Saturday, 30 June 2018

ইতিহাসের ভয়ঙ্কর যোদ্ধা জাতি -- সামুরাই

ইতিহাসের ভয়ঙ্কর যোদ্ধা জাতি -- সামুরাই
সামুরাইদের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হলো, তারা কারো কাছে পরাজিত হলে সে পরাজিত জীবন রাখতেন না। তারা মনে করতেন, এ লজ্জার জীবন রাখার চেয়ে মৃত্যুবরণ করাই শ্রেয়। শত্রুর কাছে পরাজয় বরণ করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নিজের পেটে তলোয়ার চালিয়ে আত্মহত্যা করতেন তারা।
সামুরাইরা এই আত্মহত্যাকে খুব সম্মানী চোখে দেখতেন। মাঝে মাঝে তারা এ আত্মহত্যার একটি অনুষ্ঠানও পালন করতেন। অনুষ্ঠানটির নাম হারা-কিরি বা সেপ্পুকু। এ অনুষ্ঠানে পরাজিত ব্যক্তি জনসমুক্ষে আত্মহত্যা করতেন।

x

আমরা অনেকেই জাপানের সামুরাই যোদ্ধাদের ইতিহাস শুনেছি। জাপানি ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে আছে তাদের অবস্থান। ইতিহাসে তাদের বীরযোদ্ধা বলে মনে করা হয়। কারণ যুদ্ধে পরাজয়কে তারা ঘৃণা করে, তাদের যুদ্ধে পরাজয়ের ইতিহাস খুব কম। তারা কোনো জাতির কাছে পরাজিত হলে নিজের শরীরে তলোয়ার চালিয়ে আত্মহত্যা করে।
সামুরাই হল জাপানের প্রাক-শিল্পাঞ্চল যুগের সামরিক বাহিনীর সদস্য যা অনেকের কাছে জাপানী যোদ্ধা হিসেবেও পরিচিত। এর অন্য আরেকটা নাম হল 'বুশি'। জাপানী  শব্দ 'সাবুরাই' থেকে 'সামুরাই' শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে। যার অর্থ হচ্ছে কাউকে সেবা করা। ইদো শাসনামলে সামুরাই শব্দটির সর্বশেষ প্রয়োগ হয়েছিল। ১০ম শতকে জাপানী কবিতার প্রাথমিক সংকলন গ্রন্থ 'কোকিনোয়াকাশু' তে প্রাচীন ও আধুনিককালের সংমিশ্রণের গড়া জাপানী কবিতায় এর প্রথম উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

তাঁরা বিভিন্ন অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতে অধিকারী ও পারদর্শী ছিলেন। তার মধ্যে ‘কাতানা’ নামের এক ধরনের লম্বা তলোয়ার খুব প্রিয় ছিল তাদের কাছে। এই তলোয়ার জাপানের অন্যতম একটি আবিষ্কার ছিল যা পরবর্তী কালে মঙ্গল আক্রমনে প্রচুর কার্যকারী হয়। তলোয়ারটি বিশেষ রিতি মেনে এক প্রক্রিয়ায় তইরি হত এবং অসাধারণ ধারাল শক্তিশালী হত। এটি সম্মানের প্রতিক হিসাবেও ধরা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দেখা গেছিলো এই কাতানার এক কোপে কামান কেটে ফেলতে তাহলে ভাবুন পুরান দিনের তলোয়ার গুলি কত ভয়ানক ছিল!

একেকজন সামুরাই বিশ্বাস করেন যে তলোয়ারই তার আত্মাকে ধারন করে আছে,আর তাই তারা তলোয়ারকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হিসেবে মনে করেন। তাদেরকে যথোপযুক্ত সম্মান না করলে তাদেরকে যে কারোর সাথেই যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হত। প্রত্যেকটি তলোয়ারই পরীক্ষা করার জন্য তৈরী করার জন্যে তলোয়ার ধারক যে-কোন অপরাধীকে হত্যা করার মাধ্যমে তলোয়ারের ধারালো অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারতেন। সামুরাইরা বিশ্বাস করতেন তলোয়ারই তাদের আত্মাকে ধারণ করে আছে। তাই তলোয়ারই তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

বিখ্যাত সিনেমা ‘কিল বিল’, ‘দি লাস্ট সামুরাই’ ইত্যাদিতে কাতানাকে দেখে থাকবেন।

তাদের বানানো প্রতিটি তলোয়ারই এমন ধারালো ও তীক্ষ্ণ ছিল যে তা যেকোনো যোদ্ধার স্বপ্নের হাতিয়ার হতে পারে। প্রতিদিন তলোয়ারগুলো পূজা-অর্চনার মাধ্যমে পরিশোধন করা হতো। জলেরর মধ্য দিয়ে তরবারি চালিয়ে মাছ শিকার করা, পাহাড়ে-বনে জঙ্গলে গিয়ে যুদ্ধ করা এ সবই যেন ধর্মীয় উপাসনার চেয়ে কোনো অংশে কম ছিল না।

তারা ডান হাতে অস্ত্র ধরতেন। সবসময় দুটি তলোয়ার নিজের কাছে রাখতেন। কোন যুদ্ধ না থাকলে না ‘কাতানা’ এবং ‘ওয়াকিজাশি’ নামক ছোট তলোয়ার দুটি সঙ্গে রাখতেন। তার সাথে যুদ্ধের সময় ‘তাচি’ নামের লম্বা তলোয়ার ও  ‘টান্তো’ নামের ছোট তলোয়ার সঙ্গে রাখতেন।

৭১০ সাল থেকে সামুরাইদের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়। ধারণা করা হয় তাদের উৎপত্তিও সে সময় থেকে। তারা জাপানের 'তোহুকু' অঞ্চলে বাস করতেন। সামুরাই গোষ্ঠীর সৃষ্টির পর থেকেই যুদ্ধ বিদ্যায় খুব সুনাম অর্জন করেন। শতাব্দীর পর শতাব্দী যুদ্ধবিদ্যার সঙ্গে থেকে এক সময় জাতীয় যোদ্ধাতে পরিণত হয়। এক সময় জাপান সরকার তাদের জাতীয় যোদ্ধার সন্মানে সম্মানিত করেন। তারা ১২ শতাব্দী থেকে ১৯ শতাব্দী পর্যন্ত জাপানের শাসকশ্রেণীর সঙ্গে ছিলেন।

সামুরাইরা কনফুসিয়াসের অলিখিত কিছু যুদ্ধনীতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। প্রভুর প্রতি আনুগত্যবোধআত্মনির্ভরশীলনিয়মানুবর্তিতানৈতিক আচরণ ইত্যাদি ছিল তাদের কাছে প্রধান পালনীয় বিষয়। কোনো সামুরাই যদি মনে করতেন তারা এসব মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছেন বা পরাজয় বা 'বুশিদো' নীতি মেনে না চলার কারণে সামুরাই অসম্মানিত হলে তাকে অবশ্যই সেপ্পুকু নামের আনুষ্ঠানে  প্রকাশ্যে আত্মহত্যা করতে হয়। এই কারণে যুদ্ধক্ষেত্রেও সম্মানিত হয়ে থাকতেন।


যখন সামুরাই তার প্রভু বা শিক্ষকদের হারাতেন তখন তা 'দাইমিও' নামে আখ্যায়িত করা হতো এবং তিনি 'রোনিন' নামে পরিচিত হতেন।  তাদের কাছে অসম্মানের চেয়ে মৃত্যুই অধিকতর শ্রেয়। যুদ্ধক্ষেত্রে সেপ্পুকু নামের আনুষ্ঠানিক আত্মহত্যায় শত্রুর হাতে ধৃত হবার পূর্বে তারা তাদের পেট কেটে ফেলেন। প্রায় ৮০ বছর আগে অস্তিত্ব ছিল।

সমাজের চোখে বীর যোদ্ধা সামুরাইদের কদরই ছিল অন্যরকম। তাই ছেলেকেও সামুরাই বানাতে ছোট বেলা থেকেই কঠোর হাতে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হতো। সামুরাই হবার এই প্রশিক্ষণের সময় প্রায়ই নির্দয় ভাবে পিতার হাতে মার খেতে হত। আঘাতে ক্ষত বিক্ষত আর রক্তাক্ত হতো শিশুদেহ।

বিখ্যাত "ডাবল সোর্ড" কৌশল, একহাতে "কাতানা" আর এক হাতে "ওয়াকিজাশি" নিয়ে দুই হাতেই সমান দক্ষতায় সামনে পিছনে শত্রুর মোকাবেলা করা। আর তলোয়ারবাজি ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দক্ষতা হচ্ছে মুখোমুখি লড়াইয়ে একাগ্রতা ধরে রেখে শত্রুর উপর মনস্তাত্ত্বিক বিজয় লাভের কৌশল।

হেইয়ান সময়কালে (৭৯৪-১১৮৫) , সামুরাইরা ছিল ধনী জমির মালিকদের সশস্ত্র কর্মী।
১২ শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, জাপানে আসল রাজনৈতিক শক্তি ধীরে ধীরে সম্রাটের কাছ থেকে দূরে চলে যায় এবং কিয়োটো অঞ্চলে তার উত্তরাধিকারীগণ তাদের বৃহৎ এস্টেটে গোষ্ঠীর প্রধানদের দিকে চলে যায়। জেমপেরির যুদ্ধ (১১৮০-১১৮৫) জাপানের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মাইলফলক। এখানে একে অপরের বিরুদ্ধে দুটি-প্রধান প্রভাবশালী গোষ্ঠী টায়রা এবং মিনামোটো যুদ্ধ করে । জাপানের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত সামুরাই হিরোদের মধ্যে একজন, মিনামোটো ইয়োশিৎসুন, দান--উরা গ্রামের কাছে টায়রা গোষ্ঠী-র বিরুদ্ধে বিজয় অর্জনে গোত্রের নেতৃত্বে ছিলেন।
বিজয়ী নেতা মিনামোটো (ইয়োশিৎসুনের অর্ধ-ভাই, যাকে তিনি নির্বাসনে রেখেছিলেন) কামাকুরাতে সরকার কেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন। কামাকুরা শোগুনাতে(একটি বংশগত সামরিক একনায়কত্ব) প্রতিষ্ঠার পর জাপানে সমস্ত বাস্তব রাজনৈতিক ক্ষমতা স্থানান্তরিত হয় সামুরাইদের হাতে। মিনামোটো কর্তৃপক্ষ তাদের শক্তির উপর নির্ভর করে, তিনি সামুরাইয়ের বিশেষ অধিকার বাস্তবায়ন করেছিলেন।কেউই মিনামোটোর অনুমতি ছাড়া নিজেকে সামুরাই ঘোষণা করতে পারত না।

চীনের কাছ থেকে জাপানে বৌদ্ধধর্ম চালু হয়, যা সামুরাইদের কাছে যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়। নান্দনিক এবং সরল রীতিনীতি, সেইসাথে বিশ্বাস, এটি একটি আদর্শ দার্শনিক পটভূমি প্রদান করে যা সামুরাইরা নিজের আচরণবিধি কোড বুশিডোর জন্য পছন্দ করে । কামাকুরা সময়কালে, তরবারি সামুরাই সংস্কৃতিতে একটি মহান তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। একজন মানুষের সম্মান তার তলোয়ারের উপর অনেকটা নির্ভর করত।
13 তম শতাব্দীর শেষের দিকে দুটি মঙ্গোল আক্রমণের পরাজয়ের কারণে কামাকুরা শগুনাতে দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে আশিকাগা তাকাউজির নেতৃত্বে বিদ্রোহ হয়। আশিকাগা শোগুনাত প্রায় 1336 খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়।এর কেন্দ্র হয় কিয়োটোতে। পরবর্তী দুই শতাব্দীর জন্য জাপান তার আঞ্চলিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি সংঘাতের মধ্যে ছিল। ১৪৬৭-৭৭ সালে যুদ্ধের পর অশিকাগা শোগুনাত মোটামুটি অকার্যকর হয়ে যায়। সেই সময় সামন্ততান্ত্রিক জাপানে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের অভাব ছিল। যদিও রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও, এই সময়ে জাপানে যথেষ্ট অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছিল।
যুদ্ধকালীন সময় অবশেষে শেষ হয় ১৬১৫ সালে যখন তগুকাওয়া এর অধীনে জাপান এক হয়। এই সময়েই জাপানের শান্তি ও সমৃদ্ধি বাড়তে থাকে। প্রায় ২৫০ বছর এমনটা চলতে থাকে।প্রথমবারের মতো সামুরাইরা সামরিক মাধ্যমের পরিবর্তে নাগরিক মাধ্যমের মাধ্যমে শাসনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তকুগাওয়া “মিলিটারী হাউজেজ অর্ডার” জারি করেন, যার দ্বারা সমানভাবে সকল সামুরাইকে  অস্ত্র মাধ্যমে এবং কনফুসিয়াসবাদের নীতি অনুযায়ী “নম্রতা” শেখানো হয়। এই ভাবে রক্ষণশীল বিশ্বাস, আনুগত্য ও কর্তব্যের ওপর জোর দিয়ে, তোকুগাওয়া বৌদ্ধ ধর্মকে সামুরাই এর প্রভাবশালী ধর্ম হিসেবে আবির্ভূত করেছিলেন। এই সময়ের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মের মূলনীতি সাধারণ জনগণের আচরণের মধ্যে খাপ খেয়ে যায়। যদিও বৌদ্ধবিহারের বৌদ্ধ চিন্তাধারা ও কনফুসিয়ান চিন্তাধারার প্রভাবের মধ্যে পার্থক্য ছিল, তাতে যোদ্ধা আত্মা তখনও অব্যাহত ছিল। শত্রুদের মুখোমুখি সামরিক দক্ষতা এবং নির্ভীকতার ওপর জোর দেওয়া ছিল।
বুশিডো নীতিতে পরিবার, বিশেষত বয়স্কদের জন্য দুর্বলতা, উদারতা, সততা এবং যত্নের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
‎ শান্তিপূর্ণ জাপানে, অনেক সামুরাইকে আমলাতান্ত্রিক হতে বা কোনও ধরনের বাণিজ্য করতে বাধ্য করা হতো।এমনকি তারা নিজেদের যুদ্ধের জন্য লড়াই করার মতো নিজেদেরকে রক্ষা করে।তারা নিজেদের যোদ্ধা হিসেবে ভাবতেই পছন্দ করত।
‎ ১৫৮৮ সালে, তলোয়ার বহন করার অধিকার শুধুমাত্র সামুরাইদের জন্য সীমিত ছিল, যা তাদের এবং কৃষক শ্রেণীর মধ্যে আরও বড় বিচ্ছেদ সৃষ্টি করেছিল। এই সময় বেশিরভাগ সামুরাইয়ের আসল গুরুত্ব হ্রাস পায়। সামুরাইরা ঐতিহ্যগতভাবে জমির মালিকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট জায়গায় তাদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। জমির মালিকের দেওয়া বৃত্তি দিয়ে তাদের দিন চলত।যখন এই বৃত্তি বন্ধ হয়ে যায়,তা সামুরাইদের কষ্টে ফেলেছি। অনেক নিম্ন স্তরের সামুরাই তাদের পরিস্থিতি উন্নয়নে তাদের অক্ষমতার জন্য হতাশ ছিল।
১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র‍্য সহ বিভিন্ন কারণে তোকুগাওয়ার রাজ্যের স্থিতিশীলতা হ্রাস পায়। কৃষকদের মাঝে অস্থিরতা দেখা যায়।পশ্চিমা শক্তিগুলো এসময় চাপ প্রয়োগ করে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিষয়ে অনেক কাঠখড় পোড়ানো হয়। পশ্চিমা শক্তিগুলো জাপানের উপর বন্ধক চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করে। ১৮৫৩ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর কমোডর ম্যাথিউ সি পেরি-এর আগমনের পর, জাপানকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে তার দরজা খুলে দেওয়ার জন্য একটি মিশন প্রদান করা হয়েছিল যা ছিল বেশ অপমানজনক। তোকুগাওয়া এ সময় একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে। ১৮৫৮ সালে, জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একটি বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করে।পরে রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং হল্যান্ডের সাথেও এমন বাণিজ্যিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয় জাপান। পশ্চিমা বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য দেশটির এমন বিতর্কিত সিদ্ধান্ত জাপানের রক্ষণশীল শক্তির মধ্যে বেশ খানিকটা ক্ষোভের সঞ্চার করে ও তকুগাওয়ার ভিত অনেকটা নড়ে যায়।অনেক সামুরাই সহ আন্দোলন কারীরা সম্রাটের শক্তি পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানায়। তোকুগাওয়া শোগুনাতকে উৎখাত করার জন্য চৌশু ও সন্তুমামের শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলি ১৮৬৮-এর গোড়ার দিকে সম্রাট মেইজির নামে একটি “রাজকীয় পুনর্গঠন” ঘোষণা করেছিল। সামুরাইদের সমস্ত বৃত্তিগুলি সরকারি বন্ডে রূপান্তরিত হয়, এবং এতে কিছু উল্লেখযোগ্য আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ে সরকার। নতুন জাপানি জাতীয় সেনাবাহিনী ১৮৭০-এর দশকে বিভিন্ন সামুরাই বিদ্রোহকে বাতিল করে দিয়েছিল।কিছু অসংলগ্ন সামুরাই গোপনে অতি-জাতীয়তাবাদী সমাজে যোগদান করেছিল, তাদের মধ্যে কুখ্যাত ব্ল্যাক ড্রাগন সোসাইটি, তাদের উদ্দেশ্য ছিল চীনে সমস্যার সৃষ্টি করা যাতে জাপান সেনাবাহিনী একটি অজুহাত দেখাতে পারে চীন আক্রমণ করার জন্য।
সামুরাইরা তাদের সুবিধাজনক ব্যাপার গুলোকে বিসর্জন দিয়ে মেইজি রেস্টোরেশন শুরু করেছিল। এটি তাদের অধিকার অনেকাংশেই ক্ষুন্ন করেছিল।নতুন জাপান এর সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে তিনজন ইনউই কেরু, ইটোর হিরোবুমী এবং যমগাটা আরিতোমো।তিনজনই বিখ্যাত সামুরাই ইয়োশিদার ক্লাসমেট ছিলেন। ইয়োশিদা ১৮৫৯ সালে একজন তকুগাওয়া অফিসার হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর মৃত্যুদন্ড পেয়েছিলেন।সামুরাইরাই জাপানের ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। জাপানে কি হবে না তারাই স্বপ্ন দেখায়। আধুনিক সমাজের সব অঞ্চলে নেতা হয়ে উঠবে তারা।
মেইজি পুনরুদ্ধারের পরে, শিনতোকে জাপান রাষ্ট্রের ধর্ম বানানো হয়েছিল (কনফুসীয়বাদ, বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টীয়তা থেকে ভিন্ন, এটি সম্পূর্ণরূপে জাপানী ছিল) এবং বুশিডোকে তার শাসনতান্ত্রিক কোড হিসাবে গ্রহণ করা হয়েছিল। ১৯১২ সালের মধ্যে জাপান তার সামরিক শক্তি গড়ে তোলার জন্য সফল হয়েছিল। ১৯০২ সালে ব্রিটেনের সাথে একটি জোটের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং দুই বছর পর মানচুরিয়াতে রাশিয়ানরা পরাজিত হয়-এর পাশাপাশি এর অর্থনীতিতেও ধ্বস নামে। বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ইতালির পাশাপাশি “বিগ ফাইভ” ক্ষমতার একটি হিসাবে স্বীকৃত ছিল জাপান।
১৯২০ এর দশক ছিল উদার পন্থী। এসময় সামরিক বাহিনীতে আসে পরিবর্তন। ১৯৩০-এর দশকে জাপানের সামরিক ঐতিহ্যের একটি পুনরুজ্জীবনের পথ উন্মুক্ত হয়েছিল, যা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের দিকে অগ্রসর হয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের অনুপ্রবেশের নেতৃত্ব দেয়। এই সংঘর্ষের সময়, জাপানী সৈন্যরা এন্টিকের সামুরাই তলোয়ার নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং অসম্মানের আগে বা মৃত্যুর বুশোদো নীতি অনুযায়ী আত্মঘাতী “বাজাই” আক্রমণ করে। যুদ্ধের শেষদিকে, জাপান আবার একটি সাধারণ কারণে সম্মান, শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠার অনুভূতি প্রকাশ করে- অতীতের ডাইমোস বা শোগুনাত নয়, বরং সম্রাট এবং দেশকে তারা ভালবাসার প্রমাণ দেয়। এতে করে বিংশ শতাব্দীতে নিজেদের পুনর্নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণের জন্য বিশ্বের  অন্যতম  অর্থনৈতিক ও শিল্প শক্তি হবার পথে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।

No comments:

Post a Comment