Sunday, 27 December 2020

সিল অফ সলোমন পৃথিবী রহস্যময় শক্তিশালী আংটি --

পশ্চিম আজারবাইজানের 'তাখত ই সুলেমায়ার' তিন কিলোমিটার পশ্চিমে দানবদের কারাগার অবস্থিত। প্রাচীন প্রবাদ অনুযায়ী,  এই স্থানটি রাজা সুলেমান বা প্রফেট সুলেইমা রাক্ষসদের বন্দী রাখতে ব্যবহার করতেন।

তিনি একটি ভয়ানক দৈত্যকে বন্দি করে রেখেছিলেন; যখন সে সোলেমানের বিশেষ রিং চুরি করার চেষ্টা করেছিল। এই বিশেষ রিংটি তাকে ঈশ্বর দিয়েছিলেন যা তাকে এমন সকল জাদুকরী ক্ষমতার অধিকারী করে তুলেছিল যা সাধারণ মানুষের ধারণার বাইরে ছিল। এই রিংটি 'সিল অফ সলমন' নামে পরিচিত যার সাহায্যে তিনি জ্বীনদের পরিচালিত করতেন। 2017 সালের প্রথম দিকে তুরকিশ অধিকারীদের প্রাপ্ত রিংটিকে বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যমে সেই সোলেমানের রিং বলে মনে করেছিল কিন্তু পরে দেখা যায় এটি কেবল মাত্র সেই  রিংটির 500 বছরের পুরনো অনুকরণ মাত্র।



যাই হোক না কেন এটা অস্বীকার করা যায় না যে ইতিহাসের গোলকধাঁধায় ঘুরে বেড়ানো এই রিংটি কেবলমাত্র সাধারণ মানুষদের নয়, বিভিন্ন দেশের সরকারদেরও কৌতূহলের কেন্দ্র। কারণ এই বস্তুটির ওপর আধিপত্য পাওয়া মানে স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক উভয় প্রকার শক্তিগুলির ক্ষমতাপ্রাপ্ত হওয়া। 

প্রাচ্য থেকে শুরু করে পাশ্চাত্য উভয়ের ইতিহাস জুড়েই রিং বা আংটি ক্ষমতার প্রতীক হিসাবে একটি বিশেষ নিদর্শন রেখে গেছে;  বিশেষ করে কলাবিদ্যা থেকে শুরু করে সাহিত্য এবং চলচিত্র , আইন, জাতি এবং জাদুবিদ্যায়। 

তবে অন্তত ইসলামিক এবং ইহুদি মতবাদে 'সীল অফ সলোমান' এখনো অব্দি জানা সবচেয়ে শক্তিশালী বস্তু। 




সুলেমান অত্যন্ত শ্রদ্বেয় ছিলেন ও তার ক্ষমতার কারণে তার সাথে যুক্ত বহু ধ্বংসাবশেষ ও বস্তুকে হাজার বছর পর এখনো অনুসসরণ করা হয় যার মধ্যে একটি হলো তার জাদুকরী আংটি। 
'সিল অফ সলোমনের' গল্পগুলির উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন কিন্তু অনেক ইতিহাসবিদরা মনে করেন মধ্যযুগের আরবের লেখকরা এটিকে নিয়ে যে শ্রুতিকাহিনী বর্ণনা করেছেন, সেগুলি থেকে এর হেক্সাগ্রাম ডিসাইন পাওয়া যায় যার থেকে একটি পেন্টাগ্রাম পাওয়া যায়। 
যেহেতু হেক্সাগ্রামের ব্যবহার ইহুদি গুপ্তলেখনীগুলোতে প্রায়শই ব্যবহার করা হতো তাই বেশিরভাগ বিষেশজ্ঞদের মতে, এই চিহ্নটি আরবিক সাহিত্য থেকে কাবালিস্টিক সাহিত্যে প্রবেশ করেছে। 

দানবদের উপর সলোমনের ক্ষমতাপ্রাপ্তির কাহিনী "দ্য ম্যাজিক্যাল ট্রিটিস অফ সলোমন" এবং "কে অফ সলোমন" নামক দুটি শক্তিশালী প্রাচীন জাদুবিদ্যার বইতে পাওয়া যায়। 

তাখত ই সুলেমায়ার



ম্যাজিক্যাল ট্রিটিস অফ সলোমন গ্রন্থটিতে পাওয়া যায়, সলমনের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক একটি জিনের দ্বারা নির্যাতিত হয় এবং সে তার অর্ধেক বেতন এবং খাবার নিয়ে নেয়, এমনকি ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল চুষে তার আয়ুও শুষে নেয়। এটা জানতে পেরে সলোমন কি করবে বুঝতে না পেরে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন এবং তখন  আর্কেঞ্জেল মাইকেল তাকে এই রিংটি দেন।  

এই রিংটিতে পেন্টাগ্রামের আকৃতির ঈশ্বরের চিহ্ন ছিল যা সলমনকে দানবদের উপর অধিপত্য দিয়েছিলো। 
যুদিও খৃষ্টান মতে, তিনি সেই দানবটিকে জব্দ করেছিলেন, যে তার প্রধান তত্বাধায়ককে নির্যাতন করছিলো এবং তিনি দানবদের প্রধানকে তলব করেছিলেন। তার রিংটি ব্যবহার করে তিনি এরপর সেই দানব প্রধানকে আদেশ করে এক এক করে বহু সংখক দানবদের তার সামনে এনে জড়ো করেছিলেন। এরপর রাজা সলোমন এক এক করে তাদের সকলকে জিজ্ঞসাবাদ করেছিলেন, তাদের নাম, ঠিকানা, উৎস এবং কোন শব্দগুলিতে তাদের উপর আধিপত্য পাওয়া যায় তা জেনেছিলেন। 



মনে করা হয় এই অমূল্য জাদুকরী রিংটি সুলেমানের দেহের মতোই কবর দেয়া হয় এবং কিংবদন্তি অনুযায়ী, যে এই আংটিটি খুঁজে পাবে সে এই দুনিয়াতে রাজত্ব করবে। 

বিভিন্ন চলচিত্রে, গল্পের বই বা টেলিভিশন শোগুলোতে প্রায়শই যেমন দেখা যায়, বিভিন্ন মানুষ এবং সংস্থা, ভ্যাটিকান থেকে শুরু করে ১৯৪০ সালের জার্মান সরকারও এইজাতীয় শক্তিশালী বস্তুর প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ প্রকাশ করেছিল বলে জানা গেছে।এমনকি জার্মান সরকারের সকল প্রকার কিংবদন্তির প্রতি এক বিশেষ আগ্রহ ছিল। 

২০১৬ সালের মার্চ মাসে প্রাগ এর 'ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ দ চেক রিপাবলিকে' ১৩০০০ টি গুপ্তবিদ্যা ও ডাকিনিবিদ্যার বইয়ের সংগ্রহ পাওয়া গিয়েছে যা এস এস চিফ 'হেনরিক হিমলারের' ছিল। 

১৮০০ সাল থেকে ইউরোপে মডার্ন লিবারেশন স্টান্ডপয়েন্ট বেড়ে উঠছিলো এবং ইতিহাসবিদ নিকোলাস গুডরিক ক্লার্কের দাবি, জার্মানির গুপ্তবিদ্যার প্রতি আগ্রহ এরই রিএকশনের অংশ ছিল। 

তাদের মধ্যপ্রাচ্যের গুপ্তবিদ্যা ও রহস্যগুলির প্রতি আগ্রহের কারণ ছিল আধুনিক পৃথিবী মিথ্যা ও স্যাটানিক আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে আছে এটা প্রমান করা।


 

কামরান ফকিরের 'দ রাইস অফ দ এন্টিক্রিস্ট' অনুযায়ী, ১৯৪০ সালে মিডল ইস্ট বা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় জার্মান গতিবিধির বেশিরভাগ উদ্দেশ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের ও আফ্রিকার সেইসব প্রাচীন বস্তু সংগ্রহ করা যা অতিপ্রাকৃত শক্তি সমৃদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়, তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গালফ এর উত্তর প্রান্তে প্রভাব বিস্তার করার বিরুদ্ধে আরব ন্যাশনালিস্টদের কাছে আপিল করেন, কারণ ছিল -একটি প্রাচীন সুমেরিয়ান 'স্টারগেট' দখল করা যা ১৯২০ সাল সময়কালীন ইরাকে আবিষ্কৃত হয়।  

বলা হয় এই সামগ্রীগুলো যে কোনো দুটি স্থানের মধ্যে কৃত্তিম ওয়ার্মহোল তৈরী করতে সক্ষম ছিল। 
যার মাধ্যমে কেউ মহাকাশের যে কোনো স্থানে সহজে যেতে সক্ষম হবে এমনকি বিভিন্ন রিয়ালিটি ও ডাইমেনশনেও যেতে পারবে। 




এছাড়া অনেকেই জানেন জার্মানরা তন্ত্র ও গুপ্তবিদ্যা সম্পর্কিত লাইব্রেরি তৈরির জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন এমনকি ভ্যাটিকানের থেকেও এর জন্য মদত নেয়া হয়। হেনরিক হিমলার বিশ্বাস করতেন পুরাতন গুপ্তবিদ্যার শক্তি জার্মানকে পৃথিবীতে রাজত্ব করতে সাহায্য করবে। 

মধ্যপ্রাচ্যের প্রাচীন গুপ্তবিদ্যার প্রতি অন্যন্য যে রহস্যময় সংস্থাগুলি আগ্রহ রাখতেন তাদের মধ্যে উলেখ্য ছিল কাবালা এবং নাইট টেম্পলার। ১১১৮ এ জর্দানে ত্রুসেড চলাকালীন 'হিউজ দে পায়েন' নামক এক ফ্রেঞ্চ নাইট নাইট টেম্পলার গঠন করে। অর্ডারটি গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সম্প্রদায়ের সাথে তারা যোগাযোগ স্থাপন করতে থাকে যারমধ্যে ছিল আব্রাহামিক বিশ্বাসী যাদুকরেরা। সবচেয়ে বিখ্যাত যে বস্তুটির সাথে তাদের নাম জড়িয়ে ছিল তা হলো 'দ আর্ক্ অফ কোভেন্যান্ট'। হিব্রু বাইবেল এবং ইসলামিক স্কলারদের মতে আর্কটি হলো এমন একটি সিন্দুক যাতে ফলকের উপর ১০টি স্বর্গীয় কমান্ডমেন্ট খোদাই করা আছে। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে কেন এই শক্তিশালী বস্তু যা হয়তো ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী বস্তুগুলির মধ্যে একটি তা নাইট টেম্পারদের টার্গেট হবে। মনে করা হয় এক সময়ের জন্য প্রফেট সুলেমান এর দায়িত্বে ছিলেন।  আর্কটির মতোই তার রিংটিও নিজের ক্ষমতার জন্য বিভিন্ন জল্পনা ও আগ্রহের কেন্দ্র হয়, কিন্তু এই ক্ষমতা বুঝতে গেলে জাদুকরী ক্ষমতার দরকার।  

মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যে কোনো রকমের অনুশীলন করা অবৈধ মনে করা হয় কারণ, এর অনুশীলনকারীকে জ্ঞানত বা অজ্ঞানত জিনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়। যদিও সলোমনের ক্ষমতা কোনো জিনের থেকে নয় বরং ঈশ্বরের থেকে প্রাপ্ত ছিল যা পরবর্তী কালে তার সংগ্রহের শক্তিশালী বস্তুগুলিতে দেখা যায়। 

 কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, 'ম্যাজিকাল ট্রিটিস অফ সলোমন' এবং 'কে অফ সলোমন' বইগুলি সঠিকভাবে বুঝতে পারলে এর পাঠকও সুলেমান বা সলোমনের মতো জিনের উপর ক্ষমতালাভ করতে পারবে। কিন্তু এর পাঠকরাও কি সলোমনের মতো সমান ফলাফল পাবে? ধর্মগতভাবে অবশ্যই নয় কারণ তারা ঈশ্বরের প্রফেট নয়। তবুও তারা কি কিছুটা হলেও অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার প্রভাব পাবে ? এ বিষয়ে ভ্যাটিকান সহমত পোষণ করে। তাদের গোপন সংগ্রহে একটি বই হলো গ্রান্ড গড়িময়রে যা কে অফ সলোমন অবলম্বনে লেখা হয়েছিল, এটি দ রেড ড্রাগন বলেও পরিচিত।এই বইটি বিব্লিক্যাল হিব্রু ও আরামিক ভাষায় প্রথম ১৭৫০ সালে প্যালেস্টাইনে পাওয়া যায়।  

বলা হয় এটির স্বয়ং শয়তানকে ডেকে পাঠানো অথবা প্রতিরোধ করা, কাজ করানোর ক্ষমতা আছে। 
মনে করা হয়, এই বইটি পোপ হনোরিয়াস iii  ১২০০ সালে একটি শয়তান জিনের দ্বারা আবদ্ধ হয়ে 
লিখেছিলেন এবং এই জিনটি পোপকে ব্যবহার করে পৃথিবীজুড়ে স্যাটানিক শক্তি ও প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিলো। তাই অন্য কথায় এই বইগুলি ও অন্যান্য গুপ্ত সামগ্রীগুলি স্যাটানিক ও ধ্বংসাত্মক দিকে ব্যবহার করা যায়। সবশেষে বলা যায় এগুলি শক্তির বিভিন্ন রূপকের মতো যেখানে ব্যবহারকারী মনে করে সে শক্তিকে ব্যবহার করছে কিন্তু বাস্তবে এই শক্তির দ্বারা ব্যবহারকারী ব্যবহৃত হয়। 


Sunday, 13 December 2020

আমাজনের রহস্যময় হারিয়ে যাওয়া সভ্যতা--

 আমাজন রেইনফরেস্টে 2 একর জমি জুড়ে একটি পাহাড় আছে যাকে 'মন্টেগ্রেনেড' বলা হয় এটাকে দেখে পাহাড় ছাড়া অন্য কিছু মনে হতো না। একটু বেশি খাড়া মনে হতো কিন্তু এর বেশি নয়। শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে এটিকে উপেক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল এরপর ধীরে ধীরে পেরুর শহরগুলি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আমাজনের জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে এই স্থানটিতে কৃষকরা তাদের ঘর স্থাপন করার জন্য কাজ শুরু করে। 

যখন বাড়ি তৈরি করার জন্য তারা খনন করতে শুরু করলো, তারা বেশ কিছু পুরনো পাত্র খুঁজে পেল।  তারা বুঝতে পারলো এগুলো বহু পুরনো; পরবর্তীকালে পরীক্ষা করার পর জানা গেল এগুলি হাজারখানেক বছরের পুরনো। স্বাভাবিকভাবে এরপর তাদের জমি গুলি একটি আর্কিওলজিক্যাল সাইটে পরিণত হল। 



2010 সালে আর্কিওলজিস্ট কুইরিনো অলিভেরা এবং তার গবেষকদল মন্টেগ্রেনেড পাহাড়টিতে খননকার্য শুরু করতে লাগলো; খুব শীঘ্রই তারা বুঝতে পারলো এই স্থানটি একদমই একটি পাহাড় নয়। 

এটি আসলে একটি বিশাল আকৃতির পিরামিড, যা আমাজন রেইন ফরেস্টের এক হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার দ্বারা নির্মিত হয়েছিল এবং এটি 3000 বছরেরও বেশি পুরনো এরপর এই মন্টেগ্রেনেড সব হিসাব পাল্টে দিলো। প্রথমবারের মতো আমাজন রেইন ফরেস্টের প্রাচীন সভ্যতা সম্পর্কে একটি শক্ত প্রমাণ পাওয়া গেল। 
এর আগে মনে করা হতো আমাজনের রেনফরেস্ট এমন একটি স্থান যেখানে পা রাখা খুব সাহসিকতার কাজ। আর্কিওলজিস্টরা মনে করতেন যে প্রাচীনকালে হয়তো কিছু মানুষ সেখানে বসবাস করত কিন্তু তারা আলাদাভাবে থাকত এবং ভ্রাম্যমাণ যাযাবর ছিল; যারা বিভিন্ন জায়গা ঘুরে বেড়াতো এবং খুব স্বল্প সময়ের জন্য বসতি স্থাপন করত। 




যখন স্প্যানিশ অভিযাত্রীরা প্রথমবার দক্ষিণ আমেরিকা পৌঁছেছিলেন তারা লিখেছিলেন, বিশাল বিশাল আকৃতির আমাজনের শহরের কথা এবং সেখানে র একেকটি ভর্তি খামার যা পুরো এক নৌবহরের খাদ্যের প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট। কিন্তু তাদের এই গল্পের স্বপক্ষে পরবর্তীকালে তেমন কিছু ভিত্তি বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এতদিন পর্যন্ত এমন কোন আর্কিওলজিক্যাল প্রমাণ পাওয়া যায়নি যা এটা প্রমান করে যে আমাজনে কেউ ঘর তৈরি করে বাস করেছিল বা বেশিদিন থেকে ছিল।

মন্টেগ্রেনেডের এই আবিষ্কারটি পুরো দেশটির ইতিহাস বদলে দিয়েছিল। মনে করা হয় এই সভ্যতার সবচেয়ে পরিপূর্ণ সময়ে আমাজনে প্রায় 5 মিলিয়নের উপর মানুষ বসবাস করত। তারা একটি সভ্যতা এবং সংস্কৃতি তৈরি করেছিল যা সময়ের সাথে সাথে সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে যায়। এখন কেবলমাত্র তাদের হাড় বা অস্থী থেকেই আমরা এই লোকগুলির সম্পর্কে জানতে পারব।




যে মানুষগুলো মন্টেগ্রেনেড তৈরি করেছিল, আর্কিওলজিস্ট এর মতে তারা একটি অত্যন্ত উন্নত সম্প্রদায় বা সমাজের অংশ ছিল। তারা কেবলমাত্র একটি পিরামিড তৈরি করে ছেড়ে দেয় নি, তারা প্রথমদিকে অন্তত 1000 বছর আগে পিরামিড তৈরি করে, তারপর পুনর্গঠন করে এবং অন্তত 8 বার এটির পুনর্নির্মাণ হয়। এই সাম্রাজ্যটি কয়েক হাজার বছরের পুরনো ছিল যা একই স্থানে অবস্থান করছিল।

তারা নিজেদের জনতাকে রক্ষা করার জন্য 6 ফিটের দেওয়াল তৈরি করেছিল এবং সাম্রাজ্য শাসনের জন্য বিভিন্ন অফিস তৈরি করেছিল, নদীর ধার বরাবর তারা সমানভাবে ঘর তৈরি করেছিল, তাদের নিজস্ব একটি জটিল ধর্ম ছিল এবং তাদের একটি প্রশস্ত ব্যাবসায়িক নেটওয়ার্ক ছিল যা পুরো পেরু জুড়ে সম্প্রসারিত ছিল।






এদের ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরনো কিন্তু আমরা এদের সম্পর্কে যা কিছু জানতে পেরেছি তা কেবল মাত্র এই স্থান থেকে পাওয়া ধ্বংসাবশেষ থেকে কিন্তু এই বিশাল আকৃতির জমিটি তাদের সম্পর্কে অনেক রহস্য রেখে গেছে। 
পাথরকে সর্পিল আকৃতির করে খোদাই করে অনেকটা বিশাল আকৃতির সাপ বা শামুকের মতো গোলাকার আকৃতির মন্দির পাওয়া গেছে, আপনি যার মধ্যে দিয়ে গোলকধাঁধার মতো হেঁটে হেঁটে যেতে পারবেন। আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ আপনাকে নিচের দিকে নিয়ে যাবে এবং যখন আপনি একেবারে এর কেন্দ্রে পৌঁছাবেন, তখন আপনি প্রায় 40 ফিট নিচে থাকবেন। এই সর্পিল আকৃতির স্থানের কেন্দ্রতে এখানকার মানুষেরা আগুন জ্বালাত; খুব সম্ভবত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হতো এবং এতে ওষুধেরও প্রয়োগ করা হতো। আর্কিওলজিস্টরা চামচ এবং হামালদিস্তা পেয়েছেন যার মধ্যে তখনও ভিলকা নামক মাদকজাতীয় বিজের অবশিষ্টাংশ ছিল। এই বীজগুলি এখান উৎপাদিত হয় না, এরা যেখানে উৎপাদিত হয়েছিল, সেখান থেকে এদেরকে আমদানিকৃত করা হয়েছিল এবং এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে এই সভ্যতার যথেষ্ট বিস্তৃত একটি ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক ছিল। 

অলিভেরার মতে, এখানকার আদিবাসীদের সর্পিল আকৃতির প্রতি আকর্ষণ কারণ এই বীজগুলি হতে পারে। এই ধরনের বীজগুলি সেবন করে আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ার পর ঠিক সর্পিল আকারে বিভিন্ন আলো দেখতে পাওয়া যায়।
যেসকল পূজারীরা এখানে থাকতেন তারা হয়তো এটিকে কোন প্রকার ধ্যান বা সাধনার কাজে ব্যবহার করতেন এবং এই নেশা বা আচ্ছন্নতা তাদের পুরো জাতিকে বদলে দিয়েছিল।




সর্পিল বা প্যাঁচানো আকৃতি এখানকার মানুষের কাছে নেশার মতন ছিল। এই সভ্যতার ধ্বংসাবশেসের  ভেতর প্রচুর শামুকের খোলস সব জায়গায় ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। যখন কেউ দেহত্যাগ করতেন, তাদের দেহকে এগুলো দিয়ে ঢাকা হত এবং তাদের সমাজের সব জায়গায় এই আকৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সম্ভবত তারা বিশ্বাস করতো এই ভিলকার বীজ সেবন করার মাধ্যমেই ঈশ্বরের কাছে যাওয়া যায়। 

মন্টেগ্রেনেডের থেকে এক মাইলের কাছাকাছি দূরত্বে গবেষকরা দ্বিতীয় পিরামিডটি খুঁজে পেয়েছিল কিন্তু এটি একটি অতন্ত অন্ধকার কাহিনী তুলে ধরে। দ্বিতীয় পিরামিডটির তলায় 22 টি শিশুর অস্থি পাওয়া যায়। বেশিরভাগ অস্থি গুলি থেকেই অপুষ্টি এবং রোগগ্রস্তর চিহ্ন পাওয়া যায়। 
তারা যখন অত্যন্ত অসুস্থ এবং মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল তখন তাদের এখানে নিয়ে আসা হয়। এটি শহরের এমন একটি স্থান যেখানে মা তাদের প্রিয় কিন্তু মৃতপ্রায় অসুস্থ সন্তানদের ওঝা বা তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে আসতো ওঝা বা তান্ত্রিকরা এদের চিকিৎসা করত না। এদের কাছে এমন কোন জাদুকরী বিদ্যা ছিলনা যার দ্বারা তারা শিশুদেরকে সুস্থ করতে পারত তাই, এখানে বেশিরভাগ শিশু যাদের আনা হতো তারা সাহায্য পেত না কেবলমাত্র তারা কুরবানী বা বলির নিদর্শন হিসাবে রয়ে গিয়েছে।




শিশুদের এই অস্থিগুলোয় নৃশংসতার নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। ছয় বছর বয়সে শিশুকে তার পোষা ইঁদুরের সাথে কবর দেওয়া হয়েছিল এবং একটি জায়গায় একজন যুবতী মাতা এবং তার সাথে নবজাতক শিশুর শিরচ্ছেদ করা অস্থি পাওয়া গিয়েছে। এছাড়া পাওয়া গিয়েছে সেই পুরোহিত বা ওঝার অস্থি, যে এদেরকে কুরবানী করেছে। আর্কিওলজিস্টরা তার নাম দিয়েছে 'দা লর্ড অফ স্নেইলস' এবং সে হয়তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন ছিল  যে 2800 বছর আগে মারা গিয়েছিল এবং তার সমাধি অত্যন্ত চাকচিক্যময় ছিল। দেহটি মাথা থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত 180 টি শামুকের খোলা দিয়ে ঢাকা দেওয়া ছিল এবং তার মুখটি উপরে সূর্যের দিকে মুখ করা ছিল।

এখানে যে সকল মানুষের বসবাস করত তাদের একটি লেখাও পাওয়া যায়নি। যদি তারা স্বাক্ষর হয়ে থাকে, তবে আমরা জানি না তারা কিভাবে বা কি লিখতো! আমরা তাদের নাম জানিনা, এমনকি জীবন, ভালোবাসা এবং মৃত্যু সম্পর্কে তাদের চিন্তা ধারাও জানতে পারিনি। তারা কেন আমাজনে এসেছিল এবং কেন তাদের পতন হয়েছিল তা জানা যায়নি।  এতদিন পর্যন্ত এদের অস্তিত্ব সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি অথবা আমাজনে কোন প্রাচীন সভ্যতা ছিল বলেও ধারণা ছিল না। আমরা কেবলমাত্র কতগুলি ধ্বংসাবশেষ এবং অস্থি খুজে পেয়েছি কিন্তু প্রায় 2000 বছর ধরে ভুলে যাওয়া মানুষদের জন্য সেগুলিই অনেক।

Saturday, 5 December 2020

2020 সালের আরো একটি নতুন রহস্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের রহস্যময় মনোলিথের উদয় কি ভিনগ্রহী আগমনের সংকেত?

ইউনাইটেড স্টেটস এর উটাহা প্রদেশের দক্ষিণ প্রান্তে মরু অঞ্চলের উপর দিয়ে বিগহর্ণ শিপ নামক এক প্রজাতির মেষ জাতীয় প্রাণীর সার্ভে করার জন্য একটি হেলিকপ্টার উড়ে যাচ্ছিল। ঠিক এই সময় এই অত্যন্ত দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে হঠাৎ করে তাদের চোখে পড়ে একটি মসৃণ লম্বা স্থাপত্য। উটাহা ডিপার্টমেন্ট অফ পাবলিক সেফটি অ্যান্ড ডিভিশন অফ ওয়াইল্ডলাইফ রিসোর্সেস এর সদস্যরা এই স্তম্ভটি 18 নভেম্বরের দেখেছিল বলে রিপোর্ট করেন। এরপরে কিছু সদস্য সেটি তদন্ত করার উদ্দেশ্যে ল্যান্ড করেন। এই বস্তুটিকে দেখে তারা অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে যান; এটি স্টেইনলেস স্টিলের মতো ধাতুতে তৈরি এবং ত্রিকোণাকার এই বস্তুর উচ্চতা 10 থেকে 12 ফুট ছিল এবং এটি এমন ভাবে পাথরের মাঝে ইনস্টল করা হয়েছে যা যথেষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া সম্ভব নয়।


যে স্থানটিতে এই মনোলিথটি পাওয়া গিয়েছে সেই স্থানটি আধিকারিকরা এখনো প্রকাশ করেননি কারণ, এর ফলে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৌতুহলী মানুষের আগমন ঘটতে পারত।
ব্যুরো অফ ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এর আধিকারিকরা এ বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছিলেন এবং সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় ঘটে যখন এজেন্সি সাংবাদিক বৈঠকে তাদের একটি বয়ান দেন যা হলো, "এইভাবে সরকারের দায়িত্বে থাকা জমিতে কোন অনুমতি ছাড়া কোন স্থাপত্য বা শিল্প জাতীয় বস্ত স্থাপিত করা বেআইনি সে নির্মাতা যে গ্রহেরই বাসিন্দা হোন না কেন।"

উতাহার মনোলিথটি 


এরপর খুব দ্রুত ঘটনাটি ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন মতবাদ আসতে থাকে এবং এই ঘটনার ঠিক 10 দিন বাদে রহস্যজনকভাবে এই বস্তুটি গায়েব হয়ে যায়।
ব্যুরো ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এর অফিশিয়াল এই বস্তুটি কতদিন সেখানে ছিল এবং কে এটি তৈরি করেছে এবং কেনইবা এটি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে তা নিয়ে তদন্ত করছেন এবং তাদের তরফ থেকে যে সরকারি বয়ান দেয়া হয়েছে তা হলো, "We have received credible reports that the illegally installed structure, referred to as the 'monolith', has been removed from Bureau of Land Management (BLM) public lands by an unknown party,” 

"The BLM did not remove the structure which is considered private property. We do not investigate crimes involving private property which are handled by the local sheriff's office,”



আশ্চর্যজনকভাবে এই বস্তুটি গায়েব হওয়ার সাথে সাথেই পৃথিবীর অপর প্রান্তে রোমানিয়ায় একটি পার্বত্য অঞ্চলে একই রকম একটি মনোলিথ এর হঠাৎ করে উদয় হয়। স্থানটি একটি ঐতিহাসিক দুর্গের থেকে কয়েক মিটার দূরত্বে ছিল।  রিপোর্ট অনুযায়ী, 'পিয়েত্রা' শহরের 'বাটকা দামনেই' পাহাড়ের উপর পাওয়া গিয়েছে।এ নিয়ে একটি সরকারি তদন্ত শুরু হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত আধিকারিকরা বলতে পারেননি এই স্থাপত্যটি কে তৈরি করেছে। এই স্থাপনাটি 'পেত্রভা দেশান' দুর্গের কাছে পাওয়া গিয়েছে এবং এটিকে ঠিক উটহা এর মতনই অবস্থানে পাওয়া গিয়েছে।

প্রসঙ্গত বলে রাখি এই পেত্রভা দেশান দূর্গটি রোমানিয়ার প্রাচীনতম ঐতিহাসিক দুর্গ গুলির মধ্যে অন্যতম। মনে করা হয়, ২০০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে রোমানরা এই দুর্গটি ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং এর ধ্বংসাবশেষ স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

তবে এই মনোলিথটি কিভাবে উদয় হয়েছিল তা জানা না গেলেও সম্ভবত কিভাবে এটিকে তুলে নেওয়া হয়েছে সেই রহস্যের সমাধান হয়তো পাওয়া গিয়েছে এবং দুর্ভাগ্যবশত এটি কোন ভিনগ্রহীরা তুলে নিয়ে যায়নি সম্ভবত।
ফটোগ্রাফার রস বার্নার্ড খবরটি পেয়ে এই স্থানটিতে গিয়েছিলেন এবং তারপর তিনি ইনস্টাগ্রামে কিছু ফটো দিয়েছিলেন যাতে দেখা যাচ্ছে হঠাৎ করে চারজন মানুষের সেখানে উদয় হয় এবং তারা বস্তুটিকে ঠেলে এবং খুলে নিয়ে একটি ঠেলাগাড়ি করে নিয়ে চলে যায় এবং বার্নার্ড লিখেছিলেন এদের মধ্যে একজন পিছনের দিকে তাকিয়েছিল এবং বলেছিল, "কোন সূত্র ছেড়ো না"। 




এর পরেই এন্ডি লুইস নামক 34 বছর বয়সে একজন অ্যাডভেঞ্চারাস স্পোর্টসম্যান ইউটিউবে একটি ভিডিও পোস্ট করেন যার নাম ছিল "আমরা ইটাহার মনোলিথ তুলে নিয়েছি" এবং এতে একই রকম দেখতে একটি বস্তুর কিছু ছবি এবং একটি ছোট ক্লিপে মনোলিথ গাড়ি করে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও দেখা গিয়েছে কিন্তু এর বেশী কিছু ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

তবে এই ভিডিওগুলি ও ফটোগুলি আসল কিনা তা নিয়ে অনেকের সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
অনেকের মতে, এটা নিছক মজা করার জন্যই করা হয়েছে।
কিছু মানুষের মতে এটি ভিনগ্রহীদের স্থাপনা হতে পারে এবং হয়তো সরকারের তরফ থেকেই এটিকে গোপনভাবে কোন কারনে এখান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় যদিও এই রহস্যের ব্যাখ্যা এখনো সমাধান হয়নি।আমরা এর সমাধানের অপেক্ষায় থাকবো।
আপনার কি মনে হয়?

Tuesday, 1 December 2020

ভিনগ্রহী মহাকাশরক্ষী সোলার ওয়ার্ডেন, একজন হ্যাকার ও আমেরিকান সরকার --

গ্যারি ম্যাককিনন 1966 সালে স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁর কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ ছিল। 14 বছর বয়সে প্রথম কম্পিউটার পাওয়ার পর তিনি তা শিখতে শুরু করেন। পরবর্তীকালে 'ওয়ার গেমস' এর মত চলচ্চিত্র এবং হুগো কর্নওয়ালের 'দা হ্যাকারস' হ্যান্ডবুক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি হ্যাকিংএর জগতে আরো গভীরে যেতে থাকেন; একটা সময় তিনি এর নেশায় পড়ে যান। একটি ছোট কোম্পানিতে তিনি সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসাবে চাকরি করতেন কিন্তু তার এই হ্যাকিং এর প্রতি আকর্ষণ তার কাজের প্রতি সময় কমিয়ে আনা এবং হ্যাকিং এর প্রতি সময় বাড়িয়ে যাচ্ছিল ফলস্বরূপ, তিনি কাজ হারান।

যদিও এই সময়ে তিনি কিছুটা স্বনির্ভর হওয়ায়  ততটা বিব্রত হননি বরং তার শখের প্রতি আরো বেশি সময় ও সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি লন্ডনে তার প্রেমিকার আত্মীয়র বাড়িতে অর্থাৎ যেখানে তার প্রেমিকা থাকতো সেখানে তার সাহায্যে নিজের ক্ষমতাকে আরো বৃদ্ধি করতে থাকেন। নিজের হ্যাকার নেম রাখেন 'সোলো'। 



কিছু সময় ধরে এটি তার কাছে কিছুটা শখ বা আকর্ষণীয় গেমের মত ছিল কিন্তু পরবর্তীকালে এটি তাকে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মিলিটারি কম্পিউটার হ্যাক করার জন্য বিখ্যাত করে তোলে যা ম্যাককিননকে এক অন্ধকার, অত্যন্ত গোপন মিলিটারি প্রজেক্ট, এলিয়েন এবং ইউ এফ ও র জগতের সাথে জড়িয়ে ফেলে। 

আমরা জানি অনেক ঘটনা আছে যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের সরকার বাইরে বের হতে দেয় না বা ছড়িয়ে পড়তে দেয় না এবং তা গোপন করে রাখে বা চাপা দিয়ে দেয়। 1990 সালের শেষের দিকে ম্যাককিনন এরকমই কিছু প্রমাণ খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন এবং তিনি স্থির করেছিলেন যে তার হ্যাকিং এর দক্ষতা এই বিষয়ে কাজে লাগাবেন। একসময় তিনি বলেছিলেন, "আমি এইসকল 'কন্সপিরেসি থিওরি' বা 'ষড়যন্ত্র তত্ত্ব' বিশ্বাস করিনা; তাই আমি ঠিক করেছিলাম যে আমি নিজে বিষয়গুলি দেখব।"



 তিনি তার এই মিশনে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিয়োজিত রেখেছিলেন এবং নিজের সমস্ত সময় সরকারি এবং মিলিটারি ফাইল এবং সিস্টেমের তল্লাশিতে ব্যয় করতে থাকলেন। একটা সময় এগুলি যেন তাকে বলতে গেলে গিলে ফেলে ছিল। প্রসঙ্গত বলে রাখি, তার এই কাজগুলি সম্পূর্ণ বেআইনি ছিল।

তিনি পরবর্তীকালে বলেছিলেন, "আমি নিজের অপরাধ সম্পর্কে সচেতন ছিলাম কিন্তু আমি একটি অন্তর্দ্বন্দ্বের মধ্যে ছিলাম। আমি একদম নিশ্চিত ছিলাম এবং সেখানে অত্যন্ত ভালো ভালো সব প্রমান ছিল যা প্রমাণ করে যে আমেরিকান সরকারের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির কিছু গোপন অংশর ভিনগ্রহী প্রযুক্তির সাথে সম্পর্ক আছে, যা বর্তমান পৃথিবীতে ব্যবহার করলে আমরা বিনামূল্য দূষণমুক্ত, সম্পূর্ণরূপে পরিবেশবান্ধব শক্তির ব্যবহার করতে পারব। আমার মনে হয় কেউ যদি এই তথ্যগুলি গোপন করে রাখে তা আমেরিকান আইনের সম্পূর্ণরূপে বিরোধী।আমি সেই মুহুর্তে জেলে যাওয়ার কথা ভাবিনি, আমি নিজের কথা ভাবিনি, এমনকি এই সময় আমি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতাম না, দিনের পর দিন একই পোশাক-আশাক পরে, এমন কি রাত জেগে এই তদন্ত গুলি করছিলাম।"




তার মতে, তিনি তার তদন্তে বিভিন্ন অদ্ভুত অদ্ভুত রকমের তথ্য খুঁজে পাচ্ছিলেন যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্য একটি বিষয় হলো - এক প্রকারের গোপন মহাকাশের বাহিনী। একটি কন্সপিরেসি থিওরিতে দাবি করা হয়েছিল যে, নাসা এবং সরকারের গোপন সংস্থা জনসন স্পেস সেন্টারে একটি ইউ এফ ওকে নিয়ে পরীক্ষা করছে। এই ঘটনা শুনে ম্যাককিনন নাসা এবং ইউ এস স্পেস কমান্ড ফাইলে নিজের তদন্ত শুরু করেন বিষয়টি নিজে যাচাই করার জন্য তিনি নাসাকে হ্যাক করেন এবং পরবর্তীকালে তিনি প্রচণ্ড বিস্মিত করা তথ্য খুঁজে পান।




তিনি বলেন, "একজন নাসার ফটোগ্রাফিক এক্সপার্ট বলেছিল জনসন স্পেস সেন্টারে এর কাছে বিল্ডিং 8 এ তারা নিয়মিত হাই রেজুলেশন স্যাটেলাইট ইমেজিংয়ে তোলা ফটো থেকে - ইউ এফ ওর ফটোগুলি মুছে দিত। আমি নাসার সিস্টেমে লগ-ইন করেছিলাম এবং এই ডিপার্টমেন্টে অ্যাক্সেস করতে পেরেছিলাম। তাদের পিকচার ফাইল গুলিতে অত্যন্ত বিশাল বিশাল হাই রেজুল্যুশনের ইমেজ স্টোর করা ছিলো, যার মধ্যে ফিল্টার এবং ননফিল্টার অথবা প্রসেস এবং আনপ্রসেসড করা ফাইলগুলি ছিল। ছবিগুলির একেকটি ডাউনলোড করার জন্য আমার dial-up 56K কানেকশন খুবই স্লো ছিলো এবং যখন তারা এই ছবিগুলি প্রসেস করছিল, তখন তাদের ডেস্কটপের উপর আমার কন্ট্রোল ছিল। ফলে 4-bit কালারে এবং  লোস্ক্রীন রেসোলিউশনে অ্যাডজাস্ট করে আমি এই ছবিগুলি দেখতে পাচ্ছিলাম। এই বস্তুগুলি রুপোলী, কিছুটা চুরুটের মতো আকৃতির বস্তু ছিল এবং দুই দিকেই জিওডেসিক স্পেয়ার যুক্ত ছিল, অত্যন্ত স্পষ্ট ছিল এবং স্যাটেলাইট থেকে তোলা এই বস্তুগুলির ছবি সম্পর্কে কোন রেফারেন্স পাওয়া যায়নি। এই বস্তুগুলি দেখে মনে হয় না এগুলি মানুষের তৈরি অথবা আমাদের তৈরি কোন কিছুর মধ্যে এই বস্তুগুলি পড়ে না। যেহেতু আমি জাভা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করছিলাম আমি কেবল মাত্র এই ছবিগুলির স্ক্রিনে ভেসে ওঠা অংশ দেখতে পাচ্ছিলাম; ফলে এগুলি আমার টেম্পোরারি ইন্টারনেট ফাইলে যাচ্ছিল না। এরকমই একটি সময়ে নাসার কেউ একজন বুঝতে পেরেছিলো আমি কি করছি এবং আমাকে ডিসকানেকটেড করে দিয়েছিল। আমি এক্সেল স্প্রেডশিটের এক্সেস ও পেয়েছিলাম। এর মধ্যে একটির শিরোনাম ছিল 'নন টেরেস্ট্রিয়াল অফিসার্স' এটার মানে হয়তো এই না যে, সেখানে ছোট সবুজ রংয়ের মানুষ আকৃতির প্রাণীর কথা বলা হয়েছে। আমার মনে হয় এটার মানে এই যে, এটি পৃথিবী সম্পর্কিত নয়। আমি একটি লিস্ট পেয়েছিলাম, যা ছিল 'ফ্লাইট টু ফ্লাইট ট্রান্সফার্স' যাতে অনেকগুলি জাহাজের নাম পেয়েছিলাম। আমি এগুলি তদন্ত করে দেখেছিলাম, এগুলি কোনোটি 'ইউ এস নেভি' এর জাহাজ ছিলনা। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এদের কাছে একপ্রকার স্পেসশিপ আছে যা ভিনগ্রহী। এতে এমন সব ইউ এস এয়ার ফোর্স অফিসার ও কর্মীদের নাম আছে যাদের নাম পৃথিবীর অন্য কোন রেজিস্টরের পাওয়া যায়নি। এর সাথে এতে 'শিপ টু শিপ' ট্রান্সফারের তথ্য আছে কিন্তু আমি এই সকল জাহাজের নাম অন্য কোথাও খুঁজে পাইনি।"




ম্যাককিননের মতে, 1980 সাল থেকে 'সোলার ওয়ার্ডেন' নামে একটি স্পেস প্রোগ্রাম অপারেশন চলে আসছে এবং এর দানায় দানায় এতো রহস্য যা সাধারন মানুষ ভাবতে পারবে না। এই প্রোগ্রামটি আসলে গ্রহ গুলির মধ্যে এক প্রকার  বর্ডার বা সীমানা হিসাবে কাজ করে; যা আমাদের ক্ষতিকারক ভিনগ্রহীদের থেকে রক্ষা করে এবং এটি 'ইউএস নেভাল নেটওয়ার্ক' এবং স্পেস অপারেশন কমান্ড' এর নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। এর আরো গভীরে গিয়ে তিনি এই প্রোগ্রাম সম্পর্কিত আরো চমকপ্রদ বিভিন্ন তথ্য খুঁজে পান। তার তথ্য অনুযায়ী, এই 'সোলার ওয়ার্ডেন' এর অন্তর্গত আটটি বিশালাকৃতি চুরুট আকৃতির মাদারশীপ আছে যার একেকটির আকৃতি কয়েকটি ফুটবল মাঠের সম্মিলিত আকৃতির সমান।  এছাড়া 43 টি ছোট স্কাউট শিপ এবং অন্যান্য বিভিন্ন উড়োজাহাজ, তার সাথে অ্যাডভান্সড বিম জাতীয় অস্ত্রের সম্ভার এবং এই সকল কিছু তৈরি করা হয়েছে এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রযুক্তি ব্যবহার করে যার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে বিভিন্ন গোপন বেসে যার মধ্যে এরিয়া ৫১ একটি। 



এগুলি সত্যিই অবাক করা লাগলেও ম্যাককিনন কখনো তার কথাগুলি থেকে পিছু হটেনি। এই সোলার ওয়ার্ডেন প্রজেক্ট ছাড়াও তিনি ইউ এফ ও এবং ভিনগ্রহী সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য এমনকি 'দা ডিসক্লোজার প্রজেক্ট' নামক একটি ডকুমেন্ট থেকেও পর্দা সরান। 'ডিসক্লোজার প্রজেক্ট' সম্পর্কে তিনি বলেন, "এই বইটি 400 টি টেস্টিমোনিয়াল যুক্ত; যাতে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের থেকে নিউক্লিয়ার মিসাইল লঞ্চের দায়িত্বে থাকা সকলের নাম আছে এবং যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য প্রত্যক্ষদর্শীদের নাম আছে যারা এলিয়েন প্রযুক্তির পুনর্ব্যবহার অথবা ভিনগ্রহী জাহাজ ধ্বংস বা দখল করা সম্পর্কিত বিষযয়ে বক্তব্য রেখেছিল এবং এদের সকলেই ইউএফও টেকনোলজির কথা বলেছিল যা মধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণ মুক্ত অর্থাৎ অ্যান্টি গ্রাভিটি প্রযুক্তি সম্পন্ন।  এছাড়া 'ফ্রি-এনার্জি' যেগুলির উৎস ভিনগ্রহ এবং তারা এই যানগুলি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিল। 

দুর্ভাগ্যবশতভাবে, তিনি এগুলি নিয়ে খুব বেশি গভীরে যেতে পারেননি। যেহেতু এগুলি সম্পূর্ণ বেআইনি ছিল, ফলস্বরূপ 2002 সালে ম্যাককিননকে নর্থ লন্ডনের উড গ্রিনের ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 
তাকে ফেব্রুয়ারি 2001 থেকে মার্চ 2002 পর্যন্ত 13 মাস সময়কালিন ধরে 97 টি ইউনাইটেড স্টেটস মিলিটারি এবং নাসার কম্পিউটার হ্যাক করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তারা দাবি করেন, এই কারণে তাদের প্রসেসে প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল, তাকে অপারেটিং সিস্টেমের বিভিন্ন সংবেদনশীল ফাইলের পরিবর্তন এবং ডিলিট করা, তার সাথে কিছু সিস্টেমের পরিবর্তন, ডেটা, একাউন্ট ফাইল এবং পাসওয়ার্ড কপি করা মিলিটারি অপারেশনে নাক গলানো, সেনসিটিভ এবং গোপনীয় বিভিন্ন তথ্যকে ঝুঁকিতে ফেলা এবং হুমকি ভরা মেসেজ পাঠানোর জন্য আরোপিত করা হয়।




অফিশিয়ালদের মতে, এগুলি সবই পূর্বনির্ধারিত এবং পরিকল্পিত ছিল, যা ইউ এস সরকারকে বিপদে এবং ব্ল্যাকমেইল করার উদ্দেশ্যে। যেহেতু এই ঘটনাটি ঠিক 9/11 এর ঘটনাটির পর ঘটেছিলো, তাই ইউএস সরকার এটিকে যথেষ্ট গম্ভীরভাবে নিয়েছিল এবং তার সম্মুখ ট্রায়ালের ব্যবস্থা করেছিল, যার ফলে ম্যাককিনন এর শাস্তি প্রায় 70 বছর পর্যন্ত কারাগার হতে পারত। এরপর থেকে এর বিপক্ষে অসংখ্য আপিল এবং জুডিশিয়াল রিভিউ রাখা হয়েছে। যার অর্থ এই যে, তাকে এখনো আমেরিকার বুকে এই সকল শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে, আবার নাও হতে পারে। যদিও তাকে নিজের দেশে সমর্পণ করার জন্য প্রচেষ্টা চলছে।

আমরা কেবল এই ভেবে অবাক হচ্ছি যে, এই সব ধরনের আইন ভেঙে সে আসলে কি খুঁজে পেয়েছিল? সত্যি কি সে টপ সিক্রেট ইউএফও এবং এলিয়েন বা ভিনগ্রহের সংক্রান্ত সরকারি ফাইল গুলি দেখতে পেয়েছিল? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সে কি সত্যিই এলিয়েন টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি এক প্রকার স্পেস ফোর্স এর প্রমাণ উন্মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে? পৃথিবীতে প্রচুর এরকম মানুষ পাওয়া যায় যাদের দাবি এর সাথে মিল খায়; তাহলে আমরা এ বিষয়ে কি ভেবে নিতে পারি? যদিও সে এখনও অবধি তার যুক্তির স্বপক্ষে কোন শক্তিশালি প্রমাণ দিতে পারেনি এবং তার বিরোধীপক্ষের মতে হ্যাকিং করার সময় সে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গাজার সেবন করে থাকতো তাহলে কি এই সব একটি গল্প মাত্র? আমরা এর উত্তরের প্রত্যাশায় রইলাম.....