একটি নতুন গবেষণায় তথ্য পাওয়া গেছে যে, মানুষ বিবর্তনের মাধ্যমে একটি বিষাক্ত প্রজাতিতে পরিণত হওয়ার ক্ষমতা রাখে। যদিও এর সম্ভাবনা খুবই কম; এই গবেষণা দেখা গেছে স্তন্যপায়ী এবং সরীসৃপদের সালিভারি গ্ল্যান্ডে বিষ তৈরি করার উপাদান আছে এবং এই ভাবেই একশটির ওপরে বিষহিন প্রজাতি বিষাক্ত প্রাণীতে পরিণত হয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো স্তন্যপায়ীরা তাদের বিষ অন্য ভাবে ব্যবহার করে।
যেমন রক্তচোষা বাঁদরেরা তাদের বিষাক্ত লালা ব্যবহার করে ক্ষতস্থানের রক্ত তঞ্চন বা ব্লাড ক্লট হওয়া রোধ করে সেখান থেকে ক্রমাগত রক্ত পান করার জন্য।
বিষাক্ত ইঁদুরজাতীয় প্রাণীরা তাদের বিষ তাদের থেকে বিশাল আকৃতির প্রাণীদের হাত থেকে বাঁচতে এবং কিছু ক্ষেত্রে তাদের শিকারকে অসার বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত করতে ব্যবহার করে, যাতে শিকারকে তারা পরে ফিরে এসে খেতে পারে।
আবার প্লাটিপাস জাতীয় প্রাণীদের স্যালাইভা বা লালারসে বিষ থাকে না, তাদের পায়ের পেছনদিকে বিষাক্ত স্পার থেকে নির্গত হয় যা আত্মরক্ষার কাজে আসে।
প্রাইমেট অর্থাৎ বানর ও মানুষ জাতীয় উন্নত প্রজাতির মধ্যে একমাত্র 'স্লো লরিস' হল একটি বিষাক্ত প্রজাতি যাদের বিষ এতটা শক্তিশালী যা মাংসে পচন ঘটাতে পারে কিন্তু তারা অন্য কোন প্রাণীর উপর এগুলি প্রয়োগ করে না। কেবলমাত্র নিজেদের উপরই প্রয়োগ করে।
তাহলে মানুষ কি এই স্লো লোরিস এর মত বিষাক্ত হবে নাকি তার থেকেও বেশি অর্থাৎ সাপ বা মাকড়সার মতো?
জাপানের 'ওকিনাওয়া ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির' এভলিউশনারি জেনেটিক্স এর ডক্টরাল স্টুডেন্ট এবং এই গবেষণার সহ-সম্পাদক অগ্নিশ বড়ুয়ার মতে, মূলত আমাদের শরীরে এর জন্য প্রয়োজনীয় সবরকম উপাদানই উপস্থিত আছে। এখন এটা কেবল বিবর্তনের উপর নির্ভর করে, যে সে আমাদের কখন ও কোথায় নিয়ে যাবে।
এই গবেষণার অপর সহ-সম্পাদক 'অস্ট্রেলিয়ান ইউনিভার্সিটির' এভলিউশনারি বায়োলজিস্ট আলেকজান্ডার মিখায়েভ এবং বড়ুয়া দুজনে মিলে কেবলমাত্র বিষ নয় বরং এই সম্পর্কিত জিন গুলি নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন। তারা এক ধরনের 'ব্রাউন পিট' প্রজাতির সর্প যাকে 'তাইওয়ান হাবু' বলা হয় তাকে নিয়ে পরীক্ষায় দেখেছেন, এমনিওট (যে সকল প্রজাতির প্রাণীরা তাদের ডিম ভিতরে বহন করে অথবা বাইরে প্রসব করে) জাতীয় প্রজাতির মধ্যে অনেকগুলি জিনের মিল আছে এবং সেই সকল জিনের মধ্যে ফোল্ডিং প্রোটিন আছে।
মানুষের লালারসে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, বিশেষ করে 'কালীক্রেইন' যেই প্রোটিনগুলি অন্য প্রোটিনগুলির পচন ঘটায়। এই প্রোটিন গুলিকে লালারসে পাওয়া যায় এবং এগুলি বিভিন্ন বিষের মধ্যে বর্তমান থাকে। 'অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ডের' বায়োকেমিস্ট এবং ভেনোম বা বিষ সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ ব্রায়ান ফ্রাই এই গবেষণার অংশ না হলেও তিনি দাবি করেছেন, সকল প্রাণিকুল জুড়ে যে কোন বিষের মধ্যে এইভাবে এই কালীক্রেইন এর উপস্থিতি কোন আকস্মিক ঘটনা হতে পারেনা। এটি যেকোনো পরিস্থিতিতেই একটি অত্যন্ত সক্রিয় উৎসেচক এবং এটি কিছু একটা ঘটাতে চলেছে।
তবে গবেষকদের মতে আপাতত আমাদের বিষাক্ত প্রাণীতে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা কম, যদি না এমন কিছু ঘটে যা আমাদের ভবিষ্যতে বিষাক্ত প্রাণীতে বিবর্তিত হতে বাধ্য করে। লন্ডনের 'ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম'এর বিষ বা ভেনম সংক্রান্তঃ গবেষক রোনাল্ড জেনার এই গবেষণার অংশ না হলেও তিনি 'লাইভ সাইন্স' কে একটি ইন্টারভিউতে এই সংক্রান্ত একটি পুনরুক্তি করেন যে, কোন প্রাণী আত্মরক্ষার্থে অথবা শিকার করার প্রয়োজনে বিষাক্ত প্রাণীতে বিবর্তিত হয়।
এই গবেষণাটি 'প্রসিডিংস অফ দা ন্যাশনাল একাডেমী অফ সাইন্সেস' জার্নালে প্রকাশিত হয় এখানে আপনারা বিস্তারে এ সম্পর্কিত তথ্য পড়তে পারেন।
No comments:
Post a Comment