গুগল আর্থের ইমেজে আন্টার্কটিকার উপর পিরামিড দেখতে পাওয়ার পর ইন্টারনেট আলোড়ন পরে গিয়েছিলো। ছবিটিতে তিনটে পিরামিডকে দেখা গিয়েছিল যাদের চারদিক সমান ছিল অনেকটা ইজিপ্টের গিজার পিরামিডের মতো। তবে কি এগুলি সত্তিকারের কোন পুরনো সভ্যতার মানুষদের দ্বারা নির্মিত পিরামিড ছিল?
এই পিরামিডগুলোর উৎপত্তি সম্পর্কে অনেক রকম থিওরি পাওয়া যায় কোন কোন বিতর্কিত মতে এই পিরামিডগুলো অনেক আগে আটলান্টিস সভ্যতার মানুষরা এখানে বানিয়েছিল অথবা ভিনগ্রহীরা এসে বানিয়েছিল। কিছু বিজ্ঞানীদের মতে এই পিরামিড এর মত বস্তুগুলি আসলে 'nunataks' হতে পারে। এই 'nunataks' আসলে পর্বতের চূড়া যা বরফের থেকে বেরিয়ে আসে এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে অনেকটা উঁচু হয়।
দুটো আন্টার্কটিকা পিরামিড সমুদ্রতট থেকে মাত্র দশ মাইল অথবা 16 কিলোমিটার দূরে পাওয়া গিয়েছিল এবং তৃতীয়টি তটরেখা বরাবর পাওয়া গিয়েছিল এইধরনের পিরামিডগুলোর আবিষ্কার অতীতে অন্তত ৬০০০ বছর আগে আন্টার্কটিকায় মানুষের বসবাস করার সম্ভাবনা উল্লেখ করে। কারণ এই সময়ই সাধারণত পৃথিবীর অন্যান্য স্থানগুলিতে মানুষ পিরামিড তৈরি করেছিল। ডক্টর চার্লস হাপগুড এই নিয়ে গবেষণা করেছিলেন এবং তার গবেষণা মতে আন্টার্কটিকায় অতীতে প্রাচীন কোন সভ্যতার অস্তিত্ব থাকতে পারে; যা হয়তো বর্তমানে বরফের নিচে চাপা পড়ে গিয়েছে।
'In maps of ancient sea kings' -এ ডক্টর চার্লস বিখ্যাত 'the piri Reis map of Antarctica' টি প্রকাশ করেন।
এই পিরি রেইস ম্যাপ 1953 সালে তুর্কিতে পাওয়া গিয়েছিল; একজন তুরকিশ নৌকর্তা এই ম্যাপটি ইউ.এস নেভির হাইড্রোগ্রাফি ব্যুরোতে পাঠান। এম.আই ওয়াল্টার যিনি এই ব্যুরোর প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন এই ম্যাপটি আর্লিংটন এইচ. ম্যালেরি কে যাচাই করার জন্য পাঠিয়ে দেন। ম্যালোরি পরীক্ষা করেন এবং এই 'পিঁড়ি রেইস' ম্যাপটিকে সম্পূর্ণ নিখুঁত এবং হয়তো ছয় হাজার বছর আগের কোন ম্যাপ থেকে নির্মিত বলে দাবি করেন।
'দা পিরি রেইস ম্যাপ অফ আন্টার্কটিকা' খুবই নিখুত ছিল যাতে সিসমিক সাউন্ডিং এবং সোনার ব্যবহৃত হয়েছিল; আন্টার্কটিকার গবেষকরা বরফের চাদরের তলায় যেখানে তটরেখা খুঁজে পেয়েছিল তার সাথে এর সমুদ্রতটের অবস্থানের মিল আছে। এছাড়া পর্বত শ্রেণি, মালভূমি ইত্যাদি সবগুলি অবস্থানে ঠিক ছিল। এই মাপের সাথে আন্টার্কটিকার কুইন মোড ল্যান্ডের অবস্থান সঠিক ছিল। আন্টার্কটিকার ব্রিটিশ সুইডিশ অভিযাত্রী দলের নেতা ওল্ড মেয়র, হপগুডকে একটি চিঠি লেখেন যাতে তিনি বলেন,
"মাননীয় প্রফেসর হপগুড,
1531 সালে তৈরি দা পিরি রাইস ম্যাপ অফ আন্টার্কটিকার কিছু অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আমাদের সংস্থার কাছে আপনি যে অনুরোধ করেছেন তা পরীক্ষা করা হয়েছে। ম্যাপ টির নিচের ভাগটির কুইন মোড ল্যান্ডের প্রিন্স মার্থা তট এবং পালমার পেনিসুএলার বর্ণনা যুক্তিসংগত; আমরা ম্যাপটির সব রকম ভাবে অনুবাদ করে বুঝলাম, এটি খুবই যৌক্তিক। ম্যাপটির নিচের দিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে যে ভৌগোলিক বিবরণ দেওয়া হয়েছে, 1949 সালে সুইডিশ-ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক এক্সপিডিশন হিমশৈল এর ওপর যে সিসমিক লাইন বানানো হয়েছিল তার সাথে অতিশয়ভাবে এর মিল আছে; এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সমুদ্রতট বরফে ঢেকে যাওয়ার আগে এর মানচিত্র তৈরি করা হয়েছিল। এখানে যে বরফ মুক্ত আন্টার্কটিকা অঞ্চলটি দেখানো হয়েছে বর্তমানে সেখানে প্রায় এক মাইল পুরু বরফের স্তর জমে রয়েছে। আমাদের কোনো ধারণা নেই কিভাবে 1513 সালে তখনকার ভৌগলিক জ্ঞান নিয়ে ম্যাপটি তৈরি করা হয়েছিল।"
অলমেয়ার এর লেখা চিঠিতে ডক্টর চার্লস হপগুডের থিওরি অনুমোদিত হয়; যা হলো এই ম্যাপটি হয়তো প্রাচীনকালে বানানো কোন ম্যাপ থেকে অনুকরণ করা হয়েছিল।
ডক্টর চার্লস হপগুড 'maps of the ancient sea kings' - এ বলেছেন, 'যদিও গতানুগতিক সাধারণ জিওমেট্রি মেনে পিরি রেইস ম্যাপে সঠিক অক্ষাংশ এবং দ্রাঘিমাংশের সাথে সঠিক অ্যাঙ্গেল বা কোন রাখা হয়েছিল কিন্তু তিনি নিশ্চিত এটা কোন পুরনো ম্যাপ অবলম্বন করে তৈরি করা হয়েছিল। তিনি নিশ্চিত থাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে ম্যাপটির স্রষ্টা এটি তৈরি করতে spheroid trigonometry পদ্ধতি অবলম্বন করেন যা আঠারো শতকে আবিষ্কার করা হয়েছিল; অথচ সেখানে পিরি রাইস ম্যাপটি 1513 সালের ছিল!
এই বরফের উপরের পিরামিডগুলোর উৎপত্তি যে কারণেই হোক না কেন এই ধরনের সন্ধান গুলো ভবিষ্যতে আন্টার্কটিকার প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস সম্পর্কে সওয়াল আরো জোরালো করে দেবে।
No comments:
Post a Comment