আমাদের পৃথিবীটা যেই সৌরজগত এর মধ্যে অবস্থিত সেই সৌরজগত এর বাইরে যে মহাবিশ্ব আছে সেখানে খুবই রহস্যময় বিষয়বস্তু চারিদিকে ছড়িয়ে আছে। আমরা কিন্তু সবাই সেই বিষয়গুলি নিয়ে খুব একটা জানতে চাই না। তবে যারা বিজ্ঞানের উপরে বিশ্বাস রাখে তাদের এক অংশ কে দেখা যায় এসব অজানা নিয়ে আরো জানতে আগ্রহী কিন্তু, বাকীরা জীবনে কয়েকবার মাত্র আকাশের দিকে যখন সময় পায় তখন একটু তাকিয়ে মনে কল্পনা করে কি আছে এই আকাশে। কিছু তারা ও চাঁদ দেখতে পারলেই মহাকাশ সম্পর্কে জানার ইচ্ছা শেষ হয়ে যায় তাদের। আজকে ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর নিয়ে অল্প কিছু আলোচনা করবো।
রহস্যময় মহাবিশ্বের অনেক রহস্যময় জিনিসের মধ্যে মানুষ আজ পর্যন্ত খুব অল্প কিছুই জানতে পেরেছে, ৯৯,৯৯% এখনও মানুষের অজানা। তাহলে একবার ভেবে দেখুন এই মহাবিশ্বের কি জানতে পেরেছে আজকের পৃথিবীর মানুষ। পৃথিবী থেকে ভাগ হয় সৃষ্ট সেই চাদে মানুষ আজ থেকে প্রায় অর্ধশত বছর আগেই ঘুরে এসেছেন। চাদের থেকেও এই মহাবিশ্বের আরো একটি রহস্য হচ্ছে এই ব্ল্যাক হোল। পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই কৃষ্ণ গহ্বর সম্পর্কে এ পর্যন্ত জানতে পেরেছেন সামান্যই। তবে যতটা তথ্য উদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন তা যথার্থই অভাবনীয়, সাধারণ চিন্তার বাইরে।
পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার এর নাম দেন ব্ল্যাক হোল, কারন ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষ বল এতই বেশি যে এর আকর্ষন থেকে এমনকি আলোও(ফোটন) বের হয়ে আসতে পারে না। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন তার জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত দিয়ে ধারনা করেন ব্ল্যাক হোল থাকা সম্ভব। আর মাত্র ১৯৯৪ সালে এসে নভোচারিরা প্রমাণ করেন আসলেই ব্ল্যাক হোল আছে। এটি কোন সাইন্স ফিকশন নয়। জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল শোয়ার্জস্কাইল্ড ১৯১৬ সালেই দেখান যেকোন তারকা ব্ল্যাক হোলে পরিণত হতে পারে। সূর্যের ব্যাসার্ধ (৮৬৪,৯৫০মাইল) যদি কমতে কমতে সঙ্কুচিত হয়ে ১.৯ মাইলে পরিণত হয় তাহলে সূর্যও ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে।
সূর্যের চেয়ে কমপক্ষে দশগুণ বড় নক্ষত্রদের জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে এরা সঙ্কুচিত হতে হতে অতি খুদ্র অন্ধকার বিন্দুতে পরিণত হয়। এধরণের ব্ল্যাক হোলকে বলা হয় স্টেলার মাস (Stellar Mass) ব্ল্যাক হোল। বেশীরভাগ ব্ল্যাক হোলই এধরণের। কিন্তু নক্ষত্রের সঙ্কুচিত হয়ে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হওয়ার পরও ব্ল্যাক হোলে নক্ষত্রের সমান ভর ও অভিকর্ষ টান থাকে। আমাদের গ্যালাক্সিতে সম্ভবত ১০০ মিলিয়ন ব্ল্যাক হোল রয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি সেকেন্ডে একটি ব্ল্যাক হোল সৃষ্টি হয়। আরেক ধরণের ব্ল্যাক হোল হল সুপার মেসিভ (Super massive) ব্ল্যাক হোল। তাদের এক মিলিয়ন তারার ভর এমনকি এক বিলিয়ন তারার ভরও থাকতে পারে। সুপার মেসিভ ব্ল্যাক হোলরা কোন গ্যালাক্সির মিলিয়ন বা বিলিয়ন তারাকে একত্রে ধরে রাখে। আমাদের গ্যালাক্সিতেও কিন্তু একটি সুপার মেসিভ ব্ল্যাক হোল আছে। সেটির নাম Sagittarius A, যা আবিষ্কৃত হয়েছিল ৪০ বছর আগে।
ব্ল্যাক হোলের আকর্ষণ এতই বেশী যে এর থেকে দৃশ্যমান আলো, এক্স রে, অবলোহিত রশ্মি কিছুই রক্ষা পায় না। এজন্যই ব্ল্যাক হোল আমাদের কাছে অদৃশ্য। বিজ্ঞানীরা তাই ব্ল্যাক হোল নিয়ে গবেষণা করার সময় খেয়াল করেন ব্ল্যাক হোল তার আশপাশকে কিভাবে প্রভাবিত করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্ল্যাক হোল থেকে প্রায়ই উজ্জ্বল গ্যাস ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফোয়ারা নিক্ষিপ্ত হয়।
আলট্রা ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলরা বিলিয়ন বছর আগে তৈরি হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে ভর অর্জন করে এত বৃহৎ ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়েছে। বড় ব্ল্যাক হোলরা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে এটিই একমাত্র রহস্য নয়! এই ব্ল্যাক হোলরা কিভাবে সহস্র বিলিয়ন তারা ধরে রাখে তাও বিশাল রহস্য। সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলরা আগে সৃষ্টি হয়েছে নাকি গ্যালাক্সির গুচ্ছ বা ক্লাস্টার আগে সৃষ্টি হয়েছে তা আজও অজানা।
একটি আবিস্কার ব্ল্যাক হোল নিয়ে রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে। বৈজ্ঞানিক Jonelle Walsh ও তাঁর সহকর্মীরা হাবল টেলিস্কোপের সাহায্যে NGC 1277 নামের একটি গ্যালাক্সি আবিস্কার করেছেন। গ্যালাক্সিটি ২০০ আলোক বছরের চেয়েও অধিক দূরে অবস্থিত। NGC 1277 এর আকার আমাদের মিল্কিওয়ের চার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু Jonelle Walsh ও তাঁর সহকর্মীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গ্যালাক্সিটির কেন্দ্রে একটি ব্ল্যাক হোল আছে যার আকার এই পর্যন্ত যত বড় ব্ল্যাক হোল আবিস্কার হয়েছে তার একটি। ধারণা মতে এটি Sagittarius A এর তুলনায় ৪০০০ গুণ বড়! Jonelle Walsh এর ভাষায় ‘ব্ল্যাক হোলটি তার গ্যালাক্সির তুলনায় অনেক বড়”
আগে ধারণা করা হত ব্ল্যাক হোল ও গ্যালাক্সি এক সাথে বড় হয় এবং এক সাথেই বড় হওয়া থেমে যায়। কিন্তু এই নতুন আবিস্কার অনুযায়ী হয় ব্ল্যাক হোল তার আশেপাশের তারা ও ব্ল্যাক হোল খেয়ে বড় হতে থাকে অথবা শুরু থেকেই এটি কোন উপায়ে বেশী বড় হয়ে গিয়েছে।
এরকম আরো কি আশ্চর্য হবার মতো ঘটনা আছে এই ব্ল্যাক হোল এর ভেতরে যা আমাদের এই পৃথিবীতে কখনই ঘটে না। আলোর ব্যাপারটি দেখুন। যেহেতু এই ব্লাক হোল থেকে আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না তাহলে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ত কিভাবে দেখা যায় বা বুঝা যায় এরকম প্রশ্ন উঠতে পারে। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, অনেক সময়েই মহাকাশে প্রচুর তারকারাশি দেখা যায় যারা একটি বিশেষ বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে অথবা সর্পিলাকার গ্যাসীয় বস্তু দেখা যায় যা কোন বিন্দুকে কেন্দ্র করে অবস্থান করছে। এই বিশেষ বিন্দুগুলোই হল ব্ল্যাক হোল যেগুলোকে দেখা যাচ্ছে না ঠিকই কিন্তু তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে তারকারাশি বা গ্যাসীয় বস্তুগুলোর অবস্থান আর তাদের গতি-প্রকৃতির মাধ্যমে। বর্তমানে কিছু উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার করে কিছু টেলিস্কোপ দিয়ে নেগেটিভের মতো কিছু ছবিও তুলে দেখাতে সক্ষম হয়েছে সৌরবিজ্ঞানীরা।
একসময় আশংকা করা হত, সূর্য কি তবে একদিন নিজেই ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে –পৃথিবীকে গ্রাস করবে? নাসার বিজ্ঞানিরা এ আশংকা উড়িয়ে দিয়েছেন।
আমাদের গ্যালাক্সির নাম মিল্কি ওয়ে বা আকাশ গঙ্গা। আকাশ গঙ্গার ঠিক মাঝখানে রয়েছে সূর্য থেকে ৪ মিলিয়ন বেশি ভরের একটি ব্ল্যাক হোল। ১৬ বছর ধরে আশে-পাশের তারামন্ডলীর গতি-বিধি পর্যবেক্ষণ করে গত ২০০৮ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা Sagittarius A-star নামের ব্ল্যাক হোলটি শনাক্ত করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ব্ল্যাক হোলটি কোন কিছু গলাধঃকরণ করছে না। ব্ল্যাক হোল এর ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত ধারণাটি হচ্ছে ব্লাক হোল সব কিছু গ্রাস করে নেয়।
আলো শুষে নেয় বলে ব্ল্যাক হোল দেখা সম্ভব নয়। আলো শুষে নিতে পারে বলে হয়তো ব্ল্যাক হোল সব কিছু গলাধঃকরণ করতে পারে এই ধারণা সবারই হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ব্ল্যাক হোলেরও নিজস্ব ভর রয়েছে। অধিকাংশ গ্যালাক্সিই ব্ল্যাক হোলকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান থাকতে পারে। তাই বলে, ব্ল্যাক হোল গ্যালাক্সিতে থাকা নক্ষত্র, গ্রহসমূহ গিলে ফেলে না। তাই এটা বলা যায়, আকাশ গঙ্গার মাঝখানে বৃহৎ ব্ল্যাক হোল যদি থেকেও থাকে, তা আমাদের পৃথিবীকে কখনোই গিলে ফেলবে না। বরং সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহগুলোর সাথে সমান দূরত্ব রেখে ঘূর্ণায়মান থাকবে। আবার ব্ল্যাক হোল সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় বৃহদায়তনের ভর সূর্যের নেই বলে সূর্যও কখনো ব্ল্যাক হোল এ পরিণত হবেনা।
এবার একটু ছোট্ট একটি চিন্তা করুন আমরা জানি যে আমাদের এই বিশাল পৃথিবী থেকে যেই ছোট্ট সূর্যটি আমরা দেখতে পায় তা আমাদের এই পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুন বড় একটি বস্তু। তার মানে এই সূর্যের কাছে আমাদের পৃথিবী কিছুই না। আবার যেই নক্ষত্র বা তারার কথা বলা হচ্ছে যাদের এই ব্ল্যাক হোল গিলে ফেলতে পারে সেই নক্ষত্রর একেকটার আকৃতি কিন্তু এই সুর্য থেকে কয়েক হাজার এমনকি কয়েক লক্ষ গুন বড় হতে পারে। তাহলে একটি ব্ল্যাক হোল বা (Super massive) ব্ল্যাক হোল এর ভেতরে আমাদের এই পৃথিবীর সমান কতটা পৃথিবী ধরতে পারে একটু চিন্তা করে দেখুন একবার। দরকার নেই থাক। আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এতোই বিশাল যে এর গ্রহ-উপগ্রহ, তারা, নক্ষত্র বিজ্ঞানীদের প্রায়ই ধাঁধায় ফেলে দেয়। আর এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ‘ইউওয়াই স্কুটি’ (UY Scuti) নামের সবচাইতে বড় তারা যেটা একাই বিজ্ঞানীদের মাথা গুলিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
রহস্যময় মহাবিশ্বের অনেক রহস্যময় জিনিসের মধ্যে মানুষ আজ পর্যন্ত খুব অল্প কিছুই জানতে পেরেছে, ৯৯,৯৯% এখনও মানুষের অজানা। তাহলে একবার ভেবে দেখুন এই মহাবিশ্বের কি জানতে পেরেছে আজকের পৃথিবীর মানুষ। পৃথিবী থেকে ভাগ হয় সৃষ্ট সেই চাদে মানুষ আজ থেকে প্রায় অর্ধশত বছর আগেই ঘুরে এসেছেন। চাদের থেকেও এই মহাবিশ্বের আরো একটি রহস্য হচ্ছে এই ব্ল্যাক হোল। পৃথিবীর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই কৃষ্ণ গহ্বর সম্পর্কে এ পর্যন্ত জানতে পেরেছেন সামান্যই। তবে যতটা তথ্য উদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন তা যথার্থই অভাবনীয়, সাধারণ চিন্তার বাইরে।
পদার্থবিজ্ঞানী জন হুইলার এর নাম দেন ব্ল্যাক হোল, কারন ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষ বল এতই বেশি যে এর আকর্ষন থেকে এমনকি আলোও(ফোটন) বের হয়ে আসতে পারে না। ১৯১৬ সালে আইনস্টাইন তার জেনারেল রিলেটিভিটি তত্ত দিয়ে ধারনা করেন ব্ল্যাক হোল থাকা সম্ভব। আর মাত্র ১৯৯৪ সালে এসে নভোচারিরা প্রমাণ করেন আসলেই ব্ল্যাক হোল আছে। এটি কোন সাইন্স ফিকশন নয়। জার্মান বিজ্ঞানী কার্ল শোয়ার্জস্কাইল্ড ১৯১৬ সালেই দেখান যেকোন তারকা ব্ল্যাক হোলে পরিণত হতে পারে। সূর্যের ব্যাসার্ধ (৮৬৪,৯৫০মাইল) যদি কমতে কমতে সঙ্কুচিত হয়ে ১.৯ মাইলে পরিণত হয় তাহলে সূর্যও ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে।
সূর্যের চেয়ে কমপক্ষে দশগুণ বড় নক্ষত্রদের জ্বালানি শেষ হয়ে গেলে এরা সঙ্কুচিত হতে হতে অতি খুদ্র অন্ধকার বিন্দুতে পরিণত হয়। এধরণের ব্ল্যাক হোলকে বলা হয় স্টেলার মাস (Stellar Mass) ব্ল্যাক হোল। বেশীরভাগ ব্ল্যাক হোলই এধরণের। কিন্তু নক্ষত্রের সঙ্কুচিত হয়ে ব্ল্যাক হোলে পরিণত হওয়ার পরও ব্ল্যাক হোলে নক্ষত্রের সমান ভর ও অভিকর্ষ টান থাকে। আমাদের গ্যালাক্সিতে সম্ভবত ১০০ মিলিয়ন ব্ল্যাক হোল রয়েছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে প্রতি সেকেন্ডে একটি ব্ল্যাক হোল সৃষ্টি হয়। আরেক ধরণের ব্ল্যাক হোল হল সুপার মেসিভ (Super massive) ব্ল্যাক হোল। তাদের এক মিলিয়ন তারার ভর এমনকি এক বিলিয়ন তারার ভরও থাকতে পারে। সুপার মেসিভ ব্ল্যাক হোলরা কোন গ্যালাক্সির মিলিয়ন বা বিলিয়ন তারাকে একত্রে ধরে রাখে। আমাদের গ্যালাক্সিতেও কিন্তু একটি সুপার মেসিভ ব্ল্যাক হোল আছে। সেটির নাম Sagittarius A, যা আবিষ্কৃত হয়েছিল ৪০ বছর আগে।
ব্ল্যাক হোলের আকর্ষণ এতই বেশী যে এর থেকে দৃশ্যমান আলো, এক্স রে, অবলোহিত রশ্মি কিছুই রক্ষা পায় না। এজন্যই ব্ল্যাক হোল আমাদের কাছে অদৃশ্য। বিজ্ঞানীরা তাই ব্ল্যাক হোল নিয়ে গবেষণা করার সময় খেয়াল করেন ব্ল্যাক হোল তার আশপাশকে কিভাবে প্রভাবিত করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ব্ল্যাক হোল থেকে প্রায়ই উজ্জ্বল গ্যাস ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফোয়ারা নিক্ষিপ্ত হয়।
আলট্রা ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলরা বিলিয়ন বছর আগে তৈরি হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে ভর অর্জন করে এত বৃহৎ ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়েছে। বড় ব্ল্যাক হোলরা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে এটিই একমাত্র রহস্য নয়! এই ব্ল্যাক হোলরা কিভাবে সহস্র বিলিয়ন তারা ধরে রাখে তাও বিশাল রহস্য। সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলরা আগে সৃষ্টি হয়েছে নাকি গ্যালাক্সির গুচ্ছ বা ক্লাস্টার আগে সৃষ্টি হয়েছে তা আজও অজানা।
একটি আবিস্কার ব্ল্যাক হোল নিয়ে রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে। বৈজ্ঞানিক Jonelle Walsh ও তাঁর সহকর্মীরা হাবল টেলিস্কোপের সাহায্যে NGC 1277 নামের একটি গ্যালাক্সি আবিস্কার করেছেন। গ্যালাক্সিটি ২০০ আলোক বছরের চেয়েও অধিক দূরে অবস্থিত। NGC 1277 এর আকার আমাদের মিল্কিওয়ের চার ভাগের এক ভাগ। কিন্তু Jonelle Walsh ও তাঁর সহকর্মীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গ্যালাক্সিটির কেন্দ্রে একটি ব্ল্যাক হোল আছে যার আকার এই পর্যন্ত যত বড় ব্ল্যাক হোল আবিস্কার হয়েছে তার একটি। ধারণা মতে এটি Sagittarius A এর তুলনায় ৪০০০ গুণ বড়! Jonelle Walsh এর ভাষায় ‘ব্ল্যাক হোলটি তার গ্যালাক্সির তুলনায় অনেক বড়”
আগে ধারণা করা হত ব্ল্যাক হোল ও গ্যালাক্সি এক সাথে বড় হয় এবং এক সাথেই বড় হওয়া থেমে যায়। কিন্তু এই নতুন আবিস্কার অনুযায়ী হয় ব্ল্যাক হোল তার আশেপাশের তারা ও ব্ল্যাক হোল খেয়ে বড় হতে থাকে অথবা শুরু থেকেই এটি কোন উপায়ে বেশী বড় হয়ে গিয়েছে।
এরকম আরো কি আশ্চর্য হবার মতো ঘটনা আছে এই ব্ল্যাক হোল এর ভেতরে যা আমাদের এই পৃথিবীতে কখনই ঘটে না। আলোর ব্যাপারটি দেখুন। যেহেতু এই ব্লাক হোল থেকে আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না তাহলে ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ত কিভাবে দেখা যায় বা বুঝা যায় এরকম প্রশ্ন উঠতে পারে। মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, অনেক সময়েই মহাকাশে প্রচুর তারকারাশি দেখা যায় যারা একটি বিশেষ বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে অথবা সর্পিলাকার গ্যাসীয় বস্তু দেখা যায় যা কোন বিন্দুকে কেন্দ্র করে অবস্থান করছে। এই বিশেষ বিন্দুগুলোই হল ব্ল্যাক হোল যেগুলোকে দেখা যাচ্ছে না ঠিকই কিন্তু তারা নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে তারকারাশি বা গ্যাসীয় বস্তুগুলোর অবস্থান আর তাদের গতি-প্রকৃতির মাধ্যমে। বর্তমানে কিছু উন্নত প্রযুক্তি ব্যাবহার করে কিছু টেলিস্কোপ দিয়ে নেগেটিভের মতো কিছু ছবিও তুলে দেখাতে সক্ষম হয়েছে সৌরবিজ্ঞানীরা।
একসময় আশংকা করা হত, সূর্য কি তবে একদিন নিজেই ব্ল্যাক হোলে পরিণত হবে –পৃথিবীকে গ্রাস করবে? নাসার বিজ্ঞানিরা এ আশংকা উড়িয়ে দিয়েছেন।
আমাদের গ্যালাক্সির নাম মিল্কি ওয়ে বা আকাশ গঙ্গা। আকাশ গঙ্গার ঠিক মাঝখানে রয়েছে সূর্য থেকে ৪ মিলিয়ন বেশি ভরের একটি ব্ল্যাক হোল। ১৬ বছর ধরে আশে-পাশের তারামন্ডলীর গতি-বিধি পর্যবেক্ষণ করে গত ২০০৮ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা Sagittarius A-star নামের ব্ল্যাক হোলটি শনাক্ত করেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই ব্ল্যাক হোলটি কোন কিছু গলাধঃকরণ করছে না। ব্ল্যাক হোল এর ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত ধারণাটি হচ্ছে ব্লাক হোল সব কিছু গ্রাস করে নেয়।
আলো শুষে নেয় বলে ব্ল্যাক হোল দেখা সম্ভব নয়। আলো শুষে নিতে পারে বলে হয়তো ব্ল্যাক হোল সব কিছু গলাধঃকরণ করতে পারে এই ধারণা সবারই হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, ব্ল্যাক হোলেরও নিজস্ব ভর রয়েছে। অধিকাংশ গ্যালাক্সিই ব্ল্যাক হোলকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান থাকতে পারে। তাই বলে, ব্ল্যাক হোল গ্যালাক্সিতে থাকা নক্ষত্র, গ্রহসমূহ গিলে ফেলে না। তাই এটা বলা যায়, আকাশ গঙ্গার মাঝখানে বৃহৎ ব্ল্যাক হোল যদি থেকেও থাকে, তা আমাদের পৃথিবীকে কখনোই গিলে ফেলবে না। বরং সূর্য এবং অন্যান্য গ্রহগুলোর সাথে সমান দূরত্ব রেখে ঘূর্ণায়মান থাকবে। আবার ব্ল্যাক হোল সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় বৃহদায়তনের ভর সূর্যের নেই বলে সূর্যও কখনো ব্ল্যাক হোল এ পরিণত হবেনা।
এবার একটু ছোট্ট একটি চিন্তা করুন আমরা জানি যে আমাদের এই বিশাল পৃথিবী থেকে যেই ছোট্ট সূর্যটি আমরা দেখতে পায় তা আমাদের এই পৃথিবী থেকে ১৩ লক্ষ গুন বড় একটি বস্তু। তার মানে এই সূর্যের কাছে আমাদের পৃথিবী কিছুই না। আবার যেই নক্ষত্র বা তারার কথা বলা হচ্ছে যাদের এই ব্ল্যাক হোল গিলে ফেলতে পারে সেই নক্ষত্রর একেকটার আকৃতি কিন্তু এই সুর্য থেকে কয়েক হাজার এমনকি কয়েক লক্ষ গুন বড় হতে পারে। তাহলে একটি ব্ল্যাক হোল বা (Super massive) ব্ল্যাক হোল এর ভেতরে আমাদের এই পৃথিবীর সমান কতটা পৃথিবী ধরতে পারে একটু চিন্তা করে দেখুন একবার। দরকার নেই থাক। আমাদের বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এতোই বিশাল যে এর গ্রহ-উপগ্রহ, তারা, নক্ষত্র বিজ্ঞানীদের প্রায়ই ধাঁধায় ফেলে দেয়। আর এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত ‘ইউওয়াই স্কুটি’ (UY Scuti) নামের সবচাইতে বড় তারা যেটা একাই বিজ্ঞানীদের মাথা গুলিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
No comments:
Post a Comment