ক্লান্তিকর দিন শেষে একটু আরামের ঘুম সবার জন্যেই দরকার। শরীর ও মন সুস্থ রাখার জন্যে পরিমিত আরামদায়ক ঘুমের বিকল্প নেই। ঠিকমত ঘুমাতে না পারলে শরীরের ক্লান্তি দূর হয় না, যার প্রভাব পরে কর্মক্ষেত্রে। সারাদিনের প্রচন্ড গরম সহ্য করা গেলেও ঘুমাতে গেলে গরম বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে বাড়িতে যদি এয়ার কন্ডিশনার বা এয়ার কুলার না থাকে। উচ্চ তাপমাত্রায় আমাদের মগজ শরীরকে না ঘুমানোর নির্দেশ দেয় ফলে বিড়ম্বনা বেড়ে যায় বহুগুণ। তাহলে গরমে শান্তিতে ঘুমানোর জন্যে কী করা যায়? একটু কৌশল অবলম্বন করলেই এই গরমেও শান্তিতে ঘুমানো যায় খুব সহজেই।
ঘুমানোর আগে গোসল করুন
যদি অনেক গরম থাকে তাহলে ঘুমানোর আগে স্নান করলে শরীরের তাপমাত্রা সাধারণের তুলনায় অনেক কমে যাবে। যার ফলে শরীরে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব নিয়ে ঘুমাতে সুবিধা হবে। ঘুমানোর আগে স্নান করলে ঘুমও গভীর হবে। যদি স্নান করা সম্ভব না হয় তাহলে সারা শরীর মুছে দিতে পারেন কিংবা পায়ের পাতা কিছুক্ষন জলে ভিজিয়ে তারপর ঘুমাতে যান।
স্নান করুন স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানিতে
বাইরে থেকে গরমে ঘেমে একাকার হয়ে বাড়ি ফিরে বরফ ঠান্ডা জলে স্নান করা উচিত না। এতে করে শরীরের ভিতরে তাপ ভিতরেই থেকে যাবে। যদি বাড়ি এসে ঘুমানোর আগে স্নান করুন তবে তা করবেন স্বাভাবিক তাপমাত্রার জলে।
ঘরের মেঝেতে ঘুমান
বিছানার তুলনায় ঘরের মেঝে ঠান্ডা থাকে। তোশকের চেয়ে কম আরামের হলেও এতে অনেক গরম কম লাগে। গরম বাতাস উপরে দিকে থাকে বেশি। তাই মেঝেতে ঘুমানো আরামদায়ক। চাইলে ঘুমানোর আগে ঘরের মেঝে জল দিয়ে মুছে নিতে পারেন। শুকানোর পর পাটি বিছিয়ে শুয়ে পড়ুন।
বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন
বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন
জানালা খোলা রাখা সম্ভব হলে খোলা রাখুন। এতে ঘর ঠান্ডা থাকবে। জানালার সামনে ভারী কাপড় ভিজিয়ে ঝুলিয়ে রাখলে বাইরের বাতাস প্রবেশের সময় ঠাণ্ডা বাতাস পাবেন। তাছাড়া ঘরে অতিরিক্ত একটা পোর্টেবল ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন। জানালার কাছাকাছি রাখলে বাইরে থেকে ঠান্ডা বাতাস ভিতরে ঢুকবে। ফ্যানের সামনে এক পাত্র বরফ রাখতে পারেন। এতে ঘরের বাতাস ঠাণ্ডা হয়ে আসবে। আবার ঘরের গরম বাতাস বাইরে বের করতে চাইলে ফ্যান জানালার দিকে ঘুরিয়ে রাখুন।
প্রয়োজন হলে একা ঘুমান
গরমের দিনে এক বিছানায় বেশি মানুষ না ঘুমানোই ভালো। গরমের সময়ে সাথে কেউ ঘুমালে তা বিরক্তির কারণ হতে পারে। কেননা বিছানায় আরেকজন মানুষ থাকা মানে তাপের আরেকটি উৎস। এ কারণে বিছানায় একা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। একজন বিছানায় এবং আরেকজন মেঝেতে ঘুমাতে পারেন। এতে হাত-পা ছড়িয়ে আরামে ঘুমাতে পারবেন।
বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়ে রাখুন
সকেট থেকে প্লাগ খুলে রাখুন, আলো সব নিভিয়ে দিন, ইলেক্ট্রনিক্স গেজেট গুলোর ব্যবহার রাখুন কম। এসব গ্যাজেট তাপ উৎপাদন করে যা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। ফোন এবং ল্যাপটপ রাখুন বিছানা থেকে দূরে। মোট কথা ঘর ঠান্ডা রাখার জন্যে যা করণীয় তাই করুন।
আরামদায়ক পোশাক
দিনে বা রাতে গরমের সময় সবাই একটু হালকা পোশাকই পরে থাকেন। ঘুমানোর সময়েও সবচাইতে আরামদায়ক, হালকা পোশাক পরুন এ সময়ে। হালকা ও আরামের জন্যে সুতির পোশাক বেছে নিতে পারেন। এতে ঘাম সহজে শুকিয়ে যায় ও শরীর থেকে তাপ চলে যায়।
বিছানা
গরমের দিন সম্ভব হলে বিছানার চাদর প্রতিদিন রাতে বদলে নিন। কারণ পরিষ্কার বিছানায় ঘুমালেই মনে এক রকমের প্রশান্তি আসে; যা ভালো ঘুমাতে সহায়তা করে। তবে এক্ষেত্রে বিছানার চাদর সুতির হওয়াই ভালো। আর ফোমের বিছানায় গরম লাগবে বেশি। ভালো হয় জাজিম ও তোশক ব্যবহার করলে। আরামের ঘুমের জন্যে শিমুল তুলার বালিশও ব্যবহার করতে পারেন।
খাওয়া দাওয়া
খাওয়ার ১ থেকে দুই ঘন্টা পর্যন্ত পরিপাক ক্রিয়ার জন্যে শরীর গরম থাকে। তাই শান্তিতে ঘুমাতে চাইলে ঘুমাতে যাওয়ার এক থেকে দুই ঘন্টা আগেই খেয়ে নিন রাতের খাবার। আর রাতে এমন খাবার খাওয়া উচিত নয় যা খেলে আপনার অস্বস্তির হয়।
জল পান করুন বেশি করে
স্বাভাবিক ভাবেই গরমে সবারই খুব ঘাম হয়। শরীরের সিস্টেম ঘামের মাধ্যমে তাপমাত্রা কমিয়ে আনে। এই জন্যেই দরকার বেশি করে জল পান। শরীর সতেজ রাখতে বেশি করে জল পান করা উচিত। খুব বেশি ঘামার প্রবণতা থাকলে ঘুমাতে যাওয়ার আগে শরীরে ট্যালকম পাউডার মেখে নিন। এক্ষেত্রে মেনথল ফ্লেভারের পাউডার বেশ আরাম দেবে।
No comments:
Post a Comment