কৈলাস পর্বতকে দেবাদিদেব মহাদেবের আবাস বলে বর্ণনা করেছে হিন্দু পুরাণ।পশ্চিম তিব্বতের এই পর্বত কেবল হিন্দুদের কাছেই নয়, জৈন, বৌদ্ধ, তিব্বতের প্রাচীন ‘বন’ ধর্ম- সব কয়টিই কৈলাসকে পবিত্র বলে মনে করে। ২২০০০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট এই পর্বত তার চেহারার দিক থেকেও স্বাতন্ত্রপূর্ণ। তার উপরে এই পর্বতের সন্নিহিত মানস সরোবরের অবস্থান একে অন্য মহিমা দান করেছে।
--ছটি পর্বতশ্রেণী পদ্মফুলের পাপড়ির মত ঘিরে আছে কিলাস পর্বতকে, এই পাহাড়কে প্রাচীন কাল থেকেই পৃথিবীর স্তম্ভ বলে মনে করা হয়, যা নাকি ধরে রেখেছে পৃথিবীর ভর।
----এই পর্বত থেকেই উৎসারিত হয়েছে এশিয়ার বেশ বড় একটা জনসংখ্যার প্রাণের উৎস। সিন্ধু, শতদ্রু, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণালী (গঙ্গার উপনদী) – সব এই পর্বতের আশেপাশে থেকেই সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথমদিকের মহাদেশগুলোর সংঘর্ষে তৈরি হয়েছিলো এই পর্বত। একটা আগ্নেয়গিরির সূত্রপাত হয়েছিলো তিব্বতের লাসা খাঁড়িতে ঐ সময়। সমুদ্রের চামড়া ফেটে যাচ্ছিলো ইউরেশিয়ার (Eurasia = ইউরোপ আর এশিয়ার যৌথ ভূমি) সাবডাকশনে। সেগুলোর ক্ষয় হলো, আর বাকি অংশটুকু থেকে সৃষ্টি হলো কৈলাস পর্বত।
প্রথমদিকের মহাদেশগুলোর সংঘর্ষে তৈরি হয়েছিলো এই পর্বত। একটা আগ্নেয়গিরির সূত্রপাত হয়েছিলো তিব্বতের লাসা খাঁড়িতে ঐ সময়। সমুদ্রের চামড়া ফেটে যাচ্ছিলো ইউরেশিয়ার (Eurasia = ইউরোপ আর এশিয়ার যৌথ ভূমি) সাবডাকশনে। সেগুলোর ক্ষয় হলো, আর বাকি অংশটুকু থেকে সৃষ্টি হলো কৈলাস পর্বত।
----কৈলাস পাহাড়ের আবহাওয়ায় এমন কিছু আছে যাতে নাকি মানুষের চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ দ্রুত ফুটে ওঠে | সাধারণভাবে মানুষের নখ-চুল যে হারে বাড়ে‚ কৈলাস পাহাড়ে অন্তত ১২ ঘণ্টা কাটালে নাকি এই বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ হয়ে যায় | এরকমই হাজারো বিস্ময়ের ধারক ও বাহক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধ্যানস্থ মহাদেবের আবাস কৈলাস পর্বত |
---ইউরোপের অকাল্টবাদীরা কৈলাসকে বিশেষ গুরুত্ব দেন। তাদের মতে, এখানে অতিপ্রাকৃত শক্তির অবস্থান। অনেকের মতে আবার এই স্থান যাবতীয় অতিপ্রাকৃতের কেন্দ্র।
---পুরাণ অনুযায়ী কৈলাস পর্বতের চারটি পাশ স্ফটিক, চুনি, সোনা এবং লাপিস লাজুলি দ্বারা গঠিত। এই তথ্য সত্য নয়। কিন্তু, দিনের বিভিন্ন সময়ে আলোর পড়ে এই সব পাথর বা ধাতুর বিভ্রম কৈলাস অবশ্যই তৈরি করে।
---সবথেকে আশ্চর্যজনক হল‚ কৈলাস পাহাড় এখনও কেউ জয় করতে পারেননি | বিশ্বের নানা দেশ থেকে এসে চেষ্টা করেছেন পর্বতারোহীরা | কিন্তু তাঁদের কারও প্রয়াস সফল হয়নি | কৈলাস থেকে গেছে অধরা | অথচ এই পাহাড় কিন্তু দুর্গম নয় | এর থেকে অনেক বেশি দুর্গম শৃঙ্গ জয় করেছেন পর্বতারোহীরা | কিন্তু কোনও এক রহস্যময় কারণে তাঁদের কাছে অজেয় কৈলাস |
---তিব্বতে প্রচলিত প্রাচীন কিংবদন্তি হল, ১১ শতকের তিব্বতী মহাযোগী মিলারেপাই একমাত্র কৈলাসে আরোহণ করেছিলেন।ফিরে এসে তিনি নিষেধ করেছিলেন এই পর্বত জয়ে যেতে | কারণ একমাত্র সে-ই মানুষই পারবে এর শীর্ষে যেতে‚ যার গায়ে কোনও চামড়া নেই | আধুনিক পর্বতারোহীরাও বলছে মাউন্ট কৈলাসা ইজ আটারলি আনক্লাইম্বেবল | কেন‚ সে কারণ অস্পষ্ট |
---তিব্বতী তান্ত্রিক ঐতিহ্য অনুযায়ী কৈলাস তাদের দেবতা ডেমচমংয়ের আবাস। হিন্দুদের মতে এখানে বাস করেন শিব। জৈন-ধারণায় কৈলাসের বাসিন্দা তাদের প্রথম তীর্থঙ্কর। এই তিন ধর্ম অনুসারে কৈলাসে আরোহণ নিষিদ্ধ।
----সংস্কৃতে কেলাস (Crystal) কথা থেকে কৈলাস কথাটির উৎপত্তি | কারণ বরফে ঢাকা কৈলাসকে দেখতে লাগে স্ফটিকের মতো | তিব্বতি ভাষায় এর নাম গাঙ্গো রিনপোচে | তিব্বতে বৌদ্ধ গুরু পদ্মসম্ভবাকে বলা হয় রিনপোচে | তাঁর থেকেই নামকরণ হয়েছে কৈলাস পর্বতের | অর্থ হল বরফের তৈরি দামী রত্ন |
----এক সময়ে রাশিয়ান বিশেষজ্ঞরা কৈলাসকে একটি বিশালাকৃতি পিরামিড বলে বর্ণনা করেছিলেন। তারা এই পর্বতকে মানুষের তৈরি বলেও জানান। কোনো গোপন কাল্টের উপাসনাস্থল হিসেবে তারা কৈলাসকে ব্যক্ত করেন। খুঁটিয়ে দেখলে কৈলাসের পিরামিডাকৃতি বোঝা যায়।
---কৈলাস পাহাড়ের পায়ের কাছে আছে মানস সরোবর এবং রাক্ষসতাল | এ দুই হ্রদ এশিয়ার বেশ কিছু দীর্ঘতম নদীর উৎস | ১৪‚৯৫০ ফিট উচ্চতায় মানস সরোবর বিশ্বের উচ্চতম মিষ্টি জলের হ্রদ | প্রকৃতির আজব সৃষ্টি !মানস-রাক্ষস দুই হ্রদ পাশাপাশি আছে | অথচ‚ মানসে আছে মিষ্টি জল | আর রাক্ষসে নোনা জল | মানস সরোবরের জল শান্ত | কিন্তু রাক্ষস তালের জল অশান্ত |
----কৈলাসের অবস্থান ইয়ার্লাং-সাংপো সন্ধিতে, এখানেই ইওসীন যুগের মহাদেশগুলো মিলিত হয়েছিলো আর আশেপাশের পাললিক শিলার রুপান্তর ঘটিয়েছিলো। এই কংগ্লোমারেটের সাথে শিলার ভার্টিক্যাল জয়েন্ট একত্রিত হয়ে, বরফ আর শিলার গায়ে তৈরি করেছিলো একটা স্বস্তিকা। স্বস্তিকা, যেটা পবিত্রতার চিহ্ন, প্রায় সব কয়টি ধর্মে। স্বস্তিকা, যেটাকে গত শতাব্দীতে নাৎসীরা ব্যবহার করেছিল।
----তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম নিয়ে এসেছিলেন যে পদ্মসম্ভব আর প্রথম জৈন হিসেবে খ্যাত তীর্থংকর, দুজনেই এখানে বোধিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। আঞ্চলিক তিব্বতীয় বনপো ধর্মের মানুষ এটাকে ডাকে নয়তলা স্বস্তিকা পর্বত
----একদম চূড়াতে কোনো বরফ জমে না, কারণ এটার শরীর এতোটাই খাড়া। বরফ নিচে পড়ে যায়, গলে যায়, আর উৎপত্তি হয় পবিত্র সেই নদীগুলোর। এই মরুভূমির মত এলাকাতে এটাই শ্বেতশুভ্র পর্বত হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, হিমালয়ের প্রথম ও প্রধান রেঞ্জ হিসেবে।
কেউ এখন পর্যন্ত এটার চূড়ায় ওঠেনি, যদিও লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী হাজার হাজার বছর ধরে এটাকে চক্কর মেরেছে, জ্ঞান আর পুনর্জন্মে সুখী হবার আশায়। অনেকেই বারবার অবনত হয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেছে এর চারপাশে যে ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক আছে, সেই পথে হাঁটতে হাঁটতে। পর্বত আরোহণ জগতের বিখ্যাত নক্ষত্র রেইনহোল্ড মাইসনার এর চূড়াতে আরোহণ করার জন্য চায়না সরকারের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।
No comments:
Post a Comment