গত 15 বছর ধরে বিভিন্ন স্থানে এই গল্পটা ছড়িয়ে পড়েছে যে হিটলার আসলে বার্লিন থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং তার বাকি জীবন দক্ষিণ আমেরিকায় ফাদার ক্রেসপি নামে অতিবাহিত করেছেন। কিন্তু ফাদার ক্রেস্পি যে হিটলার ছিলেন, তার স্বপক্ষে কি কি প্রমাণ পাওয়া যায়?
ফাদার ক্রেসপি 1982 সালে 90 বছর বয়সে মারা যান। প্রায় 2,000 এর বেশি মানুষ তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত ছিলেন; ঠিক যেন একজন রাজার মতো।
তার কবরটি সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল যেটা এখনো প্রতি সপ্তাহে পরিষ্কার করা হয় এবং রোজ তাতে ফুল দিয়ে সাজানো হয়, যার খরচ দেয় অজ্ঞাতনামা বা নাম গোপন রাখা বিভিন্ন ভক্তরা।
তার মৃত্যুর পর তাকে নিয়ে বেশ কিছু কৌতূহলপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি তার বাসস্থানে বহু মিলিয়ন ডলার এর দামি বেশ কিছু আর্ট ওয়ার্ক ফেলে গিয়েছিলেন।
স্থানীয় জার্মান এবং অন্যান্যরা পরবর্তীকালে এর মধ্যে বেশির ভাগ আর্টওয়ার্ককে এডলফ হিটলারের ব্যক্তিগত কালেকশনের অংশ হিসাবে সনাক্ত করেন।
হিটলার আর্টওয়ার্ক সংগ্রাহক হিসাবেও বিখ্যাত ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ শেষে তার মৃত্যুর পর তার বেশিরভাগ ব্যক্তিগত সংগ্রহ আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, 16 মে 1982 সালে ফাদারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঠিক পরেই দুটি কার্গো জেট এসে ফাদার ক্রিসপির আর্ট কালেকশন গুলি ভরে নিয়ে উড়ে যায় এবং আর কখনো এগুলি দেখতে পাওয়া যায় না। কুইন্স শহরের পুলিশ কর্তা রিপোর্ট করেছিলেন যে, একটি ইউরোপিয়ান দল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ঠিক একদিন আগে এই ছোট শহরে প্রবেশ করেছিল। এইসব যাত্রার বেশিরভাগ উপস্থিত মানুষ জার্মান ছিলেন এবং সশস্ত্র রক্ষী যুক্ত ছিল।
এটাকি সম্ভব যে, একজন ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকরতম মানুষ বিচারব্যবস্থা থেকে পালিয়ে গিয়ে 40 বছর ধরে একজন ঈশ্বরের দুত সেজেছিলেন?
তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের শেষ বছরে হিটলারের সমস্ত মেডিকেল রেকর্ড ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল এবং তাকে যে সকল ডাক্তাররা দেখেছিলেন তারা সকলেই রহস্যময়ভাবে গায়েব হয়ে গিয়েছিল। ব্যতিক্রমী ছিল কেবলমাত্র একজন কম বয়সী ডেন্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট যাকে দুবার হিটলারের দাঁত পরিষ্কারের সময় তার ডেন্টিস্টকে এসিস্ট বা সাহায্য করার জন্য ডাকা হয়েছিল।
এই মহিলাটিকে রাশিয়ান আর্মি পরবর্তীকালে ধরে নিয়ে গিয়েছিল এবং তারা তাকে দিয়ে হিটলারের দাঁতের চিত্র অংকন করার চেষ্টা করেছিল। যাতে তারা বার্লিনের বাংকারে যে অবশিষ্ট দেহাংশগুলি পেয়েছিল তার সাথে মিলিয়ে দেখতে পারে। কারণ তখনো পর্যন্ত হিটলারের কোন বিশ্বস্ত ডেন্টাল রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
দিনের পর দিন টর্চারের পরও তার স্মৃতিতে হিটলারের দাঁতের আসল আকৃতি স্পষ্টরূপে ছিলনা কিন্তু রাশিয়ানরা স্থির করেছিলেন যে সেটুকুই যথেষ্ট ছিল।
স্ট্যালিন কখনোই হিটলারের মৃত্যু বিশ্বাস করেননি; কিন্তু হিটলার রাশিয়ান আর্মির হাত থেকে পালিয়ে গিয়েছে এইটি তিনি পৃথিবী কে ভাবতে দিতে চাননি।
1981 সালে ওয়েন্ডেল স্টিফেন নামক একজন অবসরপ্রাপ্ত ইউএস আর্মি কর্নেল ইকুয়েডরে একটি ট্রিপে গিয়েছিলেন তার ট্রিপ চলাকালীন তিনি 'কুয়েনকা' নামক একটি ছোট শহরে একজন সন্ন্যাসীর সাথে দেখা করেন। এই সন্ন্যাসীর নাম ছিল ফাদার ক্রেসপি এবং কর্নেল স্টিফেন্স বিশ্বাস করতেন তিনি আসলে এডলফ হিটলার ছিলেন। তার সন্ন্যাসী সম্পর্কে দাবি গুলি কেউ শোনেনি। তিনি হিটলারের হাজার হাজার ফটো পরীক্ষা করেছিলেন এবং আরো জোরালোভাবে তার বিশ্বাস হয়েছিল, যে তিনি হিটলারকে খুঁজে পেয়েছেন। তিনি ইকুয়েডরের পাহাড়ের উপরে ফাদার ক্রেসপির নির্জন বাড়িতে থাকা অমূল্য আর্টওয়ার্ক গুলি সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছিলেন কিন্তু কেউ তার দাবি গুলো তখন শোনেনি।
ফাদার ক্রেসপির অতীত জীবন রহস্যময় ছিল ক্রেসপি দাবি করেছিলেন, তিনি আসলে উত্তর ইতালির ইটালিয়ান ও অস্ট্রিয়ান পরিবার থেকে এসেছেন। 1943 সালের শেষে তিনি ভ্যাটিকানে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি সেরিমনিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং একজন ব্রতচারী হিসাবে কাজ শুরু করেছিলেন। পরবর্তীকালে তাকে গুরু হিসাবে সম্মান দেওয়া হয়েছিল এবং এই সকল কিছু ভ্যাটিকানের বন্ধ দেওয়ালের ভিতর ঘটেছিল। যা এই সময়ে শোনা যায়নি এবং পরবর্তীকালেও কখনো এরকম কিছু হয়নি। তিনি এই সময়কালীন কখনো ভাটিকান শহরের বাইরে পা রাখেননি। এই শহরটি বিভিন্ন দেশ থেকে ডিপ্লোম্যাটিক ইমিউনিটি পেয়েছিল। ক্রেসপিকে ভাটিকানের সংগ্রহশালার তত্ত্বাবধায়কের পদে রাখা হয়েছিল। এই পথটি একজন নতুন ব্রতচারী পদমর্যাদার কারোর পক্ষে অনেক উঁচু ছিল।
তার এই পদের জন্য তাকে বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিভিন্ন কালেকশন কে তালিকাভুক্তকরণ এর কাজ করতে হতো।
এছাড়া বহু অমূল্য কালেকশন যার মধ্যে অনেকগুলি নাৎসিদের দ্বারা লুট করা ছিল এবং যুদ্ধের পর সেগুলি কোনভাবে ভ্যাটিকানের হাতে এসে পড়ে।
1956 সালে ক্রেসপিকে ইকুয়েডরের কুইন্স শহরে একজন ধর্মযাজক হিসেবে পাঠানো হয়। নাজি হান্টারদের কাছে এই শহরটি জার্মানি থেকে পলাতক মার্টিন বোরম্যান এবং অন্যান্য উচ্চ পদাধিকারী নাৎসিদের গুপ্তআশ্রয়স্থল হিসেবে বিখ্যাত ছিল।
সেখানে তিনি একান্ত জীবন যাপন শুরু করেন এবং রিপোর্ট অনুযায়ী, ধর্ম সভায় সাহায্য করার জন্য তিনি সকল সদস্যদের অর্থ প্রদান করতেন; এমনকি তিনি গ্রামবাসীদের তার লক্ষ্য পূরণ করার উদ্দেশ্যে অর্থ দিতেন। গ্রামবাসীদের মধ্যে জার্মান মানুষরা প্রায়ই তার সাথে দেখা করতে আসত।
ক্রিসপি বলেছিলেন, তার এই আর্টিফ্যাক্ট গুলি ব্যাবিলনিয়া থেকে প্রাপ্ত।
প্রসঙ্গত: হিটলার তার যে শহরটি তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যার নাম দিয়েছিলেন 'জার্মানিয়া' তার সাথে তিনি প্রায়শই 'ব্যাবিলনিয়ার' তুলনা করতেন।
হিটলারের মতো ক্রেসপিও বিভিন্ন আর্টিফ্যাক্ট সংগ্রহ করতেন।
ক্রেসপির কথা বলার ভঙ্গিমায় হিটলারের সাথে মিল পাওয়া গিয়েছিল এবং তার 'R' এর উচ্চারণটি অন্যরকম ছিল ঠিক হিটলার এর মতো !!
No comments:
Post a Comment