বেশিরভাগ মানুষ কিংবদন্তি হারিয়ে যাওয়া শহর আটলান্টিস এর সম্পর্কে পরিচিত থাকবেন তাই যখন হারিয়ে যাওয়া মহাদেশে কথাটা আপনি দেখতে পেয়েছেন তখন নিশ্চয়ই হারিয়ে যাওয়া আটলান্টিস সাম্রাজ্যের কথাটা মাথায় এসছে। তবে আটলান্টিসই একমাত্র সমুদ্রের তলায় হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা নয়। এরকমই কিছু সভ্যতার অস্তিত্ব ছিল পৃথিবীতে তবে সেগুলি আটলান্টিসের মত এতটা জনপ্রিয় হয়নি।
পৃথিবী সব সময় এখনকার মতো দেখতে ছিল না। এক বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর উপরিভাগ অনেকটা আলাদা রকম দেখতে ছিল এবং এখনকার দেশগুলি তখন সম্পূর্ণ অন্যরকম স্থানে অবস্থিত ছিল। এই দেশ এবং মহাদেশ গুলি যা আমরা বর্তমানে দেখতে পাই সেগুলো সব একত্রিত অবস্থায় প্যানগিয়া নামক একটি বিশাল মহাদেশ হিসেবে অবস্থান করছিল। এরপর এগুলির অবস্থান পরিবর্তনের কারণ হলো টেকটনিক প্লেট এবং কন্টিনেন্টাল ড্রিফট গুলির গতিবিধি যার ফলে সৃষ্টি হয় পর্বত, উঁচু মালভূমি এবং এমনকি আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ভূমিকম্প এবং সুনামি।
দুই আমেরিকান ভূবিজ্ঞানী ম্যাকেঞ্জি এবং স্কাল্টার পরিষ্কারভাবে বর্ণনা দেন যে আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকা 200 মিলিয়ন বছর আগে একটি পুরানো মহাদেশের সাথে যুক্ত ছিল। বর্তমানে ভারত আরব, আফ্রিকা, আন্টার্কটিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার এরকম বিচ্ছিন্ন অবস্থানের কারণ হচ্ছে পৃথিবীর এবং টেকটনিক প্লেট গুলির গতিবিধি।
কুমারি কান্ডাম, কুমারিকানতাম বা কুমারী নারু এই মহাদেশটির নাম প্রথম আধুনিক জগতে উঠে আসে পনেরশো শতকের স্কন্দপুরাণ এর একটি ভার্সনে যা হিন্দু পুরাণের একটি মহাকাব্য।
আমরা সকলেই জানি ভারতে তামিল সভ্যতার উৎস খুবই রহস্যময় বিষয়। বহুকাল ধরে বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন।
ভারতের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশানোগ্রাফির মতে 14500 বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠ 100 মিটার উঁচু ছিল এবং দশ হাজার বছর আগে 60 মিটার ছিল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে মহাদেশটি সমুদ্রের তলায় চলে যায়।
বলা হয় তামিল সভ্যতা সবচেয়ে পুরনো সভ্যতা যেখান থেকে সবকিছু শুরু হয় এবং এই কুমারি কান্ডাম একটি মহাদেশ ছিল যেখানে পান্ডিয়া রাজারা রাজত্ব করত এবং সেখান থেকে তামিল মানুষরা অন্যান্য বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন ভাষা জাতি এবং সভ্যতার সৃষ্টি করে।
কিছু ইউরোপিয়ান স্কলার একে 'লামুরিয়া' নাম দেন এবং ধারণা করা হয় যে এটি মাদাগাস্কার, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ভারতের সাথে যুক্ত ছিল; আফ্রিকা থেকে এশিয়া পর্যন্ত।
লামুরিয়া শব্দটি উনিশ শতকে ইউরোপিয়ান ভূতত্ত্ববিদ ফিলিপ লুটলি নিয়ে আসেন, কিভাবে লেমুর নামের প্রাণীটি ভারত থেকে মাদাগাস্কারে আসে তার সম্বন্ধে এক তত্ত্বে।
অধিকাংশের মতে মতে কুমারি কান্ডাম শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ 'কুমারিকা খান্ডা' থেকে।
স্কন্দপুরাণে একে পৃথিবীর রাজধানী বলে বর্ণনা করা হয়েছিল।
বর্তমানে ভারত মহাসাগরে অবস্থিত 1.7 মিলিয়ন বছরের পুরনো কৃত্তিম ব্রিজ যেটিকে রামসেতু বা আডাম'স ব্রিজ বলা হয় সেটিকে এই হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার অংশ হিসাবে অনেকে দাবি করেন।
প্রাচীন চাইনিজ পুথিতেও এই স্থানের কথা পাওয়া গেছে।সেখানে বলা হয়েছে চাইনিজ শ্রমিকদের পান্ডিয়া রাজা দ্বারা স্বর্ণ খনিতে খননকার্যের জন্য নিয়োগ করা হতো।
এছাড়া বলা হয় তামিল হচ্ছে বিশ্বের ভাষাগুলির মধ্যে সবচেয়ে পুরনো এবং বিভিন্ন পুরান ভার্সন অনুযায়ী প্রাচীন কুমারি কান্ডাম এর সংস্কৃতি এখনো তামিলনাড়ুতে থেকে গেছে। কিছু তথ্য যা উপরের তত্তও গুলোকে সমর্থন করে তা হল অস্ট্রেলিয়ান প্রাচীন বাসিন্দারা বা আদিবাসীরা খুব সহজেই তামিল ভাষা বা এর উপভাষা গুলি বলতে পারে এবং পুরাতন অস্ট্রেলিয়ানদের সাথে ভারতীয়দের জিনগত সাদৃশ্য আছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেরিন আর্কিওলজির আর্কিওলজিক্যাল গবেষণায় তথ্য পাওয়া গেছে যে প্রায় 300 খ্রিস্টপূর্বাব্দ তামিলনাড়ুর বেশকিছু অংশ সুনামিতে ডুবে যায়।
তামিলনাড়ুর কাছের সমুদ্রের তলায় 400 থেকে 500 খ্রিস্টপূর্বাব্দের পুরানো পাত্র ও বিভিন্ন বস্তু পাওয়া যায়। এছাড়াও গবেষণায় দেখা যায় সমুদ্রের তলায় স্থানটি কুমারি কান্ডাম স্থানটির অবস্থানের সাথে যার মিল আছে সেখানে সমুদ্রের গভীরতা 200 থেকে দুই হাজার মিটার। প্রাচীন অস্ট্রেলিয়ান অধিবাসী ছাড়াও আন্দামান আফ্রিকান, লাক্ষাদ্বীপ এবং নিকোবরের প্রাচীন বাসিন্দাদের ভাষা তামিল ভাষার মতোই।
আফ্রিকা মাদাগাস্কার এবং অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রের দিকে বহু গাছ পশু এবং প্রজাতির সাথে ভারতের মিল পাওয়া যায় যার থেকে অতীতে ভারত আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যবর্তী সংযোজনকারী কোন ভূখণ্ড থাকার সম্ভাবনা বিদ্যমান। এ নিয়ে এখনো অনেক গবেষণা বাকি, ভারত মহাসাগরের গভীরতা থেকে আরো তথ্য ইতিহাস উঠে আসবে যা হয়তো ভবিষ্যতে পুরো মানব জাতি সম্পর্কে ধারণা ও বদলে দিতে পারে গবেষকরা মনে করেন।
No comments:
Post a Comment