Sunday, 30 August 2020

আসাসিন্স অর্ডার পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম গুপ্ত সঙ্ঘ

*** প্রথমেই বলে রাখি এই লেখাটি আমরা বিভিন্ন সূত্র, কাহিনী, তথ্য অবলম্বন করে লিখেছি এর পুঙ্খনাপুঙ্খ সত্য হওয়ার দাবি রাখিনা তবে বেশিরভাগ সূত্রে যা মিল পেয়েছি অর্থাৎ যা বেশি বিশ্বাসযোগ্য, তুলে ধরেছি। দ্বিতীয় - বলতে চাই এখানে আমরা কাউকে খারাপ বলতে চাইনি, দয়া করে পুরোটা ঠান্ডা মাথায় পড়লে বুঝতে পারবেন, আধা পরে মূর্খের মতো মাথা গরম করবেন না। তৃতীয়, যদি এ বিষয়ে কিছু তথ্য ও সূত্র ভুলত্রুটি হয় বা উল্লেখ না থাকে কমেন্টে বললে উপকৃত হবো এবং ভালো লাগলে আরো বিস্তারিত ভাবে এরপর একদিন আস্সাসিন্সদের ইতিহাস নিয়ে লেখা দেব।  

এক সময় 'হাশাশিন' কে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও নৃশংস গুপ্তসংঘ হিসাবে মনে করা হতো।  তারা প্রসিদ্ধ হয় তাদের শিকারকে খুঁজে বের করা এবং রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য, সে যত পরিমাণে নিরাপত্তা ও আশ্রয় ঘেরা থাকুক না কেন। কিন্তু 1258 সালে মঙ্গলরা পৃথিবী থেকে তাদের প্রায় নিঃশেষ করে দিয়েছিল বলে জানা যায়। পুঁথিগত ইতিহাস বলে 13 শতকের শেষের দিকে এই সংঘটির অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু ইতিহাস বই  ভুল হতে পারে। 
হতে পারে তাদের মধ্যে যারা বেঁচে গিয়েছিল তাদের পরবর্তী উত্তরাধিকারীরা একুশ শতক অব্দি গোপনভাবে এই সংঘটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে? এবং যদি এই অ্যাসাসিন অর্ডার আজও বর্তমান থাকে তবে কি সেটি একই রয়েছে নাকি বর্তমানের অন্য কোন নামে সেটি পরিচালিত হচ্ছে এবং এরা কি এখনো একইরকম ভয়ানক ও রহস্যময় আছে নাকি এদের চিন্তা ধারা বা ভাবাদর্শ বিবর্ধিত হয়ে পরিবর্তন ঘটেছে ?



যাই হোক না কেন ইতিহাসের পাতায় আজ পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়ানক সিক্রেট সোসাইটির গড়ে ওঠা ও প্রকাশ পাওয়া নিয়ে আলোচনা করতে গেলে, ইসলামের নিজরা ইসমাইলি সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ্য। এই সম্প্রদায় তার বিপ্লবী কার্যকলাপের মাধ্যমে সুন্নি এবং শিয়া উভয়ের মধ্যেই নিজের প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিল। এই সম্প্রদায় প্রথমদিকে ধর্মের আড়ালে বছরের পর বছর নিজের কার্যকলাপ চালিয়ে গিয়েছিল এবং গোপনে গোপনে 'দাইস' নামক তাদের ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে তাদের আদর্শ ও চিন্তাধারা প্রচার করে যাচ্ছিল। এই সবকিছু চলছিল যতদিন না এই 'দাইস' দের মধ্যে 'হাসান ই সাবাহ' নামক একজন ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হয়ে উঠলো। এইভাবে 'অর্ডার অফ অ্যাসাসিন' অথবা যাকে 'হাশাশিন অর্ডার' বলা হয় তা জনসমক্ষে উঠে এলো।

 ইরানের 'আলবর্জ' পর্বতের উপরে প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার হিসাবে অর্ডারের স্থাপন করলেন, হাসানের পরিচিতি পায় - 'ওল্ড ম্যান অফ দা মাউন্টেন' হিসাবে এবং এই নামের সাথে কেবল অ্যাসাসিন গুপ্তসংঘের রহস্যগুলি বৃদ্ধি পায়নি, তার সাথে হাসানের নিজস্ব অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার কাহিনী শুরু হলো। তার শাসনকালে তিনি তার সমর্থকদের মধ্যে থেকে এক বাছাই করা সেরা সৈন্যদল গড়ে তুললেন। 'দা ফিদাইন' যারা বিশেষ প্রশিক্ষিত খুনি হিসাবে গড়ে উঠেছিল এবং পরবর্তী 200 বছর ধরে বহু ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল। ক্রুসেডের প্রথম এবং পরের দিকে যেমন 1122 সালে ফাতিমার মন্ত্রী আল আফজাল, 1124 সালে ইবন আল খাসবাপ (যিনি ক্রুসেড চলাকালীন বিশ্বের প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্ব ছিলেন), 1152 সালে 'রেমন্ড 2 কাউন্ট অফ ত্রিপোলি', 1892 সালে জেরুজালেমের রাজা 'কনার্ড অফ মন্টফেরাত' এবং 1271 সালে 'প্রিন্স এডওয়ার্ড' কে হত্যা প্রচেষ্টা করা হয় - তিনি এসাসিনের বিষাক্ত ছুরিতে জখম হন। এই অর্ডারটি খুনি যোদ্ধাদের সংস্থা ছিল - যারা বিশ্বাস করত তাদের নেতাদের জন্ম থেকেই অতিপ্রাকৃত শক্তি আছে, যা বেশিরভাগ মুসলিমরা জানেনা। 'ফিদাইন' শব্দের অর্থ করলে দাঁড়ায় - যারা স্বেচ্ছায় নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নেয়।


যেখানে মনে করা হয় 'এসাসিন' শব্দটি 'হাশাশিন' শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে অনেকে বলে হাশাশিন শব্দটি 'হাসিস' নামক ড্রাগ বা মাদক থেকে এসেছে কিন্তু এটা ঠিক নয় অনেক পণ্ডিত এ নিয়ে বিতর্ক রেখেছেন যে, আসলে 'হাসিস ইটার' বা হাসিস সেবক - এই কাহিনীগুলি  নিজরা ইস্মাইলির শত্রুরা বা নিন্দুকরা বানিয়েছে এবং তখনকার কোন মুসলিম ঐতিহাসিকের বিবরণে এগুলি ব্যবহার করা হয়নি। এছাড়া হাসান - ই - সাবাহ ব্যক্তিগতভাবেও মাদক সেবন করা প্রশ্রয় দিতেন না। হাশাশিনদের অস্তিত্ব সম্পর্কে অনেক রকম দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও বিখ্যাত অভিযাত্রী 'বেঞ্জামিন অফ টুডে' এবং 'মার্কোপোলোর' কয়েকশো বছর আগের বর্ণনা অনুযায়ী এর বেশির ভাগগুলি ধোঁয়াশায় পূর্ণ কল্পকাহিনী বা শ্রুতিকথার মত ছিল। যদিও অর্ডারটির এই রহস্যময় অতিপ্রাকৃতিক কার্যকলাপগুলির  উৎস এবং কতটা কাল্পনিক তা বিতর্কিত এবং বর্তমান কালেও এই অর্ডারটি রহস্যময় উৎস নিয়ে কৌতুহল থেকে গিয়েছে।


হাসান ই সাবাহর নেতৃত্বে অর্ডারের প্রথম শিকার ছিল 'আবু আলী হাসান ইবন আলী টুসি' নামক একজন খুব উচ্চপদস্থ পার্শিয়ান মন্ত্রী। 1092 সালের অক্টোবরের এক সকালে সে তার একজন অনুগামীকে শান্তিপ্রিয় সুফি সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশে আলী টুসির ভারী প্রহরা যুক্ত অনুগামীবলয় ভেদ করতে পাঠিয়েছিল এবং এরপর বুক অর্থাৎ হৃৎযন্ত্রে  ছুরি ঢুকিয়ে এই মন্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছিল। এই হত্যাটি এলাকায় একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলেছিল; কারণ হাসান দেখিয়ে দিয়েছিল সে যে কোন জায়গায় ঢুকে যত সুরক্ষিত হোক না কেন তা ভেদ করে যে কাউকে শিকার বানানোর ক্ষমতা রাখে।   এই প্রথম হত্যাটির সাথে সাথে হাসান নিজরা ইসমাইলি সমাজ থেকে একটি সেরা গুপ্ত যোদ্ধাদের জাতীয় সংগঠন তৈরি করতে অনুপ্রাণিত হলো। যারা সকলেই একই ভাবে কাজ করে যেতে পারবে এবং খুব বেশি দিন না এগারোশো শতাব্দীর মধ্যেই এই হাশাশিন অর্ডারটি যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করল এবং যথেষ্ট ভয়ের সঞ্চার করল। 

বারোশো শতাব্দীর প্রথমদিকে অর্ডারটি তাদের কার্যকলাপ সিরিয়া পর্যন্ত প্রসারিত করেছিল। তারা আন-নুসরা পর্বতের কিছু দুর্গ দখল করেছিল; তাদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল মাসায়াফ।  এখানে সিরিয়ার নিজেরা ইসমাইলি সম্প্রদায়ের গ্র্যান্ডমাস্টার রাশিদ আস সিনান শাসন করতেন এবং এখানেই তাঁর পরিচিতি পায় 'ওল্ড ম্যান অফ দা মাউন্টেন' হিসাবে।  তবে রাশিদ আস সিনান এবং হাসান ই সাবাহ - এরা কি একই ব্যক্তি ছিলেন নাকি  দুজনেই এক  খেতাব পেয়েছিলেন এ সকল কিছু নিয়ে আরব এবং পাশ্চাত্যের দেশের মধ্যে বিতর্ক থেকে গিয়েছে। তবে আমরা এখানে হাসানকে নিয়ে এগোতে পারি এবং সিরিয়ায় সেই স্থান যেখানে আমরা এই ওল্ড ম্যান এর প্যারানরমাল ক্ষমতার উদাহরণ গুলো প্রথম দেখতে পাই। 
কিছু কিছু সূত্র দাবি করে হাসান অ্যালকেমিতে এক উল্লেখযোগ্য বিশেষজ্ঞ ছিল। এটি এক রকমের যাদুবিদ্যার ভাগ এবং বলা হয় তিনি হাশাশিন অর্ডারকেও  এতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত করেছিলেন। বিভিন্ন গুপ্ত বিদ্যা যেমন নক্ষত্রবিদ্যা এবং বিভিন্ন রকম মনস্তাত্ত্বিক ক্ষমতায় দক্ষতা অর্জন করতে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। একটি স্থানীয় কিংবদন্তি অনুযায়ী, তার এমন আধোদৈবিক ক্ষমতা ছিল যার দ্বারা তিনি পৃথিবীর যে কোনো স্থানের ঘটে চলা ঘটনার ওপর প্রভাব বিস্তার বা কারসাজি করার ক্ষমতা রাখতেন।


চৌদ্দশ শতকের ইসমাইলি লেখক আবু ফিরাস তাকে নিয়ে বেশ কয়েকটি কাহিনী সংগ্রহ করেছিলেন। তার লেখা অনুযায়ী, যখন 'ওল্ড ম্যান' প্রথম ছদ্মবেশে সিরিয়ায় এসেছিলেন, তার 1 সঙ্গী লক্ষ্য করেন তার কোন প্রতিচ্ছবি বা ছায়া মাটিতে পড়ছিলো না - ঠিক ভ্যাম্পায়ারের বা ডাইনীর মত। ওল্ড ম্যান তার সঙ্গীটিকে এই ব্যাপারে কখনো কাউকে বলতে নিষেধ করেছিল। পরবর্তীকালে সেই সময়কার সিরিয়ানদের কাছে তার এই দৈবিক ক্ষমতা গুলি ধীরে ধীরে সুপরিচিত হতে থাকে। আবু ফিরাস 'ওল্ড ম্যান' এর এরকম অনেক টেলিপ্যাথিক ক্ষমতার অকল্পনীয় গল্পগুলি লিখেছিলেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা গুলি হল - 'প্রিকগনিশন' অর্থাৎ ভবিষ্যতের ঘটনা দেখতে পাওয়ার ক্ষমতা, 'মাইন্ড রিডিং' বা মন পড়ার ক্ষমতা এবং মাইন্ড কন্ট্রোল অর্থাৎ মনকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা। এই সময়কার বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্যতে এর উল্লেখ পাওয়া গেছে যে, তিনি এই ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে তার নিজস্ব অনুগামীদের মন নিয়ন্ত্রণ করতেন - 'এইভাবে তাহারা পাহাড়ের উপরের দুর্গে আশা আগন্তকদের ভয় দেখাতেন', জানা গেছে তিনি ফিসফিস করে তার নিযুক্ত কোন এক অনুগামীকে কিছু বলতেন এবং সে কোন কিছু চিন্তা না করে দুর্গ থেকে ঝাঁপ দিত। এই অর্থহীন আত্মহত্যার কোন মানে না থাকলেও এগুলি মনস্তাত্ত্বিক কারসাজি ও প্রভাব বিস্তারে সাহায্য করত। 

এরকমই একটি দারুন গল্প কিংবদন্তি যোদ্ধা সালাদিনকে ঘিরেও রয়েছে। 1176 সালে সালাদিন এই নিজারি ইসমাইলি অনুগামীদের অনেকাংশে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল এবং ওল্ডম্যানের পর্বতের আশ্রয়কে হামলা ও দখল করার উদ্দেশ্যে এগিয়ে গিয়েছিল। এমনকি এক রাত্তিরে সালদিনের সৈন্যরা ওল্ড ম্যান এবং তার ব্যক্তিগত রক্ষীদের সামনে আসতে সক্ষম হয় কিন্তু তাকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়।  তারা বলেছিল যে কোন এক অদৃশ্য শক্তি এই নেতা এবং তার রক্ষীদের ঘিরে রেখেছে, যা তাদের রক্ষা করছে। যদিও এটি একটি অদ্ভুত বিষয়, কিন্তু সালাদিন নিজে বলেছিলেন যে তিনি সেই সময়ের রাত্তির গুলিতে অদ্ভুত অদ্ভুত ভয়ানক স্বপ্ন দেখছিলেন এবং শেষে এক দিন ঘুম থেকে উঠে তিনি তাজা সেকা পাউরুটি (যা শোনা যেত অ্যাসাসিনরা বানাত) এবং তার বিছানার পাশে একটি বিষাক্ত ছুরি দেখতে পান। যদিও এটা কতটা সত্যি তা জানা যায়নি কিন্তু এটা ঠিক যে সালাউদ্দিন তাদের নিশানায় পড়ে যায়। ইতিহাসের বই থেকে জানা যায়, তিনি দুইবার ওল্ড ম্যান এর হত্যার প্রচেষ্টা থেকে বাঁচতে সক্ষম হন এবং তারপরেই সেই কিংবদন্তি পাউরুটি এবং বিষাক্ত ছুরির গল্প শোনা যায় এবং তারপর তিনি তার দুর্গ ঘেরাও তুলে দেন এবং খুব দ্রুত হাসান এর সাথে একটি নতুন সমঝোতায় আসেন, অবশেষে হাশাশিন আদর্শের উপর স্বাধীনতা মেনে নেন। এইভাবে অর্ডারের আরো দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা এবং তাদের ঘিরে থাকা সেই রহস্যময় খ্যাতি গুলির বর্তমান থাকা নিশ্চিত করেন। সুতরাং সেই প্রশ্ন থেকেই যায় কত সময় ধরে এই রহস্যময় অর্ডার টিকে ছিল নাকি তারা আজও চারিদিকে আছে। 

গতানুগতিক ইতিহাস অনুযায়ী হাশাশিন অর্ডার তেরোশো শতকের মাঝামাঝি মোগল সাম্রাজ্য দ্বারা নিঃশেষ হয়ে যায় এবং খুব সম্ভবত বেঁচে যাওয়া সদস্যরা ইউরোপ, মিডিল ইস্ট, নর্থ আফ্রিকা এবং এশিয়ার উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। পুঁথিগত ভাবে জানা গেছে তাদের শেষ বংশধর 16 শতকে মারা যায়। কিন্তু গুজব অনুযায়ী, হাসাসিনরা একটি নতুন অর্ডারের মাধ্যমে পুনরায় জীবিত হয়ে ওঠে, এই অর্ডারটির নাম ছিল 'রশিনায়া' একে 'ইলুমাইনটেড ওয়ান' বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এটা খুব দ্রুত আবার মঙ্গোলরা ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু পরবর্তীকালে আবার একটি নতুন সৃষ্টি হয়।


বর্তমানে, একবিংশ শতকে হাশাশিনরা বিখ্যাত হয়েছে একটি কাল্পনিক কম্পিউটার গেমের চরিত্র হিসেবে এবং এই নিয়ে 'এসাসিন্স ক্রিড' নামক একটি চলচ্চিত্র বেরিয়েছে। যদিও আরো গভীরে গেলে বোঝা যায় এই সংস্থাটি সত্তিকারের পুরোপুরি পৃথিবীর বুক থেকে গায়েব হয়ে যায়নি বরঞ্চ উনিশ শতক অবধি এই অ্যাসাসিনরূপে টিকে থাকতে সক্ষম হয়েছে এবং হয়তো বর্তমানে কোনো শক্তিশালী সংস্থা হিসাবে। 300 বছর আগে সেই বিখ্যাত শেষ বংশধর এর মৃত্যুর পর আঠারোশো শতকে রহস্যময় বিভিন্ন হত্যা দেখা যেতে থাকে, যা সন্দেহ করা হয় কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দ্বারা হয়েছে এবং নিজরা ইসমাইলি সম্প্রদায়ের সাথে তাদের কোন যোগ রয়েছে। পরবর্তীকালে 1818 সালে নিজরা ইসমাইলি সম্প্রদায়ের নেতাকে ইরানের শাহ দ্বারা 'আগা খান' নামকরণ করা হয় যার অর্থ 'আধ্যাত্বিক গুরু' কিন্তু 1840 সালে এই সম্প্রদায়কে শাহকে হত্যার প্রচেষ্টায় দোষী সাব্যস্ত করা হলে আগা খান এশিয়া উপমহাদেশে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে চলে আসেন। এরপরেও সম্প্রদায়টি পরিচালিত হতে থাকে এবং অনুগামী সংখ্যা প্রায় 12 থেকে 15 মিলিয়ন বলে ধারণা করা হয়। তাদের বর্তমান নেতা হাভার্ডে পড়া 'চতুর্থ আগা খান' যিনি 1936 সালে জন্মগ্রহণ করেন। 

এরপর বিংশ শতাব্দীতে এই ইসমাইলি সম্প্রদায় খুব কঠোর প্রচেষ্টা করেন তাদের সম্প্রদায়কে নতুন রূপ দিতে এবং তাদের পুরাতন অ্যাসাসিন অতীত থেকে দূরে নিয়ে যেতে। 1933 সালে ইমাম সুলতান মুহাম্মদ শাহ এর নির্দেশনায় তৃতীয় আগা খান প্রথম বিভিন্ন সাহসিক প্রচেষ্টা করেন এই সম্প্রদায়ের ইতিহাসকে হাশাশিন অর্ডারের থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে সাংস্কৃতিক পরিকাঠামো, যেমন - আর্টস, ইতিহাস এবং বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত করার এবং 1967 সালে 'আগা খান ফাউন্ডেশন' সৃষ্টি হয় যদিও তারা বিংশ-একবিংশ শতকে তাদের এই সদর্থক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন, কিন্তু 'সিক্রেট সোসাইটি' বা গুপ্তসংঘ নিয়ে এবং হাসাসিন অর্ডার নিয়ে রহস্য, ক্রুসেডের হাশাশিনদের কার্যকলাপ এবং 11, 12 এবং 13 শতকে অন্যান্য গুপ্ত সংঘের সাথে তাদের সংযোগ নিয়ে রহস্য থেকে গিয়েছে।
যেমন - আমরা আগে বলেছিলাম, ক্রুসেড এর সময়কালীন হাশাশিনরা ক্রুসেডারদের পক্ষে এবং বিপক্ষে উভয় দিকেই লড়াই করেছিল, যখন যেটা তাদের এজেন্ডার সাথে মিলেছিল।


কিছু বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রুসেডার এবং অর্ডারের মধ্যে মৈত্রী চুক্তি বা জোট হওয়ার দরুন ক্রুসেডাররা ইউরোপে অ্যাসাসিন সিস্টেম নিয়ে এসেছিল; যা পরবর্তীকালে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন সিক্রেট সোসাইটি মধ্যে ছড়িয়ে গেছিল কিছু সোসাইটি এর অনুসরণ করেছিল। এদের মধ্যে পরে দা টেম্পলার, দা ফ্রিম্যাসন, দা রসিক্রুসিয়ান, এমনকি 'ইলুমিনাতি'!

 যেখানে আসল ঐতিহাসিক 'বেভারিয়ান ইলুমিনাতি' 1785 সালে নির্মূল করে দেওয়া হয়, বিভিন্ন মতবাদ বলে, আধুনিক ইলুমিনাতি আসলে নতুন ছদ্মবেশে 'নাইট টেম্পলার ' পরিচালনা করে, যারা পুনরায় ভয়ানক স্যাটানিক কাল্ট হিসাবে একত্রিত হয়েছে এবং আজও বর্তমান। যদিও ইলুমিনাতির সাথে হাশাশিন অর্ডারের যোগাযোগের কোনরকম প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কেবলমাত্র নাইট টেম্পলারদের পরিচালন পদ্ধতির সাথে তাদের কিছুটা একই রকম মিল পাওয়া যায়। কিছু মানুষ বিতর্কিত মন্তব্য করেছে যে, 'আগা খান ফাউন্ডেশন' সেই সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যে একটি যেগুলি গোপনে ইলুমিনাতির অংশ কিন্তু এটা বলা যায় হাজার বছর আগে 'হাশাশিন অর্ডার' প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যেমন মানুষ বিভিন্ন ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে, সেরকমই তাদের সাথে যুক্ত সংস্থা বা সম্প্রদায়ও পরিবর্তিত হতে পারে। কখনো কখনো সেই পরিবর্তন ভালো থেকে খারাপের দিকে কিন্তু কখনো কখনো যেমন, এক্ষেত্রে সম্ভবত পরিবর্তন হয়েছে খারাপ থেকে ভালোর দিকে। 

2000 সালের শেষের দিকে ইকোনমিক টাইমসে একটি খবর প্রকাশ করে যে, বিলিওনারি আগা খান মাস্যাফ এর মাউন্টেন 'সিটাডেল' সংরক্ষণ করার জন্য অর্থ বিনিয়োগ করছেন। এই স্থানটি হাশাশিন অর্ডারের 'ওল্ড ম্যান' এর বাসস্থান ছিল এবং এটিকে সিরিয়ার ইতিহাস সংরক্ষণ করার প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আলেপ্পোর মাঝামাঝি তেরোশো শতাব্দীর দিকে প্রাচীন বাণিজ্যপথের ধারে এই স্থানটি পৃথিবীর প্রাচীনতম শহর গুলির মধ্যে একটি এবং বর্তমানে এটি একটি 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট'; আশ্চর্যজনকভাবে এই বিনিয়োগের মধ্যে সালাদিনের দুর্গ কেও সংরক্ষণ করা হয - এটি সেই মানুষের বাসস্থান ছিল যে একসময় ওল্ড ম্যান অফ দ্য মাউন্টেন এর পরিচিত শত্রু ছিল!

আপনার কি মনে হয়? 

Sunday, 9 August 2020

"Subject - C" প্রথম বিশ্বযুদ্ধের রহস্যময় এক্সপেরিমেন্ট এবং তার ভয়াবহ ফলাফল --


ইন্টারনেটে অনেক রকম অদ্ভুত অদ্ভুত ধরনের গল্প এবং ঘটনা ছড়িয়ে আছে এগুলির মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রহস্যময় ঘটনাগুলি, ও বর্তমানে রাশিয়া ও আমেরিকার শীতে যুদ্ধকালীন ঘটনা অনেকেরই আকর্ষণের কেন্দ্র। তবে আজ যে ঘটনাটি আপনাদের বলছি সেটি সত্যি গায়ে কাঁটা দেওয়া এবং প্রায় অবিশ্বাস্য। বলে রাখি আমার লেখাটির সূত্র কেবলমাত্র ইন্টারনেটের বিভিন্ন তথ্য থেকে সংগ্রহ করা এটির সততা এখনো প্রমাণিত হয়নি। যদিও বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন প্রচুর অদ্ভুত রকমের গবেষণা চলেছিল যার অনেক তথ্য এখনো সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায়নি, কিছু গবেষণা এখনো মানুষকে ভাবায় , কিছু কালের আড়ালে হারিয়ে গেছে ....



আশা করি আপনারা  'প্রিডেটর' নামক বিখ্যাত চলচ্চিত্র সিরিজের কোন না কোন একটি দেখে থাকবেন । যেখানে দেখা গেছে বহির্জগৎ থেকে আসা এলিয়েন জাতীয় প্রাণী কিভাবে মানুষের শিকার করেছে। তবে এই ঘটনাটি  তার থেকে কম রোমাঞ্চকর নয়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বিশ্বজুড়ে এক রক্তাক্ত অধ্যায় চলছিল এবং একে ঘিরে অবশ্যই বিভিন্ন রহস্যময় ও ঐতিহাসিক ঘটনা জুড়ে আছে। এর মধ্যে একটি হলো বৈজ্ঞানিক - ডক্টর হাওয়ার্ড ব্রাউন যিনি তার মতই একটু উন্মাদ অন্য ধরনের বৈজ্ঞানিকদের দলের সাথে একটি 'টপ সিক্রেট' মিলিটারি গবেষণা বা এক্সপেরিমেন্টের সাথে যুক্ত ছিলেন। মনে করা হয়, এগুলি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বায়োলজিক্যাল এবং রাসায়নিক অস্ত্র প্রোগ্রামের একটি অংশ ছিল কিন্তু এই ঘটনাটির ক্ষেত্রে বিষয়টা আরো জটিল ও রহস্যময় হয়ে যায় যখন একদিন ব্রাউন এবং তার সম্পূর্ণ টিম কোন চিহ্ন ছাড়া অদৃশ্য হয়ে যায়। এইখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সেই রহস্যময় ঘটনাটির সূত্রপাত হয় যা যুদ্ধশেষে কোথাও ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল।



অনেকদিন ধরে বৈজ্ঞানিকদের সাথে কোনরকম যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় ঘটনাটির তদন্ত করার জন্য আয়ারল্যান্ডের এই 'কুইনাইন এস টেস্টিং ল্যাব' এর উদ্দেশ্যে একটি খোঁজ এবং উদ্ধারকারী অপারেশন চালানো হলো। বৈজ্ঞানিক দলটি এখানে 1915 সাল থেকে ছিল। এই অপারেশনটি ব্যর্থ হল যখন উদ্ধারকারী দলের কেউ ফিরে এলোনা এবং কারোর খোঁজ পাওয়া গেল না। 

যেহেতু পুরো বৈজ্ঞানিক দল গায়েব হয়ে গিয়েছিল এবং উদ্ধারকারী দলটির খোঁজ পাওয়া যায়নি তাই ব্রিটিশ রয়াল আর্মি এইবার একটি পুনরুদ্ধার এবং খোঁজার জন্য অপারেশন লঞ্চ করে কিন্তু শোনা যায় এটিও ব্যর্থ হয়েছিল এবং এখানেও কয়েকজন গায়েব হয়ে গিয়েছিল কিন্তু শোনা যায় এই টিম মেম্বারদের একজন একটি অডিও টেপ ও জার্নাল পেয়েছিল যা ডক্টর ব্রাউন তৈরি করেছিলেন এবং সেখানে একটি ভয়ানক রকমের দানবিক প্রকৃতির প্রাণীর বর্ণনা পাওয়া গিয়েছিল যাকে 'সাবজেক্ট সি' বলে উল্লেখ করা হয়। মনে করা হয়, এই ভয়ানক পশুটি তাদের সবাইকে হত্যা করেছিল।



এই জার্নালের বেশিরভাগ অংশই অস্পষ্ট ছিল এবং আবহাওয়া এবং সময়ের সাথে সাথে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল কেবলমাত্র সাতটি এন্ট্রি কিছুটা পড়ার মতো খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। 

প্রথমটি 1917 সালের 12 অক্টোবর যাতে লেখক লিখেছিলেন, "এই রহস্যময় দানবটি আয়ারল্যান্ডের উড পাইন এর জঙ্গলের দিকে পালিয়ে গিয়েছে এবং আমরাএটিকে খুঁজে বের করার এবং শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। " তিনি লিখেছিলেন, 'তারা দুটো গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অভিযানে বেরোনোর পরিকল্পনা করছেন এবং তার গ্রুপটিটির দায়িত্বে জঙ্গলের দক্ষিণের দিকটি ছিল যেখানে তাদের সাথে কিছু সৈনিক এবং ডক্টর ইউরিক সিগলভ সঙ্গ দিয়েছিলেন।'



পরের এন্ট্রিটি  পরের দিনের যেখানে  লিখেছিল, "গতকালের এক্সপিডিশন যথেষ্ট ভাল কাটলো যদিও এটা আমাদের সেরকম কোন স্থানে নিয়ে যেতে পারেনি; আমাদের এই পুরো ছয় ঘন্টার খোঁজে আমরা এই দানব একটিও ঝলক পাইনি, যদিও এই দিনটি পুরোপুরি ব্যর্থ ছিল না। জঙ্গলের একটি গাছে চারটে বিশাল আকৃতির আচরের দাগ পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলির প্রত্যেকটি থেকে এক ধরনের পদার্থ বেরিয়ে আসছিল, এটা কি কোন প্রকার কাদা জাতীয় বস্তু না কি সাইটোপ্লাজমের কোন এক প্রকারের ফর্ম হতে পারে? আমরা এগুলি ছুতে সাহস পাইনি; কিন্তু ডক্টর সিগলভ একটি বোতলে এর একটি স্যাম্পেল ভবিষ্যৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেন। আমরা টিম আলফার থেকে কোন কিছু শুনতে পাইনি। সম্ভবত তারাও কিছু খুঁজে পায়নি।" তারা আরো অনেক এই ধরনের অদ্ভুত রকমের আচরের দাগ খুঁজে পেয়েছিল এবং তাদের একটি সৈনিক অস্বাভাবিক ভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল। এরপর তারা যখন এগিয়ে যায় লেখক দাবি করেছিলেন যে, তারা কিছু সদ্য কেটে দেওয়া গাছের সম্মুখীন হয়েছিল যেগুলিতে এই ধরনের তরল বস্তু লেগেছিল এবং তার সাথে সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষটির ক্ষতবিক্ষত ছিন্নভিন্ন দেহ টুকরো গুলি খুঁজে পেয়েছিল, যার চামড়া গুলো তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং সেগুলো এই রহস্যময় তরলে পূর্ণ ছিল। এর পরের দিন একে একে আরো কিছু লোক নিরুদ্দেশ ও নিহত হয়ে যেতে থাকে।



তিনি লিখেছিলেন, "আমরা আরো দুইজনকে হারিয়েছি, একজন সৈনিক ছিল যার নাম আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না এবং আমাদের এক স্পেশালিস্ট ডক্টর নেথান রেডলি; তার পিতা একজন সৈনিক ছিলেন যিনি অনেক বছর আগে 'কুইনাইন এস টেস্টিং প্রজেক্টে' সুপারভাইজার ছিলেন। কিছু দূরে মৃতদেহগুলো খুঁজে পাওয়া গেছিল এবং সৈনিকের দেহটি প্রায় অক্ষত ছিল কিন্তু তার গলা এবং কব্জি রেডলির নিজস্ব ছুরিটি দিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। এর থেকে মনে করা হচ্ছিল যে 'সাবজেক্ট সি' যখন ডক্টর কে আক্রমণ করেছিল তার ঠিক পরেই তার পোশাক এবং চামড়া তুলে ফেলা হয়েছিল এবং আবার ঠিক আগের মত ক্ষত বিক্ষত স্থানগুলি সেই সাইটোপ্লাজমিক সাবস্টেন্স এ ভর্তি ছিল -- যাকে আমি নাম দিয়েছি 'বিস্ট ব্লাড'......"



"এখন কেবল মাত্র আমরা চারজন রয়ে গিয়েছি; সময়ের সাথে সাথে বাকি সৈনিকেরা হারিয়ে গিয়েছে। আমরা আরো একটি স্থানে গতকাল একই রকমভাবে দুটি সৈনিকের দেহ খুজে পেয়েছি। দেখে মনে হচ্ছে এদের এদেরই ছুরি দিয়ে কাটা হয়েছে। তিন নম্বর জনের নাম হিচকক ছিল তাকে পাঁচটা টুকরোয় কাটা হয়েছে। তার পোশাক এবং চামড়া তুলে নেওয়া হয়েছে এবং তার গর্তগুলো এইভাবে 'বিস্ট ব্লাডে' পূর্ণ। আমার আন্দাজ হচ্ছে সৈনিকদের মধ্যে একজনকে কোনভাবে অপর জনকে হত্যা করার জন্য বাধ্য করা হয়েছিল এবং বাকি দুইজনকে মৃত্যু অবধি লড়াই এ চালিত করা হয়েছিল। এটা আমার কেবলমাত্র একটি অনুমান ছিল যদিও ডক্টর সিগলভ মনে করেন, আমি ঠিকই ধরেছি এই প্রাণীটি যাই হোক না কেন তাদেরকে এক এক করে স্বীকার করে বেড়াচ্ছিল এবং মাঝে মাঝে জঙ্গলের গাছের ও ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে দ্রুত গতিতে বিশালাকৃতির কালো ছায়া ঝলক দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু এত সময় পরও বোঝা যাচ্ছিল না এই দানবটি আসলে কি ছিল।



অবশেষে লেখক  এর সম্পর্কে শেষ এন্ট্রিতে একটি ঝলক দিয়েছিলেন, "আমি ঠিক ছিলাম! আমি ঠিক ছিলাম! 'সাবজেক্ট সি' আজ আমায় বাকি থাকা বিটা টিমের সাথে ধরে নিয়েছিল। হাঁটতে হাঁটতে আমার মাথায় একটি নিষ্ঠুর গলা শুনতে পাচ্ছিলাম যেটি বলছিল, "ডাক্তার কে খুন করো! ইউরিক কে প্রথমে মরতে হবে, তার কাছে আমার কিছু বাকি আছে।"
আমি এই জিনিসটির সাথে কোন ঝামেলায় জড়াতে চাইলাম না এবং তাই করলাম।"

 ডঃ ব্রাউন তার লেখায় অনুমান দিয়েছিলেন, "এই প্রাণীটি 3 মিটার লম্বা এবং চারটি লম্বা থাবা রয়েছে।" --  কালো ছায়াটিও অতিরঞ্জিত ছিলনা।

"আমি ডক্টরের খুলিতে ছুরি বসিয়ে দিয়েছিলাম। আমার অনুমান ছিল এতেই দ্রুততম মৃত্যু ঘটবে, আমি ঠিকই ছিলাম; আমার মনে হয় না তিনি আর উঠতে পেরেছিলেন।
আমায় আদেশ দেয়া হয়েছিল, অন্য দুজনকে গুলি করতে; দু'জনকেই প্রথমে পেটে এবং তারপর পায়ে। এর ফলে আশ্চর্যজনকভাবে, আমার শেষ বুলেটটি ফায়ার করার পরই তারা জেগে উঠলো, 'সাবজেক্ট সি' তাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত লড়ে যেতে বলল এবং আমায় সেটা দেখতে বাধ্য করলো। আমি প্রাণভয়ে সেই কথা শুনলাম। এই লড়াইটি খুবই দ্রুত ছিল, তারা কেবলমাত্র তাদের বন্দুকগুলি বের করল এবং একে অপরকে গুলি করলো। মনে হচ্ছে শয়তানটি দেখে খুব মজা পেয়েছিল এবং আমাকে চলে যেতে দিয়েছিল। আমি আর আমার পরিবার, আমার বন্ধুদের দেখতে পাবো না। আমি এখানে আটকে আছি। আমাদের পায়ের এবং অন্যান্য চিহ্ন দেখে আমি ল্যান্ডিং জোনে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিলাম, কিন্তু আমি কিছুই পাইনি; সব প্লেন গুলি চলে গিয়েছিল। এখন কেবলমাত্র আমি আওয়াজ শুনি একটি পরিচিত নিষ্ঠুর আওয়াজ, যেটা আমায় বলে এগুলি আমার শেষ মুহূর্ত।"

 এইটুকুই পাওয়া গিয়েছিল এর মধ্যে কোথাও পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়নি এই রহস্যময় সাবজেক্ট সি কি ছিল। জার্নালের শেষের লেখাগুলি দেখে মনে হয় এগুলো ডক্টরের প্রথম দিকের লেখা থেকে আলাদা, তিনি যেন অন্য মানুষে পরিণত হচ্ছেন অথবা তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি কেবলমাত্র একটি অলীক কাহিনী হিসেবে মনে করা হয়।কিন্তু কিছু সাইট এর মতে এই জার্নালটি আসলে সত্যিকারের ছিল এবং কেবলমাত্র এটি নয়, এর সাথে একটি ভাঙ্গা ক্যামেরা পাওয়া গেছিল, যার মধ্যে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত ফটো ছিল -- এগুলিতে প্রমাণ ছিল।  কিন্তু এগুলি যথেষ্ট নয় কেবলমাত্র এই কয়েকটা জিনিস দিয়ে কিছুই দাবি করা যায় না।  ডক্টর হাওয়ার্ড ব্রাউন আদপে একজন সত্তিকারের মানুষ ছিলেন নাকি নাকি এগুলি সবই জাল বা বানানো গল্প অথবা অলীক কিংবদন্তি কাল্পনিক কাহিনী কিছুই সঠিকভাবে বোঝা যায় না। যদিও এটা একটু অন্য রকমের কাহিনী ছিল। আপনার কি মনে হয়?