Monday, 1 June 2020

অবিনাশী বাহিনী ( The Immortals) প্রাচীন পারস্যের শ্রেষ্ঠ সেনাদল --


প্রথম পারস্য সাম্রাজ্য যাকে 'আখিমেনিদ' সাম্রাজ্য বলা হত তাদের এক শ্রেষ্ঠ যোদ্ধার দল ছিল। হেরোডোটাস এদের 'ইম্মর্টাল' বা 'অবিনাশী সেনা' নামকরণ করেছিলেন। এই বাহিনীটি 10,000 সংখ্যক যোদ্ধা বিশিষ্ট ভয়ঙ্কর একটি পদাতিক সেনাবাহিনী ছিল। এদের শক্তি বা সংখ্যা কখনো কমত না। এরা একসাথে রাজকীয় রক্ষি এবং পদাতিক বাহিনী হিসাবে কাজ করেছিল; পারস্যের ইতিহাসে, বিশেষ করে পার্সিয়ান সাম্রাজ্য বিস্তৃতির সময় এবং গ্রিক পার্সিয়ান যুদ্ধে এদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

এদেরকে অবিনাশী বলা হতো কারণ, এদের গঠন এমনভাবে ভাবে হতো, যাতে 10,000 শক্তিশালী এই বাহিনীর কোন সদস্য আহত বা নিহত হলে সঙ্গে সঙ্গে তার স্থানে অন্য কেউ চলে আসতো। তাই বহিরাগতদের কাছে এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য অবিনশ্বর এর মত ছিল। তাদের মধ্যে কারোর প্রতিস্থাপন হলে সেটিকে তার পুনরুজ্জীবন এর মত দেখা হতো।

হেরোডোটাস বলেছিলেন, এরা খুবই বাস্তব বুদ্ধি সম্পন্ন, যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্র সমৃদ্ধ ছিল এবং তাদের অস্ত্র-গুলি সোনায় মোড়ানো ছিল যা ঝকমক করত। এদের অস্ত্রশস্ত্রের মধ্যে ছিল এক ধরনের বিশেষ ঢাল, ছোট বর্ষা, তলোয়ার অথবা বড় আকৃতির ছোড়া, তীর এবং ধনুক। তারা এক ধরনের বিশেষ পাগড়ী মাথায় পড়তেন যাকে একপ্রকার পার্শিয়ান 'টিয়ারা' বলে মনে করা হতো । বিভিন্ন স্থানে এর বর্ণনা পাওয়া গেছে যাতে বলা হয়েছে এক ধরনের কাপড় তারা মুখকে ধুলো এবং ময়লা থেকে রক্ষা করার জন্য জড়িয়ে পড়তো। বলা হতো, গ্রিকদের তুলনায় এই অবিনাশী সেনারা কম অস্ত্র বহন করত। হতে পারে তাদের কাছে কম সংখ্যক অস্ত্র ছিল কিন্তু তারা অত্যন্ত দক্ষ, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং সুগঠিত ছিল --যা তাদের শত্রুদের উপর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলত এবং যথেষ্ট ভয়ের সৃষ্টি করত।

তারা যখন যাতায়াত করত তাদের সাথে সওয়ারি যানবাহন, তাদের মহিলা, ভৃত্য এবং খাবার দাবার ও অন্যান্য যোগান থাকতো। এই ইউনিটের অংশ হওয়া সহজ ছিল না। সৈনিক বা যোদ্ধাদের এর অংশ হওয়ার জন্য আবেদন বা দরখাস্ত করে অপেক্ষা করতে হত এবং এই বাহিনীর জন্য মনোনীত হওয়া খুবই সম্মানের বিষয় ছিল ও অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যেত।

এই অবিনাশিরা বহু বিজয় অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
যখন সাইরাস দি গ্রেট 539 খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলন দখল করতে এসেছিলেন, তখন প্রথম এরা প্রায় দৈবশক্তি এর মত মর্যাদা পেয়েছিল। এরপর 525 খ্রিস্টপূর্বাব্দে কম্বিসেস 2 এর মিশর দখলের সময় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল এবং এছাড়াও দারায়ুস 1 যখন 520 এবং 513 খ্রিস্টপূর্বাব্দে যথাক্রমে পশ্চিম পাঞ্জাব, সিন্ধ এবং সৈথিয়া দখল করে তখন তাদের যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। অবিনাশী সেনারা 480 খ্রিস্টপূর্বাব্দে 'ব্যাটেল অফ থার্মোফিলি' বা থার্মোফিলির যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল; এই সময় গ্রীকরা একটি সরু রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে পার্সিয়ানদের অগ্রগমন থামিয়ে  দিয়েছিল।তখন ইম্মর্টাল রা অন্য একটি রাস্তা দিয়ে গ্রিকদের পেছন থেকে আক্রমণ করেছিল।

তারা খুবই শক্তিশালী ছিল এবং তাদের পরাক্রম, না কমে যাওয়ার সংখ্যা, কৌশল এবং প্রযুক্তির জন্য তাদের বহু সেনাবাহিনী বা শত্রুরা ভয় করত। দুর্ভাগ্যবশত, এই অবিনাশী সেনার সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য কিছুটা সীমিত। মূলত হেরোডোটাসের লেখা থেকে এদের বেশিরভাগ তথ্য পাওয়া গিয়েছিল; এছাড়া এদের অন্যান্য তথ্য গুলো পাওয়া খুবই কষ্টকর। আলেকজান্ডার দি গ্রেট এর ঐতিহাসিকরা 'অ্যাপেল বিয়ারার' বা 'আপেল বাহক' নামে খ্যাত এক প্রকার সেরা সৈন্যবাহিনীর কথা উল্লেখ করেছিলেন। তাদের আপেল বাহক বলা হতো কারণ তাদের বর্ষার ধারালো অংশটি আপেলের মতো আকৃতির ছিল। অনেক পণ্ডিতের মতে তারাই এই ইম্মর্টাল ছিল। 

যদিওএই অবিনাশী সেনা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য কম পাওয়া যায়, তবুও প্রাচীনকাল থেকে তারা সামরিক শক্তির একটি প্রতীক হয়ে এসেছে। বিভিন্ন জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে তাদের কথা প্রায়শই বর্ণনা করা হয়েছে।

বিখ্যাত কিছু চলচ্চিত্র যেমন 1963 সালে 'দা 300 স্পার্টান', 1998 সালের কমিক বই '300' এবং পরবর্তীকালে এটি অবলম্বনে তৈরি আধুনিক চলচ্চিত্র '300'; এছাড়া হিস্টরি চ্যানেলের একটি ডকুমেন্টারি যার নাম ছিল -  'লাস্ট স্ট্যান্ড অফ 300' এগুলিতে এদের উল্লেখ পাওয়া গেছে যা এদেরকে হয়তো আরো অনেক বছর বাঁচিয়ে রাখবে। এই 300 স্পার্টানদের বিরুদ্ধেই বলা হয় প্রথম এই অবিনাশী সেনারা পরাজয়ের স্বাদ পেয়েছিল। স্পার্টান যোদ্ধাদের বিষয়ে পরে এক পর্বে আলোচনা করব।

No comments:

Post a Comment