গরমকাল আসছে সাথে ঘামের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যদিও ঘাম খুবই স্বাভাবিক এক প্রক্রিয়া যা গরম কালে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। শরীর থেকে বেরোনো ঘাম কিন্তু সব সময় দুর্গন্ধ পূর্ণ হয়না, আসলে কিছু ব্যাকটেরিয়া আপনার শরীরের কিছু অংশে বংশবিস্তার করে এবং দ্রুত তাদের সংখ্যা বাড়াতে থাকে এরপর আপনার চামড়ার উপরের কেরাটিন নামক প্রোটিন ভাঙ্গার সময় এই দুর্গন্ধের উৎপত্তি হয়। সাধারণত বগলে সবচেয়ে বেশি এর প্রভাব দেখা যায় এছাড়াও যৌনাঙ্গের আশেপাশে, থাই এর উপরের অংশ পায়ের তলা এই সকল স্থানেও ব্যাকটেরিয়ার কারণে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
আপনার কখনো কি মনে হয় যে আপনার গায়ের গন্ধ ততটা ভালো নয়?তাহলে পুরোপুরি গরম আসার আগে এখনই কিছু নিয়ম মেনে চলা শুরু করে দিতে পারেন--
১. রোজ দিনে অন্তত একবার করে স্নান করুন এর ফলে চামড়ায় থাকা ব্যাকটেরিয়া গুলি এবং জমে থাকা ঘাম ধুয়ে যাবে যদি আবহাওয়া গরম হয় তাহলে একবারের বেশি স্নান করুন।
২. অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করুন।
৩. ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করুন; ডিওড্রেন্ট গুলিতে অ্যালকোহল থাকে যা ব্যাকটেরিয়া নিধন করতে সাহায্য করে এবং চামড়াকে এসিডিক করে দেয় ফলে যা ব্যাকটেরিয়াদের বাঁচার জন্য অনুপযোগী হয়ে যায়। এছাড়া দুর্গন্ধ দূর করে এটি দিনে দুবার ব্যবহার করতে পারেন।
৩. Anti-perspirant বা রোল অন ব্যবহার করতে পারেন, এগুলিতে অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড থাকে এবং অনেক সময় কিছু পরিমাণে ডিওড্রেন্ট থাকে এরা ঘাম বেরোনো ব্লক করে দেয় এরফলে কম ঘাম বেরোয়। তবে স্নান করার পর বা বেরোনোর সময় এগুলি দিলে কতটা কার্যকরী দাড়ায় না কারণ ঘামে এগুলো ধুয়ে যায় তাই আপনি রাত্তিরে শোয়ার আগে ব্যবহার করতে পারেন যাতে যখন আপনি ঘুমিয়ে থাকবেন তখন ঘাম হবে না এবং এগুলি আপনার চামড়ার ওপর নিজেদের কাজ করার সুযোগ পাবে, এরপর দরকার হলে দিনে আরও একবার অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট বা সাধারণ ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করতে পারেন। তবে আপনাকে সতর্ক করে দিই কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এই অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট এর সাথে ব্রেস্ট ক্যান্সার বা প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে এবং যেহেতু শরীর থেকে ঘাম বেরোনো কমে যায় ফলে তাপমাত্রা জনিত কিছু সমস্যা দেখা যেতে পারে।
৪.যতটা পারুন শুকনো থাকার চেষ্টা করুন কারণ ব্যাকটেরিয়া শুকনো জায়গায় সহজে বংশবৃদ্ধি করতে পারে না।
৫. যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে ব্যায়াম করার জন্য আপনার সবচেয়ে বেশি ঘাম এবং দুর্গন্ধ হচ্ছে তাহলে অবশ্যই আপনার ব্যায়াম করার জন্য যে কাপড়গুলি পড়েন সেগুলিকে নিয়মিত পরিষ্কার করুন কারণ হতে পারে এই কাপড়গুলি ব্যাকটেরিয়া তে ভরে গেছে ।
৬. নিজের খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করুন তেল-ঝাল-মসলা জাতীয় খাবার কম খান এবং পিয়াজ রসুন এগুলি বেশি খেলে অনেক সময় ঘামের মাধ্যমে এদের গন্ধ বেরিয়ে আসে।
৭.আপনার যদি অতিরিক্ত ঘাম অথবা হাইপারহাইড্রোসিস এর সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন এবং তার কথামত ট্রিটমেন্ট করেন।
৮. নিয়মিতভাবে বগলের চুল সেভ করতে হবে কারণ দেখা গেছে এই সকল অঞ্চলে চুল থাকলে সহজে ঘাম উবে যেতে পারে না যা ব্যাকটেরিয়া কে প্রোটিন ব্রেকডাউন করতে আরো সময় দেয় তাই নিয়মিত বগলের তলায় চুল পরিষ্কার পরিষ্কার করবেন অর্থাৎ সেভ করবেন।
৯. দিনে অন্তত একবার গরম জলে পা দুটি পরিষ্কার করবেন আঙ্গুলের মাঝখান গুলো পরিষ্কার করতে ভুলবেন না ।
১০. পায়ে দুর্গন্ধের সমস্যা থাকলে অবশ্যই ফাইবার এবং ফুলের তৈরি মৌজা পড়ার চেষ্টা করবেন এবং প্রতিদিন পরিষ্কার মোজা পরার চেষ্টা করবেন।
১১. প্লাস্টিক লাইনিং করা জুতো বেশি সময় ধরে পড়বেন না চেষ্টা করবেন চামড়া লাইনিং এর জুতো পড়তে কারণ চামড়ার জুতো থেকে সহজে ঘাম উবে যেতে পারে । চেষ্টা করবেন একটা জুতো যাতে দুদিন না পড়তে হয় কারণ একটা রাত্তিরে জুতো পুরোপুরি শুকাতে পারে না।
১২. খরখরে ঝামাপাথর বা পিউমিক স্টোন দিয়ে পা ধোয়ার সময় ঘষে দেবেন কারণ ব্যাকটেরিয়া চামড়ার মৃতকোষ গুলির ওপর নির্ভর করে বৃদ্ধি পায় ফলে এই মৃত চামড়া স্তর ঘষে তুলে দিলে পা পরিষ্কার থাকবে ।
১৩. কাজের মাঝে সময় পেলে জুতো খুলে খালি পায়ে থাকার চেষ্টা করবেন বা দিনে কিছু সময় খালি পায়ে থাকার চেষ্টা করবেন ।
১৪.সুতি বা সিল্কের জামা কাপড় পড়ার চেষ্টা করবেন ।
১৫. নিয়মিত প্রচুর পরিমাণে জল খান, দরকার হলে সঙ্গে সবসময় বোতল রাখুন । পর্যাপ্ত পরিমাণে জল গায়ের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে।
১৬. স্নান করতে যাওয়ার আগে বগলের তলায় কিছুক্ষণ লেবুর রস এবং বেকিং সোডা মিশিয়ে লাগিয়ে রাখতে পারেন এর ফলে লেবুর এসিডিটি আপনার চামড়ার পিএইচ বাড়িয়ে দেয় যার ফলে সেখানে ব্যাকটেরিয়ার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কমে যায় ।
কিছু কিছু মেডিক্যাল সমস্যা অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে যেমন থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের, লিভারের, কিডনির অথবা ডায়াবেটিসের সমস্যা।
যদি নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো দেখতে পারেন তাহলে একবার ডাক্তার কে দেখিয়ে নেওয়া উচিত-
- রাত্তিরে আপনি ঘামতে শুরু করেন।
- কোন কারন ছাড়াই আপনি স্বাভাবিক যেরকম ঘামতে তার থেকে অনেক বেশি ঘামতে শুরু করেছেন।
- আপনার গা দিয়ে ঠান্ডা ঘাম নির্গত হচ্ছে।
- অতিরিক্ত ঘাম আপনার নিত্যদিনের কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।