Saturday, 10 November 2018

রহস্যময় চাকতি রহস্য ---

আজ  ইউএফও এর সাথে সম্পর্কযুক্ত খুব বেশি আলোচিত একটা ঘটনা বলছি। ঘটনার সুত্রপাত ১৯৪৭ সালে একটি বজ্রপাত সহ ঝড়ের মাধ্যমে। ‘ম্যাক’ নামের এক ভদ্রলোক তখন তার ঘরে বসেই ঝড় দেখছিলেন। হঠাৎ তার বাড়ির সংলগ্ন বড় ক্ষেতে তিনি বেশ বড়সড় এবং অস্বাভাবিক এক বজ্রপাতের শব্দ পান। তিনি যখন তার ছেলেকে নিয়ে তার ক্ষেত এর ক্ষয় ক্ষতি দেখতে গেলেন তখন অবাক হয়ে দেখলেন, বজ্রপাতের কোন চিহ্নই নেই, বরং সারা মাঠ জুড়ে পড়ে রয়েছে কোন কিছুর ধ্বংসাবশেষ। প্রায় তিন মাইলের ও বেশি লম্বা এবং দুই তিনশত ফুট প্রস্থ জুড়ে ধ্বংসাবশেষ গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।

সেই স্থানের আশে পাশে অনেক মানুষ ঘটনাটি স্বচক্ষে দেখলো। সবাই ছুটে গিয়েছিল সেই স্থানে কিন্তু প্রচণ্ড তাপ আর আগুনের ফুলকির মতো বের হওয়ার কারণে সেই যায়গার কাছে যেতে পারছিলো না কেউ। এই খবর রসওয়েল আর্মি এয়ার বেস এ ঘটনাটি জানানো হয়, কিছুক্ষণ পরই বিরাট মার্কিন সেনার দল এসে পৌঁছে সেখানে এবং পুরো জায়গাটি ঘিরে ফেলে। সেনা সদস্যরা পরে সেই এলাকায় আর কোনও ব্যক্তিকে ঢুকতে দেয়নি।

ম্যাক এর ভাষ্য অনুসারে, উদ্ধারকৃত টুকরো গুলিকে এককথায় ধাতু বলা যায়না। টুকরোগুলি ছিল বেশ মজবুত, এবং প্লাস্টিক এর মতো হালকা অথচ প্লাস্টিক নয়। দুই তিন ফুট লম্বা টুকরো গুলিও খবরের কাগজের মতোই হালকা ছিল, বলেন ম্যাক। তবে এই টুকরো গুলোকে তিনি কাটতে পারেননি এবং আগুনেও পোড়াতে পারেন নি বলে জানান তিনি। সেদিন বিকেলেই আর্মি ইন্টেলিজেন্স এর কিছু কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে আসেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মেজর জেসি মারসেল যার উপরে এই ঘটনাটি তদন্তের মুল দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। তিনিও টুকরো গুলি দেখে হতভম্ব হয়ে যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বলে গেছেন যে এটি তার জীবনে দেখা সবচেয়ে বেশি অস্বাভাবিক ঘটনা।

তিনি দৃঢ়ভাবেই দাবী করেন, এটি কোনভাবেই এয়ার বেলুন, অথবা পৃথিবীতে তৈরি কোন আকাশ যান এর ধ্বংসাবশেষ নয়। তার কাছে সবচেয়ে আশ্চর্য লেগেছে যে টুকরোটি সেটি একটি ছোট এল আকৃতির বিম এর টুকরো যেটি এর উপরে কিছু অদ্ভুত চিহ্ন এবং অক্ষর খোদাই করা ছিল। এটা থেকে তার মনে বিশ্বাস আরও প্রবল হয় যে এটি পৃথিবীর বাইরের কোন একটা স্থানে তৈরি কোন আকাশযান। খবরটা নিউজপেপারে চলে আসে মুহূর্তের মাঝেই। ঠিক ওইদিন সক্করো, মেক্সিকো থেকেও ইউএফও দর্শনের কিছু রিপোর্ট পাওয়া যায়। এই ঘটনাগুলি রসওয়েল এ বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে।

তবে রসওয়েল এয়ার বেস কোন এক অজ্ঞাত কারনে খবরটা ধামাচাপা দেওয়ার প্রানপন চেষ্টা করে।


সেনা বাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা শুধু সাংবাদিকদের উপস্থিত জানান যে, এখানে আকাশ থেকে বিরাট চাকতির মতো যে বস্তু পড়েছে, সম্ভবত সেটি কোনও আকাশ যান, বাকিটা আপনাদের পরে জানানো হবে। পরে আবার জানানো হয় যে এটি উল্কা পিন্ড ছিল, বিশ্বব্যাপী খবরটি যখন জানাজানি হয় এবং সংবাদপত্রে খবরটি ফলাও করে প্রচার করা হয় তখন বিষয়টি নিয়ে সবার মাঝে কৌতূহলের সৃষ্টি করে। সবাই ভাবতে থাকে এটা কি তাহলে ভিন গ্রহ বাসীদের বাহন UFO ছিল!!

 গ্লেন ডেনিস নামের ২২ বছরের এক ছেলেও ম্যাক এর মাঠটি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তাকেও মিলিটারি ক্যাম্প এ নিয়ে যাওয়া হয় এবং তাকে বলা হয়, এটি নিয়ে আর কোন রকম উচ্চ্যবাচ্চ্য না করার জন্য। এছাড়া ঠিক ওই সময়ে একজন নার্স দাবী করেন, তাকে এয়ার বেস ক্যাম্প এ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তিনটি বডি অটোপসি করার জন্য। তিনি বলেন, তিনটি প্রাণীর কোনটি ই পৃথিবীর নয় এ ব্যাপারে তিনি শতভাগ নিশ্চিত। তিনি প্রানীগুলির বর্ণনা দেন এভাবে- “তারা আমাকে ডেকেছিল partial autopsy এর জন্য। তাদের ওখানে একটা বড় ক্রাশ ব্যাগ ছিল যেটির মধ্যে দোমড়ানো মোচড়ানো খুব ছোট দুটি বডি ছিল যাদের মাথা ছিল দেহের তুলনায় অনেক বড়। তাদের কোন কান ছিল না, বরং তাদের কানের দুটি ক্যানাল ছিল। তাদের বিবর ছিল দুটি ,এবং তাতে কোন দাত ছিল না।”

পরবর্তীতে গ্লেন অবশ্য নার্সটিকে অনেক খুজতে চেষ্টা করেছিল, যদিও তাকে আর কখনোই খুজে পাওয়া যায়নি। এটি প্রমানিত হলে এয়ার বেস মিলিটারি তাদের বিবৃতি দান করে বলেন, তাদের প্রাপ্ত প্রাণীগুলো আসলে একটি এয়ার বেলুনের ডামি ছিল। যদিও তাতে সন্দেহ দূরীভূত না হয়ে উল্টো সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।


এলিয়েনরা কি তাহলে সত্যিই পৃথিবীতে এসেছে? বিশ্বজুড়ে যখন এই রহস্য নিয়ে চিন্তা ভাবনা জোরালো হচ্ছে তখনই মার্কিন সরকার এই ঘটনাটিকে নিয়ে বিশ্ববাসীর সাথে নাটক শুরু করে। প্রথমে তারা বিশ্ববাসীকে জানায় এটা ছিল তাদের আর্মিদেরই নতুন একটি আকাশযান আবার পরে তারা বলে এটা ছিল খসে পড়া একটি উল্কাপিণ্ড! কিন্তু প্রকৃত যে ওই দিন সেখানে কি পতিত হয়েছিল সেটা আজও সবার কাছে এক রহস্য!

No comments:

Post a Comment