Friday 17 April 2020

রহস্যময় পিরি রেইস ও তার তৈরী ম্যাপ -

এর আগের ব্লগে আমরা এন্টার্কটিকার পিরামিডে পিরি রেইস ম্যাপের কথা বলেছিলাম; যারা আবার পড়তে চান, তাদের জন্য লিংক দিলাম - 

আন্টার্কটিকার পিরামিড ও রহস্যময় ম্যাপ --


এবার আমরা এই রহস্যময় পিড়ি রেইস ম্যাপ নিয়ে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো -

1929 সালের কনকনে ঠান্ডা একটি দিনে তুর্কির ন্যাশনাল মিউজিয়াম এর ডাইরেক্টর হালিল এধেম মিউজিয়ামে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বিভিন্ন রকমের নথিপত্রগুলি দেখার কাজট করছিলেন। এই সময় তিনি একটি রো-ডিয়ার(একপ্রকার বামুন হরিণ প্রজাতি) স্কিনের তৈরি একটি ম্যাপ দেখতে পেলেন। ম্যাপটি কে যখন তিনি পুরোপুরি খুললেন সেটার আয়তন ছিল 2/3 ফুট এবং তিনি অবাক হয়ে গেলেন যে একটি 1513 সালের তৈরী ম্যাপে কি করে বর্তমান পৃথিবীর ম্যাপ এর মত এত নিখুত তথ্য সমৃদ্ধ।

এই ম্যাপটি তৈরি করেছিলেন পিরি রেইস যিনি জলদস্যু থেকে তুর্কি নৌবাহিনীর একজন সেনাপতি হয়েছিলেন। তিনি বিখ্যাত গ্যালিপলি তে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যা মারমারা সমুদ্রের ধারে একটি নৌবাহিনীর বেস ছিল তিনি কেমাল রেইস এর ভাতিজা ছিলেন। কেমাল রেইস একজন জলদস্যু ছিল যিনি দুর্ধর্ষ অভিযাত্রী ও নৌযুদ্ধে প্রচুর নাম কামিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে তুর্কির একজন নৌ সেনাপতি হিসাবে যোগদান করেন। এই সময় জলদস্যু থেকে সেনাপতি বা নৌবাহিনীতে আসার ঘটনা সাধারণ ব্যাপার ছিল। পিরি রেইস তার বিখ্যাত চাচার সাথে 1487 থেকে 1493 সাল অব্দি জল ভ্রমণ করছে করেছিলেন। এই সময় কালীন তিনি বহু লুন্ঠন ও যুদ্ধের স্বাদ পেয়েছিলেন। তাদের নৌ বাহিনী বিভিন্ন শত্রু ও জলদস্যুর বাহিনীর বিরুদ্ধে লুট, অপহরণ এবং যুদ্ধ করেছিল। 1495 সালে  কেমাল রেইস তার দুর্দান্ত যুদ্ধকলার জন্য তুর্কীস রাজ নৌবহর অর্থাৎ ইম্পেরিয়াল তুর্কীস ফ্লাইট থেকে আপ্পায়ন পান। যথারীতি এখানেও তার ভাতিজা তাকে সঙ্গ দেয়। এইভাবে একজন জলদস্যু সম্মানীয় সেনাপ্রধানের রূপান্তরিত হয়। 1502 সালে এক নৌযুদ্ধে কেমাল রেইস নিহত হওয়ার পর পিরি রেইস এই সমুদ্র জীবন থেকে দূরে গিয়ে ম্যাপ নির্মাতা হিসেবে তার দ্বিতীয় পেশা শুরু করেন। 

তিনি খুবই দক্ষ ম্যাপ নির্মাতা ছিলেন তার আঁকায় সামান্য ভুল ত্রুটি ও বরদাস্ত করতেন না। তিনি ক্রিস্টোফার কলম্বাসের জাহাজ থেকে বাজেয়াপ্ত করা বিভিন্ন চার্ট গুলো থেকে এবং অন্যান্য বিভিন্ন পুরাতন ম্যাপ এর সূত্র থেকে 1513 সালে তাঁর বিখ্যাত ম্যাপ তৈরি করেছিলেন। তুর্কিরা কলম্বাসের একটি জাহাজ অধিগ্রহণ করেছিলেন এবং সেখানকার কর্মীরা চার্ট গুলো সমুদ্রে ফেলে দেওয়ার আগে সেই জাহাজে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই চার্ট বা ম্যাপ ফেলে দেওয়া তখনকার দিনে একটি সাধারণ ব্যাপার ছিল। এরফলে পৃথিবী তখনও রহস্যময় ছিল এবং অনেক জায়গা মানুষের অগোচরে থেকে গিয়েছিল; তাই এই ম্যাপ গুলি যেকোনো জলদস্যু, সেনাপতি, রাজা বা রানীর কাছে অমূল্য সম্পদ ছিল।

সাধারণ মানুষেরা 'ইলাস্ট্রেটেড লন্ডন নিউজ' এর  1932 সালের 27 ফেব্রুয়ারির একটি ইস্যু থেকে পিরি রেইস ম্যাপের কথা প্রথম জানতে পারে। 
শিরোনাম ছিল - "কলম্বাস এর বিতর্কিত আমেরিকা এবং দুটো আটলান্টিক চার্ট"- এতে লেখা হয়েছিল কলম্বাস তার বহর নিয়ে যখন দক্ষিণ আমেরিকা এর সমুদ্রতট ধরে 1498 সালে এগিয়ে চলেছিলেন। তিনি ভেনেজুয়েলার অরিনোকো পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, পিরি রেইস ম্যাপে দক্ষিণ আমেরিকার বাকি যে সমুদ্রতট অঞ্চলকে ম্যাপে দেখানো হয়েছিল তা হয়তো অন্য কোন সূত্র থেকে প্রাপ্ত। 

ম্যাগাজিনের জুলাই 23 তম প্রকাশনায় 'তুর্কীস হিস্টোরিক্যাল রিসার্চ সোসাইটি'এর  প্রেসিডেন্ট আকুরা ইউসুফ আরো বিস্তারিতভাবে লিখেছিলেন, লেখক কিছু বিষয়ের তুলে ধরেছিলেন যা হলো, "আমাদের মতে এই ম্যাপ একটি অংশবিশেষ। যদি, অন্যান্য অংশগুলি হারিয়ে না গিয়ে থাকে তাহলে আমরা 1513 সালে অংকন করা একটি তুর্কীস চার্ট পাব যা পুরনো এবং নতুন দুনিয়াকে একসাথে যুক্ত করেছে।

ক্যাপটেন আর্লিংটন ম্যালেরি নামক একজন অ্যামেচার সাইন্টিস্ট পিরি রেইস ম্যাপ এর বয়স নির্ধারণ এবং তার সূত্র নির্ধারণ করতে মিশনে নেমেছিলেন। এই মিশনের শেষে তিনি যে সিদ্ধান্তে  উপনীত হন তা এতই অবাক করা ছিল যে, তিনি তা সকলের সামনে প্রকাশ করতে দ্বিধাবোধ করেছিলেন। 1956 সালে অবশেষে তিনি তার আবিষ্কারকে জর্জটাউন ইউনিভার্সিটি সম্পাদিত একটি রেডিওতে সকলের সম্মুখে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বলছিলেন, 1954 সালের জুনে যখন তিনি 'লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস' এর ম্যাপ রুমে কাজ করছিলেন, তখন তার বন্ধু হাইড্রোগ্রাফিক অফিসের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার তাকে ম্যাপটির একটি কপি দেন যা তাকে জনৈক তুরকিশ নৌকর্তা পাঠিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, "যে আমাদের কাছে এই ম্যাপ সম্পর্কে যা তথ্য আছে তা তুমি পরীক্ষা করো"। "আমি এগুলি সব যাচাই ও বিশ্লেষণ করে সেগুলো তার কাছে আবার নিয়ে গেছিলাম এবং অফিসার কে এগুলির ল্যাটিটিউড, লঙ্গীটিউট এবং প্রজেকশন যাচাই করার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। যখন তারা আমায় প্রশ্ন করল কেন, আমি বলেছিলাম এই ম্যাপে এমন কিছু আছে  যে তথ্য আমার কাছ থেকে এসেছে - ভুলেও  কেউ বিশ্বাস করবে না; যদিও তোমার তরফ থেকে এলেও বিশ্বাস করবে কিনা আমি জানিনা। কলম্বাসের কাছে হয়তো এমন একটি ম্যাপ ছিল যাতে আন্টার্কটিকা মহাদেশে পালমার পেনিসুএলাকে নিখুঁতভাবে দেখানো হয়েছিল। "

রেডিও সঞ্চালক মিস্টার ওয়ারেন ম্যালেরি এবং ইউ. এস নেভি হাইড্রোগ্রাফিক অফিসের এম.আই ওয়াল্টারের ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন। 
যাতে তিনি ওয়াল্টার কে প্রশ্ন করেছিলেন, "এই ম্যাপটা কি ইউএস নেভীর হাইড্রোগ্রাফিক অফিসের দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল?"
ওয়াল্টার জবাবে হ্যাঁ বলেন এবং তিনি নিশ্চিত ছিলেন এগুলি সম্পূর্ণ সঠিক ছিল। 
এরপর তাকে প্রশ্ন করা হয়, "এই ম্যাপ গুলি কত বছরের পুরনো হতে পারে?"
জবাবে ওয়াল্টার বলেছিলেন, "ম্যাপ গুলি 5000 বছর বা তার আগেরও হতে পারে, কিন্তু তাতে এমন কিছু তথ্য আছে যা হয়তো এর থেকেও অনেক হাজার হাজার বছর আগের। 
ওয়াল্টার পিরি রেইস ম্যাপ এবং 1954 সালে অ্যান্টার্কটিকায় আবিষ্কৃত কুইন মাড অঞ্চলের সাব গ্লেসিয়াল ফিচার এর কথা তুলনা করেন,
"আমরা এই পুরনো চার্টগুলো এবং বর্তমানে হাইড্রোগ্রাফিক অফিসে তৈরি করা নতুন চার্টগুলি তে প্রাপ্ত পর্বত এবং উচ্চ মালভূমি জাতীয় স্থানগুলির  অবস্থান তুলনা করেছিলাম এবং আমরা দুটো ক্ষেত্রেই অবিশ্বাস্য রকম ভাবে মিল পেয়েছিলাম। আমরা পুরনো ম্যাপগুলির কাজ খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেছিলাম এবং আমি, ক্যাপ্টেন ম্যালেরি যা জানিয়েছেন তার সাথে সম্পূর্ণ রকম ভাবে একমত। "

সঞ্চালক বলেছিলেন, "মিস্টার ম্যালেরি, এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে কলম্বাসের সময়ের বহু আগে আটলান্টিকের তীরে দক্ষ অভিযাত্রী এবং ম্যাপ নির্মাতার উপস্থিতি ছিল ?"
ম্যালেরি বলেছিলেন," অনেক হাজার বছর আগে তারা কেবল অভিযাত্রী ছিলেন না, তারা নিশ্চয়ই কোন দক্ষ এবং উন্নত হাইড্রোগ্রাফিক সংস্থার অংশ ছিলেন; কারণ, আন্দাজমতো 5000 বছর আগে আপনারা আন্দাজ করতে পারেন আন্টার্কটিকার মত বিশাল মহাদেশের ম্যাপ তৈরি করা অসম্ভব ছিল। এটি কোন জনৈক ব্যক্তি বা ছোট অভিযাত্রী দলের পক্ষে অসম্ভব বিষয় ছিল; তার মানে এরা বৈজ্ঞানিক ছিল যারা অ্যাস্ট্রোনমি এবং তার সাথে টপোগ্রাফিক সার্ভে পদ্ধতিগুলির সাথে খুব সুপরিচিত ছিল।"

এই সময় প্রফেসর চার্লস হাপগুডএর একজন ছাত্র তাকে এই রেডিও সঞ্চালনের খবর জানিয়েছিলেন এবং প্রফেসর তৎক্ষণাৎ এই ম্যাপটি নিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। যেহেতু ম্যালেরি তার তদন্তের জন্য ইউএস নেভিকে ব্যবহার করেছিলেন, তাই হাপগুড সিদ্ধান্ত নেন যে, তিনি দ্বিতীয় এক পক্ষ অর্থাৎ 'দি কার্টোগ্রাফি স্টাফ অফ দি স্ট্র্যাটেজিক এয়ার কমান্ড' এর সাহায্য নেবেন। এরপর ইউ এস এয়ারফোর্সের তদন্ত ইউএস নেভীর মতনই এক ফলাফল নিয়ে এলো। তারা নিশ্চিত হলেন যে ম্যাপটির দক্ষিণ অংশে সাব-গ্লেসিয়াল আন্টার্কটিকা অর্থাৎ বরফ মুক্ত সময়কালীন আন্টার্কটিকার বর্ণনা করা হয়েছিল।

এর আগে মানুষের ধারণা ছিল যে আন্টার্কটিকা 1818 সালে প্রথম আবিষ্কৃত হয়।

ইউ এস এ এফ লেফটেন্যান্ট কর্নেল হ্যারল্ড জে ওলমেয়র  হাপগুডকে 1960 সালের 6 জুলাই চিঠি লেখেন, " আপনার পাঠানো 1513 সালের পিরি রেইস ওয়ার্ল্ড ম্যাপ কে এই সংস্থাএর দ্বারা পরীক্ষা করার অনুরোধ রাখা হয়েছে। 
ম্যাপটির নিচের অংশের কুইন মোড ল্যান্ড  এবং প্রিন্স মার্থা সমুদ্রতট এবং পালমার পেনিসুয়েলার বর্ণনা যথাযথ। আমাদের মতে, এই ম্যাপ সবদিক দিয়ে যুক্তিগত এবং সঠিকভাবে নির্মিত। 1949 সালের সুইডিশ-ব্রিটিশ-নরওয়ে এক্সপিডিশনে হিমশৈলের সিসমিক প্রোফাইল করে যে ফলাফল পাওয়া গেছে তার সাথে এই মাপের ভৌগোলিক বর্ণনা দারুন ভাবে মিল পাওয়া যায়। এটার  অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সমুদ্রতট বরফে ঢেকে যাওয়ার আগে মেপে নেওয়া হয়েছিল। কারণ, বর্তমানে এই অঞ্চলের উপর 1 মাইল বরফে ঢাকা। আমাদের কোনো ধারণা নেই 1513 সালের ভৌগলিক জ্ঞানের সাথে কিভাবে এই ম্যাপ তৈরি করা হয়েছিল।"

পিরি রেইস ম্যাপের একটি অদ্ভুত বিষয় হলো এটিকে ইকুইডিস্টেন্ট প্রজেকশন পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে পৃথিবীর উপরে যে কোন একটি পয়েন্টকে কেন্দ্র করে সেখান থেকে গণনা করে ম্যাপ তৈরি করা হয়।
এই পদ্ধতিতে তৈরিএকটি সবচেয়ে পরিচিত ম্যাপ এর উদাহরণ দেখতে পাওয়া যায় 'ইউনাইটেড নেশন' এর নীল সাদা পতাকা; যা উত্তর মেরুকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে।
এই ইকুইডিস্টেন্ট প্রজেকশন, ম্যাসাচুসেটসের ওয়েস্টওভার এয়ারফোর্স বেসের স্ট্র্যাটেজিক এয়ার কমান্ডের কার্টোগ্রাফিক কর্মীদের কাছে খুবই পরিচিত। এটা সোভিয়েত মিলিটারি এবং তাদের অর্থনৈতিক সম্পদগুলিকে লক্ষ্য করে তৈরি করা হতো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মস্কোকে কেন্দ্র করে একটি ম্যাপ তৈরি করা হয়েছিল যা মিলিটারিকে কাছাকাছি ন্যাটো দেশ থেকে সোভিয়েত ক্যাপিটাল এর উদ্দেশ্যে সবচেয়ে দ্রুত মিসাইল নিক্ষেপের গণনা করতে সাহায্য করতো। মস্কোর সবচেয়ে কাছের ন্যাটো মিসাইল বেস ছিল তুর্কিতে। 1962 সালের নভেম্বরে যখন কিউবায় সোভিয়েত মিসাইল আনা হয়েছিল তখন কাস্ত্রোর দীপ কে কেন্দ্র করে একটি ইকুইডিস্ট্যান্ট  প্রজেকশন ম্যাপ তৈরি করে দেখা হয়েছিল যে, মিসাইল গুলির আওতায় ইউনাইটেড স্টেটসের কতটা জায়গা আছে। "কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস" এর সমাধান হয়েছিল যখন জে এফ কে প্রস্তাব দেন যে, তিনি তুর্কি থেকে ন্যাটো মিসাইল গুলি তুলে নেবেন যদি ক্রুশ্চেভ কিউবা থেকে ইউ এস এস আর মিসাইল গুলি তুলে নেন।

চার্লস হাপ্গুড লাইব্রেরি অফ কংগ্রেস এর ম্যাপ বিভাগের প্রধান আর্ক সি গেলেক কে বর্ণনা দেন যে, রেনেসাঁসের সময়কার ভূগোলবিদ্যা পিরি রেইস মাপ তৈরি করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। এই ম্যাপটা বানানোর জন্য সেয়েনা থেকে উত্তর গোলার্ধের রৈখিক দূরত্ব সম্পর্কিত সুদক্ষ গাণিতিক জ্ঞান থাকা দরকার ছিল যা পিরি রেইস অথবা কলম্বাস কারোরই ছিলনা। হাপ্গুড এবং তার ছাত্ররা মাসের পর মাস ধরে পিরি রেইস ম্যাপের কেন্দ্র খুঁজে বার করার চেষ্টা করছিলেন। প্রথমে হাপগুড নিশ্চিত ছিলেন যে এটা সেয়েনা শহর ছিল যেখানে লাইব্রেরিয়ান এবং ভূগোলের জনক ইরাটসথেনিস প্রথম পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে তার বিখ্যাত গণনা টি করেছিলেন। হাপগুড ওয়েস্টওভার এয়ার ফোর্স ডেস্কের কার্তোগ্রফিক কর্মীদের তার এই প্রস্তাবটি দেন। ক্যাপ্টেন বার্জ তার সাথে একমত ছিলেন।
যদিও সকল পেশাদার গবেষকরা ম্যাপ এর কেন্দ্র সেয়েনা সম্পর্কে একমত ছিলেন কিন্তু হাপ্গুড সন্দেহপ্রবণ ছিলেন। তার ধারণা ছিল, প্রাচীনকালের ম্যাপ নির্মাতারা ট্রপিক্যাল অফ ক্যান্সার কে ব্যবহার করতেন যেটা ট্রপিক্যালকে টেম্পারেচার ক্লাইমেটিক জোনগুলির থেকে বিভক্ত করত।
বর্তমানে ট্রপিক অফ ক্যান্সার সেয়েনার কাছাকাছি অবস্থান করে কিন্তু এর একদম উপরে নয়।
দূরত্বের পার্থক্য খুব কম হলেও হাফ গুড এবং তার ছাত্ররা চাইছিলেন তাদের গণনা কে একদম সঠিকভাবে করতে।

হাপগুড চাইছিলেন ম্যাপটি সেয়েনা অথবা ট্রপিক অফ ক্যান্সার যেকোনো একটি থেকে করতে। কিন্তু এটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না কারণ, একটা সময় পৃথিবীর ভূখণ্ডের চলাচলের কারণে ট্রপিক অফ ক্যান্সার সরাসরি সেয়েনার উপর অবস্থান করতো। ম্যাপটি তৈরি করা কালীন এই সূত্রটাই তাদের মাথায় এই ম্যাপের তৈরির সময় যাচাই করার কথা মাথায় আনে এবং প্রথম প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় যে কখন ট্রপিক অফ ক্যান্সার এবং সেয়েনা শেষবারের মতো একি ল্যাটিটিউড অবস্থানে ছিল?

জ্যোতির্বিদদের তথ্য অনুযায়ী ট্রপিক অফ ক্যান্সারকে  40 সেকেন্ড ল্যাটিটিউড এ সরতে 100 বছর সময় লাগে। এই তথ্য থেকে তারা গণনা করার ফর্মুলাটি তৈরি করে এবং আসল ম্যাপ নির্মাতাদের সময় বের করে। বর্তমানে সেয়েনা ট্রপিক অফ ক্যান্সার থেকে 38 মিনিট এবং 30 সেকেন্ড দূরে যা মোট 2310 সেকেন্ড পার্থক্য একে 40 দিয়ে ভাগ করলে সময়টা দাঁড়ায়, 57.75 শতাবদি আগে।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের মত অনুযায়ী মিশর সভ্যতা 3800 খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ সূচনা হয়েছিল। তবে কি মিশরীয় সভ্যতার সূচনাকালে এই ম্যাপটি তৈরি করা হয়েছিল? হয়তো হারিয়ে যাওয়া আইস এজ এর সভ্যতা থেকে কেউ এটি তৈরি করেছিলেন। এই সভ্যতার মানুষ যারা সমুদ্রে ভ্রমণ করে বেড়াতেন এবং ইজিপশিয়ান পিরামিড তৈরির আগে পৃথিবীর ম্যাপ তৈরি করেছিলেন, যার মধ্যে আন্টার্কটিকার সেসময়কার বরফ মুক্ত সমুদ্র ছিল। 


No comments:

Post a Comment