Friday, 30 March 2018

মধুর রহস্য

কার্ল ভন ফ্রিশ নামে এক  বিজ্ঞানী মৌমাছির ওপর ব্যাপক গবেষণা করে ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান । গবেষণায় মধুর গুণাবলি ধাপে ধাপে আবিষ্কারের আগে প্রাণীর যুগ থেকেই মধুকে প্রচলিত ওষুধ হিসেবে ব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন খাদ্য সংরক্ষণ ও খাদ্য প্রস্তুতে ব্যবহার করা হতো।

---রাসায়নিক উপাদান : লেভিউলোজ, ডেক্সট্রোজ, সুক্রোজ, ডেক্সট্রিন, খনিজ পদার্থ, এমাইনো এসিড, প্রোটিন, উদ্ভিদজাত প্রাকৃতিক রঞ্জক পদার্থ, টেনিক এসিড, সুমিষ্ট ঘ্রাণযুক্ত অ্যাসেনসিয়াল অয়েল, এলডিহাইড, বিভিন্ন এনজাইম, ভিটামিন, হরমোন, ফ্লেভোনয়েড, ফেনোলিক এসিডজাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং জীবাণুনাশক পদার্থ। জৈব এসিডগুলোর মধ্যে মধুতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রয়েছে অ্যাসিটিক, লেকটিক, টারটারিক, অক্সলিক ও সাইট্রিক এসিড। টেনিক এসিড, কেরোটিন, জেনথোফিল ইত্যাদি প্রাকৃতিক রঞ্জক পদার্থগুলোর জন্য মধু রঙিন হয়ে থাকে।
----খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন : খনিজ পদার্থগুলোর মধ্যে রয়েছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ক্লোরিন, সালফার, ফসফরাস, আয়রন, নিকেল, সিলিকন, কপার ইত্যাদি যা মানবদেহের বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতার জন্য অতীব জরুরি। ভিটামিন-এ ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স ও ভিটামিন-সি এর একটি ভালো উৎস হিসেবে মধুকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
----এনজাইম : ইনভারটেজ, ডায়াস্টেজ, এমাইলেজ, ইনুলেজ, ক্যাটালেজ ইত্যাদি এনজাইম মধুর বিচিত্র গুণাবলিতে ভূমিকা রাখে। মধুতে বিদ্যমান অক্সিডেজ এনজাইম দ্বারা তৈরি হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের জীবাণুনাশক গুণের জন্য চামড়ার পোড়া জায়গায় মধুর বাহ্যিক ব্যবহার অন্যন্ত ফলপ্রসূ। মধুর আর্দ্রতা নিরোধক গুণের জন্য বিস্কুটজাতীয় খাদ্যকে মচমচে রাখতে সহায়তা করে বিধায়, বিস্কুট প্রস্তুতিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মধু ব্যবহৃত হয়।

----ঔষধি গুণাবলি : পোড়া জায়গায় সংক্রামণের কারণে যে প্রদাহ সৃষ্টি হয় তাতে রক্তের কৈশিকনালিগুলো ছিঁড়ে যায় এবং চর্তুদিকের কোষ থেকে রক্ত বের হয়ে পোড়া এলাকা ফুলে যায়। মধু ব্যবহারে দেখা যায় যে এ ধরনের প্রদাহ, ফোলা অথবা নিঃসরণ ও ব্যথা কমে যায়। ক্ষত টিস্যুতে অণুবীক্ষণিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায় মধুর বাহ্যিক ব্যবহারে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণ, প্রদাহে ক্ষত টিস্যুর রক্ত কনিকার তুলনায় হ্রাস পায় এবং এতে বোঝা যায় যে মধু সরাসরি প্রদাহের উপশম হিসেবে কাজ করে। মধুর এ ধরনের বাহ্যিক ব্যবহারে কোনো উত্তেজনা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আংশিক পোড়া চামড়ার চিকিৎসায় দেখা যায় যে, প্রচলিত ড্রেসিং হিসেবে কার্যকর পলিইউরেথের, সিলভার সালফাডায়াজিন ইত্যাদি অপেক্ষা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াশূন্য অ্যামনিয়ন মেমব্রেন, বয়েলড পটেটো পিল মধুসহ অধিকতর কার্যকর। পূর্ণ পোড়া চামড়ার চিকিৎসায় দেখা যায় যে, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল নাইট্রোফিউরাজোন, এমপিসিলিন অপেক্ষা মধু দ্রুত কার্যকর। মধুর অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও এন্টিভাইরাল গুণাবলির জন্য ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে মধু বিশেষ উপকারী ভূমিকা রাখে। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি জীবাণুর ক্রমান্বয়ে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সিনথেটিক ওষুধগুলো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে যেখানে মানুষের মধ্যে ওষুধভীতি দেখা যাচ্ছে, সেখানে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া জীবাণুনাশক ও আরোগ্যকারী, অথচ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াশূন্য মধু মানুষের জন্য একটি নিরাপদ ওষুধ যা একই সঙ্গে ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাদ্য হিসেবে চির উন্নত।

No comments:

Post a Comment