ভয় শব্দটি শুনলে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে
ওঠে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। প্রত্যেকেরেই ভয় পাওয়ার ধরণ আলাদা। কারো ভয়
সাগরে, কারো পাহাড়ে আবার কারো বা ভূতে। কিন্তু ভয়ের মাত্রাটা আরো বেড়ে যায়
যদি মানুষ খেকো কোন জন্তু-জানোয়ারের কথা শুনি কিংবা দেখি। তেমনই এ ভয়ের নাম মানুষ খেকো গুহা। এ গুহার কাছে গেলে নিমিষেই সে মানুষ গিলে খায়।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি পৃথিবীতে এমন একটি
গুহা আছে যেটি মানুষ খেকো গুহা নামে পরিচিত। গুহা কি মানুষ খেতে পারে? হয়তো
পারে আবার পারে না। কিন্তু আমরা যে গুহার কথা বলছি সেটাতে শুধু মানুষ কেন,
যে কোন জীব জন্তু ঢুকলেই আর জীবিত বেরিয়ে আসতে পারে না। ভয়ানক সেই মানুষ
খেকো গুহাটি তুরষ্কে অবস্থিত।
গ্রিক ভূগোলবিদ স্ট্রাবোর জানান,প্রাচীন গ্রিক শহর হিয়ারাপোলিসে একটি
প্রাচীন এপোলো দেবতার মন্দির বানানো হয়েছিলো।পরে নানা কারণে সেটি রহস্যময়
মন্দিরে পরিণত হয়।সেই মদিরের পাশেই ছিলো একটি গুহার অবস্থান।জানা গেছে সেই
গুহার ভেতর কোনো জীব জন্তু অথবা কোনো পশুকে ছুড়ে দিলে তা আর কোনোভাবেই ফিরে
আসতে পারতো না।এমনকি মানুষও যদি গুহার সামান্য পথ অতিক্রম করতো তাহলে সেও
ফিরে আসতে পারতো না।
সবথেকে চমকে দেওয়ার ঘটনা হলো সেই গুহায় যদি কোনো পুরিহিত প্রবেশ করতো তাহলে
সে একদম নিরাপদভাবে গুহা থেকে ফিরে আসতে পারতো।তবে তাদের মুখমন্ডল ফুলে
যেতো ও রক্তাত্ব থাকতো।প্রাচীন গ্রিকবাসীরা মনে করতেন এটি পরলোকে গমন করার
পথ।এই গুহায় অপদেবতারা রাজত্ব করেন।সাধারণ মানুষ বা জীব-জানোয়াররা সেখানে
গেলে অপদেবতারা তাদের মেরে ফেলে আর দেবতারা গেলে তাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে
অপদেবতাদের সাথে লড়াই করে ফিরে আসতে পারে।প্রাচীন গ্রিকবাসীদের বিশ্বাস ছিল এই গুহা হল পরলোকে যাওয়ার পথ এবং সেখানে রাজত্ব করে অপদেবতারা। সাধারণ মানুষ বা জীব-জানোয়াররা সেখানে গেলে অপদেবতারা তাদের মেরে ফেলে আর দেবতারা গেলে তাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতাবলে অপদেবতাদের সাথে লড়াই করে ফিরে আসতে পারেন সে কারণেই। স্ট্রাবো এই তথ্যটি তার পুঁথিতে লিখেছিলেন ২০০০ বছর আগে। অবশ্য বর্তমানে
আধুনিক বিশ্বের মানুষ ভূত, প্রেত, দেবতা বা অপদেবতা বিশ্বাস করে না।
বিজ্ঞানেও এদের কোন বাস্তবতা নেই। তাহলে কি সেখানে কোন অপদেবতা ছিল না?
আবার না থাকলেই বা সেখানে মানুষ, জীব-জন্তুদের মেরে ফেলতো কারা? তাহলে কি
ওই গুহাটি নিজেই মানুষ খেকো গুহা!
স্ট্রাবোর পুঁথির সূত্র ধরে
আমেরিকার নিউইয়র্ক কলেজের অধ্যাপক শেলডেন এই বিষয়ে নির্ভরযোগ্য নতুন তথ্য
প্রকাশ করেন। তিনি মত প্রকাশ করেন, ওই গুহার নিচ থেকে প্রাকৃতিক ভাবে
কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস নির্গত হতো। ফলে কোন মানুষ বা জীব-জন্তু গুহার
ভিতরে প্রবেশ করলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের প্রভাবে শ্বাসকষ্টে মারা
যেত।
তাহলে এখন প্রশ্ন দেবতারা ভিতরে ঢুকলে মারা যেত না কেন? এ
ব্যাপারে শেলডেন বলেন, দেবতারা বিষয়টা পূর্ব থেকেই জানতো সেজন্য তারা এই
গুহার ভিতরে ঢুকে দম বন্ধ করে থাকতো। এবং বাইরে এসে তাদের শক্তি ও ক্ষমতার
মহিমা প্রচার করতো। তবে তারা যখন গুহার বাইরে আসতো তখন তাদের মুখম-ল
গ্যাসের চাপে ফোলা ও রক্তাত্ত্ব থাকতো।
এই প্রাচীন গ্রিক শহরটি
বর্তমানে পশ্চিম তুর্কির পাযুক্কাল শহরে অবস্থিত। সরেজমিনে সেখানে গিয়ে
দেখা গেছে, সেখানে আছে প্রচুর উষ্ণ প্রসরণ। তার মধ্যে আছে অধিক পরিমাণ
ক্যালসিয়াম কার্বনেট। এসিডের সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে এ থেকে উৎপন্ন হয় প্রচুর
কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস। বাষ্প এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড কোনও ফাটল দিয়ে
ঢুকে যায় গুহার ভেতর। আর তাই ভিতরে কয়েক পা গেলেই নিশ্চিত মৃত্যু। এপোলোর
মন্দিরের সেই রহস্যময় গুহাটি আজও আছে।
কয়েক বছর আগে একদল অস্ট্রেলীয়
ছাত্র অনুসন্ধিৎসা বশত: ওই গুহার ভেতরে ঢুকেছিল পরীক্ষার জন্য। দুর্ভাগ্য
হলেও সত্য এটাই যে, তারা আর ফিরে আসেনি। এরপর থেকে তুর্কি সরকার গুহামুখে
লোহার পাত বসিয়ে দিয়েছে । যাতে আর কেউ ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে।
No comments:
Post a Comment