কল অফ ডিউটি ঘোস্ট বা ইনফাইনাইট ওয়ার - বিশ্ব জুড়ে খ্যাতি পাওয়া এই গেম গুলির গুরুত্ব পূর্ণ মিশনের মধ্যে দেখানো হয়েছিল মহাকাশে যুদ্ধ, মহাকাশকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সেনাবাহিনী যা পৃথিবীর উপর এক বিপর্যয় নিয়ে আসে। সত্যি কি সেই দিন আস্তে চলেছে ? এই ভিডিও গেম গুলি কি কেবল কল্পনা থেকে যাবে না কি হয়ে উঠবে বাস্তব দূরদৃষ্টি সম্পন্ন লেখকদের আরো একটি রচনা? বর্তমানের অনেক ভিডিও গেম (যেমন - এসাসিনস ক্রিড, ব্যাটেলফিল্ড ) বাস্তব পৃথিবী থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরী হচ্ছে যা পরে জনপ্রিয় হচ্ছে। যাক সে কথা পরে হবে,
আজ যে বিষয় নিয়ে বলছি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হচ্ছে মার্কিন বিমান বাহিনীর মানববিহীন এক্স-৩৭বি স্পেসপ্লেন।
আকারে ছোট হলেও, অনেকটা যেন নাসার পুরনো দিনের মহাকাশযান!
লম্বায় ৩০ ফুট বা ৯.১ মিটার (মানে, একটা আড়াই তলা বাড়িকে মাটির সঙ্গে সমান্তরাল রাখলে তা যতটা জায়গা জুড়ে থাকে)। আর তার একটা ডানা থেকে অন্য ডানাটার দূরত্ব ১৫ ফুট।ওজন ৪ হাজার ৯শ' ৮৯ কেজি।
পাঠানো হয়, কিছু দিন মহাকাশে কাটিয়ে সে ফিরে আসে। তার পর আবার তাকে পাঠানো হয় মহাকাশে। কিন্তু কেন পাঠানো হয়? কেনই-বা তাকে বার বার চুপিচুপি পাঠানো হয় মহাকাশে?
মহাকাশ যাত্রায় কি ধরণের পে লোড বা মালামাল বহন করে বা পৃথিবীর কক্ষে দীর্ঘ অবস্থানকালে এটি ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালায় তা বরাবরই গোপন রাখে আমেরিকা।
প্রথমবারের মতো অবতরণ করে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারে। অবতরণের সময় এর সৃষ্ট 'সনিক বুম' নামে পরিচিত প্রচণ্ড শব্দে অনেকেই চমকে ওঠেন।
প্রতিবারই ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যাণ্ডেনবার্গ বিমান ঘাঁটিতে এটি অবতরণ করেছে।
মার্কিন বিমান বাহিনী যেসব গোপন মিশন পরিচালনা করে এ মহাকাশ যানটি তারই অংশ ছিল। তবে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগণ জানিয়েছে- এ মহাকাশযানটি ঝুঁকি কমানোর কাজ করছিল।
এ প্রকল্পের জন্য কত ডলার খরচ করা হয়েছে, সে বিষয়টিও গোপন রাখা হয়েছে। ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো এ বিশেষ মহাকাশযানটি উড্ডয়ন করা হয়েছিল।
মার্কিন বিমান বাহিনীর মানববিহীন এক্স-৩৭বি স্পেসপ্লেনটি দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্পেস-এক্স উৎক্ষেপণ করবে। এর আগেও স্পেস-এক্স মহাকাশে পণ্যবাহী রকেট উৎক্ষেপণ করেছিল। পাশাপাশি ফ্যালকন রকেট পুনরুদ্ধারের চেষ্টায়ও প্রতিষ্ঠানটি সফলতার পরিচয় দেয়।
বিমান বাহিনীর সেক্রেটারি হেথার উইলসন সিনেট আর্মড সার্ভিস কমিটির শুনানিতে এ ঘোষণা দেন।
বিমান বাহিনীর দুইটি এক্স-৩৭বি স্পেসপ্লেন আছে। তবে কোনটি উৎক্ষেপণ করা হবে তা জানানো হয় না।
এক্স-৩৭বি মহাকাশ যানটি অরবিটাল টেস্ট ভিকেল (ওটিভি) হিসেবেও পরিচিত। মার্কিন বিমানবাহিনী এক্স-৩৭বি উৎক্ষেপণের জন্য কেন স্পেস-এক্সকে বেছে নিয়েছে তা জানা যায়নি। স্পেস-এক্স এ পর্যন্ত চারটি রকেট উৎক্ষেপণ করেছে।
এটি পৃথিবী নামক গ্রহটির চারপাশে অন্তত হাজারবার ঘুরপাক খেয়েছে। বিশেষ করে ইরান ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের উপর দিয়ে উড়েছে বেশ ক’বার।
ক্রুবিহীন এই বিমানে কোন ককপিট-জানালা নেই। সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি হলো, যেখানে কোন মহাকাশযান সর্বোচ্চ ১৭ দিন অবস্থান করতে পারে কক্ষপথে, সেখানে প্রথম মিশনের আওতায় (ওটিভি-১) ২২৫ দিন মহাশূন্যে অবস্থান করেছিল এক্স-৩৭বি। তখন এটি কলোরাডোয় অবস্থিত বিমান বাহিনীর একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল।
এক্স-৩৭বি মূলত ছোট মনুষ্যবিহীন সেপসপ্লেন তৈরির জন্য নাসা’র একটি প্রজেক্টের ফলাফল। নাসা এই প্রজেক্ট ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্স প্রজেক্টস অ্যাজেন্সি’র (ডারপা) হাতে হস্তান্তর করে। কিন্তু বাজেট সমস্যার কারণে প্রজেক্টটি আমেরিকান বিমান বাহিনীর র্যাপিড ক্যাপাবিলিটিজ অফিসের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকে প্রজেক্টের তত্ত্বাবধানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীই নিয়োজিত আছে। বিশ্বখ্যাত বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং-এর ফ্যান্টম ওয়ার্কস বিভাগ এক্স-৩৭বি মডেলের দুইটি বিমান তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনী বলছে না, এক্স-৩৭বি মহাকাশে মূলত কী ধরনের অভিযানে নিয়োজিত। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনী প্রযুক্তিগত অর্জন হিসেবে মহাকাশ সমপর্কিত বিভিন্ন যান সমপর্কে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করে না। কিন্তু এই মিশনের বেলায় তারা একেবারেই চুপ! ফলে গুজবের ডালপালা গজাচ্ছে।
সামরিক বাহাদুরিতে শুধু স্থল, জল আর আকাশপথেই থেমে নেই যুক্তরাষ্ট্র।
সম্প্রতি পাওয়া তথ্যে তারা গড়তে যাচ্ছে 'মহাকাশ বাহিনী'। সেনাবাহিনীর ষষ্ঠ শাখা হিসেবে মহাকাশেও মোতায়েন থাকবে দেশটির সেনা। আগামী দুই বছরের মধ্যে এই বাহিনী মোতায়েন করা হবে। বাহিনী গঠনের জন্য এরই মধ্যে ভোট দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের হাউস আর্মড সার্ভিস কমিটির সদস্যরা। খবর ইনডিপেন্ডেন্টের। যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর ষষ্ঠ শাখা হিসেবে মহাকাশ সেনা পৃথিবীর আবহমণ্ডলের বাইরে অর্থাৎ মহাশূন্যে সামরিক তৎপরতায় নিয়োজিত থাকবে। প্রয়োজনে যুদ্ধও করবে এ বাহিনী। পেন্টাগন ও মার্কিন প্রতিরক্ষাদপ্তরকে ইতিমধ্যেই এই ‘স্পেস ফোর্স’ গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প। এই সেনাবাহিনী হবে মার্কিন নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, মেরিন, সেনাবাহিনী এবং উপকূলরক্ষীর সমকক্ষ, কিন্তু আলাদা। এটি হবে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর ষষ্ঠ শাখা। ১৯৪৭, মার্কিন বিমানবাহিনীর একাত্তর বছর পর মার্কিন সেনাবাহিনীতে যুক্ত হচ্ছে কোনও নতুন শাখা।বিমানবাহিনীর বৈপ্লবিক সংস্কারের অংশ হিসেবে এ বাহিনী তৈরি হচ্ছে। আগামী দু'বছরের কম সময়ের মধ্যে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবশ্য মহাকাশ বাহিনী গঠনের বিষয়টি এখনও পুরোপুরি অনুমোদন পায়নি। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বাহিনী অনুমোদন লাভ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ কমান্ডের ছাতার তলে চলে আসবে বিমানবাহিনীর আওতাধীন সব মহাকাশ মিশন। মহাকাশ কমান্ডের একজন নতুন প্রধানও থাকবেন। আর এর মাধ্যমে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফে যোগ হবে ১৮তম সদস্য।
ট্রাম্পের টুইট: ‘মহাকাশবাহিনী গঠনের কাজ এগিয়ে চলেছে সব দিক থেকে!’
‘আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর ইতিহাসে নতুন অধ্যায় লেখার সময় চলে এসেছে, প্রস্তুত হতে হবে পরবর্তী রণাঙ্গনের জন্য, যেখানে আমাদের জনগণ, আমাদের দেশের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের হুমকিকে বাধা দেওয়া এবং পরাস্ত করার জন্য ডাকা হবে আমেরিকার সেরা ও সাহসীদের।’ বলেছেন পেন্স। ‘মহাকাশে মার্কিন গর্বের উত্তরাধিকারকে পুনর্প্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। মহাকাশ, তাঁর কথায়, একটি রণাঙ্গন, ঠিক যেমন আকাশ, মাটি, জল।’
আশঙ্কা বাস্তব হলে কোলেটারাল ড্যামেজ বা অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষয়ক্ষতি হবে অবর্ণনীয়। মহাকাশে অস্থিরতা মানে বিপন্ন হবে এই বসুন্ধরার অস্তিত্ব।
নিজস্ব উগ্র জাতীয়তাবাদী মেজাজে তবু ট্রাম্প বলেছেন: ‘মহাকাশে আমেরিকার নিছক উপস্থিতিই যথেষ্ট নয়, মহাকাশে থাকা উচিত মার্কিন আধিপত্য।’
‘গত প্রজন্মে মহাকাশের পরিবেশের মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে: একসময় যা ছিল শান্তিপূর্ণ, যেখানে ছিল না কোনও প্রতিযোগিতা, এখন তা ভিড়েঠাসা, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।’ পেন্সের দাবি, চীন ও রাশিয়া মহাকাশকে তাদের লড়াইয়ের খাসতালুকে পরিণত করেছে, চোখ রাঙাচ্ছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চ্যালেঞ্জের মুখে কুঁকড়ে যাবে না।’
জুনে ট্রাম্প প্রকাশ্যে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন রাশিয়া ও চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতির সঙ্গে মহাকাশে সেনা গঠনের রয়েছে সরাসরি যোগ।
আটের দশকের গোড়ায় রেগান বলেছিলেন ‘স্টার ওয়ার্স’, বা মহাকাশ যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা। যদিও সেই প্রস্তাব ছিল শুধুই একটি পরিকল্পনা, যা কখনও তেমনভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু বর্তমানে মহাকাশবাহিনী গঠনের জন্য রয়েছে অর্থ সংস্থানের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা। তবে রেগান থেকে ট্রাম্প— এই সময়ে আমেরিকা মহাকাশে স্থাপন করেছে সামরিক উপগ্রহ। একই পথে হেঁটেছে রাশিয়া, চীন। এই মুহূর্তে মহাকাশে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৮৫৯টি উপগ্রহ। এর মধ্যে ১৫৯টি ‘সামরিক’ উপগ্রহ, যেগুলি সরাসরি অপারেট করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। যেখানে চীন, রাশিয়ার রয়েছে যথাক্রমে ৭৫ ও ৩৬টি সামরিক উপগ্রহ।
মার্চে প্রথম, সান দিয়েগোতে মার্কিন সেনাবাহিনীর উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘মহাকাশ নিয়ে আমাদের কৌশল হলো: আকাশ, মাটি, জলের মতো মহাকাশও হবে আমাদের কাছে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র। তাই সেখানে যুদ্ধ করার জন্য মহাকাশবাহিনী নামে আমাদেরও থাকবে একটি আলাদা বাহিনী।’ পরে মে মাসে হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে দাঁড়িয়ে একই সওয়াল করেন।
যদিও, ট্রাম্পের প্রস্তাব তাঁর মন্ত্রীসভা এবং পেন্টাগনের কাছ থেকেই বিরোধিতার মুখে পড়ে। শুরুতে বিরোধিতা করলেও ম্যাটিসই এখন বলছেন, এটি একটি ভালো পরিকল্পনা। মহাকাশ ‘একটা যুদ্ধের ময়দানে পরিণত হচ্ছে, আর আমাদের ওই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে।’
তাছাড়া, এই ধারণার সমর্থক রয়েছে মার্কিন কংগ্রেসের ভিতরে-বাইরে, যাঁরা বলছেন, মহাকাশ এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে নেই সামরিকবাহিনীর কোনও পৃথক শাখা।
‘মহাকাশ হলো এমন একটি জায়গা’ যেখানে পরিকাঠামোয় রয়েছে ‘শয়ে শয়ে কোটি ডলার।’ বলেছেন মার্ক অ্যালব্রেকট, যিনি ১৯৮৯-৯২ পর্যন্ত ছিলেন ন্যাশনাল স্পেস কাউন্সিলের সচিব। ‘আর্থিক লেনদেন থেকে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জি পি এস), যা আমাদের গাড়ির পথ নির্দেশ করে— হয় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে মহাকাশ থেকে, নতুবা মহাকাশ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।’ মহাকাশে সামরিক কার্যকলাপ, তাঁর মতে, সেকারণেই ‘মার্কিন নৌবাহিনী— যারা সমস্যা তৈরি বা যুদ্ধ এড়ানোর জন্য প্রশান্ত মহাসাগর, অতলান্তিক এবং ভূমধ্যসাগরে ঘুরে বেড়ায়— তাদের থেকে শুধু বস্তুগতভাবেই পৃথক নয়— যে সমস্ত জিনিস আজ আমরা উপভোগ করছি, তার সুরক্ষা নিশ্চিত করতেও এটা আমাদের প্রয়োজন।’
মার্কিন সামরিকবাহিনী মারাত্মকভাবে নির্ভরশীল মহাকাশের উপর। যোগাযোগ, পর্যবেক্ষণ এবং ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রকে চিহ্নিত করার জন্য এখন পেন্টাগনের কাছে মহাকাশই ভরসা। চীন ইতিমধ্যেই উপগ্রহকে ব্যবহার করে ভূপৃষ্ঠ থেকে আকাশে আঘাত হানতে সক্ষম এমন একটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র আবিষ্কার করে ফেলেছে। যা নিয়ে ওয়াশিংটন খুবই উদ্বিগ্ন। ২০০৭, চীন এমনকি স্রেফ পরীক্ষা করার জন্য নিজেরই একটি আবহাওয়া-উপগ্রহকে গুলি করে নামিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যার প্রতিবাদ করেছে। অবশ্য পরের বছরই এস এম-৩ ক্ষেপণাস্ত্রকে ব্যবহার করে একটি উপগ্রহকে উড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এটা কি আদৌ নতুন কোনও প্রস্তাব? মোটেই না। মহাকাশে সামরিকীকরণের এই ধারণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন না।
সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পর থেকেই, যখন মার্কিন সরকার জার্মানি থেকে নিয়ে এসেছিল প্রাক্তন নাৎসি রকেট বিজ্ঞানীদের। ‘মার্কিন মহাকাশ ও সমরাস্ত্র কর্মসূচিকে সাহায্য করতে তাঁদের কারিগরি কৃৎকৌশল’ ব্যবহারের জন্যই নিয়ে আসা হয়েছিল তাঁদের। লিখেছেন নিউইয়র্কের স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জ্যাক মান্নো, তাঁর ‘আর্মিং দ্য হিভেনস: দ্য হিডেন মিলিটারি অ্যাজেন্ডা ফর স্পেস, ১৯৪৫-১৯৯৫’ গ্রন্থে। প্রায় ১,০০০ বিজ্ঞানীকে সেদিন নিয়ে আসা হয়েছিল, ‘যাঁদের অনেকেই পরে মার্কিন সামরিকবাহিনী, নাসা এবং অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেছেন।’ যাঁর মধ্যে ছিলেন ‘ওয়ের্নহার ভ্যন ব্রাউন ও তাঁর সহকর্মীরা’, যাঁরা ‘শুরু করেছিলেন মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য রকেট তৈরির কাজ।’
রহস্যজনক এক্স-৩৭বি মহাকাশ-বিমানের মতো মহাকাশে সামরিক প্রযুক্তি দেখভালের জন্য রয়েছেন ৩৬,০০০ কর্মী। তাছাড়া, এখনই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে এক ধরনের মহাকাশবাহিনী: এয়ার ফোর্স স্পেস কমান্ড। এবং মার্কিন বিমানবাহিনী তার মহাকাশ অভিযানের জন্য প্রতি বছর খরচ করে ৮৫০ কোটি ডলার। এটাই যথেষ্ট নয়। আলাদা মহাকাশবাহিনী না থাকার কারণে পেন্টাগন প্রতি বছর খরচ করতে পারছে না ১২,৫০০ কোটি ডলার।
১৯৫৭, স্পুটনিক-১। বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ওড়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। একবছর বাদেই, বহির্জগতের শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য গঠিত হয় রাষ্ট্রসঙ্ঘের কমিটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, গণসাধারণতন্ত্রী চীন ছিল তার অংশ। ১৯৬৬, রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হওয়ার পরের বছর ১৯৬৭-তে কার্যকর হয় আউটার স্পেস ট্রিটি। তিনটি দেশই সই করে সেই চুক্তিতে। অনুমোদন করে ১২৩টি দেশ।
চুক্তির মূল কথা ছিল: অনুসন্ধান, আবিষ্কারের জন্য সমস্ত দেশের কাছে মুক্ত থাকবে মহাকাশ। এই মহাকাশের কোনও কিছুকেই কোনও একটি দেশের ভূখণ্ড বলে দাবি করা যাবে না। মহাকাশের কার্যকলাপ হওয়া উচিত মানবতার কল্যাণের স্বার্থে। পারমাণবিক অস্ত্রসহ অন্যান্য গণবিধ্বংসী অস্ত্র নিষিদ্ধ থাকবে মহাকাশে। কোনও দেশই তা মজুত করতে পারবে না। নিজেদের মহাকাশ যানের ক্ষয়ক্ষতির জন্য দায়ী থাকবে সংশ্লিষ্ট সেই দেশ।
সাম্প্রতিক সময়ে, গত পঁচিশ বছর ধরে এই ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’র সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে। শুধু পারমাণবিক অস্ত্র, গণবিধ্বংসী অস্ত্রই নয়, মহাকাশে থাকবে না কোনোরকম সমরাস্ত্র। মহাকাশ হবে সমরাস্ত্র-মুক্ত। বহির্জগতে সমস্ত সমরাস্ত্র নিষিদ্ধ করার জন্য এই সময়ে চীন, রাশিয়া রাষ্ট্রসঙ্ঘের মঞ্চে বারংবার খসড়া প্রস্তাব পেশ করে এসেছে। আর প্রতিবারই তা খারিজ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। শেষে, গতবছর অক্টোবরে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের সংশ্লিষ্ট কমিটি ‘বহির্জগতে অস্ত্র প্রতিযোগিতা প্রতিরোধে বাস্তব পদক্ষেপ’ চেয়ে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে। বিরোধিতা করে মাত্র পাঁচটি দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ব্রিটেন, ইজরায়েল, ফ্রান্স এবং ইউক্রেন। ভোট দেয় প্রস্তাবের বিরুদ্ধে। সমর্থন করে ১২১টি দেশ।
১৯৯৯ সালে এক্স-৩৭বি কর্মসূচি শুরু হয়, মার্কিন এ গোপন মিশন নিয়ে বিশেষজ্ঞরা অনেক কথা বলছেন তবে এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চীনের মহাকাশ গবেষণাগারের ওপর গোয়েন্দাগরি করা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক্স-৩৭কে নতুন প্রযুক্তির পরীক্ষা এবং গোয়েন্দা উপগ্রহ স্থাপনের কাজে লাগানো সম্ভব। এ সব কৃত্রিম উপগ্রহ অস্ত্র সজ্জিতও হতে পারে। অবশ্য পেন্টাগন দাবি করছে, অস্ত্রসহ কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপনের কোনো পরিকল্পনায় এক্স-৩৭ ওটিভি জড়িত নয়।
এদিকে মহাকাশ বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ মহাকাশ বিমানটি আমেরিকার সামরিক কর্মসূচীরই অংশ এবং মহাকাশ যুদ্ধ প্রস্তুতির অংশ। যুদ্ধকালীন সময়ে এ বিমানটি হয়ে উঠতে পারে মার্কিন সামরিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এ বিমান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হতে পারে সব ক্ষেপণাস্ত্র ও অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র। বিমানটি লেসার অস্ত্র সজ্জিত করে প্রয়োজনের সময় শত্রুর উপগ্রহগুলো অকেজো করে দেয়ার কাজে ব্যবহার করা হতে পারে। এটি শত্রুর আন্তমহাদেশীয় ব্যালিষ্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস বা অকেজো করে দেয়ার কাজেও ব্যবহার করা হতে পারে।
কারও ধারণা, কাকপক্ষী টের পাওয়ার আগেই এটা মহাকাশ থেকে আচমকা বোমা ফেলে দিতে পারে আমেরিকার কোনও শত্রু দেশ বা কোনও উপদ্রুত অঞ্চলের ওপর।
কারও অনুমান, ‘এক্স-৩৭বি’ আমেরিকার শত্রু দেশের উপগ্রহকে বধ করার হাতিয়ার। যা ‘শত্রু’ উপগ্রহকে পুরোপুরি ধ্বংস বা তার যথেষ্ট ক্ষতি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার গোত্র ‘কিলার স্যাটেলাইট’ বা ঘাতক উপগ্রহ।
আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই কৃত্রিম উপগ্রহকে ব্যবহার করেছে, করে চলেছে প্রতিরক্ষায়, প্রতি আক্রমণের কাজে। সন্দেহ নেই, শত্রু দেশের উপগ্রহগুলিকে মহাকাশে বধ করার ফন্দিও আঁটা হয়েছে কখনও সখনও।
২০১৫ সালে সেই আশঙ্কাটা জোরালো হয়েছিল একটি রুশ উপগ্রহের সন্দেহজনক গতিবিধিতে। অনেকেরই ধারণা হয়েছিল, মহাকাশে শত্রু দেশের পাঠানো উপগ্রহগুলিকে বিকল করে বা ধ্বংস করে দিতেই ওই উপগ্রহটি পাঠিয়েছে রাশিয়া।
‘এক্স-৩৭বি’ চলে সৌরশক্তিতে। তার সৌর প্যানেল সূর্যের আলো, বিকিরণ শুষে নিয়ে যে জ্বালানি বানায়, সেটাই ‘এক্স-৩৭বি’-কে দৌড় করায় কক্ষপথে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, যদি এক্স-৩৭বি শুধুই একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্প হয়ে থাকে, তাহলে পেন্টাগন কেন এ সমপর্কে তথ্য প্রকাশ করছে না। এ সমপর্কে উইডেন বললেন, আমি মনে করি না যে, আমেরিকান সরকার অসৎ কিছু গোপন করার লক্ষ্যে এক্স-৩৭বি নিয়ে গোপনীয়তা অবলম্বন করছে। বরং এর কারণ হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক জড়তা।
বোয়িং বর্তমানে কেনেডি সেপস সেন্টারে অরবিটার প্রসেসিং সেন্টার রূপান্তরের কাজ করছে। বোয়িং এক্স-৩৭বি’র তুলনায় বড় এক্স-৩৭সি বানানোর প্রস্তাব করেছে। এক্স-৩৭সি ৬ জন মহাকাশযাত্রীকে নিয়ে কক্ষপথে যেতে ও ফিরতে পারবে। তবে এই প্রজেক্ট নির্ভর করবে রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সমপর্কের উপর। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের পর রাশিয়াই মহাকাশে যাত্রী পাঠানোর ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সক্ষম দেশ।
No comments:
Post a Comment