বন্ধুরা আশা করি আপনারা ঠান্ডা যুদ্ধের সময়কার সোভিয়েত ও আমেরিকার চরমতম পর্যায় 'কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস' সম্পর্কে শুনেছেন - যে সময় পুরো পৃথিবী শঙ্কিত হয়ে উঠেছিল। যেকোনো মুহূর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হতে পারে এবং পৃথিবী ধ্বংস শুরু হয়ে যেতে পারে।
আমাদের এইবারের নায়ক ভাসিলি আর্কিপভ এর নাম ঠিক এই সময় উঠে আসে। 1962 সালে এই 'কিউবান মিসাইল ক্রাইসিস' চলাকালীন তিনি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সিদ্ধান্তে তিনি একা হাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ আটকে দিয়েছিলেন। এই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধটি হয়নি একজন কম কথা বলা, ঠান্ডা মাথার শান্ত রাশিয়ান সাবমেরিন অফিসার - যার জন্য আমরা আজ বেঁচে আছি।
1962 সালের 27 অক্টোবর সোভিয়েত সাবমেরিন বি-59 এর 3 কমান্ডার এর মধ্যে একজন ছিলেন ভাসিলি। এই সময় উত্তেজনা চরমে ছিল; একটি আমেরিকান গুপ্তচর প্লেন কিউবার ওপরে গুলি করে নামানো হয় এবং একটি U-2 সোভিয়েত আকাশ সীমানায় হারিয়ে যায়। সোভিয়েত লিডারশিপ থেকে ক্যারিবিয়ান এর কাছে থেমে যাওয়ার আদেশ আসে। কারণ এই সময় আমেরিকানরা কিউবাকে ঘিরে রেখেছিল। এই সাবমেরিনটি আসলে আইসল্যান্ডে গোপনভাবে অস্ত্র-সরঞ্জাম পৌঁছানোর জন্য পাঠানো হয়েছিল। আমেরিকানদের থেকে নিজের অবস্থান লুকানোর জন্য সাবমেরিন ডুবোজাহাজ সমুদ্রের গভীরে অবস্থান করছিল কিন্তু সেটি যথেষ্ট গভীর ছিল না।
ডুবোজাহাজটিকে ইউ এস ফোর্সের 'ইউ এস এস বেল' নামক একটি আমেরিকান ডেস্ট্রয়ার স্পট করে এবং non-lethal ডেপথ চার্জ করে, যার উদ্দেশ্য ছিল সাবমেরিনকে উপরে উঠে আসার জন্য সতর্ক করা। একজন ইন্টেলিজেন্স অফিসার ভাদিন অর্লভ এর মতে, "আমেরিকানরা গ্রেনেডের থেকে একটু শক্তিশালী কিছু দিয়ে আঘাত করছিল অর্থাৎ একপ্রকার 'পার্টিকেল depth bomb', আমরা ভেবেছিলাম এটা শেষের শুরু।"
তবে আমেরিকানরা এটি জানত না যে এই বি-59 সাবমেরিনটি ভয়ংকর ভাবে অস্ত্রশস্ত্রে পরিপূর্ণ ছিল এবং তাদের সংগ্রহে একটি বিশেষ অস্ত্র রয়েছে - একটি 10 কিলো টন নিউক্লিয়ার টর্পেডো যা ডুবোজাহাজের অফিসাররা মস্কোর অনুমতি ছাড়াই লঞ্চ করার ক্ষমতা রাখেন। যেটি হিরোশিমায় ফেলা পরমাণু বোমাটির মত শক্তিশালী ছিল। ডুবন্ত অবস্থায় উপরিভাগের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল ফলে মস্কোর সাথে যোগাযোগ করা বা তাদের আদেশ পাওয়ার কোন উপায় ছিল না । উপরের সাথে কোন সংযোগ করতে না পারায় সাবমেরিনের কর্মীরা বুঝতে পারছিলেন না ইউ এস জাহাজগুলির আসল উদ্দেশ্য কি। তারা ধরে নিয়েছিলেন যে হয়ত এবার তারা আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখীন হতে চলেছেন। ক্রমাগত depth charge এর ফলে সাবমেরিনটি কাঁপতে শুরু করেছিল ফলে, ডুবোজাহাজের 2 জন কমান্ডার মিসাইল চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, যার মধ্যে ভ্যালেন্তিন সভিৎস্কি ছিলেন। 'ইউ এস ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভ' অনুযায়ী, সভিৎস্কি বলেছিলেন, "আমরা হয়তো মরে যাব, কিন্তু আমরা সব ধ্বংস করে দেবো। আমরা তাদের সবাইকে ডুবিয়ে দেবো, আমরা নৌবাহিনীকে হারের লজ্জা দিতে পারব না।" কিন্তু টর্পেডো মিসাইলটি ছাড়ার জন্য তিনজন কমান্ডারের অ্যাপ্রুভাল দরকার ছিল। এখানেই আসেন ভাসিলি আর্কিপভ; তিনি এই ডেপ্থ চার্জের মুহূর্তে নিজের মাথা ঠান্ডা রাখতে সক্ষম হন। তিনি সন্দেহ করছিলেন এগুলি কোন আক্রমণ না বরং তাদেরকে উপরে আসার জন্য প্রলোভিত করা হচ্ছে। অস্ত্রটি নিক্ষেপ করার অনুমতি দেননি এবং অন্যান্য ক্যাপ্টেনদের শান্ত করেন।
যদি ডুবোজাহাজটি আমেরিকানদের উড়িয়ে দিতো তবে সেই পরমাণুবোমার মেঘ সমুদ্র ছাড়িয়ে স্থলে এসে পৌঁছত অবশ্যই। আমেরিকা তাদের নিজস্ব নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড মস্কো এবং অন্যান্য শত্রুর উদ্দেশ্যে পাঠাতো এবং তার বদলে রাশিয়ানরা লন্ডন এবং আনজিলা এবং জার্মানির কিছু জায়গায় অবশ্যই পরমাণু বোমা ফেলত। পরবর্তী স্তরে রাশিয়ানরা হয়তো ইকোনমিক টার্গেটগুলোকে উড়িয়ে দিতো এবং তার সাথে অনেক মাত্রায় সাধারণ মানুষকে। ইউ কে এর জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মারা যেত এবং হয়তো এরপর পেন্টাগন তাদের নিজস্ব নিউক্লিয়ার যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুযায়ী, 5,500 পরমাণু বোমা চিন সহ হাজার হাজার লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করত।
কিন্তু এই ভয়ানক গায়ে কাঁটা লাগানো ঘটনাটি ঘটেনি এই মানুষটির জন্য। আর্কিপভ তাদের শান্ত করেন যে, তাদের জাহাজ কোন বিপদে নেই এবং যে বিস্ফোরণ-গুলি হচ্ছিল বা তাদের চার্জ করা হচ্ছিল সেগুলি তাদের লক্ষ্য করে না বরং তাদের আশেপাশে করা হচ্ছিল; যার অর্থ তাদের কেবলমাত্র সতর্ক করার উদ্দেশ্যে এগুলো করা হচ্ছে।
1962 সালের 27 অক্টোবর সোভিয়েত সাবমেরিন বি-59 এর 3 কমান্ডার এর মধ্যে একজন ছিলেন ভাসিলি। এই সময় উত্তেজনা চরমে ছিল; একটি আমেরিকান গুপ্তচর প্লেন কিউবার ওপরে গুলি করে নামানো হয় এবং একটি U-2 সোভিয়েত আকাশ সীমানায় হারিয়ে যায়। সোভিয়েত লিডারশিপ থেকে ক্যারিবিয়ান এর কাছে থেমে যাওয়ার আদেশ আসে। কারণ এই সময় আমেরিকানরা কিউবাকে ঘিরে রেখেছিল। এই সাবমেরিনটি আসলে আইসল্যান্ডে গোপনভাবে অস্ত্র-সরঞ্জাম পৌঁছানোর জন্য পাঠানো হয়েছিল। আমেরিকানদের থেকে নিজের অবস্থান লুকানোর জন্য সাবমেরিন ডুবোজাহাজ সমুদ্রের গভীরে অবস্থান করছিল কিন্তু সেটি যথেষ্ট গভীর ছিল না।
ডুবোজাহাজটিকে ইউ এস ফোর্সের 'ইউ এস এস বেল' নামক একটি আমেরিকান ডেস্ট্রয়ার স্পট করে এবং non-lethal ডেপথ চার্জ করে, যার উদ্দেশ্য ছিল সাবমেরিনকে উপরে উঠে আসার জন্য সতর্ক করা। একজন ইন্টেলিজেন্স অফিসার ভাদিন অর্লভ এর মতে, "আমেরিকানরা গ্রেনেডের থেকে একটু শক্তিশালী কিছু দিয়ে আঘাত করছিল অর্থাৎ একপ্রকার 'পার্টিকেল depth bomb', আমরা ভেবেছিলাম এটা শেষের শুরু।"
তবে আমেরিকানরা এটি জানত না যে এই বি-59 সাবমেরিনটি ভয়ংকর ভাবে অস্ত্রশস্ত্রে পরিপূর্ণ ছিল এবং তাদের সংগ্রহে একটি বিশেষ অস্ত্র রয়েছে - একটি 10 কিলো টন নিউক্লিয়ার টর্পেডো যা ডুবোজাহাজের অফিসাররা মস্কোর অনুমতি ছাড়াই লঞ্চ করার ক্ষমতা রাখেন। যেটি হিরোশিমায় ফেলা পরমাণু বোমাটির মত শক্তিশালী ছিল। ডুবন্ত অবস্থায় উপরিভাগের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছিল ফলে মস্কোর সাথে যোগাযোগ করা বা তাদের আদেশ পাওয়ার কোন উপায় ছিল না । উপরের সাথে কোন সংযোগ করতে না পারায় সাবমেরিনের কর্মীরা বুঝতে পারছিলেন না ইউ এস জাহাজগুলির আসল উদ্দেশ্য কি। তারা ধরে নিয়েছিলেন যে হয়ত এবার তারা আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখীন হতে চলেছেন। ক্রমাগত depth charge এর ফলে সাবমেরিনটি কাঁপতে শুরু করেছিল ফলে, ডুবোজাহাজের 2 জন কমান্ডার মিসাইল চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন, যার মধ্যে ভ্যালেন্তিন সভিৎস্কি ছিলেন। 'ইউ এস ন্যাশনাল সিকিউরিটি আর্কাইভ' অনুযায়ী, সভিৎস্কি বলেছিলেন, "আমরা হয়তো মরে যাব, কিন্তু আমরা সব ধ্বংস করে দেবো। আমরা তাদের সবাইকে ডুবিয়ে দেবো, আমরা নৌবাহিনীকে হারের লজ্জা দিতে পারব না।" কিন্তু টর্পেডো মিসাইলটি ছাড়ার জন্য তিনজন কমান্ডারের অ্যাপ্রুভাল দরকার ছিল। এখানেই আসেন ভাসিলি আর্কিপভ; তিনি এই ডেপ্থ চার্জের মুহূর্তে নিজের মাথা ঠান্ডা রাখতে সক্ষম হন। তিনি সন্দেহ করছিলেন এগুলি কোন আক্রমণ না বরং তাদেরকে উপরে আসার জন্য প্রলোভিত করা হচ্ছে। অস্ত্রটি নিক্ষেপ করার অনুমতি দেননি এবং অন্যান্য ক্যাপ্টেনদের শান্ত করেন।
যদি ডুবোজাহাজটি আমেরিকানদের উড়িয়ে দিতো তবে সেই পরমাণুবোমার মেঘ সমুদ্র ছাড়িয়ে স্থলে এসে পৌঁছত অবশ্যই। আমেরিকা তাদের নিজস্ব নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড মস্কো এবং অন্যান্য শত্রুর উদ্দেশ্যে পাঠাতো এবং তার বদলে রাশিয়ানরা লন্ডন এবং আনজিলা এবং জার্মানির কিছু জায়গায় অবশ্যই পরমাণু বোমা ফেলত। পরবর্তী স্তরে রাশিয়ানরা হয়তো ইকোনমিক টার্গেটগুলোকে উড়িয়ে দিতো এবং তার সাথে অনেক মাত্রায় সাধারণ মানুষকে। ইউ কে এর জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মারা যেত এবং হয়তো এরপর পেন্টাগন তাদের নিজস্ব নিউক্লিয়ার যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুযায়ী, 5,500 পরমাণু বোমা চিন সহ হাজার হাজার লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে প্রেরণ করত।
কিন্তু এই ভয়ানক গায়ে কাঁটা লাগানো ঘটনাটি ঘটেনি এই মানুষটির জন্য। আর্কিপভ তাদের শান্ত করেন যে, তাদের জাহাজ কোন বিপদে নেই এবং যে বিস্ফোরণ-গুলি হচ্ছিল বা তাদের চার্জ করা হচ্ছিল সেগুলি তাদের লক্ষ্য করে না বরং তাদের আশেপাশে করা হচ্ছিল; যার অর্থ তাদের কেবলমাত্র সতর্ক করার উদ্দেশ্যে এগুলো করা হচ্ছে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট কেনেডি খুব চিন্তিত ছিলেন যে রাশিয়ানরা এই ডেপ্থ চার্জকে আক্রমণ হিসেবে না ভেবে নেয়। তার ভাই এর মতে সেদিনকে যখন প্রেসিডেন্ট শুনেছিলেন, ডেপথ চার্জ করা হচ্ছে, তিনি খুবই চিন্তিত হয়ে যান এবং তার হাত মুখের উপর চলে আসে এবং তার আরেকটি হাত মুঠো করা ছিল। কতক্ষণ আর্কিপভ এবং সভিৎস্কির মধ্যে তর্ক চলে তা জানা যায়নি। অনেকক্ষণ নিচে অপেক্ষা করার পর ফুয়েল এবং অক্সিজেন রিজার্ভ শেষ হয়ে আসছিল, এয়ারকন্ডিশনিং প্রায় কাজ করা বন্ধ করে ফেলেছিল ফলে ভিতরে গরম হয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে সাবমেরিনটি সমুদ্রের উপর উঠে আসে। আর্কিপভ সঠিক ছিলেন, সাবমেরিনটি উপরে উঠে আসে এবং নিজেকে ইউএস ওয়ার্শিপগুলির এর মাঝে পায়। কিন্তু কোন যুদ্ধ শুরু হয়নি। আমেরিকানরা সাবমেরিন অবতরণ করেনি বা একে আটকানোরও চেষ্টা করেনি কেবলমাত্র তাদেরকে রাশিয়ায় ফিরে যাওয়ার জন্য আদেশ করা হয়।
1975 সালে আর্কিপভ রিয়ার এডমিরাল পদে প্রমোশন পান এবং তিনি পরবর্তীকালে 'কিরভ নেভাল একাডেমির' প্রধান হন। এরপর 1981 সালে তিনি ভাইস অ্যাডমিরাল হন এবং রিটায়ার করেন। তিনি 1998 সালের 19 আগস্ট কিডনি ক্যান্সারে দেহত্যাগ করেন যার কারণ ছিল, 1961সালে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন এ একটি অ্যাক্সিডেন্ট যার ফলে তার শরীরে রেডিয়েশন সংস্পর্শ আসে।
আপনার কি মনে হয়? আজ আমরা যে পৃথিবীতে বেঁচে আছি, যে পৃথিবী দেখছি, রোজকার ভালো মন্দ কাজ, সমালোচনা করা সব কিছুতে এনার কি কোথাও একটা অবদান থাকতে পারে? আমরা এরম পরিস্থিতিতে কি করতাম?
No comments:
Post a Comment