা এই স্থানে ভুল করে মানুষের চলে আসাকে রক্ষা করার জন্য অথবা কোনো অন্য শক্তির আগমন ঠেকাতে আছে ? কোনো কিছুই অসম্ভব নয় .....






Sunday, 22 August 2021

হিমালয়ের হারিয়ে যাওয়া রহস্যময় শহর

বহু প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ইতিহাস এবং সভ্যতায় বহু জাদুকরী ও রহস্যময় বিভিন্ন স্থানের গল্প প্রচলিত হয়ে এসেছে।  আমরা এমন একটি প্রাণী যারা হয়তো সত্যিই এই ধরনের শ্রুতি, যেমন হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা, গুপ্ত রহস্যময় শহর ইত্যাদিতে রোমাঞ্চ অনুভব করি যা বিভিন্ন কিংবদন্তি ও কাহিনীর সৃষ্টি করেছে; যেগুলি জাতি-স্থান-দেশ বিশেষে কোনরকম ব্যতিক্রম হয়নি। এরকমই একটি কাল্পনিক গুপ্ত শহরের কথা বহু যুগ ধরে হিমালয় পর্বতে ছড়িয়ে আছে যে স্থানটি জাদুকরী, রহস্যময় এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।



বহু প্রাচীন কাল থেকেই (ঠিক কতটা প্রাচীন কেউ বলতে পারে না) 'সাম্ভালা' নামক একটি রহস্যময় স্থান বা জগতের কথা শ্রুতি হয়ে ছড়িয়ে আছে। এই সাম্ভালা নামটি সংস্কৃত থেকে এসেছে যার অর্থ 'শান্তির স্থান' বা 'নিঃশব্দের স্থান' জাতীয় হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকম নামকরণ করা হয়েছে এমনকি কোথাও 'নিষিদ্ধ নগরী', 'সাদা জলের দেশ', 'বিশুদ্ধ দেশ', 'প্রভাবশালী আত্মাদের দেশ', 'রহস্যের দেশ' এবং আরো অনেক রকমের অতিরঞ্জিত নামে তিব্বতে এবং আশেপাশের শ্রুতি কথা হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে। 

এই শহরটি হিমালয় পর্বতমালা ও গোবি মরুভূমি মধ্যে কোন এক স্থানে অবস্থিত বলে মনে করা হয়। এটি পৃথিবীতে এক ধরনের স্বর্গের মত যেখানে রহস্যময়তা এবং চিরস্থায়ী শান্তি, ভালবাসা এবং আনন্দ অবস্থান করে। এখানে কোন যুদ্ধ নেই, দারিদ্রতা নেই, রোগ নেই, খিদে নেই; এখানে অবিচ্ছিন্ন সম্প্রীতি রয়েছে এবং কোন দুঃখ-রাগ বা যন্ত্রণা নেই। এই স্থানটি প্রচুর পরিমাণে ঐশ্বর্যশালী এবং সুন্দর স্থান যেখানে সকলে সর্বদা তরুণ, স্বাস্থ্যবান থাকে। এখানে যে সকল প্রাণী থাকে তাদের নিজস্ব এক পবিত্র ভাষা আছে। এটি এমন একটি রাজত্ব যেখানে কখনো ঠান্ডা বা রাত্রি আসেনা, এখানকার বাসিন্দারা অনন্তকাল ধরে স্বর্গসুখের অধিকারী হয়ে আছে। প্রায়শই বলা হয় এই শহরটি ও 'valley of  blue moon"  শহরটি একই স্থান। বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথিতে, ভবিষ্যত বাণীতে সাম্ভালা স্থানটির উল্লেখ পাওয়া গেছে।  প্রায়শই উল্লেখ করা হয়েছে, "এই স্থানটিতে একদিন অন্ধকার এবং আলোর একটি অন্তিম যুদ্ধ হবে যেখান থেকে আলো জয়ী হবে এবং একটি স্বর্ণযুগের সূচনা করবে ও পৃথিবীকে বিশেষ জ্ঞান প্রদান করবে।"



 হরেক রকমের প্রবাদে বলা হয়েছে যে একদিন পৃথিবী এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয় পূর্ণ যুদ্ধ এবং হিংসায় ধ্বংস হবে এবং কেবলমাত্র সাম্ভালা এর থেকে রেহাই পাবে। এই বিনাশ কালে এই স্থানটি একমাত্র আশ্রয়স্থল থাকবে এবং এরপর এখান থেকে এক আলোকিত বা জ্ঞানদীপ্ত সম্রাটের উদয় হবে যে পৃথিবী কে আবার দৈব আলো প্রদর্শন করবে।

এডউইন বেরনবাম নামক একজন সাম্ভালা বিশেষজ্ঞ 1920 সালে লিখেছিলেন যুগ যুগ ধরে তিব্বত এবং মঙ্গোলিয়ার মানুষরা সাম্ভালায় বিশ্বাস করতেন; তারা মনে করতেন, সেখানে "এনলাইটেনড" বা "সর্ব জ্ঞানী" রাজা অবস্থান করছেন এবং  সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানকে রক্ষা করে চলেছেন এবং যখন বাইরের পৃথিবীর সমস্ত রকম আধ্যাত্বিক মূল্য ধ্বংস হয়ে যাবে বা হারিয়ে যাবে, তখন ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী এই রাজা তার পবিত্র স্থান থেকে বেরিয়ে আসবেন, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করবেন এবং একটি স্বর্ণযুগের প্রতিষ্ঠা করবেন।



এই কথাগুলো শুনতে হয়তো খুবই ভালো লাগে কিন্তু বিষয়টি হলো সাম্ভালা নিয়ে একটি বিশেষ কিংবদন্তি শোনা যায় যেটি হল, এখানে যে কেউ যেতে পারবেনা। শ্রুতি অনুযায়ী এই ভূমি এবং এর শহর পার্থিব জগতের থেকে লুক্কায়িত হয়ে আছে এবং এখানে আমাদের মত সাধারন মানুষের পৌঁছনো প্রায় অসম্ভব। বলা হয় এটি পৃথিবীতে অবস্থিত থাকলেও আমাদের শারীরিক বা ভৌত জগতের মধ্যে পুরোপুরি পড়ে না; এটি কিছুটা এই জগত এবং পরবর্তী জগতের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করে, যেখানে কেবলমাত্র পবিত্র হৃদয়, ধ্যান, আধ্যাত্মিক অগ্রগতি, অত্যন্ত ভালো কর্মফল অথবা এনলাইটমেন্ট ইত্যাদি না প্রাপ্ত হলে কেউ খুঁজে পাবেনা। কেবলমাত্র শারীরিকভাবে সেই স্থানে যাত্রা করতে চাইলে এর ফলাফল ব্যর্থতা। শারীরিকের থেকে আধ্যাত্মিক শক্তি এই স্থানে প্রবেশ করতে মুখ্য ভূমিকা নেবে এবং কেবলমাত্র তখনই এই স্থানটিকে ভৌত জগতের মত আপনি দেখতে এবং অনুভব করতে পারবেন।  যদিও সাম্ভালা সম্পর্কে যে বিশ্বাস কেউ এখানে শারীরিকভাবে পৌঁছতে পারবে না তবুও মানুষ চেষ্টা না করে থেমে থাকেনি এই নিয়ে প্রচুর কাহিনী ছড়িয়ে আছে এরমধ্যে অনেক স্থানে মানুষ সফল হয়েছে বলেও শোনা গেছে।



এরকমই একটি কাহিনী পাওয়া গিয়েছে এনথ্রপলজিস্ট হেলেন ভালবর্গ এর লেখায় তার বইটির নাম ছিল "সিম্বলস অফ এটার্নাল ডকট্রিন ফর্ম সাম্ভালা টু প্যারাডাইস" যেখানে একটি চ্যাপ্টারে তিনি এক শিকারির বিবরণ দিয়েছেন যে এই স্থানটিকে খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছিল।

একটি গোপন পার্বত্য অঞ্চলের বরফে মোড়া স্থান থেকে এই একাকী শিকারী এক রহস্যময় মন্ত্র ধ্বনি ও ড্রামের আওয়াজ শুনতে পায়। তিব্বতের বাসিন্দাদের থেকে এই কাহিনীটি পাওয়া গেছে, যেখানে তারা বলেন খুব সহজেই এই সুরেলা ধ্বনিকে অনুসরণ করে সেই শিকারি সেই মহান স্থানের দরজায় পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং এটা অতিক্রম করে সে নিজেকে একটি খুবই সুন্দর উপত্যকায় খুঁজে পেল যা শস্য-শ্যামলা ধানের ক্ষেতে আবৃত এবং সেখানে গ্রামবাসী এবং সুন্দর মনেস্ট্রি ছিল। এইখানকার বাসিন্দারা খুবই শান্তিপ্রিয় এবং খুশি ছিল এবং তারা সেই শিকারীকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এবং তাকে থাকতে বলেছিল। তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন তাদেরকে দেখতে পেয়ে কিন্তু খুব দ্রুতই তিনি নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং তিনি চেয়েছিলেন তাদেরকেও সেই সুন্দর উপত্যকায় নিয়ে আসার জন্য কিন্তু এখানকার বাসিন্দারা তাকে সতর্ক করে দিয়েছিল যে তিনি এখানে ফিরে আসার রাস্তা আর খুঁজে পাবেনা কিন্তু সেও দৃঢ় হয়েছিল, বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য। এরপর যখন সে সেই দরজাটি অতিক্রম করে, সেইসময়  তার পাশে নিজের বন্দুক এবং জুতো ঝুলিয়ে রেখেছিল সেই দরজাটি চিহ্নিত করে রাখার জন্য। খুব নিশ্চিন্তভাবে সে তার স্ত্রী এবং সন্তানদের কাছে ফিরে গিয়েছিল কিন্তু যখন সে সেই স্থানটিতে ফিরে এসেছিল, সে তার বন্দুক এবং জুতোজোড়াকে একটি পাহাড়ের দেওয়ালের  ফাটলে ঝুলতে দেখেছিল।

পাশ্চাত্য দেশের মানুষেরাও এই স্থানটি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। 1833 সালে হাঙ্গেরীয়ান পন্ডিত স্যান্দর করসল দাবি করেছিলেন, তিনি ৪৫ ডিগ্রী এবং ৫০ ডিগ্রী নর্থ ল্যাটিচিউড এর মাঝামাঝি স্থানে একটি অসাধারণ দেশ খুঁজে পেয়েছিলেন, যাকে 'হারিয়ে যাওয়া শহর' বলা হয়। 

বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক এবং 'থিওসফিক্যাল সোসাইটি'র সহ স্থাপক হেলেনা ব্লভাটসকি দাবি করেছিলেন, তিনি সেখানে গিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন স্থানীয় রহস্যময় বিশ্বাসগুলি নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং সেখান থেকে বিস্ময়কর জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছেন। 

 1920 সালে নিকোলাস রোরিখ নামক এক অভিযাত্রী তিব্বত এবং হিমালয়ে পাঁচ বছর ধরে এক্সকার্শন করেছিলেন- আপাতদৃষ্টিতে কেবলমাত্র স্থান গুলিকে জরিখ করার জন্য কিন্তু গুজবে শোনা যায় এটি আসলে সাম্ভালাকে খুঁজে বের করার জন্য করা হয়েছিল। তার ভ্রমণকালে নিকোলাস খুব প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশ করেছিলেন যা সেই সময় অন্য কোনো পাশ্চাত্য দেশের মানুষ পৌঁছাতে পারেনি। যে স্থানটি অন্যান্য সভ্যতা থেকে অনেক দূরে আলাদা ছিল, এই ঠান্ডা দুর্গম প্রান্তে তিনি প্রাচীন বইয়ের এক সংগ্রহ অথবা পুথি খুঁজে পেয়েছিলেন যা এক দুর্গম অঞ্চলের মনস্ট্রিতে ছিল। পুঁথিগুলো মনে করা হয় সেই রহস্যময় শহরের পৌঁছনোর পথ দেখাতে পারত এবং তিনি এর প্রতিটি গুজব এবং নির্দেশনাকে অনুসরণ করেছিলেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে, আলতাই পর্বতমালার মধ্যে বেলু খা পরবর্তী হল সাম্ভালার প্রবেশদ্বার কিন্তু এটা জানা যায়নি তিনি আসলে সেটা খুঁজে পেয়েছিলেন নাকি।



সাম্ভালাকে নিয়ে আরো একটি বিখ্যাত এক্সপিডিশন হয়েছিল 1920 সালে 'বলশেভিক ক্রিপ্টোগ্রাফি' এবং 'সোভিয়েত সিক্রেট পুলিশের' অন্যতম প্রধান গ্লেব বকি ও তার লেখক বন্ধু আলেকজান্ডার বার্চেনকোর প্রচেষ্টায়। তারা কমিউনিজমের আরো দৃঢ় ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করার উদ্দেশ্যে সেই শহরটির খুঁজে বার করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তারা আশা করেছিলেন যে এই হারিয়ে যাওয়া শহরের রহস্যময় জাদুকরী বিদ্যা তাদেরকে পারফেক্ট কমিউনিস্ট হওয়ার রহস্য সমাধান করতে সাহায্য করবে। কিন্তু এক্সপিডিশনটি নিষ্ফল হয় এবং এর পরবর্তীকালে আরেকটি ফলোআপ প্ল্যান তৈরি করা হলেও সেটিকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, বরঞ্চ এটি সোভিয়েতের দ্বারা 1924 সালে একটি ব্যর্থ মিশন হিসাবে আখ্যায়িত হয়ে গিয়েছিল। 

সম্ভালা কে নিয়ে আরো অনেক এক্সপিডিশন হয়েছিল। যেমন, পরবর্তীকালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল কিন্তু যতদূর শোনা যায় এগুলি ফলপ্রসূ হয়নি এবং আসলে কি সাম্ভালার অস্তিত্ব আছে কিনা তা পরিস্কার না হলেও বহু লোক এখনো প্রচেষ্টায় লেগে আছে,  সেই আধ্যাত্মিক যাত্রা সফল না হলেও বহু মানুষ দাবি করেছেন তারা সেখানে পৌছতে পেরেছিলেন কিন্তু কেউ এর পক্ষে কোন প্রমাণ প্রদর্শন করতে পারেননি। মানচিত্রে এর অবস্থান এর স্বপক্ষে একচিলতে স্থান দেখানো সম্ভব হয়নি। এমনকি এই স্থানটি যেটি নিয়ে বহু যুগ ধরে প্রবাদ চলে আসছে এমনকি প্রাচীন বিভিন্ন পুথিগুলির থেকেও এর সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে এই হারিয়ে যাওয়া দেশ বা শহর সাম্ভালা কেবলমাত্র হেঁয়ালিপূর্ণ এবং অনতিক্রম্য রয়ে গিয়েছে হয়তো ভবিষ্যতেও থেকে যাবে।.......

Monday, 2 August 2021

সূর্যের ধ্বংসের পর কি পৃথিবীতে প্রাণ থাকবে? নতুন গবেষণায় আশার আলো ---

বেশির ভাগ মানুষের ধারণা ছিল যখন আমাদের সূর্য ধ্বংস হবে তখন পৃথিবীতে তার ক্যাটাস্ত্রফিক প্রভাবে কোন কিছু টিকে থাকতে পারবে না কিন্তু নতুন গবেষণায় একটি আশার আলো পাওয়া গিয়েছে যাতে সূর্যের নিভে যাওয়ার পর পরই আমাদের গ্রহে আবার নতুন করে প্রাণের উৎপত্তি হতে পারে।

পৃথিবীর ম্যাগনেটিক শিল্ড বা চুম্বক বলয় সোলার উইন্ড বা সৌর ঝড়ের উত্তপ্ত চার্জড পার্টিকেল বা কণাগুলি থেকে পৃথিবী কে রক্ষা করে চলেছে।  এই পার্টিক্যাল গুলি ঘন্টায় প্রায় 1 মিলিয়ন মাইল বা 1.6 মিলিয়ন কিলোমিটার বেগে আমাদের গ্রহের দিকে ধেয়ে আসে যদিও 5 বিলিয়ন বছর পরে আমরা এখনকার মতো এতটা সৌভাগ্যবান থাকবো না, কারণ তখন এই সোলার উইন্ড সূর্যের মৃত্যুর প্রাক্কাল থেকে অতীব শক্তিশালী হয়ে উঠবে। 



সূর্যের ধ্বংসের শেষ ধাপে এটির হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে এবং এটি একটি লাল দানবে পরিণত হবে। এই সময় সৌর ঝড় এত শক্তিশালী হবে যে, এটি পৃথিবীর ম্যাগনেটিক শিল্ডকে ধ্বংস করে দেবে যার ফলে আমাদের বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ অংশই মহাকাশে বিলীন হয়ে যাবে। 

যার অর্থ দাঁড়ায় আমাদের গ্রহে সূর্যের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরক্ষা কবচ থাকবে না এবং জীবন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে।



এক বিলিয়ন বছরের কাছাকাছি সময় বাদে সূর্য একটি শ্বেত বামনে পরিণত হবে এবং তার কয়েক বিলিয়ন বছরে এটি সম্পূর্ণ মৃত হয়ে যাবে যা কোন রকমের আলো উৎপন্ন করতে পারবে না। এছাড়া সূর্যের আকর্ষণ ক্ষমতা এত দুর্বল হয়ে যাবে যে আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলি এখনকার অবস্থান থেকে প্রায় দ্বিগুণ দূরত্বে চলে যাবে।

গবেষকরা সোলার উইন্ড 'radiating' করা আমাদের সূর্যের থেকে 1 থেকে 7 গুণ বেশি ঘনত্ব সম্পন্ন বিভিন্ন নক্ষত্রের মডেল তৈরি করে উপলব্ধি করেছে যে, সূর্যের এই বিবর্তন চলাকালীন আমাদের ম্যাগনেটিক ফিল্ডকে অক্ষত থাকতে হলে বর্তমানের থেকে এটিকে অন্তত 1000 গুন বেশী শক্তিশালী হতে হবে।



দিমিত্রি ভেরাস যিনি ইউ. কে এর 'ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির' এস্ট্রোফিজিসিস্ট, দাবি করেছেন, এই গবেষণাটি প্রদর্শন করছে স্টেলার এভলিউশনের জায়েন্ট ব্রাঞ্চ ফেসগুলি অবিচ্ছিন্নভাবে চলাকালে একটি গ্রহের নিজস্ব প্রটেক্টিভ ম্যাগনেটোস্ফিয়ার মেন্টেন করার সমস্যা গুলিকে।



যদিও এটি শুনে যতটাই ধ্বংসাত্মক মনে হয় তবুও পৃথিবীর ভবিষ্যৎ জীবনের পক্ষে একটি আশার ছোট আলো পাওয়া যায়। যেহেতু শ্বেত বামনের থেকে কোন সৌর ঝড় বা সোলার উইন্ড নির্গত হতে পারে না, তাই একটি সম্ভাবনা থাকে যে আমাদের গ্রহ আবার বসবাসযোগ্য হতে পারে। তাই লাল দানবের থেকে আসা শক্তিশালী ঝড়ের বোমা বর্ষণের শেষ হওয়ার পর আবার নতুন করে প্রাণের বিবর্ধন শুরু হতে পারে। এটা সেই সকল গ্রহ যারা শ্বেত বামনকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে তাদের পক্ষেও প্রাণের সূচনার পক্ষে একটি ভালো খবর। এই গবেষণাটি " monthly notices of the the royal astronomical society"  নামক জার্নালে প্রকাশিত করা হয়েছে যেখানে আপনারা এটিকে সম্পূর্ণরূপে পড়তে পারেন।