1945 সালের 30 এপ্রিলের সকালবেলায় অ্যাডাল্ট হিটলার নিজের বাংকারে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন এবং তার নববিবাহিত পত্নী এভা ব্রাউন সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। সেইদিন দুপুরবেলা তাদের মৃতদেহগুলো বাগানে নিয়ে এসে পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ এই ঘটনাটি সমর্থন করলেও আরো একটি থিওরি আছে যা অনেকের সমর্থন করে যেটা হলো হিটলার আসলে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তারা অন্য কোথাও তাদের পরবর্তীকালীন জীবন কাটিয়েছিলেন।
প্রথমেই থিওরিটির সূচনা করেন মার্শাল জর্জি যুকো যিনি বার্লিনের ইন্সট্রুমেন্ট অফ সারেন্ডার সাইন করার সময় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "হয়তো শেষ মুহূর্তে হিটলার পালিয়ে গিয়েছিলেন।" তখন থেকে অনেকগুলি তদন্তকারী দল এই থিওরির অনুসন্ধানে নেমেছিলেন যার মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক জেরার্ড উইলিয়ামস এবং সাইমন ডানস্টন।
তাদের 2011 সালের প্রকাশিত বই 'গ্রে উলফ: দা এস্কেপ অফ অ্যাডলফ' - এ তারা তর্ক রেখেছিলেন যে, এডলফ এবং এভা আসলে তাদের আত্মহত্যাকে সাজানোর জন্য বডি ডাবল বা জমজ দেখতে মানুষদের ব্যবহার করেছিলেন এবং তারা বিমানে করে ডেনমার্ক চলে গিয়েছিলেন।
এরপর তারা স্পেনে গিয়েছিলেন, যেখানে ফ্যাসিস্ট ডিক্টেটর ফ্রাঙ্কো তাদের একটি বিমানে করে ক্যানারি আইসল্যান্ডে পাঠিয়েছিলেন।
এরপর একটি জার্মান ইউ বোট তাদেরকে আর্জেন্টিনা নিয়ে গিয়েছিল। যেখানে ইতিহাসবিদদের মতে, তারা বাকি জীবন কাটিয়ে ছিল তাদের দুই সন্তান ছিল এবং 1962 সালে হিটলারের মৃত্যু ঘটেছিল।
আরেকজন আরজিনটিনিয়ান লেখক আবেল বাস্তিরও মতামত একইরকম ছিল। তার মতে, এই দম্পতি স্পেনের থেকে ক্যানারি আইসল্যান্ড হয়ে ডুবোজাহাজে করে আরজেনটিনিয়া পৌঁছায়। যদিও বাস্তি মনে করে, হিটলার সাউথ আমেরিকায় 1971 সালে মারা যান এবং তাকে আসানসিয়নের এক গুপ্ত বাংকারে কবর দেওয়া হয় যার উপর এখন একটি হোটেল অবস্থিত।
এফবিআইয়ের প্রকাশিত কিছু ফাইলে (fbi এর অফিসিয়াল সাইট এ পেয়ে যাবেন) সূত্র পাওয়া যায় যে, এডলফ হিটলার সাবমেরিনে করে আর্জেন্টিনা পালিয়ে গিয়েছিল গিয়েছিলেন এবং সেখানে ভারী মাত্রার পাহারা যুক্ত একটি গোপন স্থানে থাকতে শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে তিনি হাঁপানি ও আলসারে ভুগছিলেন।
এই ফাইলগুলোতে দেখা যায় যে হিটলারের অস্তিত্ব সংক্রান্ত তথ্যগুলো জে.এডগার.হুভারের এফবিআই যথেষ্ট গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করেছিল এবং তদন্তের জন্য তারা একটি বিশেষ দল পাঠিয়েছিল।
এই ডকুমেন্ট গুলিতে দেখা গেছে যে, একজন আরজেনটিনিয়ান পলাতক আসামি দাবি করেছিলেন, 1945 সালের এপ্রিলে বার্লিনের পতনের পর তিনি হিটলার, দুজন মহিলা এবং অন্যান্য জার্মানদের একটি সাবমেরিন থেকে নেমে এই দক্ষিণ আমেরিকান দেশে গোপন স্থানে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিলেন।
হিটলার এবং তার দলবল ঘোড়ার চড়ে দক্ষিণ আন্দেস পর্বতমালার পাদদেশে পৌঁছে ছিল এবং তাদের পরিকল্পনা ছিল পরিবার সহ সেখানকার একটি গ্রামে পৌঁছানো।
এই আরজেনটিনিয়ান সংবাদদাতা এই তথ্যগুলির বদলে ইউ এস আধিকারিকদের কাছে আশ্রয়ের দাবি চেয়ে ছিলেন, তাই তার নামও গোপন রাখা হয়েছিল।
কিন্তু সে 1945 সালের জুলাইতে লস এঞ্জেলেসের এক সাংবাদিককে হিটলারের বর্ণনা দিয়েছিল যে, 'এই নাত্সিটি হাঁপানি ও আলসারে ভুগছিল এবং সে তার গোঁফ কেটে ফেলেছিল।'
এই সংবাদদাতাটি হিটলারের আস্তানার নির্দেশনা দিয়েছিল এবং বলেছিল, "যদি আপনি আর্জেন্টিনার সান অ্যান্টোনিও হোটেল এর কাছে আসেন আমি সেখানে আপনার একজনকে জোগাড় করে দেবো যে আপনাকে হিটলারের আস্তানায় নিয়ে যেতে পারবে।"
অবশ্যই এটা ভারী প্রহরা যুক্ত স্থান এবং আপনাকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে যেতে হবে।
এই তথ্যটি কিংবদন্তি এফ বি আই কর্তা জে.এডগার.হুভারের কাছে পৌঁছলে তিনি সেটি যুদ্ধ সংক্রান্ত বিভাগে পাঠিয়ে দেন।
প্রাক্তন সিআইএ অপারেটিভ বব বিয়ার এবং আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন ও আবু আল যারকিকে গ্রেপ্তার করা ইউ এস স্পেশাল ফোর্স দলের সার্জেন্ট - টিম কেনেডি এ বিষয়ে হিস্ট্রি চ্যানেলে বলেছিলেন যে, "ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স একসময় দাবি করেছিল যে, হিটলার তার মৃত্যু দিনের আগে জার্মান রাজধানী থেকে পাইলট পিটার বাঙার্ট এর সাথে বিমানে করে পালিয়ে গিয়েছিলেন।"
তারা হিটলারের বাংকারের তলায় একটি গোপন স্থানের সন্ধান পান যেখান থেকে খুব সহজেই অন্য স্থানে পালিয়ে যাওয়া সম্ভব (পরের পর্বে আলোচনা করবো)। আরো একটি ডকুমেন্টে পাওয়া যায়, একজন এস এস অফিসার দাবি করেছিলেন, তিনি হিটলার কে ডেনমার্কে দেখেছিলেন।
এদিকে আর্জেন্টিনায় একটি মিলিটারি স্টাইলের কম্পাউন্ড এলাকা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে এবং দাবি করা হয় হিটলার আর্জেন্টিনা পৌঁছে এখানে ছিলেন।
No comments:
Post a Comment