Monday, 30 April 2018

ভয়ংকর স্পার্টান যোদ্ধাদের জীবনের অদ্ভূত বিষয়গুলো--

** এই পোস্টের তথ্যগুলি বিভিন্ন ঐতিহাসিক প্রবাদ, গল্প, তথ্যের ভিত্তিতে লেখা আম্র নিজস্ব অভিমত না **

প্রাচীন কিংবদন্তি এক যোদ্ধা জাতি স্পার্টান, হলিউডের কল্যানে যোদ্ধা হিসেবে তাদের কৌশল, দৃঢ়তা ও অসাধারণ বীরত্বের গল্প আমরা অল্পবিস্তর অনেকেই জানি। ইতিহাসের অন্যতম যুদ্ধবাজ এই জাতি প্রতিপক্ষের জন্য ছিল আতঙ্কের অপর একটি নাম। 



গ্রীক বীর আলেকজান্ডার জয় করেছিলেন পুরো পৃথিবীকে। কিন্তু পুরো পৃথিবীকে জয় করলেও পৃথিবীর একটি দেশকে ঘাঁটাবার মতন সাহস পাননি। দেশটির পাশ দিয়ে দেখে ফিরে গিয়েছেন। যুদ্ধ করা তো দূরে থাক, যুদ্ধ করার চিন্তাও মাথায় আনেননি তিনি। এই দেশটি ছিল গ্রীসের অন্যতম শক্তিশালী নগরী স্পার্টা। স্পার্টান বালকদেরকে এমনভাবে গড়ে তোলা হতো, যেন তারা ঘুমের মধ্যেও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে। যোদ্ধা হয়ে উঠতে কিন্তু এমন অনেক কার্যক্রম ও নিয়ম মেনে চলতো স্পার্টানরা যে সেগুলোকে দেখে অনেক সময় পাগলামীও মনে হতে পারে। চলুন দেখে আসি সাহসী যোদ্ধা জাতি স্পর্টানদের যোদ্ধা তৈরির  কিছু উদ্ভট পদ্ধতিকে--- 

----স্পার্টা লাসিদেমন নামেও পরিচিত ছিল সেকালে । বর্তমানে এর অবস্থান দক্ষিণ গ্রিসের লাকোনিয়া প্রদেশে। স্পার্টা ছিল প্রাচীন গ্রিসের একটি নগররাষ্ট্র; চারিদিকে পাহাড় ছিল যা বর্হিশক্রর হাত থেকে নগরীটিকে রক্ষা করত। এছাড়া বলা হয়, স্পার্টানরা নিজেদের শক্তিতে এত বেশি বিশ্বাসী ছিল যে, নিরাপত্তার খাতিরে তারা কখনো শহরের পাশে কোন দেয়ালও নাকি তোলেননি। খ্রিস্টপূর্ব ১১৫০ অব্দে উত্তর দিক থেকে ডোরিয়ান জাতি দক্ষিণে নেমে এসেছিল। এরাই ছিল স্পার্টার পূর্বপুরুষ। স্পার্টার নাগরিকরা অবশ্য মনে করত যে তারা হারকিউসের বংশধর।  

---একটি সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধাবাহিনী গঠনের অন্যতম পদ্ধতি হলো এমন একটি সমাজব্যবস্থা গঠন করা যেখানে সৈন্যবাহিনী বা যোদ্ধা তৈরির প্রক্রিয়া খুব ভালো ভাবে চলতে থাকে। যখন কোন ছেলে স্পার্টান সন্তানের জন্ম হয় তখন দেখা হতো যে,এই সন্তান বড় হয়ে স্পার্টান সেনাবাহিনীতে একজন সৈনিক হওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী কিনা। স্পার্টাবাসীও তাদের শিশুদের নিয়ে সহজে সন্তুষ্ট হত না। তবে পরিবার নয়- রাষ্ট্রই আমৃত্যু শিশুর ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করত। শিশুরা তাদের বাবা-মার সন্তানের চাইতে বেশি ছিল রাষ্ট্রের সন্তান।  সদ্য ভুমিষ্ঠ শিশুকে নিয়ে যাওয়া হত পর্যবেক্ষক কাউন্সিলে যেখানে শিশুটিকে পরীক্ষা করে দেখা হত যে যোদ্ধা হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে আদর্শ কিনা! পর্যবেক্ষকের দৃষ্টিতে ‘আদর্শ’ সনদ না পাওয়া শিশুটিকে কতটা করুণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় তা কল্পনার অতীত, তার বাবাকে আদেশ দেওয়া হতো যেন শিশুটিকে ‘অ্যাপোসথেটা’ নামক জায়গায় রেখে আসা হয়।
বলা হয়ে থাকে শিশুটিকে মাউন্ট টেইগাটাসের ফাটলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হত। অবশ্য বেশিরভাগ ঐতিহাসিক এটিকে শুধু মিথ বলেই উড়িয়ে দেন। কিন্তু যেটি নিয়ে খুব একটা দ্বিমত নেই, শিশুটিকে ফেলে রেখে হতো কোন এক নির্জন পাহারের পাদদেশে, সেখানে শিশুটির ভাগ্যে খাদ্যের অভাবে বা কোন হিংস্র জন্তুর আক্রমণে মৃত্যু অথবা কোন হৃদইয়বানের উদ্ধার ও লালিত হওয়া এসবের যেকোন কিছু হতে পারে। নির্বাচিত শিশুটিকে যেতে হয় এরচেয়ে কম অমানবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে; তবে তাও অনেক কঠিন। তার মৃগীরোগ আছে কিনা দেখার জন্য শিশুটিকে ওয়াইন দিয়ে স্নান করানো হতো। যদি ওয়াইনের ছোঁয়ায় শিশুটি কেঁপে উঠত তবে তারও একই পরিণতি হতো! যদি বাচ্চাটি এরপরেও বেঁচে থাকত, তবেই সে স্পার্টায় বেঁচে থাকার সম্পূর্ণ অধিকার পেত। কান্না করলে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না এবং ধীরে ধীরে তাকে শেখানো হত এই কান্নার কোন গুরুত্বই নেই। মানসিক দক্ষতা বাড়ানোর জন্যে একাকিত্ব, নির্জনতা ও অন্ধকারে ভয় না পাওয়ার জন্যে প্রণোদিত করা হত নানাভাবে। 

--স্পার্টান সমাজে ৫-১১ বয়সকে কৈশোর ও ১২ বছর থেকেই যৌবনকাল হিসেবে ধরা হতো। মাত্র ৭ বছর বয়সেই মা-বাবা থেকে আলাদা করে নিয়ে তাদের জায়গা দেওয়া হতো ব্যারাকে, যেখানে রাষ্ট্রের খরচে শুরু হতো আদর্শ যোদ্ধা ও নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হতো ‘অ্যাগোজ’ নামক শিক্ষা গ্রহণের জন্য; আর তার দায়িত্বে থাকত ‘ওয়ার্ডেন’ পদবিধারী একজন শিক্ষক।
অ্যাগোজ গ্রহণ করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। ব্যারাকে থাকাকালীন অবস্থায় ছেলেদেরকে একে অপরের সাথে মারামারি করতে উৎসাহিত করা হতো। স্পার্টানদের বিদ্যালয় এমন কোনো সাধারণ বিদ্যালয় ছিল না যেখানে শিক্ষকরা কেবল শৃঙ্খলা টিকিয়ে রাখত। যদি কোনো ঝামেলা বাঁধত, তাহলে ছেলেদেরকেই তার হাত-কব্জির মাধ্যমে এর সমাধান করতে হতো। শিক্ষকের কাছে অভিযোগ করতে যাওয়া মানেই শিক্ষকের কাছেই বরং দুই হাত খাওয়া!

----ওয়ার্ডেনরা নিজেদের কাছে সবসময় চাবুক রাখত। যদি কোনো ছেলে কখনো খারাপ ব্যবহার করতো, তবে ওয়ার্ডেন তাকে নির্দয়ভাবে পেটাতে দ্বিধাবোধ করতো না। যদি কোনো বাবা জানতে পারত তার ছেলে শিক্ষকের কাছে মার খেয়েছে, তাহলে তার বাবা ছেলেটার উপর দ্বিতীয়বার চড়াও হতো। যদি না হয়, তাহলে বুঝে নিতে হতো ছেলেটিকে ত্যাজ্য করা হয়েছে!

---প্রথমেই শেখানো হতো  অস্ত্র হাতে নিয়ে এক ধরনের নাচ, এই প্রশিক্ষণ তাদের দ্রুতগামি করে তুলত। ব্যারাকে শিশুটিকে লিখতে-পড়তেও শেখানো হয়, পাশাপাশি আরো শেখানো হয় রণকৌশল, শরীরচর্চা, রণসঙ্গীত, শিকার এবং এমনকি চুরিও। 

--১২ বছর বয়সে শুধুমাত্র লাল কাপড়ের এক টুকরো ছাড়া যেকোনোরকম কাপড় নিষিদ্ধ করা হয় শীত কিংবা বর্ষা যে কোন ঋতুতেই। বাইরে ঘুমাতে বাধ্য করা হয় যেখানে হাতের কাছে পাওয়া জিনিস দিয়েই নিজের বিছানা তৈরি করে নিতে হতো। পেট ভরে নয়, এত কিছুর পরও খাবারের পরিমান ছিল খুবই সীমিত যাতে মুটিয়ে না যায়। স্পার্টান সমাজে মোটা ব্যক্তিদের খুবই নিচু হিসেবে দেখা হতো এবং অনেক সময় তাদের রাজ্য থেকেও বের করে দেওয়া হতো। প্রশিক্ষণরত যোদ্ধাদের চাবুক মেরে শাস্তি দেওয়া হয় খাবার চুরির জন্যে নয়, বরং চুরি করতে গিয়ে ধরা পরার জন্যে!

---স্পার্টান সমাজে পুরুষেরা যোদ্ধা ও নারীরা সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্যেই শুধুমাত্র বিবেচিত, তা সত্বেও মেয়ে শিশুদেরও অনেক কঠোর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নিতে হত। নাচ, গান, শরীরচর্চা এবং চাকতি নিক্ষেপ শিখতে হত কিশোরকাল থেকে এবং মনে করা হত মা হিসেবে এটি তাদের শারীরিকভাবে শক্তিশালী করবে।

----যদিও প্রচুর খাটতে হত, তবু স্পার্টান আর্মিতে বাচ্চা থেকে বড়- সবাইকেই দেওয়া হত নিন্মমানের অতি অখাদ্য খাবার। তাও আবার খুব অল্প পরিমাণে। স্পার্টানদের এই ভোজসভার সবচেয়ে আকর্ষণীয় খাবার ছিল ‘ব্ল্যাক ব্রথ’।  রক্ত, সিরকা আর লবণের মিশ্রণ দিয়ে রান্না করা মাংস! স্পার্টানরা সবাই মিলে একসাথে খেত, একই ছাদের নিচে বসে এবং একই খাবারের টুকরো ভাগাভাগি করে। ব্ল্যাক ব্রথই ছিলো মাংস দিয়ে তৈরি একমাত্র খাবার এবং সবাই কিছু না কিছু টুকরো পেত। অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার জন্য স্পার্টানদেরকে দ্বারস্থ হতে হতো বনের জন্তু-জানোয়ারের উপর। একমাত্র শিকারি দু’বার খেতে পারবে- প্রথমবার সবার সাথে ভাগাভাগি করে ব্ল্যাক ব্রথের মতো; বাকি অংশ নিজের বাসায়। শুধুমাত্র নিজের শিকার করা মাংসই বাসায় বসে খেতে পারত স্পার্টানরা এছাড়া আর কোন সময় বাড়িতে বসে খাবার গ্রহণের অনুমতি ছিল না কোন স্পার্টান যোদ্ধার। 

---রাতের খাবার শেষ হওয়ার পর একজন সহকারী ওয়ার্ডেন বা আন্ডার-মাস্টারের কাছে আসতে বাধ্য হত শিক্ষানবীশেরা। তাদেরকে কিছু প্রশ্ন করতো আন্ডার-মাস্টার। প্রশ্নগুলোর ধরন ছিল অনেকটা বর্তমান রচনামূলক প্রশ্নের মতো। যেমন: ‘বর্তমানে স্পার্টার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি কে?’ প্রতিটি ছাত্রকেই তার উত্তর সঠিক কেন, তা ব্যাখ্যা করতে হতো। উত্তরগুলো হতে হবে চটপটে এবং যুক্তিযুক্ত; অন্যথায় তার জন্য থাকত এক অদ্ভুত শাস্তির ব্যবস্থা। প্লুটার্খের মতানুযায়ী, যে ছাত্র দুর্বল উত্তর দিত, তার বুড়ো আঙ্গুল কামড়িয়ে রক্ত বের করে ফেলা হতো!
সহকারী ওয়ার্ডেনের জন্যও জীবন খুব সহজ ছিল না। মৌখিক পরীক্ষার পর তিনি ছাত্রদের উত্তরের একটা সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা তুলে ধরতেন প্রধান ওয়ার্ডেনদের কাছে।  যদি পরীক্ষায় দেখা যেত যে আন্ডার-মাস্টার শিক্ষার্থীকে কম বা বেশি মেরেছে কিংবা কোন গাফিলতি করেছে তাহলে শাস্তি হিসেবে আঘাত পেতে হত তাকেও।

-----আপনি যদি একজন স্পার্টান হন, তাহলে আপনি কোনো ব্যাংকার, উকিল, গণিতবিদ বা অন্য কিছু নন- আপনি স্রেফ একজন সৈন্য, একজন স্পার্টান সৈন্য। শিক্ষাব্যবস্থাও এমনভাবে প্রণয়ন করা ছিল সেখানে, যেন স্পার্টানরা সেরা যোদ্ধা ছাড়া অন্যকিছু হবার কথা চিন্তাও না করতে পারে। স্পার্টানদের যুদ্ধের কলাকৌশল ছাড়া আর একটা জিনিসই শেখানো হতো, তা হলো লেখা পড়তে পারা। এছাড়া আর সবকিছুই ছিল নিষিদ্ধ। স্পার্টান বালকদের জন্য অবসর সময়ে যোগ-বিয়োগ কিংবা দর্শনশাস্ত্রের চর্চা করা ছিল একেবারেই নিষিদ্ধ।স্পার্টানদেরকে যদি দেখা যেত, তারা সৈন্য ছাড়া অন্য কিছু হওয়ার চেষ্টা করছে, তাহলে তারা যেন অন্য কিছু হতে না পারে, সেজন্য তাদের পড়ালেখার ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হতো।

---ত্রিশ বছর বয়সেও agoge পাস না করা স্পার্টান যুবকদের স্পার্টান স্টেট পূর্ণ নাগরিকের অধিকার দিতো না এবং তাদের থেকে সামরিক সেবা না পাওয়ার কারনে এই সকল স্পার্টানদের নিজস্ব জমি ভোগ করতেও দেওয়া হতো না। প্রশিক্ষণের দুই দশকেরও বেশি সময় পর, যদি একজন মানুষ স্পার্টার পূর্ণ নাগরিক হন তবে তিনি অন্য কোন পেশায় বা অন্য কোন ব্যবসা করতে পারতেন না।


---পাস করার পর আবার তারা ব্যারাকে ফিরে যেত। এবার তারা সৈন্য। তবে ট্রেনিংয়ের নতুন স্তর আরম্ভ হত। এর একটা হল: ‘নৈশকালীন যুদ্ধ’। রাতের অন্ধকারে পাহাড়ে কিংবা বনাঞ্চলে গেরিলা পদ্ধতিতে দাসদের ধরে ধরে হত্যা করত। 

---তারা এ সময় বিয়েও করত। রাষ্ট্র তাদের জমি দিত। জমিতে খাটত দাস। দাসরা ফসলের অর্ধেক তাদের দিত। কাজেই ফসল ফলানোর দুশ্চিন্তা ছিল না। তাছাড়া তাদের স্ত্রীরাও জমিজমা দেখাশোনা করত। কাজেই তারা ছিল সার্বক্ষণিক সৈন্য।যোদ্ধা হওয়া ব্যতিত বাকি অন্য পেশা তাদের জন্যে ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ।  আসলে দাসশ্রমের ওপরই টিকে ছিল স্পার্টান সমাজ। জীবনের কেন্দ্রে ছিল যুদ্ধ। অবশ্য ৩০ বছর হলে পর পরিবারের সঙ্গে থাকা যেত। তবে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের রিজার্ভ যোদ্ধা হিসেবে ধরা হয় তারপরে অবসর জীবন। 

---স্পার্টান সমাজে আরও দুই শ্রেণীর নাগরিক বিদ্যমান ছিল।একটি সম্প্রদায় ছিল পেরিওইসি এবং অন্যটি ছিল হেলোটস।পেরিওইসি ছিল এমন নাগরিক সম্প্রদায় যারা কাছাকাছি বসবাস করতেন এবং যুদ্ধের সময় বিভিন্ন কৌশলে স্পার্টান যোদ্ধাদের সাহায্য করতেন।এদের অনেকেই ব্যবসায়ী, কারিগর এবং অন্যান্য অবকাঠামোগত কাজ করতেন। হেলোটসরা ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ভুমিদাস বা কৃষক,মোট জনসংখ্যার সিংহভাগ। স্পার্টান রাষ্ট্রের সবকিছুই নগর-রাষ্ট্রের সামরিক শক্তি প্রদর্শন এবং শক্তিশালী করার জন্য ব্যবহার করা হতো। 

--১৮ বছর থেকেই একজন স্পার্টান পুরুষ সত্যিকার যোদ্ধা হিসেবে পরিচিতি পায়। স্পার্টান বাহিনীর ছিলThe Krypteia নামের গোপন নিষ্ঠুর একদল যোদ্ধা বাহিনী। এই সিক্রেট সার্ভিসে নেওয়া হত ৩০ এর নিচের যোদ্ধাদের এবং যোগ দেওয়ার পূর্বে তাদের সবচেয়ে অমানবিক ও নিষ্ঠুর যে কাজটি করা লাগত তা হল নিরীহ দাসদের হত্যা করা! প্রক্রিয়াটি শুরু হয় একজন স্পার্টান নেতার যেকোনো কারণ দেখিয়ে অথবা ভুয়া বিদ্রোহের ধোয়া তুলে দাস হত্যার নির্দেশ দেওয়ার মাধ্যমে, যা স্পার্টার আইনব্যবস্থায় বৈধ। নির্দেশ পাওয়ার পর স্পার্টান যোদ্ধারা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেরিয়ে যেত দাস অধ্যুষিত এলাকায়, বেশিরভাগ সময়ে হত্যার জন্যে গেরিলা কায়দায় আক্রমণ পরিচালনা করা হয় এবং অবশ্যই রাতের অন্ধকারে। 

---Artemis Orthia মন্দিরের বেদীতে প্রতি বছর ধর্মীয়ভাবে আয়োজন করা হতো ভয়ংকর এক প্রথাগত উৎসব যেটি ডায়ামাস্টিগোসিস নামে একটি বার্ষিক উৎসব । এই বাৎসরিক প্রথায় সামরিক প্রশিক্ষণে থাকা স্পার্টান তরুনদের সাহসিকতা, ধৈর্য্য ও ব্যথা সহ্য করার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হত , বালক থেকে পুরুষ- সব স্পার্টানরা ভীড়ের ভেতরে গিয়ে দাড়াতো আর তাদেরকে ক্রমাগত চাবুক দিয়ে  আঘাত করা হত বারবার। ভয়ংকরভাবে রক্তাক্ত হয়ে উঠে এই উৎসব এবং অনেক সময়ে তরুণ স্পার্টানদের কেউ কেউ যন্ত্রনায় ও রক্তক্ষরণে মারা যেত। প্রতিযোগিতা হত কে কতক্ষণ দাড়িয়ে থেকে আঘাত সহ্য করে তার ওপর ভিত্তি করে। মৃত্যু এলেও এটি ছিল স্পার্টানদের জন্যে গৌরবের বিষয়। সবাই চাইতো অংশ নিতে এই প্রতিযোগিতায়। একটা সময় দূর দেশ থেকেও স্পার্টায় এসে টিকেট কেটে এই প্রতিযোগিতা দেখা শুরু করে অন্য দেশের মানুষেরা। 

----স্পার্টানদের যোদ্ধাদের মধ্যে আত্মসমর্পন শব্দটির কোন জায়গা নেই, তাদের সার্বিক কর্তব্য সাহসিকতার সাথে এবং শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রে যদি একজনও অবশিষ্ট থাকে! আত্মসমর্পন করা যোদ্ধার কোন জায়গা ছিল না  স্পার্টান সমাজে, তাকে দেখা হয় ভীত কাপুরুষ হিসেবে এবং সমাজে এত লজ্জা ও অপমানের সম্মুখীন হতে হয় যে প্রায়ই এমন যোদ্ধারা আত্মহত্যা করত। স্পার্টার মায়েরা তাদের সন্তানদের হাতে ঢাল তুলে দিয়ে নাকি বলত "Come back with your shield, or on it." 

---যদি কোনো স্পার্টান বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যেত, তবে তার জন্য কেউ সম্মান দেখাত না; কোনরকম চিহ্ন ছাড়াই তার লাশকে পুঁতে ফেলা হত। স্পার্টানরা যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু হলেই সমাধির অধিকারী হতে পারতো। নারীরাও কবরফলক পাওয়ার সুযোগ পেত যুদ্ধ না করেই, তবে সেটা মাত্র একটি পদ্ধতিতেই- যদি সে বাচ্চা জন্ম দিয়ে মারা যেত। 

#স্পার্টান যোদ্ধা
#স্পার্টা

No comments:

Post a Comment