Pages

Sunday, 26 April 2020

লালবাগ কেল্লার রহস্যময় সুড়ঙ্গ--

পৃথিবীজুড়ে রহস্যের অন্ত নেই এবং উপমহাদেশীয় অঞ্চলেও এমন কিছু রহস্য রয়েছে যা আমার মনে হয় প্রচার পেলে পৃথিবীর অন্যান্য বিখ্যাত রহস্য গুলোকে টক্কর দিতে সক্ষম।
আজ আমরা বাংলাদেশের অবস্থিত ঢাকার ভেতরে দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম -- ঐতিহাসিক 'লালবাগ কেল্লার' একটি রহস্যময় সুরঙ্গ নিয়ে আলোচনা করছি যার কথা হয়তো অনেকেই কমবেশি শুনে থাকবেন।

এই লালবাগ কেল্লা বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত যা সপ্তদশ শতকের অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ স্থাপত্যের মধ্যে একটি। এই সময় ঢাকায় সুবেদারদের থাকার জন্য কোন স্থায়ী ব্যবস্থা ছিল না এবং যেহেতু স্বল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করতে তারা যাতায়াত করতেন তাই স্থায়ী ভবন নির্মাণে তেমন উৎসাহ দেখেননি দেখাননি। সুবেদারদের থাকার ব্যবস্থা ছাড়াও, ঢাকাকে পর্তুগিজ অধিগ্রহণ এবং আর্কানিজ জলদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য 1678 সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র মুঘল সুবেদার - আজম শাহ; যিনি পরবর্তীকালে নিজেও সম্রাট পদাধিকারী হয়েছিলেন।তিনি জটিল এক নকশা অনুসরণ করে দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন এবং তার নামকরণ করেছিলেন 'কিল্লা আওরঙ্গবাদ' কিন্তু পরের বছরই সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান ফলে দুর্গের কাজ অসমাপ্ত রেখে তাকে ফিরে যেতে হয়। আজম শাহ বাংলায় কেবলমাত্র 15 মাস ছিলেন।

তার উত্তরসূরী মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খাঁ এরপর ঢাকায় আসেন; এটি তার দ্বিতীয়বার ছিল এবং যুবরাজ আজম শাহ তাকে লালবাগ দুর্গের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।1680 সালে পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু করলেন শায়েস্তা খাঁ, কিন্তু 1684 সালে তার মেয়ে পরী বিবি অকস্মাৎ মারা গেলে তিনি এটিকে অশুভ মনে করলেন এবং নির্মাণ কাজ পুনরায় বন্ধ হয়ে গেল। 
এর পরিবর্তে তিনি পরিবিবির জন্য এক চিত্তাকর্ষক সমাধি সৌধ নির্মাণ করেন, যার নাম হয় 'পরিবিবির মাজার'; এটি রাজমহল পাহাড়ের কালো ব্যাসাল্ট , রাজপুতানার সাদা মার্বেল এবং বিভিন্ন রকমের টাইলস দিয়ে তৈরি। সমাধি কক্ষে একটি চাইনিজ ক্রস প্যাটার্নে তৈরি পাথরের চন্দন কাঠের কারুকার্য দিয়ে তৈরি দরজা অতিক্রম করে ঢুকতে হয়। 

এছাড়া মুঘল আমলের অন্যতম একটি নিদর্শন এখানকার মসজিদ এই মসজিদটি এখনও স্থানীয় মানুষেরা কোন টিকিট ছাড়াই যেতে পারেন। 

পশ্চিম দিকে গভর্নর শায়েস্তা খানের জন্য একটি দোতলা বাড়ি তৈরি হয়েছিল। এতে হাম্মাম এবং দর্শকদের জন্য হলঘর আছে। মাঝের ঘরটিতে একটি অসাধারণ ফোয়ারা আছে। এছাড়া এখানে একটি অসাধারন মিউজিয়ামও আছে।

লালবাগ দুর্গের প্রায় 12 শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছিল এবং দুর্গের দক্ষিণ পূর্ব দেয়ালের সাথে যুক্ত করে দুর্গের নিয়ম অনুযায়ী একটি ভূগর্ভস্থ পথ নির্মাণ করা হয় ।

লালবাগ কেল্লা নিচে অনেকগুলি সুড়ঙ্গের খোঁজ পাওয়া গেছে। বলা হয়, এই সুড়ঙ্গে কেউ ঢুকলে সে নাকি আর ফিরে আসেনা। সম্ভবত এর মধ্যে একটি সুরঙ্গ বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে পরিতক্ত জিনজিরা কেল্লা অব্দি গিয়েছে এবং অন্যান্য সুরঙ্গগুলি স্থানীয় মতে খুব সম্ভবত আক্রমণকারীদের থেকে পালিয়ে বাঁচার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। কোন কোন স্থাপত্যবিদদের মত অনুযায়ী, এই পথ 18 কিলোমিটার দূরে টঙ্গী নদী পর্যন্ত চলে যায়; আবার কেউ বলে এটি জলাধারের মুখ এবং এর ভিতরে একটি বড় চৌবাচ্চা রয়েছে।

1857 সালে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে সিপাহী বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল। এই সময়ে ঢাকার লালবাগ কেল্লায় 200 জন সিপাহী ছিল। সেই সময় স্থানীয় সিপাহিদের ইংরেজরা 'কালা সিপাই' বলে ডাকত। যখন মে মাসে মিরাটে বিদ্রোহের খবর ঢাকায় পৌঁছায় তখন স্থানীয় ইংরেজরা ভীত হয়ে গেছিল। ঢাকায় চারদিকে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। লালবাগের সিপাহীরা এই সময় চুপচাপ ছিল। কিন্তু আশংকিত ও চিন্তিত হয়ে লেফটেন্যান্ট লুইস ও লেফটেন্যান্ট এটিবেউস এর নেতৃত্বে একদল ইংরেজ বাহিনী কেল্লার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। এদিকে কেল্লার কালা সিপাহীরা সেই খবর পেয়েছিল এবং সন্দেহ করেছিল, যে আক্রমণ হতে পারে; অতএব যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। যেহেতু অস্ত্রাগার বন্ধ ছিল তাই স্থানীয় সিপাহীরা খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি। অস্ত্র ও যোগানের অভাবে তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল।যখন এখানে হেরে যাওয়া সিপাহীদের ঘিরে ফেলা হয়, তখন তারা সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে লুকানোর বা পালানোর চেষ্টা করেন কিন্তু তাদের বা তাদেরকে আক্রমণ করে এগোনো ব্রিটিশ সৈন্যরা কেউ আর ফিরে আসেনি। এই সময়ে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল এবং তাদের দেহগুলি কেল্লার পূর্বদিকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছিল। বাকি সিপাহিদেরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল। এরপর কেল্লার সেই রাস্তা মানুষেরা আর ব্যবহার করত না। স্থানীয়দের মতে রাত্রের দিকে দূর থেকে মানুষের চিৎকারের শব্দ ভেসে আস্তে শোনা যেত এবং কুয়োর জল অনেক বছর ধরে লাল রংয়ের হয়েছিল।শোনা যায়, পরবর্তীকালেও অনেক মানুষ এই কুয়ায় লাফিয়ে ডুবে গেছে। স্থানীয়রা আর কখনো  কূয়াটিকে ব্যবহার করেনি।  

এরপর ব্রিটিশ শাসন চলাকালীন কিছু অধিকারিকরা পরীক্ষা করার জন্য এখানে দুটি কুকুরকে চেনে বেধে প্রবেশ করান। এই দুটি কুকুরের কেউই ফিরে না আসায় তারা চেন ধরে টান দেন এবং কেবলমাত্র তাদের গলায় বাঁধা চেন ও হাড়গোড় ফিরে আসে; কুকুরগুলোকে আর দেখতে পাওয়া যায় না। এরপর পরীক্ষা করার জন্য দুটি হাতিকেও  তারা ভেতরে ঢুকিয়ে ছিলেন কিন্তু তারাও নাকি ফিরে আসেনি। এরপর ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে এই সুরঙ্গ পথ সিল করে দেওয়া হয়েছিল। 1910 সালে লালবাগ কে প্রাচীন স্থাপত্য হিসাবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়। শোনা যায়, এক যুবক এই সুড়ঙ্গের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করেছিল কিন্তু ফিরে আসতে পারেনি।  
মোগলদের দ্বারা নির্মিত দুর্গ রহস্য নতুন কিছু না বর্তমানে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও পাকিস্তানেও এরকম অনেক রহস্যময় মুঘল নির্মিত দুর্গ ও সুরঙ্গ অস্তিত্ব পাওয়া যায়। 

বিভিন্ন ব্যাখ্যা পাওয়া যায় এই সুড়ঙ্গের পেছনে। যেমন- দিল্লির লালকেল্লায় মুঘল আমলে তৈরি একটি সুরঙ্গ দুর্গের পূর্ব দিক থেকে যমুনা নদী অবধি পৌছে যায়। 

আবার পাকিস্তানের অন্যতম রহস্যময় লাহোর কেল্লাতে শাহাজানের শাসনকালে তৈরি বিভিন্ন সুরঙ্গ দেখতে পাওয়া গেছে। যদিও এগুলিও কেন তৈরি হয়েছিল, কোথায় গেছে এখনো পরিস্কার ভাবে জানা যায়নি।  প্রত্নতত্ত্ববিদরা এখনো কাজ করছেন। কিছু গবেষকের মতে এই সুড়ঙ্গের মধ্যে কোন একটি দিল্লির দুর্গের সাথে যুক্ত। জানা গেছে, এর মধ্যে একটি সুরঙ্গ মুঘল শাসক জাহাঙ্গীরের সমাধি স্থানে যায় এবং অন্য কয়েকটি সুরঙ্গ তখনকার দিনে রানী এবং রাজকন্যাদের যাওয়া-আসার জন্য ব্যবহার করা হতো।  যদিও এই লাহোর কেল্লা এবং লালবাগ কেল্লার মধ্যে একটি মিল আছে সেটি হল বিভিন্ন সময়ে এগুলি পুনর্নির্মাণের কাজ করা হয়েছিল ; যার ফলে অনেক সময় পুরনো নকশা ও নির্মান পরিত্যাগ করে আবার নতুন নকশা অনুযায়ী বানাতে হয়েছিল। হয়তো এই জন্যই পূর্বে নির্মিত কোনো কক্ষ বা নির্মাণ সুরঙ্গ হিসাবে পরিতক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। এছাড়াও এই সুরঙ্গ গুলিতে অনেক সময় শাসকেরা গুপ্তধন বা অন্যান্য সম্পদ লুকিয়ে রাখার জন্য গোপন কক্ষ ব্যবহার করতেন। 

ব্রিটিশ সরকার ধারণা করেছিলেন, যে হয়তো সুরঙ্গ কোন এক প্রকার গ্যাস বা কেমিক্যাল আছে যা দেহকে গলিয়ে দেয় এবং কেবলমাত্র হার পড়ে থাকে।
যদিও বাংলাদেশের লালবাগ কেল্লা পরবর্তীকালে কোন প্রত্নতাত্ত্বিক খনন না হওয়ার ফলে এই সুড়ঙ্গের রহস্য রহস্যই থেকে গিয়েছে।

Thursday, 23 April 2020

'ক্র্যাকেন' - রহস্যময় ও ভয়ঙ্কর কিংবদন্তি অথবা ঐতিহাসিক প্রাণী---

'ক্র্যাকেন' -- এই ভয়ানক সামুদ্রিক দানবটিকে বিভিন্ন জনপ্রিয় কমিক বুক গেম এবং টেলিভিশন শো এবং চলচ্চিত্রে দেখা গেছে -- এই সূত্র গুলি থেকে সাধারণভাবে এই প্রাণী সম্পর্কে জানা যায় যে এটি একটি বিশালকায় স্কুইড জাতীয় প্রাণী যা বিভিন্ন জাহাজকে আক্রমণ করে এবং এত শক্তিশালী যে চাইলেই যেকোনো জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে পারে। যুলে ভার্নের  "20000 leagues beneath the the sea" বইটিতে এবং ডিজনির বিভিন্ন গল্পের মুভি ভার্সনে এই ভাবেই প্রাণীটিকে দেখানো হয়েছিল এবং সম্প্রতি প্রাণীটিকে ডিজনির 'পাইরেটস অফ দি ক্যারিবিয়ান' মুভিটিতে দেখানো হয়েছিল।
অবশ্যই বৈজ্ঞানিকরা এই কিংবদন্তী সম্পর্কে সমালোচনা করতে বেশি সময় নেননি। তারা প্রশ্ন করেছিলেন স্কুইডের এই বিশাল আকৃতি হওয়া নিয়ে এবং কখনো এত বিশাল কোন স্কুইডকে দেখা যায়নি যে একটি জাহাজ ডুবিয়ে দিতে পারবে এবং এই বিশাল আকৃতির সাথে তাদের এই আক্রমনাত্মক মেজাজ সম্ভবত অতিরঞ্জিত করা হয়েছে বলে তারা মত প্রকাশ করেন।

এই ক্র্যাকেন সম্পর্কে প্রথম তথ্য আনা হয় প্রায় 3000 বছর আগে যেখানে ক্র্যাকেনকে স্কুইড হিসাবে বর্ণনা করা হয়নি এবং একে আক্রমনাত্মক বলেও অভিযোগ করা হয়নি।
13 শতকে 'orvar-oddr' এ প্রথম এর বর্ণনা পাওয়া যায় - একটি পৌরাণিক যেখানে দুজন সমুদ্রের দানবের কথা বর্ণনা করা হয়েছিল এই সময়কালিন 1250 সালে ক্র্যাকেন সম্পর্কে আরেকটি তথ্য Norwegian সাইন্টিফিক ওয়ার্ক চলার সময় সংগ্রহ করা হয়, সেটি হল এদের কেবল মাত্র দুটি বর্তমান ছিল কারণ এগুলি প্রজনন করতে পারত না এবং এদের বেঁচে থাকার জন্য প্রচুর খাদ্যের দরকার হতো।

 17 শতকের মাঝামাঝি সময়ে এর উপর সাইন্টিফিক লিটারেচার প্রকাশ করা হয় কিন্তু তাতেও তাকে বর্তমানের মত হিংসাত্মক কোন বিশালাকৃতির স্কুইড হিসাবে বর্ণনা করা হয়নি। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে ছোট ছোট তথ্যের এদিক-ওদিক হলে কোন ঘটনাকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে। 

1751 সালে যখন বারগেনএর বিশপ এরিক তার লেখা 'ন্যাচরাল হিস্ট্রি অফ নরওয়ে' বইটি প্রকাশ করেন। তিনি সমুদ্রগামী জেলেদের থেকে ক্র্যাকেনএর বর্ণনা সংগ্রহ করেন -- যারা এই প্রাণীর সম্মুখীন হয়েছিল। বলা হয়, এই প্রাণীটি কখনো সম্পূর্ণ সামনে আসেনি কারণ এর বিশাল আকৃতি এবং সমুদ্রের অনেক নিচে থাকার কারণে এটি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উঠে আসতো। যদিও এরিক প্রাণীটির আসল আকৃতি এবং বর্ণনা দিতে পারেননি; কিন্তু তিনি মনে করতেন যে তিনি যা দিয়েছেন তা ভবিষ্যতের গবেষকদের তদন্ত করার পক্ষে যথেষ্ট।

গরমকালের এই প্রাণীটি প্রায়ই  সমুদ্রে উপরের দিকে উঠে আসে। এটা কখনো ঝড় অথবা অশান্ত সমুদ্র থাকাকালীন উপরে আসে না। এই দানবটিকে সমুদ্রতট থেকে কিছুটা দূরে যেখানে অন্তত 80 ফুট গভীরতা থাকে এই সকল স্থানে দেখা যায়।
ক্র্যাকেন মাছদের প্রতি আকৃষ্ট হয়; সমুদ্রের যেখানে মাছ বেশি থাকে সেইখানে তাদের গতিবিধি বেশি দেখা যায় বিশেষ করে কড ও লিং মাছ তাদের সবচেয়ে বেশি প্রিয় তাই যখন কোথাও শোনা যায় ক্র্যাকেনকে দেখা গেছে সেখানে অন্তত মাছ ধরার আশায় অন্তত কুড়ি পঁচিশ খানা নৌকাকে পৌঁছে যেতে দেখা যায়।

শিকার করার সময় ক্রাকেন আস্তে আস্তে সমুদ্রপৃষ্ঠের দিকে উঠে আসে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠলে তাকে অনেকটা সমুদ্রের মাঝে দ্বীপের মতো দেখায় যার ওপর প্রচুর মাছ ছটফট করতে থাকে, এরপর তার সুরগুলি উঠে আসে এগুলি অনেকটা মাঝারি আকৃতির জাহাজের মত উঁচু হয় এবংনিচের দিকে মোটা থাকে এবং উপরের দিকে আস্তে আস্তে সরু হয়। এরিকএর মত অনুযায়ী, এগুলি আসলে এই প্রাণীটির হাত যেগুলি একে চলাচল করতে সাহায্য করে। তিনি দাবি করেন, এই প্রাণীটির দৃশ্যমান দেহটি প্রায় এক মাইলের মতো ডায়ামিটার নিয়ে বিস্তৃত যদিও তিনি বলেছিলেন জেলেরা এর থেকেও বড় আকৃতির দাবি করেছিল, কিন্তু তিনি ন্যূনতম আকারের বর্ণনা দিয়েছেন।
জেলেদের মতে এরপর এই প্রাণীটি কিছুক্ষণ বাদে ডুবে যায় এবং নিচে যাওয়ার সময় ঘুরতে ঘুরতে একটি ঘূর্ণি সৃষ্টি করে যা এর আশেপাশের সব কিছুকে টেনে নিচে নিয়ে যায়।

তার তথ্য অনুযায়ী, ক্র্যাকেন বছরের কিছু মাস ধরে খাবার খেয়ে যায় এবং তারপর কয়েক মাস ধরে মলত্যাগ করতে থাকে। এদের মল ঘন হয় ও জলকে ভীষণ ঘোলাটে করে দেয়; কিন্তু মাছেদের  দারুন রকম ভাবে আকৃষ্ট করে এবং এই সময় প্রচুর মাছ ক্র্যাকেন এর উপর এসে জমা হয় এবং তারপর ক্রাকেন এগুলোকে খেয়ে নেয়।

এরিক এর মতে ক্র্যাকেন চাইলেই যেকোনো নৌকাকে টেনে নিয়ে চলে যেতে পারে কিন্তু কখনো একে এত আক্রমনাত্মক হিসেবে দেখা যায়নি। যে যে মানুষের মৃত্যু বা আঘাত হয়েছিল সবগুলোই দুর্ঘটনাবশত এবং সাধারণত জেলেরাও এই প্রাণীকে ততটা চিন্তিত থাকতো না। বিশপ লিখেছিলেন, কয়েক বছর আগে একটি ছোট বোট নিয়ে দুজন জেলে ক্র্যাকেনের সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসার সময় তার অনেকটা কাছাকাছি চলে গিয়েছিল এবং সময়মতো দূরে পৌঁছাতে পারেনি। এই প্রাণীটির একটি সুর এই সময় বোর্ডের সামনে এসে পড়ে ফলে নৌকাটি ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে তাদের ভাঙা কাঠ অবলম্বন করে ভেসে ভেসে সমুদ্রের পাড়ে যেতে হয়।

এরিক আরো একটি ঘটনার কথা লিখেছিলেন যেটি 1680 সালে মিনিস্টার অফ নর্ডলান্ড এর রেভারেন্ড ফ্রিসে ঘটেছিল। একটি কম বয়সী ক্র্যাকেন সাঁতার কাটতে কাটতে সমুদ্রের ধারের সংকীর্ণ পাথর গুলির মধ্যে আটকে গিয়েছিল এবং তার একটি সুর গাছে আটকে গিয়েছিল ফলে সেটি সেখান থেকে বেরোতে পারেনি এবং মারা গিয়েছিল। এর দেহটি পচন ঘটায় বহুদিন ধরে দুর্গন্ধের ফলে সেই এলাকাটি অসহনীয় হয়ে গিয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত: এই সময় এর দেহের ছবি আঁকা বা মাপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এরিক মনে করতেন, এই প্রাণীটি হয়তো কোন প্রবাল কীট জাতীয় বা তারা মাছ অর্থাৎ স্টারফিশের মত কিছু হতে পারে এবং হয়তো এইটা পৃথিবীজুড়ে বিভিন্ন দ্বীপের গায়েব হয়ে যাওয়ার ঘটনার সাথে জড়িত।

পরবর্তী 50 বছরে এই প্রাণীকে অনেকেই সমুদ্রের অন্যান্য কিংবদন্তির দানবের সাথে গুলিয়ে ফেলে এবং এর গল্পগুলি অন্যান্য সমুদ্রের প্রাণীর বা গল্পের সাথে সাথে মানুষ মিশিয়ে ফেলে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,  একটি বিখ্যাত আরবিক লোককাহিনী যেখানে সিনবাদ বলে এক নাবিক তার যাত্রাকালে  সমুদ্রের মাঝে একটি রহস্যময় সবুজ রঙের দ্বীপে অবতরণ করেন বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এবং তিনিই একমাত্র বাঁচতে সক্ষম হন যখন দ্বীপটি সমুদ্রের ঢেউ এর নিচে সাঁতরে চলে যায়।

আর একটি বিখ্যাত কাহিনী শোনা যায়, যেখানে আয়ারল্যান্ডের সেন্ট ব্রেন্ডন একটি ছোট্ট দ্বীপে রাত কাটানোর জন্য অবতরণ করেন এবং সকালে যখন নাবিকরা  রান্না করার জন্য আগুন জ্বালাতে দিয়েছিল, তখন দ্বীপটি  কাঁপতে শুরু করে এবং ডুবতে থাকে, তারপর সাঁতরে সমুদ্রের নিচে চলে যায়। সেই সময় কোন মানুষের মৃত্যু হয়নি এবং সকলে অবাক হয়ে গিয়েছিল যে ব্রেন্ডন প্রথম থেকেই জানতেন যে, এটি একটি মাছ ছিল। ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন যে, রাত্রিরে তাদের জাহাজের অবতরণ করার পক্ষে একটি সুরক্ষিত। এই গল্পগুলি থেকে জানা যায় যে কীভাবে নাবিকরা ক্র্যাকেনএর উপর অবতরণ করে ক্যাম্প তৈরি করেছিল এবং যখন আগুন জ্বালিয়ে ছিল তখনই তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছিল এবং যখন এটি আগুন থেকে বাঁচতে সমুদ্রের তলায় ডুবে যেত এবং ঘূর্ণি সৃষ্টি হতো একমাত্র সেই ঘূর্ণির কারণেই মানুষ ডুবে মারা যেত। 

1801 সালে নামক এক ফরাসি নামক বই প্রকাশ করেন এবং তাতে তিনি বিশাল আকৃতি অক্টোপাসএর অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করেন এবং তিনি দাবি করেন যে এই ক্র্যাকেনগুলি আসলে এক ধরনের বিশালাকৃতির অক্টোপাস এবং তাদের সুরগুলি হচ্ছে তাদের হাতের মত এবং এবং তাদের দেহ থেকে নির্গত যে বস্তুটি মাছেদের আকৃষ্ট করত সেটি হচ্ছে অক্টোপাস 'ইনক'। তিনি একটি ছবিতে বর্ণনা দিয়েছিলেন কিভাবে এরা জাহাজকে জলে ডুবিয়ে দিত। এই বই সেই সময় যুক্তিবাদী মানুষেরা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, কিন্তু 1819 সালে পরিবেশবিদ এবং বৈজ্ঞানিকরা বিশাল আকৃতি স্কুইডের অস্তিত্ব নিয়ে অস্তিত্বের প্রমাণ খুঁজতে বেরিয়ে পড়েছিলেন এবং এনার ক্র্যাকেন নিয়ে দাবি গুলিকে তারা পর্যালোচনা করেছিলেন তবে তাঁরা এগুলিকে অক্টোপাস না একটি স্কুইড হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন।

পরবর্তীকালে 1870 সালে জুল ভার্নের লেখা '20000 লীগস আন্ডার দ্য স্কাই' বইটিতে ক্র্যাকেনকে একটা কিংবদন্তিরূপে পরিচয় দেওয়া হয় এবং বইটির একটি অংশে বর্ণনা দেয়া হয় যে কিভাবে  দৈত্যাকার স্কুইড জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিল এবং এই বইটি বিখ্যাত হয়ে যাওয়ার পর ক্রাকেন সম্পর্কে এক নতুন ধারণা ছড়িয়ে পড়ে। 
1735 সালে পৃথিবী বিখ্যাত সুইডিশ বোটানিস্ট, ফিজিশিয়ান এবং জুলজিস্ট কার্লোস লিনিয়াস তার 'সিস্টেমা নেচারে' বইটির প্রথম এডিশনে ক্র্যাকেনের কথা উল্লেখ করেন।  'ইকনোমিক ক্লাসিফিকেশন অফ লিভিং অর্গানিজম' এ এর কথা বর্ণনা করেন।  তিনি রাখেন ক্র্যাকেনকে 'সেফালোপড' শ্রেণীভূক্ত করেন। যদিও পরবর্তী এডিসনগুলোয় এর কথা উল্লেখ করা হয়নি। লিনিয়াস 1746 সালে তার পরবর্তী প্রজেক্ট 'fauna suecica' তে একে এক 'ইউনিক মনস্টার' হিসাবে দাবী করেন, "যে নরওয়ের সমুদ্রে বাস করে কিন্তু আমি কখনো এই প্রাণীটিকে নিজে চোখে দেখিনি। "
যদিও ক্র্যাকেনকে বিশাল আকৃতির অক্টোপাস বা স্কুইড হিসাবে বর্ণনা করা হতো কিন্তু এটাকে কোথাও কোথাও কাঁকড়া জাতীয় প্রাণী হিসেবেও  বর্ণিত করা হয়। 

Monday, 20 April 2020

পিরামিডের কিছু রহস্য--


পিরামিড ও এর রহস্য নিয়ে আসা করি আপনারা সকলেই জানেন, এই রহস্য একবারে বলে শেষ করা যাবেনা,আজ পিরামিডের এরকম কিছু তথ্য আলোচনা করলাম --


বহু হাজার বছর আগে পৃথিবীতে অসংখ্য পিরামিড তৈরি হয়েছিল; যদিও আমরা সবচেয়ে বেশি পরিচিত মিশরের পিরামিডের সাথে, বিশেষত "the Great pyramid of Giza" অর্থাৎ "গিজার বিখ্যাত পিরামিড" টির সাথে। পৃথিবীজুড়ে অনেক পিরামিড আছে কিন্তু  এগুলি আলাদা আলাদা বিভিন্ন সভ্যতা দ্বারা আলাদা আলাদা মহাদেশ তৈরি হয়েছে। গঠনগত দিক দিকে থেকে এগুলি অবাক করা সাদৃশ্য বজায় রাখে; ঠিক যেন একই নির্মাতা এগুলিকে তৈরি করার বরাত পেয়েছিলেন। এমনকি সত্যি বলতে গেলে একজন বলতে পারে যে, এই সকল প্রাচীন পিরামিডগুলো যেন একই রকম পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।

যদিও অনেক পিরামিড গঠনের দিক থেকে সামঞ্জস্য রাখে কিন্তু তারা অনেকটা আলাদা রকমের। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো পিরামিডগুলি যা হলো "দ্য পিরামিডস অফ ব্রাজিল"।
অনুমান করা হয় প্রায় 5000 বছরের কাছাকাছি সময়ে কোন এক অজানা সভ্যতা বর্তমান ব্রাজিলে পৃথিবীর প্রথম দিকের পিরামিডগুলো তৈরি করেছিল। এই ব্রাজিলিয়ান পিরামিড গুলিকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো পিরামিড বলা হয় যদিও সেগুলি সেন্ট্রাল এবং উত্তর আমেরিকার প্রাচীন সভ্যতার দ্বারা তৈরি পিরামিডগুলি থেকে আলাদা রকমের ছিল। ব্রাজিলিয়ান পিরামিড ইজিপশিয়ান পিরামিডের মতো ছিল।

প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে ব্রাজিলিয়ান পিরামিডগুলো বিশালাকৃতির হলেও ইজিপশিয়ান পিরামিডের মতো এত জটিল ছিল না। এর কারণ হয়তো এই হতে পারে যে, ব্রাজিলিয়ান পিরামিডগুলি বেশিরভাগই ঝিনুক এবং ভাঙ্গা পাথর দিয়ে তৈরি ছিল। এটা একটা অন্যতম কারণ যার জন্য এই পিরামিডগুলি সময়ের সাথে সাথে মিশরের পিরামিড গুলির মত টিকে থাকতে পারেনি।
ব্রাজিলে একসময় আনুমানিক প্রায় হাজারেরও বেশি পিরামিড অবস্থান করতো।
যদিও সব স্থাপত্যগুলি পাথরের ছিল না, তাদের মধ্যে প্রচুর গাছপালা দিয়ে তৈরির নিদর্শন ছিল।  কিন্তু তার অর্থ এই না যে ব্রাজিলিয়ান পিরামিডগুলি কম স্থাপত্য সমৃদ্ধ ছিল; বলা যায় যে সেগুলি কেবলমাত্র মিশরের তুলনায় কম স্থায়ী অথবা কম টেকসই ছিল। এই কারণে ব্রাজিলিয়ান পিরামিডগুলি অনেকটা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গিয়েছিল কারণ, পরবর্তীকালে অর্থাৎ আধুনিক যুগে মানুষেরা যখন দক্ষিণ ব্রাজিলে বসতি স্থাপন করেছিল, তখন আধুনিক বাড়িঘর এবং শহর তৈরি করার সময় সরঞ্জামগুলির যোগান এগুলি ধ্বংস করে আসতো।


পিরামীডোমেনিয়া ডট কম এর মতে, ব্রাজিলিয়ান পিরামিডগুলির বিশাল আকৃতির ছিল, যার মধ্যে কিছু কিছু 160 ফুট উঁচু, 37 একর জায়গা জুড়ে অবস্থান করতো অর্থাৎ ব্রাজিলিয়ান পিরামিডগুলি কিছু কিছু মিশরীয় পিরামিড থেকেও অনেক বিশাল আকৃতির ছিল।
বিশাল আকৃতির হলেও ব্রাজিলিয়ান পিরামিডগুলোর তুলনায় মিশরের পিরামিডগুলি বেশি নির্ভুল, সুগঠিত এবং কারিগরি দক্ষতার পরিচয় রাখে।

বলা হয় প্রথম 'djoser'এর মিশরীয় পিরামিড তৈরি করা হয়, প্রাচীন মিশরের তৃতীয় রাজবংশের শাসন চলাকালীন। যে স্থাপত্যটিতে প্রথম দিকের পাথর খোদাই স্থাপত্য দেখা গিয়েছিল যা মিশরীয় স্থাপত্য শিল্পে এক বিপ্লব এনে দিয়েছিল। মিশরের ইতিহাসে এর আগে কখনো এরকম বিশাল স্থাপত্য তৈরীর চেষ্টা করা হয়নি। 'djose'r এর স্টেপ পিরামিড 65 মিটার লম্বা এবং 358 বাই 397 ফুট জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এই পিরামিড পরবর্তী কালের পিরামিডগুলোর মতনই সাদা লাইমস্টোন দিয়ে অসাধারণভাবে পুরোটা পালিশ করে তৈরী করা হয়েছিল।
এই পিরামিডটি 6 টি ধাপ বিশিষ্ট ছিল। এই পিরামিডটির স্থায়িত্ব বেশি ছিল এবং পরবর্তী বংশধরেরা এটিরও অনুকরণ করবে বলে মনে হলেও আদতে তা হয়নি। 
'Djoser' এরপর আরো কিছু পিরামিড তৈরি করার চেষ্টা করা হয়েছিল, যার নিদর্শন আমরা দেখতে পারি 'sekehmket' এর সমাধির পিরামিড এবং 'zawiyet el Aryan' এর লেয়ার পিরামিড। যদিও মিশরের বা ইজিপ্টের পরবর্তী পিরামিড তৈরি হয়েছিল ফারাও 'স্নেফেরু অফ দা ফোর্থ ডায়নাস্টি' এর আমলে। এরা ছিল মিশরের সর্বশ্রেষ্ঠ পিরামিড নির্মাতারা এবং ইতিহাস বইতে এনাদের তৈরি বিখ্যাত তিন পিরামিডের বর্ণনা পাই। এই সময় বলতে গেলে মিশরের আসল পিরামিড তৈরি শুরু হয়েছিল। এই পিরামিড গুলির মধ্যে মাঝেরটি সবচেয়ে রহস্যময় যাকে 'গ্রেট পিরামিড' বলা হয় কারণ এরমধ্যে প্রাচীন পিরামিড গুলির ধাঁধা লুকায়িত ছিল। 

মাঝের পিরামিডটি আগের 'djoser' এর মতনই সাতটি ধাপে তৈরি করা হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে এটিকে বাড়িয়ে 8 ধাপ বিশিষ্ট করে তোলা হয়। এরপর নির্মাতারা এই মাঝের পিরামিডটিকে একটি মসৃণ ধারের পিরামিডে পরিবর্তন করার চেষ্টা করে কিন্তু পরবর্তীকালে এগুলি ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে থাকে। যদিও সব পিরামিডগুলি অসাধারণ ও একরকম জাদুকরী ছিল কিন্তু 'গ্রেট পিরামিড অফ গিজা'র মত রহস্যময় ছিলনা। এই বিশাল আকৃতির স্থাপত্যটি 'ডাইনেস্টি অফ কিং খুফু' এর সময়কালীন তৈরি করা হয়; আনুমানিক 4500 বছর আগে। খূফু 'sneferu'এর পুত্র ছিলেন এবং আর্কিওলজিস্ট রেইনার স্টাদেলমানএর মতে পিতার মতনই তিনি 23 বছরের বেশি সময় ধরে রাজত্ব করেছিলেন। যদিও 30 থেকে 32 বছর রাজত্ব করেছে ধরে নিলেও এই পিরামিড তৈরির মোট 2700000 cu মিটার ভরের পাথর, মন্দির, স্যাটেলাইট পিরামিড, 3 রানীর জন্য, পিরামিড আধিকারিকদের জন্য, মাস্টাবা অর্থাৎ খুফুর স্থাপত্য-- নির্মাণ শিল্পীদের প্রতিদিন প্রায় বিস্ময়কর ভাবে 230 cu মিটারের পাথর বসাতে হতো যার অর্থ 10 ঘণ্টা কাজের সময় ধরলে প্রতি দুই মিনিটে ঘরে একটি ব্লক বসাতে হতো । যদিও তার পিতার স্মৃতিসৌধের তুলনায় তার পিরামিডের ভর সমান না হলেও তার একটি পিরামিডের হিসাবে বিশাল আকৃতি ও দক্ষতার দিক থেকে তিনি এগিয়ে গিয়েছিলেন। 
এইজন্য গবেষকরা এই পিরামিডকে 'গ্রেট পিরামিড অফ গীজা' নামকরণ করেছিল।  এর মোট ওজন আনুমানিক 6.5 মিলিয়ন টন এবং মিশরের ইতিহাসে সবচেয়ে বিশালকায় পিরামিড। বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, এই 'গ্রেট পিরামিদ অফ গিজা' পৃথিবীর ল্যান্ড 'মাসের মাঝামাঝি অবস্থিত। ইজিপ্টের পিরামিডগুলির মধ্যে কেবলমাত্র এটি ৮টি পার্শ্ব বিশিষ্ট। এর কারণ অবশ্য অজানা থেকে গেছে। এটি যে ৮ পার্শ্ব বিশিষ্ট তা প্রথম লক্ষ্য করেন ব্রিটিশ এয়ার ফোর্স পাইলট পি গ্রভেস যখন, 1940 সালে তিনি পিরামিডটির ওপর দিয়ে যাচ্ছিলেন।

এই পিরামিডটি একটি মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে তৈরি করা হয়েছিল। পিরামিডটির ভেতরে প্রাচীন নির্মাতারা ম্যাথমেটিক্যাল ফর্মুলার একটি সিরিজ খোদাই করে গিয়েছিলেন। পিরামিডের স্থাপত্যটি অসাধারণ গানিতিক ফর্মুলার সামঞ্জস্য ও ঐক্যের সাথে গঠন করা হয়েছিল এবং এর অনুপাত pi এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
Brazilian Pyramid

আমরা যদি গিজার অথবা চাইনিজ পিরামিডগুলো দেখি তাহলে আমরা কালপুরুষের নক্ষত্রপুঞ্জের সাথে এদের অবস্থানের সাদৃশ্য খুঁজে পাবো। নক্ষত্রপুঞ্জের অবস্থান প্রাচীন মিশর, অ্যাজটেক এবং চাইনিজ দের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু এত নিখুঁত অবস্থানে রেখে এত বিশাল স্থাপত্য গুলি তৈরি করা এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে থাকা সত্ত্বেও কিভাবে এত মিল তা এখনো আমরা বুঝে উঠতে পারিনি।
যদিও দাবি করা হয় পিরামিডগুলি সমাধি হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু অনেক ইজিপ্টোলজিস্টদের কাছে এটা এখনো রহস্যময় কারণ নক্ষত্রপুঞ্জের সাথে মিল রেখে এগুলির অবস্থানের সাথে রহস্যময় এনার্জি প্রপার্টি দেখা গেছে।

Friday, 17 April 2020

রহস্যময় পিরি রেইস ও তার তৈরী ম্যাপ -

এর আগের ব্লগে আমরা এন্টার্কটিকার পিরামিডে পিরি রেইস ম্যাপের কথা বলেছিলাম; যারা আবার পড়তে চান, তাদের জন্য লিংক দিলাম - 

আন্টার্কটিকার পিরামিড ও রহস্যময় ম্যাপ --


এবার আমরা এই রহস্যময় পিড়ি রেইস ম্যাপ নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো -

1929 সালের কনকনে ঠান্ডা একটি দিনে তুর্কির ন্যাশনাল মিউজিয়াম এর ডাইরেক্টর হালিল এধেম মিউজিয়ামে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিভিন্ন রকমের নথিপত্রগুলি দেখার কাজট করছিলেন। এই সময় তিনি একটি রো-ডিয়ার(একপ্রকার বামুন হরিণ প্রজাতি) স্কিনের তৈরি একটি ম্যাপ দেখতে পেলেন। ম্যাপটি কে যখন তিনি পুরোপুরি খুললেন সেটার আয়তন ছিল 2/3 ফুট এবং তিনি অবাক হয়ে গেলেন যে একটি 1513 সালের তৈরী ম্যাপে কি করে বর্তমান পৃথিবীর ম্যাপ এর মত এত নিখুত তথ্য সমৃদ্ধ।

এই ম্যাপটি তৈরি করেছিলেন পিরি রেইস যিনি জলদস্যু থেকে তুর্কি নৌবাহিনীর একজন সেনাপতি হয়েছিলেন। তিনি বিখ্যাত গ্যালিপলি তে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যা মারমারা সমুদ্রের ধারে একটি নৌবাহিনীর বেস ছিল তিনি কেমাল রেইস এর ভাতিজা ছিলেন। কেমাল রেইস একজন জলদস্যু ছিল যিনি দুর্ধর্ষ অভিযাত্রী ও নৌযুদ্ধে প্রচুর নাম কামিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে তুর্কির একজন নৌ সেনাপতি হিসাবে যোগদান করেন। এই সময় জলদস্যু থেকে সেনাপতি বা নৌবাহিনীতে আসার ঘটনা সাধারণ ব্যাপার ছিল। পিরি রেইস তার বিখ্যাত চাচার সাথে 1487 থেকে 1493 সাল অব্দি জল ভ্রমণ করছে করেছিলেন। এই সময় কালীন তিনি বহু লুন্ঠন ও যুদ্ধের স্বাদ পেয়েছিলেন। তাদের নৌ বাহিনী বিভিন্ন শত্রু ও জলদস্যুর বাহিনীর বিরুদ্ধে লুট, অপহরণ এবং যুদ্ধ করেছিল। 1495 সালে  কেমাল রেইস তার দুর্দান্ত যুদ্ধকলার জন্য তুর্কীস রাজ নৌবহর অর্থাৎ ইম্পেরিয়াল তুর্কীস ফ্লাইট থেকে আপ্পায়ন পান। যথারীতি এখানেও তার ভাতিজা তাকে সঙ্গ দেয়। এইভাবে একজন জলদস্যু সম্মানীয় সেনাপ্রধানের রূপান্তরিত হয়। 1502 সালে এক নৌযুদ্ধে কেমাল রেইস নিহত হওয়ার পর পিরি রেইস এই সমুদ্র জীবন থেকে দূরে গিয়ে ম্যাপ নির্মাতা হিসেবে তার দ্বিতীয় পেশা শুরু করেন। 

তিনি খুবই দক্ষ ম্যাপ নির্মাতা ছিলেন তার আঁকায় সামান্য ভুল ত্রুটি ও বরদাস্ত করতেন না। তিনি ক্রিস্টোফার কলম্বাসের জাহাজ থেকে বাজেয়াপ্ত করা বিভিন্ন চার্ট গুলো থেকে এবং অন্যান্য বিভিন্ন পুরাতন ম্যাপ এর সূত্র থেকে 1513 সালে তাঁর বিখ্যাত ম্যাপ তৈরি করেছিলেন। তুর্কিরা কলম্বাসের একটি জাহাজ অধিগ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানকার কর্মীরা চার্ট গুলো সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার আগে সেই জাহাজে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই চার্ট বা ম্যাপ ফেলে দেওয়া তখনকার দিনে একটি সাধারণ ব্যাপার ছিল। এরফলে পৃথিবী তখনও রহস্যময় ছিল এবং অনেক জায়গা মানুষের অগোচরে থেকে গিয়েছিল; তাই এই ম্যাপ গুলি যেকোনো জলদস্যু, সেনাপতি, রাজা বা রানীর কাছে অমূল্য সম্পদ ছিল।

সাধারণ মানুষেরা 'ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ' এর  1932 সালের 27 ফেব্রুয়ারির একটি ইস্যু থেকে পিরি রেইস ম্যাপের কথা প্রথম জানতে পারে। 
শিরোনাম ছিল - "কলম্বাস এর বিতর্কিত আমেরিকা এবং দুটো আটলান্টিক চার্ট"- এতে লেখা হয়েছিল কলম্বাস তার বহর নিয়ে যখন দক্ষিণ আমেরিকা এর সমুদ্রতট ধরে 1498 সালে এগিয়ে চলেছিলেন। তিনি ভেনেজুয়েলার অরিনোকো পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, পিরি রেইস ম্যাপে দক্ষিণ আমেরিকার বাকি যে সমুদ্রতট অঞ্চলকে ম্যাপে দেখানো হয়েছিল তা হয়তো অন্য কোন সূত্র থেকে প্রাপ্ত। 

ম্যাগাজিনের জুলাই 23 তম প্রকাশনায় 'তুর্কীস হিস্টোরিক্যাল রিসার্চ সোসাইটি'এর  প্রেসিডেন্ট আকুরা ইউসুফ আরো বিস্তারিতভাবে লিখেছিলেন, লেখক কিছু বিষয়ের তুলে ধরেছিলেন যা হলো, "আমাদের মতে এই ম্যাপ একটি অংশবিশেষ। যদি, অন্যান্য অংশগুলি হারিয়ে না গিয়ে থাকে তাহলে আমরা 1513 সালে অংকন করা একটি তুর্কীস চার্ট পাব যা পুরনো এবং নতুন দুনিয়াকে একসাথে যুক্ত করেছে।

ক্যাপটেন আর্লিংটন ম্যালেরি নামক একজন অ্যামেচার সাইন্টিস্ট পিরি রেইস ম্যাপ এর বয়স নির্ধারণ এবং তার সূত্র নির্ধারণ করতে মিশনে নেমেছিলেন। এই মিশনের শেষে তিনি যে সিদ্ধান্তে  উপনীত হন তা এতই অবাক করা ছিল যে, তিনি তা সকলের সামনে প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করেছিলেন। 1956 সালে অবশেষে তিনি তার আবিষ্কারকে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি সম্পাদিত একটি রেডিওতে সকলের সম্মুখে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলছিলেন, 1954 সালের জুনে যখন তিনি 'লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস' এর ম্যাপ রুমে কাজ করছিলেন, তখন তার বন্ধু হাইড্রোগ্রাফিক অফিসের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার তাকে ম্যাপটির একটি কপি দেন যা তাকে জনৈক তুরকিশ নৌকর্তা পাঠিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, "যে আমাদের কাছে এই ম্যাপ সম্পর্কে যা তথ্য আছে তা তুমি পরীক্ষা করো"। "আমি এগুলি সব যাচাই ও বিশ্লেষণ করে সেগুলো তার কাছে আবার নিয়ে গেছিলাম এবং অফিসার কে এগুলির ল্যাটিটিউড, লঙ্গীটিউট এবং প্রজেকশন যাচাই করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। যখন তারা আমায় প্রশ্ন করল কেন, আমি বলেছিলাম এই ম্যাপে এমন কিছু আছে  যে তথ্য আমার কাছ থেকে এসেছে - ভুলেও  কেউ বিশ্বাস করবে না; যদিও তোমার তরফ থেকে এলেও বিশ্বাস করবে কিনা আমি জানিনা। কলম্বাসের কাছে হয়তো এমন একটি ম্যাপ ছিল যাতে আন্টার্কটিকা মহাদেশে পালমার পেনিসুএলাকে নিখুঁতভাবে দেখানো হয়েছিল। "

রেডিও সঞ্চালক মিস্টার ওয়ারেন ম্যালেরি এবং ইউ. এস নেভি হাইড্রোগ্রাফিক অফিসের এম.আই ওয়াল্টারের ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। 
যাতে তিনি ওয়াল্টার কে প্রশ্ন করেছিলেন, "এই ম্যাপটা কি ইউএস নেভীর হাইড্রোগ্রাফিক অফিসের দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল?"
ওয়াল্টার জবাবে হ্যাঁ বলেন এবং তিনি নিশ্চিত ছিলেন এগুলি সম্পূর্ণ সঠিক ছিল। 
এরপর তাকে প্রশ্ন করা হয়, "এই ম্যাপ গুলি কত বছরের পুরনো হতে পারে?"
জবাবে ওয়াল্টার বলেছিলেন, "ম্যাপ গুলি 5000 বছর বা তার আগেরও হতে পারে, কিন্তু তাতে এমন কিছু তথ্য আছে যা হয়তো এর থেকেও অনেক হাজার হাজার বছর আগের। 
ওয়াল্টার পিরি রেইস ম্যাপ এবং 1954 সালে অ্যান্টার্কটিকায় আবিষ্কৃত কুইন মাড অঞ্চলের সাব গ্লেসিয়াল ফিচার এর কথা তুলনা করেন,
"আমরা এই পুরনো চার্টগুলো এবং বর্তমানে হাইড্রোগ্রাফিক অফিসে তৈরি করা নতুন চার্টগুলি তে প্রাপ্ত পর্বত এবং উচ্চ মালভূমি জাতীয় স্থানগুলির  অবস্থান তুলনা করেছিলাম এবং আমরা দুটো ক্ষেত্রেই অবিশ্বাস্য রকম ভাবে মিল পেয়েছিলাম। আমরা পুরনো ম্যাপগুলির কাজ খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম এবং আমি, ক্যাপ্টেন ম্যালেরি যা জানিয়েছেন তার সাথে সম্পূর্ণ রকম ভাবে একমত। "

সঞ্চালক বলেছিলেন, "মিস্টার ম্যালেরি, এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে কলম্বাসের সময়ের বহু আগে আটলান্টিকের তীরে দক্ষ অভিযাত্রী এবং ম্যাপ নির্মাতার উপস্থিতি ছিল ?"
ম্যালেরি বলেছিলেন," অনেক হাজার বছর আগে তারা কেবল অভিযাত্রী ছিলেন না, তারা নিশ্চয়ই কোন দক্ষ এবং উন্নত হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থার অংশ ছিলেন; কারণ, আন্দাজমতো 5000 বছর আগে আপনারা আন্দাজ করতে পারেন আন্টার্কটিকার মত বিশাল মহাদেশের ম্যাপ তৈরি করা অসম্ভব ছিল। এটি কোন জনৈক ব্যক্তি বা ছোট অভিযাত্রী দলের পক্ষে অসম্ভব বিষয় ছিল; তার মানে এরা বৈজ্ঞানিক ছিল যারা অ্যাস্ট্রোনমি এবং তার সাথে টপোগ্রাফিক সার্ভে পদ্ধতিগুলির সাথে খুব সুপরিচিত ছিল।"

এই সময় প্রফেসর চার্লস হাপগুডএর একজন ছাত্র তাকে এই রেডিও সঞ্চালনের খবর জানিয়েছিলেন এবং প্রফেসর তৎক্ষণাৎ এই ম্যাপটি নিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। যেহেতু ম্যালেরি তার তদন্তের জন্য ইউএস নেভিকে ব্যবহার করেছিলেন, তাই হাপগুড সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি দ্বিতীয় এক পক্ষ অর্থাৎ 'দি কার্টোগ্রাফি স্টাফ অফ দি স্ট্র্যাটেজিক এয়ার কমান্ড' এর সাহায্য নেবেন। এরপর ইউ এস এয়ারফোর্সের তদন্ত ইউএস নেভীর মতনই এক ফলাফল নিয়ে এলো। তারা নিশ্চিত হলেন যে ম্যাপটির দক্ষিণ অংশে সাব-গ্লেসিয়াল আন্টার্কটিকা অর্থাৎ বরফ মুক্ত সময়কালীন আন্টার্কটিকার বর্ণনা করা হয়েছিল।

এর আগে মানুষের ধারণা ছিল যে আন্টার্কটিকা 1818 সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয়।

ইউ এস এ এফ লেফটেন্যান্ট কর্নেল হ্যারল্ড জে ওলমেয়র  হাপগুডকে 1960 সালের 6 জুলাই চিঠি লেখেন, " আপনার পাঠানো 1513 সালের পিরি রেইস ওয়ার্ল্ড ম্যাপ কে এই সংস্থাএর দ্বারা পরীক্ষা করার অনুরোধ রাখা হয়েছে। 
ম্যাপটির নিচের অংশের কুইন মোড ল্যান্ড  এবং প্রিন্স মার্থা সমুদ্রতট এবং পালমার পেনিসুয়েলার বর্ণনা যথাযথ। আমাদের মতে, এই ম্যাপ সবদিক দিয়ে যুক্তিগত এবং সঠিকভাবে নির্মিত। 1949 সালের সুইডিশ-ব্রিটিশ-নরওয়ে এক্সপিডিশনে হিমশৈলের সিসমিক প্রোফাইল করে যে ফলাফল পাওয়া গেছে তার সাথে এই মাপের ভৌগোলিক বর্ণনা দারুন ভাবে মিল পাওয়া যায়। এটার  অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সমুদ্রতট বরফে ঢেকে যাওয়ার আগে মেপে নেওয়া হয়েছিল। কারণ, বর্তমানে এই অঞ্চলের উপর 1 মাইল বরফে ঢাকা। আমাদের কোনো ধারণা নেই 1513 সালের ভৌগলিক জ্ঞানের সাথে কিভাবে এই ম্যাপ তৈরি করা হয়েছিল।"

পিরি রেইস ম্যাপের একটি অদ্ভুত বিষয় হলো এটিকে ইকুইডিস্টেন্ট প্রজেকশন পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে পৃথিবীর উপরে যে কোন একটি পয়েন্টকে কেন্দ্র করে সেখান থেকে গণনা করে ম্যাপ তৈরি করা হয়।
এই পদ্ধতিতে তৈরিএকটি সবচেয়ে পরিচিত ম্যাপ এর উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায় 'ইউনাইটেড নেশন' এর নীল সাদা পতাকা; যা উত্তর মেরুকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে।
এই ইকুইডিস্টেন্ট প্রজেকশন, ম্যাসাচুসেটসের ওয়েস্টওভার এয়ারফোর্স বেসের স্ট্র্যাটেজিক এয়ার কমান্ডের কার্টোগ্রাফিক কর্মীদের কাছে খুবই পরিচিত। এটা সোভিয়েত মিলিটারি এবং তাদের অর্থনৈতিক সম্পদগুলিকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হতো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মস্কোকে কেন্দ্র করে একটি ম্যাপ তৈরি করা হয়েছিল যা মিলিটারিকে কাছাকাছি ন্যাটো দেশ থেকে সোভিয়েত ক্যাপিটাল এর উদ্দেশ্যে সবচেয়ে দ্রুত মিসাইল নিক্ষেপের গণনা করতে সাহায্য করতো। মস্কোর সবচেয়ে কাছের ন্যাটো মিসাইল বেস ছিল তুর্কিতে। 1962 সালের নভেম্বরে যখন কিউবায় সোভিয়েত মিসাইল আনা হয়েছিল তখন কাস্ত্রোর দীপ কে কেন্দ্র করে একটি ইকুইডিস্ট্যান্ট  প্রজেকশন ম্যাপ তৈরি করে দেখা হয়েছিল যে, মিসাইল গুলির আওতায় ইউনাইটেড স্টেটসের কতটা জায়গা আছে। "কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস" এর সমাধান হয়েছিল যখন জে এফ কে প্রস্তাব দেন যে, তিনি তুর্কি থেকে ন্যাটো মিসাইল গুলি তুলে নেবেন যদি ক্রুশ্চেভ কিউবা থেকে ইউ এস এস আর মিসাইল গুলি তুলে নেন।

চার্লস হাপ্গুড লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস এর ম্যাপ বিভাগের প্রধান আর্ক সি গেলেক কে বর্ণনা দেন যে, রেনেসাঁসের সময়কার ভূগোলবিদ্যা পিরি রেইস মাপ তৈরি করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। এই ম্যাপটা বানানোর জন্য সেয়েনা থেকে উত্তর গোলার্ধের রৈখিক দূরত্ব সম্পর্কিত সুদক্ষ গাণিতিক জ্ঞান থাকা দরকার ছিল যা পিরি রেইস অথবা কলম্বাস কারোরই ছিলনা। হাপ্গুড এবং তার ছাত্ররা মাসের পর মাস ধরে পিরি রেইস ম্যাপের কেন্দ্র খুঁজে বার করার চেষ্টা করছিলেন। প্রথমে হাপগুড নিশ্চিত ছিলেন যে এটা সেয়েনা শহর ছিল যেখানে লাইব্রেরিয়ান এবং ভূগোলের জনক ইরাটসথেনিস প্রথম পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে তার বিখ্যাত গণনা টি করেছিলেন। হাপগুড ওয়েস্টওভার এয়ার ফোর্স ডেস্কের কার্তোগ্রফিক কর্মীদের তার এই প্রস্তাবটি দেন। ক্যাপ্টেন বার্জ তার সাথে একমত ছিলেন।
যদিও সকল পেশাদার গবেষকরা ম্যাপ এর কেন্দ্র সেয়েনা সম্পর্কে একমত ছিলেন কিন্তু হাপ্গুড সন্দেহপ্রবণ ছিলেন। তার ধারণা ছিল, প্রাচীনকালের ম্যাপ নির্মাতারা ট্রপিক্যাল অফ ক্যান্সার কে ব্যবহার করতেন যেটা ট্রপিক্যালকে টেম্পারেচার ক্লাইমেটিক জোনগুলির থেকে বিভক্ত করত।
বর্তমানে ট্রপিক অফ ক্যান্সার সেয়েনার কাছাকাছি অবস্থান করে কিন্তু এর একদম উপরে নয়।
দূরত্বের পার্থক্য খুব কম হলেও হাফ গুড এবং তার ছাত্ররা চাইছিলেন তাদের গণনা কে একদম সঠিকভাবে করতে।

হাপগুড চাইছিলেন ম্যাপটি সেয়েনা অথবা ট্রপিক অফ ক্যান্সার যেকোনো একটি থেকে করতে। কিন্তু এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না কারণ, একটা সময় পৃথিবীর ভূখণ্ডের চলাচলের কারণে ট্রপিক অফ ক্যান্সার সরাসরি সেয়েনার উপর অবস্থান করতো। ম্যাপটি তৈরি করা কালীন এই সূত্রটাই তাদের মাথায় এই ম্যাপের তৈরির সময় যাচাই করার কথা মাথায় আনে এবং প্রথম প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় যে কখন ট্রপিক অফ ক্যান্সার এবং সেয়েনা শেষবারের মতো একি ল্যাটিটিউড অবস্থানে ছিল?

জ্যোতির্বিদদের তথ্য অনুযায়ী ট্রপিক অফ ক্যান্সারকে  40 সেকেন্ড ল্যাটিটিউড এ সরতে 100 বছর সময় লাগে। এই তথ্য থেকে তারা গণনা করার ফর্মুলাটি তৈরি করে এবং আসল ম্যাপ নির্মাতাদের সময় বের করে। বর্তমানে সেয়েনা ট্রপিক অফ ক্যান্সার থেকে 38 মিনিট এবং 30 সেকেন্ড দূরে যা মোট 2310 সেকেন্ড পার্থক্য একে 40 দিয়ে ভাগ করলে সময়টা দাঁড়ায়, 57.75 শতাবদি আগে।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মত অনুযায়ী মিশর সভ্যতা 3800 খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ সূচনা হয়েছিল। তবে কি মিশরীয় সভ্যতার সূচনাকালে এই ম্যাপটি তৈরি করা হয়েছিল? হয়তো হারিয়ে যাওয়া আইস এজ এর সভ্যতা থেকে কেউ এটি তৈরি করেছিলেন। এই সভ্যতার মানুষ যারা সমুদ্রে ভ্রমণ করে বেড়াতেন এবং ইজিপশিয়ান পিরামিড তৈরির আগে পৃথিবীর ম্যাপ তৈরি করেছিলেন, যার মধ্যে আন্টার্কটিকার সেসময়কার বরফ মুক্ত সমুদ্র ছিল। 


Sunday, 12 April 2020

আন্টার্কটিকার পিরামিড ও রহস্যময় ম্যাপ --

গুগল আর্থের ইমেজে আন্টার্কটিকার উপর পিরামিড দেখতে পাওয়ার পর ইন্টারনেট আলোড়ন পরে গিয়েছিলো। ছবিটিতে তিনটে পিরামিডকে দেখা গিয়েছিল  যাদের চারদিক সমান ছিল অনেকটা ইজিপ্টের গিজার পিরামিডের মতো। তবে কি এগুলি সত্তিকারের কোন পুরনো সভ্যতার মানুষদের দ্বারা নির্মিত পিরামিড ছিল?

এই পিরামিডগুলোর উৎপত্তি সম্পর্কে অনেক রকম থিওরি পাওয়া যায় কোন কোন বিতর্কিত মতে এই পিরামিডগুলো অনেক আগে আটলান্টিস সভ্যতার মানুষরা এখানে বানিয়েছিল অথবা ভিনগ্রহীরা এসে বানিয়েছিল। কিছু বিজ্ঞানীদের মতে এই পিরামিড এর মত বস্তুগুলি আসলে 'nunataks' হতে পারে। এই  'nunataks' আসলে পর্বতের চূড়া যা বরফের থেকে বেরিয়ে আসে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে অনেকটা উঁচু হয়। 

দুটো আন্টার্কটিকা পিরামিড সমুদ্রতট  থেকে মাত্র দশ মাইল অথবা 16 কিলোমিটার দূরে পাওয়া গিয়েছিল এবং তৃতীয়টি তটরেখা বরাবর পাওয়া গিয়েছিল এইধরনের পিরামিডগুলোর আবিষ্কার অতীতে অন্তত ৬০০০ বছর আগে আন্টার্কটিকায় মানুষের বসবাস করার সম্ভাবনা উল্লেখ করে। কারণ এই সময়ই  সাধারণত পৃথিবীর অন্যান্য স্থানগুলিতে মানুষ পিরামিড তৈরি করেছিল। ডক্টর চার্লস হাপগুড এই নিয়ে গবেষণা করেছিলেন এবং তার গবেষণা মতে আন্টার্কটিকায় অতীতে প্রাচীন কোন সভ্যতার অস্তিত্ব থাকতে পারে; যা হয়তো বর্তমানে বরফের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছে। 
'In maps of ancient sea kings' -এ  ডক্টর চার্লস বিখ্যাত 'the piri Reis map of Antarctica' টি প্রকাশ করেন।

এই পিরি রেইস ম্যাপ 1953 সালে তুর্কিতে পাওয়া গিয়েছিল; একজন তুরকিশ নৌকর্তা এই ম্যাপটি ইউ.এস নেভির হাইড্রোগ্রাফি ব্যুরোতে পাঠান। এম.আই ওয়াল্টার যিনি এই ব্যুরোর প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন এই ম্যাপটি আর্লিংটন এইচ. ম্যালেরি কে যাচাই করার জন্য পাঠিয়ে দেন। ম্যালোরি পরীক্ষা করেন এবং এই 'পিঁড়ি রেইস' ম্যাপটিকে সম্পূর্ণ নিখুঁত এবং হয়তো ছয় হাজার বছর আগের কোন ম্যাপ থেকে নির্মিত বলে দাবি করেন। 

'দা পিরি রেইস ম্যাপ অফ আন্টার্কটিকা' খুবই নিখুত ছিল যাতে সিসমিক সাউন্ডিং এবং সোনার ব্যবহৃত হয়েছিল; আন্টার্কটিকার গবেষকরা বরফের চাদরের তলায় যেখানে তটরেখা খুঁজে পেয়েছিল তার সাথে এর সমুদ্রতটের অবস্থানের মিল আছে। এছাড়া পর্বত শ্রেণি, মালভূমি ইত্যাদি সবগুলি অবস্থানে ঠিক ছিল। এই মাপের সাথে আন্টার্কটিকার কুইন মোড ল্যান্ডের অবস্থান সঠিক ছিল। আন্টার্কটিকার ব্রিটিশ সুইডিশ অভিযাত্রী দলের নেতা ওল্ড মেয়র, হপগুডকে একটি চিঠি লেখেন যাতে তিনি বলেন,

"মাননীয় প্রফেসর হপগুড, 
1531 সালে তৈরি দা পিরি রাইস ম্যাপ অফ আন্টার্কটিকার কিছু অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের সংস্থার কাছে আপনি যে অনুরোধ করেছেন তা পরীক্ষা করা হয়েছে। ম্যাপ টির নিচের ভাগটির কুইন মোড ল্যান্ডের প্রিন্স মার্থা তট এবং পালমার পেনিসুএলার বর্ণনা যুক্তিসংগত; আমরা ম্যাপটির সব রকম ভাবে অনুবাদ করে বুঝলাম, এটি খুবই যৌক্তিক। ম্যাপটির নিচের দিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে যে ভৌগোলিক বিবরণ দেওয়া হয়েছে, 1949 সালে সুইডিশ-ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক এক্সপিডিশন হিমশৈল এর ওপর যে সিসমিক লাইন বানানো হয়েছিল তার সাথে অতিশয়ভাবে এর মিল আছে; এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সমুদ্রতট বরফে ঢেকে যাওয়ার আগে এর মানচিত্র তৈরি করা হয়েছিল। এখানে যে বরফ মুক্ত আন্টার্কটিকা অঞ্চলটি দেখানো হয়েছে বর্তমানে সেখানে প্রায় এক মাইল পুরু বরফের স্তর জমে রয়েছে। আমাদের কোনো ধারণা নেই কিভাবে 1513 সালে তখনকার ভৌগলিক জ্ঞান নিয়ে ম্যাপটি তৈরি করা হয়েছিল।"

অলমেয়ার এর লেখা চিঠিতে ডক্টর চার্লস হপগুডের থিওরি অনুমোদিত হয়; যা হলো এই ম্যাপটি হয়তো প্রাচীনকালে বানানো কোন ম্যাপ থেকে অনুকরণ করা হয়েছিল। 

ডক্টর চার্লস হপগুড  'maps of the ancient sea kings' - এ বলেছেন, 'যদিও গতানুগতিক সাধারণ জিওমেট্রি মেনে পিরি রেইস ম্যাপে সঠিক অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের সাথে সঠিক অ্যাঙ্গেল বা কোন রাখা হয়েছিল কিন্তু তিনি নিশ্চিত এটা কোন পুরনো ম্যাপ অবলম্বন করে তৈরি করা হয়েছিল। তিনি নিশ্চিত থাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে ম্যাপটির স্রষ্টা এটি তৈরি করতে spheroid trigonometry পদ্ধতি অবলম্বন করেন যা আঠারো শতকে আবিষ্কার করা হয়েছিল; অথচ সেখানে পিরি রাইস ম্যাপটি 1513 সালের ছিল!

এই বরফের উপরের পিরামিডগুলোর উৎপত্তি যে কারণেই হোক না কেন এই ধরনের সন্ধান গুলো ভবিষ্যতে আন্টার্কটিকার প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস সম্পর্কে সওয়াল আরো জোরালো করে দেবে।

Friday, 10 April 2020

কঙ্গো নদীর কিংবদন্তি দানব মোকেলে মবেমবে--

বহুকাল ধরে মনে করা হয় এক প্রকার দানব জাতীয় প্রাণী আফ্রিকার কঙ্গো রিভার বেসিনের উপরের দিকে বিচরণ করে বেড়ায় যার নাম দেওয়া হয়েছে 'মোকেলে মবেমবে'।
পল অহিন যিনি একজন মিশনারি এবং প্রায় এক দশক ধরে সেখানে বায়াকা পিগমি দের সাথে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে কাটিয়েছেন তার মতে, এই শব্দটির লিঙ্গলা ভাষা থেকে উৎপত্তি যার সাধারণ অর্থ হলো 'যে নদীর গতিপথকে থামায়'; বলা হয়, যেহেতু এই প্রাণীটি কঙ্গো নদীর বাক গুলির কাছে দেখা গিয়েছিল, সেই অনুসারে এই অর্থ করা হয়েছে; কারণ নদীর বাঁকে নদীর স্রোত কমে যায়। এছাড়াও  'রামধনু' এবং 'রহস্য' এর জায়গায় সেখানে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয়। 

যুগ যুগ ধরে মোকেলে মবেমবে নামের এই প্রাণীটির গঠন ও আকৃতি সম্পর্কে অনেক রকম বর্ণনা পাওয়া গেছে। তবে অনেক রকমের বর্ণনার মধ্যে সকলেই একমত হয়েছে যে, এই প্রাণী বিশালাকৃতির, এর গলা লম্বা ও তার তুলনায় ছোট আকৃতির মাথা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বলা হয়েছে এর লম্বা লেজ আছে।  এছাড়া জানা গেছে এই প্রাণীটি তৃণভোজী ও নদীর কাছাকাছি গুহায় বসবাস করে এবং যেখানে সে তার পছন্দের খাবারগুলি পেতে পারে অর্থাৎ কয়েক প্রকারের লিয়ানা গাছ।

যদিও প্রাণীটি তৃণভোজী কিন্তু একটি তথ্য অনুযায়ী, যদি মানুষরা তাদের দিকে এগিয়ে আসে তাহলে এটি আক্রমণাত্মক আচরণ করতে পারে। আবার অন্য একটি তথ্য অনুযায়ী, এই দানবের একটি শিং আছে অনেকটা রাইনোসরাস এর মত যা দিয়ে এটা হাতি কে মেরে ফেলেছিল। অনেকে এটাও দাবি করে যে মোকেলে মবেমবে আসলে একটি আধ্যাত্মিক বিষয় এটা কোন শারিরীক সত্তা নয়। 
প্রথম এই প্রাণীটির কথা পাশ্চাত্য জগতে 1776 সালে পৌঁছায় কঙ্গো নদীর কাছে যাওয়া ফ্রেঞ্চ মিশনারি লেভিন বনাভেঞ্চার প্রয়াট এর দ্বারা। এই মিশনারি বলেছিলেন, যে তিনি এই অঞ্চলে 3.28 ফুটের ডায়ামিটারের বহু পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছেন। যদিও যে প্রাণীটি এই পায়ের ছাপ ফেলে গিয়েছিল তাকে দেখতে পাননি। এরপর কুড়ি শতক অবধি এই প্রাণীর তেমন কোন খবর পাওয়া যায়নি।

1909 সালের এক্সপ্লোরার লেফটেনেন্ট পল গ্রাজ একটি প্রাণীর কথা লেখেন যার বর্ণনা মোকেলে মবেমবে এর মত, ছিল যাকে স্থানীয়রা  'nsanga' বলে  ডেকে থাকেন। বর্তমানে জাম্বিয়ায় বসবাসকারী অধিবাসীদের কিংবদন্তি কাহিনীতে এই প্রাণীটির কথা জানতে পারা যায় এবং বলা হয় এটি বাঙ্গৌলু লেকের কাছাকাছি এলাকায় বসবাস করত। গ্রাজ এর এই রিপোর্টটি খুবই উল্লেখযোগ্য ছিল কারণ তার বর্ণনা অনুযায়ী প্রাণীটি ডাইনোসরের মত দেখতে ছিল। তখন থেকেই মোকেলে মবেমবে নামের এই প্রাণীটিকে এক প্রকার ডাইনোসর হিসাবে মনে করা হতে থাকে। 

ঠিক এই সময়ই একজন বিখ্যাত জার্মান শিকারি কার্ল হেগেনবাক দাবি করেন, তিনি এই প্রাণীটির কথা শুনেছেন। 'বিস্টস অ্যান্ড মেন' নামে তার অটোবায়োগ্রাফিতে তিনি লিখেছিলেন, তাকে একটি বিশাল বড় দানবের কথা বলা হয়, যে আধা হাতি ও আধা ড্রাগনের মতো দেখতে ছিল। যেটি রোডেশিয়ার (বর্তমানে জিম্বাবুয়ে) গভীর জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো। হ্যানকক আরো লিখেছেন যে, "আমি এই সরীসৃপটির অস্তিত্ব সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম। এরপর এই দানবটিকে খোঁজার জন্য অনেক খরচা করে আমি একটি এক্সপিডিশন টিম পাঠিয়েছিলাম।  কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এদের মধ্যে কেউ কেউ বাড়ীতে ফিরে আসতে পেরেছিল কিন্তু প্রমাণ কিছু করতে পারেনি।
হেগেনব্যাক হয়তো প্রথম বিদেশি ছিলেন যিনি এই প্রাণীটির উদ্দেশ্যে এক্সপিডিশন পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি শেষ ছিলেন না। এই প্রাণীটিকে খোঁজার উদ্দেশ্যে 2011 অব্দি প্রায় 50 এর উপর অভিযান  চালানো হয়। পায়ের ছাপ, কিছু অস্পষ্ট ছবি এবং 1960 সালে এক মিশনারি রিপোর্ট, যাতে তিনি প্রত্যক্ষদর্শীকে পান, যে দাবি করে কিছু পিগমিকে সে একটি মোকেলে মবেমবে মারতে দেখেছিল। এছাড়া মোকেলে মবেমবে এর স্বপক্ষে তেমন কোনো জোরালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

কোনো জোরালো প্রমাণের অনুপস্থিতির বিষয়টি ছাড়াও এই প্রাণীর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ হয় আরো  কিছু কারণে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যেমন অনেকে দাবি করে মোকেলে মবেমবে একটি প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসর তবে সে অনুযায়ী, এটা খুবই অসম্ভব যে সেটি কেবলমাত্র একটি থাকবে অথবা সামান্য কয়েকটি থাকবে। যদি মোকেলে মবেমবে নিজেকে পরিবর্তন না করে প্রায় 65 মিলিয়ন বছর ধরে কঙ্গো নদীর বেশিনে অস্তিত্ব রক্ষা করতে সক্ষম হয়ে থাকে তবে তাদের সংখ্যা অনেকগুলো হওয়া উচিত এবং যথেষ্ট অস্তিত্ব রেখে যাওয়া উচিত যাতে তাদের এতদিনে খুঁজে বের করা সম্ভব।


তবে এর বিপক্ষে একটি যুক্তি দেন জুলজিস্টরা যারা এই প্রাণীটির খোঁজে গিয়েছিলেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তারা বিশ্বাস করেন যে প্রাণীটি মনুষ্যদ্বারা বা অন্য কোনো কারণবশত সম্প্রতি অতীতে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে।



অতীতের অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাধারণত এটা বলা যায় যদি কোন প্রাণী অস্তিত্ব থাকে তবে তাকে খোঁজার জন্য সাধারণত 3 থেকে 6 টি অভিযান করলে সাফল্য আসতে পারে এবং এরপর থেকে তার অস্তিত্বের সম্ভাবনা কমতে থাকে। তাই প্রায় 50 টির উপর অভিযান করার পর এটা মনে হয় যে হয়তো মোকেলে মবেমবে প্রাণীটির বর্তমানে অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।
যদিও এমন অনেকেই আছে যারা এখনো হার মানেনি এবং তাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে একদিন মোকেলে মবেমবেকে পাওয়া যাবে।

Wednesday, 8 April 2020

রাশিয়ান স্পেস স্টেশনের রহস্যময় ভিনগ্রহী ঘটনা--

সাহসী মহাকাশচারী বা নভশ্চররা যারা নিজেদের জীবন ঝুঁকি রেখে মহাকাশে যায় এই জন্য, যাতে আমাদের বহির্জগৎ সম্পর্কে বুঝতে আরো সাহায্য হয়। এইসব মানুষেরা বেশকিছু বিশ্বাসযোগ্য এবং রহস্যময় ইউ এফ ও সংক্রান্ত ঘটনার উল্লেখ করেছেন। মহাকাশচারীদের এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হওয়া নতুন নয় অতীতে প্রায়ই এরকম ঘটনা ঘটেছে; যদিও এরমধ্যে অনেকগুলোই ইতিহাসে হারিয়ে গিয়েছে। এরকম কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা রাশিয়ান মহাকাশচারীদের সাথেও হয়েছিল যেই রাশিয়া, স্পেস প্রোগ্রাম বা মহাকাশ সংক্রান্ত গবেষণার বহু তথ্য লুকানোর জন্য অভিযুক্ত এবং যার মধ্যে হারিয়ে যাওয়া মহাকাশচারী নিয়ে পূর্ববর্তী ব্লগে আলোচনা করেছি।
রাশিয়ার স্পেস স্টেশনের থেকে সেখানকার মহাকাশচারীরা দিন দুপুরে ইউ এফ ও সংক্রান্ত বেশ কিছু রহস্যময় রিপোর্ট করেছেন; এরকমই কিছু রিপোর্ট নিয়ে আজ আলোচনা করব।

রাশিয়ান স্পেস স্টেশন প্রজেক্ট এর মধ্যে 'স্যালুট-৬' একটি খুবই বিখ্যাত প্রজেক্ট যা 1977 সালের 29 সেপ্টেম্বর লঞ্চ করে যেখানে প্রযুক্তির বিশেষ উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যায় যা অতীতের থেকে অনেকটা এগিয়ে রাখে। যেমন- এর প্রপালশন সিস্টেম, 1 সেকেন্ড ডকিং পোর্ট, এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রযুক্তির কারণে। এই স্যালুট সিক্স ছিল নিউ ওয়েভ সেকেন্ড জেনারেশন স্পেস স্টেশনগুলির মধ্যে প্রথম সারির যা আমাদের ভবিষ্যতের দিকে অনেকটা নিয়ে গিয়েছিল এবং এটি প্রথম যাতে রি-সাপ্লাই মিশনের জন্য মনুষ্যবিহীন মহাকাশযানের অবতরণ করানো যেত এবং একে ঘিরেই ইউএফওর রহস্যময় ঘটনা ঘটে। এরকমই একটি ঘটনা 'ফেট ম্যাগাজিনে'র  একটি প্রবন্ধে প্রকাশ পায় যা লাস ভেগাসের 'ক্লাস টিভি' এর সাংবাদিক' জর্জ ন্যাপ 1992 সালে পুরানো সোভিয়েত মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স এর সংগ্রহশালা থেকে প্রাপ্ত 'থ্রেড-3' নামক ডকুমেন্ট থেকে সংগ্রহ করেন।
এই ডকুমেন্টটি বিভিন্ন রকম রহস্যময় ইউএফও সংক্রান্ত ঘটনার বিবরণ পূর্ণ ছিল; যার মধ্যে একটি 1978 সালের 17 জুন মহাকাশচারী ভ্লাদিমির কভালেনোক এবং আলেকজান্ডার ইভানচেঙ্ক সম্মুখীন হয়েছিলেন। এদিন একটি বস্তু স্পেস স্টেশনের সঙ্গে সঙ্গে উড়ে চলেছিল এবং তাদেরই মত গতি বজায় রেখে যেন তারা স্পেস স্টেশন কে লক্ষ্য রাখছে। এই সময় কভালেনোক কন্ট্রোল সেন্টার এর উদ্দেশ্যে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, "ডান দিকে 30 ডিগ্রী কোণে আমাদের সাথে একটি বস্তু উড়ছে এটা অনেকটা টেনিস বলের মত দেখতে এবং তারার মত উজ্জ্বল এটার রেট আমাদের থেকে কিছুটা কম।"
পরবর্তীকালেও কভালেনক ইউ এফ ও সংক্রান্ত আরেকটি ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়েন যা 1981 সালের মে মাসে স্যালুট ছয়-তে হয়েছিল। তিনি একটি বস্তুকে স্পেস স্টেশন এর কাছাকাছি এঁকেবেঁকে তাদের দিকে অনুসরণ করতে দেখেন। তিনি যেগুলো দেখেছিলেন তা পরবর্তীকালে একটি সাক্ষাৎকারে ইটালিয়ান সাংবাদিক জর্জিয়া বন জিওভানি কে বলে থাকেন--
"1981 সালের 5 মে, আমরা স্যালুট ছয়-তে ছিলাম। আমি একটা অচেনা বস্তুকে আসতে দেখলাম; এটা তরমুজের মতো গোলাকার ছিল এবং এটির সামনে কিছুটা ছুঁচালো রকমের বিষয় ছিল আমি এটাকে কেবল অঙ্কন করে বোঝাতে পারবো কারণ এটার বর্ণনা দেওয়া আমার পক্ষে কঠিন হবে। এটা অনেকটা স্বচ্ছ একটি দেহের ভেতর আরেকটি দেহর মত বিষয়। এর আরেকদিকে আমি গ্যাস বেড়াতে দেখছি অনেকটা রিঅ্যাক্টরের মত। তারপরে এমন কিছু হলো যেটার ব্যাখ্যা আমার পক্ষে বৈজ্ঞানিকভাবে বলা খুবই অসম্ভব। আমি বুঝতে পারলাম, এটা কোন কৃত্রিম ভাবে তৈরি বিষয় না কারণ কৃত্রিম বস্তুতে এই ধরনের আকৃতি হতে পারেনা। আমি এমন কিছু জিনিস আজ অব্দি দেখিনি যা এরকম ভাবে চলাচল করতে পারে। সংকুচিত হওয়া, তারপর প্রসারণ করা এবং স্পন্দিত হওয়া তারপরই আমি দুটো বিস্ফোরণ দেখতে পেলাম একটা বিস্ফোরণ এবং তারপর প্রায় হাফ সেকেন্ড বাদে আরেকটি; আমি আমার সহকারি ভিক্টর কে ডেকে ছিলাম কিন্তু সে সময়মতো আসতে পারেনি যার ফলে কিছু দেখতে পাইনি।

 এই বস্তুগুলো কি হতে পারে? প্রথমত বস্তুটি একটা নির্দিষ্ট পথে চলছিল না হলে আমি এটাকে লক্ষ্য করতে পারতাম না; সেখানে দুটো মেঘের আকৃতি ছিল অনেকটা ধোঁয়াশার ও বারবেল এর মত আকৃতি তৈরি করেছিল সেটি আমার কাছাকাছি এসেছিল এবং আমি তখন এগুলোকে লক্ষ্য করেছিলাম, কিছু সময়ের জন্য আমরা পাশাপাশি একসাথে চলছিলাম।"
আরেকটি রহস্যময় ঘটনার 1980 সালে স্যালুট ছয়-তে মহাকাশচারী ভ্যালেরি রুমিন এবং লিওনিড পপোভতারা দাবি করেন, তারা একটি চকচকে সাদা বস্তুকে মস্কোর একটি অঞ্চল থেকে মহাকাশের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে দেখেন যার ফটোও তুলে রেখেছিলেন। মনে করা হয়, এই তথ্যটি রাশিয়ান অধিকারীকরা পুরোপুরিভাবে লুকিয়ে রেখেছিলেন এবং যখন 1991 সালে রাশিয়ান সংবাদপত্র আর.টি প্রথম এর উপর পুরো একটি বিবরণ প্রকাশ করে তখন, এটি সবার সম্মুখে আসে এবং এটিকে ফরেন ব্রডকাস্ট ইনফরমেশন সার্ভিস(fbis) এর তরফ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং বলা হয় ভ্লাদিমির আলেক্সান্দ্রভ, যিনি কসমোনট ট্রেনিং সেন্টারের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার তিনি ইউএফওর একটি ফটো আর.টির এডিটোরিয়াল অফিসে নিয়ে আসেন; আলেক্সান্দ্রভ দাবি করেন, তার এই উড়ন্ত বস্তুটির ফটো যা 28 ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়, যা মহাকাশচারী ভ্যালেরি এবং লিওনিড 1980 সালের 14 এবং 15 জুন রিপোর্ট করেন, তা ধামাচাপা দেয়া হয় কিন্তু তিনি বলবেন সেদিন কি হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, "সেদিনকে সত্যিই একটি সাদা উজ্জ্বল বস্তু মস্কোর একটি অঞ্চল থেকে মহাকাশে তাদের স্পেসক্রাফট স্যালুট 6 থেকেও উঁচুতে উড়ে গিয়েছিল এবং ইউ এফ ও  টি মাঝরাতের দিকে দেখা গিয়েছিল।"

দুর্ভাগ্যবশত ভাবে পরবর্তীকালে এই ফটোটি কোন ভাবে হারিয়ে যায় এবং তা আর পাওয়া যায় না। পরবর্তীকালে রাশিয়ান অধিকারীরা দাবি করেন যে এটি একটি কেবলমাত্র সাধারণ স্যাটেলাইট লঞ্চ ছিল কিন্তু তাই যদি হয় তাহলে সেটার ব্যাপারে এই দুই মহাকাশচারী ও প্রধান ইঞ্জিনিয়ার কেনো জানবেন না? পরবর্তী কালের স্যালুট প্রোগ্রাম এ এই ধরনের আরো রহস্যময় ঘটনা ঘটেছিল। 
1982 সালের এপ্রিলে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী 'স্যালুট সেভেন' স্পেস স্টেশন লঞ্চ করেন যা সোভিয়েত সেলুট প্রোগ্রামের পরবর্তী ধাপ ছিল। এটা 1971 সালে শুরু হয়েছিল এবং উদ্দেশ্য ছিল চারজন যাত্রী বিশিষ্ট রিসার্চ স্পেস স্টেশন এবং দুই জন যাত্রী বিশিষ্ট মিলিটারি স্পেস স্টেশন পাঠানো। স্যালুট সেভেন মনুষ্য সৃষ্ট 10 নম্বর স্পেস স্টেশন ছিল। এটা তৈরি করা হয়েছিল যাতে মডিউলার স্পেস স্টেশন এর নতুন প্রযুক্তির সব রকম পরীক্ষা করা যায়, যার মধ্যে নতুন মডিউল যুক্ত করা অথবা স্পেস স্টেশন সম্প্রসারণ করা করা এবং বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো।এই স্যালুট সেভেন পৃথিবীতে প্রায় আট বছর 10 মাস ধরে প্রদক্ষিণ করে ছিল, যা কোন মহাকাশযানের মধ্যে দীর্ঘতম ছিল। এখানেও যাত্রীরা বিভিন্ন রহস্যময় অযৌক্তিক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন।

1984 সালের জুলাই যখন স্যালুট সাত তার মিশনের 155 তম দিন সম্পন্ন করে ছিল সবকিছুই নিয়মমাফিক চলছিল, হঠাৎ করে মহাকাশচারী কমান্ডার অলেগ আটকোভ, লেওনিদ কিজিম এবং ভ্লাদিমির সলোভোভ এর থেকে একটি ট্রান্সমিশন আসে যাতে তারা দাবি করেন, স্পেস স্টেশন কে হঠাৎ করে এক ধরনের কমলা আলো ঘিরে ধরেছে এবং কিছু দেখা যাচ্ছে না। তারা বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করেন এটা বোঝার জন্য যে, এই অসম্ভব উজ্জ্বল আলো কোত্থেকে আসছে। ঠিক সেই সময় তারা এক অবর্ণনীয় ঘটনার সম্মুখীন হন। তারা বর্ণনা দেন যে, তারা সাতটি লম্বা ডানাযুক্ত এবং শান্ত, হাস্যমুখ  জীবন্ত কিছু কে তাদের স্পেস স্টেশনের সামনে প্রদক্ষিণ করতে দেখেন এবং এদের থেকেই আলোটি আসছিল। তারা আরও বলেন যে, এই সময়ে তারা খুবই অবাক হয়েছিল যে তাদের দেখে তাদের মনে কোন ভয় অনুভব হচ্ছিলো না বরং একটা অদ্ভুত রকমের শান্তি ও ঠান্ডা ভাব আসছিল। তাদের মতে এই পরির মতো দেখতে বিষয়গুলি তাদের স্পেস স্টেশন এর সাথে সম গতি ও সহবস্থান রেখে প্রায় দশ মিনিট ধরে চলেছিল এবং তারপর অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।

 যদি তর্ক করা যায় যে মহাকাশযানে চাপ ও ধকল এর কারণে তাদের মনে এই সকল ভ্রম সৃষ্টি হয়েছিল, তাহলে এত বছর বাদে তাদের বর্ণনা একে অপরের সাথে এতটা মিল ও একই রকম কি করে থাকবে এবং এই ধরনের ঘটনা এটাই শেষ ঘটেনি এরপরেও 167 তম দিনে স্যালুট এ আরো তিনজন মহাকাশচারী যোগদান করেন এই তিনজন যোগদান করার কিছুদিন বাদেই আবার একটি উজ্জ্বল আলো এবং এই সময় সকল 6 জন মহাকাশচারী এই ধরনের পরীর মতো দেখতে বিষয়কে কালো মহাকাশে ঘুরে বেড়াতে দেখেছিল এবং তখনও সেই প্রাণীগুলোর একই রকম হাসিমুখ ছিল। এই ঘটনা ঘটার পর বিষয়টিকে আর ভ্রম হিসাবে ব্যাখ্যা করা যায় না।স্যালুট সেভেন মহাকাশচারীদের অভিজ্ঞতা রহস্যময় ঘটনার বর্ণনায় অন্যতম থেকে যাবে।

পরবর্তীকালীন রাশিয়ান স্পেস স্টেশন 'দা-মীর' 1986 সালে অবতরণ করে, এটা একটি লো-অরবিট স্টেশন ছিল যেটার পুরোপুরিভাবে 1996 সালে গঠন সম্পূর্ণ হয়। এটি এই সময়ে সবচেয়ে বড় কৃত্রিম উপগ্রহ ছিল এবং এখানে দীর্ঘতম সময়-- প্রায় 3644 দিন ধরে মানুষ থাকার রেকর্ডটি গড়ে ওঠে। কিছু কিছু তথ্য অনুযায়ী এই মীরের মহাকাশচারীরা প্রায় সবসময়ই ইউএফও দেখতে পেতেন এবং এর মধ্যে একটি রহস্যজনক ঘটনা ঘটে, যা রিপোর্ট করেন মহাকাশচারী জেনেডি মানাকোভ ও জেনেডি স্ট্রেকালোভ । 1990 সালের 27 সেপ্টেম্বর তারা বেশ কয়েকটি রুপোলী বস্তুকে উত্তর মেরুর উপরের কক্ষে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন এবং কিছুক্ষণ বাদে তারা অদৃশ্য হয়ে যায়।
এরপর 1993 সালের মার্চে মহাকাশচারী মশা মনোরোভ অবশেষে ইউএফওর একটি ভিডিও ফুটেজ তুলতে সক্ষম হন। তিনি যখন একটি মালবাহী মহাকাশযান অবতরণের সময়, একটি ভিডিও তৈরি করছিলেন; ঠিক সেই সময়ে কিছু ত্রিকোণাকার বস্তুকে মহাকাশে ঘুরতে দেখা যায়। এগুলো ছাড়াও অনেক কাল ধরেই বহু মহাকাশচারীর এই ধরনের ইউএফও সংক্রান্ত অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এমনকি পরবর্তীকালে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন(iss) থেকেও কিন্তু এটা সত্যি উল্লেখযোগ্য বিষয় যে কিভাবে সেগুলি ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল এবং কোথাও কোথাও সম্পূর্ণভাবে তথ্য উড়িয়ে দেওয়া বা গায়েব করে দেওয়া হয়েছিল।

 যে পরিমাণে গোপন রাখার প্রবণতা দেখা যায় তাতে কোল্ড ওয়ার বা শৈত্য যুদ্ধকালীন সময়ে অথবা রাশিয়ান দস্তাবেজ থেকে কোন ইউএফও সংক্রান্ত তথ্য খুঁজে বের করা খুবই কঠিন বা হতাশাজনক বিষয়। এই সকল ঘটনাগুলি যা রাশিয়ান অধিকারীরা আমাদের কেবলমাত্র মহাকাশের পরিতক্ত ভাঙাচোরা জিনিস, মহাকাশযান অবতরণ এবং অন্যান্য বায়ুমণ্ডলীয় কারণে সৃষ্ট ভ্রম হিসেবে বিশ্বাস করতে বলেছেন এগুলো কি সত্যিই তাই না অন্য কিছু? একজন   যোগ্যতাসম্পন্ন ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মহাকাশচারী কি এতই বোকা, যে তিনি বুঝবেন না সেগুলো কোন প্রাকৃতিক কারণে বা দৃষ্টিভ্রম এর কারনে হতে পারে ? এখানে যে রিপোর্টগুলো দেখেছি সেগুলিকে আমরা কিভাবে ব্যাখ্যা করব এটা সত্যিই আলোচ্য বিষয়। অন্যরা যাই ভাবুক না কেন এই ঘটনাগুলোকে হিমশৈলর চূড়া হিসাবে বর্ণনা করা যায় এবং অবশ্যই এর থেকে বড় এবং রহস্যময় বিষয়ে মহাকাশে ঘটে চলেছে।