গণমাধ্যম গুলিকে তাদের প্রচার এর জন্য ধন্যবাদ দেওয়া উচিত; কারণ, এখন অধিকাংশ মানুষ হাতের পরিষ্কার এর ব্যাপারে আগের থেকে অনেক সচেতন সচেতন হয়েছে। যেটা জীবাণু ছড়ানোর বিরুদ্ধে অনেকটা উপযোগী হয়েছে এবং মানুষ এখন তাদের হাত খুব ঘনঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করছে।
কিন্তু এতো সচেতনতা ছড়িয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সাবান এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর পার্থক্য নিয়ে কিছু ভুল তথ্য এখনো থেকে গেছে। এছাড়াও কিভাবে কখন তাদের ব্যবহার করবে এইসব নিয়েও অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে আছে।
যখনই আপনি নিজের হাতকে জীবাণুমুক্ত করার কথা ভাবছেন, কাছে থাকা হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর বোতলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার, 'সাবান ও জল' দিয়ে হাত ধোয়ার তুলনায় কতটা কার্যকরী?
যদি হাত সাবান দিয়ে ধোয়া ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের কার্যকরিতা নিয়ে তুলনা করি তাহলে আমাদের আগে বুঝতে হবে যে মাইক্রোঅরগানিজমগুলির অস্তিত্ব এবং টিকে থাকার জন্য তাদের নিজস্ব 'multi-faceted' কন্ডিশন আছে। তাই এক্ষেত্রে বলা যায় একটা সাইজ সবার জন্য ফিট হয় না।
প্যাথোজেন যত ছোট হয় ততো তারা আমাদের হাতের এপিডার্মিস এবং stratum corneum এর ফাটলের মধ্যে খুব সহজে আটকে থাকে।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার অনেক পোর্টেবল, যা মানুষ যেকোনো জায়গায় পকেট এ করে নিয়ে যেতে পারে। এর ফলে তারা বারবার হাতকে সহজেই ডিসিনফেক্ট করতে পারে। যে সকল স্থানে জল এবং সাবান সহজে উপলব্ধ হয় না সেখানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কে ব্যবহার করা যেতে পারে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর অ্যালকোহল চামড়ায় বিরাজমান প্যাথোজেন গুলির প্রোটিন এবং splitting cell গুলিকে ভেঙে দেয় এবং সেল মেটাবলিজম প্রক্রিয়া ব্যাহত করে দেয়, আপনার হাতের আউটার লেয়ার অফ অয়েল কে সরিয়ে দিয়ে জীবাণু গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। ।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন(CDC) এর মতে, এলকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার আপনার হাতে জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে কিন্তু সব রকম ব্যাকটেরিয়া নয়। স্যানিটাইজার কখনো সাবান জলের পরিপূরক হতে পারে না তারা কেবলমাত্র জীবাণুমুক্ত করার জন্য জল ও সাবানের অনুপস্থিতিতে একটি ব্যাকআপ হতে পারে।
এটি মাইক্রোব, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া কে কাজ করার পক্ষে অনুপযোগী করে দেয় কিন্তু সকল ক্ষেত্রে নয়। যেমন - 'norovirus' যা কয় প্রকার আমাশা সৃষ্টি করতে সক্ষম একটি ভাইরাস। এছাড়া কয়েকপ্রকার ব্যাকটেরিয়া এর বিরুদ্ধে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, 'c difficile' যা ডায়রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়ার ফিজিশিয়ান অ্যাথানাসিওস মেলিশিয়টিস এর মতে, কিছু কিছু হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতে ব্যবহার করার পর উচ্ছিষ্ট সৃষ্টি করে যা ব্যবহারকারীদের সামান্য অস্বস্তিদায়ক হতে পারে। কিছু গবেষকদের মতে ঘনঘন হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার হাতের ভালো এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়া গুলির রেসিস্টেন্স ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যা আমাদের ইমিউন সিস্টেমের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।
আপনার হাতে যদি ময়লা থাকে বা গ্রিজ থাকে বা অন্য কিছু লেগে থাকে বা তৈলাক্ত হয় সেগুলো তখন কম কার্যকরী হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে সাবান বেশি উপযোগী। সাবান কেবল ধ্বংস করে না প্যাথোজেনের বিভিন্ন অবশিষ্ট অংশগুলির সাথে যুক্ত হয় এবং জলের সাথে তাদের অপসারণ করতে সাহায্য করে। তাই এটি সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরিপূরক হতে পারে না।
তবে আপনি যদি হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনে থাকেন তাহলে সেটি যেন অন্তত 60 শতাংশ অ্যালকোহল যুক্ত হয় এবং এর সাথে সি ডি সি রিকমেন্ডেশন মেনে চলবেন, তবেই সেটি সবচেয়ে কার্যকরী হবে --
১.হ্যান্ড স্যানিটাইজার এর লেবেলে দেখে নিন কতটা পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে এবং হাতের তালুতে ঢেলে নিন।
২.হাত একসাথে ঘষতে থাকুন
৩.20 সেকেন্ড ধরে হাতের সব জায়গায়, আঙ্গুল গুলিতে, নখের উপর ঘষতে থাকুন যতক্ষণ না হাত শুকিয়ে যায়।
কোন ক্ষেত্রে সাবানে হাত ধোয়া উচিত --
-- সব সময় খাবার তৈরি করার বা খাওয়ার আগে হাত পরিষ্কার করা উচিত।
-- বাথরুম থেকে বেরোনোর পর
---কোন পশুকে ছুলে
--নোংরা জঞ্জাল পরিষ্কার করলে
--কেটে যাওয়া স্থান এর চিকিৎসা করলে বা ধরলে,
--কাশলে, হাঁচি মারলে অথবা কোন অসুস্থ ব্যক্তির কাছাকাছি থেকে কাজ করলে
--যখন হাতের ময়লা দৃশ্যমান হয়ে পড়ে অথবা যখন আপনি নোংরা বা সম্ভাব্য জীবাণুযুক্ত স্থান থেকে আসেন।
বেশিরভাগ মানুষ তাদের হাত সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে চান না এছাড়াও উপযুক্ত সময় ধরে হাত ঘষা বা হাতের পেছনদিকে ঘষে পরিষ্কার করা এগুলি থেকে বিরত থাকেন। ২০ সেকেন্ড সম্ভব না হলে ,কমপক্ষে 10 সেকেন্ড ধরে হাত ঘষা উচিত।
কিভাবে সাবান জলে হাত ধোয়া উচিত --
১.প্রথমে পরিষ্কার জলে হাতটা ভিজিয়ে নিন এবং সাবান লাগান।
২.দুই হাত ঘষতে থাকুন এবং হাতের পেছনও যেন ঘষা হয়। এছাড়া আঙ্গুলের মাঝখানে এবং নখের তলায় ঘষে নিন।
৩.এইভাবে অন্তত কুড়ি সেকেন্ড অব্দি ঘষতে থাকুন।
৪.ভালো করে জলে হাত ধুয়ে নিন।
৫.হাওয়ায় অথবা তোয়ালে দিয়ে হাত পরিষ্কার করে দিন।
এছাড়া সকল রেস্ট রুম টয়লেটে লিকুইড সাবানের ব্যবস্থা থাকা উচিত বার সাবানের তুলনায় লিকুইড সাবান খুব সহজে ব্যবহার করা যায় এবং সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা কম হয় এবং সব জায়গায় টাচ ফ্রি সোপ ডিসপেন্সার এর ব্যবস্থা করা উচিত যাতে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে।




No comments:
Post a Comment