Wednesday, 1 April 2020

মঙ্গোলিয়ার রহস্যময় রাক্ষুসে কৃমি--

মঙ্গোলিয়া মরুভূমির কাছাকাছি যারা বসবাস করেন তাদের কাছে ত্রাস হল এই মঙ্গলিয়ান রাখুশে কৃমি। এই কৃমি যারা দেখেছেন তাদের মতে এটিকে দেখতে অনেকটা গরুর অন্ত্রের মত বা সোজা বাংলায় যাকে আমরা নাড়িভুঁড়ি বলি এবং রক্তের মতো লাল, মঙ্গলিয়ান এই কৃমিটি 5 ফুট উঁচু হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং মানুষের বাহুর মতনই চওড়া হয়। তাদের মতে এ কে যেভাবে হোক এড়িয়ে চলা উচিত, এরা ভূমির তলায় বসবাস করে।

জানা গেছে এই প্রাণীটি দু রকম ভাবে শিকার করতে পারে। প্রথমত, এর এক ধরনের তরল নিক্ষেপ করার ক্ষমতা আছে যা ৭ মিটার দূর অব্দি যেতে পারে, এই এসিড এর মত বিষ জামাকাপড়, চামড়া, পেশী বা মাসেল পুড়িয়ে হাড় পর্যন্ত চলে যায়। এর ফলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং জন্ডিস এর মত হলুদাভ হয়ে যায়। এছাড়া এটি শিকারের দিকে একরকম বিদ্যুতিক তরঙ্গ প্রয়োগ করে চমকে দিয়ে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে পেঁচিয়ে মারতে পারে। 
1920 সালের পর এটির খবর প্রথম গোবি মরুভূমির বাইরে সকলে জানতে পারে। তার আগে এই ঘটনাগুলি গোবি মরুভূমির এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই খবরটি পাশ্চাত্যে প্রথম নিয়ে আসেন প্রফেসর চ্যাপম্যান এন্ড্রুজ, যিনি বিখ্যাত বই - '1926 book on the the trail of ancient man' এর লেখক ছিলেন। এই বইটি লেখার আগে তিনি যখন গবেষণার জন্য মঙ্গোলিয়ায় প্রাচীন মানুষের অস্তিত্বের প্রমাণ এর খোঁজে এসেছিলেন তখন তিনি শুনতে পান ভয়ানক ও মারাত্মক দানব কৃমির সম্পর্কে রহস্যময় বিভিন্ন গল্প যা মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ায়।

তিনি তার বইতে লিখেন যে, '' হতে পারে এটি একটি কিংবদন্তি প্রাণী কিন্তু এই তথ্যগুলোর পেছনে একটি ভিত আছে; কারণ, সকল উত্তরের মঙ্গোলিয়ানরা এর অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখে এবং সকলের বর্ণনাও একই রকম। বলা হয়, এটা প্রায় 2 মিটার লম্বা সসেজ এর মত আকৃতির দেহ এবং মাথা বা পা নেই এবং এটা এতই বিষাক্ত যে একে ছুঁলেই সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু ঘনিয়ে আসবে। খবর পাওয়া গেছে যে গোবি মরুভূমির পশ্চিম দিকে দুর্গম ও প্রত্যন্ত জায়গায় বালির ভিতর বসবাস করে।''

এরপর 1990 সালে এই কৃমি সম্পর্কে আরও একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে আসে যখন ক্রিপ্তজুলজিস্ট রিচার্ড ফ্রিম্যান তার অভিযানের সময় পাওয়া একটি তথ্য জানান।
''অভিযানের সময় সঙ্গে থাকা ভাষা অনুবাদ কারি সুজি তার ছোটবেলার এক ভয়ঙ্কর ঘটনার কথা বলেন; যখন একদল ভূতাত্ত্বিক সুজির বাড়ির কাছাকাছি কাজ করছিল এবং তাদের মধ্যে একজন একটি লোহার রড দিয়ে বালির মধ্যে খোঁড়াখুঁড়ি করছিল হঠাৎ করে সে বালির ভিতরে ঢুকে যায় এবং তার সহকর্মীরা দৌড়ে গিয়ে তাকে বালি খুঁড়ে বের করে মৃত অবস্থায় পায়। তারা যখন এরপর সেই স্থানের ভূমি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিল, হঠাৎ করে তারা দেখল বালির ভেতর একটি ঢেউএর মত প্রবাহের সৃষ্টি হল এবং তার ভেতর থেকে একটি বিশাল আকৃতির ভয়ানক কৃমি বেরিয়ে এসেছিল।''

মঙ্গোলিয়ান এই ভয়ানক ফিতাকৃমির আরো অনেক তথ্য মাঝে মাঝেই উঠে আসে যা গোবি মরুভূমি বেরোনোর সময় সকলকে খুব সাবধানে থাকার জন্য সচেতন করে। অনেক মঙ্গলিয়ান এই প্রাণীটির প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দাবি করে তাদের মধ্যে মঙ্গোলিয়ান গ্রাম প্রধানরাও আছেন। বলা হয় প্রাণীটি বছরের বেশির ভাগ সময় বিশ্রাম করে বা লুকিয়ে থাকে এবং জুন জুলাই মাসে এটি সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন জায়গায় চলাচল করে।

চেক অভিযাত্রী ইভান মার্কেলের বর্ণনা অনুযায়ী, ''এই সসেজ এর মত দেখতে কৃমিটি লম্বা এবং মানুষের বাহুর মতো মোটা অনেকটা গরুর অন্ত্রের মত। লেজটা ছোট যেন কেটে দেওয়া হয়েছে কিন্তু থ্যাঁতলা না।কোনটা এটার মাথা বা কোন দিকটা লেজ সেটা বলা খুবই কঠিন কারণ, এর কোন চোখ নাক বা মুখ দৃশ্যমান না। এর রং হচ্ছে গাঢ় লাল, ঠিক রক্তের মতো এবং এটা খুব অদ্ভুত রকম ভাবে চলাচল করে এটা পাক খেতে খেতে চলাচল করে অথবা পার্শ্ব বরাবর ঘষে ঘষে চলতে থাকে। এটি গোবি মরুভূমির প্রত্যন্ত এবং গরম অঞ্চলে বালির ভিতরে থাকে যেখানে কিছু গাছ দেখা যায়। একে বছরের উষ্ণতম মাস গুলোতে দেখার সম্ভাবনা আছে অর্থাৎ জুন এবং জুলাই মাসে এরপর এটি মরুভূমির ভেতর গর্তে ঢুকে যায় এবং বিশ্রাম নিতে থাকে। এরপর এটি সাধারণত বেরোয় একমাত্র বৃষ্টি হলে যখন ভূমি ভিজে থাকে। এটা খুব ভয়ানক কারণ এটা মানুষ এবং পশু সাত মিটার দূরত্ব থেকে তৎক্ষণাৎ মারতে পারে।"

No comments:

Post a Comment