Friday, 27 July 2018

ডিবি কুপার: ৪৫ বছরেও যে চোরের সন্ধান পাওয়া যায়নি:


মানুষ নানা কারনে অপরাধ করে থাকে। এটি কারো জন্য পেশা তো কারো জন্য নেশা।
ফ্যান্টাসির প্রতি আমাদের সবারই এক ধরনের টান কাজ করে। বলিউডের ‘ধুম-২’ সিনেমাটিতে শুরুতে দেখা যায় ৪নায়ক চুরি করার জন্য হেলিকপ্টার থেকে প্যারাসুট দিয়ে লাফিয়ে পড়ছেন ট্রেনের উপর। এই দৃশ্যটি ধারণ করার জন্য অবশ্যই সাহায্য নেয়া হয়েছিল নানা ধরনের ডিজিটাল প্রযুক্তির ও এ ব্যাপারে যারা দক্ষ তাদের কিন্তু এ সিনেমা মুক্তির আরও পঁয়ত্রিশ বছর আগে কারো কোন সাহায্য ছাড়াই অনেকটা এভাবেই দুই লাখ ডলার নিয়ে পালিয়ে যায় ড্যান কুপার বা ডিবি কুপার। অনেক অপরাধীর অপরাধের কৌশলেও থাকে ফ্যান্টাসি যে কারণে অপরাধ করেও অনেকের মুগ্ধতা ও আকর্ষণ কেড়ে নিতে সক্ষম হয়। তার এই রোমাঞ্চকর অপরাধ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে পরবর্তী চার বছরে অন্তত পনের জন এই দুঃসাহসী নিষিদ্ধ পন্থা অবলম্বন করেন। এই পনের জন ধরা পড়লেও, যার থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা এই পথ বেছে নেন তার কোন হদিস কখনোই পাওয়া যায়নি।

ডিবি কুপার বা ড্যান কুপার, নাম শুনলেই এখনও চোখ কপালে তোলেন মার্কিন গোয়েন্দারা৷ কারণ, এই চোরের পাল্লায় পড়ে ঘাম ছুটেছে বহু আমেরিকান রহস্যভেদীর৷ বিশ্বের বড় বড় রহস্য সমাধানে সফল বিখ্যাত গোয়েন্দারাও ফেল করেছে ডিবি কুপার সংক্রান্ত তদন্তে৷ সম্পূর্ণ ব্যর্থ বিশ্ববিখ্যাত FBI গোয়েন্দারাও৷ ব্যর্থ বিশ্বজয়ী মার্কিন সেনাও৷কে এই ডি বি কুপার বা ড্যান কুপার?

১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর আমেরিকার পোর্টল্যান্ড এবং সিয়াটলের মধ্য আকাশে এ ঘটনা ঘটেছিল।
একটি বোয়িং ৭২৭ বিমান হাইজ্যাক করার পর মাঝ আকাশে দুই লাখ ডলার সমেত প্যারাশুট নিয়ে প্লেন থেকে ঝাঁপ দেন কুপার। তার পর কী হল, কোথায় গেলেন তিনি, সে রহস্য আজও অজানা।
উড়োজাহাজ ছিনতাই ও ডলার ছিনতাইয়ের অভিযোগে তাকে খুঁজেছে মার্কিন গোয়েন্দারা। কিন্তু গত ৪৫ বছর ধরে এই চোর ও ছিনতাইকারীকে খুঁজে বের করতে পারে নি মার্কিন পুলিশ ও গোয়েন্দারা৷
মার্কিন গোয়েন্দাদের নাকের ডগা দিয়ে যেন উধাও হয়ে যায় ড্যান কুপার৷ গত বছর পর্যন্ত তারা খুঁজেছে সেই চোরকে৷ শেষ পর্যন্ত ২০১৬ র জুলাইয়ে ৪৫ বছর পরে হাল ছেড়ে দেয় FBI। বুঝতে পারে আর চেষ্টা করে লাভ নেই৷ পৃথিবী থেকে যেন উরে গেছে ড্যান কুপার৷ শেষ পর্যন্ত হার স্বীকার করে নেয় মার্কিন গোয়েন্দা ও মার্কিন সেনা৷ হাঁ, ড্যান কুপার নামেই বিমানে ওঠে সেই বিশ্ববিখ্যাত চোর৷ প্লেন হাইজ্যাক করে, তারপর ২ লাখ ডলার নিয়ে প্যারাশুট

পরে প্লেন থেকে ঝাঁপ মারে৷ ব্যাস, আর কেউই তার সন্ধান পায় নি কোনদিন৷ কতরকম ভাবে ড্যান কুপারের খোঁজ করেছে মার্কিন পুলিশ, গোয়েন্দা এমনকি মার্কিন সেনাও৷ যেভাবে বিমান থেকে প্যারাশুট পড়ে ঝাঁপ দেয় কুপার ঠিক সেই ভাবেই সেই বিমান থেকে সেই স্থানেই কুপারের ওজনের জিনিসপত্র প্যারাশুটে ফেলে অনুসন্ধান করে মার্কিন গোয়েন্দা ও সেনা৷ সেনাবাহিনী নামিয়ে প্রতিটি এলাকায় তল্লাশী চালায় মার্কিন গোয়েন্দারা৷ কিন্তু ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় নি৷ ৪৫ বছর ধরে বয়স বাড়লে কুপারকে দেখতে কেমন হবে সেই ছবি ছাপিয়েও তদন্ত করেছে এফবিআই৷ কিন্তু সব ব্যর্থ হয়েছে৷ কুপারের কোন চিহ্নই পাওয়া যায় নি৷ কিন্তু পরীক্ষা মত এলাকায় চিরুনি তল্লাশী করেও খোঁজ পাওয়া যায় নি কুপারের৷ যেন কর্পূরের  মতই উরে যায়।

Saturday, 21 July 2018

কিং আর্থার - কিংবদন্তি রাজা


কিং আর্থার’ মূলত ইতিহাস ও রোমান্সের অপূর্ব সমন্বয়ে সৃষ্ট বিশ্বসাহিত্যে আলোড়িত বীরত্বপূর্ণ লোককাহিনী। প্রাচীনকাল থেকেই ব্রিটেনে কিং আর্থারের কাহিনী বেশ জনপ্রিয় (অন্ধকার যুগের এই রাজা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় না। অন্ধকার যুগ নিয়ে পরে পোস্ট দেব)

তাই এখন যখন তালিকা করা হয় প্রাচীন কোনো কোনো রহস্য এখনো অটুট হয়ে রয়েছে তখন স্বাভাবিকভাগেই কিং আর্থার রহস্যটি উঠে আসে। কিং আর্থার ছিল উথার পেনড্রাগনের ছেলে, মধ্যযুগের ঐতিহাসিকদের মতে, পঞ্চম শতক কিংবা ষষ্ঠ শতকের প্রথম দিকে স্যাক্সনদের হামলার মুখে ব্রিটেনের প্রতিরক্ষায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি রাজা। পঞ্চম শতাব্দীর শেষার্ধ হতে ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড, ডেনমার্কসহ পাশ্ববর্তী দেশসমূহ থেকে আগত দুর্ধর্ষ স্যাক্সনদের লুণ্ঠন, নরহত্যা ও অগ্নিসংযোগের মতো নারকীয় যজ্ঞে ব্রিটেন যখন প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার উপক্রম তখন এই প্রবাদপুরুষের আগমন ঘটে। তিনি অসীম বিরত্বের সঙ্গে এই তাণ্ডব প্রতিহত করেন। এমনকি শত্রুর রাজ্য দখল করে নিজ রাজ্যের সম্প্রসারণ ঘটান। যদিও আর্থারের সম্বন্ধে মতানৈক্য আছে, ধারনা করা হয়, কিং আর্থার একটি আসল মানুষের জীবনীতে গড়ে ওঠা কাল্পনিক চরিএ, যিনি সত্যিই ছিলেন। কিং আর্থার, তার জাদুকর, Merlin ও গোলটেবিলের নাইট- এই নিয়েই যুগে যুগে অসংখ্য মিথ গড়ে উঠেছে। যদিও এই সময়ে এসেও কিং আর্থার রহস্যের কূল-কিনারা করতে পারেনি কেউ। ৬ষ্ট শতাব্দীতে তিনি ইংল্যান্ড, আইয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়ে ও গল রাজ্য জয় করেন।

এছাড়া কথিত আছে আর্থার যখন বেশ ছোট, তখনই তার বাবাকে হত্যা করে, বাবার ছোট ভাই ভরটিজেন রাজ্যের ক্ষমতা দখল করে। নিজের রাজপুত্র পরিচয় সম্পর্কে অজ্ঞাত আর্থার দিনাতিপাত করতে থাকেন। দৈবক্রমে একদিন পাথরের মাঝখানে তিনি খুঁজে পান একটি তরবারি, এটিই সেই রহস্যময় তরবারি এক্সকেলিবার। একে একে আর্থার জানতে পারেন তার অতীতের কথা, তার রাজকীয় উত্তরাধিকারের কথা। তার জীবনে আসে গল্পের নায়িকা দুরন্ত গুইনেভেরে। এক দৃঢ় আত্মপ্রত্যয় নিয়ে আর্থার এগিয়ে যান পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নিতে।

অনেকেই ধারণা করেন, কিং আর্থার একটি আসল মানুষের জীবনীতে গড়ে ওঠা কাল্পনিক চরিত্র।
ইতিহাসবিদদের মতে, ২য় শতাব্দীর রোমান কমান্ডার লুসিয়াস আর্টেরিস কাসটাসই হলো কিং আর্থার। তবে তাকে ঘিরে মিথ থেমে থাকেনি। কল্পকাহিনী নিয়ে যায় প্রাচীন নগরী রোমে। এই নগরীর হ্যাডরিয়ান্স ওয়াল সীমান্তবর্তী দক্ষিণাঞ্চল 'ব্রিটানিয়া' শাসন করতেন রোমান পরিবারের যোগ্য উত্তরাধিকারী 'কিং আর্থার'। তবে রাজ্য পরিচালনা শুরুর কিছু দিনের মধ্যেই বিষণ্নতায় আক্রান্ত হন তিনি। হঠাৎ একদিন অজানা জাদুবলে বন্দী হয়ে চেতনা হারিয়ে ফেলেন তিনি। রাজ্য অধিপতির এমন অবস্থার কথা জানতে পেরে হ্যাডরিয়ান্স ওয়ালের আরেকজন ক্ষমতার উন্মাদ শাসক অধিপতি এই ব্রিটানিয়া রাজ্য দখলে আগ্রহী হয়। তবে সম্মুখ সমরে রাজ্য দখলের ক্ষমতা ফোমোরিয়ান্সের ছিল না বলে কালো জাদুর প্রয়োগ ঘটিয়ে রাজ্য দখলের নীলনকশা করতে থাকে। তারই পরিকল্পনা মতে প্রথমে ব্রিটানিয়া রাজ্যে কালো জাদুর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে ভেঙে ফেলা হয় 'হলি গ্রেইল'। এভাবেই শুরু হয় জাদুর খেলা। তার বিরুদ্ধে লড়ে যান কিং আর্থার। একদিকে জাদু অন্যদিকে সাহসী যোদ্ধা কিং আর্থারের বীরত্বের গল্প এখনো অটুট। কিন্তু কিং আর্থার রহস্যের মীমাংসা হয়নি আজও।

বে বর্তমানে কর্নওয়ালের টিন্টাজেলে একটি রাজপ্রাসাদেরর সন্ধান পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখানেই জন্ম নিয়েছিলেন কিং (রাজা) আর্থার। খনন কাজ এখনো চালানো হচ্ছে কর্নওয়ালের টিন্টাজেলে। খুঁজে পাওয়া এই রাজপ্রাসাদেই যে রাজা আর্থার জন্ম নিয়েছেন, সে ব্যাপারেও এখনো নিশ্চিত হননি ঐতিহাসিকরা। তবে তারা নিশ্চিত হয়েছেন যে, রাজপ্রাসাদটি ষষ্ঠ শতকের। এবং সেই সময় লিজেন্ডারি কিং ওই এলাকাতেই রাজত্ব করতেন।
প্রাসাদের দেয়ালের প্রস্থ প্রায় এক মিটার। সম্ভবত ব্রিটেনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রাচীন রাজ্য ডুমনোনিয়ার শাসকরাই বসবাস করতেন সেখানে।


ইংলিশ হেরিটেজ পরিচালিত পাঁচ বছরের গবেষণা প্রকল্পের অংশ হিসেবে ত্রয়োদশ শতকের টিন্টাজেল দুর্গে এই খননকাজ চালানো হচ্ছে। উদ্দেশ্য, আজানা আরো ঐতিহাসিক তথ্য উদ্ঘাটন করা, বিশেষ করে পঞ্চম থেকে সপ্তম শতকের কর্নওয়াল রাজাদের দৈনন্দির জীবনের কথা।


কর্নওয়াল প্রত্নতাত্ত্বিক ইউনিট (সিএইউ) কাটিং এজ টেকনোলজি ব্যবহার করে প্রাসাদের এই দেয়াল খুঁজে বের করেন মাটি খুঁড়ে।
ইংলিশ হেরিটেজের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের কিউরেটর উইন স্কুট বলছেন, এই তিন সপ্তাহের খনন কাজ পাঁচ বছরের গবেষণা প্রকল্পের প্রথম পদক্ষেপ। টিন্টাজেল ও কর্নওয়ালের অতীত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বহু প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়।
রাজা তৃতীয় রিচার্ড, আর্ল অব কর্নওয়াল, তৃতীয় হেনরির ভাই টিন্টাজেল দুর্গটি নির্মাণ করেন, ১২৩০ থেকে ১২৪০ সালের মধ্যে, মধ্যযুগের একটি বসতির উপর।


খনন কাজটি পরিচালনা করছেন জ্যাকি নোয়কস্কি। সিএইউ-এর প্রধান প্রত্নতাত্ত্বিক নোয়াকস্কি বর্তমানে কাজ করছেন হিস্টরিক ইংল্যান্ড ও টাইগারজিও লিমিটেডের ভূ-তাত্ত্বিকদের সঙ্গে।
কিং আর্থার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যায় ষষ্ঠ শতকের সন্ন্যাসী গিলডাসের লেখা থেকে। আর্থার জীবন সম্পর্কে অনেক বেশি তথ্য জানা যায় মনমাউথের জিওফ্রের লেখা থেকে।

Saturday, 14 July 2018

মারিয়ানা ওয়েব -- ইন্টারনেটের সবচেয়ে গভীরতম ও রহস্যময় স্থান ---

মারিয়ানা ওয়েব যাকে বলা হয় ইন্টারনেটের সবচেয়ে গভীরতম স্থান যার নামটি এসেছে পৃথিবীর গভীরতম স্থান মারিয়ানা ট্রেঞ্চ থেকে। 'গভীরতম স্থান' শব্দটি থেকেই বোঝা যায় যে এখানে পৌঁছানো সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় , যেমন সমুদ্রের গভীরে যেতে অত্যাধুনিক যন্ত্র ও সাথে জ্ঞান , ট্রেনিং , অভিজ্ঞতা প্রয়োজন, তেমনি এর ক্ষেত্রেও সেই এক এ কথা প্রযোজ্য। ইন্টারনেট এর বিভিন্ন ভাগ সম্পর্কে আমার আগের ব্লগ গুলিতে বলেছি, সেগুলি পরে বা জেনে থাকলে এই ব্লগটি বুঝতে আরো সুবিধা হবে. লিংক দিলাম-
  1. ওয়েবের অন্ধকার জগত-- ডার্ক ওয়েব ও Blue- হোয়েল
  2. ডীপ ওয়েব!!!ইন্টারনেটের এক অজানা অধ্যায়
এবার প্রশ্ন হলো এখানে যাওয়া এতো কঠিন হলে এই তথ্য গুলি লিখছি কি করে?
উত্তর হলো মারিয়ানা ওয়েব সম্পর্কে তথ্য প্রমাণিত নয় এগুলিও এখনো যুক্তি তর্কের বিষয়, কন্সপিরাসি থিওরি, যেমন এলিয়েন , বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল , সিক্রেট সোসাইটি ইত্যাদি ।  আমার অন্নান্য ব্লগ গুলির মতো। এই মারিয়ানা ওয়েব সম্পর্কে তথ্য গুলি সামনে এসেছে বিভিন্ন বড়ো হ্যাকার , ওয়েব ডেভেলপার, সরকারি আমলা , মিলিটারি প্রযুক্তিবিদদের ব্লগ থেকে।

এখানে আপনি আমি প্রবেশ তো করতেই পারবো না বরং আমাদের মারিয়ানা ওয়েব এর নাম এ ঠকিয়ে কেউ আমাদের ক্ষতি করে দিতে পারে।  তাই এসবএ যাওয়ার পরামর্শ আমি কখনো দেব না। 
এই মারিয়ানা ওয়েব প্রথম প্রকাশ্যে এলো যখন একজন ফ্রীলান্স ওয়েব ডেভেলপার তার  রেডিটএর  ব্লগে  লিখলো, তাকে ডিপ ওয়েব এ ৪৫০ কে ডবলু নামে এক ইউসার প্রস্তাব দেয়, একটি প্রাইভেট সার্ভারে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করে দিতে, যার জন্য তাকে প্রায় ৫০০০০ মার্কিন ডলার সপ্তাহে দেয়া হবে। 

 প্রথমে সে ভাবছিলো এতো  অবিস্বাশ্য অর্থ যখন দিচ্ছে নিশ্চই কোনো  বেআইনি বা পর্ন সাইট হবে, তবু সেই সময় টাকার দরকার বলে তিনি রাজি হলেন। যেহেতু তিনি সাইটটি তৈরী করেছিলেন সেহেতু তার কাছে সাইটটি তে  পরবর্তীকালে ঢোকা অসম্ভব ছিল না , তাই বেশ কিছুদিন পর সাইট টি  চেক করতে তিনি আবার যান যা সাধারণত সব ডেভেলপাররাই করে থাকে, এরপর সম্মুখীন হলেন  অবিশাস্য সব ঘটনার সাইটটিতে যে ভিডিওগুলি দেখলেন তা ঠিক বুঝলেন না কিন্তু ভয় পেলেন কারণ এগুলি সব যেন অশরীরী বা এলিয়েন জাতীয় এতে অনেক লুকানো কোড ও ছিল যা পরবর্তী কালে ডিকোড করে অর্থ জানা যায় যে মানুষদের কেউ সাবধান করছে, কেউ আমাদের সবাইকে দেখছে, আমরা মূর্খ, কিছুই জানিনা , অশরীরী অস্তিত্ব আছে, মানুষের তুলনায় শক্তিমান তারা আছে। 
ভিডিওটির প্রকাশ পেলে তা ছড়িয়ে পরে তার একটির লিংক দিলাম ---


মারিয়ানা ওয়েবের কিছু তথ্য  --
-- বিভিন্ন দেশের সরকারের গোপনতম তথ্য এখানে থাকে তাই সরকার এ নিয়ে বেশি ঘাটতে চায়না কারণ এতে তার এ তথ্যগুলি প্রকাশ পেতে পারে,
-- হারানো শহর আটলান্টিস, ভিনগ্রহের প্রাণী, পৃথিবীর অমিংশাসিত রহস্য সম্পর্কে তথ্য।
--বিজ্ঞানিক বিভিন্ন গবেষণার তথ্য ,
--বিভিন্ন সিক্রেট সোসাইটি যেমন - ইলুমিনাতি, নাইট টেম্পলারদের পার্সোনাল সার্ভার  যোগাযোগ ও বিভিন্ন তথ্য,

-- অশরীরী ও ধারণার বাইরের কিছু বিষয় যা এখনো বোঝা যায় নি যেমন প্রকাশিত ভিডিওটি, বিভিন্ন অদ্ভুত ধাধাঁ , কোড , ছবি ইত্যাদি।
-- ৭ - ৮ টি লেয়ারের এনক্রিপশন থাকে এবং এগুলি প্রাইভেট সার্ভার ও ক্লোসড শেল সার্ভার দ্বারা পরিচালিত হয় যাতে বাইরের কেউ এখানে ঢুকতে না পারে।



কিছু প্রমান --

--জার্মানির ফ্রেইফানক নেটওয়ার্ক যা ডিসেন্ট্রালাইসড ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক ও এর মাধ্যমে যেখানে আমাদের ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারও নেট পরিষেবা দিতে পারবেনা, সেখানেও এই টেকনোলজি ব্যবহার করে নেট পাওয়া যাবে!!
--LION777 puzzle - যা সল্ভ করে বিভিন্ন সিক্রেট সোসাইটির তথ্য পাওয়া যায় ,


-- 7777777.ga,  13377331.gq, 3301337 এইসব স্থানে ও বিভিন্ন কবিতা থেকে শুরু করে শিল্পকর্ম, সঙ্গীত, অনুমাননিভর্র কথাসাহিত্য, অষ্ঠাদশ শতকের অজ্ঞাত এবং রহস্যময় সাহিত্য, মায়ান ক্যালেণ্ডার, দর্শন, গণিত, ক্রিপ্টোগ্রাফি, সংখ্যাতত্ব, প্রযুক্তিবিদ্যা, তথ্য নিরাপত্তা, স্টেগেনোগ্রাফি এবং প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। এই ধাধার সূত্রপাত ইন্টারনেটে হলেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হয় টেলিফোনে, সঙ্গীতে, অপ্রকাশিত এবং দুস্প্রাপ্য বইতে, ডিজিটাল ছবি এমনকি বিভিন্ন জায়গায় ছাপানো কাগজের মাধ্যমেও কিন্তু এর সবটাই লুকানো হয়েছে এনক্রিপশন এবং এনকোডিং করে। এই ধাঁধাঁর সিরিজগুলো শুধুমাত্র কম্পিউটারে বসে সমাধান করা যাবে না, এর জন্য প্রতিযোগীকে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে হবে। ধাঁধাঁর সূত্রগুলো কিউআর কোড হিসেবে লাগানো থাকে টেলিফোন/ইলেকট্রিক পোল অথবা ডাকবাক্সে।



--২০০৩ সাল থেকে 973-eht-namuh-973 ওয়েবসাইটটি ইন্টারনেট দুনিয়ার মানুষের জন্য নানান দূর্বোদ্ধ শব্দ,ছবি,সংখ্যার ধাঁধা দিয়ে যাচ্ছে। সাইটির হোমপেজে একটি ত্রিভুজ আছে যাতে লেখা ABRACADABRA.সাইটির নাম উল্টা করলে হয় the human কিন্তু 973 এর অর্থ কি তা জানা যায় নি।
ডোমেইনটি ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিট ডেনিসনের নামে রেজিস্ট্রার্ড করা।সাইটটিতে নানান ধর্মীও গ্রন্থের উক্তি ও সংখ্যাতত্বের উপস্থিতি অধিক লক্ষণীয়।অনেকেই ধারণা করে এটি কোন পাগলা গণিতবিদের সাইট আবার অনেকেই বলে এটি কোন ধর্মীয় উদ্দশ্যে পরিচালিত সাইট।


--এছাড়া কিছু সাইট এ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও টাইম মেশিন এর তৈরী সম্পর্কেও তথ্য পাওয়া যাচ্ছিলো কিন্তু সেগুলি দ্রুত বন্ধ করে দেয়া হয়। 

Saturday, 7 July 2018

ইতিহাসের ভয়ঙ্কর যোদ্ধারা – 'নিনজা'


কালো পোশাকে ঢাকা মুখ, কেবল চোখ দুটি দেখা যায়, হাতে কাতানা বা সুরিকেন, মুহূর্তে ছায়া সরে যাওয়া, নিঃশব্দে দেওয়াল বেয়ে ওঠা, বিড়ালের মত ছাঁদের উপর দিয়ে হেটে যাওয়া, নিঃশব্দে মুহূর্তে দেহরক্ষিকে নিহত করে ঘরে ঢুকে কাতানাটা বের করে মালিকের দিকে এগিয়ে যাওয়া... মুহূর্তে গায়েব হওয়া ও বিভিন্ন জাদুকরি কৌশল… নিনজা বইগুলিতে প্রায়ই এরম গা ছম ছম দৃশ্য দেখা যায়। নিনজা যোদ্ধারা এইভাবে জনপ্রিয় ও আইকন হয়ে উঠেছে।সাধারণ ধারণাটা হয়ত এরকম, নিনজারা হিরো, সুপারহিউম্যান ক্ষমতার অধিকারী, লোকচক্ষুর আড়ালে-আবডালে নানারকম মিশন সফল করে চলেছে, কখনও খারাপ কাজে, কখনও ভালো কাজে, কিন্তু সিনেমা থেকে পাওয়া এই ধারনা গুলি কতটা বাস্তব তা দেখা যাক ...

আসলে নিনজাদের উদ্ভব হয় ঠিক একটি নবজাগরনের উদ্দেশে, সমাজের নিচু শ্রেণির সদস্যদের থেকে, সে কারনে মানুষের আগ্রহ ছিল অভিজাত সামুরাইদের প্রতি, এবং নিনজারা উপেক্ষিত থেকে গেছিলো এবং তাদের নিয়ে ঐতিহাসিক বিবরন কম বরং গল্পকথা বেশি প্রচলিত।

নিনজারা ছিল কতকটা আজকের সিআইএ কিংবা অন্য স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চগুলোর মত। একবিংশ শতাব্দীর স্পাই, শেডি ডিটেকটিভ, স্পেশাল এজেন্টদের পূর্বপুরুষ।
মেজি রেস্টোরেশনের আগে টোকিও র অলি গলিতে রাজত্ব করা নিনজা ক্ল্যান ওনিওয়াবান গ্রুপ, যারা সরাসরি অষ্টম শোগান তকুগাওয়া ইউসিমুনের বানানো ইতিহাসের প্রথম স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সিক্রেট সার্ভিস ও ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি, এদের মূল দায়িত্ব ছিল ফিউডাল লর্ড ও সরকারী আধিকারিকদের উপর কড়া নজর রাখা, মেজি সময়কালে ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে নিনজাদের দৌরাত্ম্য, একসময় নিনজা হয়ে উঠে আঞ্চলিক লিজেন্ড আর প্রবাদের সংমিশ্রন সৃষ্ট রহস্যময় লোকগাঁথা।

নিনজা যোদ্ধাদের উদ্ভবের পিছনে কয়েকজন চিনা সামরিক কর্মকর্তা ও সন্নাসিদের প্রভাব ছিল।
আমরা নিনজা বললেও জাপানে একে শিনোবি বলে, নিনজা শব্দের উৎস দুটি চায়না শব্দ – 'নিন’ ও ‘শা’ , 'নিন’ অর্থ গোপন বা শান্ত বা যারা সহ্য করতে পারে, 'শা’ বলতে বোঝায় ‘ব্যাক্তি’।
অর্থাৎ যে ব্যাক্তি গোপন সিল্পে দক্ষ বা সহ্য করতে পারে।শিনোবি শব্দের অর্থ অনেকটা ‘নিস্তব্ধে ছিনিয়ে নেওয়া’ যা নিনজাদের কাজকর্মের অনেকটাই ধারণা দিয়ে দেয়।

জাপানে নিনজাদের উৎপত্তি হয় ফিউডাল এইজে, তবে তকুগাওয়া এরায় (১৬০০-১৮৬৮) এদের দূর্দান্ত প্রতাপ দেখায় যায়।

আসলে সমস্ত জাপানে সামুরাইদের প্রতিপক্ষ হিসাবে এদের উদ্ভব হয়েছিল। ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে তাইকা পুনর্গঠনের পর এদের উতপত্তি, কারন তাইকা পুনর্গঠনে ভুমির নতুন করে বণ্টন ও নতুন কর চালু হয়। উদ্দেশ্য ছিল এক বৃহৎ ও কেন্দ্রিয় একনায়কতন্ত্র সাশন সৃষ্টি করা। এর ফলে বহু ক্ষুদ্র চাষি জমি বিক্রি করে বর্গা চাষিতে রুপান্তর হয়, এবং অসংখ্য ভূস্বামী বা জমিদার উদ্ভব হয়। এভাবে মধ্য যুগের ইউরোপের মত সামন্ত প্রথার উদ্ভব হয়।

ঐতিহাসিক ষ্টিভেন হায়েস এর মতানুসারে, জাপানের সামুরাই যোদ্ধা ভিত্তিক সামাজিক রাজনৈতিক ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াসরূপ নিনজা যোদ্ধাদের উদ্ভব এবং যারা ছিল যোদ্ধা, অভিবাসী ও কৃষক। অত্যাধিক করারোপ করা, মজুরদের ক্রিতদাসের মত অত্যাচার, শাস্তি দেওয়া যখন মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল, সামুরাইরা যখন নিজেদের আদর্শ ভুলতে বসেছিল, সামন্ত প্রভূর লোভী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিনজা-কৌশলে আক্রমন করা হত। কেননা, নিনজাদের শিকড় প্রোথিত ছিল গ্রামীন দরিদ্র কৃষি সম্প্রদায়ে। ফলে নিনজারা লক্ষ অর্জনে মরিয়া ছিল। তবে সম্ভব হলে এরা বিরোধ এড়িয়ে চলত। যদি লক্ষ অর্জনে রক্তপাত প্রয়োজন না হয় তো রক্ষপাত করত না।
৯০৭ খ্রিস্টাব্দে পতন হয় তাঙ বংশের । এরপর চিন ৫০ বছরের জন্য চিন জুড়ে ব্যাপক অরাজকতা চলতে থাকে। সে সময় বেশ কয়েকজন তাঙ সেনাপতি সমুদ্রপথে জাপানে চলে আসে এবং এরা জাপানের ইগা ও ওকা পাহাড়ে বসতি স্থাপন করে। সঙ্গে এনেছিল নতুন রণকৌশল ও যুদ্ধদর্শন। ষষ্ট শতকে সুন সু নামে একজন চৈনিক সমরবিদ ‘আর্ট অফ ওয়ার’ নামক একটি গ্রন্থ লেখেন। এই বইটি নিনজা সমরকৌশলকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল।
নবম ও দশম শতকের দিকে চিনা সন্ন্যাসীরাও জাপানে আসতে থাকে । তাদের সঙ্গে ছিল ভেষজ ও যুদ্ধ দর্শন। জাপানের সাধুরা সেসব শেখে। এরাই প্রথম নিনজা গোত্র। এদের যুদ্ধ কৌশলকে বলা হত নিনজুৎসু। এর অন্তর্গত হল অপ্রথাগত যুদ্ধের কৌশল এবং গেরিলা যুদ্ধ। এই নিনজুৎসু থেকেই নিনজাদের যুদ্ধবিদ্যার উদ্ভব হয়েছিল।
নিনজাদের বেশভূষা আর চালচলন রহস্যময়, সিনেমায় নিনজাদের কালো পোশাক দেখালেও রাত্রির অভিযানের জন্য নিনজারা নেভি রঙের পোশাক পরত। আসলে নিনজাদের পোশাক নির্ভর করত অপারেশনের ধরনের ওপর। ছিল তারা বিশেষ মার্শাল আর্ট জানত, যা শারীরিকভাবে প্রতিপক্ষকে কুপোকাত করতে খুব কার্যকর।

নিনজাদের দক্ষতা নিখুঁত ও নানা ধরনের হত। মার্শাল আর্ট বাদেও নিনজাদের বেঁচে থাকার কৌশল রপ্ত করতে হত। এছাড়া নিনজাদের দর্শন, আবহাওয়াবিদ্যা, মনোবিজ্ঞান, ভূগোল, অভিনয়, গুপ্তচরবিদ্যা এবং সমরবিদ্যাও রপ্ত করতে হত। নিনজারা ধারাল ও তীক্ষ্ন কিছু ধাতব অস্ত্র বয়ে বেড়াত, যেগুলো ব্যবহারে বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন।পরিস্থিতি বুঝে তারা হালকা ও উপযুক্ত অস্ত্র ব্যবহার করত। যেমন উপরে ওঠার যন্ত্র। এছাড়া ব্লেড, চেইন, দড়ি, বিষ ও পাউডার ইত্যাদি সঙ্গে রাখত।নীরবে-নিভৃতে অনেকটা ছায়ার মতো বিচরণ করত তারা। সুযোগ বুঝে অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ত শত্রুর ওপর। ‘শুরিকেন’ বলে তারকা আকৃতির একটা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করত নিনজারা। এটি ছুড়ে মারা হতো। আরও ছিল ‘ফুকিয়া’ বলে পরিচিত ব্লোপাইপ। ফুঁ দিয়ে ব্যবহার করা হতো এই অস্ত্র। কোনো সমস্যা ছাড়াই নীরবে মেরে ফেলতো মানুষকে। এ ছাড়া আরও কিছু নিজস্ব অস্ত্র ছিল তাদের। এসব অস্ত্র ব্যবহারে বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হতো।

তলোয়ারবাজ হিসেবেও নিনজাদের খ্যাতি রয়েছে। এই পারদর্শীতা আর পরিচয়- সবটুকুই থাকতো গোপন। মুখে মুখে নিজেদের শিক্ষা পরের প্রজন্মের কাছে দিয়ে যেত নিনজারা।
নিনজাদের বেশিরভাগ অস্ত্রের অনুপ্রেরণা ছিল নিত্য ব্যবহার করা সামগ্রী, চাষের যন্ত্রপাতি(যেমন কুড়াল, দাঁ, লাঙল, লাঠি) থেকে যার কারন তল্লাসি নেওার সময় যাতে তারা ধরা না পরে ও সাধারন মানুষের মধ্যেই মিশে থাকতে পারে।

জাপানে ইডো যুগে (১৬০৩-১৮৬৮) জাপানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসে এবং সামন্তবাদ অবক্ষয়ের পর জাপানে আধুনিকতা সূচিত হতে থাকে। ফলে নিনজা অধ্যায়েরও সমাপ্তি ঘটে।তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানার মতো তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে খুব সামান্য। এ কারণে নিনজাদের নিয়ে কল্পকাহিনি ডালপালা বেশি ছড়িয়েছে। যদিও আজও কমিক বইয়ে কি চলচ্চিত্রে নিনজারা বহাল তবিয়তেই টিকে রয়েছে।
নিনজাদের জীবনধারা ছিল মূলত সামুরাইদের ঠিক বিপরীত, সামুরাইরা যেমন সুস্পষ্ট কোড বুশিডো মেনে সম্মানের সাথে জীবনযাপন করত আর যুদ্ধক্ষেত্রে সামনের সারিতে ঝাঁপিয়ে পড়ত, নিনজাদের নির্দিষ্ট কোন সিস্টেম ছিল না, উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যেকোন ধরণের অসদুপায়-নিকৃষ্ট কাজ করতে তাদের বিবেকে বাধত না, বেসিকেলি তাদের বিবেক বলতেই কিছু ছিল না। এ কারণে মূলতঃ এসাসিনেশন, স্যাবোটাজ, স্পাইয়িং এদের মূল কাজ ছিল।

তৎকালীন শাসকদের জন্য কম কষ্টে, বিনা অযুহাতে প্রতিপক্ষ কিংবা শত্রুকে নীরবে ধ্বংস করার এমন মাধ্যম খুব আকর্ষণীয় ছিল, তাই নিনজারা হয়ে উঠেছিল অত্যন্ত জনপ্রিয় আর প্রভাবশালী।
শুরুতে বিচ্ছিন্নভাবে শুরু করলেও ১৪ শতকের দিকে নিনজারা ধীরে ধীরে সঙ্গবদ্ধ হতে শুরু করে, ফলে ধীরে ধীরে সূচনা হয় বিখ্যাত নিনজা ক্ল্যান ইগা আর কোগা ক্ল্যানের, অন্য নিনজাদের সাথে এদের অনেক পার্থক্য ছিল, এরা ছিল ডেডলি, শক্তিশালী প্রফেশনাল নিনজা, ১৪৮০ থেকে ১৫৮০ সালের দিকে ফিউডাল লর্ডদের মাঝে বিভিন্ন কাজে এদের চাহিদা ছিল অত্যন্ত বেশি, মূলতঃ গুপ্তহত্যা আর এসপিওনাজের জন্য। কিন্তু এমন গুপ্তহত্যার চেষ্টা তাদের কাল হয়ে দাঁড়ায়, বিখ্যাত সামুরাই লর্ড নবুনাগাকে হত্যার চেষ্টা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে নবুনাগা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেন।

নিনজাদের রহস্যময় সুপারহিউম্যান টেকনিক আর স্কিল সম্পর্কে প্রচলিত আছে অনেক গুজব আর উপকথা, বলা হয় তারা অদৃশ্য হতে পারত, নিজের রেপ্লিকা তৈরী করতে পারত, বিভিন্ন প্রাণি কিংবা অন্য মানুষের বেশ নিতে পারত, নিয়ন্ত্রণ করতে পারত আগুন, পানি, বাতাস। তবে এসবকিছুর কোন সুনির্ধারিত দলিল নেই। সে যাইহোক, নিনজারা ‘নিনজুৎসু’ (দ্যা আর্ট অব স্টিলথ) নামক বিশেষ মার্শালআর্ট চর্চা করত, কঠোর সাধনার মাধ্যমে তারা এমন সব করতে পারত যা পারতপক্ষেই সাধারণের চিন্তার অনেক উর্ধ্বে। এই নিনজুতসু মূলত জাপানের রহস্যে ঢাকা ধর্ম ‘শিন্তো’, বুদ্ধ সেইজআর্ট আর চাইনিজ মার্শালআর্ট থেকে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে।

খুব গোপন আর রহস্যময় একটি ব্যাপার হওয়ায় মানুষ নিনজাদের সম্পর্কে নানারকম কথা ভেবে নিয়েছে, তাদেরকে সাজিয়েছে মনের মাধুরী দিয়ে। বর্তমানে সেই পুরনো নিনজারা আর নেই। হাতে গোনা কয়েকজন নিনজা জাপানে টিকে ছিল কয়েক বছর আগেও। তবে বর্তমানে জিনছি কাওয়ামিকেই একমাত্র জীবিত নিনজা বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।

নিনজা রহস্যের মূল ব্যাপার হল, তাদের মানুষকে অবাক করে দেওয়ার পদ্ধতি। একজন মানুষকে তার শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতাগুলো ব্যবহার করে বোকা বানানো নিনজাদের আসল কাজ। এমন সব স্থানে গিয়ে লুকানো যেগুলো কখনোই মানুষের মাথায় আসবে না - নিনজাদের একটি কৌশল। শত্রুর মন অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া, শত্রুর এত কাছে চলে যাওয়া যেখানে শত্রু আপনাকে কখনো দেখবেই না- এই কৌশলগুলো তাদেরকে অন্য যোদ্ধাদের থেকে আলাদা করে চিহ্নিত করে।

বর্তমানে একটি জাদুঘর তৈরি করেছেন জিনছি কাওয়াকামি। কেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি নিনজাদের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছেন । সেখানেই একটি গবেষণা চালাচ্ছেন কাওয়াকামি। তার মতে, নানারকম চলচ্চিত্র আর লেখায় সবসময় নিনজারা একটু নেতিবাচকভাবেই প্রকাশ করা হ। কথায় কথায় রক্তারক্তি, খুনোখুনি, প্রতারণা এসবের মিশেলে সবাই কাল্পনিকভাবে সাজিয়েছেন নিনজাকে। তবে বাস্তবে নিনজাদের কাছে কাউকে খুন করা বা আঘাত করা ছিল সবচাইতে নিচু কাজ। কয়েকটি স্তরে যদি নিনজাদের দায়িত্ব ভাগ করা হয়, তাহলে মারামারি ছিল তার সবচাইতে নিচের ধাপে।
সাধারণত মারামারি, প্রতারণা ইত্যাদির চাইতে গোয়েন্দা হিসেবে শত্রুপক্ষের কোনো তথ্য এনে দেওয়াকেই সবচাইতে সম্মানীয় কাজ মনে করতো নিনজারা। অনেকদিন না খেয়ে, অনেক দূরের রাস্তায় কোনো বিরতি না দিয়ে চলা, দুরগম জায়গায় পৌঁছানর মতন কষ্টের কাজগুলোর জন্য মানানসই ছিল নিনজারা। বর্তমানে অবশ্য বেশিরভাগ মানুষের চোখে নিনজাদের এই ইতিবাচক দিকগুলো ফুটিয়ে তোলা হয় না।
মোট কথায় বলা যায়, নিনজারা মোটেই আর্থিক দিক দিয়ে নিনজা হওয়ার উপরে নির্ভর করতো না। কারণ এ কাজে তেমন কোনো আর্থিক সুবিধা পাওয়া যেত না। ফলে দিনের বেলায় তাদের জীবিকার তাগিদে নানাবিধ কাজ করতে হতো। যোদ্ধা, কৃষক, ব্যবসায়ী সব পেশার মানুষের মধ্যেই নিনজা লুকিয়ে ছিল এমনটা মনে করা হয়।