যিশু
খ্রিস্টের জন্মের তিনশো বছর
পূর্বের কথা।ম্যাসিডনের
তৃতীয় আলেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্ব
৩৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন।প্রাচীন
গ্রিসের ম্যাসিডনের রাজা
ছিলেন তিনি। তাকে বলা হতো
অর্ধেক পৃথিবীর রাজা। তিনি
ছিলেন মেসিডোনিয়ার রাজা
দ্বিতীয় ফিলিপ ও তার চতুর্থ
স্ত্রী অলিম্পাসের সন্তান।
তার অধীনে মূল রাজ্য ছিল গ্রিসের
ছোট্ট রাজ্য ম্যাসিডন।
অত্যন্ত সুপুরুষ ছিলেন আলেকজান্ডার। বলিষ্ট চেহারায় রূপ আর শক্তির মিশেলে তিনি অন্য সকল রাজার থেকে ছিলেন স্বতন্ত্র। সিংহের মতোই বিক্রম ছিল তার। মাথায় সবসময় সিংহের চামড়া জড়িয়ে রাখতেন। তার বাবা ফিলিপ আলেকজান্ডারকে বলেছিলেন, “ম্যাসিডন বড়ই ছোট তোমার পক্ষে, একদিন সারা পৃথিবী জয় করবে তুমি।” তার বাবার কথাই সত্যি হয়েছিল। একের পর এক দেশ জয় করতে করতে পারস্য, মিশর, এশিয়া মাইনর হয়ে ভারতের পশ্চিমেও চলে এসেছিল আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনী।
রাজা হিসেবে মাত্র ২০ বছর বয়সে পিতা দ্বিতীয় ফিলিপের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। তার শাসনামলের বেশিরভাগ সময় তিনি উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়া জুড়ে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই তিনি মিসর থেকে শুরু করে উত্তর পশ্চিম ভারত পর্যন্ত ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, পৃথিবীর শেষপ্রান্তে পৌছানোর ইচ্ছে নিয়ে ৩২৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভারত অভিযান শুরু করেন। কিন্তু তার সেনাবাহিনীর দাবির কারণে ফিরে যেতে বাধ্য হন। অ্যাড্রিয়াটিক সাগর থেকে সিন্ধু নদ পর্যন্ত এক বিশাল সাম্রাজ্যের অধিশ্বর হয়ে ওঠেন আলেকজান্ডার। তিনি নিজেকে দেবতা জিউসের বরপুত্র ভাবতেন। তাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত তৈরি হতে থাকে নানা রোমাঞ্চকর গল্প। শোনা যায়, প্রাচীন গ্রিসে দেবী আর্টেমিসের মন্দির ছিল পৃথিবীর অন্যতম এক আশ্চর্যময় স্থান। আলেকজান্ডারের জন্মের দিন সেই মন্দিরটি নাকি পুড়ে যায়। চারদিকে রটে যায়, স্বয়ং আর্টেমিস নাকি এসেছিলেন আলেকজান্ডারের জন্মের সাক্ষী থাকতে। এরকম নানা কিংবদন্তীতে ভরপুর সম্রাট আলেকজান্ডারের জীবন।
৩২৩
খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনে
দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের
প্রাসাদে তার মৃত্যু হয়। তার
মৃত্যুর কারণ নিয়েও নানা মতভেদ
আছে। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর
কারণটা আজও আমাদের কাছে একটি
রহস্য। কীভাবে মারা গিয়েছিলেন
এই অর্ধেক পৃথিবীর রাজা?
অনেকে মনে করেন,
আলেকজান্ডারের মৃত্যু
হয়েছে অধিক মদ্যপানের কারণে।
কারও কারও মতে, তিনি
মারা গেছেন ম্যালেরিয়ায়
আক্রান্ত হয়ে। আবার অনেকে
দাবি করেন, তাকে
বিষ প্রয়োগে মেরে ফেলা হয়েছে।
যদিও বিষ দিয়ে মেরে ফেলার
ব্যাপারে কোনো বিশ্বাসযোগ্য
তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে সম্প্রতি ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল পয়জন সেন্টারের টক্সিকোলজিস্ট ড. লিও এসচেপের এক দীর্ঘ গবেষণায় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য। তার ভাষ্যমতে, ইউরোপীয় 'হোয়াইট হেলেবোর' নামক বিষাক্ত এক উদ্ভিদই আলেকজান্ডারের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আলেকজান্ডারের দৃঢ বিশ্বাস ছিল, তিনি ইজিপ্সীয় পূরাণের দেবতা আমনের সন্তান। এমন বিশ্বাসের কারণে মৃত্যুর আগে তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর মরদেহ যেন ইউফ্রেটিস নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। কেননা তিনি মনে করতেন, নদীতে ভাসিয়ে দিলে তার দেহ সরাসরি চলে যাবে স্বর্গে। কিন্তু তার সহযোগী ও অনুরাগী প্রজারা তা পারেননি। তাই তারা আলেকজান্ডারের মরদেহের জন্য অতি যত্নে প্রায় দু’বছর ধরে তৈরি করেছিলেন সুদৃশ্য মানবাকৃতি শবাধার। এই দু’বছর নাকি তার মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়।
তবে সম্প্রতি ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল পয়জন সেন্টারের টক্সিকোলজিস্ট ড. লিও এসচেপের এক দীর্ঘ গবেষণায় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এক তথ্য। তার ভাষ্যমতে, ইউরোপীয় 'হোয়াইট হেলেবোর' নামক বিষাক্ত এক উদ্ভিদই আলেকজান্ডারের মৃত্যুর জন্য দায়ী। আলেকজান্ডারের দৃঢ বিশ্বাস ছিল, তিনি ইজিপ্সীয় পূরাণের দেবতা আমনের সন্তান। এমন বিশ্বাসের কারণে মৃত্যুর আগে তিনি চেয়েছিলেন, তাঁর মরদেহ যেন ইউফ্রেটিস নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। কেননা তিনি মনে করতেন, নদীতে ভাসিয়ে দিলে তার দেহ সরাসরি চলে যাবে স্বর্গে। কিন্তু তার সহযোগী ও অনুরাগী প্রজারা তা পারেননি। তাই তারা আলেকজান্ডারের মরদেহের জন্য অতি যত্নে প্রায় দু’বছর ধরে তৈরি করেছিলেন সুদৃশ্য মানবাকৃতি শবাধার। এই দু’বছর নাকি তার মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়।
বিখ্যাত
ইতিহাসবিদ প্লুতার্ক এর
বর্ণনায় পাওয়া যায়, মৃত্যুর
পর ছ’দিন ধরে আলেকজান্ডারের
দেহটি একটি সাধারণ কফিনে ফেলে
রাখা হয়েছিল। কেননা, রাজার
মৃত্যুর পর সবাই ব্যস্ত ছিল
শোকে আর পরবর্তী সরকারগঠনের
রাজনীতি নিয়ে। হঠাৎ সবার খেয়াল
হল যে, আসল কাজটিই
তারা করেননি। যে তাঁবুর ভিতরে
সাধারণ কফিনটি রাখা হয়েছিল
সবাই ছুটে গেলেন সেখানে।
সাধারনত এতদিনে মরদেহ পচে
যাওয়ারই কথা। তবেসেখানে গিয়ে
সবাই নাকি হতবাক হয়ে যান। কফিন
খুলে দেখা গেল, মৃতদেহটির
কোনও ক্ষতি তো হয়ইনি বরং সেটি
বেশ অক্ষতই রয়েছে।
এরপর
সবাই মনোনিবেশ করলেন আলেকজান্ডারের
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কাজে।
শবদেহ বহন করার জন্য স্বর্ণ
দিয়ে তৈরি করা হলো এক বিশাল
শববাহী গাড়ি। আলেকজান্ডারের
শবদেহও রাখা হলো সোনার তৈরি
কফিনে। অতঃপর আরেকটি সোনার
ক্যাসেটে ভরে তা তোলা হলো
গাড়িতে। কফিনের পাশাপাশি
গাড়িতে ছিল যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র।
শববাহী গাড়ির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন
সেনাপতি পারডিকাস। পরাক্রমশালী
এই রাজার শবযাত্রা করতে সময়
লেগেছিল প্রায় দুই বছর।
কিন্তু মেসিডোনিয়ায় যাওয়ার পথে ঘটল এক আকস্মিক দুর্ঘটনা। আলেকজান্ডারের বিশাল শবযাত্রাকে বাধা দিতে হাজির হলেন আলেকজান্ডারেরই এক ক্ষমতাশালী সেনাপতি টলেমি সোটার। আলেকজান্ডারের সমাধিবাহী গাড়িটা চুরি করে তারা নিয়ে গেলেন সিরিয়ায়। এরপর সেখান থেকে মিসরের মেমফিসে।
কিন্তু মেসিডোনিয়ায় যাওয়ার পথে ঘটল এক আকস্মিক দুর্ঘটনা। আলেকজান্ডারের বিশাল শবযাত্রাকে বাধা দিতে হাজির হলেন আলেকজান্ডারেরই এক ক্ষমতাশালী সেনাপতি টলেমি সোটার। আলেকজান্ডারের সমাধিবাহী গাড়িটা চুরি করে তারা নিয়ে গেলেন সিরিয়ায়। এরপর সেখান থেকে মিসরের মেমফিসে।
টলেমির
এই চুরির কারণটি ছিল অবশ্য
বেশ অদ্ভুত। রাজজ্যোতিষী
অ্যারিস্টান্ডার একবার
ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন,
আলেকজান্ডার যেখানে
সমাধিস্থ হবেন, সেই
দেশ হবে সমৃদ্ধশালী, অপরাজেয়
ও চিরশান্তির এক দেশ। টলেমি
ভেবেছিলেন, আলেকজান্ডারকে
মিসরকে সমাধিস্থ করা হলে
ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মিসরে
উন্নতি সাধিত হবে। তখন তার
রাজা হওয়ার পথ সুগম হয়ে যাবে।
আলেকজান্ডারের শেষ ইচ্ছা
পূরণ না হলেও টলেমির উদ্দেশ্য
সফল হয়। আলেকজান্ডারকে মমি
করে মিসরীয় রীতিতে সমাধিস্থ
করা হয়। এর পর থেকেই আশ্চর্যজনকভাবে
মিসরের উন্নতি সাধন হতে থাকে।
শুধু তাই নয়, টলেমির
বংশও দীর্ঘদিন রাজত্ব চালাতে
সক্ষম হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয়
টলেমি যখন মিসরের রাজা হলেন,
কিছুদিন পর তার মনে
হলো, প্রয়াত রাজার
প্রতি আরও বেশি সম্মান জানানো
উচিত। তাই আলেকজান্ডারকে
তৃতীয়বার সমাধিস্থ করা হলো
আলেকজান্দ্রিয়া শহরের সোমা
নামক এক জেলায়।
সেখান
থেকে আলেকজান্ডারের শবদেহ
আর নড়চড় করা না হলেও শোনা যায়,
টলেমি বংশের এক অপদার্থ
উত্তরাধিকারী, নবম
টলেমি আলেকজান্ডারের সোনার
কফিন গলিয়ে মুদ্রা বানিয়ে
নেয়।
অনেকের
মতে, দীর্ঘদিন
আলেকজান্দ্রিয়াতেই ছিল এই
গ্রিক বীরের মরদেহ। রোমান
সম্রাট অগাস্টাস নাকি দেখেছিলেন
আলেকজান্ডারের মরদেহ। তাঁর
নাকি জীবনীতে উল্লেখ আছে,
এসময় তিনি সমাধির উপরে
ফুল ছড়িয়ে দেন। মমির মাথায়
পরিয়ে দেন মুকুট।এমনকি পরবর্তীতে
জুলিয়াস সিজারের সময়ও নাকি
সমাধিটি সেখানেই ছিল।
আলেকজান্ডারের সমাধি দর্শনের
কাহিনী নাকি জুলিয়াসের জীবনীতেও
আছে।
এই মহান
বীরের মরদেহ যদি সেখানেই
চিরকালের জন্য থাকতো তাহলে
কথা ছিল না। বাস্তবতা হল,
সেখানে নেই মহান এই
বীরের সমাধি। কোথায় আছে তা
কেউ জানে না। ইতিহাসবিদ
প্লুতার্ক কিংবা অগাস্টাস
অথবা জুলিয়াস সিজারের বর্ণনায়
সমাধির উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে
এর অস্তিত্ব মেলেনি।
সম্রাট
ক্যালিগুলা নাকি তার সারকোফেগাসের
(মানুষের মতো দেখতে
শবাগার) বুক থেকে
বর্ম ছিড়ে স্মারক হিসেবে রেখেও
দেন! আর রাজা অগাস্টাস
সমাধির উপরে ফুল ছড়িয়ে দেন,
মমির মাথায় পরিয়ে দেন
মুকুট। তবে তিনি নাকি সারকোফেগাসের
উপর ঝুঁকে সম্রাটকে চুমু খেতে
গিয়ে তার নাকও ভেঙে দিয়েছিলেন!
যদিও এ ধরনের সম্মান
জানানো অনেকেরই পছন্দ হয়নি।
(৩৭৯-৩৯৫)
সময়কালে আলেকজান্দ্রিয়ার
ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়। পঞ্চদশ
শতকে এ শহরের গুরুত্ব ধীরে
ধীরে কমতে থাকে। এর পাঁচ দশক
পরই হঠাৎ আলেকজান্ডারের সমাধি
অদৃশ্য হয়ে যায়। বিখ্যাত এ
গ্রিক সম্রাটের দেহাবশেষ
কোথায় রাখা আছে- তার
উত্তর এখন পর্যন্ত পাওয়া
যায়নি। অবশ্য ১৮৮৭ সালে লেবানন
থেকে একটি শিল্পকীর্তি আবিস্কার
হয়। সেটি একটি শবাধার,যা
বর্তমানে রাখা আছে ইস্তানবুল
জাদুঘরে। সেটির নামফলকে লেখা
‘আলেকজান্ডার সার্কোফেগাস’।
অর্থাৎ আলেকজান্ডারের শবাধার।
সেই হিসেবে আলেকজান্ডারের
শবাধার মিলেছে বলে স্থাপত্যবিদেরা
দাবি করলেও ইতিহাসবিদদেরা
একমত নন।
তাদের
মতে এটি সম্ভবত সিডন এর রাজা
‘আবদালোনিমাস’এর।সম্ভবত
শবাধারটির গায়ে আলেকজান্ডার
ও তাঁর সেনাবাহিনীর ছবি খোদাই
থাকায় এটি জাদুঘরে ঠাঁই
পেয়েছে।যাকে সবাই চেনে
আলেকজান্ডারের সমাধি হিসেবে।এখন
পর্যন্ত ১৪০ বারের মতো অনুসন্ধান
চালিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি
বিখ্যাত এই গ্রিক সম্রাটের
দেহাবশেষ। তবে কয়েক বছর আগে
পূর্বে যেখানে ম্যাসিডন ছিল,
সেখানে একটি প্রাচীন
সমাধিক্ষেত্র খুঁজে পান এক
দল বিজ্ঞানী। ধারণা করা হয়,
রোমান সম্রাট কারাকালা
আলেকজান্ডারের শেষ ইচ্ছা
পূরণ করার জন্য তাকে তার নিজ
জন্মভূমিতে এনে সমাধিস্থ
করেন। তবে এই সমাধি যে
আলেকজান্ডারেরই, এ
নিয়ে বিতর্কের অবসান এখনও
হয়নি। তাহলে কোথায় আলেকজান্ডারের
প্রকৃত সমাধি? ইতিহাসবিদদের
ধারণা, গ্রিক বীরের
শেষ সমাধিটি সম্ভবত ২৭০
খ্রিস্টাব্দে ভেঙে ফেলে
দুষ্কৃতিকারীরা। অবশ্য এর
পরেও অনেকেই আলেকজান্ডারের
সমাধি দেখার দাবি করেছেন।
এদের মধ্যে আছেন ইতিহাসবিদ
ও পর্যটক ইবন আবদেল হাকাম,
আল মাসুদি, লিও
দি আফ্রিকানসহ অনেকেই। কিন্তু
এরা শুধু দেখার কথাই বলেছিলেন।
কোথায় দেখেছিলেন তার স্পষ্ট
উল্লেখ নেই। আর এভাবেই এখনও
রহস্য হয়ে রয়েছে আলেকজান্ডার
দ্য গ্রেটের সমাধি।
#আলেকজান্ডার
#আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট#আলেকজান্ডার
No comments:
Post a Comment