Saturday, 2 June 2018

এরিয়া ৫১: বিশ্বের সবচেয়ে গোপন ও রহস্যময় স্থান



মানুষ চিরকালই রহস্য প্রিয়। কখনো নিজেই রহস্য উদঘাটনে ব্যতিব্যাস্ত থাকে কখনও রহস্যের অন্তরালে নিজেকে লুকিয়ে রাখার মানুষের প্রবণতা খুব সম্ভবত তাকে কালজয়ী করে তোলে।


খেয়াল করে দেখুন কয়েকটা নাম কোনোদিন শুনেছেন কিংবা পড়েছেন কিনা- ড্রিমল্যান্ড, প্যারাডাইস র‍্যাঞ্চ, হোম বেজ এবং ওয়াটারটাউন। কী? শুনেছেন কখনো এ নামগুলো? বুম গেইট” বা চেইন লিংকের বেড়ার মতো দুর্ভেদ্য বেষ্টনী দ্বারা সংরক্ষিত ক্ষেত্রটির সম্মুখে ‘প্রবেশ এবং ছবি তোলা নিষেধ, প্রবেশ করলে প্রাণঘাতী শক্তি প্রয়োগ করা হবে’ নির্দেশনামা সম্বলিত নোটিশগুলো সাধারণের নজর কাড়ে যা দেখে যে কেউ বলতে পারবে আমেরিকার সবচেয়ে রহস্যময় অঞ্চলটি গোপন মিলিটারি বহর দ্বারা সংরক্ষিত যারা তদারকিতে কোন ভুল করে না।
এ এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার এতটাই কঠোর যে, এর সীমানায় প্রবেশকারী বহিরাগত যে কাউকে সরাসরি গুলি করার নির্দেশ রয়েছে। যদিও এখন তা কিঞ্চিত শিথিল হয়েছে। সুরক্ষিত এই এলাকা দেয়াল ঘেরা না হলেও প্রবেশ পথে সাইনবোর্ডে কঠোরভাবে অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি লেখা রয়েছে। এরিয়া ৫১ এ ঢোকার জন্য কোনো পিচের রাস্তা নেই। মূল গেট ঘাঁটি থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরে অবস্থিত। এখানে কর্মরতদের পরিচয় সম্পর্কে বাইরে কেউ কিছু জানে না। এই এলাকার চতুর্দিকে সিসি ক্যামেরা, মোশন ডিটেক্টর, লেজার ডিটেক্টর, সাউন্ড ডিটেক্টর অত্যাধুনিক নানা প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হয়েছে এলাকার নিরাপত্তায়। 

আকাশ পথ দেখার জন্য রয়েছে রাডার। ঘ্রাণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আশেপাশে থাকা যেকোনো মানুষ বা বন্য প্রাণীর অস্তিত্ব তারা পর্যবেক্ষণ করতে পারে। কেউ কোনো ভাবে এলাকায় ঢুকে পড়লে তার অস্তিত্ব ধরা পরবে সেন্সরে। মুহূর্তে চলে আসবে সুরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী। সুরক্ষায় যারা থাকে তারা শুধুমাত্র এরিয়া ৫১ এর সুরক্ষার জন্য নিয়োজিত। কেউ যদি সব সুরক্ষা ব্যবস্থাকে কাটিয়ে ভেতরে ঢুকলেও রয়েছে বড় সমস্যা। কেননা এই এলাকাটি মরুভূমির মধ্যে অবস্থিত। প্রকৃতির সঙ্গে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী লড়াই করে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য। তাই প্রাকৃতিকভাবেও এরিয়া ৫১ অনেক সুরক্ষিত।

যুক্তরাষ্ট্রের এই অত্যন্ত গোপনীয় ঘাঁটি হচ্ছে এরিয়া ৫১ (Area 51)। এতটাই গোপনীয় যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার দীর্ঘদিন এর অস্তিত্বই স্বীকার করেনি। মানচিত্র বা সড়ক নকশা কোন কিছুতেই এরিয়া ৫১ এর উল্লেখ করা হত না। এর আকাশাসীমায় সামরিক বা বেসামরিক কোন ধরনের বিমান প্রবেশ করতে পারে না (কেবল এরিয়া ৫১গামী বিশেষ বিমান ছাড়া)। ১৯৮৮ সালে সোভিয়েত রাশিয়া স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এরিয়া ৫১ এর ছবি প্রকাশ করলে প্রথমবারের মত যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষ এলাকাটির ছবি দেখার সুযোগ পায়। এরিয়া ৫১ খুবই রহস্যময় একটি এলাকা এবং এটা নিয়ে গুজবেরও শেষ নেই। যেমন অনেকে এই এলাকার আশেপাশে ভিন গ্রহের প্রাণী বা ভিন গ্রহের যান দেখার দাবী করেছেন।এরিয়া ৫১ মূলত মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি সামরিক ঘাঁটি। যার আয়তন ২৬,০০০ বর্গকিলোমিটার। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা অঙ্গরাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে এবং লাস ভেগাস থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম রেকেল গ্রামের কাছে অবস্থিত। খুবই গোপনীয় এই সামরিক বিমান ঘাঁটি গ্রুম হ্রদের দক্ষিণ তীরে অবস্থিত।


যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, এখানে সামরিক বিমানের পরীক্ষা চালানো হয়।
কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ু যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমেরিকা লোকচক্ষুর অন্তরালে উন্নত মানের যুদ্ধ বিমান এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরির গবেষণা এবং পরীক্ষা চলতো এ অঞ্চলে।

সময় ২০০৫ সাল। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি সর্বপ্রথম তথ্য প্রকাশ স্বাধীনতা আইনের অধীনে কিছু দলিল প্রকাশের আবেদন করলে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বেশকিছু তথ্য অবমুক্ত করে যা ২০১৩ সালে অবমুক্ত করা সিআইএ’র গোপন দলিলে অন্তর্ভুক্ত ছিলো যারমধ্যে উল্লেখ করা হয় এরিয়া ৫১ মূলত ইউ২ এর মতো গোপনীয়তা রক্ষা করে অন্তরালে চলা কিছু স্পাই প্লেন ও অন্যান্য গোপন মরণাস্ত্র পরীক্ষা করা হতো। পরে অবশ্য এফ-১১৭ স্টিলথ ফাইটার, ডি-২১ ট্যাগবোর্ড, -১২ অক্সকার্ট নামক বিমান ব্যবহৃত হয় ওই এলাকায় চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য।

অন্যান্য সব তথ্যের সাথে এও জানা যায়, সেখানের নির্মিত দালানসমূহে কোন জানালা নেই যার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে জানা যায় যেনো এক গবেষক দল আরেক গবেষক দলের কাজ সম্পর্কে জানতে না পারে। আরেক সূত্রে জানা যায়, যখন কোন বিমান উক্ত ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলক চালানো হয় তখন কর্মীরা দালানের ভিতরেই অবস্থান করে যাতে উড্ডয়ন সম্পর্কিত কোন তথ্য কেউ জানতে না পারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ব্যতীত।
তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে আমেরিকা সরকার ছিলো একদম কৃপণ, বলতে গেলে এক প্রকার মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছিলো তারা। ১৯৯৫ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন একটি কার্যনির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন যেখানে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে‘ এরিয়া-৫১’কে সংরক্ষণের নিমিত্তে কোন ধরণের আইনী অথবা গবেষণা করা হতে বাঁচাতে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কঠোর গোপনীয়তার কারণে জল্পনা-কল্পনার বিস্তৃতিটাও অনেক বেশি। কেউ কেউ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার চাঁদে মানুষ না পাঠিয়ে এ স্থানেই ‘চাঁদে মানুষ পাঠানোর শ্যুটিং’ করেছিল, এ এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি ইউএফও (Unidentified Flying Object) দেখা গেছে, অনেকে বলেন এখান থেকেই এলিয়েনদের সাথে যৌথ গবেষণা কার্যক্রম চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, এলিয়েনরা প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় মানুষের সাথে হাইব্রিডাইজ বা সংকরায়ন করার চেষ্টা হচ্ছে, এখানে এলিয়েনদের দেহ সংরক্ষিত আছে গবেষণার জন্য।

প্রচলিত কথার মধ্যে আরও রয়েছে, এখানে মাটির অনেক নিচে গবেষণাগার আছে, অন্য গবেষণাগারের সাথে পাতালরেল যোগাযোগ আছে। এখানে যারা কাজ করে তাদের গোপনীয়তার শপথ নিতে হয়। সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিসহ অনেক প্রযুক্তিই আসলে এলিয়েনদের প্রযুক্তি, নইলে এত দ্রুত প্রযুক্তির এত উন্নতি হওয়ার কথা নয়; এমন কথাও বলেন অনেকে।

এসব তথ্যকে আজগুবি তথ্য বলেই মনে করা হয়। কিন্তু গোপনীয়তা এসব তথ্যকে কিছুটা হলেও জনপ্রিয় করতে পেরেছে। U-2 গোয়েন্দা বিমান যখন উদ্ভাবিত হয় তখন সেটি ছিল সবচেয়ে বেশি উচ্চতায় উড্ডয়নকারী বিমান। এমন উচ্চতায় বিমান থাকতে পারে এটা কেউ তখন ভাবতো না। আর তাই সেটাকে ইউএফও ভেবে ভুল করেছে বলে ব্যাখ্যা দেয়া হয়।

এই এলাকা সর্ম্পকে মানুষ তেমন কোনো খবর জানে না। এছাড়াও এরিয়া ৫১ এর ভিতরে যে সব স্থাপনা আছে তারও তেমন ভালো কোনো ছবি পাওয়া যেত না, যে সব ছবি পাওয়া গেছে সেগুলো সব স্যাটেলাইট থেকে তোলা। মার্কিন সরকারের অবাধ তথ্য অধিকারের সুযোগ নিয়ে ১৯৬০ সালে মার্কিন গোয়েন্দা উপগ্রহ ‘করোনা’র সাহায্যে এরিয়া ৫১ এর ছবি তোলে। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন সরকার সেই ছবি মুছে ফেলে। পরবর্তীতে নাসার ল্যান্ডস্যাট ৭ উপগ্রহের সাহায্যে ৫১ এর ছবি তোলা হয়, এই ছবিটিই সরকারিভাবে প্রকাশিত এরিয়া ৫১ এর ছবি। গোপন রাখার নানা চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি। রাশিয়ার গোয়েন্দা উপগ্রহ ইকনস ও রাশিয়ার বেসামরিক উপগ্রহ আমেরিকা রাশিয়ার ঠান্ডা যুদ্ধের সময় এই এরিয়া ৫১ এর ভেতরের উচ্চ রেজল্যুশনের ছবি তোলে। প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায় যে, এরিয়া ৫১ এর ভিতরে সাতটি রানওয়ে আছে। ছবিতে আরো দেখা যায় বড় বড় গুদাম ঘর, আবাসিক এলাকা, ফায়ার স্টেশন, বিশাল আকারের পানির ট্যাংকি, বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ টাওয়ার, খেলাধুলা করার জন্য টেনিস এবং বেসবল কোর্ট। আরো আছে যোগাযোগের জন্য বেশ কয়েকটি স্যাটেলাইট ডিশ। ২০১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) প্রকাশিত নথিতে জানানো হয়, বিমানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ১৯৫৫ সালে নেভাদার জনশূন্য মরুভূমিতে ‘এরিয়া ৫১’ -এর বর্তমান জায়গাটি বেছে নেয়া হয়। সুতরাং মানুষজন এলাকাটিতে নানা সময়ে যে ভিন গ্রহের যান দেখার দাবী করে এসেছেন, তা আসলে হয়তো অত্যাধুনিক কোনো যুদ্ধ বিমান।
লোকমুখে শোনা যায় এক্স-১৫ এবং এ-১২ এর মতো হরেক প্রকার আধুনিক মার্কিন সামরিক বিমান এখানে নির্মিত হয় যারমধ্যে এ-১২ নামক বিমানটি তৈরী করা হয়েছিলো ১৯৫০ এবং ৬০ দশকের দিকে। এটি রাডারের আওতার বাহিরে থেকে ঘন্টায় প্রায় ২২ মাইল (৩৫৪০ কিঃমিঃ) বেগে উড়ার ক্ষমতা রাখতো। এই এ-১২ নামের বিমানটিকে আরো অত্যাধুনিক করতে তখনকার সময়ে আমেরিকা সরকার একটি ভুল করে ফেলেন যা এরিয়া-৫১ এর বিমানের পাইলট কেন কলিন্স (এরিয়া-৫১ এ যার ছদ্ম নাম ছিলো কেন কলমার) ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেন। তার দেয়া তথ্যমতে দুর্ঘটনার দিন বিমানটির পরীক্ষামূলক উড্ডয়ন চলাকালীন ২৫০০০ ফিট উচ্চতায় আকস্মিকভাবে বিমানের সম্মুখভাগ উপরের দিকে প্রবলবেগে উঠতে থাকে এবং হঠাৎ উল্টে গিয়ে অনুভূমিক দিকে ধাবিত হয়। কেন কলিন্স বুঝে যায় এ যাত্রায় বিমানকে বাঁচানো অসম্ভব তাই নিজেকে বাঁচাতে বেরিয়ে পড়েন ককপিট হতে এবং প্যারাস্যুট দিয়ে সুস্থ ভাবে ল্যান্ড করার পর দেখেন তিনজন স্থানীয় ছদ্মবেশে লোক তারজন্য পিকআপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে ধ্বংসাবশেষের দিকে যাওয়ার নির্দেশ দিলে তিনি উল্টোপথে হাটতে থাকেন তাদের নিয়ে এবং বলেন বিমানে পারমানবিক যুদ্ধসরঞ্জাম রয়েছে। এ কথাটি বলা হয়েছিলো কারণ এ ধরণের গল্প আগে হতেই পরিকল্পিত ছিলো। সরকারি কর্মকর্তারা একটু পর এসে ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করতঃ ধামাচাপা দেয়ার কাজ সেরে ফেলে। এর পরের দিন প্রত্যুষে সমস্ত ধ্বংসাবশেষ ট্রাকে করে এরিয়া-৫১ এর অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রায় অর্ধ শতাব্দী অবধি সেই স্থানে কেউই উক্ত জায়গায় পদচিহ্ন রাখেনি।
তবে অ্যারোস্পেস বিশেষজ্ঞ পিটার মারলিনের মতে ধ্বংসাবশেষের কিছু অংশ ডায়নামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেবার চিন্তা ভাবনা ছিল যাতে কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে তা চিহ্নিত করা সম্ভবনা হয়। আজ এ ঘটনাকে লুকিয়ে রেখে আর কোন সুবিধা পাওয়া যাবে না বিধায় সিআইএ এই ছবিগুলো প্রকাশ করেছে বলে মনে করেন ইতিহাসবিদ ডেভিড রবার্জ। ২০০৭ সালে অক্সকার্ট প্রকল্প সংক্রান্ত অনেক তথ্য প্রকাশ পায়। এর মধ্যে ছিলো এয়ার ফোর্সের কাছ থেকে নয়টার মধ্যে থেকে একটা এ-১২ বিমান তারা অধিগ্রহন করেছে যা এখন সিআইএ-র প্রধান কার্যালয়ে শোভা পাচ্ছে। যদিও সিআইএ ঘটনার কিছু ছবি প্রকাশ করেছে তথাপি এ ব্যাপারে কারা জড়িত ছিল বা কিভাবে এটি সম্পন্ন হলো সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যায়নি। অ্যারোস্পেস ঐতিহাসিক পিটার মারলিন, দুর্ঘটনার জায়গাটি কয়েকবার প্রদর্শন করেছেন। তার মতে, -১২ এর ফিউজলাজ এবং পাখা ব্লো-টর্চ দিয়ে কেটে আলাদা করে ট্রাকে তোলা হয়, সাথে তোলা হয় লেজ এবং আর যে সকল বড় বড় যন্ত্রাংশ ছিল সেগুলোকে। পড়ে থাকা ছোট ছোট যন্ত্রাংশগুলোকে বাক্সে ভরা হয়েছিল। পরিস্কার করার আগে যাতে কোন বিমান থেকে কিছু দেখা না যায় তাই তারপুলিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। যখন দুর্ঘটনাটা ঘটে তখন অক্সকার্ট প্রকল্পটি খুব গোপনীয় প্রকল্প ছিলো, এটি প্রকাশ হলে আমেরিকার শত্রুরা বিকল্প বা প্রতিরোধের
ব্যবস্থা নিয়ে ফেলতো তাই সরকার এ ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেয়। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টাইটানিয়ামের টুকরো আজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারিদিকে। পিটার মারলিন জানান, এলাকা ঘুরে এ ধরনের
অনেক টুকরা তিনি দেখতে পেয়েছেন। তিনি এখানে বিমানের পাখা এবং ককপিটের কিছু অংশও পেয়েছেন যাতে এখনো 'স্কাঙ্ক অয়ার্ক্স' এর ছাপ দেয়া আছে। স্কাঙ্ক অয়ার্ক্স ছিল প্রতিরক্ষা বিভাগের একটা ভাগ।

১৯৮৯ সালের কথা সব থেকে বড় ও বিতর্কিত বিষয়টি উঠে আসে এরিয়া-৫১ এ কর্মরত পদার্থবিজ্ঞানী বব লেজারের এক বক্তব্যে। এক টিভি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ওখানে এমন কিছু মৌলিক পদার্থ নিয়ে গবেষনা করা হয় যা এখনও আবিষ্কারের ঘোষনা দেওয়া হয় নি। তিনি অবশ্য কিছু ধোয়াটে বক্তব্য দিয়েছেন একটি মৌলিক পদার্থ নিয়ে। তারমতে সুপারনোভা বা বাইনারি স্টার সিস্টেম থেকেই সম্ভবত একটি মৌল সংগ্রহ করা হয়েছে। যার মাত্র ২.২ পাউন্ড ৪৭টি ১০মেগাটন হাইড্রোজেন বোমা বানানোর জন্য যথেষ্ট। ওখানে নাকি এমন একটি সরল যন্ত্র আবিষ্কার করা হয়েছে যা চাকতি আর বল দিয়ে তৈরী। যন্ত্রের বলের চিপে ঐ মৌলটি রাখা হলে সময়কে স্থির করে রাখা যায়। এই বিষয়ে পরীক্ষা চালিয়ে সফলতাও এসেছে। তার মতে ঐ মৌল পদার্থটি বলের চিপে রাখামাত্র তা কোন এক প্রক্রিয়ায় অ্যান্টিম্যাটার তৈরী করে এবং তারফলে বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপাদিত হয়। অ্যার্টিম্যাটার রিয়েক্টরে শক্তি উৎপাদনের ফলে বস্তুর নিজস্ব মহাকর্ষ বলের সৃষ্টি হয় এবং নিজস্ব শক্তিতে তা বিদুৎবেগে ছুটতে পারে। এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওখানে ফ্লাইং সসার তৈরীর গবেষনা চলছে। তবে বব সবচেয়ে বড় ধাক্কা দেন এই বলে যে সেখানে নাকি ভীনগ্রহীবাসীদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া একটি ফ্লাইং সসার আছে। আর ওই ধবংস হয়ে যাওয়া ফ্লাইং সসার থেকে প্রাপ্ত মৃত এলিয়েনটির ব্যবচ্ছেদ করা হয়। তারা জানতে পারে, ঐ প্রাণীটি এসেছে রেটিকুলাম-৪ নামক জ্যোতিষ্ক থেকে। প্রাণীটির উচ্চতা সাড়ে তিনফুট। লোমহীন শরীর কালো বড় বড় চোখ এবং শরীর কৃশকায়। দেহ ব্যবচ্ছেদ করে ফুসফুস ও হৃৎপিন্ডর বদলে বিশাল এক পতঙ্গ পাওয়া গেছে। এ বিতর্কের এখানেই শেষ নয়। এরিয়া৫১ নিয়ে চলমান বিতর্কের সবচেয়ে বড়টি হল মানুষের চাঁদে যাওয়া নিয়ে। অনেকের ধারনা মানুষ কখনও চাঁদে যায়নি। বরং পুরো নাটকটি সাজানো হয়েছে এই এরিয়া-৫১ এর ভিতর। মজার ব্যাপার হচ্ছে এত বিতর্ক চললেও আমেরিকান সরকার এসব কোনোকিছুই স্বীকার করেনি আজপর্যন্ত। তাতে সন্দেহ না কমে বরং আরো বেড়েছে।
বব লাজার নামের এক দাবী করে বসেন যে, তিনি কিছুদিনের জন্য এরিয়া ৫১ এরই একটি অংশে কাজ করেছিলেন, যার নাম এস-৪। সেই জায়গাটি এতটাই গোপনীয় যে, ঐ প্রজেক্টে তিনি এবং তার অন্যান্য সহকর্মীদের যে বাসে করে নেয়া হয়েছিলো, তার জানালাগুলো বন্ধ ছিলো যাতে করে তারা যাতায়াতের রাস্তা মনে রাখতে না পারেন।

এস-৪ এর বিমান ছাউনিতে লাজার এমন সব ফ্লাইং সসার দেখতে পেয়েছিলেন, যেগুলো কোনোভাবেই পৃথিবীতে তৈরি হতে পারে না বলে দাবী লাজারের। সেগুলোর শক্তি সরবরাহ করা হচ্ছিলো এন্টিম্যাটার রিঅ্যাক্টরের মাধ্যমে, জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিলো লালচে-কমলা বর্ণের একটি পদার্থ যার নাম ‘এলিমেন্ট-১১৫’। সসারটি এতটাই শক্তিশালী গ্র্যাভিটি ওয়েভ তৈরি করছিলো যে, সেটার উদ্দেশ্যে কোনো গলফ বল ছুঁড়ে মারলে সেটাও ফিরে আসছিলো!

একবার যখন তিনি এস-৪ এর একটি হলওয়ে ধরে যাচ্ছিলেন, তখন পাশের একটি ঘরের ছোট জানালা দিয়ে সামান্য সময়ের জন্য উঁকি দেন তিনি। তখন ঘরের ভেতরে ছোট, ধূসর বর্ণের একটি প্রাণীকে সাদা কোট পরিহিত দুজন মানুষের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন তিনি! পরে অবশ্য তার পেছনে আসা প্রহরীর ঝাড়ি খেয়ে বেচারা সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য হন।


লাজারের মতে, সামরিক খাতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করছিলো ইউএফও (আনআইডেন্টিফাইড ফ্লায়িং অবজেক্ট)! দুর্ভাগ্য বলতে হবে লাজারের। একবার বন্ধুদের নিয়ে তিনি লুকিয়ে সেসব সসারের টেস্ট ফ্লাইট দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে যান। এরপরই তার চাকরি চলে যায়।
১৯৯৭ সালে এমন দাবি করেছিলেন ভিক্টর নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি এরিয়া ৫১ এ চাকরি করেন বলে দাবি করেছিলেন। তিনিও এলিয়েনদের জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারটি দেখেছিলেন বলে জানান। এমনকি তিনি একটি ঝাপসা ভিডিও করেছিলেন যেখানে দেখা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর হাতে গুলি খাওয়া এক বহির্জাগতিক পাইলটের সাথে টেলিপ্যাথির মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা চালাচ্ছেন এরিয়া ৫১ এর একজন অফিসার।
মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রংয়ের এই কথাটি স্থান করে নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। তবে এরিয়া ৫১ কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের মতে, অ্যাপোলো-১১ দিয়ে চাঁদে অবতরণের ঘটনাটি স্রেফ ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই না!
এ ধারণাটির প্রবক্তা কনস্পিরেসি লেখক বিল কেসিং। তার মতে, ষাটের দশকের শেষের দিকে নাসার বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে, তীব্র তেজষ্ক্রিয়তার জন্য চাঁদের বুকে অবতরণ করা কোনো মানুষ আর বেঁচে ফিরতে পারবে না! কিন্তু এতদিন ধরে চালানো এই প্রোগ্রামও বাতিল করা সম্ভব ছিলো না। তাই তারা আশ্রয় নেয় ইতিহাসের অন্যতম সেরা জালিয়াতির!


এজন্য অ্যাপোলো-১১ জনগণের দৃষ্টিসীমার বাইরে চলে যাওয়ার পরই গোপন একটি মিলিটারি এয়ারক্রাফটে করে ক্রুদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো পূর্বপ্রস্তুত একটি মুভি স্টেজে! এর কিছুদিন পরে সেখানেই স্থাপন করা সব ক্যামেরার সামনে অভিনয় করেন নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন। এরপর সেই ভিডিওই বিশ্বজুড়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয় নাসার পক্ষ থেকে।
এরিয়া ৫১ এ যে আসলে কী আছে সেই সম্পর্কে জনগণের ধারণা বেশ কম। এই কম ধারণা থেকেই পরবর্তীতে জন্ম নিয়েছে নানা কল্পনার শাখা-প্রশাখা।
এই যেমন মাটির তলার বাঙ্কারটির কথা বলা যায়। কোনো কোনো কন্সপিরেসি থিওরিস্টের মতে, এরিয়া ৫১ এ মাটির নিচে বিশাল বাঙ্কার গড়ে তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। আর সেখানেও রয়েছে প্রযুক্তির অত্যাধুনিক আশীর্বাদপুষ্ট বিমানের আনাগোনা। সেই বিমানগুলোকে সেখানে লুকিয়ে রাখা হয় যাতে করে স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও সেগুলোর কোনো হদিস কেউ না পায়। কারো মতে সেই বাঙ্কারগুলো ৪০ তলা ভবনের সমান উঁচু!
কারো কারো মতে, এরিয়া ৫১ এ আসলে একসাথে কাজ করছে আমেরিকান সরকার এবং ভিনগ্রহের প্রাণীরা।
তাদের ধারণানুযায়ী, সেখানে দুই পক্ষের মিলিত প্রচেষ্টায় মানুষ ও এলিয়েনের এমন সংকর প্রজাতি বানাতে কাজ চলছে যাদের দেখলে মনে হবে তারা মানুষ। কিন্তু শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা হবে সেই এলিয়েনদের মতোই! তারাই নাকি ভবিষ্যতের পৃথিবীতে নেতৃত্ব দিবে। অনেকে আবার কল্পনার ডানাকে আরো অনেক দূর প্রসারিত করে বলে যে, এখানে যে সংকর প্রজাতির জন্ম দেয়া হচ্ছে, তারা আসলে এলিয়েন নিয়ন্ত্রিত। ভবিষ্যতে যদি কোনো কারণে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের দরকার পড়ে, তাহলে এলিয়েনরা গবেষণাগারে জন্মানো এসব সংকর প্রাণীর অঙ্গই ব্যবহার করবে!


আমেরিকার ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের তথ্য মোতাবেক, গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী মেঘের পরিবর্তন করে বৃষ্টিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা তা নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছিলো। আবার ১৯৬২ থেকে ১৯৮৩ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ন্যাশনাল ওশানিক এন্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ কমানোর জন্য কাজ করেছিলো, যদিও তাদের সেই গবেষণা ততটা ফলপ্রসূ হয় নি।
এ থেকেই অনেকে ধারণা করে থাকে যে, আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য এমন বিভিন্ন পরীক্ষাও চলে এরিয়া ৫১ এ।
বলা হয় এই সব পরিক্ষায় দুর্ঘটনাবসত সুনামির সৃষ্টি হয়।
বর্তমানে এই প্রজেক্টটি  হার্প(HAARP) নামে পরিচিত।  
ম্যাজেস্টিক ১২’ নামে সুপরিচিত একটি টার্ম আছে, যা দিয়ে আমেরিকার একটি গোপন দলকে বোঝায়। বিভিন্ন বিজ্ঞানী ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত সেই দলটি নাকি গত ছয় দশক ধরে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা করার জন্য যাতে আমাদের এই ধরণীটি একইসাথে মানুষ এবং অভিজাত এলিয়েনরা পরিচালনা করতে পারবে!

ম্যাজেস্টিক ১২ নাকি ইতোমধ্যেই এলিয়েনদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৪৭ সালে সূত্রপাত হওয়া এ প্রজেক্টের মাধ্যমে এলিয়েনদের বিভিন্ন প্রযুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের হাতে এসেছে বলে দাবি কনস্পিরেসি থিওরিস্টদের। বিনিময়ে এলিয়েনরা পেয়েছিলো বিভিন্ন পশুপাখি, এমনকি মানুষের উপর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানোর অধিকার!
মাঝে মাঝেই আমাদের ইচ্ছা করে অতীতে ফিরে গিয়ে নিজের ছোটবেলার সেই সত্তাটাকে একবার দেখে আসতে, কৈশোরের রঙিন সময়গুলোতে ফিরে যেতে কিংবা জীবনে নেয়া ভুল সিদ্ধান্তগুলো অতীতে গিয়ে কোনোভাবে পাল্টে দিতে। এছাড়াও অতীতের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের সাথে সামনাসামনি দেখা করতে কিংবা অতীতের বিখ্যাত কোনো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতেও ইচ্ছা করে কারো কারো। শুধু অতীতের কথাই বা বলছি কেন? বর্তমান নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় থাকা মানুষগুলো মাঝে মাঝেই জানতে চায় তাদের ভবিষ্যতে কী আছে তা জানতে। এ সবই সম্ভব হতো যদি সময় পরিভ্রমণ নামক বিষয়টি সম্ভব হতো।

এবার আসা যাক টেলিপোর্টেশনের কথায়। সায়েন্স ফিকশন গল্প ও সিনেমার পাগলেরা এ বিষয়টির সাথে পরিচিত অনেক আগে থেকেই। মুহুর্তের মাঝেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যেতে পারার বিষয়টিকেই সাধারণত বলা হয় টেলিপোর্টেশন। এর মাধ্যমে পদার্থ ও শক্তি উভয়েরই স্থানান্তর সম্ভব বলে মনে করা হয়। মানব কল্পনার এ বিষয় দুটো নিয়ে এরিয়া ৫১ এ কাজ চলছে বলে মনে করেন অনেকে।



No comments:

Post a Comment