2015 সালের সেপ্টেম্বর মাস, এমন একটি ভয়ানক ঘটনা ঘটেছিল যা পুরো সৌদি আরবিয়াকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই ঘটনাটি প্রায় 2,000 এর উপর মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। মক্কায় বাৎসরিক ধর্মীয় তীর্থযাত্রা কালীন পদপিষ্ট হয়ে তাদের মৃত্যু ঘটে; এর ঠিক তিন মাস বাদে 24 শে ডিসেম্বর থেকে ইন্টারনেটে রাশিয়ান নেভিকে নিয়ে এক অদ্ভুত রকমের গুজব ছড়াতে থাকে।বলা হয় রিসার্চ শীপ বা গবেষণাকারী জাহাজ 'অ্যাডমিরাল ভ্লাদিমির স্কি' সৌদির জেদা শহরের বন্দর থেকে ঠিক এই পদপিষ্টের ঘটনায় দিন আন্টার্কটিকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল এবং অ্যান্টার্কটিকায় একটি টপ সিক্রেট বস্তু ইনস্টলেশন করার জন্য নিয়ে গেছে।
এই আর্টিফ্যাক্টটিকে 'আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েল' বলে উল্লেখ করা হয়। একটি লিকড রাশিয়ান রিপোর্ট অনুযায়ী এই বস্তুটি দুটি দুর্যোগের কারণ ছিল। পদপিষ্টের দুর্ঘটনার আগে যখন কন্সট্রাকশন ওয়ার্কার এটিকে ছুঁয়েছিল তখন এর ভিতর থেকে এক ধরনের শক্তি নির্গত হয় যা সঙ্গে সঙ্গে কাছে থাকা 15 জন কর্মচারীর প্রাণ নিয়ে নেয় এবং এটি পদপিষ্টের ঘটনার আগে কনস্ট্রাকশন ক্রেনটি পরে যাওয়ার জন্য দায়ী।
'সর্চা ফাল' নামক এক ব্লগার প্রথমেই গল্পটা লিখেছিলেন। তাঁর মতে, যখন প্রথমবার এটিকে তোলার চেষ্টা করা হয়, তখন শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটেছিল যার ফলে একটি বড় ক্রেন পড়ে যায় এবং মোট 111 জনের মৃত্যু এবং ঠিক তার পরের মাসেই দ্বিতীয় বার যখন পুনরায় এই চেষ্টা করা হয়েছিল তখন পদপিষ্টের জন্য 2,000 জন এর মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। এরপরে মক্কার দুই পবিত্র মসজিদের কাস্টোডিয়ানরা মস্কোর রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের প্রধান প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল এর সাথে এই আর্টিফ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করার জন্য যোগাযোগ করেন।
এতক্ষণ ধরে যে ঘটনাগুলো বর্ণনা করা হয়েছিল সেগুলো প্রকৃত জীবনে ঘটার সম্ভাবনা 1 থেকে 10 মধ্যে কতটা হতে পারে? সাধারণ ক্ষেত্রে আমরা -1 এ আছি।
যদিও ঘটনাটি ঘটলে অবশ্যই কোন না কোন প্রমাণ থাকবে। ক্রেমলিন মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স এর দ্বারা তৈরি একটি রিপোর্ট লিক হয়েছিল এবং এখানে লেখা হয়েছিল যে, ঠিক এই সময় দুটি স্যাটেলাইট নেভাল রিসার্চ ভেসেল 'অ্যাডমিরাল ভ্লাদিমির স্কি'কে নিরাপত্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যে লঞ্চ করা হয়েছিল এবং এই জাহাজে থাকা বস্তুটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে প্রেসিডেন্ট পুতিন স্বয়ং রিপোর্ট এর ফাইলটিকে 'ক্রিটিকাল মিলিটারি রিলিজিয়াস সিগনিফিকেন্স' বলে লেবেল করেছিলেন।
এটি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগায় যে, আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েল আসলে কি?
ইসলামে আমরা মনে করি যে, আর্কএঞ্জেল গ্যাব্রিয়েল হল ধর্মের অন্যতম মুখ্য চরিত্র এবং তিনি ইসলামের প্রাথমিক কালে ক্রমাগত মোহাম্মদ এর সাথে যোগাযোগ রেখে গিয়েছিলেন। যদিও আপনি যদি কোন মুসলিমকে প্রশ্ন করেন তারা 'আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েল' সম্পর্কে কী জানে তারা খুব সম্ভবত বলবে তারা কখনও এসম্পর্কে শোনেনি।
এছাড়া পণ্ডিতদের মতে এই আর্টিফ্যাক্টটি বাইবেল সম্বন্ধীয় আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েলের মত একই প্রকার এবং এটিও কোন অস্বাভাবিক জ্ঞানের থেকে উদ্ভূত যা মেনস্ট্রিম ইসলামের থেকে অনেক বাইরে পর্যন্ত বিস্তারিত এবং অবশ্যই মিডিল ইস্ট এর বাইরে।
ফাল তার ব্লগে দাবি করেছিল যে, এক্ষেত্রে রাশিয়ান পাদ্রীর সাথে যোগাযোগ করা হয়েছিল কারণ এই রাশিয়ান চার্চের কাছে ক্রুসেডকালীন অক্ষত থাকা একটি প্রাচীন ইসলামিক ম্যানুস্ক্রিপ্ট আছে। এই মানুস্ক্রিপ্টে আর্ক্টি কিভাবে পরিচালনা করতে হয় তা সম্বন্ধীয় নির্দেশাবলী ছিল। এছাড়া দাবি করা হয় আর্ক্এঞ্জেল মোহাম্মদকে এই বস্তুটি হস্তান্তর করেছিল এবং তাকে এই জিনিসটি একটি স্থানে পুঁতে রাখতে বলেছিল। এই স্থানটিতে ফেরেশতারা মানুষ্য সৃষ্টির আগে উপাসনা করার স্থান হিসেবে ব্যবহার করত এবং এই স্থানটি আরবিয়ার মাঝামাঝি অবস্থিত। ডকুমেন্টে ব্যাখ্যা করা হয় যে এটিকে জাজমেন্ট ডে পর্যন্ত লুক্কায়িত রাখার পরিকল্পনা ছিল।
ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি গোপন তত্ত্বে বলা হয়েছে, যে এই অদ্ভুত বস্তুটি আসলে একটি অস্ত্র যাতে দুটো এনার্জি ডিসচার্জ আছে এবং যার ফলাফলস্বরূপ 2015 সালে এত মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এবং এটি একটি প্রমাণ যে, এই আর্কের কার্যপ্রণালী বুঝতে পারলে একে রিভার্স ইঞ্জিনিয়ার করা যেতে পারে। যদিও এই রিপোর্টটির বাস্তবতা নিয়ে অনেক সংশয় রয়েছে।
যখন আমরা এই আর্ক টিকে ঘিরে বিভিন্ন তথ্য এবং এর স্থানান্তর সম্পর্কিত কাহিনীর উৎস নিয়ে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করি এবং আমরা দেখতে পাই এই একই ঘটনাটি অগণিতবার ইউটিউব এর বিভিন্ন ভিডিও এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি ইউ. কে এর একটি বিখ্যাত নিউজ পেপার 'ডেইলি স্টার' এ আমরা এর উল্লেখ দেখতে পাই এবং এর উৎস সবক্ষেত্রেই 'হোয়াট ডাস ইট মিন ডটকম' এ নিয়ে আসে। এই ওয়েবসাইটটির ব্লগার ছিলেন 'সরচা ফাল' ; 2015 সালের আগে এই আর্কটির বিষয়ে ইন্টারনেটের কোথাও, যেমন - গুগোল বা অনলাইনে একাডেমিক রিসার্চ পেপার এমনকি কোন ডিজিটাল বুকেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়নি। যেন এটি কখনো ছিল না এবং আরো একটি প্রশ্ন থেকে যায় যেটি হল কিভাবে এই বস্তুটি মক্কা থেকে জেডা এবং জেডা থেকে আন্টার্কটিকা সবার অলক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? এমনকি আর কোন জীবনহানি ছাড়া এবং কেনই বা সৌদি আরবিয়া এত শক্তিশালী একটি বস্তু অন্য একটি দেশের হাতে ছেড়ে দেবে? এটিকে বুঝতে বছরের-পর-বছর সময় লাগলেও তারা নিজেদের কাছে কেন রেখে দেয় নি? ফাল এই তথ্যটি প্রথম সবার সামনে তুলে ধরেন এবং এই কাহিনীর উৎস তার থেকেই শুরু হয়।
এই আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েল সম্পর্কিত ধাঁধার সমাধান তখনই হবে যখন এই সোর্চা ফাল কে তা জানা যাবে। আমরা হোয়াট ডাজ ইট মীন ডটকমের থেকে জানতে পারি এই ফাল আসলে একজন রাশিয়ান সাইন্টিস্ট এবং একাডেমিক। এর থেকে বোঝা যায় কিভাবে তিনি রাশিয়ান গোপন রিপোর্ট সম্পর্কিত তথ্য জানতে পেরেছিলেন। যদিও 2009 সাল থেকে অনলাইন অল্টারনেটিভ থিওরি কমিউনিটি প্রশ্ন করতে শুরু করলো যে এই চরিত্রটি আসলে কতটি আসল?
এরপরে অনেক ব্যাকগ্রাউন্ড রিসার্চ করার পর দেখা গেল যে এই নামে কোন রাশিয়ান একাডেমিক এর রেকর্ড পাওয়া যায়নি। বহু সমালোচনার পর অবশেষে সাইটটি দাবি করলো যে সর্চা ফাল এই নামটি আসলে একটি নাম নয় এটি একটি খেতাব এবং খেতাবটি এসেছে 'অর্ডার অফ সার্চ ফাল' থেকে যা আসলে একটি গোপন ও অন্ধকার জগত থেকে এসেছে।
অনেকেই বলেন যে এই সংঘ আসলে পূর্ব ইউরোপের ডাইনিদের একটি সংঘ যা বংশ পরম্পরায় চলে আসছে এবং প্রথম যার সূচনা হয় 1290 সাল থেকে এবং তাই যদি হয় তার মানে তারা তাদের এই সংঘের কার্যকলাপ পৃথিবীর বহু যুগ ধরে এবং উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে চালিয়ে গেছে। এই সংঘটির উপরিভাগ থেকে 14 জন মহিলা নেতৃত্ব দিত। যদিও এটা কেবল মাত্র একটি থিওরি।
এনথ্রপলজি এবং পলিটিকাল সাইন্টিস্ট জেসন কলাভিলের মতে, সৌদি আরবের আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েল এর ঘটনাটি একটি ভাওতা। এটি আসলে নেশনালিস্টিক জেনোফোবিয়া তৈরি করার প্রচেষ্টা যা সাধারণ ক্রিশ্চান আমেরিকানদের মনে ভীতি সঞ্চার করবে বিশেষ করে তাদের মধ্যে যারা এই ধরনের ঘটনায় বিশ্বাস করে। কারন এই ধরনের অধিকাংশ আমেরিকানবাসীদের সবচেয়ে ভয়, রাশিয়া এবং সৌদি আরবিয়া এখন একসাথে কাজ করছে, একটি প্রাচীন ইসলামিক বস্তুকে অস্ত্রে পরিণত করার জন্য যাতে তাদের বিরুদ্ধে বিনাশকারী শক্তির ব্যবহার করতে পারে এটা তাদের মনে বিশেষ ভীতির সঞ্চার করবে।
অর্থোডক্স চার্চের একটি প্রাচীন ম্যানুস্ক্রিপ্ট সংগ্রহ করে রাখা আছে যা দিয়ে এই আর্কটিকে পরিচালনা করা যায় -- এর সেরকম কোন ভালো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও যেখান থেকে আর্ক্ অফ গেব্রিয়েল পাওয়া গিয়েছিল, সেই স্থানটি ঘিরে বহুকাল ধরেই একটি অতিপ্রাকৃতিক শক্তির ঘটনা ঘিরে রয়েছে। মধ্যযুগে রচিত 'আকবর আল জামান' নামক একটি আরবিক গ্রন্থ যা 1000 c e তে লেখা হয়েছিল, তাতে লেখা হয়েছিল 'অ্যাডামের পতনের পর গ্যাব্রিয়েল পৃথিবীর বুকে এসেছিল এবং
তার কাছে 21 পৃষ্ঠার স্বর্গীয় বাণী প্রকাশিত হল। অ্যাডামের দেহকে মক্কার কাছে 'কেভ অফ ট্রেজার' নামক স্থানে দাফন করা হয়েছিল।' হিব্রু লোককাহিনী অনুযায়ী, এই স্থানটি সোনা এবং অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রীতে ভর্তি করা হয়েছিল। এই বইতে বলা হয়েছিল, অ্যাডামের পুত্র শেঠ এরপর আরো 27 টি পৃষ্ঠার দৈব বাণী পেয়েছিল এবং তাকে আদেশ দেয়া হয়েছিল মক্কায় প্রথম মসজিদটি বানানোর যা বিখ্যাত বন্যার পর আব্রাহাম পুনঃ নির্মাণ করেছিল।
যদিও এই প্রাচীন লেখাগুলিতে আর্ক অফ গ্যাব্রিয়েলের কথা সরাসরিভাবে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি; কেউ কেউ দাবি করে বিখ্যাত বই 'বুক অফ ইনখ' এ আর্কের কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে। থিওরিটিক্যালি এটা সম্ভব হতে পারে কারণ মনে করা হয়, 'আকবর আল জামান' গ্রন্থটি তার বেশিরভাগ তথ্যগুলো এই 'বুক অফ ইনক' থেকেই সংগ্রহ করেছিল। যদিও বাস্তবিক ভাবে আমরা যা ভেবে নিতে পারি -- হয়তো সৌদি আরবিয়া এবং রাশিয়ার একসাথে মিলিত হয়ে পৃথিবীর ধ্বংস সম্পর্কিত কার্যকলাপে কোন যোগাযোগ নেই, কিন্তু এই কাহিনীর এমন কিছু পর্যায় আছে যা সহজে ব্যাখ্যা করা যায় না। এছাড়া এরমধ্যে আন্টার্কটিকার উল্লেখ একটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়।
যখন ভ্লাদিমির স্কি জাহাজটি জেডা থেকে আন্টার্কটিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিল, ঠিক তখনই রাশিয়ান অর্থোডক্স নেতা পেত্রিয়ার্ক কিরিল নিজে আন্টার্কটিকার উদ্দেশ্যে একটি অভিযান করেছিলেন এবং প্রচুর মিডিয়া বা গণমাধ্যমকেও এখানে নিয়ে আসা হয়। অনেকে বলেন, অ্যান্টার্কটিকায় অপার্থিব আচার অনুষ্ঠান গুলি থেকে এবং জাহাজটি থেকে গণমাধ্যমকে দূরে রাখার ও ধামাচাপা দেওয়ার জন্য এটি করা হয়েছিল। অনেকেই মনে করেন, আন্টার্কটিকা আসলে আটলান্টিস -- হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার বেঁচে থাকা অংশ যা হাজার হাজার বছর আগে প্রাচীন সভ্যতার বাসস্থান ছিল এবং এই সভ্যতাটি অপার্থিব এলিয়েন টেকনোলজির আঁতুড়ঘর ছিল এবং এখানেই অনুনাকির দেহ সংরক্ষিত করে রাখা আছে। পরিবেশগতভাবে ভয়ঙ্কর এবং দুর্গম অঞ্চল হওয়ার কারণে এই স্থানটি আমাদের গ্রহের গুপ্ত কার্যকলাপ গুলি করার পক্ষে আদর্শ স্থান।
আপনার কি মনে হয়?
No comments:
Post a Comment