শিন্টোইসম ও বুধ্ধিসম --
এই দুই ধর্ম জাপানের সবচেয়ে পরিচিত ধর্ম। একজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত জাপানিজ প্রোফেসর জাপানের বাসিন্দাদের উপর করা সমীক্ষায় প্রকাশ করেন যে জাপানের ৮০% হলো শিন্টোইস্ট এবং ৭০% হলো বুদ্ধ ধর্মাবলম্বী। যা মিলিয়ে ১৫০% হয়। কিন্তু কিভাবে? খুব সহজ. একজন জাপানিজ বলতে পারেন যে তিনি বৌদ্ধ ও শিন্টোইস্ট দুই ই। জাপানে এই দুই ধর্ম পালন খুব ই সাধারণ ব্যাপার।
"karaoke" বা কারোকে --
এশিয়ান দেশগুলিতে বিশেষ করে আমাদের দেশে "karaoke" বা কারোকে গায়করা খুব জনপ্রিয় কিন্তু এই শব্দটি আসলে জাপানি শব্দ 'কারা ' যার অর্থ খালি ও 'ওকে ' যার অর্থ অর্কেস্ট্রা একসাথে করলে মানে বোঝায় রেকর্ড করা মিউজিক বা ছন্দের সাথে গান গাওয়া বা কণ্ঠ দেয়া।
ইকেবানা --
জাপানিজ ফুল সাজানোর একটি শিল্প হলো ইকেবানা। অন্য কোনো দেশে এই ফুল সাজানোকে শিল্প হিসাবে দেখা হয়না কিন্তু জাপানে এটি বেশিরভাগ বাসিন্দা মেনে চলে। ইকেবানা কেবল পাত্রে ফুল গুছিয়ে রাখার থেকে অনেক বেশি কিছু। ফুল সাজানোর বিভিন্ন পদ্ধতি আছে প্রতিটি ধাপে ধাপে যা আমাদের প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক ও মূল্য ব্যক্ত করে এবং জাপানিজরা একে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখে।
ওয়াসকু --
ঐতিহ্যবাহি জাপানিজ খাদ্যগুলিকে ওয়াসকু বলে যার অর্থ 'জাপানের খাবার' এগুলি স্বাস্থকর ও সুস্বাদু হিসাবে পৃথিবী খ্যাত ও 'ইউনেস্কো কালচারাল হেরিটেজ অফ হিউম্যানিটি' হিসাবে সীকৃতি পেয়েছে। এগুলি থেকে আমাদের দেশে 'ইনস্ট্যান্ট নুড্ল ' এর আমদানি হয়।
অটোমোবাইল --
ইয়ামাহা , টয়োটা , ইসুজু,হোন্ডা ,কাওয়াসাকি,সুজুকি, মাজদা, এগুলি বিখ্যাত গাড়ি নির্মাণ সংস্থা যা সারা বিশ্বে বিখ্যাত। গত ১০ বছরে জাপানের গাড়ি নির্মাণ প্রায় ১০ গুন্ বেড়েছে।
শিশুদের থেকে বৃদ্ধ বেশি --
জাপান সম্পর্কে একটি দুক্ষজনক তথ্য হলো এখানে শিশুর জন্ম নিয়ে খুব সমস্যা। এখানকার বর্তমান বাসিন্দাদের কাছে পরিবারের জন্য সময় নেই। তাই বর্তমানে শিশুদের থেকে বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি।
এবং অবাক করা বিষয় শিশুদের থেকে বৃদ্ধদের ডাইপার বেশি বিক্রি হয়।
জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপে পৃথিবীর সবচে বেশি আয়ুসম্পন্ন মানুষরা থাকে যার মধ্যে দুজন ১১৭ ও ১১৬ বছর বয়সী।
পৃথিবীর সবচেয়ে কম অপরাধের ঘটনা --
জাপান পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান আপনার যদি অপরাধ জগতে ভয় থাকে তবে আপনি জাপানে চলে আসুন। এখানে কিছু সবচেয়ে বেশি ঘটা অপরাধের মধ্যে হোলো - সাইকেল বা ছাতা চুরি।
অনেকসময় ই এখানে লোকেদের ব্যাগ খোলা রেখে যাতায়ত করতে দেখবেন বা তাদের ঘরে তালা দেয়ার বা সাইকেলে তালা দিতে দেখা যায়না - জাপান এতটাই নিরাপদ।
-- আপনি নিশ্চই জানেন জাপান একটি দ্বীপকেন্দ্রিক দেশ কিন্তু জানেন জাপানে প্রায় ৬৮০০ এর বেশি দ্বীপ আছে ? সবচেয়ে বড়ো চারটি দ্বীপ হলো হোনশু , কিউশু , হক্কাইডো এবং শিকোকু যা মিলিয়ে জাপানের মোট ভূমির প্রায় ৯৭%!
--পরিষ্কার করা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার বিষয় --
আইন- কানুন জাপানে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং শিশু বয়সের থেকেই এগুলি বাধ্যতামূলক ভাবে শিশুদের সেখান হয়। এই জন্য বেশিরভাগ জাপানি বিদ্যালয়ে শিশুদের বা শিক্ষার্থীদের ই ক্লাসরুম, টয়লেট এবং বিদ্যালয়ের আশেপাশে পরিষ্কার করতে হয় নিয়মিত ভাবে। এভাবে সাফাইকর্মীদের পয়সা দিতে হয়না ফলে খরচ কমে যায় এবং এই পরিষ্কার করার উপর মূল্যায়ন বা নম্বর ও আছে।
এগুলো আমাদের দেশে ভাবতে পারবেন ? এইজন্য আমি এটাকে জাপানের সবচে অবাক করা তথ্য মনে করি।
--- জুতো খুলে রাখা --
অবশ্যই জাপানের সবজায়গাতে বলছিনা তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ করে ঘরে ঢোকার আগে , 'তাতামি' নামক মাদুর বা ম্যাট দেখলে সেখানে জুতো খুলে রাখতে হয়।
-- ঝুকে অভিবাদন জানানো --
জাপানে অনেক রকমের ঝুকে অভ্যর্থনা বা অভিবাদন বা ক্ষমাপ্রার্থনা জানানোর পদ্ধতি আছে এক একটি এক এক রকমের পরিস্থিতির উপর করা হয় - তবে জাপানিজরা বোঝে যে কোনো বিদেশিদের পক্ষে এগুলি সঠিক ভাবে করা সম্ভব নয় , মাথা থেকে কোমর অবধি প্রতিটি ঝোঁকে এক এক রকম অর্থ আছে , তবে যাই হোক কাউকে অভিবাদন করতে বা অভ্যর্থনা করতে অন্তত ঝুকে সম্মান দেখানো উচিত। সাধরণত যতটা বেশি সময় নিয়ে ও নিচু হয়ে ঝোকা হয় তত বেশি সম্মান প্রদান করা হয় ধরতে পারেন তবে এর জন্য বেশিবেশি প্রত্যেকবার ঝুকে পড়বেন না এতে আবার আলাদা ব্যাপার হতে পারে !
বখশিস বা টিপ্ --
অন্যান্য দেশের হোটেলের মতো জাপানের ট্রেডিশনাল বা গতানুগতিক হোটেল বা রেস্টুরেন্টে গুলিতে টিপ্ বা বখশিশ নেয়ার প্রচলন নেই।
--- সুরুৎ সুরুৎ করে নুডুল খেতে জাপানে কোনো লজ্জা নেই বরং একে খুব ভালো চোখে দেখা হয় যার অর্থ আপনার নুডুলসটি খুব ভালো লাগছে এবং জাপানি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে দেখবেন যে আপনার বাইরে সবাই কত জোরে জোরে সুরুৎ সুরুৎ আওয়াজ করে নুডুলস খাচ্ছে।
-- গাড়ির দরজা জোরে বন্ধকরা অভ্যাস ? জাপানে একটু খেয়াল রাখবেন।
আপনি অবাক হয়ে যাবেন যে এখানে গাড়ি বা ট্যাক্সির দরজা গুলি নিজে থেকে বন্ধ হওয়ার ব্যবস্থা আছে এবং জোরে বন্ধ করা থেকে সাবধান থাকবেন , আমি একবার ভুল করে অভ্যাসের বসে বন্ধ করে দিয়েছিলাম, যার ফলে ড্রাইভারটি খুব ভয় পেয়ে গেছিলো।
--- জাপানে নিজের বিসনেস কার্ড সবসময় একটু ঝুকে ও দুই হাতে ধরে দিতে হয়।
--- চপস্টিক জাপানে খাবার খাওয়ার একটি অংশ তবে চপস্টিক দিয়ে খাবার ভেঙে বা চিরে না খেয়ে খাবার টি তুলে কামড়ে খাওয়া উচিত। কারণ এর অর্থ অন্যরকম দাঁড়ায় যেমন ভাতের মধ্যে খাড়া ভাবে চপস্টিক দেয়া শেষকৃত্যের একটি প্রথা।
-- মদ্যপান --
জাপানে নিয়ম হচ্ছে পদ অনুসারে ড্রিংক অফার করা যিনি নিচের পদের কর্মী আগে এবং উপরের পদের কর্মী তারপরে ড্রিংক অফার করে তাই কারোর ড্রিংক এর অফার প্রত্যাখ্যান করা এখানে বেশ অপমানজনক আপনার মদ্যপানের অভ্যাস না থাকলে আস্তে আস্তে খাবেন।
--- মোবাইল ফোন --
জাপানের প্রায় সব মোবাইল এ খুব উন্নত প্রযুক্তির এবং আমাদের ছাড়ুন মার্কিন বা ইউরোপিয়ান দেশগুলির থেকেও অন্তত ৫ বছর এগিয়ে। যদিও এখানে বাসে বা ট্রেনে ফোনে কথা বলা ভালো ভাবে দেখা হয় না. নিয়ম হচ্ছে মোবাইল সাইলেন্ট করে বাস বা ট্রেনে ওঠা যদি জরুরি দরকার হয় তবে যতটা সম্ভব কম শব্দ করে আস্তে কথা বলা যেতে পারে।
-- লাইন দেখলে ভাববেননা আমাদের দেশের মতো কিছু বিনামূল্যে বা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে , আসলে জাপানিরা সব ক্ষেত্রেই খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ তাই যদি 'বাকা গাইজিন' বা মূর্খ বিদেশী কথাটি না শুনতে চান তবে ধৈর্য ধরে লাইন এ থাকবেন আগে বাড়িয়ে এগিয়ে যাবেন না।
-- যদি দেখেন সুট - টাই পরে রাস্তায় কেউ ব্রিফকেসে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে তবে অবাক হবেননা হয়তো শেষ ট্রেন মিস করেছে, এটা জাপানে সাধারণ ব্যাপার।
-- সাক্ষরতার হার জাপানে সবচেয়ে বেশি - ১০০% ওখানে জুনিয়র থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
--- জাপানিজ মহিলাদের কালো দাঁত -
জাপানে প্রাচীন যুগ থেকে 'ওহাগুরো ' বা দাঁত কালো করা মহিলাদের মধ্যে প্রচলন ছিল। বিশেষ করে বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে। এই প্রচলনের কারণে তাদের আরো আকর্ষণীয় করার সাথে দাঁতের সমস্যা ও ক্ষয় দূর করবে এমন ধারণা ছিল. অনেক রকম জিনিস যেমন আঠা , কালি ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো। এই প্রথাকে ১৯ শতকে নিষিদ্ধ করা হয় , জাপানকে আরো উন্নত ও অন্যান্য দেশের কাছে এই সভ্যতাকে আকর্ষণীয় ও ভালো করে তোলার জন্য।
-- পশ্চিমা দেশগুলি তে অনেক সময় এ মানুষকে হাটতে হাটতে খাবার খেতে বা কোল্ডড্রিঙ্কস/কফি পান করতে দেখা যায় কিন্তু জাপানে হাটতে হাটতে খাওয়া কে খুব ই অভদ্র আচরণ ও নিচু মানসিকতা বা নিম্ন বর্গের আচরণ ধরা হয়। খুব দরকার হলে তারা ভেন্ডিং মেসিনের পাশে দাঁড়িয়ে খেয়ে নেয়.
---সুমো জাপানের জাতীয় খেলা হলেও সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো বেসবল খেলা যা মেজি শাসনের সময় প্রচলিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান সৈন্যদের প্রচুর মাত্রায় উপস্থিতির প্রভাবে।
-- চা জাপান সংস্কৃতির একটি অংশ যদিও এই দেশে উচ্চ গুণসম্পন্ন জ্যামাইকান কফি খুব জনপ্রিয়। জামাইকার রপ্তানিকৃত 'ব্লু মাউন্টেন ' কফির প্রায় ৭০% জাপানে যায়।
-- জাপানি রেস্টুরেন্ট গুলো প্রায় এ ওশিবোরি নাম ভিজে তোয়ালে খদ্দের দের দেয় খাবার খাবার আগে যাতে তারা হাত মুছতে পারে। তোয়ালে গরম না ঠান্ডা থাকবে এটা নির্ভর করে খাবার কোন সময় দেয়া হচ্ছে। খালি এটা দিয়ে মুখ মুছবেন না বা সারাক্ষন ব্যবহার করবেন না।
---- জাপানে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫০০ এর বেশি ভূমিকম্প হয়ে থাকে। সৌভাগ্যবশত বেশিরভাগই ছোটোখাটো কিন্তু প্রতি বছর কিছু বড়ো ভূমিকম্পও হয় যা ৮ রিখটার স্কেলের বেশি হয়ে থাকে।
---জাপানে অন্যান্য দেশের থেকে লোকে বেশিক্ষন ও বেশিদিন কাজ করে। তাই অনেক অফিসেই কর্মীদের জন্য কাজের মাঝে পাওয়ার ন্যাপ বা ঘুমানোর ব্যবস্থা আছে। এখানে এটা খুব ই সাধারণ ব্যাপার।
--- জাপানে ফল কে খুব ভালো উপহার হিসাবে দেখা হয় '
--- বেশিরভাগ জাপানের মানুষদের কাজে যাওয়ার আগে রাঁন্নার সময় থাকে না। তাই জাপানে বেশিরভাগ মানুষই রান্না খুব কম করে এবং বাইরে কিনে খায়। এটা খুব এ সাধারণ ব্যাপার।
--জাপানে ট্যাটু বা উল্কিকে খুব ই নোংরা ধরা হয় এবং সাজের জন্য নয় বরং অপরাধ ও গ্যাং এর সাথে সম্পর্কিত ভাবে দেখা হয়। এবং ট্যাটু নিয়ে আপনি সুইমিং পুলএ নামতে পারবেন না। কারণ এতে জল অপবিত্র হবে ধরা হয়। সৌভাগ্যবশত এখন চামড়ার রঙের একপ্রকার ব্যান্ড এড পাওয়া যায় যা দিয়ে ঢেকে স্নান করার ব্যাবস্থা আছে এবং এখন জাপান আস্তে আস্তে পাল্টাচ্ছে এবং বিদেশিদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
-- বাথরুমে ঢোকার আগে একধরণের স্লিপার এখানে পরে ঢোকার রেওয়াজ আছে।
--- রসায়নবিদ্যা , ওষুধ ও ফিজিক্স বিভাগে জাপানের ১৮ জন নোবেল পুরস্কার প্রাপক আছে..
--জাপানিজ ট্রেন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সময়নিষ্ঠ। এর গড় ডিলে বা দেরি হয় ১৮ সেকেন্ড এবং কোনো কারণে বেশি দেরি হলে আপনি তাদের থেকে অফিসের জন্য একটি ক্ষমাপ্রার্থী চিঠি পেয়ে যাবেন।
-- রোনাল্ড ম্যাক ডোনাল্ডকে জাপানে ডোনাল্ড ম্যাক ডোনাল্ড বলা হয় কারণ জাপানিজরা স্পষ্ট 'র ' উচ্চারণ করতে পারে না।
-- অনেকসময় জাপানের ট্রেনগুলিতে খুবই ভিড় হয়ে যায় তাই জাপান শুধু রেলওয়ে যাত্রীদের ঠেলে ঢোকানোর জন্য আলাদা কর্মী নিযুক্ত করে ।
--আপনি যদি জাপানে ট্রেনের সামনে আত্মহত্যা করেন তবে আপনার পরিবারকে এই বিঘ্নের জন্য জরিমানা করা হবে.
--জাপানে 'ক্রাইং সুমো বলে এক প্রতিযোগিতা হয় যেখানে কুস্তিগিরদের মধ্যে যে আগে বাচ্চাকে কাঁদতে পারবে সে বিজয়ী হবে..
--জাপানে বাইরের লোক সবচেয়ে কম এখানে প্রায় ৯৮% জনসংখ্যা বংশগতভাবে জাপানিজ।
--- জাপানের টোকিও বসবাসের জন্য পৃথিবীর দ্বিতীয় সবচেয়ে ব্যায়বহুল শহর।
এশিয়ান দেশগুলিতে বিশেষ করে আমাদের দেশে "karaoke" বা কারোকে গায়করা খুব জনপ্রিয় কিন্তু এই শব্দটি আসলে জাপানি শব্দ 'কারা ' যার অর্থ খালি ও 'ওকে ' যার অর্থ অর্কেস্ট্রা একসাথে করলে মানে বোঝায় রেকর্ড করা মিউজিক বা ছন্দের সাথে গান গাওয়া বা কণ্ঠ দেয়া।
ইকেবানা --
জাপানিজ ফুল সাজানোর একটি শিল্প হলো ইকেবানা। অন্য কোনো দেশে এই ফুল সাজানোকে শিল্প হিসাবে দেখা হয়না কিন্তু জাপানে এটি বেশিরভাগ বাসিন্দা মেনে চলে। ইকেবানা কেবল পাত্রে ফুল গুছিয়ে রাখার থেকে অনেক বেশি কিছু। ফুল সাজানোর বিভিন্ন পদ্ধতি আছে প্রতিটি ধাপে ধাপে যা আমাদের প্রকৃতির সাথে সম্পর্ক ও মূল্য ব্যক্ত করে এবং জাপানিজরা একে খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখে।
ওয়াসকু --
ঐতিহ্যবাহি জাপানিজ খাদ্যগুলিকে ওয়াসকু বলে যার অর্থ 'জাপানের খাবার' এগুলি স্বাস্থকর ও সুস্বাদু হিসাবে পৃথিবী খ্যাত ও 'ইউনেস্কো কালচারাল হেরিটেজ অফ হিউম্যানিটি' হিসাবে সীকৃতি পেয়েছে। এগুলি থেকে আমাদের দেশে 'ইনস্ট্যান্ট নুড্ল ' এর আমদানি হয়।
অটোমোবাইল --
ইয়ামাহা , টয়োটা , ইসুজু,হোন্ডা ,কাওয়াসাকি,সুজুকি, মাজদা, এগুলি বিখ্যাত গাড়ি নির্মাণ সংস্থা যা সারা বিশ্বে বিখ্যাত। গত ১০ বছরে জাপানের গাড়ি নির্মাণ প্রায় ১০ গুন্ বেড়েছে।
শিশুদের থেকে বৃদ্ধ বেশি --
জাপান সম্পর্কে একটি দুক্ষজনক তথ্য হলো এখানে শিশুর জন্ম নিয়ে খুব সমস্যা। এখানকার বর্তমান বাসিন্দাদের কাছে পরিবারের জন্য সময় নেই। তাই বর্তমানে শিশুদের থেকে বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি।
এবং অবাক করা বিষয় শিশুদের থেকে বৃদ্ধদের ডাইপার বেশি বিক্রি হয়।
জাপানের ওকিনাওয়া দ্বীপে পৃথিবীর সবচে বেশি আয়ুসম্পন্ন মানুষরা থাকে যার মধ্যে দুজন ১১৭ ও ১১৬ বছর বয়সী।
পৃথিবীর সবচেয়ে কম অপরাধের ঘটনা --
জাপান পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান আপনার যদি অপরাধ জগতে ভয় থাকে তবে আপনি জাপানে চলে আসুন। এখানে কিছু সবচেয়ে বেশি ঘটা অপরাধের মধ্যে হোলো - সাইকেল বা ছাতা চুরি।
অনেকসময় ই এখানে লোকেদের ব্যাগ খোলা রেখে যাতায়ত করতে দেখবেন বা তাদের ঘরে তালা দেয়ার বা সাইকেলে তালা দিতে দেখা যায়না - জাপান এতটাই নিরাপদ।
-- আপনি নিশ্চই জানেন জাপান একটি দ্বীপকেন্দ্রিক দেশ কিন্তু জানেন জাপানে প্রায় ৬৮০০ এর বেশি দ্বীপ আছে ? সবচেয়ে বড়ো চারটি দ্বীপ হলো হোনশু , কিউশু , হক্কাইডো এবং শিকোকু যা মিলিয়ে জাপানের মোট ভূমির প্রায় ৯৭%!
--পরিষ্কার করা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার বিষয় --
আইন- কানুন জাপানে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং শিশু বয়সের থেকেই এগুলি বাধ্যতামূলক ভাবে শিশুদের সেখান হয়। এই জন্য বেশিরভাগ জাপানি বিদ্যালয়ে শিশুদের বা শিক্ষার্থীদের ই ক্লাসরুম, টয়লেট এবং বিদ্যালয়ের আশেপাশে পরিষ্কার করতে হয় নিয়মিত ভাবে। এভাবে সাফাইকর্মীদের পয়সা দিতে হয়না ফলে খরচ কমে যায় এবং এই পরিষ্কার করার উপর মূল্যায়ন বা নম্বর ও আছে।
এগুলো আমাদের দেশে ভাবতে পারবেন ? এইজন্য আমি এটাকে জাপানের সবচে অবাক করা তথ্য মনে করি।
--- জুতো খুলে রাখা --
অবশ্যই জাপানের সবজায়গাতে বলছিনা তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ করে ঘরে ঢোকার আগে , 'তাতামি' নামক মাদুর বা ম্যাট দেখলে সেখানে জুতো খুলে রাখতে হয়।
-- ঝুকে অভিবাদন জানানো --
জাপানে অনেক রকমের ঝুকে অভ্যর্থনা বা অভিবাদন বা ক্ষমাপ্রার্থনা জানানোর পদ্ধতি আছে এক একটি এক এক রকমের পরিস্থিতির উপর করা হয় - তবে জাপানিজরা বোঝে যে কোনো বিদেশিদের পক্ষে এগুলি সঠিক ভাবে করা সম্ভব নয় , মাথা থেকে কোমর অবধি প্রতিটি ঝোঁকে এক এক রকম অর্থ আছে , তবে যাই হোক কাউকে অভিবাদন করতে বা অভ্যর্থনা করতে অন্তত ঝুকে সম্মান দেখানো উচিত। সাধরণত যতটা বেশি সময় নিয়ে ও নিচু হয়ে ঝোকা হয় তত বেশি সম্মান প্রদান করা হয় ধরতে পারেন তবে এর জন্য বেশিবেশি প্রত্যেকবার ঝুকে পড়বেন না এতে আবার আলাদা ব্যাপার হতে পারে !
বখশিস বা টিপ্ --
অন্যান্য দেশের হোটেলের মতো জাপানের ট্রেডিশনাল বা গতানুগতিক হোটেল বা রেস্টুরেন্টে গুলিতে টিপ্ বা বখশিশ নেয়ার প্রচলন নেই।
--- সুরুৎ সুরুৎ করে নুডুল খেতে জাপানে কোনো লজ্জা নেই বরং একে খুব ভালো চোখে দেখা হয় যার অর্থ আপনার নুডুলসটি খুব ভালো লাগছে এবং জাপানি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে দেখবেন যে আপনার বাইরে সবাই কত জোরে জোরে সুরুৎ সুরুৎ আওয়াজ করে নুডুলস খাচ্ছে।
-- গাড়ির দরজা জোরে বন্ধকরা অভ্যাস ? জাপানে একটু খেয়াল রাখবেন।
আপনি অবাক হয়ে যাবেন যে এখানে গাড়ি বা ট্যাক্সির দরজা গুলি নিজে থেকে বন্ধ হওয়ার ব্যবস্থা আছে এবং জোরে বন্ধ করা থেকে সাবধান থাকবেন , আমি একবার ভুল করে অভ্যাসের বসে বন্ধ করে দিয়েছিলাম, যার ফলে ড্রাইভারটি খুব ভয় পেয়ে গেছিলো।
--- জাপানে নিজের বিসনেস কার্ড সবসময় একটু ঝুকে ও দুই হাতে ধরে দিতে হয়।
--- চপস্টিক জাপানে খাবার খাওয়ার একটি অংশ তবে চপস্টিক দিয়ে খাবার ভেঙে বা চিরে না খেয়ে খাবার টি তুলে কামড়ে খাওয়া উচিত। কারণ এর অর্থ অন্যরকম দাঁড়ায় যেমন ভাতের মধ্যে খাড়া ভাবে চপস্টিক দেয়া শেষকৃত্যের একটি প্রথা।
-- মদ্যপান --
জাপানে নিয়ম হচ্ছে পদ অনুসারে ড্রিংক অফার করা যিনি নিচের পদের কর্মী আগে এবং উপরের পদের কর্মী তারপরে ড্রিংক অফার করে তাই কারোর ড্রিংক এর অফার প্রত্যাখ্যান করা এখানে বেশ অপমানজনক আপনার মদ্যপানের অভ্যাস না থাকলে আস্তে আস্তে খাবেন।
--- মোবাইল ফোন --
জাপানের প্রায় সব মোবাইল এ খুব উন্নত প্রযুক্তির এবং আমাদের ছাড়ুন মার্কিন বা ইউরোপিয়ান দেশগুলির থেকেও অন্তত ৫ বছর এগিয়ে। যদিও এখানে বাসে বা ট্রেনে ফোনে কথা বলা ভালো ভাবে দেখা হয় না. নিয়ম হচ্ছে মোবাইল সাইলেন্ট করে বাস বা ট্রেনে ওঠা যদি জরুরি দরকার হয় তবে যতটা সম্ভব কম শব্দ করে আস্তে কথা বলা যেতে পারে।
-- লাইন দেখলে ভাববেননা আমাদের দেশের মতো কিছু বিনামূল্যে বা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে , আসলে জাপানিরা সব ক্ষেত্রেই খুব শৃঙ্খলাবদ্ধ তাই যদি 'বাকা গাইজিন' বা মূর্খ বিদেশী কথাটি না শুনতে চান তবে ধৈর্য ধরে লাইন এ থাকবেন আগে বাড়িয়ে এগিয়ে যাবেন না।
-- যদি দেখেন সুট - টাই পরে রাস্তায় কেউ ব্রিফকেসে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে তবে অবাক হবেননা হয়তো শেষ ট্রেন মিস করেছে, এটা জাপানে সাধারণ ব্যাপার।
-- সাক্ষরতার হার জাপানে সবচেয়ে বেশি - ১০০% ওখানে জুনিয়র থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক।
--- জাপানিজ মহিলাদের কালো দাঁত -
জাপানে প্রাচীন যুগ থেকে 'ওহাগুরো ' বা দাঁত কালো করা মহিলাদের মধ্যে প্রচলন ছিল। বিশেষ করে বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে। এই প্রচলনের কারণে তাদের আরো আকর্ষণীয় করার সাথে দাঁতের সমস্যা ও ক্ষয় দূর করবে এমন ধারণা ছিল. অনেক রকম জিনিস যেমন আঠা , কালি ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো। এই প্রথাকে ১৯ শতকে নিষিদ্ধ করা হয় , জাপানকে আরো উন্নত ও অন্যান্য দেশের কাছে এই সভ্যতাকে আকর্ষণীয় ও ভালো করে তোলার জন্য।
-- পশ্চিমা দেশগুলি তে অনেক সময় এ মানুষকে হাটতে হাটতে খাবার খেতে বা কোল্ডড্রিঙ্কস/কফি পান করতে দেখা যায় কিন্তু জাপানে হাটতে হাটতে খাওয়া কে খুব ই অভদ্র আচরণ ও নিচু মানসিকতা বা নিম্ন বর্গের আচরণ ধরা হয়। খুব দরকার হলে তারা ভেন্ডিং মেসিনের পাশে দাঁড়িয়ে খেয়ে নেয়.
---সুমো জাপানের জাতীয় খেলা হলেও সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো বেসবল খেলা যা মেজি শাসনের সময় প্রচলিত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকান সৈন্যদের প্রচুর মাত্রায় উপস্থিতির প্রভাবে।
-- চা জাপান সংস্কৃতির একটি অংশ যদিও এই দেশে উচ্চ গুণসম্পন্ন জ্যামাইকান কফি খুব জনপ্রিয়। জামাইকার রপ্তানিকৃত 'ব্লু মাউন্টেন ' কফির প্রায় ৭০% জাপানে যায়।
-- জাপানি রেস্টুরেন্ট গুলো প্রায় এ ওশিবোরি নাম ভিজে তোয়ালে খদ্দের দের দেয় খাবার খাবার আগে যাতে তারা হাত মুছতে পারে। তোয়ালে গরম না ঠান্ডা থাকবে এটা নির্ভর করে খাবার কোন সময় দেয়া হচ্ছে। খালি এটা দিয়ে মুখ মুছবেন না বা সারাক্ষন ব্যবহার করবেন না।
---- জাপানে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫০০ এর বেশি ভূমিকম্প হয়ে থাকে। সৌভাগ্যবশত বেশিরভাগই ছোটোখাটো কিন্তু প্রতি বছর কিছু বড়ো ভূমিকম্পও হয় যা ৮ রিখটার স্কেলের বেশি হয়ে থাকে।
---জাপানে অন্যান্য দেশের থেকে লোকে বেশিক্ষন ও বেশিদিন কাজ করে। তাই অনেক অফিসেই কর্মীদের জন্য কাজের মাঝে পাওয়ার ন্যাপ বা ঘুমানোর ব্যবস্থা আছে। এখানে এটা খুব ই সাধারণ ব্যাপার।
--- জাপানে ফল কে খুব ভালো উপহার হিসাবে দেখা হয় '
--- বেশিরভাগ জাপানের মানুষদের কাজে যাওয়ার আগে রাঁন্নার সময় থাকে না। তাই জাপানে বেশিরভাগ মানুষই রান্না খুব কম করে এবং বাইরে কিনে খায়। এটা খুব এ সাধারণ ব্যাপার।
--জাপানে ট্যাটু বা উল্কিকে খুব ই নোংরা ধরা হয় এবং সাজের জন্য নয় বরং অপরাধ ও গ্যাং এর সাথে সম্পর্কিত ভাবে দেখা হয়। এবং ট্যাটু নিয়ে আপনি সুইমিং পুলএ নামতে পারবেন না। কারণ এতে জল অপবিত্র হবে ধরা হয়। সৌভাগ্যবশত এখন চামড়ার রঙের একপ্রকার ব্যান্ড এড পাওয়া যায় যা দিয়ে ঢেকে স্নান করার ব্যাবস্থা আছে এবং এখন জাপান আস্তে আস্তে পাল্টাচ্ছে এবং বিদেশিদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
-- বাথরুমে ঢোকার আগে একধরণের স্লিপার এখানে পরে ঢোকার রেওয়াজ আছে।
--- রসায়নবিদ্যা , ওষুধ ও ফিজিক্স বিভাগে জাপানের ১৮ জন নোবেল পুরস্কার প্রাপক আছে..
--জাপানিজ ট্রেন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সময়নিষ্ঠ। এর গড় ডিলে বা দেরি হয় ১৮ সেকেন্ড এবং কোনো কারণে বেশি দেরি হলে আপনি তাদের থেকে অফিসের জন্য একটি ক্ষমাপ্রার্থী চিঠি পেয়ে যাবেন।
-- রোনাল্ড ম্যাক ডোনাল্ডকে জাপানে ডোনাল্ড ম্যাক ডোনাল্ড বলা হয় কারণ জাপানিজরা স্পষ্ট 'র ' উচ্চারণ করতে পারে না।
-- অনেকসময় জাপানের ট্রেনগুলিতে খুবই ভিড় হয়ে যায় তাই জাপান শুধু রেলওয়ে যাত্রীদের ঠেলে ঢোকানোর জন্য আলাদা কর্মী নিযুক্ত করে ।
--আপনি যদি জাপানে ট্রেনের সামনে আত্মহত্যা করেন তবে আপনার পরিবারকে এই বিঘ্নের জন্য জরিমানা করা হবে.
--জাপানে 'ক্রাইং সুমো বলে এক প্রতিযোগিতা হয় যেখানে কুস্তিগিরদের মধ্যে যে আগে বাচ্চাকে কাঁদতে পারবে সে বিজয়ী হবে..
--জাপানে বাইরের লোক সবচেয়ে কম এখানে প্রায় ৯৮% জনসংখ্যা বংশগতভাবে জাপানিজ।
--- জাপানের টোকিও বসবাসের জন্য পৃথিবীর দ্বিতীয় সবচেয়ে ব্যায়বহুল শহর।
No comments:
Post a Comment