Sunday, 22 August 2021

হিমালয়ের হারিয়ে যাওয়া রহস্যময় শহর

বহু প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন ইতিহাস এবং সভ্যতায় বহু জাদুকরী ও রহস্যময় বিভিন্ন স্থানের গল্প প্রচলিত হয়ে এসেছে।  আমরা এমন একটি প্রাণী যারা হয়তো সত্যিই এই ধরনের শ্রুতি, যেমন হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা, গুপ্ত রহস্যময় শহর ইত্যাদিতে রোমাঞ্চ অনুভব করি যা বিভিন্ন কিংবদন্তি ও কাহিনীর সৃষ্টি করেছে; যেগুলি জাতি-স্থান-দেশ বিশেষে কোনরকম ব্যতিক্রম হয়নি। এরকমই একটি কাল্পনিক গুপ্ত শহরের কথা বহু যুগ ধরে হিমালয় পর্বতে ছড়িয়ে আছে যে স্থানটি জাদুকরী, রহস্যময় এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।



বহু প্রাচীন কাল থেকেই (ঠিক কতটা প্রাচীন কেউ বলতে পারে না) 'সাম্ভালা' নামক একটি রহস্যময় স্থান বা জগতের কথা শ্রুতি হয়ে ছড়িয়ে আছে। এই সাম্ভালা নামটি সংস্কৃত থেকে এসেছে যার অর্থ 'শান্তির স্থান' বা 'নিঃশব্দের স্থান' জাতীয় হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রকম নামকরণ করা হয়েছে এমনকি কোথাও 'নিষিদ্ধ নগরী', 'সাদা জলের দেশ', 'বিশুদ্ধ দেশ', 'প্রভাবশালী আত্মাদের দেশ', 'রহস্যের দেশ' এবং আরো অনেক রকমের অতিরঞ্জিত নামে তিব্বতে এবং আশেপাশের শ্রুতি কথা হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে। 

এই শহরটি হিমালয় পর্বতমালা ও গোবি মরুভূমি মধ্যে কোন এক স্থানে অবস্থিত বলে মনে করা হয়। এটি পৃথিবীতে এক ধরনের স্বর্গের মত যেখানে রহস্যময়তা এবং চিরস্থায়ী শান্তি, ভালবাসা এবং আনন্দ অবস্থান করে। এখানে কোন যুদ্ধ নেই, দারিদ্রতা নেই, রোগ নেই, খিদে নেই; এখানে অবিচ্ছিন্ন সম্প্রীতি রয়েছে এবং কোন দুঃখ-রাগ বা যন্ত্রণা নেই। এই স্থানটি প্রচুর পরিমাণে ঐশ্বর্যশালী এবং সুন্দর স্থান যেখানে সকলে সর্বদা তরুণ, স্বাস্থ্যবান থাকে। এখানে যে সকল প্রাণী থাকে তাদের নিজস্ব এক পবিত্র ভাষা আছে। এটি এমন একটি রাজত্ব যেখানে কখনো ঠান্ডা বা রাত্রি আসেনা, এখানকার বাসিন্দারা অনন্তকাল ধরে স্বর্গসুখের অধিকারী হয়ে আছে। প্রায়শই বলা হয় এই শহরটি ও 'valley of  blue moon"  শহরটি একই স্থান। বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথিতে, ভবিষ্যত বাণীতে সাম্ভালা স্থানটির উল্লেখ পাওয়া গেছে।  প্রায়শই উল্লেখ করা হয়েছে, "এই স্থানটিতে একদিন অন্ধকার এবং আলোর একটি অন্তিম যুদ্ধ হবে যেখান থেকে আলো জয়ী হবে এবং একটি স্বর্ণযুগের সূচনা করবে ও পৃথিবীকে বিশেষ জ্ঞান প্রদান করবে।"



 হরেক রকমের প্রবাদে বলা হয়েছে যে একদিন পৃথিবী এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয় পূর্ণ যুদ্ধ এবং হিংসায় ধ্বংস হবে এবং কেবলমাত্র সাম্ভালা এর থেকে রেহাই পাবে। এই বিনাশ কালে এই স্থানটি একমাত্র আশ্রয়স্থল থাকবে এবং এরপর এখান থেকে এক আলোকিত বা জ্ঞানদীপ্ত সম্রাটের উদয় হবে যে পৃথিবী কে আবার দৈব আলো প্রদর্শন করবে।

এডউইন বেরনবাম নামক একজন সাম্ভালা বিশেষজ্ঞ 1920 সালে লিখেছিলেন যুগ যুগ ধরে তিব্বত এবং মঙ্গোলিয়ার মানুষরা সাম্ভালায় বিশ্বাস করতেন; তারা মনে করতেন, সেখানে "এনলাইটেনড" বা "সর্ব জ্ঞানী" রাজা অবস্থান করছেন এবং  সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানকে রক্ষা করে চলেছেন এবং যখন বাইরের পৃথিবীর সমস্ত রকম আধ্যাত্বিক মূল্য ধ্বংস হয়ে যাবে বা হারিয়ে যাবে, তখন ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী এই রাজা তার পবিত্র স্থান থেকে বেরিয়ে আসবেন, অশুভ শক্তিকে বিনাশ করবেন এবং একটি স্বর্ণযুগের প্রতিষ্ঠা করবেন।



এই কথাগুলো শুনতে হয়তো খুবই ভালো লাগে কিন্তু বিষয়টি হলো সাম্ভালা নিয়ে একটি বিশেষ কিংবদন্তি শোনা যায় যেটি হল, এখানে যে কেউ যেতে পারবেনা। শ্রুতি অনুযায়ী এই ভূমি এবং এর শহর পার্থিব জগতের থেকে লুক্কায়িত হয়ে আছে এবং এখানে আমাদের মত সাধারন মানুষের পৌঁছনো প্রায় অসম্ভব। বলা হয় এটি পৃথিবীতে অবস্থিত থাকলেও আমাদের শারীরিক বা ভৌত জগতের মধ্যে পুরোপুরি পড়ে না; এটি কিছুটা এই জগত এবং পরবর্তী জগতের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করে, যেখানে কেবলমাত্র পবিত্র হৃদয়, ধ্যান, আধ্যাত্মিক অগ্রগতি, অত্যন্ত ভালো কর্মফল অথবা এনলাইটমেন্ট ইত্যাদি না প্রাপ্ত হলে কেউ খুঁজে পাবেনা। কেবলমাত্র শারীরিকভাবে সেই স্থানে যাত্রা করতে চাইলে এর ফলাফল ব্যর্থতা। শারীরিকের থেকে আধ্যাত্মিক শক্তি এই স্থানে প্রবেশ করতে মুখ্য ভূমিকা নেবে এবং কেবলমাত্র তখনই এই স্থানটিকে ভৌত জগতের মত আপনি দেখতে এবং অনুভব করতে পারবেন।  যদিও সাম্ভালা সম্পর্কে যে বিশ্বাস কেউ এখানে শারীরিকভাবে পৌঁছতে পারবে না তবুও মানুষ চেষ্টা না করে থেমে থাকেনি এই নিয়ে প্রচুর কাহিনী ছড়িয়ে আছে এরমধ্যে অনেক স্থানে মানুষ সফল হয়েছে বলেও শোনা গেছে।



এরকমই একটি কাহিনী পাওয়া গিয়েছে এনথ্রপলজিস্ট হেলেন ভালবর্গ এর লেখায় তার বইটির নাম ছিল "সিম্বলস অফ এটার্নাল ডকট্রিন ফর্ম সাম্ভালা টু প্যারাডাইস" যেখানে একটি চ্যাপ্টারে তিনি এক শিকারির বিবরণ দিয়েছেন যে এই স্থানটিকে খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছিল।

একটি গোপন পার্বত্য অঞ্চলের বরফে মোড়া স্থান থেকে এই একাকী শিকারী এক রহস্যময় মন্ত্র ধ্বনি ও ড্রামের আওয়াজ শুনতে পায়। তিব্বতের বাসিন্দাদের থেকে এই কাহিনীটি পাওয়া গেছে, যেখানে তারা বলেন খুব সহজেই এই সুরেলা ধ্বনিকে অনুসরণ করে সেই শিকারি সেই মহান স্থানের দরজায় পৌঁছে গিয়েছিলেন এবং এটা অতিক্রম করে সে নিজেকে একটি খুবই সুন্দর উপত্যকায় খুঁজে পেল যা শস্য-শ্যামলা ধানের ক্ষেতে আবৃত এবং সেখানে গ্রামবাসী এবং সুন্দর মনেস্ট্রি ছিল। এইখানকার বাসিন্দারা খুবই শান্তিপ্রিয় এবং খুশি ছিল এবং তারা সেই শিকারীকে সাদরে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল এবং তাকে থাকতে বলেছিল। তিনি খুবই খুশি হয়েছিলেন তাদেরকে দেখতে পেয়ে কিন্তু খুব দ্রুতই তিনি নিজের পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য চিন্তিত হয়ে পড়লেন এবং তিনি চেয়েছিলেন তাদেরকেও সেই সুন্দর উপত্যকায় নিয়ে আসার জন্য কিন্তু এখানকার বাসিন্দারা তাকে সতর্ক করে দিয়েছিল যে তিনি এখানে ফিরে আসার রাস্তা আর খুঁজে পাবেনা কিন্তু সেও দৃঢ় হয়েছিল, বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য। এরপর যখন সে সেই দরজাটি অতিক্রম করে, সেইসময়  তার পাশে নিজের বন্দুক এবং জুতো ঝুলিয়ে রেখেছিল সেই দরজাটি চিহ্নিত করে রাখার জন্য। খুব নিশ্চিন্তভাবে সে তার স্ত্রী এবং সন্তানদের কাছে ফিরে গিয়েছিল কিন্তু যখন সে সেই স্থানটিতে ফিরে এসেছিল, সে তার বন্দুক এবং জুতোজোড়াকে একটি পাহাড়ের দেওয়ালের  ফাটলে ঝুলতে দেখেছিল।

পাশ্চাত্য দেশের মানুষেরাও এই স্থানটি পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। 1833 সালে হাঙ্গেরীয়ান পন্ডিত স্যান্দর করসল দাবি করেছিলেন, তিনি ৪৫ ডিগ্রী এবং ৫০ ডিগ্রী নর্থ ল্যাটিচিউড এর মাঝামাঝি স্থানে একটি অসাধারণ দেশ খুঁজে পেয়েছিলেন, যাকে 'হারিয়ে যাওয়া শহর' বলা হয়। 

বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক এবং 'থিওসফিক্যাল সোসাইটি'র সহ স্থাপক হেলেনা ব্লভাটসকি দাবি করেছিলেন, তিনি সেখানে গিয়েছিলেন এবং বিভিন্ন স্থানীয় রহস্যময় বিশ্বাসগুলি নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং সেখান থেকে বিস্ময়কর জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছেন। 

 1920 সালে নিকোলাস রোরিখ নামক এক অভিযাত্রী তিব্বত এবং হিমালয়ে পাঁচ বছর ধরে এক্সকার্শন করেছিলেন- আপাতদৃষ্টিতে কেবলমাত্র স্থান গুলিকে জরিখ করার জন্য কিন্তু গুজবে শোনা যায় এটি আসলে সাম্ভালাকে খুঁজে বের করার জন্য করা হয়েছিল। তার ভ্রমণকালে নিকোলাস খুব প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রবেশ করেছিলেন যা সেই সময় অন্য কোনো পাশ্চাত্য দেশের মানুষ পৌঁছাতে পারেনি। যে স্থানটি অন্যান্য সভ্যতা থেকে অনেক দূরে আলাদা ছিল, এই ঠান্ডা দুর্গম প্রান্তে তিনি প্রাচীন বইয়ের এক সংগ্রহ অথবা পুথি খুঁজে পেয়েছিলেন যা এক দুর্গম অঞ্চলের মনস্ট্রিতে ছিল। পুঁথিগুলো মনে করা হয় সেই রহস্যময় শহরের পৌঁছনোর পথ দেখাতে পারত এবং তিনি এর প্রতিটি গুজব এবং নির্দেশনাকে অনুসরণ করেছিলেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে, আলতাই পর্বতমালার মধ্যে বেলু খা পরবর্তী হল সাম্ভালার প্রবেশদ্বার কিন্তু এটা জানা যায়নি তিনি আসলে সেটা খুঁজে পেয়েছিলেন নাকি।



সাম্ভালাকে নিয়ে আরো একটি বিখ্যাত এক্সপিডিশন হয়েছিল 1920 সালে 'বলশেভিক ক্রিপ্টোগ্রাফি' এবং 'সোভিয়েত সিক্রেট পুলিশের' অন্যতম প্রধান গ্লেব বকি ও তার লেখক বন্ধু আলেকজান্ডার বার্চেনকোর প্রচেষ্টায়। তারা কমিউনিজমের আরো দৃঢ় ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করার উদ্দেশ্যে সেই শহরটির খুঁজে বার করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তারা আশা করেছিলেন যে এই হারিয়ে যাওয়া শহরের রহস্যময় জাদুকরী বিদ্যা তাদেরকে পারফেক্ট কমিউনিস্ট হওয়ার রহস্য সমাধান করতে সাহায্য করবে। কিন্তু এক্সপিডিশনটি নিষ্ফল হয় এবং এর পরবর্তীকালে আরেকটি ফলোআপ প্ল্যান তৈরি করা হলেও সেটিকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, বরঞ্চ এটি সোভিয়েতের দ্বারা 1924 সালে একটি ব্যর্থ মিশন হিসাবে আখ্যায়িত হয়ে গিয়েছিল। 

সম্ভালা কে নিয়ে আরো অনেক এক্সপিডিশন হয়েছিল। যেমন, পরবর্তীকালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল কিন্তু যতদূর শোনা যায় এগুলি ফলপ্রসূ হয়নি এবং আসলে কি সাম্ভালার অস্তিত্ব আছে কিনা তা পরিস্কার না হলেও বহু লোক এখনো প্রচেষ্টায় লেগে আছে,  সেই আধ্যাত্মিক যাত্রা সফল না হলেও বহু মানুষ দাবি করেছেন তারা সেখানে পৌছতে পেরেছিলেন কিন্তু কেউ এর পক্ষে কোন প্রমাণ প্রদর্শন করতে পারেননি। মানচিত্রে এর অবস্থান এর স্বপক্ষে একচিলতে স্থান দেখানো সম্ভব হয়নি। এমনকি এই স্থানটি যেটি নিয়ে বহু যুগ ধরে প্রবাদ চলে আসছে এমনকি প্রাচীন বিভিন্ন পুথিগুলির থেকেও এর সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে এই হারিয়ে যাওয়া দেশ বা শহর সাম্ভালা কেবলমাত্র হেঁয়ালিপূর্ণ এবং অনতিক্রম্য রয়ে গিয়েছে হয়তো ভবিষ্যতেও থেকে যাবে।.......

Monday, 2 August 2021

সূর্যের ধ্বংসের পর কি পৃথিবীতে প্রাণ থাকবে? নতুন গবেষণায় আশার আলো ---

বেশির ভাগ মানুষের ধারণা ছিল যখন আমাদের সূর্য ধ্বংস হবে তখন পৃথিবীতে তার ক্যাটাস্ত্রফিক প্রভাবে কোন কিছু টিকে থাকতে পারবে না কিন্তু নতুন গবেষণায় একটি আশার আলো পাওয়া গিয়েছে যাতে সূর্যের নিভে যাওয়ার পর পরই আমাদের গ্রহে আবার নতুন করে প্রাণের উৎপত্তি হতে পারে।

পৃথিবীর ম্যাগনেটিক শিল্ড বা চুম্বক বলয় সোলার উইন্ড বা সৌর ঝড়ের উত্তপ্ত চার্জড পার্টিকেল বা কণাগুলি থেকে পৃথিবী কে রক্ষা করে চলেছে।  এই পার্টিক্যাল গুলি ঘন্টায় প্রায় 1 মিলিয়ন মাইল বা 1.6 মিলিয়ন কিলোমিটার বেগে আমাদের গ্রহের দিকে ধেয়ে আসে যদিও 5 বিলিয়ন বছর পরে আমরা এখনকার মতো এতটা সৌভাগ্যবান থাকবো না, কারণ তখন এই সোলার উইন্ড সূর্যের মৃত্যুর প্রাক্কাল থেকে অতীব শক্তিশালী হয়ে উঠবে। 



সূর্যের ধ্বংসের শেষ ধাপে এটির হাইড্রোজেন জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে এবং এটি একটি লাল দানবে পরিণত হবে। এই সময় সৌর ঝড় এত শক্তিশালী হবে যে, এটি পৃথিবীর ম্যাগনেটিক শিল্ডকে ধ্বংস করে দেবে যার ফলে আমাদের বায়ুমণ্ডলের বেশিরভাগ অংশই মহাকাশে বিলীন হয়ে যাবে। 

যার অর্থ দাঁড়ায় আমাদের গ্রহে সূর্যের বিরুদ্ধে কোন প্রতিরক্ষা কবচ থাকবে না এবং জীবন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যাবে।



এক বিলিয়ন বছরের কাছাকাছি সময় বাদে সূর্য একটি শ্বেত বামনে পরিণত হবে এবং তার কয়েক বিলিয়ন বছরে এটি সম্পূর্ণ মৃত হয়ে যাবে যা কোন রকমের আলো উৎপন্ন করতে পারবে না। এছাড়া সূর্যের আকর্ষণ ক্ষমতা এত দুর্বল হয়ে যাবে যে আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলি এখনকার অবস্থান থেকে প্রায় দ্বিগুণ দূরত্বে চলে যাবে।

গবেষকরা সোলার উইন্ড 'radiating' করা আমাদের সূর্যের থেকে 1 থেকে 7 গুণ বেশি ঘনত্ব সম্পন্ন বিভিন্ন নক্ষত্রের মডেল তৈরি করে উপলব্ধি করেছে যে, সূর্যের এই বিবর্তন চলাকালীন আমাদের ম্যাগনেটিক ফিল্ডকে অক্ষত থাকতে হলে বর্তমানের থেকে এটিকে অন্তত 1000 গুন বেশী শক্তিশালী হতে হবে।



দিমিত্রি ভেরাস যিনি ইউ. কে এর 'ওয়ারউইক ইউনিভার্সিটির' এস্ট্রোফিজিসিস্ট, দাবি করেছেন, এই গবেষণাটি প্রদর্শন করছে স্টেলার এভলিউশনের জায়েন্ট ব্রাঞ্চ ফেসগুলি অবিচ্ছিন্নভাবে চলাকালে একটি গ্রহের নিজস্ব প্রটেক্টিভ ম্যাগনেটোস্ফিয়ার মেন্টেন করার সমস্যা গুলিকে।



যদিও এটি শুনে যতটাই ধ্বংসাত্মক মনে হয় তবুও পৃথিবীর ভবিষ্যৎ জীবনের পক্ষে একটি আশার ছোট আলো পাওয়া যায়। যেহেতু শ্বেত বামনের থেকে কোন সৌর ঝড় বা সোলার উইন্ড নির্গত হতে পারে না, তাই একটি সম্ভাবনা থাকে যে আমাদের গ্রহ আবার বসবাসযোগ্য হতে পারে। তাই লাল দানবের থেকে আসা শক্তিশালী ঝড়ের বোমা বর্ষণের শেষ হওয়ার পর আবার নতুন করে প্রাণের বিবর্ধন শুরু হতে পারে। এটা সেই সকল গ্রহ যারা শ্বেত বামনকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে তাদের পক্ষেও প্রাণের সূচনার পক্ষে একটি ভালো খবর। এই গবেষণাটি " monthly notices of the the royal astronomical society"  নামক জার্নালে প্রকাশিত করা হয়েছে যেখানে আপনারা এটিকে সম্পূর্ণরূপে পড়তে পারেন।

Sunday, 25 July 2021

রহস্যময় কালভ্রমণকারী ও একটি দুর্ঘটনা যা পৃথিবীকে টাইম ট্রাভেলের প্রমান দিলো --

সময় এমন একটি বিষয় যা পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কে ঘিরে রেখেছে এটিকে শুনতে যতটা সহজ মনে হয় একে বোঝা তার থেকে বহু কঠিন বিষয়। মনে করা হয়, সময় এমন একটি বিষয় যা ক্রমশ এগিয়ে চলেছে - একে বদলানো বা পুনর্গঠন করা সম্ভব নয় কিন্তু মাঝে মাঝেই এমন কিছু ঘটনায় এমন কিছু ব্যক্তির আগমন ঘটে যা টাইম ট্রাভেল বা সময়ের মধ্যেকার যাত্রা সম্পর্কে রহস্যের সৃষ্টি করে। সাধারণত বিভিন্ন মানুষ যারা টাইম ট্রাভেল করেছেন বলে দাবি করেন তাদের কাছে তার স্বপক্ষে সেরকম কোনো প্রমাণ না থাকার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ এগুলিকে বিশ্বাস করেনি। আজ আপনাদের সামনে এমন একটি ঘটনার উল্লেখ করব যাতে এই টাইম ট্রাভেল সম্পর্কিত যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।



 1951 সালের জুন মাসের রাত প্রায় 11.3০ নাগাদ নিউইয়র্ক টাইমস স্কোয়ারে রাস্তার মাঝে হঠাৎ করে এক ব্যক্তির আগমন ঘটে। ব্যক্তিটি হঠাৎ করে রাস্তার মাঝখানে কি করে এলো তা কেউ বলতে পারে না, কেউই তাকে রাস্তা পার করতে দেখেনি। 

এই ব্যক্তিটি অনেক আগেকার পুরনো দিনের পোশাক পরিহিত ছিল।  ব্যক্তিটির হাবভাব দেখে পরিষ্কার মনে হচ্ছিল যে সেও সেই স্থানে নিজেকে পেয়ে খুবই হতবাক হয়ে গিয়েছে। সে টাইমস স্কোয়ারে চারদিকে ঝাঁ-চকচকে উচু উচু বিল্ডিং গুলি এবং মোটরগাড়ি গুলিকে খুব বিস্ময়ের সাথে দেখছিল এবং আশেপাশের মানুষেরাও এই ব্যক্তিটিকে ঠিক ততটাই বিস্ময় সহকারে দেখছিল। যখনই এই ব্যক্তিটি রাস্তার ধারে যাওয়ার চেষ্টা করল সামনে আসা একটি গাড়িতে ধাক্কা খেয়ে গুরুতরভাবে জখম হয়ে গিয়েছিল এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। 



তল্লাশি করার সময় তার কাছ থেকে বেশকিছু অদ্ভুত রকমের এবং অবাক করা জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছিল। যেমন একটি ফাইভ সেন্ট বিয়ারের টোকেন, একটি ঘোড়ার গাড়ি পরিষ্কার করার বিল যাতে ঠিকানা দেওয়া ছিল লাইভেরী আস্তাবল, লেক্সিংটন এ্যাভেনিউ।  1951 সালের কোন এড্রেস বুকে এই ঠিকানাটি খুঁজে পাওয়া যায়নি এছাড়া প্রায় 70 ডলারের কাছাকাছি পুরনো নোট এবং কয়েন তার কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল এছাড়া একটি বিজনেস কার্ড তার থেকে পাওয়া গিয়েছিল, যাতে নাম লেখা ছিল 'রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ' এবং তাতে অ্যাড্রেস ছিল - "ফিফথ এভিনিউ, নিউইয়র্ক" . তার সাথে একটি চিঠি পাওয়া গেল যেটি ফিফথ এভিনিউ নিউইয়র্ক থেকে ফিলাডেলফিয়া পাঠানোর কথা ছিল এবং সেই লেটারে 1876 সালের স্ট্যাম্প মারা ছিল। 



এই ব্যক্তির থেকে পাওয়া সব জিনিস গুলির থেকে একটি বিষয় লক্ষ্য করা গেছে সেগুলি পুরনো সময়ের হলেও একদম নতুনের মত অক্ষত ছিল। এই ঘটনাটির তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় ক্যাপ্টেন হুবার্ডকে ক্যাপ্টেন হুবার্ড যখন ফিফথ এভিনিউতে তদন্তের জন্য পৌঁছান তিনি এই ঠিকানায় একটি অফিস পান।  যেখানকার লোক এই রুডল্ফ নামের কোন ব্যক্তিকে চিনতেন না। ক্যাপ্টেন হুবার্ড সেই সময়কার সমস্ত টেলিফোন ডাইরেক্টরি এবং অ্যাড্রেস বুক খুঁজে ফেলেন কিন্তু তিনি এই নামের কোন ব্যক্তির সন্ধান পাননি। এই ঘটনার বেশ কয়েকদিন চলে যাওয়ার পর কোন পুলিশ স্টেশনে রুডল্ফ নামের কোন ব্যক্তির হারিয়ে যাওয়ার রিপোর্ট দাখিল করা হয়নি তাই কোন রকম সূত্র না পাওয়া গেলেও ক্যাপ্টেন হুবার্ড তার তদন্ত জারি রাখেন এবং একদিন 1939 সালের একটি এড্রেস বুকে "রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ জুনিয়ার" নামে এক ব্যক্তির ঠিকানা খুঁজে পান ওই ঠিকানায় পৌঁছে জানতে পারেন, এখন ঐ ঠিকানায় অন্য একজন থাকে যারা রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ জুনিয়ারের থেকে এই জমিটি কিনেছিল। 



এরপর বিভিন্ন রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ জুনিয়ারের ব্যাংক একাউন্টের তথ্য তিনি খুঁজে পেতে সক্ষম হন। ব্যাংক থেকে জানা যায় রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ জুনিয়ারের ব্যাংক একাউন্ট বন্ধ করা হয়ে গিয়েছে কারণ পাঁচ বছর আগেই তার মৃত্যু হয়েছিল কিন্তু ওনার স্ত্রী তখনও বেঁচে ছিল এবং ফ্লোরিডায় কোথাও বসবাস করছিল।

 ক্যাপ্টেন হুবার্ড ফ্লোরিডার ওই ঠিকানায় গিয়ে রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ জুনিয়ারএর সম্পর্কে খোঁজ করেন। সেখানে তার স্ত্রী যা জানিয়েছিলেন তা শুনে ক্যাপ্টেন হুবার্ড হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন তিনি জানতে পারেন রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ আসলে রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ জুনিয়ারের পিতা ছিলেন যিনি 29 বছর বয়সে 1876 সালে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। তিনি তাঁর বাড়ি থেকে এক সন্ধ্যেবেলা ঘুরতে বেরিয়ে ছিলেন এবং তারপরে আর কোনদিনও ফিরে আসেননি এগুলি শুনে ক্যাপ্টেন হোবার্ট ও তার কর্মীরা হয়রান হয়ে যান কেউ কিছু বুঝতে পারছিল না যে এটা কি করে সম্ভব।


 

কৌতুহলী হুবার্ড 1876 সালের সমস্ত মিসিং ডায়েরি গুলি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন এবং একদিন তার হাতে আসে রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ নামে এক ব্যক্তির 1876 সালের একটি মিসিং রিপোর্ট।  নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত তথ্যতে নিরুদ্দেশ ব্যক্তির যে বিবরণ দেয়া হয়েছিল 1951 সালে পাওয়া রুডল্ফ ফ্রেঞ্চ এর সাথে হুবহু মিল খায়। ক্যাপ্টেন হুবার্ড এর সংগ্রহ করা এই প্রমাণগুলি থেকে এটা প্রমাণ হয়ে যায় যে মিসিং রিপোর্টের রুডল্ফ এবং 1951 সালে পথদুর্ঘটনায় মৃত রুডল্ফ একি ব্যক্তি কিন্তু প্রশ্ন হল 1876 সালে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি 1951 সালে কি করে পৌঁছে ছিল এই প্রশ্নের জবাব আজ অব্দি কেউ দিতে পারেনি। কেবলমাত্র কিছু থিওরি পাওয়া যায় যা বলে - এটা একটি টাইম ট্রাভেল সম্পর্কিত ঘটনা যাতে রুডল্ফ হঠাৎ করে টাইম ট্রাভেল করে ফেলেছিলেন।.....

Saturday, 8 May 2021

প্রাচীন মহাকাশযান রহস্য, সক্রেটিস কি মহাকাশে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন?

প্রাচীন গ্রীস বহু আগে বিজ্ঞান এবং গণিতের বিশেষ অগ্রগতির জন্য খ্যাতি লাভ করেছিল যা পরবর্তীকালে পাশ্চাত্যের সভ্যতাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। স্যামোসের আরিস্টারকাস কোপার্নিকাসের অনেক আগেই হেলিওসেন্ট্রিক কসমোলজি বা সূর্যকেন্দ্রিক সৌরজগতের প্রস্তাবনা দিয়েছিল এবং এছাড়াও রাইট ব্রাদার্সদের 1903 সালে উড়োজাহাজ আবিষ্কারের বহু আগেই বাষ্প চালিত উরন্ত যন্ত্র আবিষ্কারক হিসাবে তার সম্মান আছে।

এটা খুব অবাক করা বিষয় নয় যে বহু লোক দাবি করে, প্রাচীন গ্রিক এবং অন্যান্য সমকালীন অত্যাধুনিক সভ্যতা গুলি যেমন প্রাচীন চীন এবং ভারত - যারা হয়তো এখনকার মানুষের ধারণার বাইরেও উন্নত ছিল এমনকি প্রাচীন মহাকাশযান তারা বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন।



সক্রেটিস পৃথিবীকে উপর থেকে দেখতে যে রঙিন বলের মতো মনে হয়, তার যা বর্ণনা দিয়েছেন সেটা অনেকটা কক্ষপথ থেকে বর্তমানের পৃথিবীতে দেখতে যে রকম লাগে তার সাথে মিল পাওয়া যায়।

অরবিটের এই কক্ষপথ মহাকাশচারী এবং মহাকাশ বিশেষজ্ঞদের কাছে একটি বিখ্যাত প্যাসেজ যেখান থেকে ভূমির উপরে থেকে একটি পজেটিভ ভিউ পাওয়া যায়।



অন্যান্যরা যদিও মনে করেন আরো একটি লেয়ার আছে, কিন্তু কিছু গবেষকরা মনে করেন যে, এটি আসলে একটি প্রমাণ যে আসলে সক্রেটিস পৃথিবীপৃষ্ঠকে অরবিট থেকে দেখেছিলেন অথবা তার কাছে হয়তো অন্য কোন উন্নত সভ্যতার রেকর্ড ছিল যাদের কাছে প্রাচীন মহাকাশযান ছিল এবং ফলস্বরূপ তারা মহাকাশ থেকে পৃথিবীর দৃশ্যের নিখুঁত বর্ণনা দিতে সক্ষম হয়েছিল।

এমনকি এটাও হতে পারে হয়তো প্রাচীন গ্রিকদের কাছে আরও উন্নত প্রযুক্তি ছিল যা বর্তমান আর্কিওলজিস্ট ও ঐতিহাসিকদের ধারণার বাইরে।



প্রাচীন গ্রীকের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি --

যদিও গ্রিসের থেকে বিজ্ঞানের সূত্রপাত হয়নি তবে আধুনিক বিজ্ঞান যেভাবে পরিচালিত হয়ে চলেছে তার শিকড় প্রাচীন গ্রিসের চিন্তাধারা থেকে এসেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, প্রাচীন মিশরীয় এবং মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, তাদের উন্নত জ্যোতির্বিদ্যা এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য পরিচিত।

প্রাচীন মিশরীয় এবং মেসোপটেমিয়ান পুরোহিতরা কেবলমাত্র জ্যোতির্বিদ্যায় আগ্রহী ছিলেন যেটি তাদের ক্যালেন্ডার পঞ্জিকা তৈরি করতে এবং জ্যোতির্বিদ্যার মাধ্যমে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে জানতে সাহায্য করত। তেমনি  চিকিৎসকরা কেবলমাত্র এ্যানাটমী এবং ফিজিওলজিতে আগ্রহী ছিলেন যা তাদের চিকিৎসায় সাহায্য করত।

প্রাচীন সভ্যতা গুলির মধ্যে বিজ্ঞান নিয়ে আরেকটি পার্থক্য বলা যায়, প্রাকৃতিক ঘটনাগুলিকে ব্যাখ্যা করতে ঈশ্বরের কথা তুলে ধরা হতো; যদিও এতে কিছু ব্যতিক্রম ছিল কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সভ্যতা গুলি বিজ্ঞানকে দৈনন্দিন কার্যকলাপে ব্যবহার করত, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বোঝার জন্য নয়। বিশ্বের গঠনগত ও অন্যান্য কার্যকলাপ বিষয়টি তখন পুরান শাস্ত্রের  অন্তর্গত রাখা হতো এই ভাবেই প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকরা চিন্তা ভাবনা করতেন। পরবর্তীকালে যেগুলি দর্শনবিদ্যায় প্রবেশ করে। 



প্রথম থেলস (৬২৪-৫৪৬ খ্রি পু:) এর সময় থেকে সক্রেটিস পূর্ব গ্রিক দার্শনিকরা বিজ্ঞানকে অন্যান্য কারনে ব্যবহার করা শুরু করলো। তাদের বৈজ্ঞানিক প্রয়োগ গুলো কেবলমাত্র ব্যবহারিক কারণ যেমন ক্যালেন্ডার তৈরি জন্য নয় বরং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে বোঝানোর কাজে লাগাতে শুরু করলেন। এছাড়াও বজ্রপাত, ভূমিকম্প ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হিসেবে ঈশ্বরকে জড়িত না করে এই দার্শনিকরা তাদের প্রকৃতির উপর অভিজ্ঞতা থেকে জড়বাদী ব্যাখ্যা খোজার চেষ্টা করলেন। যেমন - থেলস ব্যাখ্যা দিলেন, ভূমিকম্পের কারণ হলো - যার উপর স্থলভাগ ভেসে আছে সেই সমুদ্রের ঢেউ পৃথিবীর ডিস্ক গুলিতে ধাক্কা মারে ফলে ভূমিকম্প ঘটে থাকতে পারে।

 সক্রেটিস পূর্ব দার্শনিকদের বেশিরভাগ ধারণা এবং ব্যাখ্যা গুলি আধুনিক বিজ্ঞানের কাছে সম্পূর্ণ ভুল ছিল কিন্তু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার কারণ হলো তারাই প্রথম এই ভৌত জগৎকে অতিপ্রাকৃত বা দৈবিক ছেড়ে প্রাকৃতিক বা পদার্থবিদ্যাগত দিক দিয়ে ব্যাখ্যা করার বা বোঝার চেষ্টা করেছিলেন।



এই প্রচেষ্টা গুলি পরবর্তীকালে বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং-এ কিছু ফলপ্রসূ উন্নয়ন এনেছিল।

 পরবর্তী কালের গ্রিক এবং হেলেনিস্টিক বৈজ্ঞানিকরা প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে এই ধরনের চিন্তাভাবনা করেই বাষ্প চালিত যন্ত্র, এনালগ রোবট আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং যুক্তি দিয়েছিলেন যে মানুষের বুদ্ধি মস্তিষ্ক থেকে আসে হৃদয় থেকে নয় - যেরকম প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা বিশ্বাস করত এবং এটাও বলেছিলেন যে পৃথিবী গোলাকার, চ্যাপ্টা নয় যেমনটা প্রাচীন জ্যোতির্বিদ এবং কিছু সক্রেটিস পূর্ব দার্শনিক যেমন থেলস এবং অনাক্সাগোরাস বলেছিল।

প্রথম যে গ্রিক দার্শনিক গোল আকৃতি পৃথিবীর স্বপক্ষে যুক্তি রেখেছিলেন তিনি হলেন পর্মানিডস (খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দি)।

 পিথাগরিয়ান স্কুল অফ ফিলোসফির প্রতিষ্ঠাতা পিথাগোরাসও  (570 থেকে 490 খ্রিস্টপূর্বাব্দ) গোলাকার পৃথিবীর সম্পর্কে ধারণা দিয়েছিলেন। সবচেয়ে বিখ্যাত পিথাগোরিয়ানদের মধ্যে একজন হলেন ফিলোলাস যিনি গোলাকার পৃথিবীতে বিশ্বাস করতেন। এছাড়া তিনি বলেছিলেন, পৃথিবী চলমান এবং এটি বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে মোটেই অবস্থিত নয়। ফিলোলাস সক্রেটিসের সমকালীন তাই সম্ভবত সক্রেটিসও তার চিন্তাধারার সাথে পরিচিত ছিল সক্রেটিসের বর্ণনা অনুযায়ী, পৃথিবী একটি রঙিন বলের মতো এবং ফিলোলাসের বর্ণনা অনুযায়ী এটি চলমান। 

 এছাড়া প্লাটো যিনি সক্রেটিসের সবচেয়ে বিখ্যাত ছাত্র ছিলেন তিনি বিশ্বাস করতেন, পৃথিবী গোলাকার ও ফিলোলাসের মহাকাশ সম্পর্কিত চিন্তাধারাগুলো কে বিশ্বাস করতেন। সক্রেটিস নিজে মহাকাশবিদ্যা সম্পর্কে প্রথমে তেমন কোনো চিন্তা ভাবনা করেননি এমনকি হয়তো সময়ও দিতেন না যদি প্লাটো এই বিষয়ে তার সাথে অসম্মতি না জানাতো।


সক্রেটিস এর সময়কালীন গোলাকৃতি পৃথিবী সম্পর্কিত ধারণা অনেকেই মেনে নিয়েছিলেন, শুধু তাই না বেশিরভাগ বিদ্বান মেধাবী গ্রীকরা দর্শন শাস্ত্রের চর্চায় আগ্রহ প্রকাশ ও যোগদান করতে শুরু করেছিল। তার মানে এই দাঁড়ায় যে তিনি এমন কিছু উল্টোপাল্টা বলেননি, যেটা প্রাচীন গ্রীকদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। এটা হয়তো প্রমাণ হতে পারে যে পৃথিবী পৃষ্ঠকে অরবিট থেকে দেখতে কেমন হয় তা সম্পর্কে গ্রিকদের প্রাথমিক ধারণা ছিল। কিন্তু তার মানে এই হয় না যে এই ধারণাটি কক্ষপথে পৌঁছাতে পারলেই হবে, এছাড়া আরেকটি সমস্যা হল প্রাচীন মানুষদের অরবিট থেকে পৃথিবীকে দেখার স্বপক্ষে কোন প্রত্যক্ষ প্রমাণ নেই এবং অবশ্যই মহাকাশযান তৈরি করা সংক্রান্ত তো বটেই।

এছাড়া যদি কেউ উঁচু পর্বতের শীর্ষে যেতে পারে তবে পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে তার ধারণা হওয়া খুব একটি অসম্ভব কিছু নয়। আবার এটাও সম্ভব হতে পারে এই বিষয়গুলি কোন প্রাচীন মহাকাশযানের অস্তিত্ব থাকার প্রমাণ। অথবা কোনো উন্নত সভ্যতা যারা তাদের এই জ্ঞান দিয়েছিলো। আপনার কি মনে হয় ?



Sunday, 18 April 2021

চীনের ধ্বংস হয়ে যাওয়া অন্ধকারের শহর

27 বছর আগের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বা পরিতক্ত হওয়া এই শহরটিকে নিয়ে প্রচুর অসাধারণ কাহিনী রয়েছে যাতে এই শহরের বাস্তব গুলি আমাদের কল্পনাকেও হার মানিয়ে দিতে পারে। শহরটি প্রায় 213 মিটার/126 মিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত যাতে প্রায় 33 হাজার মানুষের বসতি ছিল, যা এটিকে পৃথিবীর সবচেয়ে জনঘনত্ব পূর্ণ স্থান বানিয়েছিল। এই শহরের কষ্টকর, ময়লা এবং থাকার পক্ষে অযোগ্য অবস্থার জন্য কলুন শহরটিকে অন্ধকারের শহর বলা হতো যেখানে কোন আইন চলতো না।



এই শহরটি 1810 স্থল সালে হংকংয়ে একটি দুর্গ শহর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় যেটি হল চীন এবং ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের তৎকালীন জটিল সম্পর্কের ফলাফল। 1898 সাল থেকে ক্লুন শহর ব্রিটিশাধীন হংকং এলাকায় ঘেরা একটি ছোট চাইনিজ ভূমি হিসাবে থেকে গিয়েছিল।
স্বাভাবিকভাবে এই স্থানটি ধীরে ধীরে বিকশিত হতে শুরু করেছিল এবং ধীরে ধীরে আরও মানুষ এখানে বসবাস করতে শুরু করেছিল। এই স্থানটি আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল তার কারণ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীন এবং গ্রেট ব্রিটেন কারো কাছেই এই শহরটির উপর প্রভাব বিস্তার করার মত শক্তি বা ইচ্ছা কোনটি ছিল না; তাই চাইনিজ শরণার্থী যারা হংকংয়ে বসবাস করতে সমর্থ ছিলনা তারা এখানে বসবাস করতে শুরু করল।




কলুন শহরে পূর্বে বিদ্যমান বিল্ডিংগুলোর সাথে সাথে অনিয়ন্ত্রিতভাবে আরো নির্মাণ গড়ে উঠেছিল। ফলে একসময় দেখা গেছে প্রায় 15 তলা উঁচু বিল্ডিংগুলির মাঝামাঝি দূরত্ব 2 মিটারের বেশি ছিল না। যার ফলে রাস্তা গুলিতে সূর্যের আলো প্রবেশ করতোনা এবং ঝুলন্ত বিভিন্ন তারের বান্ডিলের তলা দিয়ে মানুষকে ঝুকে ঝুকে চলতে হতো। 1990 সালে এই শহরে 500 টি বিল্ডিং পাওয়া গিয়েছিল যাতে মাত্র দুটি এলিভেটর ছিল এবং বিল্ডিং গুলির উপরের তলা গুলির মধ্যে একপ্রকার ব্রিজের মত যোগাযোগ রক্ষা করার ব্যবস্থা ছিল ফলে বসবাসকারীদের পাশের বিল্ডিং গুলোর মধ্যে যাওয়ার জন্য নিচের তলায় নামতে হতো না।



এই শহরটি কোন পরিকল্পনা ও নিয়ম ছাড়া তৈরি করা হয়েছিল এবং পর্যাপ্ত জানালা এবং কোন প্রকার ভেন্টিলেশন সিস্টেম পরিকল্পনা করা হয়নি। কোন যুক্তি ছাড়া এ বিস্ময়কর স্থাপত্যটি এখনো নির্মাতা এবং স্থাপত্যবিদ্দের মনে কৌতূহল জাগায়। এখানকার অ্যাপার্টমেন্ট গুলির আয়তন 4 বর্গমিটার থেকে 16 বর্গ মিটার পর্যন্ত আয়তনের ছিল এবং একই সাথে বাসস্থান এবং কর্মস্থান হিসেবে ব্যবহার করা হতো।




Sunday, 11 April 2021

রহস্যময় গোপন দস্তাবেজ যখন সরকারের সংগ্রহ থেকে হারিয়ে যায় ---

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে যে কিভাবে কিছু কিছু বিশেষ ধরনের সরকারি ফাইল বা দস্তাবেজ হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যায় এবং তা কখনো আর খুঁজে পাওয়া যায় না।  এই ধরনের ঘটনা অনেকবার ঘটেছে, এর একটি নিখুঁত উদাহরণ হল রসঅয়েলের ঘটনা সংক্রান্ত যা 1947 সালের জুলাই মাসে ঘটেছিল। এমনকি ইউ এস এয়ার ফোর্স এখনো স্বীকার করে যে রসওয়েল আর্মি এয়ার ফিল্ডের থেকে বেরোনো ফাইলগুলি যেগুলো সংগ্রহ করে রাখা দরকার ছিল সেগুলো আর কখনো পাওয়া যায়নি। 



ঠিক এরকমটাই ঘটেছিল 1980 সালের 'রেন্দেলসম ফরেস্ট ইউএফও ল্যান্ডিং' সংক্রান্ত ফাইলের ক্ষেত্রে; এই ঘটনা সংক্রান্ত বহু ফাইলের অস্তিত্বের উল্লেখ থাকলেও সেগুলো কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।  এরকমই বিভিন্ন বিতর্কিত হারিয়ে যাওয়া ফাইলের ঘটনার একটি ঘটেছিলো  1970 সালে। এর সাথে আমেরিকান সরকারের ক্ষমতাশালী কিছু ব্যক্তিত্ব জড়িয়ে পড়ে এবং যেই ফাইলটি একসময় সকলের চোখের সামনে ছিল সেটি খুব দ্রুত অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনাটি যে এডগার হুভার কে কেন্দ্র করে সে বেশ কয়েক দশক ধরে এফ বি আই এর হাত থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। 1972 সাল পর্যন্ত সে পালিয়ে বেরিয়েছিল এবং এরপর তার মৃত্যু ঘটে এবং এফবিআই ও পাল্টে যায়। 



77 বছর বয়সের হুবারের মৃত্যুর ঘটনা যখন পাওয়া যায়, তার কাছের বন্ধু এবং অ্যাসোসিয়েট ডাইরেক্টর টলসন এবং সেক্রেটারি গ্যন্ডী খুব দ্রুত উবারের গোপন ফাইল গুলি নিয়ে নেয়। হ্যাঁ, এগুলি কোন সাধারন ফাইল না যা হুবার এবং তার স্পেশাল এজেন্টরা সংগ্রহ করে রেখেছিল, এগুলি কোন সাধারন সংগ্রহের অংশ নয়-- এগুলি এফ বি আই এর হেডকোয়ার্টারে এমন গোপনীয়তার সাথে রাখা ছিল যা বেশিরভাগ কর্মকর্তাদের হাতের বাইরে ছিল। হুভারের প্ল্যান ছিল তার মৃত্যু ঘটলে, এই স্পর্শ কাতর ফাইলগুলি হয় ধ্বংস করে দেওয়া হবে অথবা এফবিআইয়ের কোন বিশ্বস্ত কর্মকর্তার হাতে দেওয়া হবে।  

অবাক করা বিষয় হলো এই নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তিতদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম নিক্সন। এফ বি আই এর তখনকার ডাইরেক্টর লুইস প্যাট্রিক গ্রে খুব দ্রুত এই গোপন ফাইল গুলি কব্জা করে এবং সেগুলিকে হোয়াইট হাউসে তার বসের কাছে পাঠিয়ে দিতে উদ্যত হন। কিন্তু গ্যন্ডী এবং টলসন খুব দক্ষতার সহকারে এই দস্তাবেজ গুলো গ্রে এর হাত থেকে দূরে রাখেন এবং বলতে গেলে সকলের থেকেই সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেন কিন্তু সেটা পুরোপুরি সফল হয়নি। 



টলসন এবং গ্যন্ডী গোপনে দস্তাবেজগুলি হুভারের ঘর থেকে নিয়ে এসে ভূগর্ভস্থ একস্থানে লুকিয়ে রাখে। ঠিক সেই সময় একটি প্রসেস শুরু করা হয় যার উদ্দেশ্য হলো গোপনীয়তায় ভরা ক্ষতিকারক অথবা গুরুত্বপূর্ণ এই দস্তাবেজ গুলির সবকটিকে ধ্বংস করে দেওয়া যদিও বহু জিনিসপত্র অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। অবাক করা বিষয় হল, এই দস্তাবেজ ধ্বংস করার জন্য জেমস জেসাস অংলেন্টন সহায়ক হিসেবে এসেছিলেন, যিনি বছরের পর বছর জুড়ে সি আই এ তে 'চিফ অফ কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স' পদাধিকারী ছিলেন তিনি হুবারের বাড়িতে এসেছিলেন; সম্ভবত তার ভয় ছিল এই দস্তাবেজ গুলির মধ্যে তার বিরুদ্ধে কোন তথ্য থাকতে পারে। কানাঘুষো তে শোনা যায়, হুবারের ফাইলগুলি নষ্ট করার প্রক্রিয়া চলাকালীন একসময় অংলেনটন বেশকিছু বিশালাকৃতির ফাইলের বাক্স নিয়ে কোন এক অজ্ঞাত স্থানে উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। তিনি এই ফাইলগুলি কোথাও সুরক্ষিত করে রেখেছেন অথবা নষ্ট করে দিয়েছেন তা হয়তো আমরা কোনদিনও জানতে পারবো না। 



এর মধ্যে একটি কানাঘুষো শোনা যায় যে অংলেনটন মার্লিন মনরোর গোপনীয় ফাইলের হদিশ পেয়েছিলেন। অবশ্যই মার্লিন সংক্রান্ত ফাইলগুলি এফবিআই প্রকাশ করে একটি অসাধারণ কাজ করেছিল, কিন্তু এফবিআইয়ের ওয়েবসাইটে এই হলিউড কিংবদন্তি সম্পর্কে যে ফাইল গুলি পাওয়া যায় তা হুবারের সংগ্রহের মধ্যে থেকে খুবই সাধারণ কতগুলি; কিন্তু গোপন মারলিনের ফাইলগুলি 1972 সালে হুবারের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে এবং এটি আরেকটি রহস্য যা অমীমাংসিত হয়ে রয়েছে।



প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন বহু সময় ধরে হুবারের এই গোপনীয় ফাইল গুলি সম্পর্কে ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন। কারণ, গ্যন্ডী এবং টলসন আদতে ফাইলগুলি ধ্বংস করেছে অথবা কোথাও লুকিয়ে রেখেছে তা সম্পর্কে তিনি অত্যন্ত সন্দিহান ছিলেন এবং এই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপদজনক ও স্পর্শ কাতর কিছু তথ্য থাকতে পারতো, যাই হোক না কেন এই ফাইল গুলিতে যা কিছুই থাকুক না কেন সেগুলি কি ধ্বংস করা হয়েছিল, নাকি এখনো সেগুলো কোনো গোপন জায়গায় পুঁতে রাখা হয়েছে, হয়তো কোন একদিন প্রকাশ্যে আসবে সেদিন কি আমেরিকা সম্পর্কে আমাদের অবাক করা কিছু ধারনার সৃষ্টি হবে? দেখা যাক....


Saturday, 3 April 2021

মানুষ কি ভবিষ্যতে কোন বিষাক্ত প্রাণী তে বিবর্ধিত হবে?

একটি নতুন গবেষণায় তথ্য পাওয়া গেছে যে, মানুষ বিবর্তনের মাধ্যমে একটি বিষাক্ত প্রজাতিতে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। যদিও এর সম্ভাবনা খুবই কম; এই গবেষণা দেখা গেছে স্তন্যপায়ী এবং সরীসৃপদের সালিভারি গ্ল্যান্ডে বিষ তৈরি করার উপাদান আছে এবং এই ভাবেই একশটির ওপরে বিষহিন প্রজাতি বিষাক্ত প্রাণীতে পরিণত হয়েছে। 




মজার ব্যাপার হলো স্তন্যপায়ীরা তাদের বিষ অন্য ভাবে ব্যবহার করে।
যেমন রক্তচোষা বাঁদরেরা তাদের বিষাক্ত লালা ব্যবহার করে ক্ষতস্থানের রক্ত তঞ্চন বা ব্লাড ক্লট হওয়া রোধ করে সেখান থেকে ক্রমাগত রক্ত পান করার জন্য।
বিষাক্ত ইঁদুরজাতীয় প্রাণীরা তাদের বিষ তাদের থেকে বিশাল আকৃতির প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচতে এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের শিকারকে অসার বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত করতে ব্যবহার করে, যাতে শিকারকে তারা পরে ফিরে এসে খেতে পারে। 

আবার প্লাটিপাস জাতীয় প্রাণীদের স্যালাইভা বা লালারসে বিষ থাকে না, তাদের পায়ের পেছনদিকে বিষাক্ত স্পার থেকে নির্গত হয় যা আত্মরক্ষার কাজে আসে। 



প্রাইমেট অর্থাৎ বানর ও মানুষ জাতীয় উন্নত প্রজাতির মধ্যে একমাত্র 'স্লো লরিস' হল একটি বিষাক্ত প্রজাতি যাদের বিষ এতটা শক্তিশালী যা মাংসে পচন ঘটাতে পারে কিন্তু তারা অন্য কোন প্রাণীর উপর এগুলি প্রয়োগ করে না। কেবলমাত্র নিজেদের উপরই প্রয়োগ করে। 
তাহলে মানুষ কি এই স্লো লোরিস এর মত বিষাক্ত হবে নাকি তার থেকেও বেশি অর্থাৎ সাপ বা মাকড়সার মতো?

জাপানের 'ওকিনাওয়া ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির' এভলিউশনারি জেনেটিক্স এর ডক্টরাল স্টুডেন্ট এবং এই গবেষণার সহ-সম্পাদক অগ্নিশ বড়ুয়ার মতে, মূলত আমাদের শরীরে এর জন্য প্রয়োজনীয় সবরকম উপাদানই উপস্থিত আছে। এখন এটা কেবল বিবর্তনের উপর নির্ভর করে, যে সে আমাদের কখন ও কোথায় নিয়ে যাবে।




এই গবেষণার অপর সহ-সম্পাদক 'অস্ট্রেলিয়ান ইউনিভার্সিটির' এভলিউশনারি বায়োলজিস্ট আলেকজান্ডার মিখায়েভ এবং বড়ুয়া দুজনে মিলে কেবলমাত্র বিষ নয় বরং এই সম্পর্কিত জিন গুলি নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। তারা এক ধরনের 'ব্রাউন পিট' প্রজাতির সর্প যাকে 'তাইওয়ান হাবু' বলা হয় তাকে নিয়ে পরীক্ষায় দেখেছেন, এমনিওট (যে সকল প্রজাতির প্রাণীরা তাদের ডিম ভিতরে বহন করে অথবা বাইরে প্রসব করে) জাতীয় প্রজাতির মধ্যে অনেকগুলি জিনের মিল আছে এবং সেই সকল জিনের মধ্যে ফোল্ডিং প্রোটিন আছে।

মানুষের লালারসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, বিশেষ করে 'কালীক্রেইন' যেই প্রোটিনগুলি অন্য প্রোটিনগুলির পচন ঘটায়। এই প্রোটিন গুলিকে লালারসে পাওয়া যায় এবং এগুলি বিভিন্ন বিষের মধ্যে বর্তমান থাকে। 'অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ডের' বায়োকেমিস্ট এবং ভেনোম বা বিষ সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান ফ্রাই এই গবেষণার অংশ না হলেও তিনি দাবি করেছেন, সকল প্রাণিকুল জুড়ে যে কোন বিষের মধ্যে এইভাবে এই কালীক্রেইন এর উপস্থিতি কোন আকস্মিক ঘটনা হতে পারেনা। এটি যেকোনো পরিস্থিতিতেই একটি অত্যন্ত সক্রিয় উৎসেচক এবং এটি কিছু একটা ঘটাতে চলেছে।




তবে গবেষকদের মতে আপাতত আমাদের বিষাক্ত প্রাণীতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম, যদি না এমন কিছু ঘটে যা আমাদের ভবিষ্যতে বিষাক্ত প্রাণীতে বিবর্তিত হতে বাধ্য করে। লন্ডনের 'ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম'এর বিষ বা ভেনম সংক্রান্তঃ গবেষক রোনাল্ড জেনার এই গবেষণার অংশ না হলেও তিনি 'লাইভ সাইন্স' কে একটি ইন্টারভিউতে এই সংক্রান্ত একটি পুনরুক্তি করেন যে, কোন প্রাণী আত্মরক্ষার্থে অথবা শিকার করার প্রয়োজনে বিষাক্ত প্রাণীতে বিবর্তিত হয়।

এই গবেষণাটি 'প্রসিডিংস অফ দা ন্যাশনাল একাডেমী অফ সাইন্সেস' জার্নালে প্রকাশিত হয় এখানে আপনারা বিস্তারে এ সম্পর্কিত তথ্য পড়তে পারেন।

Monday, 29 March 2021

হিমালয়ের ভিনগ্রহী গতিবিধি কি বেড়েই চলেছে?

এর আগেও আমারা একটি লেখনীতে হিমালয়ের পার্বত্য এলাকার কাছাকাছি অবস্থিত 'কংকা পাস' নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরেছিলাম। আজকে আরো কিছু প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী পাওয়া কিছু বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরছি; এই এলাকার কাছাকাছি যারা ভ্রমণ করার সুযোগ বা যারা ভ্রমণ করেছেন - তাদের সাথে কথা বলার সুযোগ পেলে সেই অভিজ্ঞতা কমেন্টে লেখার অনুরোধ রইল।



'কংকা পাস' বা 'কংকা-লা' হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলের একটি অত্যন্ত দুর্গম স্থান, এটি জম্বু কাশ্মীরের লাদাখ অঞ্চল থেকে শুরু করে চীনের 'চেং চেন্ম' অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত এবং বরফে ঢাকা উঁচু উঁচু শৃঙ্গ দিয়ে ঘেরা স্থান, এছাড়া বিভিন্ন দুর্গম গুহা থেকে শুরু করে ভ্যালি এবং হিমশীতল আবহাওয়া - যা আমাদের সাধারন মানুষদের জন্য অবশ্যই নয়। 
স্থানটিকে এক প্রকার পরিতক্ত দুর্গম স্থান বলা যেতে পারে যেখানে প্রাণী বলতে মাঝে মাঝে পশুপালক, যাযাবর, কিছু হিন্দু পুণ্যার্থী বা সাধু সন্ন্যাসী, অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী মানুষ ও মিলিটারির লোকদের দেখা যায়। কিছু আউটপোস্ট এর অবস্থান ও একটি জটিল ও বিতর্কিত ইন্ডিয়া ও চায়নার বর্ডার স্থানটির উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে যেটি নিয়ে বিবাদের কথা আমরা এখনো প্রায়শই শুনতে পাই; যাই হোক এই পাথুরে দুর্গম এলাকাটি দেখতে কিছুটা ভিনগ্রহী মনে হলেও হতে পারে এবং এর পিছনে আরও একটি কারণ হলো ইউ এফ ও এবং রহস্যময় ভিনগ্রহী গতিবিধি সংক্রান্ত পৃথিবীর বিখ্যাত হটস্পট গুলির মধ্যে এটি একটি স্থান নিয়ে নিয়েছে।




বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন মানুষ যারা এই স্থানে গিয়েছেন তাদের মুখে বিভিন্ন রকমের রহস্যময় কাহিনী শোনা গিয়েছে। এগুলির মধ্যে প্রচুর মিল পাওয়া গিয়েছে যেমন- আকাশে রহস্যময় আলোর গতিবিধি যা বিভিন্ন কায়দায় ঘুরে বেড়ায় আবার হঠাৎ করে কোন এক প্রান্তে অদৃশ্য হয়ে যায়; এছাড়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রের গোলযোগ, সময়ের গোলমাল, অনেকেই অভিযোগ জানিয়েছেন হঠাৎ করে তারা বহু মাইল দূরে কোন এক স্থানে জেগে উঠেছেন এবং শেষবার তারা কোথায় ছিলেন তা ভুলে গেছেন, এর সাথে ইউএফওর গতিবিধি তো খুবই সাধারণ বিষয়। এই সকল রিপোর্টের অধিকাংশ মিলিটারি এবং মিলিটারির বিভিন্ন অধিকারীকের থেকে পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া এখানে একটি কাহিনী শোনা যায় যা হলো মাটির তলায় অবস্থিত বিশালাকৃতির বিভিন্ন টানেল এবং পৃথিবীতে বসবাসরত ভিনগ্রহীদের ইউ এফ ও এর একটি বিশাল আকৃতির বেস।

2003 সালে বর্ডারের কাছাকাছি কর্মরত ভারতীয় সেনাবাহিনীর বেশ কিছু ট্রুপ চীনের দিকের আকাশে বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন রকম আলোর গতিবিধি দেখতে পায় এবং সেগুলো এতই রহস্যময় ছিল যে তারা তাদের কমান্ডকে রিপোর্ট করে কিন্তু পরবর্তীকালে এ সম্পর্কে তাদের সুপেরিয়র অথবা চাইনিজ মিলিটারি কারোর থেকেই একটিও শব্দ শোনা যায়নি। 




এর থেকেও একটি রহস্যময় ঘটনা 2004 সালে ঘটেছিল যখন হিমাচল প্রদেশের 'লাহুল- স্পিতি' অঞ্চলে আমেদাবাদের ইসরোর স্পেস অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের ডক্টর অনিল কুলকার্নির নেতৃত্বে 1 জিওলজিস্ট দল কর্মরত ছিল। 'সমুদ্র তাপু ভ্যালি' এই এলাকায় অন্যতম নির্জন ও দুর্গম অঞ্চল ছিল এই স্থানে এক্সপিডিশন করার সময় এই টিমটি আনুমানিক 4 ফুট লম্বা অদ্ভুত রকমের মানুষ আকৃতির রোবটিক কিছু একটাকে 50 মিটার দূরে পাথুরে অঞ্চল দিয়ে হেটে যেতে দেখে। বৈজ্ঞানিকরা এই রোবটটিকে প্রায় 40 মিনিট ধরে লক্ষ্য করেছিল এবং এর ছবি ও নিয়েছিল এবং তারা এই বস্তুটির কাছাকাছি যাওয়ার আগেই হঠাৎ করে বস্তুটি আকাশে উড়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। এই বিষয়টি সাক্ষী ছিলেন 14 জন মানুষ যার মধ্যে 6 জন বৈজ্ঞানিক ছিলেন। তাদের কাছে এর স্বাভাবিক কোনো বর্ণনা ছিলনা, এছাড়া তাদের এই রিপোর্টটির কোন সদুত্তর পরবর্তীকালে পাওয়া যায়নি - সম্ভবত এটি ফাইল এর ভিতর চাপা পড়ে গেছে।




 মজার ব্যাপার হলো আরো অনেকেই এই অঞ্চলে ঠিক একই রকম ছোট রোবটিক বস্তুর অস্তিত্ব বর্ণনা করেছে যারা হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যায়, কখনও মাটির উপর একটি গর্তের উদয় হয় যাতে তারা ঢুকে যায় এবং সেটি অদৃশ্য হয়ে যায় যেন আগে কখনো সেখানে এরকম কিছু ছিল না।

আরো একটি হাইপ্রোফাইল রহস্যময় ঘটনা উন্মোচিত হয় 2012 সালে এই সময় 1 আগস্ট থেকে 15 অক্টোবর পর্যন্ত এই অঞ্চলে কর্মরত ইন্ডিয়ান আর্মির ইউনিট গুলি এবং ইন্দো টিবেটান বর্ডার পুলিশ ফোর্স লাদাখ অঞ্চলে প্রায় 100 টির উপর ঘটনা রিপোর্ট করেন, যেগুলি হল রহস্যময় বিভিন্ন উজ্জ্বল বস্তুর গতিবিধি সংক্রান্ত। এই স্থানটি জম্মু-কাশ্মীর, পাকিস্তান অকুপাইড কাশ্মীর এবং চীনের অকুপাইড আকসাই চীনের মাঝামাঝি প্রায় 86,000 স্কোয়ার কিলোমিটার বিশিষ্ট একটি বিস্তৃত এবং হেভিলি মিলিটারাইজড অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। বর্ণনা পাওয়া গেছে এই হলুদ উজ্জল বস্তুগুলি চাইনিজ প্রান্ত থেকে উদয় হয়, আকাশে অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার আগে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে। আর্মি আধিকারিকরা যারা এর প্রত্যক্ষদর্শী ছিল তারা নিশ্চয়তার সঙ্গে বর্ণনা করেন যে, এগুলি কোন মনুষ্য পরিচালিত বিমান,ড্রোন অথবা পৃথিবীর কাছাকাছি ঘুরে বেড়ানো স্যাটেলাইট নয়। 

সেই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে কাছাকাছি একটি পর্বত শৃঙ্গতে একটি 'ground based' ভ্রাম্যমান রাডার ইউনিট এবং একটি 'স্পেক্ট্রাম এনালাইজার' স্থাপন করা হয়। কিন্তু এই বস্তুগুলি একই সময় চোখে দেখা গেলেও রাডার বা স্পেক্ট্রাম এনালাইসিসে ধরা দেয়নি। এমনকি এই বস্তুর উদ্দেশ্যে একটি এয়ারক্রাফটও ছাড়া হয় কিন্তু সেটি বস্তুর কাছাকাছি যাওয়ার আগেই বস্তুটি হঠাৎ করে সোজা উপরে উঠে যায় এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে বেরিয়ে যাবে। 




'ইন্ডিয়ান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজারভেটরি'র  জ্যোতির্বিদের একটি দল ও এই বস্তুগুলো তিন দিন ধরে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং তারা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে এগুলি কোন গ্রহ, উল্কা অথবা স্যাটেলাইট এর অংশ নয়। এই রহস্যময় বস্তুগুলি শয়ে শয়ে মিলিটারি অধিকারিক, বৈজ্ঞানিক এবং বিভিন্ন মানুষ দেখে গিয়েছেন কিন্তু কখনোই এদের সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

এর উপর দেখা গেছে গুগল আর্থ কংকা পাশের উপর বিভিন্ন অদ্ভুত বিষয় তুলে ধরেছে। যেমন- হঠাৎ করে মাটির ভিতর থেকে রহস্যময় গহর উন্মুক্ত হওয়া এবং তার থেকে যন্ত্রের বহির্গমন এবং রহস্যময় বিভিন্ন স্থাপনা, আনরেজিস্টার্ড মিলিটারি ফেসিলিটি, জটিল আকৃতির বিভিন্ন বিল্ডিং। দেখা গেছে এই সমস্ত ছবিগুলি গুগল আর্থে খুঁজে পাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ব্লার্ড বা অস্পষ্ট হয়ে যায়। এটা স্পষ্ট নয় যে এর সাথে এই অঞ্চলের ভিনগ্রহী গতি প্রকৃতির সাথে কি সম্পর্ক থাকতে পারে; কিন্তু অবশ্যই  এটি স্থানটির রহস্যময়তা আরো একধাপ বাড়িয়ে দেয়। এই স্থানটিতে কি চলছে এই গুলির কি কোনো বৈজ্ঞানিক কাহিনী আছে? দেশের সরকারগুলি কি কিছু গোপন করছে? এখানে কি ভিনগ্রহী দের কোনো বেস আছে? আপনার কি মনে হয় এই দুর্গম স্থানে এই রহস্যের কারণ কি হতে পারে?

Sunday, 31 January 2021

ভাইরাল ইউ এফ ও ভিডিও কি পাকিস্তানের আকাশে ভিনগ্রহীদের আনাগোনা প্রমাণ?

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ইউএফওর ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়েছে এবং এটি পাকিস্তানের একটি বিমান থেকে তোলা হয়েছিল, এ নিয়ে কিছু তথ্য তুলে ধরছি --

গত 23 জনুয়ারি পাকিস্তান ইন্টার্নেশনাল এয়ারলাইনস এর করাচি থেকে লাহোরগামি একটি বিমান 'পি কে 304'; পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এবং পাকিস্তান ইন্টার্নেশনাল এয়ারলাইনস মুখপাত্র আব্দুল্লাহ খানের মতে, পাঞ্জাব প্রদেশের রহিম ইয়ার খান অঞ্চলের কাছাকাছি 35,0000 অল্টিটিউডে  দুপুর চারটে থেকে চারটে তিরিশের কাছাকাছি সময়ে বিমানের পাইলটরা প্রথম একটি চকচকে বস্তু উড়ে যেতে দেখে যা তাদের মধ্যে একজন ভিডিও রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন এবং 41 সেকেন্ডের এই ভিডিওটি সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়।



পাইলট এবং কেবিন কর্মীদের মতে সূর্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও এই ইউ এফ ওটি অত্যন্ত উজ্জ্বল ছিল।

যদিও পি আই এ এর মুখপাত্রের মতে এই বস্তুটি কি ছিল তা এত তাড়াতাড়ি বলা ঠিক হবে না।

ক্যাপ্টেন ফায়সল কুরেশির বর্ণনা অনুযায়ী বস্তুটি যেন একটি মেটালের রিং এর মত কিছুতে ঘেরা ছিল এবং যার মাঝখান থেকে প্রচন্ড আলো নির্গত হচ্ছিল।

অনেকেই দাবি করেছেন, সম্ভবত এটি কোন ওয়েদার বেলুন বা আবহাওয়ার সংক্রান্ত গবেষণায় ব্যবহৃত বেলুন হতে পারে



কিন্তু পাকিস্তান আবহাওয়া দপ্তরের মুখপাত্র খালিদ মালিকের বক্তব্য অনুযায়ী তাদের কাছে 2 ধরনের বেলুন আছে প্রথমটি 6 থেকে 7000 ফিট উচ্চতা পর্যন্ত উঠতে পারে এবং অন্যান্য গুলি 70000 ফিট উচ্চতা পর্যন্ত উড়তে পারে এই বেলুনগুলো এক ধরনের 'radiosonde' বহন করে যা হলো ব্যাটারি পরিচালিত দূরত্ব মাপন যন্ত্র এবং আবহাওয়া দপ্তর এর সূত্র অনুযায়ী, এই দপ্তর অনেক আগেই এটি ব্যবহার বন্ধ করেছে বলে জানা গেছে ;এমনকি 'ডপলার করাচির' জাবেদ মেনন যিনি প্রাইভেট ওয়েদার স্টেশন পরিচালনা করেন তিনিও একই দাবি করেন, এর সাথে এটিও বলেন যে এই radiosonde গুলি রাবারের তৈরি হয় এবং ভিডিওতে যেরকম উজ্জ্বল বস্তু দেখা গেছে সেটা দেখে মনে হয় সেটি অ্যালুমিনিয়াম বা অন্যান্য কোন প্রকার ধাতু অথবা কাচের তৈরি।



এছাড়া কোনো কমার্সিয়ালি ড্রোন এখনো এই উচ্চতায় উড্ডয়নে সক্ষম নয় .

এদিকে পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটির স্পেস সাইন্টিস্ট জাভেদ স্বামী দাবি করেছেন, এই রহস্যময় চকচকে বস্তুটি আসলে ইউ এফ ও না, একটি লেন্টিকুলার মেঘ হতে পারে তিনি বর্ণনা করেছেন যে কমার্শিয়াল পাইলটরা এই ধরনের মেঘ দেখে থাকে এগুলোকে অনেক সময় এ রকম দেখতে হয়।

Monday, 25 January 2021

আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত ও অমীমাংসিত রহস্য --


আজ এমন একটি ঘটনা তুলে ধরছি যা এতটাই রোমাঞ্চকর যে ঘটনাটি বর্তমানের বিভিন্ন চলচ্চিত্র বা সাইন্স ফিকশন এর সাথে তুলনা করা যায়। কিন্তু এই ঘটনাটি বাস্তবে ঘটে ছিল।


ডি বি কুপার বা ড্যান কুপার নামে এই ব্যক্তি 1971 সালে পোর্টল্যান্ড থেকে ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে যাওয়া একটি বিমান হাইজ্যাক করেন এবং মুক্তিপণের টাকা নিয়ে প্যারাসুটে করে পালিয়ে যান। তার পিছনে প্রচুর পরিমাণে মানুষ নিযুক্ত করা হয় কিন্তু তাকে আর কোনদিনও খুঁজে পাওয়া যায়নি, যার ফলে আমেরিকার ইতিহাসে এটিই অন্যতম অমীমাংসিত রহস্য হিসাবে থেকে যায়।



এই ব্যক্তিটি নিজের নাম 'ড্যান কুপার' হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন কিন্তু সংবাদ করার সময় ভুলবশত এক সাংবাদিক তার নাম 'ডি বি কুপার' শুনেছিলেন যা পরবর্তীকালে সকলের মুখে প্রচলিত হয়ে পড়ে।

1971 সালের 24 নভেম্বর আমেরিকায় ঠিক 'থ্যাঙ্কস গিভিং ডে' এর পরের দিন 40 এর কাছাকাছি বয়স্ক ও 6 ফুট লম্বা এক ব্যক্তি 'north-west অরিয়েন্ট এয়ারলাইনস ফ্লাইট 305' এর একটি 20 ডলারের টিকিট কাটেন। তিনি তার নাম জানান ড্যান কুপার যা পরবর্তীকালে বানানো নাম বোঝা যায়। সেই সময়ে এয়ারপোর্টের সুরক্ষা ব্যবস্থা এখনকার মত এতটা কঠোর ছিল না। যাই হোক, পোর্টল্যান্ড থেকে টেক অফ করার পর তিনি ফ্লাইট এটেনডেন্ট কে একটি নোট দেন যাতে লেখা ছিল, তার ব্রিফকেসে একটি বোমা আছে; এরপর তিনি ব্রিফকেসটি খুলে দেখান। তার মধ্যে বিভিন্ন রকম তার, লাল রংয়ের লাঠির মত আকৃতির বস্তু এবং ব্যাটারি ইত্যাদি ছিল। কুপার চারটি প্যারাসুট এবং 2,00,000 ডলার 20 ডলারের বিলে (যার মূল্য 1.2 মিলিয়ন তখনকার হিসেবে ছিল) মুক্তিপণ দাবি করেন। 

ফ্লাইট সিয়াটেল অবতরণ করার পর যখন কর্তৃপক্ষ তাকে টাকা এবং প্যারাসুট দেয়, কুপার 36 জন যাত্রীকে মুক্ত করে দেন। যদিও দুজন পাইলট, একজন ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন ফ্লাইট এটেনডেন্টকে প্লেনে আটকে রাখেন; এরপর তেল ভরার পরে তিনি পাইলটকে মেক্সিকো সিটির উদ্দেশ্যে প্লেন নিয়ে যেতে বলেন; তাঁর আদেশ অনুসারে প্লেন 10,000 ফিট উঁচুতে 200 নটের কম গতিবেগে চালানো হয়। 

রাত 8 টার কাছাকাছি সিয়াটেল এবং নাভেদার রেনোর মাঝামাঝি স্থানে (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মনে করা হয় এটি ওয়াশিংটনের এরিয়েলের কাছাকাছি) কুপার প্লেনের রিয়ার স্টেপ নামান এবং ঝাঁপ দেন এরপর তিনি গায়েব হয়ে যান;এরপর এফবিআই ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘতম এবং পরিশ্রান্তিকর একটি তদন্ত চালায় যাকে 'NORJAK' (North-west Highjacking) নাম দেওয়া হয়। 




প্রথমদিকে এজেন্সি মনে করেছিল, কুপার প্লেন এবং এলাকার দুটিকেই ভালোভাবে জানতেন এবং তিনি মিলিটারিতে কাজ করেছিলেন - সম্ভবত প্যারাট্রুপার হিসেবে। পরবর্তীকালে যদিও মনে করা হয়, যে তিনি কোন অভিজ্ঞ স্কাইডাইভার ছিলেন না কারণ, এই ঝাঁপ দেওয়াটি খুবই বিপদজনক ছিল এবং সে হয়তো লক্ষ্য করেনি তার রিজার্ভ প্যারাসুট ট্রেনিংয়ে ব্যবহার করার জন্য সেলাই করে বন্ধ করা ছিল। এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম পাঁচ বছরে প্রায় 800 জন এর কাছাকাছি সন্দেহভাজনকে তদন্ত করা হয় এবং সবাইকেই সন্দেহ তালিকা থেকে এক এক করে বাদ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে অনেককে ডি এন এ পরীক্ষার মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়, এই ডিএনএ সেই 'টাই' থেকে পাওয়া গিয়েছিল যেটি কুপার ঝাঁপ দেওয়ার আগে খুলে ফেলেছিল। 

একজন অন্যতম সন্দেহভাজন এর নাম ছিল 'রিচার্ড ফ্লয়েড ম্যাকয়' যাকে এই ঘটনার কয়েক মাস পরে কিছুটা এরকমই অপরাধ করতে গিয়ে গ্রেফতার করা হয়; যদিও তাকে সন্দেহ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় কারণ, দুজন ফ্লাইট এটেনডেন্ট এর বর্ণনার সাথে তার কোন মিল খাচ্ছিল না। 


অনেকে মনে করেছিলেন, কুপার, যিনি একটি বিজনেস সুট ট্রেঞ্চ কোট এবং লোফার পড়েছিলেন, হয়তো বাঁচতে পারেননি। এই অল্টিটিউডে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় 200 মাইলের বেশি ছিল এবং যে প্যারাসুটটি তিনি নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, তা হয়ত সঠিকভাবে কাজ করেনি। এছাড়া সম্ভবত তিনি কোনো অসমতল এবং খুব গভীর জঙ্গলে মাঝামাঝি অবতরণ করেছেন এইভাবে বেশ কিছু বছর ধরে যখন এক এক করে সকল তদন্তের পথ অবরুদ্ধ হয়ে আসতে থাকলো ঠিক তখনই 1980 সালে একটি বালক 5,800 ডলার ভর্তি একটি প্যাকেজ পেল যা তদন্তকে একটি নতুন মোড় দিয়ে দিল। এটিকে এরিয়ালের থেকে 20 মাইলের কাছাকাছি এবং নর্থ পোর্টল্যান্ডের কলম্বিয়া নদীর তীরে একটি স্থানে পুঁতে রাখা হয়েছিল। এই টাকাগুলির সিরিয়াল নাম্বার এর সাথে মুক্তিপণের 20 ডলারের বিল গুলির সিরিয়াল নাম্বার মিলে গিয়েছিল; যদিও এরপরে আরো একটি ব্যাপক তদন্ত চালানোর পরও এর বেশি কিছু খুঁজে পাওয়া গেল না। যদিও এফ বি আই কিছু কিছু টিপস পেতে থাকলো কিন্তু 2016 সালে অবশেষে এজেন্সি সরকারিভাবে তদন্তটি বন্ধ করে দিল এই বলে যে, এই তদন্তের পেছনে যে পরিমাণ পরিশ্রম ও পুঁজি দিতে হচ্ছে তা অন্য অনেক তদন্তে কাজে লাগবে। এই অমীমাংসিত রহস্যটি পুরো দেশকে রোমাঞ্চিত করে দিয়েছিল এবং ডি বি কুপার কিছুটা কিংবদন্তির মত হয়ে গিয়েছে যা প্রচুর গান কবিতা এবং চলচ্চিত্রের অনুপ্রেরণা হয়েছে। বর্তমানে মার্ভেলের লোকী নামক চলচিত্রে এই ঘটনাটি আবার প্রচারিত হয়।