Saturday, 26 May 2018

রহস্যময় ভ্যাটিকান সিটি (পৃথিবীর সবচেয়ে গোপনীয় ও রহস্যময় জায়গা)---

‘’গোপন’’-  এটি এমন  একটি শব্দ যা মানুষকে কাছে টেনে আনে। পৃথিবীতে কতই না রহস্যময় স্থান রয়েছে যেখানে হয়তো সাধারণ মানুষের প্রবেশ করার কোন অধিকার নেই । তেমনই তালিকায় থাকা সবচেয়ে শক্তপোক্ত নামটি হল ভ্যাটিকান সিটি। এটি ।যুগ যুগ ধরেই মানুষের আগ্রহ আর রহস্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রহস্য এবং গোপনীয়তার নগরী ভ্যাটিকান সিটি।


** প্রসঙ্গত বলে রাখি এই লেখাটি আমার নিজস্ব মতামত নয়, বিভিন্ন তথ্য, সুত্র, প্রবাদ ও কন্সপিরেসি থিওরি থেকে পাওয়া। তাই প্রমান ছাড়া আমি কিছু দাবি করতে চাই না ও কাউকে দোষারোপ ও করিনি ***


--পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দেশ ভ্যাটিকান সিটি। পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম স্বাধীন, ধনী এই দেশটি এক দেড় ঘণ্টাতেই ঘুরে দেখা যায়।পূর্বে ভ্যাটিকান ছিল ইতালির রাজধানী রোম নগরীর একটি অংশ। রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরে রোম পোপের শাসনে চলে আসে, পোপ হয়ে যায় রাজা-পোপ। আধুনিক সময়ে ভ্যাটিকানকে ছেড়ে পোপ শাসিত রোমের অনেক অংশ চলে যায় ইতালির ভেতরে। পোপ ষাট বছর ইতালির অস্ত্বিত্ব অস্বীকার করে ভ্যাটিকান সিটির দেওয়ালের ভেতরে স্বেচ্ছা নির্বাসন নেন। ১৮৭০ সালে ভিক্টর ইমানুয়েল ভ্যাটিকান সহ রোম নগরী দখল করেন। ভ্যাটিকান লাটোরান চুক্তির মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে ১১ ফেব্রুয়ারী ১৯২৯ সালে ইতালীর কাছ থেকে।এই চুক্তির অধীনে ক্যাথলিক গির্জা ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে অন্য সব পোপীয় রাষ্ট্র থেকে দাবী প্রত্যাহার করে নেয় এবং স্বাধীন ভ্যাটিকান সিটি হিসেবে সার্বভৌমত্ব অর্জন করে।



 ভ্যাটিকানের ভেতরে নাকি অনেক গোপন সুরুঙ্গ আছে, পোপের আত্মরক্ষার জন্যে।
চারদিকে দেয়াল ঘেরা দেশটির আয়তন প্রায় ০.৪৪ বর্গ কিলোমিটার  বা ১১০ একর। দেশটির জনসংখ্যা ২০১০ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী ৮২৯ জন। দেশটিতে প্রবেশ পথ রয়েছে মোট ছয়টি। দেশটির নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত রয়েছে সুইজারল্যান্ডের ৩ হাজার সুইস গার্ড এবং হোলিসির নিরাপত্তার জন্য রয়েছে ১৩৪ সদস্যের বিশেষ গার্ড ,
জাতীয় ভাষা ইতালিয়ান বা ল্যাটিন,  মুদ্রার নাম ইউরো। উত্তর-পশ্চিম রোমের ভ্যাটিকান পাহাড়ের উপর  ত্রিভুজাকৃতি এলাকায়, তিবের নদীর  পশ্চিমে, ভ্যাটিকান শহর অবস্থিত। দক্ষিণ-পশ্চিমের পিয়াৎসা সান পিয়েত্রো বা সেন্ট পিটার চত্বর বাদে বাকি সবদিকে ভ্যাটিকান শহর মধ্যযুগ ও রেনেসাঁর সময়ে নির্মিত প্রাচীর দিয়ে রোম শহর থেকে বিচ্ছিন্ন। প্রাচীরের ভেতরে উদ্যান, বাহারী দালান ও চত্বরের সমাবেশ আছে। সবচেয়ে বড় দালানটি হলো সেন্ট পিটারের ব্যাসিলিকা, যা রোমান ক্যাথলিকদের প্রধান গির্জা।

-- আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটিতে উল্লেখ করার মতো আর যে স্থাপনাটি রয়েছে তা হল স্পেস অবজার্ভেটরি বা মানমন্দির। গির্জা ও পাঠাগার থাকলেও ধর্মপ্রধান দেশটিতে কেন মানমন্দির রয়েছে তা আজও এক রহস্য। সেখানে কি পর্যবেক্ষণ করা হয় তা নিয়েও রয়েছে নানা রটনা।



-- ইতিহাস বলে খ্রিস্ট ধর্ম প্রবর্তনের বহু আগে থেকেই ত্রিভুজাকৃতির এই স্থানটুকু পবিত্র বিবেচিত হতো। রোমান সাম্রাজের সময় উপাসনা করা হতো ফ্রিজিয়ান দেবী সিবেল এবং দেব আর্টিসের। কারও কারও মতে, পবিত্র স্থানটি বেশ কিছু রহস্যময়তা ধরে রেখেছে, সবচেয়ে রহস্যজনক যে বস্তুটিকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক রয়েছে তা হচ্ছে, টাইম ভিউয়ার। অর্থাৎ সময়কে দেখার যন্ত্র।


----অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে যারা গবেষণা করেন তাদের মতে, অসাধারণ প্রযুক্তিগত ক্ষমতা রয়েছে  ভ্যাটিকানের, রয়েছে বিশেষ এক যন্ত্র যা দিয়ে অতীত এবং ভবিষ্যত দেখতে পাওয়া যায়। এই যন্ত্রটিকে ভ্যাটিকান গির্জার গোপন স্থানে রাখা হয়েছে। ভ্যাটিকান নিয়ে ইতিহাসের গোপন দিকগুলো গবেষণা করে তারা জেনেছেন, বিশেষ ওই যন্ত্রটি ১৯৫০ সালের দিকে তৈরি করা হয়। ফাদার মারিয়া আর্নেত্তি’র নেতৃত্বে ১২ জন বিজ্ঞানী এই বিশেষ যন্ত্রকে নির্মাণ করেন। নাম দেওয়া হয় ক্রোনোভাইজর। বলা হয়, ধর্মীয় দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি প্রকৃতিবিজ্ঞানী ছিলেন। শুধুমাত্র গির্জার শীর্ষ ব্যক্তিরাই প্রয়োজনে এটি ব্যবহার করেন। দেখে নেন অতীত ও ভবিষ্যতের বিভিন্ন ঘটনা। অনেকের দাবি, সেই যন্ত্রটিই গির্জার ক্রমাগত শক্তি ও ক্ষমতা ধরে রেখেছে।



--মাইকেলেঞ্জেলো নিজের জীবনের সমস্ত সৃষ্টিশীলতাকে যেন উজার করে দিয়েছেন এই বিশাল চার্চের প্রতিটি কোণে। এক একটি ছবি, এক একটি মূর্তি যেন প্রান পেয়েছে তাঁর হাতের জাদুতে। কিছুদিন আগে ভ্যাটিকান সংগ্রহে মাইকেলেঞ্জেলো হাতে আঁকা এই বেসিলিকার এক টুকরো স্কেচ পাওয়া গিয়েছিল। শেষ জীবনে তিনি নাকি এই বেসিলিকার অনেক স্কেচ নিজের হাতে নষ্ট করে দেন, তাই স্কেচটি ঐতিহাসিক দিক দিয়ে অনেক মূল্যবান এক দলিল।



--সুইস পাহারাদাররা এখানে জমকালো রেনেসাঁস যুগের পোশাকে সর্বদা পাহারায় থাকেন।  খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর কোনো এক সময়ে আগ্রিপিনা দ্য এল্‌ডার  এই অঞ্চলের একটি পাহাড় কেটে বিশাল উদ্যান তৈরি করেন। পরবর্তীতে সম্রাটক্যালিগুলা এখানে একটি সারকাস তৈরির উদ্যোগ নেন যদিও তিনি তা সম্পূর্ণ তৈরি করে যেতে পারেননি। পরবর্তী সম্রাট নিরোএই সার্কাস সম্পন্ন করেন। এই সার্কাসটিকে তাই “নিরোর সার্কাস” (circus of nero) নামে আখ্যায়িত করা হয়। বর্তমানে সেই ভ্যাটিকানের একমাত্র দৃশ্যমান ভগ্নাবশেষ হচ্ছে ভ্যাটিকান ওবেলিস্ক(obelisk)। ইজিপ্ট থেকে আনা প্রায়  ৪ হাজার বছরের পুরনো এই ওবেলিস্কটি সম্রাট ক্যালিগুলা হেলিওপলিস থেকে ভ্যাটিকানে নিয়ে এসেছিলেন তার সার্কাসের স্পিনা সাজানোর জন্য। ৬৪ খ্রিস্টাব্দে রোমে বৃহৎ অগ্নিকাণ্ডে শহীদ খ্রিস্টানদের সমাধিস্থল হিসেবে এই স্থানটিকে ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রাচীন প্রথাগত বিশ্বাস অনুসারে বলা হয় এই সার্কাসের প্রান্তরেই সেন্ট পিটারকে মাথা নিচে ও পা উপরে দিয়ে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল।


-- এই ভ্যাটিকানেই বহুত্ববাদী ধর্মগুলোর (যেমন প্যাগান ধর্ম) উপাসনালয়, শেষকৃত্যের সৌধ এবং অন্যান্য সৌধ ও মিনার নির্মিত হয়েছিল। এই সবকিছু নির্মিত হয়েছিল ৪র্থ খ্রিস্টাব্দের আগে। ৪র্থ খ্রিস্টাব্দের প্রথমভাগে সম্রাট কন্‌স্টান্টাটাইন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং ভ্যাটিকানের কেন্দ্রে সেন্ট পিটারের ব্যাসিলিকা নির্মাণ করেন। তখন ভ্যাটিকানের প্যাগান স্থাপনাসমূহ ধ্বংস করে ফেলা হয়।


--বলা হয়, বিশেষ এক বিজ্ঞানী দল ভ্যাটিকানের বাইরে বেশ কিছু গোপন কাজ করেছেন। যেমন ইতালির পদার্থবিদ এনরিকো ফের্মিকে সহায়তা করেছেন এই দল। রেডিওঅ্যাকটিভিটি কাজের জন্য যিনি পদার্থে নোবেল পুরস্কার পান। এনরিকো ফার্মি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠিত প্রকল্প ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’এ কাজ করেন। বলা হয়, এই প্রকল্পে নির্মিত পারমাণবিক বোমা জাপানে ব্যবহার করার পরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। যে প্রকল্পকে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পদ্ধতিগত, শৈল্পিক ও বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। বলা হয়, এই প্রকল্পই পৃথিবীর ইতিহাসে পারমাণবিক যুগের সূচনা ঘটায়।

-- জার্মান-আমেরিকান প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী বার্নার ফন ব্রাউনকেও ভ্যাটিকানের এই দলটি সাহায্য করে বলে দাবি করা হয়।বার্নারের উদ্ভাবিত প্রযুক্তির জন্য মহাকাশ গবেষণার নতুন দুয়ার খোলে বলেও মত অনেকের। রকেট উন্নয়নে গবেষণার জন্য তাকে মহাকাশ অনুসন্ধানের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

---গবেষকেরা দাবি করেছেন, ভ্যাটিকানের বিজ্ঞানীদল টাইম মেশিন যন্ত্র নির্মাণ করলেও তা সবার কাছে প্রকাশ্যে আনার আপত্তি জানান ফাদার আর্নেত্তি। তাতে সময়ের স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করেন তিনি। ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক রেডিয়েশন দ্বারা চালিত সময়ের এই যন্ত্রটি দিয়ে ফাদার আর্নেত্তি অতীতের অনেক ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন বলেও শোনা যায়। যেমন নেপোলিয়নের ভাষণ, গ্রীসের পতন এমনকি যিশু খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দৃশ্য দেখেন তিনি।

--ফাদার আর্নেত্তির সময় যন্ত্র ও পরিভ্রমণ নিয়ে পিটার ক্রেসার একটি বই (Father Ernetti's Chronovisor) প্রকাশ করেন। তবে প্রথমদিকে যন্ত্রটির মাধ্যমে অতীত দেখা গেলেও পরে এর ক্ষমতা বাড়ানো হয়। বলা হয় ১৯৭০ সালে যন্ত্রটি ভবিষ্যতে পাড়ি দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে। গবেষকদের দাবি, ভবিষ্যত ভ্রমণের ক্ষমতালাভের পর তারা সেটি পরীক্ষা করেও দেখেন।

--- পরীক্ষার সময় ফাদার আর্নেত্তি ২০১৩ সালে চলে আসেন। সেসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে ভয়াবহ বন্যা হতে দেখেন। যাতে শহরটি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বলা হয়, এরপর ভ্যাটিকানের বিজ্ঞানী দলটি বন্যা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রকে পরামর্শ দেয়। তাদের দাবি, যন্ত্রটির মাধ্যমে পৃথিবীর অতীত ও ভবিষ্যত দেখা ছাড়াও মহাজাগতিক বিষয়ও পর্যবেক্ষণ করা যায়।

--গবেষকেরা অবশ্য এটাও বলছেন, সময় ভ্রমণ যন্ত্রটি সাধারণ মানুষের হাতে চলে গেলে পৃথিবীতে বিপর্যয় নামতে পারে এমন আশঙ্কায় তা ধ্বংসের সিদ্ধান্ত হয়। শোনা যায়, পরে ভ্যাটিকানের শীর্ষস্থানীয়দের পরামর্শক্রমে যন্ত্রটি ধ্বংস না করে তা গির্জার গোপন স্থানে লুকিয়ে ফেলা হয় ও সব ধরনের তথ্য গোপনীয়তার স্বার্থে মুছে ফেলা হয়।

-- সাধারণত ৭৫ বছর পরপর ভ্যাটিকানের  গোপন সংগ্রহশালার বিভিন্ন ডকুমেন্ট জনসাধারণের দেখবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২০১২ সালে আর্কাইভটির ৪০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অষ্টম থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ১০০টি ডকুমেন্ট নিয়ে রোমের ক্যাপিটোলিন জাদুঘরে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিলো।  এ প্রদর্শনীটি ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলেছিলো।

সেই প্রদর্শনীরই উল্লেখযোগ্য কিছু ডকুমেন্ট সম্পর্কে এখন জানা যাক।

---ক্যাথেরিন
১৫৩০ সালে নিঃসন্তান রাজা চেয়েছিলেন অ্যান বয়েলিনকে বিয়ে করে রক্তের ধারাটা টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু এজন্য তাকে তৎকালীন রাণী ক্যাথেরিনের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হতো যা ক্যাথলিক চার্চ অনুমোদন করতো না। এমতাবস্থায় রাজসভার ৮১ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং যাজকমণ্ডলী মিলে এ বিয়েকে বাতিল ঘোষণার জন্য পোপ সপ্তম ক্লেমেন্টের কাছে ৩ ফুট প্রশস্ত চিঠি লিখেছিলেন। সেই সাথে তিনি বাতিল না করলে এর ফলাফলও যে খুব একটা ভালো হবে না, এমন একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও দেয়া ছিলো সেই চিঠিতে।

---পোপ সপ্তম ক্লেমেন্ট

পোপ সেই বিয়ে বাতিলের পক্ষে সমর্থন দেন নি। এর ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে গড়ে উঠেছিলো চার্চ অফ ইংল্যান্ড। লাল ফিতায় বাধা সেই সিলগুলোসহ চিঠিটি রাখা আছে ভ্যাটিকানে।

---ক্রুসেডের সময় সমাজে বেশ সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হতো নাইট টেম্পলারদের। অর্থ, সম্মান, সুযোগ-সুবিধা সবই ছিলো তাদের। একসময় তাদের এ সুবিধাকেই বোঝার চোখে দেখা শুরু করেন ফ্রান্সের সম্রাট চতুর্থ ফিলিপ।
নাইট টেম্পলারদের কাছে নিজের আর্থিক দেনা এড়াতে তাই ১৩০৭ সালের ১৩ অক্টোবর বিপথগামীতার অভিযোগ এনে তাদের গ্রেফতার করেছিলেন ফিলিপ।
বছরখানেক ধরে চলা নির্যাতনের পর অবশেষে তারা সেসব অভিযোগ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাদেরকে এরপর পুড়িয়ে মারা হয়। রাজার কাছ থেকে ক্রমাগত আসা চাপে শেষ পর্যন্ত তৎকালীন পোপ সেই অর্ডারটি ভেঙে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। প্রায় সাতশ বছরের পুরনো এ বিচারকার্যের ষাট মিটার লম্বা একটি প্রতিলিপি রাখা আছে সেখানে।

---সপ্তদশ শতাব্দীর কাছাকাছি সময় থেকে পৃথিবী আসলেই মহাবিশ্বের কেন্দ্র কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন। তবে চার্চ তখনও তাদের আগের বিশ্বাসেই অটল ছিলো এবং যারাই এর বিরোধীতা করতো, তাদের উপরই বন্দীত্ব ও নির্যাতনের অভিশাপ নেমে আসতো।

---  ইতালিয়ান পলিম্যাথ গ্যালিলিও গ্যালিলেইকে ১৬১৬ সালে তার বিশ্বাসের জন্য কঠোরভাবে সমালোচনা করেছিলো চার্চ। সেইবার কোনোভাবে তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু সতের বছর পর ১৬৩৩ সালে আর শেষ রক্ষা করতে পারেন নি গ্যালিলিও। তৎকালীন পোপ অষ্টম আর্বান তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় মতবাদের বিরোধীতার অভিযোগ আনেন।
পরবর্তীতে গ্যালিলিওর বিচারকার্য চলাকালীন কিছু কাগজপত্রের সন্ধান পাওয়া যায় ভ্যাটিকানের সেই গোপন সংগ্রহশালায়।

---মাইকেলেঞ্জেলো

ইতালিয়ান ভাষ্কর ও চিত্রশিল্পী ও স্থপতি মাইকেলেঞ্জেলো একবার পোপকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যে, ভ্যাটিকানের প্রহরীরা গত তিন মাস ধরে তাদের বেতন পাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে তারা চাকরি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হবে। অবশ্য মাইকেলেঞ্জেলোর এ সতর্কবার্তায় শেষ পর্যন্ত সেই প্রহরীরা তাদের বেতন পেয়েছিলো কিনা তা জানা যায় নি। তবে সেই চিঠিটি আজও রয়ে গেছে ভ্যাটিকানে।

---কলম্বাসের নতুন বিশ্ব আবিষ্কারের প্রায় এক বছর পর ১৪৯৩ সালের ৪ মে পোপ ষষ্ঠ আলেকজান্ডার এক অধ্যাদেশ জারি করেন যা ‘Inter caetera’ নামে পরিচিত। এর মধ্য দিয়ে বর্তমানের ব্রাজিল এলাকার পূর্বাংশ চলে যায় পর্তুগালের নিয়ন্ত্রণে। বাকি অংশগুলোর নিয়ন্ত্রণ লাভ করেছিলো স্পেন।

--- বার্তোলোমিউয়ের ফ্লায়িং মেশিন

ভ্যাটিকানের এই সিক্রেট আর্কাইভে এছাড়াও আছে বার্তোলোমিউ নামে তৎকালীন পর্তুগীজ উপনিবেশ ব্রাজিলের এক পুরোহিতের ডিজাইন করা একটি ফ্লায়িং মেশিন, ১১৯৮ সালে জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের জন্য চতুর্থ ক্রুসেড আয়োজনের জন্য পোপ ৩য় ইনোসেন্টের অাদেশ, রাজবংশের হাতে উৎখাত হয়ে পালিয়ে থাকা চীনের সম্রাজ্ঞী ডোয়াজার হেলেনা ওয়াংয়ের তৎকালীন পোপের কাছে সাহায্য চেয়ে পাঠানো বার্তা, ১৮৬৩ সালে পোপ নবম পায়াসকে ইউনিয়ন কিংবা কনফেডারেসির দিকে টানতে আব্রাহাম লিঙ্কন ও জেফারসন ডেভিসের লেখা দুটি চিঠি  এবং আরো অনেক কিছু।

বিভিন্ন প্রশ্ন শোনা যায় ভ্যাটিকান সিটি নিয়ে সেগুলো হল ---

-- ৮৫ কিলোমিটার লম্বা তাকগুলো জুড়ে আসলে কী কী ডকুমেন্ট রাখা আছে? ওগুলো কি আসলেই এতটা গোপনীয় কোনো জিনিস?

---ক্যাটালগই বা কেন ৩৫,০০০ ভলিউম জুড়ে বিস্তৃত থাকবে? কী এমন আছে সেই আর্কাইভে যে এত বড় ক্যাটালগের প্রয়োজন পড়লো?
 
--১৯৩৯ সালের পর থেকে আর কোনো ডকুমেন্টই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত না! কেন? এরপর কী এমন ঘটনা ঘটেছিলো যার জন্য এত গোপনীয়তা?

 --- ১৯২২ সালের পর থেকে কার্ডিনালদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত বিষয় সম্পর্কিত একটি পুরো অংশে প্রবেশাধিকার নেই কারো। কেন? কী এমন ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সেসব কার্ডিনালরা যে এভাবে সবকিছু আড়ালে রেখে দিতে হবে?

এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় নি আজও। আদৌ পাওয়া যাবে কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এজন্য ভ্যাটিকানের সেই গোপন আর্কাইভটি নিয়ে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন কন্সপিরেসি থিওরি।

 --- অনেক কন্সপিরেসি থিওরিস্টদের মতে সেই আর্কাইভে সেইন্ট পল এবং সম্রাট নিরোর মাঝে যিশুখ্রিষ্টের অস্তিত্ব ও বংশধরদের নিয়ে আদানপ্রদানকৃত চিঠিপত্র রাখা আছে।


--- থিওরি থেকে বাদ যায় নি এলিয়েনরাও। কারো কারো মতে সেখানে এলিয়েনদের অস্তিত্বের প্রমাণ লুকিয়ে রাখা আছে!

---- আর্কাইভটি আসলে চালায় গুপ্ত সংঘ ইলুমিনাতির সদস্যরা।
    বহু রহস্য ঘিরে আছে যা হয়ত পরবর্তী কালে আরও বাড়বে, উত্তর অথবা আরও প্রশ্নের অপেক্ষাই কেবল আমরা করতে পারি।

#ভ্যাটিকান  সিটি
#রহস্য 

Tuesday, 8 May 2018

গরমে সতেজ ত্বক (ছেলে ও মেয়ে উভয়)--


গরমে বাড়ির বাইরে বেরনোর নাম শুনলেই গায়ে যেন জ্বর এসে যাচ্ছে। সারা বছরের যত্ন যেন এক নিমেষেই শেষ! সব পরিশ্রমে জল ঢেলে দিচ্ছে যেন সূর্য মামা।
সারাদিন বাইরেই কাটাতে হয়, তাই ত্বকে ধুলাবালিও বেশি জমে।আয়নার দিকে তাকালেই মনটা কেমন যেন ভার হয়ে যাচ্ছে তো? এখনি এতটাও ভেঙে পড়ার কিছুই হয়নি। হাতের কাছেই  আছে জেল্লা ফিরে পাওয়ার ম্যাজিক। যাতে ত্বক যেমন ভালো থাকে তেমনি আপনি থাকেন ফ্রেশ।


-ত্বক ভালো রাখতে হলে সপ্তাহে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ দিন বার মুখে স্ক্রাব করুন।

-জল দিয়ে কিছু সময় মুখ ধুয়ে নিলে তা সজেত থাকে। তে ত্বক যেমন ভালো থাকে তেমনি আপনি থাকেন ফ্রেশ।


অ্যালো ভেরা--

একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে স্কিনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ত্বকের স্বাস্থের উন্নতিতে এই প্রকৃতিক উপাদানটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে অ্যালো ভেরার ভিতরে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান, ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে প্রদাহের মাত্রা কমায়। ফলে একাধিক ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনাও যায় কমে।

প্রশ্ন হল অ্যালো ভেরাকে কাজে লাগিয়ে ত্বকের পুড়ে যাওয়া ভাবকে কমান যায় কীভাবে? এক্ষেত্রে ত্বকের যে যে জায়গা পুড়ে গেছে সেখানে অ্যালো ভেরা জেল লাগিয়ে কিছু সময় রেখে দিতে হবে। এইভাবে নিয়মিত ত্বকের পরিচর্যা করলেই দেখবেন উপকার মিলতে শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, প্রতিদিন এই প্রকৃতিক উপাদানটির সাহায্যে ত্বকের পরিচর্য়া করলে পোড়া ভাব যেমন কমে, তেমনি পুনরায় যাতে ত্বকের ক্ষতি না হয়, সে সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে।

শসা -

ত্বকের ভিতরে প্রদাহের মাত্রা কমানোর মধ্যে দিয়ে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে শসার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। প্রচন্ড সূর্যালোকে যাতে ত্বক পুড়ে না যায়, সে বিষয়েও খেয়াল রাখে এই প্রকৃতিক উপাদানটি। তাই গরমে ত্বকের পরিচর্যায় শসাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডার্মাটোলজিস্টরা।

-পরিমাণ মতো শসা নিয়ে তার পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পেস্টটির সঙ্গে পরিমাণ মতো লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রনটি মুখে লাগিয়ে কম করে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে মুখটা ধুয়ে ফেলতে হবে।

-প্রতিদিন ঘরে ফিরে মুখ ধোয়ার আগে শসার টুকরো দিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট মুখ ঘষে পরিষ্কার করে নিতে পারেন। এটি ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করে। এ ছাড়া শসার রস ত্বকে প্রাকিতিক মশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে।

-রোদ থেকে বাড়ি ফিরে এক টেবিল চামচ করে শসার রস, লেবুর রস এবং গোলাপ জল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। ট্যান হয়ে যাওয়া অংশে তুলোর সাহায্যে মিশ্রণটি লাগান। উপকার পাবেন।


তরমুজ-

সুস্বাদু এই ফলটিকে কাজে লাগিয়ে ত্বকের পোড়া ভাব কমিয়ে ফেলা সম্ভব হয়। সেই সঙ্গে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে চোখে পরার মতো। ত্বকের পোড়াভাব কমাতে যত রকম ভাবে কাজে লাগাতে পারেন তরমুজকে।

- অল্প পরিমাণ তরমুজ নিয়ে তার রস সংগ্রহ করে সেটি মুখে লাগাতে পারেন।

- তরমুজের খোসা মুখে ঘোষলেও সমান উপকার পাওয়া যায়। তাই এই গরমে ত্বককে সুন্দর রাখতে নিয়মিত তরমুজ যেমন খেতে হবে, তেমনি এই ফলটিকে ত্বকের পরিচর্যায় কাজেও লাগাতে পারেন!

চন্দন গুঁড়ো এবং হলুদ-

একাধিক গবেষণা অনুসারে চন্দন গুঁড়োয় উপস্থিত প্রকৃতিক তেল একদিকে যেমন ত্বকের পোড়া ভাব কমায়, তেমনি উজ্জ্বল করে তোলে। তাই ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সময় লাগে না।

– যদি চন্দন গুঁড়োর সঙ্গে অল্প পরিমাণে হলুদ গুঁড়ো মেশাতে পারেন, তাহলে তো কথাই নেই, হলুদের অন্দরে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি উপাদান, ত্বকের ভিতরে প্রদাহ কমায়। ফলে তাপ প্রবাহের কারণে নানাবিধ ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যায় কমে।সম পরিমাণে চন্দন এবং হলুদ গুঁড়ো নিতে হবে। তারপর তার সঙ্গে পরিমাণ মতো গোলাপ জল মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিয়ে সেই পেস্টটা মুখে লাগিয়ে কম করে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা। এই মিশ্রণটি নিয়মিত মুখে লাগালে দেখবেন ত্বকের সৌন্দর্য বাড়তে একেবারেই সময় লাগবে না।

-এছাড়া কাঁচা হলুদের সঙ্গে কাঁচা দুধ মিশিয়ে পেষ্ট তৈরি করে সম্পূর্ণ মুখে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। কাঁচা হলুদ ত্বকের কোমলতা ধরে রাখে এবং কাঁচা দুধ স্কিনের কমপ্লেকশনকে আরো ফর্সা করতে সাহায্য করে। এছাড়া শুষ্ক ত্বকের জন্য মধু ব্যবহার করতে পারেন। এটি অনেক বেশি উপকারী ছেলেদের ত্বকের জন্য।

নারকেল তেল-

চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার পাশাপাশি এই গরমে ত্বকের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নারকেল তেলের বিকল্প হয় না বললেই চলে। এই তেলটির ভিতরে মজুত রয়েছে প্রচুর মাত্রায় 'স্কিন প্রোটেকশন প্রপাটিজ’, যা ত্বকের পোড়া ভাব কমানোর পাশাপাশি স্কিনকে উজ্জ্বল এবং তুলতুলে করে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। বাড়ি থেকে বেরনোর আগে একেবারে অল্প পরিমাণে নারকেল তেল নিয়ে মুখে লাগিয়ে ভাল করে মাসাজ করতে হবে। তাহলেই দেখবেন কেল্লা ফতে!


- ত্বক শুষ্ক হলে আপনি এতে লেবু খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। লেবু কেটে খোসাসহ মুখে ভালভাবে ঘষে নিলে তা ব্রণ থেকে শুরু করে এ্যালার্জি সমস্যা নিমিষেই দূর করে। লেবুর সাইট্রিক এসিড আপনার ত্বকের অতিরিক্ত তেল, পিগমেন্টেশন, রোদে পোড়া দাগ দূর করতেও সাহায্য করে, এর ভিটামিন ‘সি’ মুখের কালো দাগ দূর করে ত্বককে আরো ফর্সা করতে সাহায্য করে।

-দুই টেবিল চামচ বেসন, এক চিমটে গুঁড়ো হলুদ, এক টেবিল চামচ কমলা লেবুর রস এবং ঠাণ্ডা গোলাপ জল একটি পাত্রে মিশিয়ে মিশ্রণতৈরি করে নিন। ২০ মিনিট পর মুখে, হালকা ঘষে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

-একটা আলুর পেস্ট বানিয়ে তাতে এক চামচ পাতিলেবুর রস মিশিয়ে পুড়ে যাওয়া অংশে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। উপকার পাবেন।

-এক টেবিল চামচ মুসুর ডাল সারা রাত জলে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন সেই ডালের সঙ্গে ১ চামচ অ্যালোভেরার রস এবং ১ চামচ টমাটোর রস মিশিয়ে নিন। ২০ মিনিট ত্বকে রেখে ভাল করে ধুয়ে ফেলুন।