ইন্টারনেটে অনেক রকম অদ্ভুত অদ্ভুত ধরনের গল্প এবং ঘটনা ছড়িয়ে আছে এগুলির মধ্যে প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রহস্যময় ঘটনাগুলি, ও বর্তমানে রাশিয়া ও আমেরিকার শীতে যুদ্ধকালীন ঘটনা অনেকেরই আকর্ষণের কেন্দ্র। তবে আজ যে ঘটনাটি আপনাদের বলছি সেটি সত্যি গায়ে কাঁটা দেওয়া এবং প্রায় অবিশ্বাস্য। বলে রাখি আমার লেখাটির সূত্র কেবলমাত্র ইন্টারনেটের বিভিন্ন তথ্য থেকে সংগ্রহ করা এটির সততা এখনো প্রমাণিত হয়নি। যদিও বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন প্রচুর অদ্ভুত রকমের গবেষণা চলেছিল যার অনেক তথ্য এখনো সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ পায়নি, কিছু গবেষণা এখনো মানুষকে ভাবায় , কিছু কালের আড়ালে হারিয়ে গেছে ....
আশা করি আপনারা 'প্রিডেটর' নামক বিখ্যাত চলচ্চিত্র সিরিজের কোন না কোন একটি দেখে থাকবেন । যেখানে দেখা গেছে বহির্জগৎ থেকে আসা এলিয়েন জাতীয় প্রাণী কিভাবে মানুষের শিকার করেছে। তবে এই ঘটনাটি তার থেকে কম রোমাঞ্চকর নয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বিশ্বজুড়ে এক রক্তাক্ত অধ্যায় চলছিল এবং একে ঘিরে অবশ্যই বিভিন্ন রহস্যময় ও ঐতিহাসিক ঘটনা জুড়ে আছে। এর মধ্যে একটি হলো বৈজ্ঞানিক - ডক্টর হাওয়ার্ড ব্রাউন যিনি তার মতই একটু উন্মাদ অন্য ধরনের বৈজ্ঞানিকদের দলের সাথে একটি 'টপ সিক্রেট' মিলিটারি গবেষণা বা এক্সপেরিমেন্টের সাথে যুক্ত ছিলেন। মনে করা হয়, এগুলি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন বায়োলজিক্যাল এবং রাসায়নিক অস্ত্র প্রোগ্রামের একটি অংশ ছিল কিন্তু এই ঘটনাটির ক্ষেত্রে বিষয়টা আরো জটিল ও রহস্যময় হয়ে যায় যখন একদিন ব্রাউন এবং তার সম্পূর্ণ টিম কোন চিহ্ন ছাড়া অদৃশ্য হয়ে যায়। এইখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সেই রহস্যময় ঘটনাটির সূত্রপাত হয় যা যুদ্ধশেষে কোথাও ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল।
অনেকদিন ধরে বৈজ্ঞানিকদের সাথে কোনরকম যোগাযোগ করা সম্ভব না হওয়ায় ঘটনাটির তদন্ত করার জন্য আয়ারল্যান্ডের এই 'কুইনাইন এস টেস্টিং ল্যাব' এর উদ্দেশ্যে একটি খোঁজ এবং উদ্ধারকারী অপারেশন চালানো হলো। বৈজ্ঞানিক দলটি এখানে 1915 সাল থেকে ছিল। এই অপারেশনটি ব্যর্থ হল যখন উদ্ধারকারী দলের কেউ ফিরে এলোনা এবং কারোর খোঁজ পাওয়া গেল না।
যেহেতু পুরো বৈজ্ঞানিক দল গায়েব হয়ে গিয়েছিল এবং উদ্ধারকারী দলটির খোঁজ পাওয়া যায়নি তাই ব্রিটিশ রয়াল আর্মি এইবার একটি পুনরুদ্ধার এবং খোঁজার জন্য অপারেশন লঞ্চ করে কিন্তু শোনা যায় এটিও ব্যর্থ হয়েছিল এবং এখানেও কয়েকজন গায়েব হয়ে গিয়েছিল কিন্তু শোনা যায় এই টিম মেম্বারদের একজন একটি অডিও টেপ ও জার্নাল পেয়েছিল যা ডক্টর ব্রাউন তৈরি করেছিলেন এবং সেখানে একটি ভয়ানক রকমের দানবিক প্রকৃতির প্রাণীর বর্ণনা পাওয়া গিয়েছিল যাকে 'সাবজেক্ট সি' বলে উল্লেখ করা হয়। মনে করা হয়, এই ভয়ানক পশুটি তাদের সবাইকে হত্যা করেছিল।
এই জার্নালের বেশিরভাগ অংশই অস্পষ্ট ছিল এবং আবহাওয়া এবং সময়ের সাথে সাথে আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল কেবলমাত্র সাতটি এন্ট্রি কিছুটা পড়ার মতো খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল।
প্রথমটি 1917 সালের 12 অক্টোবর যাতে লেখক লিখেছিলেন, "এই রহস্যময় দানবটি আয়ারল্যান্ডের উড পাইন এর জঙ্গলের দিকে পালিয়ে গিয়েছে এবং আমরাএটিকে খুঁজে বের করার এবং শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। " তিনি লিখেছিলেন, 'তারা দুটো গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অভিযানে বেরোনোর পরিকল্পনা করছেন এবং তার গ্রুপটিটির দায়িত্বে জঙ্গলের দক্ষিণের দিকটি ছিল যেখানে তাদের সাথে কিছু সৈনিক এবং ডক্টর ইউরিক সিগলভ সঙ্গ দিয়েছিলেন।'
পরের এন্ট্রিটি পরের দিনের যেখানে লিখেছিল, "গতকালের এক্সপিডিশন যথেষ্ট ভাল কাটলো যদিও এটা আমাদের সেরকম কোন স্থানে নিয়ে যেতে পারেনি; আমাদের এই পুরো ছয় ঘন্টার খোঁজে আমরা এই দানব একটিও ঝলক পাইনি, যদিও এই দিনটি পুরোপুরি ব্যর্থ ছিল না। জঙ্গলের একটি গাছে চারটে বিশাল আকৃতির আচরের দাগ পাওয়া গিয়েছিল। সেগুলির প্রত্যেকটি থেকে এক ধরনের পদার্থ বেরিয়ে আসছিল, এটা কি কোন প্রকার কাদা জাতীয় বস্তু না কি সাইটোপ্লাজমের কোন এক প্রকারের ফর্ম হতে পারে? আমরা এগুলি ছুতে সাহস পাইনি; কিন্তু ডক্টর সিগলভ একটি বোতলে এর একটি স্যাম্পেল ভবিষ্যৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেন। আমরা টিম আলফার থেকে কোন কিছু শুনতে পাইনি। সম্ভবত তারাও কিছু খুঁজে পায়নি।" তারা আরো অনেক এই ধরনের অদ্ভুত রকমের আচরের দাগ খুঁজে পেয়েছিল এবং তাদের একটি সৈনিক অস্বাভাবিক ভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল। এরপর তারা যখন এগিয়ে যায় লেখক দাবি করেছিলেন যে, তারা কিছু সদ্য কেটে দেওয়া গাছের সম্মুখীন হয়েছিল যেগুলিতে এই ধরনের তরল বস্তু লেগেছিল এবং তার সাথে সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষটির ক্ষতবিক্ষত ছিন্নভিন্ন দেহ টুকরো গুলি খুঁজে পেয়েছিল, যার চামড়া গুলো তুলে নেওয়া হয়েছিল এবং সেগুলো এই রহস্যময় তরলে পূর্ণ ছিল। এর পরের দিন একে একে আরো কিছু লোক নিরুদ্দেশ ও নিহত হয়ে যেতে থাকে।
তিনি লিখেছিলেন, "আমরা আরো দুইজনকে হারিয়েছি, একজন সৈনিক ছিল যার নাম আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না এবং আমাদের এক স্পেশালিস্ট ডক্টর নেথান রেডলি; তার পিতা একজন সৈনিক ছিলেন যিনি অনেক বছর আগে 'কুইনাইন এস টেস্টিং প্রজেক্টে' সুপারভাইজার ছিলেন। কিছু দূরে মৃতদেহগুলো খুঁজে পাওয়া গেছিল এবং সৈনিকের দেহটি প্রায় অক্ষত ছিল কিন্তু তার গলা এবং কব্জি রেডলির নিজস্ব ছুরিটি দিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল। এর থেকে মনে করা হচ্ছিল যে 'সাবজেক্ট সি' যখন ডক্টর কে আক্রমণ করেছিল তার ঠিক পরেই তার পোশাক এবং চামড়া তুলে ফেলা হয়েছিল এবং আবার ঠিক আগের মত ক্ষত বিক্ষত স্থানগুলি সেই সাইটোপ্লাজমিক সাবস্টেন্স এ ভর্তি ছিল -- যাকে আমি নাম দিয়েছি 'বিস্ট ব্লাড'......"
"এখন কেবল মাত্র আমরা চারজন রয়ে গিয়েছি; সময়ের সাথে সাথে বাকি সৈনিকেরা হারিয়ে গিয়েছে। আমরা আরো একটি স্থানে গতকাল একই রকমভাবে দুটি সৈনিকের দেহ খুজে পেয়েছি। দেখে মনে হচ্ছে এদের এদেরই ছুরি দিয়ে কাটা হয়েছে। তিন নম্বর জনের নাম হিচকক ছিল তাকে পাঁচটা টুকরোয় কাটা হয়েছে। তার পোশাক এবং চামড়া তুলে নেওয়া হয়েছে এবং তার গর্তগুলো এইভাবে 'বিস্ট ব্লাডে' পূর্ণ। আমার আন্দাজ হচ্ছে সৈনিকদের মধ্যে একজনকে কোনভাবে অপর জনকে হত্যা করার জন্য বাধ্য করা হয়েছিল এবং বাকি দুইজনকে মৃত্যু অবধি লড়াই এ চালিত করা হয়েছিল। এটা আমার কেবলমাত্র একটি অনুমান ছিল যদিও ডক্টর সিগলভ মনে করেন, আমি ঠিকই ধরেছি এই প্রাণীটি যাই হোক না কেন তাদেরকে এক এক করে স্বীকার করে বেড়াচ্ছিল এবং মাঝে মাঝে জঙ্গলের গাছের ও ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে দ্রুত গতিতে বিশালাকৃতির কালো ছায়া ঝলক দেখা যাচ্ছিল। কিন্তু এত সময় পরও বোঝা যাচ্ছিল না এই দানবটি আসলে কি ছিল।
অবশেষে লেখক এর সম্পর্কে শেষ এন্ট্রিতে একটি ঝলক দিয়েছিলেন, "আমি ঠিক ছিলাম! আমি ঠিক ছিলাম! 'সাবজেক্ট সি' আজ আমায় বাকি থাকা বিটা টিমের সাথে ধরে নিয়েছিল। হাঁটতে হাঁটতে আমার মাথায় একটি নিষ্ঠুর গলা শুনতে পাচ্ছিলাম যেটি বলছিল, "ডাক্তার কে খুন করো! ইউরিক কে প্রথমে মরতে হবে, তার কাছে আমার কিছু বাকি আছে।"
আমি এই জিনিসটির সাথে কোন ঝামেলায় জড়াতে চাইলাম না এবং তাই করলাম।"
ডঃ ব্রাউন তার লেখায় অনুমান দিয়েছিলেন, "এই প্রাণীটি 3 মিটার লম্বা এবং চারটি লম্বা থাবা রয়েছে।" -- কালো ছায়াটিও অতিরঞ্জিত ছিলনা।
"আমি ডক্টরের খুলিতে ছুরি বসিয়ে দিয়েছিলাম। আমার অনুমান ছিল এতেই দ্রুততম মৃত্যু ঘটবে, আমি ঠিকই ছিলাম; আমার মনে হয় না তিনি আর উঠতে পেরেছিলেন।
আমায় আদেশ দেয়া হয়েছিল, অন্য দুজনকে গুলি করতে; দু'জনকেই প্রথমে পেটে এবং তারপর পায়ে। এর ফলে আশ্চর্যজনকভাবে, আমার শেষ বুলেটটি ফায়ার করার পরই তারা জেগে উঠলো, 'সাবজেক্ট সি' তাদেরকে মৃত্যু পর্যন্ত লড়ে যেতে বলল এবং আমায় সেটা দেখতে বাধ্য করলো। আমি প্রাণভয়ে সেই কথা শুনলাম। এই লড়াইটি খুবই দ্রুত ছিল, তারা কেবলমাত্র তাদের বন্দুকগুলি বের করল এবং একে অপরকে গুলি করলো। মনে হচ্ছে শয়তানটি দেখে খুব মজা পেয়েছিল এবং আমাকে চলে যেতে দিয়েছিল। আমি আর আমার পরিবার, আমার বন্ধুদের দেখতে পাবো না। আমি এখানে আটকে আছি। আমাদের পায়ের এবং অন্যান্য চিহ্ন দেখে আমি ল্যান্ডিং জোনে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিলাম, কিন্তু আমি কিছুই পাইনি; সব প্লেন গুলি চলে গিয়েছিল। এখন কেবলমাত্র আমি আওয়াজ শুনি একটি পরিচিত নিষ্ঠুর আওয়াজ, যেটা আমায় বলে এগুলি আমার শেষ মুহূর্ত।"
এইটুকুই পাওয়া গিয়েছিল এর মধ্যে কোথাও পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়নি এই রহস্যময় সাবজেক্ট সি কি ছিল। জার্নালের শেষের লেখাগুলি দেখে মনে হয় এগুলো ডক্টরের প্রথম দিকের লেখা থেকে আলাদা, তিনি যেন অন্য মানুষে পরিণত হচ্ছেন অথবা তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি কেবলমাত্র একটি অলীক কাহিনী হিসেবে মনে করা হয়।কিন্তু কিছু সাইট এর মতে এই জার্নালটি আসলে সত্যিকারের ছিল এবং কেবলমাত্র এটি নয়, এর সাথে একটি ভাঙ্গা ক্যামেরা পাওয়া গেছিল, যার মধ্যে কিছু ক্ষতিগ্রস্ত ফটো ছিল -- এগুলিতে প্রমাণ ছিল। কিন্তু এগুলি যথেষ্ট নয় কেবলমাত্র এই কয়েকটা জিনিস দিয়ে কিছুই দাবি করা যায় না। ডক্টর হাওয়ার্ড ব্রাউন আদপে একজন সত্তিকারের মানুষ ছিলেন নাকি নাকি এগুলি সবই জাল বা বানানো গল্প অথবা অলীক কিংবদন্তি কাল্পনিক কাহিনী কিছুই সঠিকভাবে বোঝা যায় না। যদিও এটা একটু অন্য রকমের কাহিনী ছিল। আপনার কি মনে হয়?
No comments:
Post a Comment