‘কিং আর্থার’
মূলত ইতিহাস ও রোমান্সের
অপূর্ব সমন্বয়ে সৃষ্ট
বিশ্বসাহিত্যে আলোড়িত
বীরত্বপূর্ণ লোককাহিনী।
প্রাচীনকাল থেকেই ব্রিটেনে
কিং আর্থারের কাহিনী বেশ
জনপ্রিয় (অন্ধকার যুগের এই
রাজা সম্পর্কে বিস্তারিত
জানা যায় না। অন্ধকার যুগ নিয়ে পরে পোস্ট দেব)।
তাই এখন যখন
তালিকা করা হয় প্রাচীন কোনো
কোনো রহস্য এখনো অটুট হয়ে
রয়েছে তখন স্বাভাবিকভাগেই
কিং আর্থার রহস্যটি উঠে আসে।
কিং আর্থার ছিল উথার পেনড্রাগনের
ছেলে, মধ্যযুগের
ঐতিহাসিকদের মতে, পঞ্চম
শতক কিংবা ষষ্ঠ শতকের প্রথম
দিকে স্যাক্সনদের হামলার
মুখে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষায়
নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি
রাজা। পঞ্চম শতাব্দীর শেষার্ধ
হতে ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথমার্ধ
পর্যন্ত নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড,
ডেনমার্কসহ পাশ্ববর্তী
দেশসমূহ থেকে আগত দুর্ধর্ষ
স্যাক্সনদের লুণ্ঠন, নরহত্যা
ও অগ্নিসংযোগের মতো নারকীয়
যজ্ঞে ব্রিটেন যখন প্রায়
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার
উপক্রম তখন এই প্রবাদপুরুষের
আগমন ঘটে। তিনি অসীম বিরত্বের
সঙ্গে এই তাণ্ডব প্রতিহত করেন।
এমনকি শত্রুর রাজ্য দখল করে
নিজ রাজ্যের সম্প্রসারণ ঘটান।
যদিও আর্থারের সম্বন্ধে
মতানৈক্য আছে, ধারনা
করা হয়, কিং আর্থার
একটি আসল মানুষের জীবনীতে
গড়ে ওঠা কাল্পনিক চরিএ,
যিনি সত্যিই ছিলেন।
কিং আর্থার, তার জাদুকর, Merlin ও
গোলটেবিলের নাইট- এই
নিয়েই যুগে যুগে অসংখ্য মিথ
গড়ে উঠেছে। যদিও এই সময়ে এসেও
কিং আর্থার রহস্যের কূল-কিনারা
করতে পারেনি কেউ। ৬ষ্ট শতাব্দীতে
তিনি ইংল্যান্ড, আইয়ারল্যান্ড,
আইসল্যান্ড, নরওয়ে
ও গল রাজ্য জয় করেন।
এছাড়া
কথিত আছে আর্থার যখন বেশ ছোট,
তখনই তার বাবাকে
হত্যা করে, বাবার
ছোট ভাই ভরটিজেন
রাজ্যের ক্ষমতা দখল করে। নিজের
রাজপুত্র পরিচয় সম্পর্কে
অজ্ঞাত আর্থার দিনাতিপাত
করতে থাকেন। দৈবক্রমে একদিন
পাথরের মাঝখানে তিনি খুঁজে
পান একটি তরবারি, এটিই
সেই রহস্যময় তরবারি এক্সকেলিবার।
একে একে আর্থার জানতে পারেন
তার অতীতের কথা, তার
রাজকীয় উত্তরাধিকারের কথা।
তার জীবনে আসে গল্পের নায়িকা
দুরন্ত গুইনেভেরে। এক দৃঢ়
আত্মপ্রত্যয় নিয়ে আর্থার
এগিয়ে যান পিতৃহত্যার প্রতিশোধ
নিতে।
অনেকেই
ধারণা করেন, কিং
আর্থার একটি আসল মানুষের
জীবনীতে গড়ে ওঠা কাল্পনিক
চরিত্র।
ইতিহাসবিদদের
মতে, ২য়
শতাব্দীর রোমান কমান্ডার
লুসিয়াস আর্টেরিস কাসটাসই
হলো কিং আর্থার। তবে তাকে ঘিরে
মিথ থেমে থাকেনি। কল্পকাহিনী
নিয়ে যায় প্রাচীন নগরী রোমে।
এই নগরীর হ্যাডরিয়ান্স ওয়াল
সীমান্তবর্তী দক্ষিণাঞ্চল
'ব্রিটানিয়া'
শাসন করতেন
রোমান পরিবারের যোগ্য উত্তরাধিকারী
'কিং
আর্থার'।
তবে রাজ্য পরিচালনা শুরুর
কিছু দিনের মধ্যেই বিষণ্নতায়
আক্রান্ত হন তিনি। হঠাৎ একদিন
অজানা জাদুবলে বন্দী হয়ে চেতনা
হারিয়ে ফেলেন তিনি। রাজ্য
অধিপতির এমন অবস্থার কথা জানতে
পেরে হ্যাডরিয়ান্স ওয়ালের
আরেকজন ক্ষমতার উন্মাদ শাসক
অধিপতি এই ব্রিটানিয়া রাজ্য
দখলে আগ্রহী হয়। তবে সম্মুখ
সমরে রাজ্য দখলের ক্ষমতা
ফোমোরিয়ান্সের ছিল না বলে
কালো জাদুর প্রয়োগ ঘটিয়ে রাজ্য
দখলের নীলনকশা করতে থাকে।
তারই পরিকল্পনা মতে প্রথমে
ব্রিটানিয়া রাজ্যে কালো জাদুর
প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ভেঙে
ফেলা হয় 'হলি
গ্রেইল'।
এভাবেই শুরু হয় জাদুর খেলা।
তার বিরুদ্ধে লড়ে যান কিং
আর্থার। একদিকে জাদু অন্যদিকে
সাহসী যোদ্ধা কিং আর্থারের
বীরত্বের গল্প এখনো অটুট।
কিন্তু কিং আর্থার রহস্যের
মীমাংসা হয়নি আজও।
তবে
বর্তমানে কর্নওয়ালের
টিন্টাজেলে একটি রাজপ্রাসাদেরর
সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা
করা হচ্ছে, এখানেই
জন্ম নিয়েছিলেন কিং (রাজা)
আর্থার। খনন
কাজ এখনো চালানো হচ্ছে কর্নওয়ালের
টিন্টাজেলে। খুঁজে পাওয়া এই
রাজপ্রাসাদেই যে রাজা আর্থার
জন্ম নিয়েছেন, সে
ব্যাপারেও এখনো নিশ্চিত হননি
ঐতিহাসিকরা। তবে তারা নিশ্চিত
হয়েছেন যে, রাজপ্রাসাদটি
ষষ্ঠ শতকের। এবং সেই সময়
লিজেন্ডারি কিং ওই এলাকাতেই
রাজত্ব করতেন।
প্রাসাদের দেয়ালের
প্রস্থ প্রায় এক মিটার। সম্ভবত
ব্রিটেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয়
প্রাচীন রাজ্য ডুমনোনিয়ার
শাসকরাই বসবাস করতেন সেখানে।
ইংলিশ হেরিটেজ
পরিচালিত পাঁচ বছরের গবেষণা
প্রকল্পের অংশ হিসেবে ত্রয়োদশ
শতকের টিন্টাজেল দুর্গে এই
খননকাজ চালানো হচ্ছে। উদ্দেশ্য,
আজানা আরো ঐতিহাসিক
তথ্য উদ্ঘাটন করা, বিশেষ
করে পঞ্চম থেকে সপ্তম শতকের
কর্নওয়াল রাজাদের দৈনন্দির
জীবনের কথা।
কর্নওয়াল
প্রত্নতাত্ত্বিক ইউনিট (সিএইউ)
কাটিং এজ টেকনোলজি
ব্যবহার করে প্রাসাদের এই
দেয়াল খুঁজে বের করেন মাটি
খুঁড়ে।
ইংলিশ হেরিটেজের
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের
কিউরেটর উইন স্কুট বলছেন,
এই তিন সপ্তাহের খনন
কাজ পাঁচ বছরের গবেষণা প্রকল্পের
প্রথম পদক্ষেপ। টিন্টাজেল
ও কর্নওয়ালের অতীত সম্পর্কে
গুরুত্বপূর্ণ বহু প্রশ্নের
উত্তর জানার জন্য প্রকল্পটি
হাতে নেওয়া হয়।
রাজা তৃতীয়
রিচার্ড, আর্ল অব
কর্নওয়াল, তৃতীয়
হেনরির ভাই টিন্টাজেল দুর্গটি
নির্মাণ করেন, ১২৩০
থেকে ১২৪০ সালের মধ্যে,
মধ্যযুগের একটি বসতির
উপর।
খনন কাজটি পরিচালনা
করছেন জ্যাকি নোয়কস্কি।
সিএইউ-এর প্রধান
প্রত্নতাত্ত্বিক নোয়াকস্কি
বর্তমানে কাজ করছেন হিস্টরিক
ইংল্যান্ড ও টাইগারজিও লিমিটেডের
ভূ-তাত্ত্বিকদের
সঙ্গে।
কিং আর্থার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায় ষষ্ঠ শতকের সন্ন্যাসী গিলডাসের লেখা থেকে। আর্থার জীবন সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্য জানা যায় মনমাউথের জিওফ্রের লেখা থেকে।
কিং আর্থার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায় ষষ্ঠ শতকের সন্ন্যাসী গিলডাসের লেখা থেকে। আর্থার জীবন সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্য জানা যায় মনমাউথের জিওফ্রের লেখা থেকে।
No comments:
Post a Comment