1950 থেকে 1960 সালের মধ্যে রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে মহাকাশ অভিযানের প্রতিযোগিতা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুই শক্তিশালী দেশ, কে আগে সেই পৃথিবীর বাইরে যেখানে মানুষের পা পড়েনি সেখানে প্রথম মানুষ কে পাঠাবে তার জন্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবহার করার চেষ্টা করছিল। একসময় অক্টোবর 1960 সালে একটি সোভিয়েত রকেট ওড়ার সময় বিস্ফোরিত হয় এবং নিকটবর্তী প্রায় দেড়শ মানুষ তাতে মারা যায় এবং একজন মহাকাশ যাত্রী তার স্পেস ক্যাপসুল এর ভেতর আগুন ধরে মারা যায়, এরপরেও 12 এপ্রিল 1961 সালে সোভিয়েত গর্বিতভাবে ঘোষণা করে যে তারা প্রথম মানুষ কে মহাকাশে পাঠিয়েছে। 27 বছর বয়সী মহাকাশযাত্রী ইউরি গ্যাগারিন পৃথিবীর চারদিকে ভস্টক ১ প্রদক্ষিণ করে প্রথম মানুষ হিসাবে সংবাদমাধ্যম এবং বিনোদন জগতের শীর্ষস্থানে আসেন। যদিও এর আগে অনেক গুজব বা তথ্য ভেসে বেরিয়েছিল যে এর আগেও আরো অনেকে উপরে গিয়েছিল যদিও তাদের ভবিতব্য কি হয়েছিল তা সম্পর্কে জানা যায়নি তারা ইতিহাসের অন্ধকার গর্তে তলিয়ে গেছে যা সযত্নে গোপন করা হয়েছিল।
বহুকাল ধরেই বলা হয়ে আসছে যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ইউরি গ্যাগারিন এর আগেও অনেকগুলো ফ্লাইট মহাকাশে পাঠিয়েছিল। এমনকি গ্যাগারিনের মহাকাশ যাত্রার আগেও একটা মহাকাশযান সাফল্যের সাথে পাঠানো হয়েছিল যেটা একটি গণমাধ্যম কভার করছিল কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সেই ঘটনাটি সম্পর্কে কোন তথ্য আর খুঁজে পাওয়া যায় না এবং তাকে কোনদিনও টিভিতে দেখানো হয়নি। যে গণমাধ্যমটি প্রথম সেই মনুষ্য অভিযান প্রচারের দায়িত্ব নিয়েছিল তাদের তথ্য অনুযায়ী অভিযানটি সাফল্য লাভ করেছিল এবং পাইলট ছিলেন মহাকাশ যাত্রী 'ভ্লাদিমির লিউসিন'। এই ঘটনার কথা জানত আরো কিছু সাংবাদিক যাদের মধ্যে বিখ্যাত ছিল ব্রিটিশ 'ডেইলি ওয়ার্কারের' ডেনিস অগদেন এবং ফ্রেঞ্চ সাংবাদিক এদুয়ার্দ বব্রভাকী।
বেসরকারিভাবে লিউসিন কে প্রথম মহাকাশচারী বলা হলেও তিনি নিজে সম্পূর্ণ নিশ্চুপ ছিলেন। সরকারি মতে তার গাড়ি দুর্ঘটনা হওয়ার কারণে তিনি ছুটিতে ছিলেন।যদিও সোভিয়েত সরকার কখনোই তাকে মহাকাশচারী হিসেবে স্বীকার করেনি এবং বিভিন্ন সময়ে তার সম্পর্কে বিভিন্ন রকম তথ্য দিতে থাকে কখনো বলা হয় তিনি কোমায় আছেন আবার কখনো অন্য কোনো কারণ যদিও প্রকৃত কি চলছে তা সম্পর্কে কারোরই ধারণা ছিল না।
মহাকাশ তাত্ত্বিক আরমান ওবার্থ, যিনি দাবি করেন সোভিয়েত বহু আগে 1958 সালে মানুষকে মহাকাশে পাঠায় কিন্তু সেই মহাকাশযাত্রী মারা যায় এবং গোয়েন্দা সংস্থার কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী এটি ছাড়াও আরো অনেক ব্যর্থ মহাকাশ অভিযান করা হয়। 1959 সালে ওগো নিয়োক নামক খবরের কাগজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যাতে বলা হয় কর্নেল দলগোভ, ইভান কাচুর এবং অ্যালেক্সি গ্রাচো যারা হাই অল্টিটিউড প্যারাসুট জাম্পার ছিলেন তারা হাই অল্টিটিউড মহাকাশযান এবং যন্ত্রপাতি নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সাথে যুক্ত ছিলেন এবং এর ফলে পরবর্তীকালে এদের অনেকেই রহস্যজনকভাবে হয় মারা যায় নয় গায়েব হয়ে যায় তাদের কথা আর কোনদিনও শুনতে পাওয়া যায়নি।
সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘটনা গুলির মধ্যে একটি হলো লেখক 'রবার্ট এ' অভিযোগ করেন, 1960 সালে তাকে সোভিয়েত আর্মির এক কর্তা বলেন যে একজন মানুষকে করাবি স্পুৎনিক 1 এ মহাকাশে পাঠানো হয় কিন্তু যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে তাকে সেই মহাকাশযান ছেড়ে দিতে বাধ্য হতে হয়
এরপর মহাকাশে তার ভবিতব্য কি হয় তা জানা যায়নি সরকার দ্রুত এই ঘটনাটি চাপা দিয়ে দেয় এই বলে যে সেটি মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান ছিল। কিন্তু সত্যিই যদি তাতে কোন মানুষ থেকে থাকে তাহলে সরকারিভাবে সে তো কোনো স্বীকৃতি পায়নি বরং ইতিহাস থেকেও সে মুছে গেছে।
এর মধ্যে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি করেন আখিলে এবং জিওভানি বলে দুই ভাই যারা বেতার নিয়ে উৎসাহী ছিলেন এবং 1957 সাল থেকে সোভিয়েত এবং আমেরিকানদের মহাকাশ তথ্য আদান-প্রদানের উপর নজর রাখছিলেন। তাদের তথ্য অনুযায়ী তারা হাজার হাজার ঘন্টা বিভিন্ন সোভিয়েত এবং আমেরিকান মিশনের উপর তথ্য রেকর্ড করেন। 1960 সালে তারা দাবি করেন তারা এক ধরনের মোর্সকোড পেয়েছেন যার সমাধান করে তারা বুঝেছেন সোভিয়েত এমন কিছু উপরে পাঠাচ্ছে যা তাদের সাথে ক্রমাগত যোগাযোগ রেখে চলেছে এমনকি বেশ কিছু ট্রান্সমিশন প্রমাণ করে যে এগুলি মহাকাশ যাত্রীদের আপৎকালীন ট্রান্সমিশন ছিল যা বিশ্লেষণ করে বোঝা যায় যে এদের মধ্যে কেউ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং কেউ পুড়ে মারা গেছিল এমনকি তাদের কাছে মহিলা ও বিভিন্ন পুরুষের বেতার যোগাযোগের রেকর্ডও আছে যাতে মহিলাটি দগ্ধ হতে হতে তার শেষ এমার্জেন্সি ট্রান্সমিশন পাঠায়। এর থেকে বোঝা যায় গ্যাগগ্রিন প্রথম নন যিনি মহাকাশে গেছিলেন। অ্যাপেলো 11 এর চাঁদে ঐতিহাসিক পদার্পণের আগেই একটি বিতর্কিত তথ্য সামনে আসে যেটি হল সোভিয়েত 1969 সালের জুলাইতে একটি মহাকাশযান চাঁদে পাঠানোর প্রচেষ্টা করেন যদিও সেটি লঞ্চপ্যাড এই বিস্ফোরণ ঘটায় এবং আশেপাশে সকলে মারা যায় যেটি খুব দ্রুত সরকার থেকে ধামাচাপা দেওয়া হয় এবং সরকারি ভাবে বলা হয় এটি মনুষ্যবিহীন পরীক্ষা ছিল।
আরো একটি রহস্যজনক ঘটনা ঘটে, জানা যায় 1969 সালে মহাকাশচারী আন্দ্রেই মিকয়ান এবং অন্যান্য মহাকাশ যাত্রীরা সাফল্যের সাথে সাফল্যের সাথে চাঁদের দিকে পাড়ি দেয় কিন্তু প্রযুক্তিগত ত্রুটি এবং ভুল হিসাবের কারণে তারা গন্তব্যস্থানে দিকে না গিয়ে অন্ধকার মহাকাশে কোথাও হারিয়ে যায়। 2001 সালে সোভিয়েত মহাকাশ গবেষণাগারের এক উচ্চ পদাধিকারী ইঞ্জিনিয়ার 'ইজি এসে' দাবি করেন যে যুথিকা এবং কর দিঘলিয়া এবং এছাড়াও লেডভস্কিক, সাবরিন এবং মৃত কবে নামে আরও কিছু মহাকাশ যাত্রী 1957, 1958 এবং 1959 সালে এভাবেই পৃথিবী থেকে মহাকাশের দিকে গায়েব হয়ে গিয়েছিলেন এগুলি কি সত্যি? সমস্যা হচ্ছে যদি এগুলি কোনভাবে সামনে আসে তবে শীতল যুদ্ধের সময় ইউনাইটেড স্টেট সঙ্গে সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সেই ব্যর্থতা নিয়ে একটি বড় জয় পেত ফলে সোভিয়েত কোনভাবে সেগুলিকে তখন বাইরে আসতে দেয়নি এবং প্রথম সরকারিভাবে মহাকাশচারী গ্যাগারিন যিনি সারাজীবন এগুলি অস্বীকার করে গেছিলেন। একটি রহস্যজনক ঘটনা হল গ্যাগারিন এক সময় দাবি করেন তিনি সেই মহাকাশ যাত্রার সময় মহাকাশে একটি অলৌকিক ঘটনার সম্মুখীন হন তার মহাকাশযান ভস্টক এর যাত্রাকালে দুটি সময় তিনি পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেললেন যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় তিনি বলেছিলেন তিনি জানেন না কী হয়েছিল তিনি যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে গেছিল। পরবর্তীকালে তিনি দাবি করেন সেই সময় তার মনে পড়ে তিনি মহাকাশে তার সামনে এক রহস্যজনক দেহকে ভাসতে দেখেন এবং তার মাথায় একটি কন্ঠ ধ্বনিত হয় যে, 'চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে তুমি পৃথিবীতে ফিরে যাবে।'
এইসব মহাকাশ যাত্রী এবং মহাকাশ যাত্রার কথা কি কোনদিনই প্রকাশ্যে আসবে না? সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্কে এত অন্ধকার দিক থাকলে ইউনাইটেড স্টেটস এর হয়তো এরকমই অনেক তথ্য থাকতে পারে যে তথ্যগুলি হয়তো শীত যুদ্ধকালীন প্রকাশ্যে আনা হয়নি এবং কোন গোপনীয় সুরক্ষিত স্থানে চাপা রেখে দেওয়া হয়েছে অথবা পুড়িয়ে দেয়া হতে পারে। ইতিহাসে এই ঘটনা নতুন নয়। এইভাবে বহু কাল অধ্যায় ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে গেছে এবং হয়তো অন্ধকার যুগ ইতিহাসে বারে বারে এসেছে।
No comments:
Post a Comment