শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ভিটামিন হলো ভিটামিন-ই। এটি শারীরিক বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ও সুস্থ থাকতে ভূমিকা রাখে।
ভিটামিন - ই'র উপকারিতা--
-- কোষ নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে শরীরে চাই অ্যান্টঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা ভিটামিন-ই থেকে পাওয়া যায়। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষের জন্য ক্ষতিকারক মৌলগুলির সঙ্গে লড়াই করে। দূষণ এবং ধূপমান থেকে শরীরে মুক্তমৌল তৈরি হয়। ভিটামিন ই- তে এমন এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষ নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। সাধারণত দূষণ এবং ধূমপান থেকে শরীরে যে ক্ষতিকারক মুক্তমৌল তৈরি হয় তার বিরুদ্ধে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুদ্ধ করে। এতে আমরা সুস্থ থাকতে পারি।
-- বাজারে ভিটামিন-ই যুক্ত তেল পাওয়া যায়। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর নানা উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল কাটাছেড়ার ক্ষত ও ব্রণ সারানো।
-- কোষ পুণর্গঠন প্রক্রিয়ার জন্য ভিটামিন-ই উপকারী হওয়ায় এটি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সক্ষম।
-- চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন-ই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চুপ পড়া, অল্প বয়সে চুল সাদা বা ধুসর হওয়া থেকে বাঁচতে চাই ভিটামিন-ই।
-- স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন-ই’তে ভরপুর খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ‘ইমিউন সেল’ বা রোগ প্রতিরোধকারী কোষ তৈরি সহায়ক, যা শরীরে তৈরি করে ব্যাকটেরিয়া-নাষক অ্যান্টিবডি।
--- গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন-ই গ্রহণ করলে হূদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, চোখের ছানি, মাংসপেশির ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা ও আন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।
--- হার্ট অ্যাটাক কমাতে ভিটামিন-ই মধ্যবয়সী পুরুষ এবং মহিলা যারা ভিটামিন-ই গ্রহণ করে থাকেন, যেসব লোক গ্রহণ করেন না, তাদের চেয়ে হার্ট এ্যাটাক কম হয়। তথ্যটি জানা গেছে হার্ভার্ড স্কুলের পাবলিক হেলথ বিভাগের দ’টি পৃথক গবেষণা থেকে। দি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে প্রায় ৪০ হাজার পুরুষ যারা কমপক্ষে দুই বছর দৈনিক ন্যূনতম ১০০ I.U ভিটামিন-ই গ্রহণ করেছেন তাদের হার্ট অ্যাটাক কম হয়েছে শতকরা ৩৭ ভাগ। দ্বিতীয় গবেষণাটি করা হয় মহিলাদের নিয়ে। ৮৭ হাজার মহিলাকে নিয়ে আট বছরের এক উদ্যোগ নেয়া হয়। সেখানে দেখা গেছে, দুই বছরের বেশি সময় দৈনিক ১০০ আইইউ ভিটামিন-ই গ্রহণে মহিলাদের হার্ট এ্যাটাক শতকরা ৪১ ভাগ কমেছে।
--- মুখে কোনও ক্ষতচিহ্ন থাকলে তার উপশমে ভিটামিন ই অব্যর্থ! অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর ভিটামিন ই ত্বকের নিজে থেকে সেরে ওঠার ক্ষমতাকে আরও জোরদার করে। মুখে ব্রণর ক্ষতচিহ্ন থাকলে একটা ভিটামিন ই ক্যাপসুল আধখানা করে কেটে ভিতরের তেল সরাসরি দাগের উপর লাগান। ভিটামিন ই ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দ্রুত ক্ষতচিহ্ন সারিয়ে তোলে।
----বলিরেখা সারাতে ভিটামিন ই অত্যন্ত কার্যকরী। ভিটামিন ই-র নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের বয়স বাড়তে দেয় না। ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু সারিয়ে ত্বক কোমল, সুন্দর করে তোলে ভিটামিন ই।
---মুখে দাগছোপ বা ত্বকের রং সব জায়গায় সমান না হলেও একমাত্র ওষুধ ভিটামিন ই। ত্বকের কোনও অংশে মেলানিন বেশি জমে গেলে সেই অংশের রং অন্যান্য অংশের চেয়ে কালো দেখায়। ত্বকের কালো অংশে ভিটামিন ই লাগালে তা ধীরে ধীরে হাইপারপিগমেন্টেশন কমিয়ে ত্বকের রং স্বাভাবিক করে তোলে।
---হাতের ত্বক শুকনো হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। সাধারণ ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজ়ার দিয়ে তা কমানো যায় না। হাতের চামড়া কুঁচকেও যায় অনেকের। এমন ক্ষেত্রে ভিটামিন ই ক্যাপসুল কেটে সেই তেল হাতের ত্বকে সরাসরি ক্রিমের মতো মেখে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে চোখে পড়ার মতো তরুণ দেখাবে হাতের ত্বক।
---- ফাটা ঠোঁটের সমস্যায় বছরভর কষ্ট পান? প্রতিদিনের লিপবামের বদলে ব্যবহার করুন ভিটামিন ই তেল। ঠোঁটের রং কালো হয়ে গেলেও ভিটামিন ই তেলে ফল পাবেন।
----সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতেও আপনার ভরসা ভিটামিন ই। মুখে সানস্ক্রিন লাগানোর আগে ভিটামিন ই তেল মেখে নিন। বিকল্প হিসেবে ভিটামিন ই যুক্ত সানস্ক্রিনও ব্যবহার করতে পারেন।
-- শরীরের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন-ই গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। এসব হচ্ছে-
-অন্ত্রের অসুখ, লিভার বা যকৃতের অসুখ, অগ্ন্যাশয়ের অসুখ, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাকস্থলী অপসারণ।
যে শিশু টিনের দুধ খায় তাদের ভিটামিন-ই এর ঘাটতি হতে পারে। মূলত পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে ভিটামিন-ই এর প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়।
-- গবেষণায় জানা গেছে যে, ব্যায়াম পরবর্তী পেশী বেদনা লাঘবে ভিটামিন ‘ই’ বেশ কার্যকর। এক্ষেত্রে ভিটামিন ‘ই’ এর ফ্রী র্যাডিক্যাল রোধী বা এ্যান্টি অক্সিডেন্ট
ভূমিকাই কাজ করে। এমনিতে ফ্রী র্যাডিক্যাল পেশীর ছোট-খাটো কাটাছেঁড়া মেরামত করে। কিন্তু ফ্রী র্যাডিক্যালের
সংখ্যা বেড়ে গেলে তা পেশীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াঁয়। ভিটামিন ‘ই’ সেবনে ফ্রী র্যাডিক্যালের সংখ্যা কমে যায়
এবং পেশীর ব্যাথা নিরাময় হয়।
এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের র্হাভার্ড মেডিক্যাল স্কুল কর্তৃক প্রকাশিত এক হেলথ রিপোর্টে বলা হয় যে, ভিটামিন ‘ই’
এর ক্ষমতার মধ্যে আরও দুটো বৈশিষ্ট্য অর্ন্তভুক্ত করা যায় যেগুলো হৃদরোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকারী ভূমিকা পালন
করে। এ দুটো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রদাহ নিবারণ ও মসৃণ মাংস পেশীর কোষ প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করা। মাংস পেশীর কোষ উৎপাদন ক্ষমতার সংগে প্রদাহ নিবারণ ক্ষমতা এ দুটো গুণ রক্তনালীর সংকীর্ণ হওয়াকে প্রতিরোধ করে। এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়া ছাড়াও এই দুই গুণাবলীর কারণে ভিটামিন ‘ই’ হৃদরোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আরও
উল্লেখ্য যে, ভিটামিন ‘ই’ এর সাহায্য ছাড়া দেহে ভিটামিন ‘এ’র শোষণ ও মজুদ হওয়া কঠিন।
ভিটামিন ‘ই’ এর ক্যান্সাররোধী গুণাবলীর কথাও জানা গেছে।
-ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার খান:
বাদাম, খাদ্যশস্য, ভুট্টার ভ্রুণ এবং গাঢ় সবুজ শাকসবজি ভিটামিন-ই এর চমৎকার উৎস। আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এসব খাবার রাখুন।
১) সূর্যমুখীর বীজ : সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভিটামিন ই। প্রতি ১০০ গ্রাম সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ৩৬.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। এই বীজ থেকে যে তেল তৈরি করা হয় তা সাধারণত সালাদ, স্যুপ বা গার্নিশে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া অন্যান্য রান্নাতেও সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করা যায়। এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই, রক্তচাপ ও হৃদরোগীরা অনায়াসে তা খেতে পারেন।
২) লাল মরিচের গুঁড়া : ঝালের কারণে আমরা অনেকেই মরিচ কম খেয়ে থাকি। অবাক হলেও কথা সত্য। জেনে অবাক হতে পারেন, সর্বোচ্চ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় আছে লাল মরিচের গুঁড়া! প্রতি ১০০ গ্রাম লাল মরিচের গুঁড়ায় রয়েছে ২৯.৮৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। আমাদের রোজকার খাবারে আমরা মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করে থাকি। তাই আমাদের শরীরে ভিটামিন ই-এর অভাব সচরাচর ঘটে না।
৩) কাঠ বাদাম : আমন্ড বা কাঠবাদাম ভিটামিন ই-এর জন্য বেশি জনপ্রিয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠবাদামে রয়েছে ২৬.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। দাম বেশি বলে কাঠবাদাম খাবার হিসেবে খুব বেশি প্রচলিত নয়। সাধারণত ক্ষীর, পায়েস, মিষ্টি, সন্দেশ, হালুয়াসহ অন্যান্য খাবার তৈরিতে অনুষঙ্গিক উপকরণ হিসেবে কাঠবাদাম ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কাঠবাদামের দুধ ও মাখনও ভিটামিন ই-এর ভালো উত্স।
৪) পেস্তা বাদাম : কাঠবাদামের পরেই রয়েছে পাইন নাট বা পেস্তা বাদাম। প্রতি ১০০ গ্রাম পেস্তা বাদামে রয়েছে ৯.৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। কাঠবাদামের মতোই পেস্তা বাদামও আমাদের দেশে বিভিন্ন খাবার তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৫) চীনা বাদাম : চীনা বাদাম খেতে পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুব কমই আছেন! বাদাম ভাজা বেশ মুখরোচক একটি খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম চীনা বাদামে রয়েছে ৬.৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। চীনাবাদাম নানা খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চীনাবাদামের মাখনও বেশ উপকারী।
৬) ভেষজ: ভেষজের মধ্য বেসিল ও অরিগানোতে রয়েছে সর্বোচ্চ ভিটামিন ই। প্রতি ১০০ গ্রাম বেসিল ও অরিগানোতে রয়েছে ৭.৪৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। পাস্তা, পিজা, সালাদ ও স্যান্ডউইচ তৈরির উপকরণ হিসেবে বেসিল এবং অরিগানো ব্যবহার করা হয়।
৭) শুকনো এপ্রিকট : এপ্রিকটকে বলা হয় খাদ্যআঁশ ও নানা ভিটামিনের উত্কৃষ্ট উত্স। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো এপ্রিকটে রয়েছে ৪.৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
৮) জলপাইয়ের আচার : ভিটামিন ই-এর একটি উত্কৃষ্ট উত্স হিসেবে গণ্য করা হয় কাঁচা জলপাইকে। তবে কাঁচা জলপাইয়ের আচার হলো ভিটামিন ই-এর একটি ভালো উত্স। প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ের আচারে রয়েছে ৩.৮১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
৯) পালং শাক : রান্না করা পালং শাক আয়রন, ক্যালসিয়াম ও খনিজ পদার্থের আধার হিসেবে পরিগণিত হয়। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই-ও। প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না করা পালং শাকে রয়েছে ৩.৫৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
১০) কচুর মূল : আয়রন ও ক্যালসিয়ামের সর্বোত্কৃষ্ট উত্স হলো কচুর মূল। এটি আমাদের দেশে অতি সহজলভ্য একটি খাবার। আলুর বিকল্প হিসেবেও কচুর মূল খাওয়া যায়। সর্বোচ্চ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাদ্য তালিকার দশ নম্বরে রয়েছে কচুর মূল। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুর মূলে রয়েছে ২.৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
জলপাইয়ের আচার: ভিটামিন ‘ই’ এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে গণ্য করা হয় কাঁচা জলপাইকে। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা জলপাইয়ের আচারে রয়েছে ৩.৮১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
খাবার রান্না করলে এবং সংরক্ষণ করে রাখলে ভিটামিন-ই কিছুটা নষ্ট হয়। শুধু ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে সেটি সুন্দর খাবারের বিকল্প হতে পারে না এবং সেটি শরীরে শক্তিও উৎপন্ন করতে পারবে না। অন্যান্য খাদ্যের উপস্থিতি ছাড়া ভিটামিনগুলো নিজেরা কাজ করতে পারে না। শরীরে ভিটামিন-ই এর শোষণের জন্য কিছুটা চর্বির প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন-ই পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনে, যেমন- ডি-কিংবা ডিএল আলফা টকোফেরিল অ্যাসিটেট, ডি-কিংবা ডিএল-আলফা টকোফেরল এবং ডি-কিংবা এল-আলফা টকোফেরিল এসিড সাক্সিনেট।
আপনি যদি প্রেসক্রিপশন ছাড়া ভিটামিন-ই গ্রহণ করেন, তাহলে লেবেলের লেখাগুলো ভালো করে পড়ে নেবেন এবং কোনো ধরনের সতর্কতার উল্লেখ থাকলে সেটি মেনে চলবেন। কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন-ই গ্রহণে সতর্ক হতে হবে-
অ্যালার্জি : ভিটামিন-ই গ্রহণের পর কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় কিংবা অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসককে জানাতে হবে।
গর্ভাবস্থা : এটি গুরুত্বপূর্ণ, যখন আপনি গর্ভবতী হচ্ছেন তখন পর্যাপ্ত ভিটামিন গ্রহণ করছেন। তবে আপনাকে দেখতে হবে গর্ভাবস্থার পুরো সময়টা আপনি সঠিক মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করছেন কি না, কেননা ভ্রুণের বিকাশ এবং বৃদ্ধি নির্ভর করে মায়ের সঠিক পুষ্টি গ্রহণের ওপর। গর্ভাবস্থায় বেশি মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করলে ক্ষতি হতে পারে, তাই বেশি মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করবেন না।
বুকের দুধ : শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য স্তনদানরত মহিলার সঠিকমাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে থাকেন তা হলে মাঝে মধ্যে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। এ ক্ষেত্রে শিশুকে অন্য উপায়ে ভিটামিন দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে আপনি যদি বুকের দুধ খাওয়ানোকালে অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করেন তাহলে আপনার নিজের জন্য এবং শিশুর জন্য সেটি ক্ষতিকর হবে।
শিশু : দৈনন্দিন সুপারিশকৃত মাত্রা গ্রহণের ফলে শিশুর অসুবিধার কথা জানা যায়নি। শিশু বুকের দুধ খেলে তাকে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন দেয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গবেষণায় দেখা গেছে নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণকারী শিশুর শরীরে ভিটামিন-ই এর মাত্রা কম থাকে। আপনার চিকিৎসক এ ব্যাপারে ভিটামিন-ই এর মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন।
প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ : দৈনন্দিন সুপারিশকৃত মাত্রা গ্রহণের ফলে প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধার কথা জানা যায়নি।
অন্য ওষুধ গ্রহণ : আপনি যদি ভিটামিন-ই গ্রহণের সময় অন্য কোনো ওষুধ খেতে থাকেন তা হলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানাবেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দুটি ওষুধের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারেন কিংবা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে বলতে পারেন।
অন্যান্য চিকিৎসাগত সমস্যা : অন্য কোনো চিকিৎসাগত সমস্যা উপস্থিত থাকলে ভিটামিন-ই গ্রহণের ফলে অবস্থা খারাপ হতে পারে। আপনার অন্য কোনো চিকিৎসাগত সমস্যা আছে কি না সেটি চিকিৎসককে অবশ্যই জানাবেন, বিশেষ করে আপনার যদি রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা থাকে।
দৈনিক ৪০০ ইউনিটের বেশি এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য ভিটামিন-ই গ্রহণ করলে নিুলিখিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটে-
চোখে ঝাপসা দেখা, ডায়রিয়া, মাথাঘোরা, মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব, পেট কামড়ানো, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা।
এক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন-ই গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ভিটামিন - ই'র উপকারিতা--
-- কোষ নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে শরীরে চাই অ্যান্টঅক্সিডেন্ট উপাদান, যা ভিটামিন-ই থেকে পাওয়া যায়। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষের জন্য ক্ষতিকারক মৌলগুলির সঙ্গে লড়াই করে। দূষণ এবং ধূপমান থেকে শরীরে মুক্তমৌল তৈরি হয়। ভিটামিন ই- তে এমন এক ধরণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষ নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। সাধারণত দূষণ এবং ধূমপান থেকে শরীরে যে ক্ষতিকারক মুক্তমৌল তৈরি হয় তার বিরুদ্ধে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুদ্ধ করে। এতে আমরা সুস্থ থাকতে পারি।
-- বাজারে ভিটামিন-ই যুক্ত তেল পাওয়া যায়। ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতে, এর নানা উপকারিতা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হল কাটাছেড়ার ক্ষত ও ব্রণ সারানো।
-- কোষ পুণর্গঠন প্রক্রিয়ার জন্য ভিটামিন-ই উপকারী হওয়ায় এটি ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখতে সক্ষম।
-- চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন-ই একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। চুপ পড়া, অল্প বয়সে চুল সাদা বা ধুসর হওয়া থেকে বাঁচতে চাই ভিটামিন-ই।
-- স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিটামিন-ই’তে ভরপুর খাবার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ‘ইমিউন সেল’ বা রোগ প্রতিরোধকারী কোষ তৈরি সহায়ক, যা শরীরে তৈরি করে ব্যাকটেরিয়া-নাষক অ্যান্টিবডি।
--- গবেষণায় দেখা গেছে ভিটামিন-ই গ্রহণ করলে হূদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, চোখের ছানি, মাংসপেশির ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা ও আন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায়।
--- হার্ট অ্যাটাক কমাতে ভিটামিন-ই মধ্যবয়সী পুরুষ এবং মহিলা যারা ভিটামিন-ই গ্রহণ করে থাকেন, যেসব লোক গ্রহণ করেন না, তাদের চেয়ে হার্ট এ্যাটাক কম হয়। তথ্যটি জানা গেছে হার্ভার্ড স্কুলের পাবলিক হেলথ বিভাগের দ’টি পৃথক গবেষণা থেকে। দি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে প্রায় ৪০ হাজার পুরুষ যারা কমপক্ষে দুই বছর দৈনিক ন্যূনতম ১০০ I.U ভিটামিন-ই গ্রহণ করেছেন তাদের হার্ট অ্যাটাক কম হয়েছে শতকরা ৩৭ ভাগ। দ্বিতীয় গবেষণাটি করা হয় মহিলাদের নিয়ে। ৮৭ হাজার মহিলাকে নিয়ে আট বছরের এক উদ্যোগ নেয়া হয়। সেখানে দেখা গেছে, দুই বছরের বেশি সময় দৈনিক ১০০ আইইউ ভিটামিন-ই গ্রহণে মহিলাদের হার্ট এ্যাটাক শতকরা ৪১ ভাগ কমেছে।
--- মুখে কোনও ক্ষতচিহ্ন থাকলে তার উপশমে ভিটামিন ই অব্যর্থ! অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর ভিটামিন ই ত্বকের নিজে থেকে সেরে ওঠার ক্ষমতাকে আরও জোরদার করে। মুখে ব্রণর ক্ষতচিহ্ন থাকলে একটা ভিটামিন ই ক্যাপসুল আধখানা করে কেটে ভিতরের তেল সরাসরি দাগের উপর লাগান। ভিটামিন ই ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে দ্রুত ক্ষতচিহ্ন সারিয়ে তোলে।
----বলিরেখা সারাতে ভিটামিন ই অত্যন্ত কার্যকরী। ভিটামিন ই-র নিয়মিত ব্যবহার ত্বকের বয়স বাড়তে দেয় না। ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু সারিয়ে ত্বক কোমল, সুন্দর করে তোলে ভিটামিন ই।
---মুখে দাগছোপ বা ত্বকের রং সব জায়গায় সমান না হলেও একমাত্র ওষুধ ভিটামিন ই। ত্বকের কোনও অংশে মেলানিন বেশি জমে গেলে সেই অংশের রং অন্যান্য অংশের চেয়ে কালো দেখায়। ত্বকের কালো অংশে ভিটামিন ই লাগালে তা ধীরে ধীরে হাইপারপিগমেন্টেশন কমিয়ে ত্বকের রং স্বাভাবিক করে তোলে।
---হাতের ত্বক শুকনো হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। সাধারণ ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজ়ার দিয়ে তা কমানো যায় না। হাতের চামড়া কুঁচকেও যায় অনেকের। এমন ক্ষেত্রে ভিটামিন ই ক্যাপসুল কেটে সেই তেল হাতের ত্বকে সরাসরি ক্রিমের মতো মেখে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে চোখে পড়ার মতো তরুণ দেখাবে হাতের ত্বক।
---- ফাটা ঠোঁটের সমস্যায় বছরভর কষ্ট পান? প্রতিদিনের লিপবামের বদলে ব্যবহার করুন ভিটামিন ই তেল। ঠোঁটের রং কালো হয়ে গেলেও ভিটামিন ই তেলে ফল পাবেন।
----সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে ত্বককে বাঁচাতেও আপনার ভরসা ভিটামিন ই। মুখে সানস্ক্রিন লাগানোর আগে ভিটামিন ই তেল মেখে নিন। বিকল্প হিসেবে ভিটামিন ই যুক্ত সানস্ক্রিনও ব্যবহার করতে পারেন।
-- শরীরের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন-ই গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। এসব হচ্ছে-
-অন্ত্রের অসুখ, লিভার বা যকৃতের অসুখ, অগ্ন্যাশয়ের অসুখ, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাকস্থলী অপসারণ।
যে শিশু টিনের দুধ খায় তাদের ভিটামিন-ই এর ঘাটতি হতে পারে। মূলত পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে ভিটামিন-ই এর প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়।
-- গবেষণায় জানা গেছে যে, ব্যায়াম পরবর্তী পেশী বেদনা লাঘবে ভিটামিন ‘ই’ বেশ কার্যকর। এক্ষেত্রে ভিটামিন ‘ই’ এর ফ্রী র্যাডিক্যাল রোধী বা এ্যান্টি অক্সিডেন্ট
ভূমিকাই কাজ করে। এমনিতে ফ্রী র্যাডিক্যাল পেশীর ছোট-খাটো কাটাছেঁড়া মেরামত করে। কিন্তু ফ্রী র্যাডিক্যালের
সংখ্যা বেড়ে গেলে তা পেশীর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়াঁয়। ভিটামিন ‘ই’ সেবনে ফ্রী র্যাডিক্যালের সংখ্যা কমে যায়
এবং পেশীর ব্যাথা নিরাময় হয়।
এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের র্হাভার্ড মেডিক্যাল স্কুল কর্তৃক প্রকাশিত এক হেলথ রিপোর্টে বলা হয় যে, ভিটামিন ‘ই’
এর ক্ষমতার মধ্যে আরও দুটো বৈশিষ্ট্য অর্ন্তভুক্ত করা যায় যেগুলো হৃদরোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপকারী ভূমিকা পালন
করে। এ দুটো বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রদাহ নিবারণ ও মসৃণ মাংস পেশীর কোষ প্রবৃদ্ধিতে সাহায্য করা। মাংস পেশীর কোষ উৎপাদন ক্ষমতার সংগে প্রদাহ নিবারণ ক্ষমতা এ দুটো গুণ রক্তনালীর সংকীর্ণ হওয়াকে প্রতিরোধ করে। এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্রিয়া ছাড়াও এই দুই গুণাবলীর কারণে ভিটামিন ‘ই’ হৃদরোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আরও
উল্লেখ্য যে, ভিটামিন ‘ই’ এর সাহায্য ছাড়া দেহে ভিটামিন ‘এ’র শোষণ ও মজুদ হওয়া কঠিন।
ভিটামিন ‘ই’ এর ক্যান্সাররোধী গুণাবলীর কথাও জানা গেছে।
-ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ খাবার খান:
বাদাম, খাদ্যশস্য, ভুট্টার ভ্রুণ এবং গাঢ় সবুজ শাকসবজি ভিটামিন-ই এর চমৎকার উৎস। আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় এসব খাবার রাখুন।
১) সূর্যমুখীর বীজ : সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণে ভিটামিন ই। প্রতি ১০০ গ্রাম সূর্যমুখীর বীজে রয়েছে ৩৬.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। এই বীজ থেকে যে তেল তৈরি করা হয় তা সাধারণত সালাদ, স্যুপ বা গার্নিশে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া অন্যান্য রান্নাতেও সূর্যমুখীর তেল ব্যবহার করা যায়। এতে কোনো কোলেস্টেরল নেই, রক্তচাপ ও হৃদরোগীরা অনায়াসে তা খেতে পারেন।
২) লাল মরিচের গুঁড়া : ঝালের কারণে আমরা অনেকেই মরিচ কম খেয়ে থাকি। অবাক হলেও কথা সত্য। জেনে অবাক হতে পারেন, সর্বোচ্চ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবারের তালিকায় আছে লাল মরিচের গুঁড়া! প্রতি ১০০ গ্রাম লাল মরিচের গুঁড়ায় রয়েছে ২৯.৮৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। আমাদের রোজকার খাবারে আমরা মরিচের গুঁড়া ব্যবহার করে থাকি। তাই আমাদের শরীরে ভিটামিন ই-এর অভাব সচরাচর ঘটে না।
৩) কাঠ বাদাম : আমন্ড বা কাঠবাদাম ভিটামিন ই-এর জন্য বেশি জনপ্রিয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠবাদামে রয়েছে ২৬.২২ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। দাম বেশি বলে কাঠবাদাম খাবার হিসেবে খুব বেশি প্রচলিত নয়। সাধারণত ক্ষীর, পায়েস, মিষ্টি, সন্দেশ, হালুয়াসহ অন্যান্য খাবার তৈরিতে অনুষঙ্গিক উপকরণ হিসেবে কাঠবাদাম ব্যবহার করা হয়। এছাড়া কাঠবাদামের দুধ ও মাখনও ভিটামিন ই-এর ভালো উত্স।
৪) পেস্তা বাদাম : কাঠবাদামের পরেই রয়েছে পাইন নাট বা পেস্তা বাদাম। প্রতি ১০০ গ্রাম পেস্তা বাদামে রয়েছে ৯.৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। কাঠবাদামের মতোই পেস্তা বাদামও আমাদের দেশে বিভিন্ন খাবার তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৫) চীনা বাদাম : চীনা বাদাম খেতে পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুব কমই আছেন! বাদাম ভাজা বেশ মুখরোচক একটি খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম চীনা বাদামে রয়েছে ৬.৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। চীনাবাদাম নানা খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চীনাবাদামের মাখনও বেশ উপকারী।
৬) ভেষজ: ভেষজের মধ্য বেসিল ও অরিগানোতে রয়েছে সর্বোচ্চ ভিটামিন ই। প্রতি ১০০ গ্রাম বেসিল ও অরিগানোতে রয়েছে ৭.৪৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই। পাস্তা, পিজা, সালাদ ও স্যান্ডউইচ তৈরির উপকরণ হিসেবে বেসিল এবং অরিগানো ব্যবহার করা হয়।
৭) শুকনো এপ্রিকট : এপ্রিকটকে বলা হয় খাদ্যআঁশ ও নানা ভিটামিনের উত্কৃষ্ট উত্স। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো এপ্রিকটে রয়েছে ৪.৩৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
৮) জলপাইয়ের আচার : ভিটামিন ই-এর একটি উত্কৃষ্ট উত্স হিসেবে গণ্য করা হয় কাঁচা জলপাইকে। তবে কাঁচা জলপাইয়ের আচার হলো ভিটামিন ই-এর একটি ভালো উত্স। প্রতি ১০০ গ্রাম জলপাইয়ের আচারে রয়েছে ৩.৮১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
৯) পালং শাক : রান্না করা পালং শাক আয়রন, ক্যালসিয়াম ও খনিজ পদার্থের আধার হিসেবে পরিগণিত হয়। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ই-ও। প্রতি ১০০ গ্রাম রান্না করা পালং শাকে রয়েছে ৩.৫৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
১০) কচুর মূল : আয়রন ও ক্যালসিয়ামের সর্বোত্কৃষ্ট উত্স হলো কচুর মূল। এটি আমাদের দেশে অতি সহজলভ্য একটি খাবার। আলুর বিকল্প হিসেবেও কচুর মূল খাওয়া যায়। সর্বোচ্চ ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাদ্য তালিকার দশ নম্বরে রয়েছে কচুর মূল। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুর মূলে রয়েছে ২.৯৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
জলপাইয়ের আচার: ভিটামিন ‘ই’ এর একটি উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে গণ্য করা হয় কাঁচা জলপাইকে। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা জলপাইয়ের আচারে রয়েছে ৩.৮১ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই।
খাবার রান্না করলে এবং সংরক্ষণ করে রাখলে ভিটামিন-ই কিছুটা নষ্ট হয়। শুধু ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে সেটি সুন্দর খাবারের বিকল্প হতে পারে না এবং সেটি শরীরে শক্তিও উৎপন্ন করতে পারবে না। অন্যান্য খাদ্যের উপস্থিতি ছাড়া ভিটামিনগুলো নিজেরা কাজ করতে পারে না। শরীরে ভিটামিন-ই এর শোষণের জন্য কিছুটা চর্বির প্রয়োজন হয়।
ভিটামিন-ই পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনে, যেমন- ডি-কিংবা ডিএল আলফা টকোফেরিল অ্যাসিটেট, ডি-কিংবা ডিএল-আলফা টকোফেরল এবং ডি-কিংবা এল-আলফা টকোফেরিল এসিড সাক্সিনেট।
আপনি যদি প্রেসক্রিপশন ছাড়া ভিটামিন-ই গ্রহণ করেন, তাহলে লেবেলের লেখাগুলো ভালো করে পড়ে নেবেন এবং কোনো ধরনের সতর্কতার উল্লেখ থাকলে সেটি মেনে চলবেন। কিছু ক্ষেত্রে ভিটামিন-ই গ্রহণে সতর্ক হতে হবে-
অ্যালার্জি : ভিটামিন-ই গ্রহণের পর কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দেয় কিংবা অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসককে জানাতে হবে।
গর্ভাবস্থা : এটি গুরুত্বপূর্ণ, যখন আপনি গর্ভবতী হচ্ছেন তখন পর্যাপ্ত ভিটামিন গ্রহণ করছেন। তবে আপনাকে দেখতে হবে গর্ভাবস্থার পুরো সময়টা আপনি সঠিক মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করছেন কি না, কেননা ভ্রুণের বিকাশ এবং বৃদ্ধি নির্ভর করে মায়ের সঠিক পুষ্টি গ্রহণের ওপর। গর্ভাবস্থায় বেশি মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করলে ক্ষতি হতে পারে, তাই বেশি মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করবেন না।
বুকের দুধ : শিশুর সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য স্তনদানরত মহিলার সঠিকমাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে থাকেন তা হলে মাঝে মধ্যে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। এ ক্ষেত্রে শিশুকে অন্য উপায়ে ভিটামিন দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। তবে আপনি যদি বুকের দুধ খাওয়ানোকালে অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন গ্রহণ করেন তাহলে আপনার নিজের জন্য এবং শিশুর জন্য সেটি ক্ষতিকর হবে।
শিশু : দৈনন্দিন সুপারিশকৃত মাত্রা গ্রহণের ফলে শিশুর অসুবিধার কথা জানা যায়নি। শিশু বুকের দুধ খেলে তাকে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন দেয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গবেষণায় দেখা গেছে নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্মগ্রহণকারী শিশুর শরীরে ভিটামিন-ই এর মাত্রা কম থাকে। আপনার চিকিৎসক এ ব্যাপারে ভিটামিন-ই এর মাত্রা নির্ধারণ করে দেবেন।
প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ : দৈনন্দিন সুপারিশকৃত মাত্রা গ্রহণের ফলে প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধার কথা জানা যায়নি।
অন্য ওষুধ গ্রহণ : আপনি যদি ভিটামিন-ই গ্রহণের সময় অন্য কোনো ওষুধ খেতে থাকেন তা হলে অবশ্যই চিকিৎসককে জানাবেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে দুটি ওষুধের মধ্যে প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসক ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করতে পারেন কিংবা অন্য কোনো ব্যবস্থা নিতে বলতে পারেন।
অন্যান্য চিকিৎসাগত সমস্যা : অন্য কোনো চিকিৎসাগত সমস্যা উপস্থিত থাকলে ভিটামিন-ই গ্রহণের ফলে অবস্থা খারাপ হতে পারে। আপনার অন্য কোনো চিকিৎসাগত সমস্যা আছে কি না সেটি চিকিৎসককে অবশ্যই জানাবেন, বিশেষ করে আপনার যদি রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা থাকে।
দৈনিক ৪০০ ইউনিটের বেশি এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য ভিটামিন-ই গ্রহণ করলে নিুলিখিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ঘটে-
চোখে ঝাপসা দেখা, ডায়রিয়া, মাথাঘোরা, মাথাব্যথা, বমিবমি ভাব, পেট কামড়ানো, অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা।
এক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়াতে পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন-ই গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
No comments:
Post a Comment